Ragging To Loving 2পর্ব-২৯

0
2798

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৯
#রিধিরা_নূর

রিকশা থেকে নেমে ইয়াশ তড়িঘড়ি ভেতরে প্রবেশ করল। পরিচালককে অভিবাদন জানিয়ে কুশল বিনিময় করল।

ইয়াশ — অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। আমাকে এত বড় একটি সুযোগ দেওয়ার জন্য।

পরিচালক — এর আগেও তুমি ছোট ছোট কিছু ইভেন্টের ফটোশুট করেছ। বেশ ভালোই লেগেছে। এবারও নিশ্চয় আমি নিরাশ হব না।

ইয়াশ — একদম না। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

গ্রিনরুমে গিয়ে সব কিছু ঠিক করে নিল। একটু পর মডেল এলো। সে আর কেউ না বরঞ্চ পান্না। ভারি সাজগোজ করে এলো। ইয়াশ খানিকটা বিস্মিত হলো।

ইয়াশ — পান্না। এই ফটোশুট হবে একটি এনজিও-র জন্য। যেখানে বাচ্চাদের কেন্দ্র করে প্রোগ্রাম হবে। এর জন্য এতো হেভি মেকআপ মানানসই নয়। সবকিছু ন্যাচারাল লাগতে হবে।

পান্না — ওহ প্লিজ ইয়াশ৷ এখন তুমি আমাকে বোঝাতে এসো না। আমি একজন মডেল। আমাকে ন্যাচারাল নয় বেস্ট দেখাতে হবে। তোমার কাজ শুধু ফটোগ্রাফি। সো অনলি ডু দ্যাট।

পরিচালক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত তাই ফটোশুটের সমগ্র দায়িত্ব ইয়াশকে দিয়ে গিয়েছে। তাই ইয়াশ কিছু বলতেও পারছে না। একটি ছোট বাচ্চার সাথে পান্নার ফটোশুট হলো। শুরু হলো পান্নার রং-ঢং। বাচ্চাটাকে ছুঁতে দিচ্ছে না। মেকআপ নষ্ট হবে বলে। দূরত্ব রেখে ছবি তুলল। এর মধ্যেও আরও নানান সমস্যা। চেহারা কালো হয়েছে। দেখতে সুন্দর লাগছে না। চুল এমন হয়েছে কেন? আরও নানান সমস্যা। ইয়াশ একপ্রকার বিরক্ত হয়ে ছবিগুলো তুলল।

ফটোশুট শেষে পরিচালক এসে হাজির হলো। পান্নাকে দেখেই কপালে ভাজ পড়ল। কিন্তু কিছু বলল না। ইয়াশ একে একে সব ছবি পরিচালককে দেখাল।

পরিচালক — এসব কি? (রেগে) ইয়াশ। তোমাকে আমি বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে আগেই বলেছিলাম এটি একটি এনজিওর জন্য কভার পেইজ হবে। সবকিছু ন্যাচারাল লাগতে হবে। একে তো পান্নার এমন ভারি মেকআপ। বাচ্চাটার মুখের হাসিটাও মলিন। এটা দেখে কারো হৃদয় ছোঁয়ার উপক্রম আছে?

ইয়াশ — আই এম সরি স্যার।

পরিচালক — সরি বললে কি হবে? আমাদের হাতে সময় কম তাই এই দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছিলাম। নাহলে কোন ফেমাস ফটোগ্রাফারকে বলতাম।

বিনা দোষে ইয়াশকে এসব শুনতে হচ্ছে। পান্নাকে অনেক আসেধ দিয়েছিল। কিন্তু পান্না তার কথা না শুনে নিজের মতো করে করেছে। পরিচালক রেগে ক্যামেরা ফিরিয়ে দিতেই থেমে গেল। ক্যামেরায় তাকিয়ে তৃপ্তিময় হাসি দিল।

পরিচালক — দিজ ইজ বেস্ট। একদম ন্যাচারাল। পারফেক্ট ফর দ্যা প্রোগ্রাম।

পান্না — দেখ। বলেছিলাম না। আমার কথা মতো কর সব। এই ইন্ডাস্ট্রিজে তোমার চেয়েও বেশি অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাই আমি জানি কখন কেমন পোজ দিতে হবে।

পরিচালক — মাঝে মাঝে অভিজ্ঞতা নয় দক্ষতা কাজে লাগে। এখানে তোর অভিজ্ঞতা নয় ইয়াশের দক্ষতা কাজে লেগেছে। ইয়াশ এই ছবিগুলো দাও কভারের জন্য।

ইয়াশ — ওকে স্যার। (প্রফুল্ল হয়ে)

ছবিগুলো লক্ষ্য করে দেখে ছবিগুলো মেহেরের। আসার পথে যেই ছবি তুলেছিল তা ডিলিট করা হয়নি।

ইয়াশ — স্যার। এই ছবি?

পরিচালক — হ্যাঁ! এই ছবি। আমি এখন ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। আসি এখন। আর হ্যাঁ! মডেলের পেইমেন্ট মেয়েটিকে দিয়ে দিও। আমি ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নিব। (বলে চলে গেল)

পান্না রেগে চলে গেল। ইয়াশ পড়ল বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে। মেহেরের অনুমতি ছাড়া তার ছবি এভাবে লোকালয়ে দেওয়া অযৌক্তিক হবে। অন্যদিকে পরিচালককেও কিছু বলতে পারছে না। তার ক্যারিয়ারের প্রশ্ন। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
.
.
বিকেলে নূর ভিডিও কলে সবাইকে যোগ করল। আগে থেকেই সাউন্ড মিউট করে দিল। কারণ জানে প্রথম দফায় ঝাড়ির পর্ব চলবে। টানা আধঘণ্টা পর শান্ত হলো পরিবেশ।

পুষ্প — অসভ্য কোথাকার। তুই ভুলে গিয়েছিস আমরা একে অপরের কাছ থেকে কোন কিছু গোপন রাখি না। সত্য যতই তিক্ত হোক আমরা একসাথে তার তা গ্রহণ করব।

নূর — তুইও তো বললি না। ওই অসভ্য, অভদ্র, নির্লজ্জ, বেহায়া, খাচ্চোর, খাটাশ,খবিশ, লুচু পোলা, উগান্ডার প্রেসিডেন্ট তোর ভাই।

পুষ্প — নূর। (তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল)

নূর — না মানে ওই আফরান তোর ভাই। হেহেহেহে।

পুষ্প — তুমি যে আগে থেকেই খিচুড়ি পাকিয়ে রেখেছ। নিজেই আমাদের বারণ করে আবার নিজেই….

নূর — হয়ছে। ঢং।

আলিফা — এসব বাদ দে বোন। আগে বল আজ সূর্য কোন দিকে উদয় হয়েছিল। নূর আজ আফরান ভাইয়ার সব কথা চুপচাপ শুনছিলি। বিনা কোন প্যাঁচাল বাঁধিয়ে।

সিমা — হ্যাঁ রে। আমিও জানতে চায়। কুচ তো গাড়বাড় হে। পাতা লাগাও দয়া পাতা লাগাও।

আমরিন — পাতা দিয়ে কি করবি? গাছ লাগাও। গাছ লাগাও পরিবেশ বাচাও।

মেহের ক্লান্ত হয়ে এসে আলিফার পাশে বসল।

মেহের — হাই গাইজ।

নূর — মেহের আংকেল কেমন আছেন? আজকে আংকেলকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিলি। কি বলল?

মেহের — স..সব ঠিক আছে। (উপরে কৃত্রিম হাসি দিলেও মনে মনে বেশ চিন্তিত।) কি নিয়ে কথা হচ্ছে?

আলিফা — পরে বলব আগে নূর বল কি হয়েছে?

নূর সব বলার পর এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করল। পরক্ষণে ফোন ফেটে যাওয়ার মতো উচ্চস্বরে হাসির রোল পড়ল।

আলিফা — একেবারে ঠিক হয়েছে তোর সাথে। তুই যে এতদিন ভাইয়ার উপর অত্যাচার করেছিলি তার প্রতিশোধ গুনে গুনে নিবে।

নূর — তোর কোন জন্মের ভাই লাগে? হ্যাঁ? উনার পক্ষ নিচ্ছিস। এক্কেরে থাপরাইয়া মুতাই দিমু। এখন বল কীভাবে উনার কাছ থেকে আমার এসাইনমেন্ট নিব। ওই বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?

সিমা — কান টানলে মাথা আসে। যখন কান কাছেই আছে। মাথাও চলে আসবে।

নূর — মানে?

সিমা — আমাদের ফুলটুসি। পুষ্প।

পুষ্প চোখ বড় বড় করে তাকাল। নূর দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল।

নূর — আই লাভ ইউ জানু (সিমাকে)। তোকে এক টাকার লজেন্স খাওয়াবো। এবার তোরা অফ যা। পুষ্পর সাথে একান্তে প্লানিং করি। ওকে বাই।

নূর গ্রুপ কল কেটে পুষ্পকে ভিডিও কল দিল। পুষ্পর হাত পা কাঁপছে। দুই জনের লড়াইয়ে বেচারি স্যান্ডউইচ হয়ে গেল। “একদিকে বেস্টফ্রেন্ড, অন্যদিকে ভাই। পুষ্প ফাইস্য গেল মাইনকার চিপায়।” পুষ্প কাঁপা হাতে রিসিভ করল।

নূর — জানু, সোনা, বেপি। আমার পুচ্চু পুচ্চির খালাম্মা। প্লিজ আমার এসাইনমেন্ট উদ্ধার করে দে তোর ভাই থেকে। প্লিজ।

পুষ্প — এহ্! পারব না আমি। পরে ভাই আমাকে কেলানি দিবে। এমনিতেই আম্মু বেশি ভাইয়ার সাইড নেয়। আর আব্বু আমার সাইড নেয়। আব্বু রাতে আসে অফিস থেকে। সারাদিন আম্মুর প্যাঁচাল শুনতে হবে। আমি পারব না।

নূর — এমন করিস না।

পুষ্প — সব নষ্টের গোড়া তুই।

নূর — বাহ্! পুষ্প। বাহ্! এখন ভাইয়ের সাইডে চলে গেলি। আমি তো তোর কেউ না। তাই না। ওকে। ঠিক আছে। বাই।

পুষ্প — আচ্ছা দেখছি। আর ঢং করতে হবে না।

পুষ্প গুটিসুটি পায়ে আফরানের রুমের কাছে গেল। উঁকি মেরে ভেতরে দেখল আফরান আছে কিনা। রুম ফাঁকা দেখে যেই ভেতরে প্রবেশ করবে পুষ্পর মা এসে হাজির হলো।

মরিয়ম বেগম — আফরানকে খুঁজছিস? আফরান এখনো আসেনি। বলল কিছু কাজ আছে আসতে দেরি হবে।

পুষ্প — ওহ্!

মরিয়ম বেগম — আজ তোর খালার বাড়িতে দাওয়াত আছে। আফরানের দেরি হবে আসতে। তোর আব্বু অফিস থেকে সোজা সেখানে পৌঁছাবে। তুই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। এরপর আমরা বের হব।

পুষ্প নূরকে ফোন দিল।

পুষ্প — তোর এসাইনমেন্ট ভাইয়ার কাছে। আর ভাইয়া এখনো বাসায় ফিরেনি। আমি আর আম্মু বড় খালার বাড়িতে যাচ্ছি। তাই তুই মুড়ি খা। আমি গেলাম।

নূর — ভ্যায়ায়ায়া। আমার সাথেই কেন এমন হয়?
.

মেহের গুটিসুটি মেরে বসে আছে। তার পাশে বসে আলিফা অনবরত বকবক করেই চলেছে। সেদিকে মেহেরের কোন ধ্যান নেই। তার চিন্তা ভাবনা জুড়ে শুধু তার বাবা। বিগত দুই বছর ধরে তার বাবা অসুস্থতায় ভুগছে। ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই বিষয় সবার কাছ থেকে লুকিয়ে চাকরি চালিয়ে যায়। দু’বছর পূর্বে চাকরিস্থলে শরীর অতিরিক্ত খারাপ হওয়ায় হসপিটালে ভর্তি করায়। সেখানে গিয়ে বিষয়টা সবার কাছে জানা পড়ে। তখন থেকে উনার চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আজীবনের জমা পুঁজি দিয়ে উনার চিকিৎসা, সংসার, মেহেরের পড়াশোনা চলছ। পাশাপাশি আলিফার বাবা সাহায্য করলেও তাতে তো আর পোষাই না। তাদেরও পরিবার আছে। আলিফার পড়াশোনা আছে। আরও নানান খরচা। কিন্তু এখন মেহেরের বাবার জমাকৃত টাকাও শেষের দিকে। এই মূহুর্তে সব চিন্তার ভার মেহেরের উপর। একমাত্র মেয়ে। তাই দায়িত্বটাও তার উপর।

আলিফা ধাক্কা দিতেই মেহের চমকে উঠে।

মেহের — কি হয়েছে?

আলিফা — আমি কবে থেকে বকবক করেই যাচ্ছি আর তুই আনমনা হয়ে আছিস। কি ভাবছিস এতো?

মেহের — কিছু না। তুই কি বলছিলি?

আলিফা — আমি? (বিছানায় শুয়ে পড়ল) ভীষণ খুশি খুশি লাগছে মনটা।

মেহের — কেন?

আলিফা — আরিফ। জানিস আরিফ মনে করেছিল আমি তাকে এবং আফরান ভাইয়াকে নিয়ে ওইরকম চিন্তা করছি। তাই আমাকে কৈফিয়ৎ দিতে এসেছিল। যে সে এমন না। (হেসে উঠল) তখন তার চেহারাটা দেখার মতো ছিল। আমার এতো হাসি পাচ্ছিল তবুও চেপে রেখেছি। এর মানে কি জানিস?

মেহের — কি?

আলিফা — এর মানে সে আমার কথা ভাবে। আমি তাকে নিয়ে কি চিন্তা করি এতে তার ভাবান্তর হয়। একটু গোমড়া মুখ। এমন ভাব দেখায় যে তার কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু তার যায় আসে। তাই তো আমার কাছে ছুটে এসেছিল আমাকে কৈফিয়ৎ দিতে। এবার দেখ ওই ত্যাড়া ঘেঁচড়াকে কীভাবে সোজা করি।

মেহের হেসে উঠল।
.
.
.
পরের দিন ভার্সিটিতে _____________________

আফরান অধীর আগ্রহে নূরের অপেক্ষা করছে। আহাহা কালকে পালিয়ে গিয়েছিল আজকে সব শোধ নিবে। নূর অবলা নারীর মতো অসহায় ভঙ্গিতে হেলেদুলে আসছে। করুণ দৃষ্টিতে আফরানের দিকে তাকাল। কি মায়াভরা দৃষ্টি।

আফরান — (আহাহা কত নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে রেখেছে। যেন ধোয়া তুলসীপাতা। যে কেউ দেখলেই বলবে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। কিন্তু এই মেয়ে যে বদের হাড্ডি কে বলবে।) ও হ্যালো মিস চাশমিশ। ভদ্রতা ভুলে গিয়েছ? ভার্সিটির ফার্স্ট রুল। সিনিয়রদের সালাম দিতে হয়। সম্মান সহকারে।

নূর — মাননীয় শ্বেত চামড়া বিশিষ্ট খাচ্চোর বিলাতি বকের ন্যায় দানব থুক্কু মানব। আপনাকে জানায় সম্মান সহকারে স্যালুট স্যার। (মুটো ভরতি শুকনো পাতা নিয়ে আফরানের উপর ছিটিয়ে চারপাশে ঘুরে সামনে দাঁড়াল। সৈনিকের মতো স্যালুট দিল।)

উপস্থিত সবাই হাসছে। আফরান ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। নূর ভাবলেশহীন চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। রিহান এক রাশ দুঃখ প্রকাশ করে আফরানের কাঁধে হাত রাখল।

রিহান — ভাই ওর কাছ থেকে সম্মান আশা করিস না। ওর সম্মানের চেয়ে অপমান হাজার গুণ বেশি ভালো।

আফরান — অপমান? (নিঃশব্দে মাথা দুলালো) চাশমিশ। ফলো মি।

নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাটা ধরল। আফরান নূরের ওড়না টেনে ধরল। নূর ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল।

আফরান — আই সেইড ফলো মি। আমাকে অনুসরণ কর। অর্থাৎ আমার পিছনে আস।

নূর — ফলো? আপনাকে তো আমি রিপোর্ট মারমু। (বিড়বিড় করে)

আফরান — কি বললে? (শুনতে না পেয়ে)

নূর — টিনের চালে কাক। (আফরানের কানের কাছে এসে চিল্লিয়ে বলল)

আফরান — হোয়াট দ্যা হেল। (কান ঝেড়ে)

নূর – এহেহেহে। না মানে। আমি এটাই বলছিলাম। টিনের চালে কাক। আপনি শুনতে পাননি তাই জোরে বললাম।

আফরান — শাট আপ।

নূর তড়িঘড়ি ঠোঁটে আঙুল দিল। আফরান হাটছে নূর তাকে অনুসরণ করছে। যেদিকে আফরান পা দিচ্ছে সেদিকে নূর পা দিচ্ছে। আফরান খানিকটা থামতেই নূরের পা পড়ল আফরানের পায়ের উপর। এতে আফরানের জুতো খুলে যায়।

আফরান — হোয়াট দ্যা….। কি করছ তুমি?

নূর — আপনিই তো বললেন অনুসরণ করতে। তাই করছি।

আফরান — আমার কাছ থেকে দুই হাত দূরে থেকে হাট।

নূর মাথা নাড়লো। আফরান হাটছে নূর তার পিছে হাটছে। পিছন ফিরে বাকিদের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপি দিল।

রিহান — একেই বলে নিজের পায়ে কোদাল মারা। আফরান নিজ থেকে পা বাড়িয়ে বলছে আয় কোদাল আমার পায়ে পড়। এত দিনে কি সে নূরকে চিনে নি।

পুষ্প — তুমি কি ভাইকে চেনো নি। কেউ কারো থেকে কম না।

আহিল — কিন্তু তোমরা দেখি একে অপরকে খুব ভালো করে চিনে নিয়েছ। (উপহাস করে)

উপহাস করে বললেও পুষ্প বেশ লজ্জা পেল।

পুষ্প — আমি ক্লাসে যায়। (বলে চলে গেল)

আহিল কাঁধ দিয়ে রিহানের কাঁধে ধাক্কা দিল। রিহান সরু দৃষ্টিতে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে আমরিনের দিকে তাকাল।

আহিল — হাই মাই লাভ। এদের ঝগড়ার মাঝে তোমার দিকে ধ্যান দিতে পারিনি। সরি জান।

আমরিন — আমিও ক্লাসে যাচ্ছি। (লজ্জা পেয়ে সেও দৌড় দিল।)

সিমা — আহারে। আজ কেউ লজ্জা দেয় না বলে ক্লাসে যেতে পারলাম না। (আফসোসের সুরে)

ওয়াসিম — তোমার লজ্জা আছে? (বিব্রত হয়ে)

সিমা রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ওয়াসিম সাথে সাথে চুল হাত দিয়ে ঢেকে নিল। কারণ জানে ঝড়টা তার চুলের উপর দিয়ে বইবে।

ওয়াসিম — আমিও ক্লাসে যাচ্ছি। (বলে দৌড় দিল)

আহিল — এখন কি ওয়াসিমও লজ্জা পেল নাকি?

ইয়াশ — না। ভয় পেল।

সবাই হেসে উঠল। সিমা, আলিফা, মেহের ক্লাসে যেতে নিলে ইয়াশ মেহেরের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই প্রথম দিন ইয়াশের রাগ দেখার পর থেকে মেহের ভীষণ ভাবে ইয়াশকে ভয় পায়। এখনও ভাবছে সে অজান্তে আবারও কোন ভুল করল না তো?

ইয়াশ — কিছু কথা ছিল তোমার সাথে। একান্তে।

আহিল — তাহলে আমরাও ক্লাসে যায়।

আলিফা — আজ ক্লাস দিবস নাকি। ক্লাসে যাওয়ার জন্য সবার এতো তাড়া কেন?

আরেক দফা হাসলো সবাই। আরিফও হাসলো। আলিফা দেখে ঠাস করে ক্রাশ খেল। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আরিফ তার দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে ভাব নিল।

আলিফা — সিমা চল ক্লাসে যায়।

সবাই চলে গেল। ইয়াশ মেহের দাঁড়িয়ে আছে। মেহের চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াশ দ্বিধান্বিত হয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।

ইয়াশ — আ’ম সরি। (মেহের অবাক হয়ে তাকাল।) ওহ হ্যালো সেই প্রথম দিনের জন্য সরি বলছি না। সেদিন ভুল তোমার ছিল। তার জন্য সরি তোমার হওয়া উচিৎ আমার না।

ইয়াশের উচ্চশব্দে মেহের কেঁপে উঠল। ইয়াশ অনুতপ্ত হয়ে তাকাল।

ইয়াশ — সরি কালকের জন্য। আসলে… কালকে পার্কে যখন তুমি ছোট বাচ্চাটির সাহায্য করছিলে তখন অজান্তে তোমার আর বাচ্চাটার কিছু ছবি তুলে ছিলাম।

মেহের — ইটস ওকে। ডিলিট করে দিয়েন।

ইয়াশ — না। (মেহের চমকে উঠল) আসলে আবারও সরি। তোমার ছবিগুলো পরিচালকের পছন্দ হয়েছে। এবং তাদের কভার পেইজে তোমার ছবি দিতে চায়।

মেহের — কখন না। সরি। কিন্তু এটা সম্ভব না।

ইয়াশ — এর জন্য তারা তোমাকে ভালো এমাউন্টও দিবে। দেখ এটা খারাপ কিছু নয় বরং অনাথ বাচ্চাদের জন্য এনজিও-র প্রোগ্রামের জন্য। দুই দিন ব্যাপি প্রোগ্রাম চলবে এরপর তোমার ছবি সরিয়ে নেওয়া হবে।

মেহের — দেখুন এটা সম্ভব নয়।

ইয়াশ — আমি এটাও জানি তোমার পরিবারের আর্থিক সংকট রয়েছে। এমাউন্টও ভালো দিবে। এতে তোমার জন্য ভালোই হবে। তাছাড়া কোন খারাপ কাজে নয় বরং ভালো একটি প্রোগ্রামের জন্যই দেওয়া হচ্ছে। আর তোমার ছবিগুলো এমন ভাবে তোলা যাতে তোমার চেহারা বোঝা না যায়। তোমার অনুমতি ছাড়া আমি ছবি দেয়নি। মেহের এতে তোমারও লাভ। আমারও লাভ। আমার ক্যারিয়ারের জন্য….

মেহের — ওহ। তাহলে এটাই আসল ব্যাপার। আপনি আপনার স্বার্থের জন্য আমার কাছে এসেছেন। দুঃখিত কিন্তু আমি পারছি না অনুমতি দিতে। ক্ষমা করবেন। (যেতে গিয়েও ফিরে এলো) আর হ্যাঁ! সেদিন আপনার ক্যামেরা নষ্ট করার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। তার জন্য আপনাকে সরিও বলেছি। কিন্তু তখন আপনি নিজেই আমার সরি উপেক্ষা করেছিলেন।

মেহের চলে গেল। ইয়াশ চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.

আফরান দ্রুত পায়ে হাটতে হাটতে পিছন ফিরে তাকাল। আফরানের হাটার গতির সঙ্গে না পেরে নূর দৌড়ে আসছিল। আচমকা আফরান থেমে যাওয়ার জোরেশোরে ধাক্কা খেল। কপালে ধাক্কা লাগাই নূর চেচিয়ে উঠল। গতকাল দৌড়াতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা লেগেছিল। এখনও একই জায়গায় ধাক্কা লাগাই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল।

নূর — কি সমস্যা আপনার? চলতে চলতে হুট করে থেমে যান কেন? (কপাল ঘেঁষে)

আফরান — তোমার কি সমস্যা? দেখে চলতে পার না? এই মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়েও দেখতে পাও না?

নূর — আপনার এই চোখ দুটো আছে কি করতে? (বিড়বিড় করে)

আফরান — কি বললে?

নূর — টিনের চালে…. (আফরান মুখ চেপে ধরল)

আফরান — চুপ। আরেকবার যদি বিড়বিড় করে কিছু বল তাহলে দেখ কি করি।

.
.
.

চলবে

বিঃদ্রঃ কাল ফুফিকে হসপিটালে দিয়েছিল সেখানে ছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি। দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here