এক্কা দোক্কা পর্ব-২১

0
1160

#এক্কা_দোক্কা – ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

জোহান ক্রমশ কেয়ার কানের কাছে ঝুঁকে এল। কেয়া স্থিরচিত্তে নিজ স্থানে বসে আছে। রুদ্ধশ্বাস অবস্থা! জোহান কেয়ার কানেকানে বললো,
-” রিয়ার তালুকদার ও আপনার মধ্যকার দ্বন্দ্বযুদ্ধের কথা আপনি মুখে বলবেন নাকি আমি আমার ওয়েতে স্বীকার করিয়ে নেবো, মিস কে…য়া? ”

জোহানের টেনে টেনে বলা সম্বোধনে কেয়ার মুখের রং পাংশুটে হয়ে গেল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠলো সে,
-” কি সব আজেবাজে বকছেন? তার সাথে আমার কোনোরূপ বিরোধ নেই। বুঝেছেন? ”
-” ওহ, তাই নাকি? তাহলে আপনাকে একটা গান শোনানো যাক, মিস কেয়া। কি বলেন? ”

কেয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাল জোহানের দিকে। জোহান মিহি হাসল। পুলিশের সরকারি ফোন বের করে একটা ফোন কলের রেকর্ড অন করলো। শুনা যাচ্ছে তাতে,
-” রিয়াদ, তুমি এটা করতে পারো না! ”
রিয়াদের গলা,
-” কেন পারিনা! রোজ রোজ একই স্বাদের বিরিয়ানি খেতে কার ভালো লাগে বলো ত! স্বাদ বদলের প্রয়োজন এখন আমার। ”
-” আমি তোমায় ভালোবাসি, রিয়াদ! ”
-” তো আমিও তো বাসি। কিন্তু ভালোবাসলে যে এক দেহেই আটকে থাকতে হবে, তেমন ত কোনো কথা আমাদের মধ্যে হয়নি। ”
-” প্লিজ, রিয়াদ। পায়ে পড়ি তোমার। ওই মেয়েকে তুমি স্পর্শ করো না। আমার গা জ্বলে ওই মেয়েকে দেখলে। আমি তোমার পাশে ওই মেয়েকে মেনে নেব না। কিছুতেই না। ”
-” তো মেনো না। কে বলছে মানতে? তবে হ্যাঁ, বিয়ে আমি তোমাকেই করব। ঘরে পার্মানেন্ট থাকবে তুমি, আর বাইরেরটা আমি জোগাড় করে নেব। চিল, বেবি। ”
-” তুমি যদি ঐ মেয়েকে স্পর্শ করো, আমি তোমায় সত্যি সত্যি খুন করে ফেলব রিয়াদ। ”
কেয়ার তেজপূর্ণ কণ্ঠ।
-” করতে পারলে করে ফেলো। ”
-” আমি সিরিয়াস, রিয়াদ। ”
-” আমিও সিরিয়াস। তুই আমায় খুন করতে আয়, আমি তোর সামনে ওই মেয়েকে আমি স্পর্শ করব। তুই আমার টিকিটারও কিচ্ছুটি করতে পারবি না, শা/লি। ”

টুট..টুট…টুট! ফোন কেটে গেছে। জোহান চেয়ে আছে কেয়ার দিকে। কেয়ার চোখ আগুন হয়ে আছে। চোখের মণি ক্রমশ খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে ঘুর্নিপাক খাচ্ছে প্রতিশোধের কালো ঝড়। মনে পড়ছে জীবনের কিছু দুর্বিষহ স্মৃতি! কেয়া পাগলের মত মাথা নাড়ালো। চিৎকার করে বলল,
-” হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি গিয়েছিলাম ঐ কুকুরের বাচ্চাকে খুন করতে। তার জান আমার এই দুই হাতে কবজ করে ফেলতে চেয়েছিলাম। নিজ হাতে জঘন্যভাবে মারতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমি তাকে মারতে পারিনি। তার আগেই ব্যাটা মরে গেল। কেউ আমার বদলে তাকে খুন করে ফেললো। আমার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেল। আফসোস! ”

কেয়ার চিৎকারে সম্পূর্ণ লকাপ তরতর করে কম্পিত হলো যেন। জোহান স্বাভাবিক চোখে কেয়ার দিকে চেয়ে আছে। এমন কেইস জীবনে সে অনেক দেখেছে। ভালোবাসলে, সেই ভালোবাসার পরাজয় হতে সে দেখেছে। আপনকে নিমিষেই পর হয়ে যেতে দেখেছে। আরো কত কি দেখেছে…

কেয়ার দু চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। পাগলের মত কাঁদছে সে। হাত পা দড়ি থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ক্রমাগত! জোহান কেয়াকে সময় দিল। মহিলা কনস্টেবলকে কেয়ার দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে সে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল। আজ একবার মিতুর সাথে দেখা করা দরকার। দেখা হওয়ার পর মিতুকে একটা পাঁচ টাকার গোলাপ উপহার দিলে কেমন হয়? খুশিতে মেয়েটা পাগল না হয়ে যায়!
__________________________
জুভান স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরুবে একটু পরই। আজ একটা মিটিং আছে তার। নিজের একটা মিউজিক ব্যান্ড করার খুব ইচ্ছে জুভানের। সে আপাতত সেই অনুযায়ীই এগুচ্ছে। আজকের মিটিংটা মূলত এই নিয়েই।

-” আসবো? ”
দরজার টোকা দিয়ে বললো ঐশী। জুভান বা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে গলা উঁচু করে বললো,
-” আসো, ঐশী। ”
ঐশী ভেতরে ঢুকলো। বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে ঐশী কোথাও যাচ্ছে। জুভান আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। চুলে চিরুনি চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কোথাও যাচ্ছ, ঐশী? ”
ঐশী উত্তর দিল,
-” একটু আশ্রমে যাব। ”
-” ওহ, গ্যারেজে গাড়ি আছে। নিয়ে যেও। ”
ঐশী বাঁধা দিল,
-” না, গাড়ি লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব। ”
জুভান তীক্ষ্ণ চোখে আয়নায় ঐশীর প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি? ”
ঐশী ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
-” মানে? ”
-” আমি তোমায় আমার ফয়সালা শুনাচ্ছি। একা কোথাও যাচ্ছ না তুমি। গাড়ি থাকবে, গাড়ি দিয়ে যাবে, আর গাড়ি দিয়েই ফিরবে। বুঝা গেছে? ”
ঐশী মনেমনে ভালোই বিরক্ত হলো। বললো,
-” আমি কি আগে একা কোথাও যাইনি, নাকি এই প্রথম? ”

জুভান চমৎকার হাসল। ডান গালে সুন্দর একটা টোল পড়লো তাতে। ঐশী হকচকিয়ে গেল। এত সুন্দরও কারো হাসি হয়? ঐশীর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। জুভান চিরুনি রেখে দিল। ঐশীর দিকে এগিয়ে এসে মুখ রাখলো ঐশীর কানের লতিতে। ঐশীর শরীর শিহরিত হল। পা দিয়ে খামচে ধরলো কার্পেট। জুভান ঐশীর শরীরের কাঁপুনি স্পষ্ট বুঝতে পেরে বক্র হাসল। ঐশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” আগে তুমি যেমনই থাকো না কেন, আমার তাতে বিদুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু এখন তুমি ইজহার জুভান মির্জার লিগ্যাল ওয়াইফ! আর জুভান তার ব্যাক্তিগত মানুষকে যথাযথভাবে আগলে রাখতে জানে, মিস ঐশী! তাছাড়া, সুন্দরী মেয়েদের একা ছাড়ার নিয়ম নেই। পাপ লাগে। ”

জুভান শিস বাজিয়ে জিন্সের পকেটে দুহাত গুঁজে চলে যাচ্ছে। ঐশী এখনো স্থির হয়ে নিজ স্থানে দাড়িয়ে। গা টা কি কাঁপছে তার? ঐশী বুকে হাত রাখল। বুকটা এমন অদ্ভুত ভাবে লাফাচ্ছে কেন? কানে হাত দিল। ওমা, কান এত গরম হয়ে আছে কেন? ঐশী কি লজ্জা পাচ্ছে? না, না এটা হতেই পারে না। ঐশী দ্রুত নিজের অনুভূতিকে সামলে নিল। ঐশী এখন এমন একটা পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছে, যেখানে কারো জন্যে তার অনুভূতি জন্মানো পাপ সমান! জুভানের থেকে ঐশীকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে!
________________________________
জুভানের বলা সত্ত্বেও ঐশী জুভানের গাড়ি নেয়নি। জুভানের কথা মানা মানেই তার দিকে আরো এক কদম এগিয়ে যাওয়া। সেটা ঐশী চায়না। ঐশীর কাজ শেষ হলেই, সে জুভানকে ছেড়ে চলে যাবে। সত্যি বলতে তো সে জুভানকে নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করেছে। স্বার্থপর সে! খুব বেশী স্বার্থপর!

ঐশী রিকশায় হুড তুলে বসে ছিল। মাস্ক দ্বারা মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা। বৌভাতের পর থেকে ঐশীকে বাংলাদেশের সবাই চেনে। তাই একা একা কোথাও বেরুনো মুশকিল হয়ে পড়েছে ওর জন্যে। মনের ভাবনায় বুদ হয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঐশীর চোখ ভিজে এল, সে খেয়াল কেই-বা রাখল?

আশ্রমের সামনে এসে ঐশী রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই কেউ ঐশীর মুখে গন্ধযুক্ত রুমাল চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ঐশী চোখ তুলে তাকায়। সঙ্গেসঙ্গে সে চমকে উঠে। জ্ঞান হারানোর এক পর্যায়ে নিভুনিভু কণ্ঠে বলে উঠে,
-” অ..ন..ল ”

#চলবে
গঠনমূলক কমেন্ট করবেন,প্লিজ। এতে আমি দ্বিগুণ উৎসাহিত হই। গল্পটা তাড়াতাড়ি দেওয়ার আগ্রহ বোধ করি। তাই, গল্প সম্বন্ধে দুলাইন মন্তব্য করার অনুরোধ!

লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here