#যখন_দুজনে_একা
২০ পর্ব
মাহি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নিঝুমের চলে যাওয়া গাড়ির দিকে ! ওর কেন জানি হাসি পেলো ! সিগারেট এ দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিল মাহি । এত রোদ ! কোন উবার/ পাঠাও কিছুই পাবে না সে এখানে ! সে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে ! আচ্ছা ড্রাইভার আশরাফ কে ফোন দেই ও গাড়ি নিয়ে এখানে চলে আসুক এসে নিয়ে যাক ওকে !
তারপর ই আবার মনে হলো তাহলে মা ঠিক ই জানবে তখন তাকে প্রশ্ন করবে । নিঝুম আবার মা কে বলছে সে ওটি তে ! উফ্ খুব বড় ভুল করেছি নিঝুমের মেসেজ পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে, মাহি মনে মনে নিজেকে বলল।
আল্লাহর একটু দয়া হলো একটা বিআরটিসি বাস এসেছে একটুক্ষনের ভেতর মাহি ঐটা তে উঠলো ! কিন্তু খুব ভীড় , কোন রকম দরজায় ঝুলে যাচ্ছে সে ! এরকম অভিজ্ঞতা তার লাইফে নেই । জীবনে বেশ কয়েকবার এরকম লোকাল বাসে উঠেছে সে বন্ধুদের সঙ্গে কিন্তু বাসের দরজার কাছে ঝুলে ঝুলে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। নিঝুম তোর জন্য আজ এই অভিজ্ঞতা টাও হলো আমার ভাবছে মাহি। ভাগ্যিস সঙ্গে মানিব্যাগ টা কি মনে করে নিয়ে এসেছিল তা না হলে কি যে হতো!
তারপরও সে বাসটায় উঠতে পেরেছে সেটাই আলহামদুলিল্লাহ !
রোদ তার দুই চোখে র বিষ । বেশিক্ষণ রোদে থাকলেই তার মাইগ্রেন এর পেইন শুরু হয়ে যায় । নিঝুম জানে এটা ।
নিঝুম তোর এই ঘৃণা টাই দরকার আমার ! তাও ভালো থাক ! আমি তোর অপরাধী ! ফোন বাজছে কিন্তু ধরার উপায় নেই এত ভীড়! লোকজনের ঘামের গন্ধ ধাক্কাধাক্কি তে মাহির দম বন্ধ লাগছে।
এত জ্যাম বসুন্ধরা পর্যন্ত আসতে লাগলো প্রায় এক ঘন্টা !
বাস থেকে নেমে মাহি সামনে একটা সিএনজি পেল ঐ টা নিয়ে বাসায় পৌছাতে লাগল আরো এক ঘন্টা!
ও যখন বাসায় ঢুকলো ঘড়িতে তখন পাঁচটা বাজে! পড়বি পড় মায়ের সামনে ! মা লিভিং রুমে বসে পেপার পড়ছে।
মাহি এদিকে এসো !
কি ব্যাপার কাউকে কিছু না বলে তুমি হসপিটালে চলে গেলে আবার কল করা হচ্ছে তুমি রিসিভ করো নাই !
মাহি শান্ত গলায় বলল, ফোন সঙ্গে ছিল না আমার !
নিঝুম বলল তুমি ওটিতে ছিলে । কিন্তু যাওয়ার সময় রুবা বা আমাকে কাউকে কিছু বলে গেলে না ! সবচেয়ে অবাক কান্ড তুমি গাড়ি ও নাও নি !
মা জটিল অপারেশন ছিল আর আমার কলিগ তুলে নিয়ে গেছে আমাকে!
মনে মনে বলল, খুব জটিল অপারেশন ছিল !
তোমাকে দেখে এমন লাগছে কেন মুখ লাল হয়ে আছে, ঘেমে গেঞ্জি ভেজা ! এরকম গেন্জি পড়ে তুমি তো কখনো হসপিটালে যাও না!
ইমারজেন্সি ছিল তাই যেভাবে ছিলাম বের হয়ে গেছি মা।
আচ্ছা যাও রুমে ফ্রেশ হয়ে নাও , সাফিয়া বেগম বললেন !
রুবা কোথায় মা ?
রুমেই আছে তোমার ! খুব টেনশন করছিল বারবার ফোন দিচ্ছিল তোমাকে আমার ফোন থেকে !
মা রুবার ফোন টা কোথায় ?
আমার কাছে সাফিয়া বেগম বলল, ওকে নতুন সেট কিনে দিতে হবে !
আগের টা কি নষ্ট , মাহি বলল?
মা একটু থেমে বলল, ওটাতে ওর আর শিহাবের ছবি আছে ওগুলো আমার কাছে থাক !
মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে !
তুমি আমার কার্ড নিয়ে যাও ওর জন্য লেটেস্ট একটা মোবাইল সেট কিনে এনো, সাফিয়া বেগম বললেন !
আমি কিনে দিব মা !
না ওটা আমার তরফ থেকে ওর জন্য গিফট, মা বলল !
ঠিক আছে মা !
এখন যাও রুমে ফ্রেশ হও দুজনে খেয়ে নাও !
রুবা লাঞ্চ করেনি মা ?
না তোমার অপেক্ষা করছে!
মাহি নিজের ঘরের দরজায় নক করলো , তারপর ঢুকে গেল !
রুবা ঘুমিয়ে আছে !
মাহি ওর কাছে এসে দাঁড়ালো। ঘুমন্ত রুবার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোই লাগে। চুপচাপ শান্ত একটা মুখ। রুবার মুখের উপর চুল ছিল মাহি হাত দিয়ে সরিয়ে দিল খুব সাবধানে!
তারপর সোজা গোসল করতে ঢুকে গেল!
গোসল শেষ করে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে নিঝুমের মেসেজ , সরি ! সব ঠিক করতে চাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘাপলা বেঁধে যায় ! কেন বলতো?
মাহি উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না!
মাহি বিছানায় শুয়ে চিন্তা করল, রুবাকে কি ডাকবে এখন ?
কি সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে রুবার গা থেকে !
কিছুক্ষণ সে শুয়ে থাকলো ওর পাশে ! তারপর উঠে গিয়ে পোর্চের উপর বসলো হঠাৎ খুব বাতাস হচ্ছে! সে নিঝুমের কথা গুলো চিন্তা করছে!
নিঝুম তোকে কতটা অসহায় করে দিলাম আমি তাইনা ? আজ তুই আমার জন্য এতটা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিস ! কিভাবে তোকে এই অবস্থা থেকে বের করব রে নিঝুম!
হঠাৎ পিছন ফিরে দেখে রুবা ঘুম ভেঙ্গে তাদের রুমের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে !
দূর থেকে দেখছে ওকে !
মাহি তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে রুবার দিকে , আচ্ছা দুটো বছর রুবা এ বাড়িতে, আগে তো সে রুবাকে দেখে এভাবে মুগ্ধ হয় নি ! বিয়ে করলো বলেই কি চোখ আজ এতটা বেপরোয়া! বিয়ে টা তার অনুভূতি কে এভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে?
মাহি চোখ নামিয়ে নিল !
রুবা আসছে এদিকে !
মাহির সামনে এসে দাড়ালো রুবা , তুমি কখন এলে ?
মাহি ওর পাশে বসতে ইশারা করলো রুবা কে !
এসেছি অনেকক্ষণ ! তুমি ঘুমাচ্ছিলে ! গোসল দিলাম তারপর এখানে এসে বসলাম!
আমাকে ডাক দাও নি কেন ?
তুমি ঘুমাচ্ছিলে রুবা ! তোমার ঘুম ভাঙ্গানোর ইচ্ছা করছিল না !
রুবা বলল, তুমি আজ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে গাড়িও নিয়ে যাও নি ! মা, বাবা খুব টেনশন করছিল ! বারবার মা ফোন দিচ্ছিল !
তুমি টেনশন করোনি রুবা?
রুবা মাথা নেড়ে বলল, হুঁ !
শোন আমাকে নিয়ে টেনশন করো না আমি ঠিক আছি !
আমার ভুল হয়েছে কাউকে না বলে যাওয়া টা !
নিঝুম আপু বলল বলে জানলাম তুমি হসপিটালে ওটি তে ছিলে ! থেঙ্কস টু নিঝুম আপু সী ইজ রিয়েলী সুইট !
মাহি মনে মনে বলল , নিঝুম সুইট না কি সেটা তো বলতে পারছিনা তোমাকে রুবা ! যা করল সে আজ !
রুবা তুমি লান্চ করলে না কেন ?
তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তারপর ক্ষুধা টাই নষ্ট হয়ে গেল রুমে চুপচাপ শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম ! আমাকে কি ওষুধ দাও খালি ঘুম পায়।
আমার জন্য না খেয়ে থাকবে না কখনো রুবা !
এখন কাউকে ডেকে বলো আমাদের চা এবং সঙ্গে কিছু দিতে ভাত খেতে ইচ্ছা করছে না আমার , মাহি বলল!
ঠিক আছে বলে রুবা উঠে গেল !
এখানে দিতে বলবে !
মাহি ফেসবুকে ঢুকল , নিজের প্রোফাইল এ গিয়ে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে ম্যারেড করে দিল !
কিছুক্ষণ পর মা আসছে এদিকে মাহি মোবাইল রেখে মা কে দেখে হাসল !
মাহি খাওয়া-দাওয়া করেছো বাবা?
রুবা বলতে গেছে মা !
বাবা কোথায় মা ?
তোমার দাদীর রুমে বসে বই পড়ছে !
ওর দাদী মারা গেছে অনেক বছর বাবা প্রতিদিন অনেক টা সময় দাদীর রুমে কাটায় , ভাইয়া যাওয়ার পর আরো বেশি সময় থাকে !
রুবা কে একবার চেকআপ করতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ডাঃ সুরাইয়া র কাছে , সাফিয়া বেগম বলল?
আমার মনে আছে মা , আগামীকাল নিয়ে যাব !
মাহি র মোবাইল এ নিঝুমের মেসেজ আসছে !
লিখেছে, বাসায় ফিরেছিস?
ভর দুপুরে হাইওয়েতে ফেলে রেখে এসে এখন ঢং করা হচ্ছে , মনে মনে মাহি বলল!
রুবার সঙ্গে একটা সেলফি তুলে পাঠিয়ে দিলে আজকের কান্ডের আচ্ছা জবাব পেতো !
এটা মনে হতেই খুব হাসি পাচ্ছে মাহির , ও নিজেও এমন চাইল্ডিস কান্ড করতে পারবে কি ! হাসছে মাহি !
লাইলি , ফরিদা বুয়া ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে আসছে এদিকে ! এত কিছু কেন , মাহি বলল !
ফরিদা বলল, ভাবি করছে !
মা মাথা খারাপ নাকি তোমার রুবার , মাহি অবাক হয়ে বলল!
সাফিয়া বেগম বললেন, তুমি খেতে চেয়েছো ও তো সব সময় ঝটপট এসব তৈরি করাতে ওস্তাদ !
সব বানাইছে নিজে ভাইজান , লাইলি বুয়া বলল!
এখন কোথায় ও ?
ভাবি চা বানায় , ফরিদা বলল!
তোমরা যাও আবার পায়ে ফেলবে কালকে র মত , মাহি বলল!
গিয়ে বল আমি ডাকছি !
বুয়ারা ট্রে নামিয়ে রেখে দৌড় দিল রান্নাঘরে !
আমি বলেছি মা এখন তো আর দুপুরে র ভাত খাব না চায়ের সঙ্গে কিছু দিতে বলো , আর দেখো কত কি করেছে!
সাফিয়া বেগম বললেন , ও তো রান্না করতে খুব পছন্দ করে !
মাহি হাসলো !
রুবা শ্বশুর কে ডেকে নিয়ে আসছে পোর্চে , সবার সঙ্গে নাস্তা খেতে !
মাহি বাবাকে দেখে দাঁড়ালো !
সাফিয়া বেগম মনে মনে বলছেন, কত দিন পর এভাবে ওরা বসলো শুধু শিহাব নেই ! রুবা ওর শ্বশুর কে নিয়ে এসেছে ঘর থেকে !
সাফিয়া বেগম মনে মনে বললেন, তোমাকে সে জন্যই এত ভালোবাসি রুবা তুমি সব পারো উনার চোখ ভিজে যাচ্ছে!
রুবা এত কিছু কেন করলে , মাহি বলল!
তোমার জন্য করি নাই বাবার জন্য করেছি , রুবা হেসে বলল !
ও আচ্ছা দেখলে মা আমি ভাবছি আমার জন্য, মাহি বলল!
সব তো আমি করিনি ফ্রোজেন আইটেম ছিল !
চা নিয়ে আসছি বলে রুবা উঠে যাচ্ছে!
মাহি বলল, একদম না বসো ওরা আনবে !
খুব সুন্দর একটা বিকাল কাটল অনেক দিন পর এই বাসায়! শুধু একটা মানুষের অনুপস্থিতি সবাই অনুভব করলেও খুব যত্ন করে মনের ভেতর সেই কষ্টটা দাফন করছে যেন পাশের কেউ বুঝতে না পারে। শিহাব যেন না থেকেও আছে এ বাড়ির সব খানে।
সন্ধ্যা র পর সাফিয়া বেগম নিঝুম দের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন!
রুবা আর মাহি নিজেদের রুমে !
মাহি সোফায় শুয়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ! রুবা ঘর গোছাচ্ছে !
দরজায় টোকা দিয়ে ফরিদা ডাকলো, ভাবি?
রুবা বলল, আসো ভেতরে!
ফরিদা রুমে ঢুকে মাহি কে সাফিয়া বেগম এর ডেবিট কার্ড টা দিয়ে বলল, ভাইজান আম্মায় যাওয়ার সময় এইটা দিতে বলল!
মাহি বলল, টেবিলে রাখো!
রুবা এদিকে আসো তো !
রুবা কাছে যেতেই মাহি বলল, তোমার পায়ের কি অবস্থা দেখি !
রুবা বলল, ঠিক হয়ে গেছে !
মাহি বলল, লাল হয়ে আছে তো !
কিন্তু কোন জ্বালা যন্ত্রণা নেই !
রুবা তুমি এমন তাড়াহুড়া কোন কাজ নিয়ে করবে না আর !
ঠিক আছে ।
রুবা তুমি ঘন্টা খানেক একা থাকতে পারবে না ? আমি একটু বাহিরে যাব !
হ্যাঁ পারব না কেন।
গুড , ড্রেস চেঞ্জ করে বের হওয়ার আগে রুবাকে জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যাচ্ছি প্রশ্ন করলে না যে ?
এখনো তোমাকে জিজ্ঞাসা করার অভ্যাস টা হয় নি , বলে হাসলো রুবা !
কাছাকাছি আছি বেশিক্ষণ লাগবে না , তোমার কিছু লাগবে ?
রুবা মাথা নেড়ে না করলো ।
আসছি বলে মাহি বের হয়ে গেল !
মাহি রুবার জন্য মোবাইল কিনতে বের হয়েছে। মা রুবাকে লেটেস্ট সেট কিনে দিতে বলল!
মাহি মোবাইল কিনে রুবার জন্য ছোট্ট একটা গিফটও কিনলো ।
বাসায় ফেরার সময় ড্রাইভ করছে আর চিন্তা করছে রুবার পছন্দ হবে তো ওর দেয়া প্রথম উপহার !
বিয়ের রাতে রুবাকে চূড়ি পড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু ওটা তো একটা রিচুয়্যাল মাত্র তাও মা দিয়েছে ।
এটা মনে হয় সব ছেলের হাতে মা রা দিয়ে দেয় কিছু একটা বউ কে প্রথম রাতে দেয়ার জন্য ।
কি জানি ? হাসলো মাহি ! ওদের তো আর নরমাল বিয়ে না !
মাহি গিফটের বক্স টা র দিকে তাকালো । তার এক্সাইটেড লাগছে রুবা র কেমন লাগবে চিন্তা করে !
( চলবে )