যখন দুজনে একা পর্ব-১৫

0
3354

#যখন_দুজনে_একা

১৫ পর্ব

রুবা সারারাত ঘুমের ইনজেকশন এর প্রভাবে অচেতন হয়ে পড়লে র‌ইল । মাহি খুব সাবধানে তার হাত রুবার মাথার নিচ থেকে বের করলো। তারপর আবার রুবার পাশে বাকি রাত শুয়ে রইল। খুব চিন্তা হচ্ছে রুবাকে নিয়ে।
এত ডিপ্রেশড ও একদিনে হয়ে গেল!
মাহি উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে রইল । পাশে শুয়ে থাকতে দেখলে রুবা অপ্রস্তুত হবে । আর রাতের ঘটনাটা মনে না থাকলে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হবে।
সকালে হঠাৎ রুবা ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলো ।

মাহি ও সঙ্গে সঙ্গে রুবা কে ধরলো!
কি হয়েছে রুবা?
রুবা ওর দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, ওয়াস রুমে যাব !
তারপর বিছানা থেকে নামা শুরু করলো।
মাহি তাড়াতাড়ি এসে ধরলো রুবাকে।
ধীরে ধীরে যাও রুবা!
নিজেই ওয়াস রুমে ঢুকে গেল!
মাহি বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথা কাজ করছে না কি করবে এখন! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে
আট টা বাজে !
ফোন টা নেয়ার জন্য মাহি যেই টেবিলের কাছে গেল রুবা ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে ঘরের ভেতরে দু পা দিয়েই লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে ! সেন্সলেস হয়ে গেল ।
মাহি রুবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো!
ছুটে গেল কাছে!
রুবা এই রুবা !
মাহি রুবাকে তুলে বিছানায় আনতে নিলো যে ভয় টা সে রাতে পেয়েছিল তাই হয়েছে , প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে ।
কোন ভাবে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিল । পালস দেখলো।
পানির ছিটা দিল !
রুবা রুবা এই রুবা । প্লিজ উঠো!
কি হলো রুবা!
মাহি দৌড় দিল মায়ের ঘরের দিকে।
মাহির ডাকে সাফিয়া বেগম ছুটে আসলেন রুমে!
মাহি রাতের ঘটনা সব বলল মা কে ।
সাফিয়া বেগম, দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবাকে ধরলেন
রুবা মা আমার উঠো!
কি করব আমি মেয়ে টাকে নিয়ে ?এত শরীর খারাপ কিভাবে হলো! রাতে ও ফ্রেশ দেখাচ্ছিল!
দুই বুয়া ছুটে এসেছে!
তারা বলল, ভাইজান পানি ঢালি মাথাথ?
পানির ঝাপটা দাও এতেই হবে!
পানি মুখে দিতেই রুবা একটু নড়ে উঠলো !
মাহি রুবার দিকে ঝুঁকে বলল , রুবা রুবা !
রুবা চোখ খুলে তাকালো!
মা ওর কাপড় ভিজে গেছে চেন্জ করতে হবে ।
ফরিদা বুয়া দৌড়ে গেল কাপড় আনতে।
মাহি প্রেসার মাপছে!
সাফিয়া বেগম বললেন, কত প্রেসার?
মাহি বলল, একশ বাই সত্তর মা !কম অনেক!
এর জন্য‌ই এ অবস্থা হয়েছে! সাফিয়া বেগম বললেন।
মা ব্লিডিং ও হচ্ছে অনেক!
সাফিয়া বেগম বললেন, কি? এখন হসপিটালে নিবে।
না মা হসপিটালে নিতে হবে না ।
কথা বলছি ডাঃ সুরাইয়া র সঙ্গে ফোনে!কি বলে দেখি?
মাহি ফোন নিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে!
বুয়ারা রুবার ড্রেস চেঞ্জ করে দিল!
রুবার কপালে ব্যথা লেগেছে , রক্ত জমে গেছে!
সাফিয়া বেগম নিঝুম কে ফোন দিলেন , হ্যালো নিঝুম মা একটু বাসায় আয় তো!
কেন খালাম্মা?
আয় একটা ঘটনা হয়েছে! এসে দেখ!
আমি হসপিটালে র যাওয়ার জন্য বের হলাম মাত্র ঠিক আছে আসছি খালাম্মা , নিঝুম বলল!
মাহি রুমে ঢুকে দেখে রুবা র ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানার চাদর সব চেন্জ করে দিয়েছে বুয়া রা!রুবা শুয়ে আছে।
ওকে দেখে বুয়ারা চলে গেল!
রুবার জ্ঞান ফিরছে কিন্তু নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে!
মা বললেন কথা হয়েছে ডাক্তারের সাথে?
হ্যাঁ মা সিরিয়াস কিছু না ও যে রাতে র বেলায় লাফালাফি করছে সেই জন্য ।
ওষুধ বলেছে আমি লিখে দিচ্ছি কাউকে দিয়ে আনিয়ে দাও!
মাহির লিখে দেয়া কাগজ নিয়ে সাফিয়া বেগম বের হয়ে গেলেন!
মা যাওয়ার পর মাহি রুবার মাথার কাছে গিয়ে বসলো।
রুবা কি হলো তোমার ? এভাবে ভেঙে পড়লে হয় ?
তাকাও আমার দিকে !
রুবা চোখ বন্ধ করেই আছে!
কিছুক্ষণ পর নিঝুম কে নিয়ে সাফিয়া বেগম ঢুকলেন! নিঝুম কে আনলাম মাহি!
দেখ নিঝুম কি অবস্থা‌, সাফিয়া বেগম বললেন!

মাহি খুব বিরক্ত হলো নিঝুম কে দেখে। মুখে কিছু বলল না!

নিঝুম রুবার পালস দেখলো! প্রেসার মেপেছিস!
হুঁ , কম মাহি বলল।
নিঝুম মাহির দিকে অবাক হয়ে দেখছে।

খালাম্মা তুমি রুবার কাছে বসো মাহি একটু আমার সঙ্গে আয় তো ! বলে নিঝুম রুম থেকে বের হয়ে গেল!

মাহি চরম বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে গেল !
রুবা নিচে স্টাডি রুমে ঢুকলো আবার!
কি হয়েছে নিঝুম কি কথা যে এখানে এসে বলতে হবে? মাহি বিরক্ত হয়ে বলল।

নিঝুম মাহির দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে !

মাহি বিরক্ত নিয়ে বলল, কি বলবি বল তাড়াতাড়ি!

বাহ্ মাহির আজগর !

কি !

তুই কিভাবে পারলি রে মাহি ?

কি পারলাম ! মাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল?

তুই না একজন ডাক্তার ! আসলে কি সব কিছু র আগে পুরুষ মানুষ তো তাই পারলি এমনটা করতে। একদিন আগে মেয়েটার ডি এন্ড সি হয়েছে তুই তিন টা সপ্তাহ তো অপেক্ষা করতে পারতি ! ছিঃ ছিঃ মাহি ! ছিঃ !
এর জন্যেই কালকে এত রোমান্টিক হয়ে ভায়োলিন শুনাচ্ছিলি রুবা কে তাই না !

নিঝুম ওয়েট ,কি বলতে চাইছিস ?

তুই যা করেছিস কালকে রাতে রুবার সঙ্গে তাই বলছি । আর আমার মুখ ফুটে বলতে হবে কেন রুবার ব্লিডিং আর তোর গলার এই খামচা খামচি দেখে সবাই বুঝতে পারছে তোর কুকির্তি ! খালাম্মা বলল রুবার প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে ! না জানি কতটা অসহায় ছিল মেয়ে টা !
ছি মাহি!
সাট আপ নিঝুম! চিৎকার দিয়ে উঠল মাহি!
চিৎকার করবি না মাহি আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখ আগে! তোর গলার কাছে কি হয়ে আছে।
চুপ কর নিঝুম! অনেক বলেছিস মাহি ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলল, আর ইউ থিঙ্ক আই এম এ ব্লাডি রেপিস্ট?
ও গড! হাউ কুড নিঝুম !
তিন টা বছর আমার সঙ্গে সম্পর্ক নাকি ছিল তোর? এই চিনেছিলি আমাকে? তার আগে আমি তোর খালাতো ভাই সারাজীবন এই দেখেছিস?
ঐ তুই তো আমার প্রেমিকা ছিলি দু দিন আগেও, কোন দিন আমি তোর সাথে চান্স নেয়ার চেষ্টা করেছি ? আর যাকে নিয়ে কথা বলছিস সী ইজ মাই ওয়াইফ ডেম ইট! চিৎকার করে বলল মাহি!
রুবা আমার ওয়াইফ, প্রেমিকা র সঙ্গে আমি কোন দিন অধিকারের বাহিরে দাবি করি নাই সেখানে যার সবকিছু তে আমার অধিকার তার ইচ্ছা র বিরুদ্ধে আমি ছিঃ নিঝুম তুই পারলি আমাকে নিয়ে এসব ভাবতে?
ও গড ও গড! নিঝুম ।
আমি তোকে বলেছিলাম আমাকে ঘৃণা করতে, আমাকে কষ্ট দিতে, তুই তো আমাকে মেরেই ফেললি! আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেকে নিচে নামাতে না করেছিলাম আর তুই কি শুরু করলি?
আমি আমার সব সম্পর্ক তে অনেস্টি টা রাখি ঠিক আছে । তাই তোর সাথে যখন সম্পর্কে বাঁধা ছিলাম তখন কোন দিন কারো দিকে তাকানো তো দূরে থাক চিন্তা ও করি নাই আর এখন তুই আমাকে কি বলছিস আই এম এ রেপিস্ট!
তাও কাকে আমার বিয়ে করা অসুস্থ অসহায় ব‌উ কে !
এত টা নিচে নামলি নিঝুম!
শোন কান খুলে আমি যেদিন যখন বিয়ে করেছি রুবাকে সেদিন থেকে শুধু ওর । আমি ঐ দিন ও তোকে বলেছি রুবার সঙ্গে স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আমি রক্ষা করব, যদি রুবা চায় ! রুবা আমার দিকে এক পা এগিয়ে এলে আমি দুই পা এগিয়ে যাব ওর দিকে এটাই আমার অনেস্টি!
তুই শুধু আমাকে দোষী করছিস একবার আমার জায়গায় নিজেকে রেখে ভেবেছিস আমার কষ্ট কোথায়?
আমার প্রাণের প্রিয় ভাই মরে গেছে হঠাৎ করেই, আমার বাবা অসুস্থ , মা সারারাত ঘরে ঘরে হাটে ঘুমাতে পারে না , ২৩ বছরের বিধবা ভাইয়ের বউ জীবিত লাশ হয়ে ঘরে পড়ে আছে আমিও কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ টাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমিও ভালোবেসিলাম নিঝুম ! আমার ও তাকে না পাওয়ার কষ্ট হয়েছে ! তুই একা একটা কষ্টে কষ্ট পাচ্ছিস আর আমার কত গুলো কষ্ট চিন্তা করেছিস একবার?
একবার স্বান্তনা র দুটো কথা শুনিয়েছিস ? আমার রুবাকে বিয়ে করাতে নিজের কোন ব্যক্তি গত স্বার্থ ছিল না । পৃথিবীতে কিছু মানুষ কে ব্যক্তিগত স্বার্থের বাহিরে ও চিন্তা করতে হয়, আমাকে সেই মানুষদের মত হতে হয়েছে !
তুই সত্যিই ভালো বেসেছিলি তো আমাকে নিঝুম ?
বাসলে আজ এই অপবাদ দিতে পারতি না । গতকাল রাতে কি হয়েছিল রুবার কি করেছি আমি সেটা আর তোকে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না !
তুই তোর ধারনা নিয়ে থাক।
ভালোই হলো আমি এখন দায় মুক্ত অন্তত তোর দিক থেকে !
আর একটা কথা আমি পুরুষ মানুষ বলেই অমানুষ নই ! যদি তাই হতাম তিনটা বছর কখনো আমার রুমে কখনো তোর রুমে দুজন একা ছিলাম নিশ্চয়ই চান্স নিতাম আর নিতে চাইলে মিস আফরিন নিঝুম তুমি , হ্যাঁ এই তুমি আমার কাছে নিজেকে শতবার বিলিয়ে দিতে ! নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো !

রাগে গজগজ করতে করতে কথা গুলো বলেই মাহি স্টাডি রুমের দরজা টা লাথি দিয়ে খুলে বের হয়ে গেল !

নিঝুম ধপ করে নিচে বসে গেল !
এই আমি কি করলাম মাহি র সঙ্গে !
মাহি….. নিঝুম ডুকরে কেঁদে উঠলো !

মাহি স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে চোখ মুছলো !
ওকে দেখে ড্রাইভার আশরাফ দৌড়ে আসল ভাইয়া , এই যে ওষুধ আনছি !
মাহি ওষুধ হাতে নিয়ে উপরে উঠে এলো!

নিজের রুমে ঢুকলো ।

দেখে মা আর বুয়া রা ধরে রুবাকে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে চামচ দিয়ে !

মাহি সোজা ওয়াস রুমে ঢুকলো । আয়না র সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে দিল ! ছিঃ নিঝুম ছিঃ !
তুই শেষ পর্যন্ত এই ভাবলি আমাকে নিয়ে !
আমাকে ঘৃণা করতি তাও মেনে নিতাম তুই আমাকে যে অপবাদে অভিযুক্ত করে ফেললি এটা আমি কিভাবে সহ্য করব ?
তুই আমার ভালোবাসা দেখেছিস কিন্তু এখন আমার ঘৃনা ও দেখবি !
মাহি নিজের গেঞ্জি টা খুলল ! ওর ফর্সা গলার কাছে কালকে রুবার নখের কিছু আঁচড় লাল হয়ে আছে !
ঘাড়ে, বুকেও কালচে দাগ হয়েছে।
নিঝুম তুই এই খামচির দাগ দেখেই এত তাড়াতাড়ি জাজ করে ফেললি ?
তাও যদি বলতি রুবার সঙ্গে স্বাভাবিক স্বামী র মত সম্পর্ক করেছি তুই কিনা আমাকে বর্বর পুরুষ মানুষ অপবাদ দিলি যে অসুস্থ স্ত্রী র উপর শারীরিক অত্যাচার করেছে !
হাউ কুড নিঝুম!

মাহি মানতেই পারছে না নিঝুমের কথা গুলো !
শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো ! নিঝুম তোকে না পাওয়ার যে কষ্ট পাচ্ছিলাম, আজ এক কথায় সব শেষ করে দিলি রে ! কেন এমন করলি তুই?
কাঁদছে মাহি!
আজ থেকে তোর জন্য আমি অন্য মানুষ তুই নতুন মাহিকে দেখবি নিঝুম অপেক্ষা কর !

গোসল শেষ করে মাহি বের হয়ে এলো।
মা বলল, নিঝুম চলে গেছে ? কি বলল তোকে ?
মাহি মা কে কঠিন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ! তারপর ধীর গলায় বলল, ওর ডিউটি আছে তাই চলে গেছে ! আর হসপিটালে র রোগী বিষয়ে কথা বলল আর কিছু না!

মাহি রুবার ওষুধ গুলো নিল হাতে ! খেয়েছে মা কিছু ও ?
হ্যাঁ অনেক জোড় করে একটু দুধ খাওয়াতে পারলাম!
ওষুধ খাওয়াব পানি টা দাও মা।
সাফিয়া বেগম পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিলেন!
রুবাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে শুইয়ে দিল মাহি!
মাহি?
হ্যা মা বলো?
রুবাকে কি সাইকোলজিস্ট দেখাবি?
মাহি বলল, কথা বলে দেখি আগে ! আর ওর জন্য আমিই যথেষ্ট মা আমি দুই সপ্তাহের ছুটি নিয়েছি এর মাঝে ওকে ঠিক করে দিব ইনশাআল্লাহ দেখো! তুমি চিন্তা করো না।

আর একটা কথা কালকে রাতে র ঘটনা কাউকে বলার দরকার নেই মা।
রুবা ঠিক হয়ে যাবে তুমি চিন্তা করো না!
ঠিক আছে মাহি!
তুমি ব্রেকফাস্ট করেছো মা?
আমি একটু ঘুমাব এখন , মাহি বলল।
তুই খাবি না মাহি?
শুধু চা পাঠিয়ে দাও প্লিজ !
ঠিক আছে দিচ্ছি!।

সাফিয়া বেগম ওদের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন!
মাহি রুবার পাশে বিছানা তেই শুয়ে পড়লো!
আজ থেকে এক মুহুর্তর জন্য সে রুবাকে একা রাখবে না ! ওর যা মানসিক অবস্থা কখন কি করে ঠিক নেই !

মাহি বিছানায় শুয়ে রুবার দিকে তাকিয়ে আছে ! রুবা এই রুবা ?
তাকাও আমার দিকে ?
রুবা চোখ খুলে তাকালো !
মাহি বলল, আমি এখানে শুয়ে থাকলে তোমার কোন সমস্যা হবে না তো ?
রুবা শুধু তাকিয়ে আছে ওর দিকে কথা বলছে না !
মাহি বলল, না জেনে নিলাম কাল রাতে যা মারলে আমাকে তুমি! দেখো গলায় কি করেছো ! মাহি ওর গলাটা দেখিয়ে বলল!
মাহিকে পুরোই অবাক করে দিয়ে রুবা ওর গলায় স্পর্শ করলো !
মাহি অবাক হয়ে গেল !
দেখছো রুবা কত ব্যথা দিয়েছো !
রুবা ফিসফিস করে বলল , সরি !
এভাবে সরি বললে কি হয় নাকি ?
রুবা সরু চোখে তাকালো মাহির দিকে !
মাহি বলল, নখে জার্ম থাকে যদি ইনফেকশন হয়ে যায় ! একটু এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দিলে না হয় বুঝতাম তুমি আমার কথা ভাবো !
রুবা উঠতে নিলো যেই মাহি ওর হাত ধরে ফেলল! হাসি মুখে বলল, যাওয়ার দরকার নেই এন্টিসেপটিক আমার কাছে ই আছে !
রুবার দিকে সেভলন ক্রীম টা বাড়িয়ে দিল মাহি!
তারপর নিজের গেঞ্জি খুলে ফেলল , রুবা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো ! তার অস্বস্তি লাগছে।
মাহি বলল, শুধু কি গলায় আঁচড়ের দাগ যে কিল ঘুষি দিয়েছো আমাকে তোমার চুড়িতে লেগে হাতে , বুকে কালসিটে পড়ে গেছে দেখো! পিঠেও আছে দেখো।
এত মার আমাকে জীবনে কেউ মারেনি ! শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের ব‌উ এর হাতে মার খেতে হলো ! আমি তো পুরুষ জাতির কলঙ্ক হয়ে গেলাম!
রুবা লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করলো !
মাহি রুবার মুখ দেখছে ! সব তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে । লজ্জা পাচ্ছে ! নিজেকে আড়াল করছে !
মনে মনে বলল, আল্লাহ ওকে ঠিক করে দাও প্লিজ! ওর মন ভালো হয় যা কিছু তে সব আমি করব।

এখন ক্রীম কি হাতে নিয়ে বসে থাকবে ? লাগিয়ে দাও , মাহি বলল।
রুবা মাহির গলায় , ঘাড়ে , পিঠে , বুকে ক্রীম লাগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু খুব লজ্জা পাচ্ছে । একে তো নিজের এই কাজের জন্য অন্য দিকে মাহির উদোম শরীর টা তে স্পর্শ করে।

দরজায় নক করছে ফরিদা বুয়া , কে ?
ভাইজান আপনার চা আনছি !
বুয়া পরে আসো প্লিজ , আমি ডাকব !
চা ঠান্ডা হয়ে যাইব ভাইজান!
হলে হবে বুয়া , যাও এখন !
এখন খুব জরুরি কাজ হচ্ছে তাই না? চা পরেও খাওয়া যাবে! কি বলো রুবা ?
হু !
শুধু হ্যাঁ , হুঁ করলে হবে না ! ভালো করে কথা বলো!
রুবা তাকিয়ে আছে মাহির দিকে!
এক পলক তাকিয়ে বলে উঠলো, আমি কালকে রাতে র ঘটনার জন্য ভেরি সরি !
এই তো কত সুন্দর মিষ্টি গলা আর কি সারাক্ষণ ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিলে!
মাহি বলল, আমি সারাদিন কালকে তোমার ভয়েজ টা শুনতে চাইছিলাম ।
আর কখনো এভাবে কথা বন্ধ করে আজেবাজে চিন্তা করবে না তুমি !
তবে ইচ্ছা করলে মারতে পারো আমাকে আমি কিছুই বলব না , বলে হেসে দিল মাহি!
রুবা লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল আবার ।

আর লাগাতে হবে না ক্রীম দাও রেখে দিচ্ছি । ক্রীম রেখে মাহি গেঞ্জি পড়লো !
বালিশে মাথা রেখে মাহি বলল, একটা কথা বলব রুবা !
রুবা পাশ ফিরে তাকালো মাহির দিকে !
তুমি আমার মা কে অনেক ভালোবাসো তাই না ?
রুবা বলল, হুঁ!
আবার হুঁ রুবা!
আচ্ছা বলছি মা কে অনেক ভালবাসি , বলল রুবা ।
তোমার অসুস্থতার জন্য তোমার কষ্ট দেখে মা এমনকি বাবাও কষ্ট পাচ্ছে ! তুমি ভালো হয়ে যাও প্লিজ !
আমার আর তোমার তো এই দুজন মানুষ ছাড়া কেউ নেই পৃথিবীতে তাদের ও কেউ নেই আমরা দুজন ছাড়া তাই চেষ্টা করি তাদের ভালো রাখতে যত দিন তারা বাঁচবে ততদিন! প্লিজ।
তুমি কথা দাও তুমি ভালো থাকবে রুবা?
ঠিক আছে কথা দিলাম !
এভাবে না আমার হাত ধরে বলো , মাহি বলল।
রুবা মাহির হাত ধরলো !
কথা দিলাম ভালো থাকব !
মাহি হাসলো !
এখন চা খাওয়া যায় কি বলো রুবা !
কিন্তু গিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে না ,মাহি বলল!
আমি বলে আসব , রুবা উঠতে নিলো!
মাহি বলে উঠলো , না সাবধান তুমি উঠবে না তোমার উঠা নিষেধ ! পুরো রেস্ট তোমার!
তাহলে চা আসবে কিভাবে , রুবা বলল!
উপায় আছে দাঁড়াও বলে মোবাইল বের করে কুদরত ভাই কে চা পাঠানোর জন্য বলল মাহি!
আমি আগে এভাবেই ওকে দিয়ে সিগারেট আনাতাম ও লুকিয়ে এ ঘরে দিয়ে যেতো!
কালকে তুমি সিগারেট খায়েছো , রুবা প্রশ্ন করলো !
তুমি জানলে কিভাবে ? মাহি অবাক হলো !
তোমার হাতে গন্ধ পায়েছি যখন তুমি কপালে হাত দিয়েছিলে আমার তখন !রুবা বলল!

তাই? মাহি বলল, খুব ভালো করে হাত ধোয়ার পর ও ! হায়রে মেয়ে মানুষ রে কি তীব্র নাক !
হেসে উঠলো দুইজন !

চা নিয়ে এসেছে আবার বুয়া !
ভেতরে এসো !
ও হো চা এক কাপ নিয়ে এসেছো মাহি বলল!
আচ্ছা ঠিক আছে দাও এদিকে বলে মাহি উঠে বসলো।
আরেক কাপ নিয়া আসতাছি ভাবির জন্য! দৌড় দিল ফরিদা !
আমার লাগবে না বুয়া, রুবা বলল!
একটা কথা বলব বলে রুবা উঠে বসলো শোয়া থেকে, আমি কখনো কারো বাসায় তার অনুমতি ছাড়া তার ইচ্ছা ছাড়া যাই নাই , কিন্তু তোমার জীবনে তোমার অনুমতি ছাড়া, তোমার ইচ্ছা র বিরুদ্ধে চলে এসেছি । এক রকম বাধ্য হয়েছি আসতে এটা আমার খুব খারাপ লাগে কষ্ট দেয় !
তোমাকে কে বলল রুবা , তুমি আমার অনুমতি ছাড়া আমার ইচ্ছা র বিরুদ্ধে এসেছে আমার জীবনে বলে মাহি চায়ের কাপে চুমুক দিলো ?
রুবা আমি আমার সম্পূর্ণ হোশে আমার ইচ্ছায় তোমাকে আমার জীবনে গ্রহণ করেছি কারণ যাই থাকুক , যখন করেছি সম্পূর্ণ ইচ্ছায় করেছি ! এই নিয়ে কষ্ট পেও না তুমি !
তো এখন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে …… বাকি তোমার ইচ্ছা রুবা বলে হাসল মাহি ।
রুবা লজ্জা পেয়ে ওর মুখ অন্য পাশে নিয়ে হাসছে।
এখন মিসেস মাহির আজগর আপনি কি আমার চায়ের কাপ থেকে নিবেন একটু চা ? একা খেতে খারাপ লাগছে ! মাহি হেসে বলল।
বুয়া আনছে আমার জন্য তুমি খাও !
মাহি বলল,
আনুক না হয় তখন আবার তোমার টা থেকে খাব !
রুবা মাহির বাড়িয়ে দেয়া কাপ নিয়ে চুমুক দিল ।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here