যখন দুজনে একা পর্ব-২৮

0
3666

#যখন_দুজনে_একা

২৮ পর্ব

কত আনন্দে ছিল সারাক্ষণ, রান্না নিয়ে, বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে! হাতটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু পায়ের লিগামেন্ট এর ব্যথা টা ভুগাবে রুবাকে, মাহি রুবার মাথায় হাত রেখে ভাবছে!
মাহি রুবার হাতের নিচের বালিস টা সাবধানে ঠিক করে দিলো!
তারপর খুব সতর্কতার সাথে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ল।
সকালে রুবার ব্যথা অনেকটা কম!
মাহি হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে! নিজে নাস্তা খেল রুবাকে খাইয়ে দিল! ওষুধ দিয়ে বলল, রুমেই থেকো শুয়ে হাঁটাহাঁটি করতে যেও না !
রুবার মন টা খারাপ !
মাহি মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, তোমার মন খারাপ কেন?
এমনি!
আরে বলো না শুনি !
আমার জন্য সবার ঝামেলা হয়ে গেল তাই মন মেজাজ খারাপ!
বোকা মেয়ে কার ঝামেলা হলো?
এই যে তোমার পরীক্ষা এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমার পিছনে বসে আছো !
ও আচ্ছা, সেরকম কিছু না আমি পড়াশোনা আমার টা করে নিব তোমাকে চিন্তা করতে হবে না!
এখন আমি বের হচ্ছি তুমি কিন্তু রুম থেকে বের হবে না ! রেস্ট নাও টিভি দেখো, নেটফ্লিক্স এ মুভি দেখো, ফেসবুক এ বসে থাক সময় কেটে যাবে তারপর তো আমিই চলে আসছি ! রুবার হাতটা ধরলো মাহি আমি আসছি তুমি সাবধানে থেকো!
রুবা হাসলো।
মাহি বের হয়ে গেল !
রুবা মাহি যাওয়ার পর আবার ঘুমিয়ে পড়ল! সেই ঘুম ভাঙল এগারো টার দিকে!
মোবাইল হাতে নিল , দেখে মাহি‌ ইনবক্স এ মেসেজ দিসে!
‘ কি করো ‘ মন ভালো হয়েছে?’
রুবা একটা স্মাইলি ইমোজি পাঠিয়ে দিল!
ওর মন টা মাহির জন্য কেমন করছে ! খুব মিস করছে মাহি কে !
সারাক্ষণ মাহি ওর পাশে থেকে ওর অভ্যাস বদলে দিসে।
মাহি মেসেজ পাঠাল, অনেক ব্যস্ত দম ফেলার ফুরসত নেই , তোমার কি খবর?
রুবা লিখল, “আমার অনেক সময় কিছুই করার নেই । কখন আসবে ?”
মাহি লিখল,” তুমি বললে এখন‌ই চলে আসতে পারি ?”
রুবা, ” থাক কাজ শেষ করে আসো”
মাহি লিখেছে, ” ওটিতে ঢুকব পরে কথা হবে , বাই”

রুবা চুপচাপ শুয়েই আছে ! শ্বাশুড়ি এসে একবার দেখে গেছে , কিছু লাগবে কিনা !
রুবার চোখে রাজ্যের ঘুম । ওষুধের মধ্যে ঘুমের ওষুধ আছে নাকি সে চিন্তা করল! তার ঘুম পাচ্ছে কেন এত!

লাইলি বুয়া আসল রুমে!
ভাবি, আপনার চুল আঁচড়ে দেই ?
না লাগবে না এখন! তুমি তোমার কাজে যাও!

লান্চ এর আগে মাহি ফোন দিল ! অপেক্ষা না করে খেয়ে নিতে বলল । ওর আসতে বিকাল হবে ! ফরিদা বুয়া খাবার নিয়ে এলো! শ্বাশুড়ি ও পেছনে পেছনে রুমে ঢুকলো! একা খেতে পারবে না তুমি রুবা ! আমি খাইয়ে দিচ্ছি!
সমস্যা নেই মা আমি বাম হাত দিয়ে চেষ্টা করি না পারলে বলব!
শ্বাশুড়ি র হাতে খেতে লজ্জাই লাগবে রুবার! সে চামচ দিয়ে বাম হাতে খেল কিছুটা! শ্বাশুড়ি রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেখে দিল। বুয়া বলল, ভাবি তো কিছুই খাইলেন না !
আর খেতে ইচ্ছা করতেছে না ! নিয়ে যাও প্লিজ!

মোবাইল নিয়ে দেখে মাহি ওকে সুন্দর মেসেজ দিসে,
“হে মন বলাকা মন
অজানার আহ্বানে
চঞ্চল পাখা মেলে ধরো”
তুমি চঞ্চল হয়ো না রুবা আবার ব্যথা পাবে।‌আমি আমার কথা বলছি !

রুবা কি লিখবে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল !

বিকেলে মাহি ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য গাড়ি পার্কিং থেকে বের করে গেটের কাছে এসে দেখে নিঝুম রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ! মোবাইল টিপছে!
মাহি ওর সামনে গাড়ি থামাল, গ্লাস নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তোর গাড়ি আসেনি ?
না আপু আর আম্মু গাড়ি নিয়ে গেছে আজ শপিং ‌এ! সমস্যা নাই উবার ডাকছি রাইড ফাইন্ড করছে তুই যা!
এই সময় গাড়ি পাওয়া টাফ হবে নিঝুম , আমি নামিয়ে দিয়ে যাই।
না না লাগবে না তুই যা।
আরে আয় তো ভয় পাস না আমি পূর্বাচল নিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসব না ! বলে মাহি হাসলো!
নিঝুম উঠে এলো গাড়িতে!
মাহি গাড়ি স্টার্ট করলো!
নিঝুম প্রথমে চুপচাপ ই ছিল!
মাহিকে তারপর জিজ্ঞাসা করল, তোর শরীর এখন কেমন ?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি । ফিট এন্ড ফাইন!
এত দিন জ্বরে ভুগলি কিভাবে?

পাপ বেড়ে গেছিল আল্লাহ স্বাস্তি দিসে , মাহি বলল!
নিঝুম হেসে বলল, তা ঠিক বলছিস।

আচ্ছা উঠার সময় বললি না ,তুই পূর্বাচল নিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসবি না , তুই এত দূরে নামিয়ে দিসিস আমাকে নিজেকে আর খুঁজে ই পাচ্ছি না মাহি !

মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
তোর বউ কেমন আছে?
ভালো!
কালকে হসপিটালে আনছিলি শুনলাম!
তাহলে তো জানিস ই কি হয়েছে কি অবস্থা?
রবিন বলল, তুই নাকি ওকে দেখতেই দেস নাই! রুবাকে , ধরতে দেস নাই!
হ্যাঁ কেন ধরতে দিব রুবাকে , মাহি বলল ?

আশ্চর্য ও অর্থোপেডিক এর ডিউটি ডাক্তার তখন !

ও এক্সরে রুমের সামনে যে কথা বলছে আর রবিন এর স্বভাব তুই জানিস না ও কেমন টাইপের ছেলে ওকে দিব আমি রুবাকে ধরতে ? অসম্ভব!
এতটা পজেসিভনেস মাহি , রুবার জন্য?
রুবার জায়গায় যে কেউ থাকলেও আমি এটাই করতাম, রবিনের চোখ কেমন একটা পুরুষ মানুষ হয়ে আমি জানি এটা তোকে বুঝানোর কিছু নাই!

নিঝুম হাসছে।
এই ব্যাপারে তোর কাছে রবিন বলছে, মাহি বলল ? শালার নাক ফাটায় দেয়া দরকার!
তাহলে তো হাসপাতালে র অনেকের নাক ফাটাতে হবে তোর, কালকে রুবাকে দেখে অনেকেই ওর রূপের মোহে পড়ে গেছে তোর মত ! সবাই তোর ভাগ্য নিয়ে হিংসা করছে এরকম সুন্দরী র স্বামী কজন হতে পারে !
আমি এই সাবজেক্ট টা নিয়ে কথা বলতে চাইছি না নিঝুম। আর আমি রুবার রূপের মোহে আটকা পড়ছি না কি সেটাও আলোচনা করতে চাইছি না !

দুজনেই আবার চুপ করে গেল!
রাস্তায় কঠিন জ্যাম!
নিঝুম মনে মনে ভাবছে কখনো কখনো জ্যাম ও আনন্দ দায়ক হয় ! আজ সারা ঢাকা জ্যামে স্টার্ক হয়ে যাক। ও অনন্তকাল বসে থাকুক ওর মাহির পাশে।
চোখ বন্ধ করে সে পরিচিত পারফিউম এর ঘ্রাণ
টেনে নিচ্ছে নিজের ভেতর!
রাগে মাহির চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া মুখ ।‌লাল হয়ে গেছে মুখের রং ! সব তার পরিচিত! তার মাহি তো এমনই!

পড়াশোনা কেমন চলছে তোর , নিঝুম প্রশ্ন করলো?
চলছে !
আমি পড়তেই বসতে পারছি না । আপুর এনগেজমেন্ট এই সপ্তাহে বাসায় সারাক্ষণ হৈ চৈ । আর আমার পড়তেও ইচ্ছা করে না ইদানিং !
পরীক্ষা যদি ‌দেস তাহলে প্রস্তুতি নিয়েই দেয়া ভালো , মাহি বলল!

রুবা পড়ল কিভাবে?
সিঁড়িতে পা পিছলে !
ও !
খালু নাকি এখন অনেক টা নরমাল ?
বাবা ঠিক হয়ে যাচ্ছে !
ঐদিন নিয়াজ ফোন দিল আমাকে তারপর আবার দেখা হল রেস্টুরেন্ট এ , তোর কথা জিজ্ঞাসা করলো, মাহি বলল!
আমাকেও ফোন দিয়েছিল ! রুবার সঙ্গে আর তোর সঙ্গে দেখা হয়েছে বলল!
হুঁ আমরা দুজন একসঙ্গে ই ছিলাম , মাহি বলল!
ও এখনও তোর জন্য আমাকে খোঁচা দেয় নিঝুম!
এখন তো আরো বেশি দিবে , তোর জন্য ওর প্রোপোজাল ফিরিয়ে দিসি এখন তুই ই অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলছিস ওর জ্বালা বেড়ে যাওয়ার কথা না ?
ও তাই বুঝি , মাহি বলল!
ঐদিন তোর সঙ্গে ফারিয়ার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এ দেখা হয়েছে তাই না ?
হয়তো খেয়াল নাই!
এত খেয়াল থাকবে কিভাবে তুই তো তখন ব‌উ এর জন্য সোনার পায়েল কিনতে ব্যস্ত ছিলি !
ও আচ্ছা সেদিন হ্যাঁ , ফারিয়াই ছিল তো কথা হয়েছিল। তোর এত ফ্রেন্ড কয়টাকে মনে রাখি বল , মাহি বলল?
ও কিন্তু তোর ও ক্লাসমেট এবং খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড এর ব‌উ ,মাহি?
ওরা যদি সত্যিই আমার ফ্রেন্ড হতো তাহলে আমাকে বুঝতো ! বাদ দে ওসব কথা নিঝুম!
ওরা আমার ফ্রেন্ড বলেই ওরা আমাকে বুঝে , নিঝুম বলল!
ওরা এক ঘন্টায় ফার্মগেট আসল ! সামনে বিজয় স্মরণীর সিগন্যাল এর বিশাল জ্যাম!
হঠাৎ নিঝুম সীটের পাশে একটা বড় খোঁপার কাঁটা বের করে বলল, এটা কার ?
মাহি বলল, রুবা ছাড়া আর কার হবে , ফেলে গেছে !
বিয়ে করলে নাকি কারো শার্টে লিপস্টিকের দাগ থাকে, কারো গলায় কামড়ের দাগ আর তোর দেখি গাড়িতে ব‌উয়ের চুলের কাটা বলে নিঝুম টিটকারি দিয়ে হাসছে!
মাহি কঠিন চোখে তাকালো, নিঝুম হঠাৎ হঠাৎ তোর মাথায় কি শট সার্কিট হয় কি কথা বলে ফেলিস বুঝে উঠতে পারিস না তাই না ?
নিঝুম হাসছে!
মাহি চুপ করে গেল ! রাগে ওর চোয়াল আবার শক্ত হচ্ছে!
নিঝুম ওর রাগ বাড়ানোর জন্য বলল, শোন ননদের সম্পর্ক যেহেতু আমাদের, রুবাকে নিয়ে ফান‌ করতেই পারি বুঝেছিস!
মাহি বলল, এই টাইপের ফান নিঝুম , তোর মুখে মানায় ? রুবার সঙ্গে সাবধান এসব করবি না । ও এসব তোর উচ্চ মাত্রার ফান বুঝবে না !
ঠিক আছে ঠিক আছে তোর বউ এর সঙ্গে ফান করব না !
আর আমার সাথে না করলেও খুশি হব নিঝুম!
নিঝুম হাসছে! তুই অনেক সিরিয়াস হয়ে গেছিস মাহি?
আমি খুব ফানি টাইপের কখনো ছিলাম বুঝি?
তা ছিলি না কিন্তু এত সিরিয়াস ও ছিলি নি !

মহাখালী ফ্লাইওভারের উঠার সঙ্গে সঙ্গে মাহির ফোন আসছে! ও সাধারনত ড্রাইভ করার সময় ব্লুটুথ এ কথা বলে!
রুবা ফোন দিসে , তাই নিঝুমের সামনে ওর কথা বলতে আন‌ইজি লাগছে, তাও ধরতেই হবে !
হ্যালো রুবা !
কোথায় তুমি ?
এই তো গাড়িতে চলে আসছি রাস্তায় জ্যাম অনেক!
তোমার কি অবস্থা?
আমার হাঁটুর ব্যথা টা অনেক বাড়ছে ,কাতর গলায় বলল রুবা!
একটু তো ব্যথা করবেই !
একটু না অনেক ব্যথা করছে।
আচ্ছা আমি আসছি বেশিক্ষণ লাগবে না। তোমার কিছু লাগবে নিয়ে আসব ?
না তুমি তাড়াতাড়ি আসলেই হবে !
আসছি! মা কোথায় মা কে ডাকো!
মা এখানেই আছে !
আসছি, আসছি !
রাখলাম , সাবধানে ড্রাইভ করো !
আচ্ছা!
ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুম বলে উঠলো, ওরে বাবা প্রেম তো তোদের জমে কুলফি , মাহি!
এবার মাহি ও ফাজলামি শুরু করলো, সত্যিই নিঝুম পার্ফেক্ট হচ্ছে তো ! আমি টেনশনে ছিলাম এত দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছি ব‌উ এর কাছে আবার ফেল না করি !

নিঝুম মাহির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল!
দেখলি তো নিঝুম কেমন লাগে?
দেখলাম! আমার কেমন লাগে তুই চিন্তা করিস? যখন তুই আর তোর বউ আহ্লাদ করিস আমার সামনে?
এখানে আহ্লাদ কোথায় হলো, ওর হাত ভাঙ্গা, পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে তীব্র ব্যথায় সারারাত ঝটফট করছে । সারাদিন একা পড়ে আছে ! এখন ব্যথা বাড়ছে ও আমাকে আসতে বলছে তাড়াতাড়ি এটাতে খারাপ কি দেখলি !
আগে তোকে এভাবে ডাকতো কখনও রুবা, নিঝুম বলল?
নিঝুম আগে তো আমি ওর সমস্যা সমাধানের কেউ ছিলাম না , আমি ওর হাজব্যান্ড ও ছিলাম না !
হ্যাঁ তাই তো রে ! আমি ই ভুলে যাই!

নিঝুম আমি আবারও তোকে বলব তুই এসব চিন্তা বাদ দে আমি খারাপ মানুষ আমাকে ভুলে যা , আমাকে মনে রেখে কষ্ট পাওয়া বন্ধ কর প্লিজ!
আমি রুবার সাথেই এখন ভালো , খারাপ যেমন টা ই হোক জীবন টা কাটাব! আমার কোন অপশন খোঁজার ওয়ে নাই ইচ্ছা ও নাই!
তোর সামনে অনেক বড় একটা জীবন আছে তুই ইচ্ছা করলে ই সব চিন্তা বাদ দিয়ে সুন্দর করতে পারিস জীবন টা !
তুই পারছিস মাহি ?
সত্যি টা শুনতে চাস নিঝুম ?
হ্যাঁ!
সত্যি রে রুবার আশেপাশে আমি জীবনটাকে সুন্দর করার সব কিছু দেখি! ওর অস্থিরতা, ওর ছেলেমানুষি ওর স্থিরতা ওর হাসি মুখ ওর কষ্ট সব আমাকে ভালো ভাবে বাঁচার পথ দেখায় ! যখন বিয়ে করব ঠিক করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম শুধু ওকে ভালো রাখলেই হবে , আমার নিজের সুখ থাক তোলা ! এখন ওকে দেখলে, ও পাশে থাকলে আমিও ভালো থাকছি নিঝুম!
মাহি মনে মনে ভাবছে , তোকে এই কথা না বললে তোর জীবনটা আগাবে না নিঝুম, আমার আর রুবার জীবন টাও না !
সবার এখন এগিয়ে যাওয়া উচিত!
নিঝুম বলল, ভালো তুই ভালো আছিস দেখেই ভালো লাগছে!
নিঝুম দের বাসার সামনে গাড়ি এসে দাঁড়ালো! তোকে আর ডাকব না উপরে যেতে , তোর ব‌উ অস্থির হয়ে আছে !
আমার কথা গুলো ভেবে দেখিস নিঝুম । আমি সামনে এগিয়ে গেছি তুই ও যাওয়ার চেষ্টা কর!
করব চিন্তা করিস না, মাহি ।
নিঝুম নিজের ব্যাগ টা নিয়ে বের হ‌ওয়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে এসে হঠাৎ মাহির গলার কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো, ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেল গাড়ির দরজা জোরে লাগিয়ে !
মাহি কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে দুই সেকেন্ড স্টিয়ারিং ধরে বসে রইল । তারপর এক্সিলেটর এ চাপ দিল!
মনে মনে বলছে কাকে বুঝালাম এতক্ষণ! এই মেয়ে একদিন বড় ঝামেলা পাকাবে! নিজে মরবে আমাকে মারবে মাঝখান থেকে দুটো পরিবার আর রুবা ও শেষ হবে !
মিররে দেখে গলায় লিপস্টিক এর দাগ! গাড়ি সাইড করে টিস্যু দিয়ে মুছলো মাহি! আচ্ছা দিন দিন এতটা বেপরোয়া হচ্ছে কেন নিঝুম ?
ঐ দিনের পর ভেবেছিলাম ও সামলে নিয়েছে নিজেকে কিন্তু কিসের কি ! ও যা ছিল তাই আছে !
আমি কি করব এখন ? এসব ভাবতে ভাবতেই মাহির গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকল !
মাহি আবার আয়নায় নিজের গলা টা দেখলো ! শার্টে লাগছে কিনা দেখলো? নেভী ব্লু কালারের শার্ট বলেই দাগ বোঝা যাবে না লাগলেও!

দোতলায় উঠে মাহি বেসিনে হাত ধুয়ে নিল এটা ওর সারাজীবনের অভ্যাস বাসায় ঢুকে আগে হাত ধুয়ে নেয়। তারপর সোজা নিজের রুমের দিকে ছুটে গেল!
রুবা বিছানায় পা বালিসের উপর রেখে শুয়ে আছে ! ফরিদা বুয়াও রুমে , মাহি কে দেখে বের হয়ে গেল !
মাহি রুবার মাথার পাশে বসলো!
রুবা চোখ খুলে তাকালো !
ব্যথা র কি অবস্থা ?
অনেক ব্যাথা করছে আর সহ্য করতে পারছি না , রুবা অসহায় এর মত বলল !
মাহি পরম মমতায় ওর মাথায় হাত রাখলো! আমি কথা বলছি ডাক্তারের সাথে একটু অপেক্ষা করো রুবা!
মাহি ফোন হাতে নিয়ে অর্থপেডিক এর ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলল! তিনি ব্যথা র জন্য ওষুধ বললেন,
কাগজে ওষুধের নাম লিখে কুদরত ভাই কে ডাকার জন্য ছুটে গেল মাহি!

রুবা উঠে বেডের পিছনে হেলান দিয়ে বসছে ! মাহি রুমে ঢুকে বলল, উঠলে কেন ?
সারাদিন শুয়েই ছিলাম!
মাহি শার্ট খুলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
রুবার ফোনে রিং হচ্ছে !
আননোন নাম্বার !
রুবা রিসিভ করতেই ওপাশে নিঝুম বলে উঠলো, কি অবস্থা রুবা ?
নিঝুম আপু !
হ্যাঁ, শুনলাম পা পিছলে আলুর দম হয়ে গেছো !
রুবা কষ্টের ভেতরেও হো হো করে হেসে উঠলো !
আর বলিও না আমার হাত ভাঙছে আর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ছে!
হু শুনলাম ! তোমার বর তো জানায় নাই আজ হসপিটালে গিয়ে দেখি ডাক্তার , ইন্টার্ন সব তোমার রূপের ঝলকে আহত হয়ে আছে তখন শুনলাম ঘটনা যে ডাঃ মাহির আজগর এর ব‌উ হাত পা ভেঙ্গে এসেছিল হসপিটালে ! তিনি ঐ কাতর অবস্থায় ই ডাক্তার দের রোগী বানিয়ে দিসেন ,আর যদি সাজগোজ করে আসত এদের কি হতো?
নিঝুম আপু কি শুরু করলে শুধু দুষ্টামি তাই না , রুবা হাসছে!
মাহি ঠিক তখনই গোসল করে রুমে ঢুকলো । এসে দেখে রুবা ফোনে নিঝুমের সঙ্গে কথা বলছে!
সিরিয়াসলি রুবা , তোমার বর কালকে এক ডাক্তারের সঙ্গে ঝগড়া ও করছে বিলিভ মি ! আজকে বলছিল নাক ভেঙে ফেলবে সবার ! নিঝুম হাসছে !
রুবা বলল, তুমি বাসায় আসো না কেন ? আগে এসে কত আড্ডা দিতে এখন একবারে ই আসো না !
তোমার বর বিরক্ত হবে আসলে , নিঝুম বলল!
ও কেন বিরক্ত হবে , ওর পড়াশোনা ও করবে আমরা আড্ডা দিব! তুমি চলে এসো !
মাহি আল্লাহ আল্লাহ করছে , কোথায় আমি নিঝুম কে আর রুবাকে দূরে রাখতে চাইছি আর রুবা দাওয়াত দিয়ে আনছে!
রুবা নিঝুমের ও পরীক্ষা সামনে ও‌ পড়া রেখে তোমার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসবে , মাহি বলল?
ও আচ্ছা পরীক্ষা শেষ করে এসো আপু! আর শোন আমরা এক জায়গায় ঘুরতে গেছিলাম একটা রিসোর্ট এ এত সুন্দর জায়গাটা দুই ফ্যামিলি, ছোট মামি, শ্রুতি, মিতি আমরা সবাই একদিন সারাদিনে র জন্য যাব কেমন, দারুন হবে মা বাবা অনেক দিন বের হয় না কোথাও ,উনাদের ও ভালো লাগবে কি বলো?
মাহি মাথায় হাত দিয়ে বসলো ! মনে মনে বলল, আরে পাগল চুপ যা !
নিঝুম প্রশ্ন করলো , তোমরা দুজন গিয়েছিলে?
হ্যাঁ আপু সাভারে বেশি দূরে না !
রাতে ছিলে ?
না দুপুরে গেছি সন্ধ্যায় চলে আসছি !
ও আচ্ছা!
রুবা এখন রাখো ফোন ওষুধ খাবে তুমি , মাহি বলল!
আপু তুমি এসো হ্যাঁ !
রাখি ভালো থেকো , রুবা !
ফোন রাখার পর মাহি বলল, এত কথা বলার কি হলো?
কোথায় এত কথা বললাম?
না ঠিক আছে , মাহি বলল!

মাহি রুবাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল !
সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ । মাহির বুঝতে আর বাকি নেই কার মেসেজ,

মাহি তুই যত দূরে যা , রিসোর্ট এ যা, হোটেলে যা রুবাকে নিয়ে , আমার থেকে চোখ সরিয়ে নে কিন্তু আমি তো জানি তোর মনে কে ?

মাহি মেসেজ ডিলিট করে আবার শুয়ে পড়লো ।

কিছুক্ষণ পর
রুবা ওর দিকে ঝুঁকে ওর মাথায় হাত রাখলো! খুব টায়ার্ড লাগছে তোমার?
মাহি শুধু হুঁ বলল।
ডিনার দিতে বলব ?
না এভাবে শুয়ে থাকি কিছুক্ষণ ! আজ খুব হ্যাকটিক একটা দিন গেছে ওটি ছিল অনেক গুলো । দুটো পায়ের উপর ছিলাম সারাদিন। তারপর রাস্তায় দুই ঘণ্টা জ্যামে আটকা !
রুবা মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে !
নিঝুম আপু বলল, তুমি নাকি ঝগড়া করছো কার সঙ্গে?
আরে না নিঝুম ফান করছে তোমার সঙ্গে!
আপু অনেক ফান করে মজা করে কথা বলে!
হুঁ তুমি ওর সব কথা সিরিয়াসলি নিও না রুবা!
তোমার ব্যথা কমেছে রুবা?
ওষুধ খাওয়ার পর একটু কমছে!
ঠিক হয়ে যাবে , কালকে নাগাদ থাকবে না দেখো মাহি বলল !
আমি আধা ঘন্টা ঘুমাব তারপর আমাকে ডাকবে আমি ডিনার করে পড়তে বসবো!
ঠিক আছে!
মাহি চোখ বন্ধ করলো!
রুবা ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।
মাহি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, থেঙ্কস রুবা !
রুবা মিষ্টি করে হাসলো!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here