#এক্কা_দোক্কা – ১৩
আভা ইসলাম রাত্রি
ওরা তিনজন, ঐশী একা! পথটা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! ঐশী পেচাচ্ছে! ভয়ে গলদেশ শুকিয়ে চৌচির! ঐশী নিজের নখের আঘাতে খামচে ধরলো গায়ের পোশাক! ছেলেগুলোর মুখে বিশ্রী হাসি! সোডিয়াম বাতির ঝলমলে আলোয় স্পষ্ট ছেলেগুলোর চেহারার কামনা! তাদের মধ্যে একজন ঐশীর গায়ের পোশাক টেনে খুলে ফেলল। ঐশী চিৎকার করে উঠল, বাঁচতে চাইল। তবে কেউ তার সাহায্যের জন্যে এল না। ছেলেগুলো ঐশীর উপর হামলে পড়তেই কে যেন পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
-” ওকে ছেড়ে দে! ”
কন্ঠটা কেমন যেনো, ভারী ভারী। ছেলেগুলো সেই কণ্ঠ শুনে ভয়ে জমে উঠলো। ঐশী নড়েচড়ে উঠলো! শ্বাস নিতে পারছে না সে! মনে হচ্ছে কে যেন তার গলা টিপে ধরেছে। ঐশী চেঁচালো, কেউ শুনলো না তার কথা! ঐশীর মনে হচ্ছে সে মারা যাচ্ছে। আজই তার জীবনের শেষ দিবস!শেষ মুহূর্তে ঐশী চিৎকার দিল,
-” মা……”
ঐশী ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর। ঐশী দ্রুত তার ঔষুধের বক্স থেকে ইনহেলার বের করে মুখে চেপে ধরলো। ধীরে ধীরে ঐশীর শ্বাস সহজ হয়ে এল। ঐশী ইনহেলারটা ছুঁড়ে ফেললো মাটিতে। পাগলের মত নিজের চুল খামচে ধরল। তার শক্ত হাতের স্পর্শে চুলের গোঁড়া থেকে কয়েকগোছা চুল তার হাতে চলে এল। ঐশী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। দু হাঁটুর চেপে ধরে মুখ গুজলো হাঁটুর মধ্যস্থলে! ঐশীর চোখ রক্তজবার ন্যায় লাল হয়ে আছে! দু চোখ বেয়ে যেন লাভা গড়াচ্ছে। সে চিৎকার করে বলে উঠলো,
-” কাউকে ছাড়বো না আমি। কাউকে না। সবাই মরবি তোরা। আমি নিজে তোদের মারব। এ কদিন যত পারিস উড়ে নে, তোদের ডানা চিরতরে কাটবার জন্যে আমি আসছি! আসছি আমি! ”
সে রাতে ঐশীর ভীষন জ্বর এল। জ্বরে গা যেনো পুড়ে যাচ্ছে। থার্মোমিটারের পারদ তরতর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐশী একা ঘরে ঘুমানোর কারণে তার জ্বর সম্বন্ধে কেউ জানে নাম সকাল হতে জুভান স্টুডিওর জন্যে বেরুবে। অভ্যাসবশত জুভান ঐশীর খোঁজ করলো। সার্ভেন্ট বললো,
-” ম্যাম আজকে নিজের ঘর থেকে বের হন নি, স্যার! ”
জুভানের ভ্রু কুঁচকে এল। সে জিজ্ঞেস করল,
-” খেয়েছে কিছু? ”
-” না, স্যার। ”
জুভান কোনো কথা না বলে ঐশীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দুবার দরজায় টোকা দিল। তবে ওপাশ থেকে ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জুভান কোনো উপায় না পেয়ে বলে উঠলো,
-” ঐশী? ঠিক আছো তুমি? সে সামথিং!
তবুও কেউ সারা দিল না।জুভান আর দেরি করলো না। তার মস্তিষ্ক বলছে ঐশী হয়তো ঠিক নেই। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। বিছানার এক কোণে ঐশীকে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকতে দেখে জুভান বেশ খানিকটা অবাক হলো। সে ঐশীর পাশে বসল। মেয়েটার মুখ এত শুকনো লাগছে কেন? একরাতেই চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। জ্বর নেই তো? জুভান ঐশীর কপালে হাত রাখল। সঙ্গেসঙ্গে সে হাত সরিয়ে নিল। খুব জ্বর ঐশীর। জুভান হন্তদন্ত হয়ে গেল। একরাতে কি হয়ে গেল তার? এত জ্বর কিভাবে এল? জুভান ব্যতিব্যস্ত হয়ে ডেকে উঠলো,
-” ঐশী, এই ঐশী? উঠো। ”
জুভানের ডাক শুনে ঐশী নিভুনিভু চোখে তার দিকে তাকালো। মেয়েটা চোখ খুলে তাকাতে অব্দি পারছে না। চোখের পাপড়িতে কেউ বোধহয় পাথর চেপে দিয়েছে। জুভান জিজ্ঞেস করল,
-” এত জ্বর কিভাবে এল? রাতে গোসল করেছিলে তুমি? ”
ঐশী মাথা দুলিয়ে মানা করল। জুভান মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিল। ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” একটু উঠে বসতে পারবে? কিছু খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে তো। ”
ঐশী কিছু বললো না। অবশ্য জুভান আর অপেক্ষা করল না। ঐশীর পিঠে হাত রেখে তাকে উঠে বসালো। সার্ভেন্ট ডেকে এনে খাবার আর মেডিসিন দিয়ে যেতে বলল। ঐশী বিছানায় হেলান দিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
-” আমি ঠিক আছি। খামোকা এত ব্যস্ত হবেন না। ”
জুভান রেগে গেল। বললো,
-” হ্যাঁ, তা ত দেখতেই পারছি। চুপ করে বসে থাকো। একটাও কথা বলবে না। যা করতে বলছি আপাতত তাই করো। ”
সার্ভেন্ট স্যুপ দিয়ে গেল। জুভান স্যুপের প্লেট ঐশীর দিকে এগিয়ে বললো,
-” খেতে পারবে নাকি খাইয়ে দিতে হবে? ”
ঐশী দুর্বল হতে স্যুপের প্লেট নিজের দিকে টেনে নিল। বললো,
-” পারবো! ”
আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাটা বললেও ঐশী পারলো না। চামচ হাতে তুলতেই চামচটা হাত থেকে পড়ে গেল। ঐশী তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে। ঐশীর এমন জেদ দেখে জুভান বিড়বিড় করে বললো, ‘ মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না! ‘
জুভান আর দেরি করল না। ঐশীর হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিয়ে নিজেই খাইয়ে দিতে লাগলো। ঐশী বাঁধা দিতে চাইল। বললো,
-” আমি পারবো তো। ”
জুভান কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বললো,
-” দেখছিলাম তো কেমন পারছিলে। ”
ঐশী আর কথা বললো না। অসুস্থ না হলে জুভানের এই কথার উত্তরে আরো দুটো কথা শুনিয়ে দিত সে। তবে আজ পারলো না। শরীরটা বোধহয় ব্যথায় পিষে যাচ্ছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। জুভান স্যুপ খাইয়ে মেডিসিন এগিয়ে দিল। সবকিছু শেষ করে জুভান ঐশীকে আবারও বিছানায় শুইয়ে দিল। জুভান উঠে দাঁড়াল। ঐশীর উদ্দেশ্যে বললো,
-” চুপ করে এখন শুয়ে থাকবে। কিছু দরকার হলে সার্ভেন্ট ডাকবে। নিজে পাকামো করতে যাবে না। ঠিকাছে? ”
ঐশী মাথা নাড়ল। আজ ঐশীকে এত নীরব থাকতে দেখে জুভান হেসে ফেলল। ঐশীর দিকে চেয়ে টিটকারী দিয়ে বললো,
-” সারাক্ষণ বকবক না করে এমন করে সবসময় চুপ করেও ত থাকতে পারো। ”
জুভানের কথা শুনে ঐশী ক্ষেপে গেল। তবে মুখ খুললো না। আজ যা বলার বলে নিক। সময় তারও আসবে। জুভান আর জ্বালালো না ঐশীকে। স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল সে।
___________________________
নতুন গানের লিরিক্সটা আরো একবার দেখে নিল জুভান। ডিরেক্টর একপাশে সেই গানের তদারকি করছেন। গান রেকর্ড করা শেষ হলে জুভান স্টুডিও থেকে বেরিয়ে পড়ল। এখন তার একটা শুটিং সেটে যেতে হবে। একটা নাটকের জন্যে তাকে হায়ার করা হয়েছে। নাটকের প্রধান চরিত্রে রুল তাকে করতে হবে। জুভান প্রথমে রাজী হয়নি তাতে। গান গাওয়া ছাড়া এই একটিং-ফেক্টিন তাকে দিয়ে হয়না। কিন্তু প্রোডিউসারের এক কথা, এবারের নাটকে জুভান না থাকলে তিনি এ নাটকে পয়সা ঢালবেন না। প্রোডিউসারের সাথে জুভানের বেশ সখ্যতা থাকায় সে এই ডিলে রাজি হয়েছে।
স্টুডিও থেকে বের হতেই জুভান ঐশীর ফোনে কল দিল। ওপাশ থেকে ফোন নট রিচেবল আসছে। জুভান বারবার ট্রাই করছে। তবে লাভ হচ্ছে না।
-” হ্যাই জুভান। ”
পেছন থেকে চেনা এক কণ্ঠস্বর শুনে জুভানের মাথা রীতিমত বিগড়ে গেল। সে বিড়বিড় করে বলে উঠল, ‘ শিট, এগেইন দ্য ব্লাডি বিচ! ‘
ইতিমধ্যে মেয়েটা জুভানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জুভান দাত খিচিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। কোনোরূপ ভনিতা না করে সোজাসাপ্টা বললো,
-” হোয়াট ইউ নিড নাও? আমার পিছু কেনো তুমি ছাড়ছ না? আই ডোন্ট লাইক ইউ, এই সামান্য বিষয়টা কেনো তুমি বুঝতে পারছ না ইউশা! ”
#চলবে
গল্পটা যারা পড়বেন, রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন। আপনাদের এই সামান্য রিয়েক্ট-কমেন্ট আমাকে বহুগুণে উৎসাহিত করে! ধন্যবাদ!
লেখিকার পাঠকমহল
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri