চন্দ্ররঙা প্রেম_২ পর্বঃ২

0
1357

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ২
#আর্শিয়া_সেহের

-“এই উর্বি,শুনো না।”
উর্বিন্তা বেঞ্চের উপর দু’হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তর দিকে তাকালো।‌ শক্ত গলায় বললো,
-“তোকে আর কতবার বলবো আমাকে তুমি বলবি না? কথা কানে যায় না তোর?”
শান্ত মুখ বেজার করে বললো,
-“তোমাকে তুই বলার চেষ্টা করি আমি কিন্তু পারি না। আসলে তোমাকে তুই বলতে আমার কেমন যেন লাগে।”
উর্বিন্তা ভেংচি কেটে বললো,
-“এ্যাহ কেমন যেন লাগে। ঢং সব। বল কি বলবি।”

শান্ত আগ্রহ নিয়ে বললো,
-“কয়েকদিন পরই তো এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তারপর কোন কলেজে ভর্তি হবে? এটা নিয়ে কিছু ভেবেছো?”

উর্বিন্তা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আমি কোন কলেজে ভর্তি হবো এটা শুনে তোর কি? তুই নিজের চরকায় তেল দে যা।”

শান্তর মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো।‌ উর্বিন্তা শান্তর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলো। বিরবির করে নিজে নিজে বললো,
-“একবার তোর টানে ফিরে এসে খুব বড় ভুল করেছি আমি। পড়াশোনা না করে সারাদিন হাবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকিস। আর পরীক্ষায় পাস লাড্ডু। এবার আর ওই ভুল করবো না। ইন্টারমিডিয়েট আমি অন্য কলেজেই পড়বো। তোকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।”

রাহুল হাঁসতে হাঁসতে শান্তর দিকে এগিয়ে এলো। শান্তর কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“উর্বিন্তা ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল, শান্ত। ও কিভাবে তোকে ভালোবাসবে বল?কতবার বললাম একটু পড়াশোনা কর।”
শান্ত রাহুলের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। রাগী কন্ঠে বললো,
-“ও ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল হলে আমিও ক্লাসের সেকেন্ড বয়।”
রাহুল বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“তাই নাকি? তা তুই সেকেন্ড বয় কবে হইলি?”
শান্ত দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
-” উর্বি ফার্স্ট দিক থেকে সেকেন্ড আর আমি লাস্ট দিক থেকে সেকেন্ড। ব্যাপারটা তো সেইম তাইনা রাহু?”
রাহুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তার ক্লাসের লাস্ট দিক থেকে আসা সেকেন্ড বয়ের দিকে।

…..

তনিমের দেড়-দুই ঘন্টার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রুশান ঠিক তিনঘন্টা পর পৌঁছালো কাজের জায়গায়। তনিম গেটের কাছে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশান বাইক সাইড করে রেখে তানিমের কাছে গেলো। কিউট একটা স্মাইল দিয়ে বললো,
-“সরি তনিম,একটু দেরি হয়ে গেলো।”
তনিম রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“জ্বি স্যার, একটুখানি দেরিই হয়েছে। এখন দয়া করে ভেতরে চলুন। সবাই অপেক্ষা করছে।”

রুশান হেঁসে তনিমের সাথে ভেতরে গেলো। সে সাত খুন করে এলেও এই ছেলেটার কাছে মাফ পেয়ে যায়। ছেলেটা শুধু তাকে সম্মান আর ভালোবাসাই দিতে জানে। রুশান ভেতরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। এটা একটা পুরোনো বাংলো বাড়ি। সাধারণত খুব গোপন মিটিংগুলোই এখানে হয় ।
রুশান হাতের ইশারায় সবাইকে বসতে বলে নিজেও চেয়ারে বসে পড়লো।

রুশান চেয়ারে বসেই তনিমকে ইশারায় নিচু হতে বললো। তনিমের কানে কানে কিছু একটা বলার সাথে সাথেই তনিম সতর্ক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“হালদার সাহেব, কষ্ট করে উঠে আসুন একটু। আপনার সাথে আলাদা কিছু কথা ছিলো। প্লিজ কোঅপারেট উইথ আস।”

বিজয় হালদার ডান হাতটা হালকাভাবে পেছনে ঘুরিয়ে নিতে গেলে তনিম ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো,
-“আরে হালদার সাহেব,ওটা লুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার রিভলবার ইতোমধ্যে শকুনের চোখে পড়ে গেছে। আপনাদেরকে আগেই বলেছি আমার স্যারের ব্যাপারে। আপনি বোধহয় দাম দেন নি আমার কথা।”
তনিম আফসোসের সুরে শেষের কথাগুলো বললো।

রুমের চারপাশে থাকা বন্দুকধারী লোকগুলো এসে বিজয় হালদারকে ঘিরে ফেললো। তনিম তাদের উদ্দেশ্য বললো,
-“ওকে নিয়ে বেঁধে ফেলো। আর স্যারকে খুন করার জন্য ওকে কে পাঠিয়েছে সেটাও বের করো।”
লোকগুলো বিনা বাক্যব্যয়ে বিজয় হালদারকে নিয়ে চলে গেলো।

-“ওকে, দেন শুরু করি আমরা?”
রুশানের কথায় সবার ধ্যান ভাঙলো। তারা পাশে বসেও এতোক্ষণ বুঝতে পারেনি যে বিজয় হালদার বন্দুক নিয়ে বসে আছে অথচ এই ছেলে রুমে ঢুকেই বুঝে গেলো? আসলেই ছেলেটার বুদ্ধির তুলনা হয় না।

তনিম ল্যাপটপ খুলে রুশানের সামনে রাখলো। রুশান কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে পুরোটা দেখে বললো,
-“আপনারা সবাই জনেন যে আমাকে এখানে কে পাঠিয়েছে আর কেন পাঠিয়েছে। রাফিন স্যার এই কেসটি সম্পর্কে বহু তথ্য আপনাদের দিয়েছে আর আপনাদের মধ্যেই কেউ কেউ গাদ্দারি করেছে। যাই হোক ,আমি সেদিকে যাবো না। আমি আপনাদেরকে আপনাদের কাজটা বুঝিয়ে দিতে এসেছি ভালো মতো। এরপর আপনারা কাজ করবেন নাকি নিজ পেশার সাথে বেঈমানি করবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার।”

-“একটা প্রশ্ন ছিলো, স্যার।”
মধ্যবয়স্ক হেলাল উদ্দিন দাঁড়িয়ে বললেন।

রুশান সোজা দৃষ্টি তাক করলো তার দিকে। হেলাল উদ্দিন ঘনঘন পলক ফেললেন কয়েকবার। রুশানের সম্মতি জানানোর আগেই কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো,
-“চট্টগ্রামে আপনাকে কে সাহায্য করে স্যার? এটা কি আমরা জানতে পারি?”
রুশান বাঁকা হেঁসে বললো,
-“এটা জানা আপনাদের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি না আমি। সিট ডাউন।”

হেলাল উদ্দিন বসে পড়লেন। এইটুকু সময়েই তিনি বুঝে গেছেন এই ছেলেটা খুব একটা সুবিধার না।
রুশান সবাইকে তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তনিমও বেরিয়ে পড়লো রুশানের পিছু পিছু। রুশান বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
-“হেলাল উদ্দিনের দিকে গোপনে নজর রাখো। চট্টগ্রামে আমার কাজে আমাকে কে সহায়তা করে এটা যেন সে ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে।”
তনিম জোর গলায় বললো,
-“ওকে স্যার। কেউ জানতে পারবে না।”
-“হুম। আর শোনো,আমি কাল যশোর চলে যাবো।‌‌ প্রয়োজন না হলে আপাতত আর আসবো না। এদিকটা সামলে নিয়ো।”
-“আপনি কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। আমি এদিকটা সামলে নিবো।”

রুশান বাইক ঘুরিয়ে নিতেই তনিম পিছু ডাকলো। রুশান থেমে গেলো। মাথা ঘুরিয়ে বললো,
-“কিছু বলবে?”
তনিম এগিয়ে এসে বললো,
-“পুনম ম্যাম কল করেছিলো।”
রুশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“পুনম তোমাকে বারণ করেছে না তাকে ম্যাম ডাকতে? এরপরও ম্যাম বলো কেন? শুধু পুনম বলবা। এখন বলো সে কি বললো তোমাকে?”
তনিম মাথা চুলকে বললো,
-“স্যার আপনি নাকি তার সাথে কথা বলতেছেন না। কল রিসিভ করতেছেন না। এজন্য কান্নাকাটি করছিলো ফোন দিয়ে।”

রুশান হো হো করে হেঁসে উঠলো। হাঁসতে হাঁসতে বললো,
-“তা তুমি কি বললে? শান্তনা টান্তনা দিয়েছো একটু?”
তনিম পেঁচার মতো মুখ করে বললো,
-“আমি বললাম,আপনি‌ খুব ব্যস্ত এজন্য ফোন রিসিভ করছেন না। এতেই সে ক্ষেপে উঠলো। বললো,আপনার এত কি কাজ যে তার সাথে একটু কথা বলার মতো সময়ও আপনার হচ্ছে না। আমি নাকি তার পক্ষ ছেড়ে আপনার পক্ষে চলে গেছি। এবার যশোর গেলে সে আমার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবে ,মুখের উপর ঘুসি মারবে এসব বলে শাসিয়েছে।”

রুশান তনিমের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দেখে পেট চেপে হেঁসে উঠলো। কোনো মতে হাঁসি থামিয়ে বললো,
-“খুব তো গিয়ে বোন পাতিয়েছো। এবার সামলাও। দরকার পড়লে একটু মাইর খাও।”
কথাগুলো বলে রুশান বাইক টেনে চলে গেলো।

তনিম একবুক হতাশা নিয়ে বিরবির করে বললো, ‘কোন কুক্ষণে যে ওই মেয়ের সামনে পড়ছিলাম। একজনের ঝাড়িঝুড়ি খেয়ে হচ্ছিলো না আমার। যেচে পড়ে আরেকজনকে বোন‌ বানিয়েছি ঝাড়ি খাওয়ার জন্য।”

….

শান্তর কোচিং শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। কোচিং থেকে বেরিয়ে দেখলো তাদের ড্রাইভার আঙ্কেল তার জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। শান্ত দুলতে দুলতে গাড়ির কাছে গেলো। দরজা খোলার সময় চোখ পড়লো রাস্তার অপর পাশে। রুশান বাইক নিয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত শান্ত খুব কষ্টে চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো,
-“রুশাআআন ভাইইই।”

রাস্তাটা বেশ ফাঁকা হওয়ায় রুশানের কানে অস্পষ্টভাবে হলেও শান্তর ডাক পৌঁছালো। রুশান বাইক থামিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে রাস্তার ওপাশে হাত নাড়তে থাকা শান্তকে দেখতে পেলো। বাইক ঘুরিয়ে শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রুশান। শান্ত ড্রাইভারকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো রুশানের সাথে যাওয়ার কথা বলে।
রুশান থামতেই শান্ত বললো,
-“তুমি গতকালকে এসেছো অথচ আমার কথাই হলো না তোমার সাথে।”
রুশান হেঁসে বললো,
-“কথা বলার দিন যাচ্ছে কই? নে বাইকে ওঠ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত তুই।”

শান্ত বাইকে উঠতে উঠতে বললো,
-“হুম, হুম। ঠিক ধরেছো তুমি। আমি সত্যিই খুব ক্লান্ত। তোমাকে ডাকতে গিয়ে আরো ক্লান্ত হয়ে গেছি।”

রুশান শব্দ করে হেঁসে ফেললো। বললো,
-“আজকে এতো লেট হলো কেন? তোর তো সন্ধ্যার আগে ছুটি হয়।”
-” আরে সামনে পরীক্ষা না? এজন্য এখন থেকে একটু দেরি করে ছাড়বে।”
-“ও আচ্ছা। তো প্রেমিক পুরুষ পড়াশোনা করতেছেন নাকি সারাক্ষণ উর্বি সুন্দরীর দিকে তাকিয়েই কাটাচ্ছেন?”
শান্ত‌ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“ও আমাকে ভালোবাসে না ,রুশান ভাই। ও শুধুমাত্র বন্ধুর মতো মিশে আমার সাথে।”

শান্তর বেদনাবিধুর কথায় রুশান ঠোঁট চেপে হাঁসি আটকালো। গম্ভীর গলায় বললো,
-“ও তোকে ভালোবাসবে কেন ? তোর কি কোনো যোগ্যতা আছে? না তো ভালো পড়াশোনা করিস, না আছে কোনো লক্ষ্য। ও কি তোর ভালোবাসা খেয়ে জীবন কাটাবে?”

এসব কথার মাঝেই বাড়ি পৌঁছে গেলো শান্ত আর রুশান।‌ বাইক থামতেই শান্ত থমথমে মুখে হাঁটা শুরু করলো। রুশান মুচকি হেঁসে শান্তকে ডাকলো। শান্ত দাঁড়ালো কিন্তু রুশানের কাছে আসলো না। রুশান বাইকটা সাইড করে রেখে শান্তর কাছে গেলো। শান্তর কাঁধে হাত রেখে বাড়ির মধ্যে যেতে যেতে বললো,
-“এখনো সময় আছে শান্ত, পড়াশোনায় মন দে। উর্বিন্তাকে ভালোবাসতে বারণ করছে না কেউ। তুই ওকেও ভালোবাস আবার ক্যারিয়ারেও ফোকাস কর। তুই এভাবে খারাপ রেজাল্ট করলে উর্বিন্তা কেন তোকে তার বয়ফ্রেন্ড,বল? ও কিভাবে মানুষের কাছে বলবে যে ওর বয়ফ্রেন্ড একটা গবেট। পড়াশোনা পারে না।”

শান্ত মুখ ফুলিয়ে গমগমে কন্ঠে বললো,
-“পড়াশোনা করতে গেলে ওকে ভালোবাসার সময় কই পাবো? এতো সময় আছে নাকি আমার?”
রুশান কপাল চাপড়ে বললো,
-“দেখ,আমি পড়াশোনা,কাজ এগুলোর পাশাপাশি তোর পুনম আপুকে ভালোবাসি না?”
-“হু। তা তো বাসো।”
রুশান শান্তর সামনে এসে শান্তর দু কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“পড়াশোনা বা কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার জন্য সময় বের করে নিবি। প্রিয় মানুষগুলো আমাদের কাছে অঢেল সময় চায় না । তারা চায় প্রায়োরিটি। সব কাজের মধ্যে তুই তাকে একটু মনে কর , এটুকুতেই সে খুশি হবে। তবে নিজের ক্ষতি করে তাকে ভালোবাসতে গেলে তুই উভয় সংকটে পড়বি। দেখা গেলো তাকেও হারাবি আবার নিজেরও ক্ষতি হবে।”

রুশান শান্তকে ছেড়ে গেস্ট রুমে ঢুকে পড়লো। আবার পেছনে ফিরে দরজার কাছে এসে বললো,
-” তুই তো বেশ বুদ্ধিমান । তাহলে এমন বোকা বোকা কাজ করিস কেন?এখন থেকে নিজের ভালোটা বুঝতে শিখে নে।”

শান্ত বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে রুশানের কথাগুলো ভাবলো। একসময় কিছু কথার সাথে বাস্তব জীবনের কানেকশন পেল। মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,’এখন থেকে নিজের ভালোটাও আমি বুঝবো,উর্বি।’

….

-“শান্ত কোথায় রে, ঝুম?”
ডিনার করতে বসে শাফিয়া আক্তার প্রশ্ন করলেন। এতো বছর পরও তারা একসাথেই রাতের খাবার খায়।
রুমঝুম গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,
-“সাঁঝ ডাকতে গেছে ,আম্মু। চলে আসবে।”

-“আসবে না। সে প্রচুর পড়ালেখা করতে বিজি।”
সাঁঝের কথায় সবাই সিঁড়ির দিকে তাকালো।‌ সাঁঝ একহাত কোমড়ে রেখে অন্য হাতে রেলিং ধরে মুখ ফুলিয়ে নামছে। ইমতিয়াজ মাহমুদ সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“কি গো ছোট গিন্নি? এতো‌ রাগ করে আছো কেন?”

সাঁঝ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“রাগ করবো না? তোমার ছোট ছেলে আমাকে তুলে রুমের বাইরে রেখে দরজা আটকে দিয়েছে। আমার অপমান করেছে। তা আমি রাগ করবো না তো কি করবো?”
ইমতিয়াজ মাহমুদ চোখ বড় বড় করে বললেন,
-“বলে কি? এতো বড় সাহস ছেলের? আমার বাড়িতে আমার ছোট গিন্নির এমন অপমান? দাঁড়াও দেখাচ্ছি আজকে ওকে।”

শান্ত সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে তাদের কথা শুনছিলো । নিচে নেমে সাঁঝের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
-“আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা কর মেরি মা।”
সাঁঝ উল্টো ঘুরে রুশানকে ডাকতে চলে গেলো। শান্তকে পাত্তাই দিলো না।
শান্ত উঠে গিয়ে টেবিলে বসলো। এই বাড়ির বর্তমান কর্ত্রী সাঁঝ। তার অপমান করা মানে চরম বেয়াদবি। শান আর রুমঝুম শুধু মিটমিট করে হাঁসছে।

রুশান খেতে খেতে সবার দিকে একবার তাকালো। সবাই একমনে খাচ্ছে। রুশান গলা ঝেড়ে বললো,
-“আমার কিছু কথা ছিলো। আঙ্কেল আর ভাইয়া অনুমতি দিলে বলতাম।”
ইমতিয়াজ মাহমুদ খেতে খেতে বললো,
-“এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে রে বেটা? তুইও এ বাড়ির ছেলের মতোই। যা বলতে চাস বলে ফেলবি।”

রুশান রুমঝুমের দিকে একবার তাকালো। রুমঝুম ভ্রু কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশান বেশ সময় নিয়ে বললো,
-“আপনাদের অফিসে কোনো মেয়ে এমপ্লয়ি নেওয়া যাবে? আসলে একজনের খুব প্রয়োজন। সে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।”

শান কিছুক্ষণ রুশানের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“শিক্ষাগত যোগ্যতা একটু কম হয়ে যাচ্ছে। অনার্সটা কমপ্লিট করুক সে।”
রুশান খাওয়া বন্ধ করে পিহুর পুরো‌ ঘটনাটা খুলে বললো। সবাই রীতিমত নির্বাক হয়ে গেলো। এতো জঘন্য মানুষ হয়?
শাফিয়া আক্তার বললো,
-“এমন মেয়েদের চাকরি দেওয়াই যায়। তারা উচ্চ শিক্ষিতা না হোক ,তবে মন দিয়ে দক্ষতার সাথে কাজটা করার চেষ্টা করে। কারন এই কাজের উপরই তার পুরো পরিবার নির্ভরশীল।”
ইমতিয়াজ মাহমুদও শাফিয়া আক্তারের কথায় সম্মতি জানালেন।

শান খাওয়া শেষ করে উঠে বললো,
-“তুমি কালকে মেয়েটাকে আমার সাথে অফিসে দেখা করতে বলো। তুমিও আমার‌ সাথে যেয়ো। মেয়েটা নার্ভাস ফিল করতে পারে একা।”
রুশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। হেঁসে বললো,
-“অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।”
বেসিনে হাত ধুতে ধুতে শান বললো,
-“রাখো তোমার ধন্যবাদ। আমার সাথে ফর্মালিটি করতে হবে না।”

রুশান খাওয়া শেষ করে রুমে এসে পিহুকে কল করলো। একবার রিং হতেই পিহু রিসিভ করলো। রুশান হেঁসে বললো,
-“কি মিস পিহু? আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলেন মনে হচ্ছে।”
পিহু কিছুটা লজ্জা পেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-“আসলে তা না। আমি..”
-“থাক আর কিছু বলতে হবে না। শুনুন ,কাল সকাল নয়টার দিকে আমি একটা ঠিকানা পাঠাচ্ছি ,সেখানে চলে আসবেন। আই হোপ ,কালই আপনার চাকরি কনফার্ম হয়ে যাবে।”

পিহু খুশিতে বাকহারা হয়ে পড়লো। সে নিজের ইচ্ছায় কাটানোর মতো একটা জীবন পাবে এর চেয়ে ভালো সংবাদ আর কি হতে পারে। উত্তেজনায় ঠোঁট কাঁপছে পিহুর। খুব কষ্টে বললো,
-“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার কথা।”
রুশান হেঁসে ফেললো পিহুর কথায়। পিহুকে আশ্বস্ত করে বললো,
-“কষ্ট করে বিশ্বাস করে নিন। আমি ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি এসএমএস করে। সময়মতো চলে আসবেন। রাখছি এখন।”

রুশান ফোন কেটে পিহুকে ঠিকানা এসএমএস করে দিলো। পিহু ঠিকানাটা চিনতে পারলো। তার বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে না। আনন্দে আত্মহারা পিহু এই খুশির খবরটা তার বাবা-মা কে দেওয়ার জন্য দৌড়ে গেলো। পিহুর মা-বাবা কেঁদে ফেললো খুশিতে। তারাও তো চায় তাদের মেয়ের একটা সুন্দর জীবন হোক। কিন্তু ওই বদমাইশ ছেলেটা আবার কোনো ঝামেলা না করলেই হয়।

পিহু চুপচাপ তার মায়ের কোলে শুয়ে পড়লো। আজ অনেকদিন পর তার একটু শান্তি শান্তি লাগছে। লাগবে না ই বা কেন? নতুন জীবন হাতছানি দিয়ে ডাকছে যে তাকে। সাথে এসেছে নতুন কিছু অনুভূতি।

চলবে……..

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here