#যখন_দুজনে_একা
২৫ পর্ব
পাঁচ দিন জ্বর আর ঠান্ডায় ভুগে মাহি এখন অনেক টা সুস্থ! এই পাঁচ দিন রুবা আর তার মা কে অনেক ব্যস্ত করে রেখেছে সে! রুবা তো সারাক্ষণ ওর সঙ্গে ছিল! ওকে খাওয়ানো, গা স্পন্জ করা , মাথায় যখন ব্যথা হতো তখন চুল টেনে দেয়া সব রুবা করেছে!
সেদিন রাতে নিঝুম চলে যাওয়ার পর আর আসেনি এমনকি কোন ফোন বা এসএমএস কিছু না ! এখন যদি ও ঠান্ডা হয়ে যায় জীবনে সামনে এগিয়ে যায় এতেই ভালো!
মাহি এই কদিন অনেক বার নিঝুমের কথা চিন্তা করেছে ! জীবনের এই হঠাৎ বদল টা নিঝুম মেনে নিতে পারছে না ! পারবেই বা কিভাবে ? ওরা দুজন গত তিন বছর একসাথে জীবনে র যে জাল বুনেছিল হঠাৎ সেটা এক ঝটকায় শেষ হয়ে গেল ! মেনে নেয়া টা কষ্টের !
মাহি যখন অসুস্থ ছিল রিয়াদ ভাই এসেছিল দেখতে মাহিকে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি সে তখন অনেক শরীর খারাপ ছিল!
ওর দুই চার জন বন্ধু ও এসেছিল! ইদানিং নিঝুম কে বিয়ে না করাতে কিছু বন্ধু বান্ধব তাকে এড়িয়ে চলে ! সবাই বুঝতে পারে না তার পরিস্থিতি টা। ওরা নিঝুমের পাশে থাকুক এতেই হবে !
আজ সকাল থেকে ওর শরীর টা ভালো! কালকে থেকে কোন জ্বর নেই!
রুবা ঘুমাচ্ছে এখনো, ওর সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেছে ।
রুবা এখন অনেক নরমাল! বলতে গেলে আগের সেই রুবা । ফ্যামিলির প্রতিটি মানুষের জন্য চিন্তা করছে বুয়াদের কাজের তদারকি করছে পুরোদস্তুর গৃহিণী!
এই জ্বরের সময় মাহি একদিন বলেছিল তুমি এমবিএ টা করো রুবা ?
রুবা বলল, আর সে পড়াশোনা করতে চায় না!
তাহলে কি করতে চাও!
রুবা বলল, সংসার!
পড়াশোনা করে সংসার হবে না তোমার? তোমার তো রান্না করতে হচ্ছে না ঘর গোছাতে হচ্ছে না তাহলে ঝামেলা কোথায় ?
রুবা বলল, তার নাকি ইচ্ছা টাই নাই!
তবে মাহির কথায় নিজের ফ্রেন্ড দের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে! দুই একজন তো ওকে ফোন ও দিল এই কয়েক দিনে! কত সুন্দর হেসে হেসে কথা বলেছে ওদের সাথে! মাহির তখন রুবাকে দেখতে ভালোই লেগেছে!
এর মধ্যে একদিন মাহির বন্ধু নিয়াজ ফোন করলো! কার কাছে শুনেছে মাহি অসুস্থ ! নিয়াজ ওর ভালো বন্ধু ছিল! নিঝুম কে অনেক পছন্দ করতো একটা সময় । ওর সঙ্গে নিঝুমের রিলেশন টা সব ফ্রেন্ড রা যখন জানলো তখন থেকে নিয়াজ মাহি কে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করলো! নিঝুম আর মাহির কোন গ্রুপে র সঙ্গে ও থাকতো না!
স্টুডেন্ট ভালো ছিল এখন অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে!
একটা সময় মাহি ও দেশের বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা করতে যেতে চেয়েছিল! ও পারমান্যান্টলি থাকতে পারতো না ডিগ্রি নিয়ে দেশেই চলে আসতে হতো! কিন্তু সে আর হলো কোথায়?
দেশের বাহিরে র জন্য, বিদেশি ডিগ্রি র জন্য আফসোস নেই, তার কষ্ট জীবনে প্রিয়জন দের হারিয়ে ফেলা তাদের কষ্ট!
ভাইয়া টা থাকলে রুবা র জীবন টা কত ভালো থাকতো! নিঝুম ওর জীবনে থাকতো ! এই বাসাটা যে সুন্দর থাকতো!
এসব চিন্তা করছে আর মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে আছে!
রুবার মুখের উপরের চুল সরিয়ে দিল মাহি! ঘুমের সময় রুবাকে সুন্দর লাগে আরো বেশি!
মাহি ওর মাথায় হাত রাখলো ! কয়দিন ওর খুব পরিশ্রম গেছে !
রুবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে !
হেসে বলে উঠলো কি অবস্থা তোমার?
বলেই মাহির গালে, কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা !
আই এম অলরাইট রুবা !
আলহামদুলিল্লাহ! কখন উঠেছো তুমি!
সুস্থ থাকলে যখন উঠি, মাহি বলল!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রুবা বলল, তাহলে তো অনেক আগে , আমাকে ডাকলে না কেন?
ডাকলে কি হতো , আমার তো কিছু লাগবে না এখন তাই তুমি ঘুমালে কোন সমস্যা নেই!
রুবা উঠে দাঁড়ালো , গায়ে ওড়না জড়িয়ে চুল গুলো খোপা করলো !
মাহি তাকিয়ে আছে ওর দিকে !
রুবা বলল, উঠো নাস্তা খাও তারপর ওষুধ আছে তোমার!
মাহি বলল, আমার উঠতে ইচ্ছে করছে না তুমিও যেও না রুবা !
আমার বসে থাকলে চলবে ?
আমার চলবে রুবা , সবার ও চলবে প্লিজ যেও না !
রুবা ওয়াস রুম থেকে এসে চুল ঠিক করল মাহিকে বলল, প্লিজ ফ্রেশ হও আমি নাস্তা নিয়ে আসছি !
রুবা চলে যাচ্ছে , মাহি বলল যেও না রুবা প্লিজ যেও না ।
রুবা ধমক দিয়ে বলল , চুপ বলে হেসে চলে গেল!
মাহি ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো! কয়দিন নিজের ঘরেই ছিলো! আজ বের হয়ে ভালো লাগলো!
করিডোরে বেতের সোফা য় বসলো । এখান থেকে বাহিরে র রাস্তা দেখা যায় ! লোকজন যাওয়া আসা করছে !
রুবা ট্রে হাতে সামনে এসে দাঁড়ালো! তুমি এখানে , আমি রুম থেকে ঘুরে এলাম!
ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না আর।
রুবা প্লেট এগিয়ে দিল মাহির সামনে!
খেতে খেতে মাহি বলল, রুবা চলো আজ দুপুর পরে কোথাও ঘুরে আসি !
রুবা বলল, আজকে ?
হুম কোন সমস্যা আছে তোমার?
না ! কিন্তু তোমার তো শরীর খারাপ !
রুবা আমি অনেক ভালো আছি , মাহি বলল!
কোথায় যাবে ?
মাহি বলল, আশেপাশেই কোথাও!
একটা শর্ত আছে ড্রাইভার কে নিয়ে যেতে হবে !
মাহি চোখ তুলে তাকালো , থাক দরকার নেই !
না ড্রাইভার সঙ্গে নিলে কি হয়, রুবা বলল ?
অনেক সমস্যা , প্রথমত আমি সুস্থ এটা বিশ্বাস করছো না , দ্বিতীয়ত আমার ড্রাইভিং কোয়ালিটি নিয়ে ডাউট করছো তুমি যে আমি পারব না , এটাই সমস্যা!
বাবারে এত বড় লেকচার দিলে, রুবা বলল!
ঠিক আছে তুমিই ড্রাইভ করো! যাব আমি ! কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মাহি বলল, সাভারের দিকে আমার এক স্কুল, কলেজ ফ্রেন্ড এর রিসোর্ট আছে মেইনলি ও প্রথমে ফিসারিজ করেছিল তারপর এখন সেটাকে রিসোর্ট বানিয়েছে । ইদানিং পয়সা ওয়ালাদের রিসোর্ট বানানোর কালচার শুরু হয়েছে তাই ফিসারিজ কে মডিফাই করে রিসোর্ট !
অনেক দিন ধরে ই বলছিল আসার জন্য। সময় কোথায় বলো ! আমারা একসঙ্গে স্কুলে আর কলেজে পড়েছি তারপর ও ভার্সিটি তে আমি মেডিকেল কলেজ । । দুই জন দুই জায়গায় হলেও যোগাযোগ টা আছে সব সময় । এখন বাপের বিজনেস চালায় সিরামিক, গার্মেন্টস আর কি কি বিজনেস আছে!
চলো যাই রুবা , তোমার ভালো লাগবে ?
মা কে বলি মা যেতে দিলে যাব ঠিক আছে !
আমি বলছি মাকে তুমি আমার ওষুধ গুলো এনে দাও ,মাহি বলল !
রুবা উঠে যাচ্ছে, মাহি বলল আমার চা কোথায় ?
তুমি মায়ের ঘরে যাও আমি তোমার , মা আর বাবার জন্য চা দিচ্ছি!
ঠিক আছে !
চা খেতে খেতেই মাহি মায়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইল !
সাফিয়া বেগম বললেন, যাও কিন্তু রাত করো না !
বুঝলে মাহি রুবার এই জিনিস টা আমার ভালো লাগে ও কিন্তু পারতো রেডি হয়ে এসে আমাকে বলতে যে যাচ্ছো তোমরা । আমি সেরকম শ্বাশুড়ি নই যে ওরকম কিছু হলে গাল ফোলাতাম কিন্তু রুবা কখনো এই কাজটা করে না । সে আগে বলবে কিংবা অনুমতি নিতে আসবে! এত ছোট ছোট ব্যাপারেও সে আমাকে ইনভলব করবে আমার গুরুত্ব অনুভব করাবে!
সেজন্য ই আমি ওকে অন্যদের চেয়ে আলাদা বলি! আর এই শিক্ষা ওকে ওর মা দিয়েছে ! মহিলা কে খুব কম দেখেছি যদিও কিন্তু এত সুন্দর ভাবে সংসার আর সন্তান কে লালন করেছেন দেখো জন্ম না দিয়েও রুবার স্টেপ ফাদার নিজের সন্তানের মত ভালোবেসেছিল রুবাকে । কতজন সেটা পায় বলো!
মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে মাহি নিজের রুমে এসে ঢুকলো !
দেখে রুবা ঘর গোছাচ্ছে!
মা কি বলল?
কি বলবে ? বলল যাও !
তাহলে কখন বের হব আমরা ?
তুমি বললে এখনই যাব !
মাহি সোফায় বসল !
রুবা বলল, এই তুমি কি তোমার ক্যামেরা আর লেন্স নিবে ?
নিলে কি হবে ?
আমার ছবি তুলে দিবে ?
আপনার যা ডিমান্ড রুবা ম্যাডাম , আগে কতবার বলেছি কোন দিন সময় দিয়েছেন!
আমার যখন সময় হত তখন তুমি ব্যস্ত ছিলে তাই হয়নি আগে, রুবা বলল!
না আপনার অনেক নখরা ও ছিল!
আজ তুলে দিবে তো ?
আচ্ছা ঠিক আছে এখন রেডি হওয়া শুরু করো , মাহি বলল!
এত তাড়াতাড়ি !
হ্যাঁ , মেয়েদের রেডি হতে অনেক সময় লাগে আমি জানি !
রুবা বলল, আমার এত লাগে না !
আচ্ছা দেখা যাক কি হয়।
ওরা লান্চের আগেই রেডি হয়ে গেল !
রুবা রেডি হচ্ছে ।
মাহি গেবার্টিন এর প্যান্ট আর পলো টি শার্ট পড়ে দুই মিনিটে রেডি হয়ে বলল আমি কিন্তু তোমার আগে রেডি রুবা!
আমার সঙ্গে কম্পিটিশন দিতে হবে না তোমার , রুবা বলল!
এখন যাও নিচে আমি আসছি!
তাড়াতাড়ি এসো বলে মাহি বের হয়ে গেল রুম থেকে!
মাহি মায়ের খোজে এসে দেখে মা খাওয়ার টেবিলে বসে আছে !
মাহি কে দেখে সাফিয়া বেগম বললেন, তোমরা লান্চ করে বের হবে না ?
মা আমার ফ্রেন্ড ওর ওখানেই লান্চ করতে বলল!
মাহি বাবা সাবধানে ড্রাইভ করো !
তুমি চিন্তা করো না !
নিচে যাচ্ছি মা , রুবাকে আসতে বল নিচে !
মাহি উঠে গেল!
একটু পর রুবা লাইট বেবি পিঙ্ক এর মধ্যে লাইট পেস্ট এর কাজ করা একটা থ্রি পিজ পড়ে শ্বাশুড়ি র কাছে আসল!
সাফিয়া বেগম মুগ্ধ হয়ে দেখছেন রুবাকে ,কী সুন্দর লাগছে ওকে । মনে মনে বললেন, মাসাআল্লাহ!
মা আপনার ছেলে কোথায় ?
ও তো নিচে নেমে গেছে , তোমাকে যেতে বলল!
রুবা শ্বাশুড়ি র কাছে এসে বলল, আসি মা ?
সাফিয়া বেগম ওর মাথায় হাত ছুয়ে বললেন , খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে মা সাবধানে যাও! বেশি রাত করো না ! আমার চিন্তা হয়!
রুবা বলল, ঠিক আছে মা আসি!
মাহি নিচে বসে সিগারেট খাচ্ছে !
রুবাকে আসতে দেখে সিগারেট ফেলে দিল ! মুগ্ধ হয়ে সেও তাকিয়ে আছে রুবার দিকে ! কী অদ্ভুত লাগছে রুবাকে!
কাছে এসে রুবা বলল, তোমার না শরীর খারাপ তাহলে সিগারেট খাচ্ছ কেন?
আমি ঠিক আছি , আর অনেক দিন পর খেলাম রুবা !
বুঝলাম এখন চলো!
ওরা রওনা হলো সাভারের উদ্দেশ্যে!
আগে আগে রওনা হওয়াতেই সময় মত আসতে পারলো ওরা ! তা না হলে বিকেল হয়ে যেত!
গাড়ি থেকে নেমেই রুবা মুগ্ধ হয়ে গেল জায়গা টা দেখে !
মাহি বলল, পছন্দ হয়েছে ?
দারুন তো ! এত সবুজ !রুবা বলল, চলো পুকুর পাড়ে যাই !
রিসোর্ট টা একদম সবুজ গাছপালা তে ভরা ! মাহি ভেবেছিল ফিসারিজ কে রিসোর্ট বানালে আর কতটুকু ই বা সুন্দর হবে কিন্তু এসে মুগ্ধ হয়ে গেল !
রুবা মুগ্ধ হয়ে চারপাশ টা দেখছে! পুকুর পাড়ে ছোট ছোট বাঁশে র মাচা করা ! দোলনা ঝুলে আছে গাছের ডালে! পায়ের নিচে সবুজ ঘাস !
মাহি সানগ্লাস খুলে রাখলো পুকুর পাড়ে র একটা মাচার উপর !
কি রুবা ভালো লাগছে ?
রুবা বলল, দারুন !
শোন রোদে না যাই হ্যাঁ ! তুমি তো জানোই রোদে গেলে আমার মাইগ্রেন শুরু হয় !
আমরা ঐ দিকে গাছের নিচে যাই বলে রুবা পুকুরের অন্য পাড়ের দিকে আঙুল তুলল!
রিসোর্ট এর ম্যানেজার দৌড়ে আসলো ওদের কাছে ! পিছনে একজন ওয়েটার দুটো ডাব কেটে ট্রে তে করে নিয়ে এসেছে!
সরি স্যার আমি অন্য দিকে ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি ! আমি এখানে র ম্যানেজার , লিয়াকত আলী !
ইটস ওকে লিয়াকত সাহেব ,
আমি আর আমার ওয়াইফ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব এখানে , মাহি বলল !
জ্বি , স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন! আপনাদের জন্য একটা কটেজ রেডি আছে স্যার ! লান্চ রেডি যখন বলবেন তখন দেয়া হবে ! যদি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে চান তাহলেও বলবেন স্যার ব্যবস্থা আছে!
থেঙ্কস লিয়াকত সাহেব এখন আগে ঘুরে দেখি আপনার রিসোর্ট তারপর জানাচ্ছি আপনাকে ! আপনার নাম্বার টা দিন !
লিয়াকত নিজের নাম্বার দিয়ে বিদায় নিল!
ওয়েটার ডাব রেখে গেছে!
রুবা দোলনায় দোল খাচ্ছে!
আচ্ছা যখন ম্যানেজার কে বললাম আমি আর আমার ওয়াইফ তখন হঠাৎ বুকে একটা শিরশিরানি হলো কেন? মাহি মনে মনে ভাবলো !
মাহি গিয়ে দোলনায় রুবার পিছনে দাঁড়াল ! তারপর জোরে ধাক্কা দিল?
রুবা হেসে গড়িয়ে পড়ছে!
মাহি আরও জোরে দিল ধাক্কা !
রুবা খুব মজা পাচ্ছে!
মাহি রুবার আনন্দ দেখে খুব ভালো লাগছে!
দোলনা থেকে নেমে রুবা বলল, জানো কত বছর পর উঠলাম এরকম দোলনাতে?
সেই ছোটবেলায় নানি বাড়িতে যখন ছিলাম তখন মায়ের স্কুলে গাছের সঙ্গে এমন দোলনা ছিল । আমি মায়ের সঙ্গে স্কুলে যেতাম তখন সারাক্ষন বাচ্চাদের সঙ্গে দোলনায় দোল খেতাম। কি যে ভালো লাগত! ওফফ কত বছর পর আবার উঠলাম!
তুমি মিস করো সেই দিন গুলো, মাহি বলল?
ওরা হেটে অন্য একটা পুকুরের পাড়ে চলে এসেছে । এখানে পুকুর পাড়ে বড় বড় গাছের ছায়ায় ঘাসের উপর সুন্দর মেট বিছানো রুবা শুয়ে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, না আমি ঐ জীবন টা মিস করি না ! ওখানে এত কষ্ট ছিল, এত অপমান ছিল তোমাকে বোঝানো যাবে না , রুবা বলল! মাহি ওর পাশে বসল, খুব কষ্ট ছিল রুবা ?
অনেক, আমি কাউকে বলি না ! জানো মা প্রতি রাতে কাদত! মামি রা খাওয়া নিয়ে , থাকা নিয়ে অনেক কথা শোনাত ! আমার সামনে দিয়ে মামাতো ভাই বোন গুলো কত কি খেতো কিন্তু খুব কম আমাকে দেয়া হত ! আমি তাকিয়ে থাকতাম মা বলতো কখনো চাইতে হয় না রুবা ! আমি চাইতাম না!
ওরা আমার সাথে ঝগড়া করতো আমার দোষ না থাকলেও আমাকে অযথা বকাঝকা করতো মামি রা ! মা কেও বকতো !
মায়ের যখন বিয়ে হয় আমি এবং মা দুজনেই বেঁচে গেলাম! তারপর দেখো ,কত সুন্দর জীবন কাটালাম আমি আর মা ।
রুবার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে!
একটা কথা বলব , রুবা বলল!
বলো রুবা! মাহি আগ্রহ নিয়ে তাকালো রুবার দিকে।
আমাকে নিয়ে যখন শিহাব চলে যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজনের টানাটানি শুরু হলো, তখন মনে হলো আমার এবং আমার সন্তানের জীবনেও কি অপমান আর কষ্ট লিখা আছে ! তাই ঘটবে?
তখন এক রাতে মা যখন তোমাকে বিয়ে করার কথাটা বলল তখন মনে হলো , আমার রাজি হওয়া উচিত!
কারণ মেয়েদের জীবনে স্বামী ছাড়া একা সন্তান নিয়ে সন্মান জনক জীবন পাওয়া অনেক টাফ!
তুমি তো আমাকে আর যাই হোক কষ্ট দিবে না , অপমান , উপেক্ষা করবে না ! তাই না ? রুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছেই !
মাহি ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!
আমিও তোমাকে যাচ্ছে তাই জীবন দিব বলেই বিয়ে করিনি, আমিও একটা সুন্দর জীবন দিব বলেই সেদিন মায়ের কথায় রাজি হয়েছি রুবা ! তুমি কখনো নিজেকে আমার শুধু দ্বায়িত্ব ভেবো না এখন তুমি আমার দ্বায়িত্বে র চেয়েও বেশি কিছু!
মাহি রুবার হাত ধরে বলল!
রুবা নিজের চোখ মুছলো!
চলো রুবা লান্চ করে আসি !
আর একটু পরে যাই ! জায়গাটা খুব ভালো লাগছে!
ওরা আরো কিছুক্ষণ থেকে লান্চ করতে গেল !
লান্চের পর হঠাৎ রোদ কমে গেল , অনেক বাতাস শুরু হয়ে গেল!
ওরা পুকুরে বড়শি ফেলল!
মাহি দেখিয়ে দিচ্ছে রুবাকে কিভাবে কি করবে!
তারপর ক্যামেরা দিয়ে রুবার বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছে!
রুবাকে অবাক করে দিয়ে একটা তেলাপিয়া মাছ ওর বড়শি তে ধরা পড়লো! চিৎকার দিয়ে উঠলো রুবা আনন্দে!
মাহি আনন্দে আত্মহারা রুবার ছবি তুলে ই যাচ্ছে!
মাছ ধরার শেষে রুবা ঘাটে বসে পুকুরে পা ডুবিয়ে বসলো!
মাহি বলল, সাবধানে পড়ে যেও না রুবা!
রুবা বলল, আমি পড়ব না !
বৃষ্টি আসবে নাকি , রুবা বলল!
কাছাকাছি কোথাও হচ্ছে বৃষ্টি , দেখো বাতাস টা কত ঠান্ডা , মাহি বলল!
আমার বাতাস দেখে মনে হচ্ছে ঝড় হবে !
হতেও পাড়ে , মাহি বলল!
প্লিজ বলো না আমার খুব ভয় করে ঝড় !
মাহি হাসলো , আমি আছি না তুমি ভয় পাবে কেন!
এই কথা বলার পাঁচ মিনিটের ভেতরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হলো !
ওরা দৌড়ে গিয়ে ওদের জন্য দেয়া কটেজ টা তে উঠলো!
চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে !
প্রথমে রুবা মজাই পাচ্ছিল বৃষ্টির পানি ধরছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
কিন্তু একটু পর যখন খুব বাজ পরা শুরু হলো তখন ভয়ে রুমের ভেতরে চলে গেল !
ইলেকট্রিসিটি চলে গেল ওরা দুজন অন্ধকারে বসে আছে ! মাহি মোবাইল এর টর্চ টা জ্বালিয়ে দিল!
রুবা বলল, আমার খুব ভয় লাগছে!
বোকা মেয়ে ভয়ের কিছু নেই , আমি আছি তো! ওদের জেনারেটর আছে চালু করতে সমস্যা হচ্ছে মনে হয়!
হঠাৎ আবার জোড়ে বাজ পড়ল রুবা দিল চিৎকার ।
মাহি হাসছে!
রুবা শক্ত করে মাহির হাত টা জড়িয়ে ধরে আছে!
মাহি বসে আছে আর মুখ টিপে হাসছে!
( চলবে)