Ragging To Loving 2পর্ব-৩৩

0
2508

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩৩
#রিধিরা_নূর

আফরানের নিষ্পলক মুগ্ধতায় আছন্ন নয়ন দুটো নূরের উপর স্থির। নূর গভীর নিশ্বাস নিল। আফরানের নজর পড়ল নূরের হাতে থাকা ছবির উপর। হতচকিত হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। আবেগের বশে ছবিটি দিলেও এখন নিজের উপর ক্রোধ হচ্ছে। তখন ভাবে নি নূর এই নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে। নূরের অগোচরে আফরান চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছে। উল্টো পায়ে হাটতেই শুকনো পাতার উপর পা পড়ে। নূর তড়িঘড়ি পেছনে তাকাল। আফরান মূহুর্তে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নূর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াল।

নূর — পালানোর প্রয়োজন নেই আমি সব জানি।

আফরান — কি..কি জানো?

নূর — (ছবি দেখিয়ে) এটা আপনি রেখেছেন। কারণ এই ছবি কারো কাছে নেই। রিহানের কাছেও না। গত পরশু পার্লি আমাকে সব জানিয়েছে। আপনি তাকে আনন্দিতা ভেবেছিলেন। এরপর রিহানের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার পর সব জানতে পারি। (মুখ টিপে হাসছে)

আফরান — তুমি হাসছ কেন?

বলা মাত্রই নূরের হাসি বেরিয়ে গেল। হাসতে বারণ করলে যেন পেট ফেটে আরও বেশি হাসি আসে। নূরের ক্ষেত্রেও তাই।

নূর — আফুউউউ। (ফিক করে হেসে দিল)

আফরান — চুপ কর ভুটকি কোথাকার।

নূর — আমি ভুটকি? (রেগে)

তখনই পুষ্প এলো।

পুষ্প — তুই এখানে? আমাকে বলে আসবি না। জেগে দেখি তুই নেই। ভয় পেয়েছিলাম। সবাই জেগে গিয়েছে। নিচে চল।

তারা নেমে গেল। নুডলস আর চা দিয়ে সকালের নাশতা সেরে নিল। সিমা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তা দেখে নূর ভ্রু কুচকে বলল,

নূর — মুখটা খাটাশের মতো করে রেখেছিস কেন?

সিমা — তুই খাটাশ। আমরা কত কি প্লান করছিলাম কালকের জন্য। রাত জেগে অনেক মজা করব। কোথায় আর মজা। তোর ভেড়ার মতো ভে ভে কান্নায় সব ভেস্তে গেল।

আমরিন — আম্মুকে মিথ্যা বলে আসাটাও ব্যর্থ হলো।

ওয়াসিম — সব রিহান কেক ছোড়ার জন্য হয়েছে।

রিহান উঠে চলে গেল। মিউজিক অন করে,

হা মে গালাত,,, গালাত মেরি বাতে
গালতি সে হি দুনিয়া বানি, পুরা সাহি কোয়ি নেহি হে
লে লে মেরি চেতাভনি
—- ((রিহান লিপসিংক করল))

“ও হো হো… দিল মে জো আয়ে
ও হো হো… আজ হো জায়ে ” —–(২)
—–((সিমা লাফিয়ে উঠে নাচতে লাগলো। সাথে আলিফাকেও টেনে নিল))

আজ স্টেজ লাগা হে বাড়ি জাগাহ হে
ডু ইট উইথ এ টুইস্ট
—-((রিহান ইশারায় তাদের ডাকল))
টুইস্ট—–(৪)
((তিনজন একসাথে টুইস্ট স্টেপে নাচলো))

হা মে গালাত,,, গালাত হো যা তু ভি,,, আজা কারে গালতি নায়ি
—-((রিহান সবাইকে ডাকলো))

ডার কে সাথী হুয়া কাহা কোয়ি
ডারতে রাহে পেহলে কায়ি

“ও হো হো… আসমান টুটে
ও হো হো… ইয়ে জাহান রুটে “—–(২)
((নূর সোফায় দাঁড়িয়ে মাইকের মতো করে বলল))

আজ স্টেজ লাগা হে বাড়ি জাগা হে
ডু ইট উইথ এ টুইস্ট
—((সবাই একসাথে মাঝ বরাবর দাঁড়ালো))
টুইস্ট —–(৪)

“হো মেরা আপনা ক্যারেক্টার,,, তেরি আপনি আদা (আফরান নূরের কানে ফুহ্ দিয়ে নিজের কলার ঠিক করল)
টুটেংগে বিখরেংগে বেহকেংগে সাম্ভলেংগে দোনো (নূর চুল উড়িয়ে ভাব নিল)

দিল কে উস মামলে মে,, না আকাল কো লাগা
আকলো মে উলজেংগে তোহ ফিসলেংগে দোনো”—–(২) (আলিফা আরিফের মাথায় টোকা দিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল।)

“ও হো হো… দিল মে জো আয়ে
.
.
টুইস্ট”….
—-((সবাই একসাথে তাল মিলিয়ে নাচলো))

হঠাৎ ড্রয়িংরুমের আলো একবার জ্বলছে, একবার নিভছে। দিনের বেলায় আলো হওয়ায় লাইট অন করেনি। তাহলে শুধু শুধু লাইট ফ্যান অন অফ হচ্ছে কেন? সকলেই চিন্তায় পড়ল। ওয়াসিম ভয়ার্ত চোখে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।

ওয়াসিম — আমি গতরাতে বলেছিলাম না। এখানে ভূত-প্রেত আছে। গতরাতে ছাদে আওয়াজ হচ্ছিল আর আজ দেখ লাইট আপনা আপনি অন অফ হচ্ছে।

আরিফ — গতরাতে মেয়েরা ছিল ছাদে।

ওয়াসিম — কিন্তু এখন? এখন তো সবাই এখানেই আছে। তাহলে এখন বল কে করছে এসব?

আফরান — শাট আপ। হয়তো মেইন সুইচে কোন সমস্যা হয়েছে। আমি দেখে আসছি।

আফরান গিয়ে দেখল সব ঠিক আছে। ভেতরে এসে কেমন যেন বিদঘুটে গন্ধ পাচ্ছে। গন্ধ প্রখর নিশ্বাস নেওয়াটাও দুষ্কর। সবাই নাক ধরে আছে। আচমকা কিছু একটা ধপাস করে মাঝ বরাবর পড়ল। ভয়ের চোটে ওয়াসিম চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকারে অনিচ্ছাকৃত ভাবে বাকিরাও চিৎকার করে উঠল।

আফরান — চুপ।

সবাই চুপ হয়ে গেল। গন্ধ আরও প্রখর হয়ে নাকে লাগছে। সবাই নাক চেপে মেঝেতে তাকিয়ে দেখে ইঁদুর একটি চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। উপরে তাকিয়ে দেখে বৈদ্যুতিক তার ছিড়া অবস্থায় ঝুলছে।

রিহান — এবার বুঝতে পেরেছি। ইঁদুর দাঁত দিয়ে তার কাটার ফলে লাইট অন অফ হচ্ছিল। তড়িৎ প্রবাহে ইঁদুর মরে গেল।

আহিল — ওয়াসিম নে তোর ভূত মরে আবার ভূত হয়ে গেল।

সবাই হো হো করে হেসে উঠল।

নূর — ওয়াক। এখন এটা পরিষ্কার করবে কে? আমার বমি পাচ্ছে।

আলিফা — আমাদের প্রাণী মন্ত্রী আছে না। পুষ্প। খাটাশ মাইয়া। হাত দিয়ে টিকটিকি, তেলাপোকা এসব ধরে। ইঁদুরটা পরিষ্কার করে দিবে।

পুষ্প আড়চোখে তাকাল। সবার পুষ্পর উপর স্থির। পুষ্প নাকে ওড়না বেঁধে নিল। পরিষ্কার করে রুম স্প্রে করে দিল।

সবাই সারিবদ্ধ হয়ে সোফায় বসল। নূর দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল। ওয়াসিম কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করল। পিছন ফিরে দেখে এলোমেলো লম্বা চুল মুখের সামনে এনে ভয়ানক দৃষ্টি তার উপর পড়ছে। ওয়াসিম এক চিৎকার দিয়ে রিহানের কোলে বসে পড়ল। ইয়াশ চুপিচুপি সব ভিডিও করে নিল।

ওয়াসিম — আমি বলেছিলাম না ভূত আছে। ওই দেখ। (আঙুল তাক করে)

রিহান — সর। কোথায় ভূত? আমরা কেউ দেখতে পাচ্ছি না। তোরা দেখতে পাচ্ছিস?

সবাই না বলল। কোন ভাবে হাসি চেপে আছে। নূর দু হাত ছড়িয়ে হেলেদুলে ওয়াসিমের কাছে আসছে।

ওয়াসিম — ওই দেখ আমার কাছে আসছে। ভাই প্লিজ কিছু কর নাহলে এই ভূত আমাকে খেয়ে ফেলবে।

নূর হাত বাড়াতেই ওয়াসিম তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেল। নূর ছিটকে পড়ল আফরানের উপর। এলোমেলো চুলে চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আফরান ফুহ্ দিয়ে আলতো করে চুল সরিয়ে দিল। নূর পরম আবেশে চোখ বুজে নিল। আফরান নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পূর্ণিমার চাঁদ যেন উঁকি দিয়েছে। নূর চোখ খুলে তাকাতেই আবারও হলো শুভদৃষ্টির মিলন। কৃষ্ণবর্ণ নয়ন দুটো ঘোর লাগার মতো। সেই ঘোরে মগ্ন আফরান।
হাসির খিলখিল শব্দে দুজনের ধ্যান ভাঙে। নূর তড়িঘড়ি উঠতে চুলে টান পড়ে। নূর বেদনায় কাতর শব্দ করে উঠল। আফরানের হাতের নিচে নূরের চুল চাপা পড়ল।

মেহের অনবরত হেসেই যাচ্ছে। সবচেয়ে উচ্চস্বরে সে-ই হাসছে। সবাই নিজের হাসি থামিয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের আঙুল দিয়ে আলিফাকে দেখাল। সকলেই প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

মেহের — হোস্টেলে…ভূত…আলিফা…

পরক্ষণে মেয়েরা সবাই হেসে উঠল। আলিফা ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকাল।

নূর — এক ভৌতিশ্যকর ঘটনা ছিল।

আরিফ — ভৌতিশ্যকর কি?

নূর — ভৌতিক এবং হাস্যকর।

ইয়াশ — মানে।

“হোস্টেলে থাকাকালীন মধ্যরাতে নূর ওয়াশরুমে যায়। সেদিন নূরের জন্মদিন ছিল। ওরা প্লানিং করছিল ১২টায় নূরকে উইশ করবে। কিন্তু নূর ছিল ওয়াশরুমে। নূর যে গেল ওয়াশরুমে বের হওয়ার নাম নেই। আর আলুর বস্তা মানে আলিফা প্লান করছে নূরকে ভূতের ভয় দেখাবে। সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিবর্তে শকড দিবে। নূর ওয়াশরুম থেকে খটখট শব্দ শুনতে পেল। ঘুমের ঘোরে তেমন ধ্যান দেয়নি। আবারও শুনতে পেল। শো শো বাতাসের তীব্র আওয়াজ, কুকুরের ডাক সব মিলিয়ে নূরের ভয় বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। নূর থরথর কাঁপছে। একে একে সবার নাম ধরে ডাকল কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। ওয়াশরুমের লাইট অন অফ হচ্ছে। নূর আত্মরক্ষার জন্য বদনা হাতে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এলো। রুমের লাইট অফ থাকায় চারদিকে অন্ধকার ছিল। আলিফা ভাউউ করে নূরকে ভয় দেখাল। নূর ধপাক করে বদনা দিয়ে আলিফার মাথায় আঘাত করল। ব্যাস কেল্লাফতে। আলিফা ওইদিকেই বেহুশ।”

এদিকে ভৌতিশ্যকর ঘটনা শুনে সবাই হাসতে লাগলো। সবচেয়ে বেশি আরিফ হাসছে। তার হাসি দেখে আলিফা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

আলিফা — একদম হাসবেন না আপনি।

আরিফ — কোন ব্রান্ডের বদনা ছিল যে আলিফা একেবারেই বেহুশ হয়ে গেল।

নূর — আরএফএল মার্কা বদনা ছিল।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here