#যখন_দুজনে_একা
৫ম পর্ব
মোবাইল এর রিং এর শব্দে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল ! সাউন্ড অফ করে দিল । তাকিয়ে দেখে রিয়াদ ভাইয়ের ফোন! হসপিটাল থেকে !
ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে এলো মাহি, রুবা ঘুমাচ্ছে!
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিয়াদ ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠস্বর শুনতে পেল,
কি পাগলা কি খবর তোর?
বস্ আমার কি আজ মর্নিং ছিল নাকি?
না না এই কথা কওয়ার জন্য ফোন দেই নাই ! তোমার আজ মর্নিং ইভিনিং কোন সিফট নাই !
তোমার আজকা ছুটি ! সবাই তোমারে গিফট দিলো একটা!
বস্ এটার দরকার ছিল না ! আমি আসব ইভিনিং এ!
কোন দরকার নাই রেস্ট নাও!
আরে মিয়া ইনভেস্ট করতাছি , আগামী মাসে ভুটান যামু পরিবার নিয়া তখন পুসায় দিও !
থেঙ্কস বস।
ওদিকে সব ঠিক আছে তো মাহি?
ঠিক আছে !
রাখলাম!
বলেই রিয়াদ ভাই লাইন কেটে দিল!
সাড়ে নয়টা বাজে!
ভোরের দিকে মাহির চোখ লেগে এসেছিল !
কত বেলা হয়ে গেছে ।
রুমে ঢুকে মনে হলো রুবাকে কি ডাকবে ?
না থাক ঘুমাক । রাতে অনেক শরীর খারাপ ছিল !
ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বের হতে হতে প্রায় দশটা বেজে গেছে , রুবা এখনো ঘুমাচ্ছে !
ও ওর মত ঘুমাক এমনিতেই ওর রেস্ট ই দরকার বেশি!
রুম থেকে বের হয়ে হাসাহাসি র শব্দ কানে এলো ! অনেক দিন পর এ বাড়িতে এভাবে কেউ হেসে হেসে কথা বলছে !
তার খালা নাহারের গলা পাওয়া যাচ্ছে!
মায়ের ঘরের দিকে রওনা হলো মাহি!
হঠাৎ নিঝুম এসে সামনে দাঁড়ালো!
দাঁড়িয়ে গেল মাহি! তুই! এখানে ? এই সকালে!
নিঝুম কাছে এসে ফিসফিস করে বলল , প্রেমিক বাসর ঘর থেকে বের হলে দেখতে কেমন লাগে সেটা দেখার জন্য চলে এলাম !
নিঝুম!মাহি চোখ বড় করে বলে উঠলো।
তোর পার্সোনালিটির সঙ্গে এসব কথা যায় না !
তো কি যায় মাহি? নিঝুম ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো।
আমাকে কষ্ট দিবি ঠিক আছে কিন্তু নিজেকে নিচে নামানোর কি দরকার! আমি তোর অপরাধী তুই আমাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছিস দে কিন্তু খেয়াল রাখিস তোর সন্মান টা যেন ঠিক থাকে !
তোর থেকে সবচেয়ে বড় অপরাধী শিহাব ভাই ! উনার জন্যই আজ এত কিছু!
নিঝুম ! আমার মৃত ভাইকে আর টেনে আনতে হবে না !
কেন আনবো না ?
আনবি না নিঝুম! কঠিন স্বরে মাহি কথাটা বলল!
শোন আমার ভাইকে নিয়ে টানাটানি র আগে তোর গুনোধর বড় বোনের দিকে একবার তাকা ! তিনি যদি নাসার বিজ্ঞানীর মঙ্গল গ্রহ থেকে আসার অপেক্ষায় খুঁটি গেড়ে তোর সামনে বসে না থাকতো কবেই আমি মা কে বলতাম আমাদের বিষয় টা , ঠিক আছে ! সেটা তুই ও ভালো করে জানিস!
উনার গ্রীন কার্ড ধারী বিজ্ঞানী মহোদয় আসবেন তো তার বিয়ে হবে অতঃপর তোমার রাস্তা ক্লিয়ার হবে এই গান তো গত দু’বছর শোনাচ্ছিলি আমাকে তাই না ! আজ ভুলে গেলি কেন?
আর সব কিছু জানার পর এভাবে কথা না বললেই কি হতো না?
অনেক কিছুই হওয়ার ছিল মাহি , যা তোমার রুবা রাণীর জন্য হয়নি!
রুবাকে নিয়ে একটা কথাও দয়া করে বলবি না আমি হাত জোড় করে বলছি !
কেন! আমার সব তো ও ই কেড়ে নিলো!
যার সব কিছু ভাগ্য কেড়ে নিয়েছে সে কার কি কেড়ে নিবে? হ্যাঁ?
আরে ঐ তো মাহি চলে আসছে ! তারানা মামি মাহিকে দেখে বলে উঠল।
নিঝুম মাহি দুজনেই চুপ করে গেল !
নিঝুম কে পাশ কাটিয়ে মাহি মায়ের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল!
মা আর নাহার খালা তার দুই মামি সহ সবাই মায়ের রুমে র সামনে সোফায় বসা!
কাছে গিয়ে মাহি সালাম দিল সবাই কে !
বড় মামি বলে উঠলো শুধু মুখে সালাম দিলে হবে না আজ পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয় মুরুব্বি দের এটাই নিয়ম!
সাফিয়া বেগম বললেন, বাদ দাও তো এসব নিয়ম!
মাহি সবাই কে পায়ে হাত দিয়ে ই সালাম করে
মায়ের পাশে গিয়ে বসলো!
সাফিয়া বেগম বললেন, রুবা উঠেছে বাবা?
না ও ঘুমাচ্ছে!
তাকিয়ে দেখে নিঝুম এসে বড় মামির পাশে বসলো!
তারানা বলছিল রাতে রুবার শরীর খারাপ করেছিল! তুমি ফ্রীজ থেকে জুস নিয়ে গেলে ! আমাদের কাউকে ডাক দিতে পারতে?
সেজন্যই আমি নাহার কে ফোন দিলাম নিঝুম কে নিয়ে আসতে ! একবার চেকআপ করুক ও!
মা , রুবা ঠিক আছে ! আই ক্যান টেইক কেয়ার হার !
খালাম্মা , তোমার ছেলের আমার ডাক্তারি বিদ্যায় ভরসা নাই!
আমি সেই কথা বলি নাই! ও এখন স্টেবল তো কি দরকার? শুধু শুধু নার্ভাস হবে।
সাফিয়া বেগম বললেন, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে এই নিয়ে ভাই বোনের ঝগড়া করতে হবে না!
ছোট মামার দুই মেয়ে ও আসছে ! কালকে অবশ্য বাচ্চাদের কাউকে আসতে বলা হয়নি ! আজ সাত সকালে সব এসে হাজির!
ভালোই হলো অনেক দিন পর বাসাটা নরমাল হবে ! মনে মনে মাহি ভাবছে!
মাহি তুমি তো আজ হসপিটালে যাচ্ছো না?
না মা!
ছোট মামির মেয়ে শ্রুতি বলে উঠলো, আমি ভাবি কে ডেকে নিয়ে আসি ?
না না ! মাহি বলে উঠলো!
ওরে বাপ রে এত অভার প্রোটেকটিভ! নিঝুম বলে উঠলো!
মাহি ওর কথা পাত্তা দিলো না!
ছোট মামি বুয়াকে দিয়ে আমার আর রুবার নাস্তা টা রুমে পাঠাবেন প্লিজ!
মা আমি রুমে গেলাম !
যাও !
আজ নিঝুম নির্ঘাত কোন কান্ড ঘটাবে !ওর সামনে থেকে চলে যাওয়াই ভালো!
রুমে ফিরে দেখে রুবা উঠে গেছে ! শুয়ে আছে !
কি অবস্থা তোমার? শরীর কেমন এখন বলে পাশে বসলো মাহি !
আমি ঠিক আছি !
তাহলে উঠো , রাতে তো কিছুই খাওনি এখন খেয়ে ওষুধ খাও!
আমার মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে !
যাও মাথায় একটু পানি দাও আরাম লাগবে!
এক কাজ করো একবারে শাওয়ার নিয়ে আসো ভালো লাগবে ! রাতে এতবার বমি করেছো তো শাওয়ার নিলে ফ্রেস লাগবে!
রুবা ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
মাহি ড্রয়ার খুলে সিগারেট এর দুটো প্যাকেট ছিল সেগুলো বের করে ডাস্টবিনে ফেলে দিল ।
এখন ঘরের অনেক কিছুই ওর পরিবর্তন করে ফেলতে হবে এমনকি ওর জীবনে র অনেক কিছু ও !
রুবা ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে এলো ! আকাশী রঙের একটা সেলোয়ার কামিজ পড়া মাথায় টাওয়াল মোড়ানো !
আকাশী রঙে ওকে আরো ফর্সা লাগছে ! মুগ্ধ হয়ে মাহি তাকিয়ে আছে ! এভাবে কোন দিন ও রুবাকে দেখেনি ! ওকে দেখে ওড়নাটা শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো রুবা।
চোখ সরিয়ে নিল সঙ্গে সঙ্গে মাহি !
এমন সময় দরজায় টোকা দিল কেউ !
খোলা আছে ভেতরে আসো , বলে উঠলো মাহি !
ফরিদা বুয়ার হাতে নাস্তা র ট্রে আর পিছনে নিঝুম আর শ্রুতি, মিতি দুই বোন!
মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো ! অনেক টা বিরক্তি নিয়ে!
নিঝুম মাহির দৃষ্টি কে অগ্রাহ্য করে রুবার দিকে এগিয়ে গেল !
কি খবর রুবা তোমার বলে জড়িয়ে ধরলো! অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোমার নতুন জীবনের জন্য। অনেক ভালো থাকো সুখে থাকো। আড় চোখে মাহির দিকে তাকালো নিঝুম।
রাতে নাকি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে তুমি ?
আরে সেরকম কিছু না ও আমার প্রতি দিনই শরীর খারাপ হয়, তোমরা কখন এলে ?
সকাল সকাল চলে আসছি তোমাদের বিরক্ত করবো বলে!
রুবা বলল, বসো নাস্তা খাও আগে!
আরে তুমি বসো মাহি খাবার বেড়ে দিক ! বলে নিঝুম মাহির দিকে তাকালো!
না তা কেন হবে আমি দিচ্ছি দাঁড়াও তোয়ালে টা বারান্দায় দিয়ে আসছি তারপর দিচ্ছি !
রুবা বারান্দার দিকে চলে গেল !
নিঝুম বলে উঠলো, ওরে কঠিন ব্যাপার রে মাহি তোর নতুন বউ একেবারে সকাল সকাল গোসল শেষ করে বসে আছে! বলেই তিনজন হো হো করে হেসে উঠলো !
নিঝুম ! কি হচ্ছে এসব ! মাহি রেগে গেল !
ঐ শ্রুতি, মিতি তোদের কলেজ ভার্সিটি নাই আজ ?
ভাইয়া আজ আমরা এনজয় করতে এসেছি ।
এনজয় করার জায়গা কি আমার রুম ! যা ভাগ এখান থেকে !
মাহি চোখ গরম করে বলল, নিঝুম আর একটা কথা হিসাব ছাড়া বলবি খবর আছে বললাম! তুই চল আমার সাথে তোর সাথে আমার কথা আছে!
রুবা রুমে আসতেই সবাই চুপ হয়ে গেল !
আসো সবাই নাস্তা খাই , রুবা বলল!
না রুবা,আমাদের খাওয়া কখন শেষ তুমি আর মাহি খাও আমরা আসি এখন!
ও মা কেন ! বসো এখানে গল্প করি!
আরে না তোমার জামাই বিরক্ত হচ্ছে আমরা যাই ! এই চল তোরা !
এই নিঝুম আপু বসো তো !
ফান করলাম আমরা নিচে যাচ্ছি তুমি এসো নিচে!
আমার তো সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা নিষেধ নিঝুম আপু !
মাহি বলল, তোমার সাবধান নিচে নামার দরকার নেই রুবা।
সমস্যা নাই ডাক দিও আমাদের বলে চলে গেল ওরা!
মাহি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো !
রুবা মাহি কে প্লেট খাবার তুলে দিল !
তুমি খাওনি এখনো ভাইয়া ? তোমার তো অনেক আগেই খাওয়া হয়ে যায় অন্য দিন! আমার অবশ্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই খাওয়ার যখন উঠি তখন খাই !
সে জন্যই তোমার শরীর খারাপ করে !
এখন থেকে সকালে আমার সঙ্গে নাস্তা খাবে ঠিক আছে !
এত সকালে! আমি তো উঠিই দেরি করে !
এখন থেকে আমি যখন উঠব তোমাকে ডেকে দিব !
ঠিক আছে ভাইয়া!
আবার ভাইয়া! সবার সামনে ভাইয়া বলে উঠলে এখন সবাই হাসবে রুবা! মাহি একটু বিরক্ত হয়ে বলল।
তাহলে কি ডাকবো? বলেই অন্য দিকে তাকালো রুবা!
তোমার যা ইচ্ছা !
দেখো তোমাকেও এই প্রথম নাম ধরে ডাকলাম আমি! আমাদের জীবনের অনেক কিছু এখন আর আগের মতো নেই রুবা!
আমি জানি ! কিন্তু সব কি এত জলদি পরিবর্তন করা যায় ?
সব করার দরকার নেই অন্তত সবার সামনে যেন আমরা অস্বস্তি তে না পড়ি সেটুকু তো করাই যায়!
ঠিক আছে ! চেষ্টা করব!
গুড! এখন খাওয়া শেষ করে সকালে র ওষুধ গুলো খাও তুমি! তারপর চলো ওদিকে যাই!
তুমি আজ হসপিটালে যাবে না?
না !
কেন ?
কোন কারণ নেই ! রুবার খাওয়া শেষ হতেই মাহি বলল,
এখন চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ! বলে উঠে দাড়ালো মাহি!
আমার হাত ধরে উঠে এসো বলে হাত বাড়িয়ে দিল রুবার দিকে মাহি!
( চলবে)