#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ৩৪
#রিধিরা_নূর
আরিফ বিরতিহীন হেসেই যাচ্ছে। আলিফা মুগ্ধ নয়নে দেখছে সেই হাসি। মি.ঘেঁচড়ার হাসি এতো সুন্দর তাহলে সবসময় মুখটা গোমড়া করে রাখে কেন? আপনা আপনি তার মুখেও হাসি ফুটল। পরক্ষণে হাসি উধাও করে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল।
আরিফ — আমার কাছে ভৌতিক নয় বরং হাস্যকর-ই মনে হয়েছে। সিরিয়াসলি হাসি থামাতে পারছি না।
আলিফা — আপনাকে আমি হাসতে বারণ করেছি। (রেগে)
কে শুনে কার কথা আরিফ হেসেই যাচ্ছে। আলিফা মেঝেতে লাথি মেরে চলে গেল।
নূর — এই রে আলু রেগে সিদ্ধ হয়ে যাবে।
_______________________________
আমরিন ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। আজ আকাশটা অন্যরকম লাগছে। পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেলা ভাসিয়ে উড়ছে। শীতের সকালে সোনালি রোদের উত্তাপ অন্যরকম ভালো লাগছে। তার পাশে দাঁড়ানো আহিল গালে হাত দিয়ে আমরিনকে দেখছে। আমরিন জানে আহিল তার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু সে লজ্জায় আহিলের দিকে তাকাতে পারছে না। আড়চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। আহিল মৃদু হেসে আমরিনের নাক টেনে দিল। ব্যাস লজ্জাবতী লাল টমেটো লজ্জায় পানি পানি হয়ে গেল।
সিমা চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে তাদের এই দৃশ্য দেখছে। তার পাশে ওয়াসিম। একবার আমরিনের দিকে তাকাল একবার সিমার দিকে তাকাল।
ওয়াসিম — আচ্ছা আমরিন এতো লজ্জা পায় কেন? সবসময় দেখি আহিল তার সাথে থাকলে সে মাথা তুলেও না। কেন?
সিমা — কারণ সে লজ্জাবতী। আহিল ভাইয়াকে দেখে লজ্জা পায়।
ওয়াসিম — তাকে দেখলে নতুন বউ বউ ফিলিং আসে। আচ্ছা ওর মতো তুমিও আমাকে দেখে লজ্জা পাও না কেন?
সিমা — কে জানে? তোমাকে দেখে আমার লজ্জা না হাসি পায়।
ওয়াসিম — কেন? আমি জোকার নাকি?
সিমা — তার চেয়ে কম না। তুমি একটা ভীতুর ডিম। সব কিছু ভয় পাও। ভূত বলতে কিছু নেই।
ওয়াসিম — আছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি ভূত।
সিমা — কি দেখছ?
ওয়াসিম — কলেজে পড়াকালীন সব ছেলে ক্লাসমেট মিলে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করি। প্লান অনুযায়ী আমরা ঘুরতে যায়। আমার এক বন্ধু সাদিক আর আমি অন্যদিকে ছিলাম। তখন সাদিক সেখানে তার গার্লফ্রেন্ডকে একটি ছেলের সঙ্গে দেখল। কিন্তু এই কি করে সম্ভব! সে বলেছে তার গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের মাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। সাদিক তার গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দেয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো আমাদের সামনে উপস্থিত মেয়েটা ফোন রিসিভ করল। সাদিক তার গার্লফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করল সে কোথায়। তার গার্লফ্রেন্ড জানালো সে হসপিটালে। তাহলে সামনে উপস্থিত মেয়েটা নিশ্চয় ভূত। সেদিন আমি নিজ চোখে ভূত দেখেছি। (ভয়ার্ত স্বরে বলল)
সিমা অট্টহাসি হাসতে লাগলো। ওয়াসিম ভ্রু কুচকে তাকাল
সিমা — ওলে ভন্দুরাম। ওটা কোন ভূত টুত ছিল না। বরং মেয়েটি তোমার ফ্রেন্ডের সাথে প্রতারণা করছিল। মিথ্যা বলেছিল।
ওয়াসিম — ওহ্! আমি ভেবেছিলাম মেয়েটি ভূত বলে সাদিক ব্রেকআপ করেছিল।
সিমা খিলখিল করে হেসে ওয়াসিমের গাল টেনে দিল।
নূর আলিফার গলা জড়িয়ে ঝুলে আছে। আলিফা বদনার ঘটনা নিয়ে রেগে আছে। কারণ সবার সামনে বলায় সে ভীষণ ক্ষেপে আছে। নূর তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে। অবশেষে তার রাগ ভাঙলো।
.
.
নূর — নিহাল স্যার ফোন দিয়েছে। এসাইনমেন্ট পত্রে সাক্ষর করতে হবে।
পুষ্প — ওহ্ হ্যাঁ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তোকে বলতে। আমাদের সবার সাক্ষর নিয়েছিল। তুই তো ক্লাসেই ছিলি না স্যার বলেছিল আজ গিয়ে সাক্ষর করতে।
নূর — তাহলে চল।
সিমা — তোরা যা আমি বাসায় যাব। রাতে ঘুমাতে পারিনি। সকালেও তাড়াতাড়ি উঠতে হয়েছে। বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিব।
নূর — তোর ঘুমের গুষ্টি কিলাই। চল এক্ষুনি।
রিহান — চল আমরাও ঘুরে আসি। কারেন্টও নেই এখানে। কাটা তার ঠিক করার জন্য ইলেকট্রিশিয়ান আসবে। চল বাইরে ঘুরে আসি। এখানে বোরিং লাগছে।
আফরান — ভার্সিটি আওয়ার অলরেডি শেষ। গিয়ে কি করবি?
রিহান — এমনিই চল না।
অবশেষে তারা ভার্সিটি গেল। পুষ্প রিহানকে ফোন করে লাইব্রেরিতে আসতে বলে।
রিহান — পুষ্প…
পুষ্প — সরি এভাবে আসতে বললাম। সবার সামনে দ্বিধা হচ্ছিল তাই এখানে আসতে বললাম।
রিহান — কিছু বলবে? কোন সমস্যা হয়েছে? আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পার।
পুষ্প — কোন সমস্যা না। (গিফট বক্স এগিয়ে দিল) তোমার বার্থডে গিফট। সবার সামনে দেওয়ার সাহস হচ্ছিল না তাই এভাবে দিলাম।
রিহান — (বিস্মিত হলো) তুমি আবার গিফট কখন নিয়েছ? তুমি তো জানতে না আজ আমার বার্থডে।
পুষ্প — এখন আসার পথে নিলাম। জানি স্বল্প মূল্যের উপহার। কিন্তু আগে জানলে ভালো কিছু দিতাম।
রিহান — গিফটের মূল্য ম্যাটার করে না। গিফটের পিছনে লুকিয়ে থাকা অনুভূতি ম্যাটার করে। তুমি যা-ই দাও মন থেকে দিয়েছে তাতেই খুশি। গিফট না দিলে যে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমন না। আমি কোন গিফট চায় না। তোমাকে চায়। শুধু তুমি আমার পাশে থাক এটাই চায়।
পুষ্প অবাক হয়ে তাকাল। রিহানও নিজের কথায় অবাক হলো। এসবের মাঝে সে পুষ্পকে কেন চায়? নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুষ্প কথা ঘুরালো।
পুষ্প — আব…গিফট খুলে দেখ। পছন্দ হয়েছে কি না।
রিহান — বললাম তো গিফট কেমন তা ম্যাটার করে না। তুমি দিয়েছ এতেই আমি ভীষণ খুশি। (মুচকি হেসে গিফট খুলে রিহান অবাক হলো) হেই! ব্রান্ডেড ব্ল্যাক ওয়াচ। জানো এই ব্রান্ডের ঘড়ি খুব কম পাওয়া যায়। ইনফেক্ট সপ্তাহ খানেক পূর্বে একটি দোকানে এমন ঘড়ি দেখেছিলাম। লাস্ট স্টক ছিল কিন্তু সেটা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। অন্য দোকানেও খুঁজেছি পায়নি। আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আই জাস্ট লাভড ইট। এন্ড আই লাভ ইউ।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরল। পুষ্প মূর্তির ন্যায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণে রিহানের খেয়াল হলো তড়িঘড়ি পুষ্পকে ছেড়ে পিছিয়ে এলো।
রিহান — আই এম সরি। আই ডিডন্ট মিন দ্যাট। ওভার এক্সাইটেড হয়ে ভুলক্রমে….সরি।
পুষ্প — হুম। ইটস ওকে। আমি বরং যায়।
ফিরে আসতেই দেখে আমরিন চোখ বড় বড় করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
পুষ্প — তুই যেমন ভাবছিস তেমন না। আমি শুধু রিহানকে….
আমরিন চোখ পিটপিট করে একবার পুষ্পর দিকে তাকাল, একবার রিহানের দিকে তাকাল।
.
.
সাইন করে ফিরে আসার পথে নূরের নজর পড়ল পান্নার উপর। আফরান খানিক দূরে গাড়ির পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নূর খেয়াল করল পান্না,আফরান একে অপরকে দেখেও উপেক্ষা করে চলছে। বিষয়টা কেমন যেন খটকা লাগলো। কারণ পান্না আফরানকে দেখা মাত্রই রাজহাঁসের মতো পাখা মেলে দৌড়ে আসে। কিন্তু আজ বিপরীত দৃশ্য দেখে বেশ অবাক হলো। নূর গুটিসুটি পায়ে আফরানের কাছে গেল।
নূর — আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে দেখেও উপেক্ষা করে চলে গেল। হুয়াই ম্যান হুয়াই?
আফরান — শী ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড।
নূর — এহহ ঢং। আমরা মনে হয় জানি না। এতো দিন যে একে অপরের সাথে চিপকু গামের মতো চিপকে ছিলেন এবং তার আচরণ দেখেই বোঝা যায় সে আপনাকে নিয়ে অনেক পসেসিভ। এবং পুষ্পও বলেছে সে আপনার…
আফরান — উই ব্রোকআপ।
নূর — কেন?
আফরান — এমনিই।
নূর — আজকালকার ছেলেমেয়েদের কি হয়েছে কে জানে? রিলেশন যেন তাদের ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। যে যত রিলেশন করতে পারে সে তত স্মার্ট। রিলেশন তাদের কাছে জাস্ট টাইমপাস। ক্ষনিকের আনন্দের জন্য রিলেশন করে এবং মন ভরে গেলে আপনার মতোই এমনিই কারণ দিয়ে ব্রেকআপ করে।
আফরান — তুমি আমার সম্পর্কে জানোই কতটুকু। আর কি জানো আমার আর পান্নার রিলেশনের ব্যাপারে। কি কারণ ব্রেকআপের। জরুরি নয় যে সবসময় তুমিই সঠিক বাকিরা ভুল। হ্যাঁ জানি তোমার ধারণা মতে এমন অনেকেই আছে। কিন্তু সবাইকে একই পাল্লায় মাপতে যেও না। যেখানে এমন কিছু ছেলেমেয়ে আছে সেখানে আহিল এবং ওয়াসিমের মতোও আছে। আমার বন্ধু বলে এমন বলছি না। আমি তাদের চিনি, জানি। ওয়াসিম সবেমাত্র সিমার প্রেমে পড়েছে। কিন্তু আহিল কখনও কোন বিষয় নিয়ে সিরিয়াস ছিল না। মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতো। কিন্তু আমরিনকে ভালবাসার পর তার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যেখানে সে হেয়ালি করে ঘুরে বেড়াতো সেখানে সে এখন তার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে। কারণ সে আমরিনকে ভালবাসে। তাকে চায়। বাকিটা জীবন তার সাথে কাটাতে চায়। আমার ক্ষেত্রে তেমন নয়। আমি পান্নাকে ভালবাসি না। তাকে নিয়ে কখনও তেমন চিন্তা করিনি। চিন্তা দূরে থাক তার নাম পর্যন্ত মুখে আসে না। আমাদের রিলেশন হয়েছিল পান্নার জোরাজুরিতে। পান্নার জেদে। দুই বছর এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি তাকে ভালবাসতে। ভালবাসা জোর পূর্বক হয় না। ব্যাস হয়ে যায়। ভালবাসা নিয়ে সবার অনুভূতি ভিন্ন। কিন্তু সেই অনুভূতি পান্নাকে নিয়ে কখনও অনুভব করিনি। কিন্তু তবুও তার পাশে ছিলাম। কিন্তু আর কতদিন? কতদিন পান্নাকে মিথ্যা আশ্বাস দিব। যদি তার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করি তাহলে আমার প্রতি তার প্রত্যাশা বাড়তেই থাকবে। যা পান্নার প্রতি অন্যায় হবে। জোর পূর্বক সম্পর্কে দুজনেই শুধু কষ্ট, অবহেলা পাব। না আমি সুখে থাকব না পান্না।
আফরান এক নাগাড়ে বলল। নূর নিস্তব্ধ হয়ে সব শুনল।
নূর — যদি ভাল না-ই বাসেন তাহলে রিলেশনে জড়ালেন কেন? আপনি তো আগে থেকেই তার প্রত্যাশা বাড়ালেন। আপনি যদি তাকে তখনই না বলে দিতেন তাহলে এতো ঝামেলা হতো না। তার প্রত্যাশা বাড়তো না, কষ্ট পেত না।
আফরান — হুম জানি। মানুষ মাত্রই ভুল। এবং আমি এই ভুলটাই করলাম। চিন্তা ভাবনা না করে আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলাম। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে চিন্তা ভাবনা করার মতো অবস্থায় ছিলাম না।
নূর — তাহলে আজ এই সিদ্ধান্ত নিলেন কি করে?
আফরান — পার্লি বোঝানোর পর অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম। বরঞ্চ পান্নার সঙ্গে রিলেশনে যাওয়ার পর রিহান, আহিল সবাই আমাকে বুঝিয়েছে কিন্তু তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করব। পরে ভাবলাম আসলে আমি শুধু নিজের সঙ্গে নয় পান্নার সঙ্গেও অন্যায় করছি। তাকে তার প্রাপ্য ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করছি।
নূর আফরানের দিকে তাকিয়ে ছোট করে নিশ্বাস ফেলল।
আফরান — কিছু বলবে?
নূর তড়িঘড়ি ডানেবামে মাথা নাড়লো। আসলে মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু জিজ্ঞেস করা আদৌও উচিৎ হবে কি না জানা নেই। তাই জিজ্ঞেস না করাই শ্রেয় মনে করল।
.
.
.
চলবে