#যখন_দুজনে_একা
৩২ পর্ব
মাহি রুবার চোখে র পানি মুছিয়ে দিল!
আবার সে ফ্লোরে বসলো, তেল দিয়ে দিবে না আর ?
রুবা তেল লাগানো শুরু করলো!
একটু পরেই মাহি বলল,
আর তেল দিও না অনেক হয়েছে এখন ম্যাসাজ করো !
রুবা চুল টেনে দিচ্ছে!
মাহি বলল, আসলেই তো দারুন লাগছে ! ভালোই হলো এখন থেকে মাথা তোমাকে দিয়ে ম্যাসাজ করানো যাবে!
রুবা জোরে দিল চুলে টান !
ও ব্যথা লাগে , মাহি চিৎকার দিল।
রুবা হাসছে!
অনেক হয়েছে আর লাগবে না ! থেঙ্কস !
তোমার মাথায় তেল দিয়ে দিব আমি , মাহি বলল!
না আমি এই তেল দেই না ! চুল ঝড়ে পরবে!
মাহি উঠে গিয়ে সব পর্দা টেনে দিল !
থাক না , রুবা বলল!
আরে আশেপাশে থেকে দেখা যাচ্ছে , গ্লাস তো !
ও তাই তো !
যখন বৃষ্টি পড়বে তখন লাইট নিভিয়ে পর্দা সরিয়ে দিব ঠিক আছে !
আচ্ছা!
কালকে বিকালে চলো বাহিরে যাব !
রুবা বলল, কোথায় ?
আমার কিছু শপিং আছে তারপর বাহিরে ডিনার করলাম দুজন ?
ঠিক আছে মা দিলে তবেই কিন্তু , রুবা বলল!
মা কখনো না করবে না !
রুবা বলল, তা করবে না , তবুও মা কে না বলে তো যাই না কোথাও !
হুঁ।
রুবা আমার সত্যিই ঘুম পাচ্ছে ! তোমার ম্যাসেজ এ ম্যাজিক আছে দেখছি।
তাহলে ঘুমাও !
আমি গল্প করতে চেয়েছিলাম !
কালকে হবে , আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না কোথাও !
পালাতে দিলে তো তোমায় !
কথা বলো না ঘুমাও, রুবা বলল।
লাইট নিভিয়ে দিল রুবা , শুধু ছাদে একটা লাইট জ্বলছে।
মাহি মুখ তুলে বলল, গুড নাইট !
গুড নাইট ।
রুবা র চোখে ঘুম আসেনি এখনো।সে বিছানায় হেলান দিয়ে ডান হাত দিয়ে মাহির চুল টেনে দিচ্ছে আলতো করে !
মাহি একটুক্ষনে ই ঘুমিয়ে গেল !
সারাদিন কত টায়ার্ড ছিল । রুবা মাহির গাল স্পর্শ করলো ! ও চিন্তা করছে, একদিন রাতে কত মেরেছিল সে মানুষ টা কে খামচি, ধাক্কা , ঘুসি মেরেছিল । কিছুই বলেনি , বরং ওকে বুকে ধরে রাখছে ! রুবা হাসলো নিজে নিজেই ।
মেঘ ডাকার আওয়াজ হচ্ছে ! এবং ঝুম করেই বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি নেমে গেল!
রুবা পর্দা সরিয়ে দিল আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে কাঁচের ভেতর থেকে বৃষ্টি দেখতে। একবার চাইলো ,মাহি কে ডাকবে!
কিন্তু ও এত আরাম করে ঘুমাচ্ছে ডাকতে ইচ্ছে হলো না !
রুবা ঘুমন্ত মাহি কে দেখছে । বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে ওর দিকে ফিরে !
রুবা আবার মাহির মাথায় হাত দিল।
তারপর মাহির খুব কাছ ঘেঁষে ওর বুকের কাছে এসে শুয়ে পড়লো!
কিছুক্ষণ রুবা ওভাবেই থাকলো ।, তারপর আবার দূরে সরে গেল , মাহি র হয়তো অস্বস্তি লাগবে ভেবে।
হঠাৎ মাহি বলল, সরে গেলে কেন ভালোই লাগছিলো কিন্তু আমার। বলেই মুখ টিপে হাসছে মাহি !
এবার রুবা ঘুমের মারাত্মক অভিনয় করে যাচ্ছে !
মাহি চাইলেই পারে টান দিয়ে রুবাকে তার বুকের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে কিন্তু সে রুবার এই জড়তা টা আরো ভাঙ্গার অপেক্ষায় থাকতে চায়!
একদিন এখানেই আসতে হবে রুবা , ভাবছে আর মনে মনে হাসছে মাহি।
উঠে এসে রুবার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল ঘুমাও !
রুবা বরফের মত জমে আছে তার নিজের উপরেই নিজের রাগ লাগছে , কি ভাবছে না জানি মাহি !
মাহির ঘুম যথারীতি সকাল সকাল ই ভেঙে যায় ! ছুটির দিনেও ! আরো কিছুক্ষণ সে ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু না একবার ঘুম ভেঙ্গে গেছে এখন আর ঘুম আসবে না!
মোবাইল টা হাতে নিয়ে মাহি নিয়াজ কে রিপ্লাই দিল, “আগামীকাল হসপিটালে র পর সন্ধ্যায় দেখা করা যায় , কোথায় তুই ঠিক কর তবে গুলশানের দিকে হলেই ভালো হয়!”
রুবা এখনো ঘুমে কালকে রাতে ও মাথায় হাত রাখলো যখন তখন ই ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল , তা না হলে টের ই পেত না ভদ্রমহিলা তাঁর এত কাছে এসেছিলো, মাহি চিন্তা করে হাসছে!
মাহি রুবার গায়ে চাদর টেনে দিল! সারারাত বৃষ্টি হয়েছে তারমধ্যে এসি চলছে ঘর পুরো ঠান্ডা !
এসি বন্ধ করল মাহি !
রুবার মুখের উপর চুল ঢেকে আছে , সরিয়ে দিল !
তারপর রুবার ঘুম ভাঙানোর জন্য ওর গালে আলতো করে স্পর্শ করলো !
একটু পরেই রুবা চোখ মেলে তাকালো।
গুড মর্নিং, মাহি হেসে বলল !
অনেক বেলা হয়ে গেছে ?
অনেক বেলা না তবে এখন উঠতেই পারো !
আমি আজকে রান্না করব , তাড়াতাড়ি উঠতে হবে রুবা উঠে বসতে বসতে বলল!
কোন দরকার নেই রুবা রেস্ট করো আমার পাশে থাকো ! এসব কাজের জন্য মানুষ আছে বাসায়!
আছে কিন্তু আমার করতে ইচ্ছে করছে !
অন্য দিন করো , আমি যেদিন হসপিটালে থাকি আজ না !
তোমার জন্য ই করব রান্না !
আমার জন্যই তো , ঠিক আছে তাহলে আমি বলছি লাগবে না ব্যস , মাহি বলল!
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে এখন নিচে যাই , নাকি সকালেও না খেয়ে থাকবে?
তুমি আগাও আমি আসছি , আর একটা কাজ করে দাও কুদরত ভাইকে দিয়ে আমার জন্য সিগারেট এর প্যাকেট আনিয়ে দাও! ওর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি!
ভালো হবা না তাই না , রুবা যেতে যেতে বলল?
অনেক কমিয়ে দিয়েছি ,সুইটহার্ট !
ঘোড়ার ডিম , বলে নেমে গেল রুবা!
মাহি ব্রেকফাস্ট সেরে নিজের রুমে বই খুলে বসছে ! রুবা তার মতো ই যা বলছে তাই করছে , রান্না ঘরে!
তেমন কিছু করছে না ও, আজ তার শ্বাশুড়ি রান্না করছে! সাফিয়া বেগম অনেক দিন রান্নার কাজ করেন না! ঈদ ছাড়া চূলার কাছে এসে কিছু করা হয় না!
আজ ২২ বছর ফরিদা বুয়া এই বাসায় রান্না ঘরের সব কাজ সামলায়!
বিয়ের পর রুবা হঠাৎ হঠাৎ এক ,দুইটা আইটেম রান্না করে তবে নাস্তা বানাতে পছন্দ করে রুবা বিভিন্ন টাইপের!
আজ শ্বাশুড়ি যেহেতু আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি রান্না করবেন তাই রুবা খুব উৎসাহ নিয়ে শ্বাশুড়ি র আশেপাশে হেল্প করছে।
এর ভেতরে মাহি মেসেঞ্জার এ তাকে বারবার বিভিন্ন মেসেজ পাঠাচ্ছে ওর লেগ পুল করছে!
রুবা এক একবার মেসেজ পড়ে আর ইমোজি দিয়ে রিপ্লাই দিচ্ছে!
আবার আসছে মাহির মেসেজ, ওপেন করে দেখে মাহি লিখেছে,
“আমি যে নিজেই মত্ত
জানি না তোমার শর্ত
যদি বা ঘটে অনর্থ
তবুও তোমাকে চাই”
রুবা হাসছে মেসেজ পড়ে । লাভ ইমোজি পাঠিয়ে দিল রুবা!
ওর মাথায় কোন কিছু লিখা কাজ করছে না !
বিকেলে দুজন যখন বের হলো মাহি বলল, আগে চলো পূর্বাচল এর দিকে যাই ! আসার সময় যমুনা তে ঢুকব!
ঠিক আছে!
রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওরা যেখানে দাঁড়াল, ছুটির দিন বলেই অনেক ভীড় আশেপাশে। রুবা বলল, মানুষের আনন্দ দেখতেও ভালো লাগে । দেখো সবাই ফ্যামিলি নিয়ে নয়তো ফ্রেন্ডদের নিয়ে আসছে।
এখন ছুটির দিনে মানুষ ঘুরতে পছন্দ করে । পুরো সপ্তাহ জুড়ে কাজ কাজ কাজ দুই দিনের ছুটিতে তখন সবাই একটু আনন্দে থাকতে চায় ।
আমার তো একদিন ই ছুটি তাও কোন কোন সপ্তাহে ওটা নাও হতে পারে !
তুমি কিছু খাবে এখানে অনেক খাবারের দোকান আছে!
রুবা বলল, তুমি খাবে?
না আমি এখানে কিছু খাব না !
আমার ও খেতে ইচ্ছে করছে না ।
ওরা আরো কিছুক্ষণ বসলো! তারপর মাহি বলল, চলো ফিরি !
চলো!
তারপর ওরা যমুনা তে ঢুকলো । মাহি রুবার হাত ধরে বলল, আমরা আগে তোমার জন্য শপিং করব!
আমার জন্য ! আমার তো কিছু লাগবে না !
লাগার দরকার নেই! যা চোখে ভালো লাগবে তাই কিনবে আজ, মাহি বলল!
কেন?
আমার ইচ্ছা ! এত মাস হয়ে গেল আমি তোমার জন্য কোন খরচ করি নাই , রুবা !
আমার লাগলে আমি বলতাম !
রুবা হাজব্যান্ড রা খরচ করতে বাধা দেয় , তোমাকে সেধে দিচ্ছে তোমার হাজব্যান্ড লুটে নাও বলে হাসছে ।
কথা বলতে বলতেই ওরা একটা শাড়ির দোকানে র সামনে চলে আসছে!
মাহি রুবাকে নিয়ে ঢুকলো সেই দোকানে ! বেশ কিছু শাড়ি দেখার পর রুবা দুটো শাড়ি পছন্দ করলো । আর মাহি ওর জন্য একটা গোলাপী রঙের বেনারসী পছন্দ করলো ।
শাড়ি কেনার পর রুবা বলল, থেঙ্কস এখন চলো তোমার শপিং করি !
সালোয়ার কামিজ কিনো দুইটা , রুবা?
না আর না থাক।
আচ্ছা একটা কথা বলো তো , তুমি কি সব সময় এমন নাকি আমি কিনে দিতে চাচ্ছি তাই তুমি নিতে চাইছো না ?
যখন আমার দরকার হয় তখন কিনি এখন তো আছে অনেক কোথায় পড়ি এসব ?
ঠিক আছে চলো আড়ং এ সেখান থেকে সেলোয়ার কামিজ কিনি , মাহি বলল!
রুবা বলল,আচ্ছা আগে তোমার টা শেষ হোক ।
মাহি ওর জন্য কিছু গেঞ্জি কিনলো।
হসপিটালে যাওয়ার জন্য প্যান্ট ।
রুবা সেলোয়ার কামিজ কিনতে বাধ্য হলো মাহির জিদের কাছে !
কেনাকাটা করে ডিনার করে বাসায় ফিরলো , রাত এগারোটায়।
রুমে ঢুকে ব্যাগ গুছিয়ে যখন রাখছে মাহি, রুবা ওর সামনে দুটো ব্যাগ ধরলো !
মাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি এটা?
খুলে দেখো ?
মাহি খুলে দেখে দুটো শার্ট আর একটা পোলো গেন্জি!
কখন কিনলে এটা ?
তুমি যখন তোমার জিনিস গুলো ট্রায়াল দিচ্ছিলে , তখন!
রুবা কি দরকার ছিল ?
কোন দরকার ছিল না , কিন্তু আমার ইচ্ছা করলো। আর একটা ব্যাপার আছে !
রুবা মাথা নিচু করে বলল, যদি আমার মা বাবা বেঁচে থাকতো মেয়ের জামাই এর জন্য কত গিফট কিনতো তাই না ! রুবার চোখ ছলছল করছে !
মাহি রুবার হাত ধরে নিয়ে বিছানায় বসালো , মন খারাপ করে না রুবা । খুব সুন্দর হয়েছে শার্ট গুলো । আমি কালকে ই একটা পড়বো ।
রুবা হাসলো।
হসপিটালে ঢুকে আজ মাহির মনে হলো আগে নিজের চোখের ডাক্তার দেখাই । প্রতিদিন ভুলে যাই ! আজকে একটু ফ্রি আছি ।
পরিচিত বড় ভাই চোখের ডাক্তার ! গল্প গুজব করে চা খাইয়ে সব পরীক্ষা করে চশমা পড়তে হবে বলল মাহিকে।
সে একটু আবাক ই হলো তার চোখের এই অবস্থা ছিল!
কি আর করা চশমা নিতেই হবে !
মাহির হঠাৎ মনে হল ভাইয়া চশমা পড়তো । ভাইয়াকে বলতো সে, তার কখনো চশমা লাগবে না । আজ ভাইয়া থাকলে বলতো , লাগলো তো চশমা মাহি !
মাহি ডক্টরস রুমে এসে দেখে নিঝুম আর একটা জুনিয়র বসে গল্প করছে ।
নিঝুম এখানে থাকবে সে ভাবেনি !
মাহি চেয়ারে গিয়ে বসলো! নিঝুম ই প্রশ্ন করলো নিজে থেকে , কি অবস্থা তোর?
হু ভালো!
জুনিয়র টা উঠে চলে গেল !
মাহি বলল, খালুর শরীর কেমন এখন?
আব্বু আছে ভালো কেন জানি প্রেসার টা কন্ট্রোল এ নাই আজকাল!
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা !
বাবার কে চেকআপ করাতে হবে । অনেক দিন হলো রিং পড়ানো হয়েছে তারপর আর দেখানো হয়নি, সিঙ্গাপুর নিয়ে যাব ভাবছি । সঙ্গে মায়ের ও একটা চেকআপ দরকার বয়স হয়ে গেছে।
হুঁ সবাই মিলে যা সিঙ্গাপুর থেকে একটা ট্রিটমেন্ট ট্রুর আর তোর আর রুবার হানিমুন সেরে আসলি , নিঝুম বলল।
মাহি চোখ তুলে তাকালো , এই শুরু হয়ে গেছে !
কি মাহি ঠিক বললাম কিনা ?
মাহি বলল, খারাপ বলিসনি অবশ্য!
একটা হানিমুন খুব দরকার বুঝলি নিঝুম! এরকম বিয়েতে তো আরো বেশি দরকার!
এবার নিঝুম অবাক হয়ে মাহি কে দেখছে!
সিঙ্গাপুরে হানিমুনে যাব না , হানিমুনে যাব গ্রীস ! সান্তোরিনি তে আমি আর রুবা ব্রেকফাস্ট করছি ভেবেই এক্সাইটেড ফীল করছি রে !
নিঝুম বলল, ভালো তো কবে যাচ্ছিস গ্রীস ?
যাব খুব তাড়াতাড়ি যাব ! কথা গুলো শুনতে কি খুব ইচ্ছা করছিল নিঝুম?
নিঝুম বলল, আমার কেমন লাগছে ভেবে তো তুই মুখ বন্ধ রাখিস নি মাহি!
কেন রাখব ?
আমাকে ভালোবাসিস বলেই বন্ধ রাখবি !
মাহি উত্তর দিতে যাবে তখনই নার্স ঢুকলো রুমে ! মাহি কে বলল,
স্যার রাউন্ডে যাবেন বলেছিলেন এখন ?
হ্যাঁ চলেন যাই বলে মাহি বের হয়ে গেল ।
নিঝুম হাসলো আমাকে চেতানোর চেষ্টা তাই না মাহি!
মাহি রাউন্ড শেষ করে আসতে আসতে অনেক বেলা হয়ে গেল । প্রায় লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে।
রুবাকে ফোন দেয়ার জন্য মোবাইল বের করে দেখে নিঝুম মেসেজ দিসে , ” পাখি তুমি কার আকাশে উড়ো, তার আকাশ কি আমার চেয়ে বড় ??”
গ্রীস তুই আমার সঙ্গে ই যাবি !
মাহির মাথায় রাগ উঠে গেল। নিঝুম কে ফোন দিলো ।
অনেক দিন পর মাহির ফোন দেখে নিঝুমের খুব ভালো লাগছে ! রিং টোন শুনতেও ভালো লাগছে ! আর স্ক্রীনে তাদের দুজনের ছবি ভাসছে!
একবার নো আনসার হওয়ার পর মাহি রুম থেকে রওনা হলো চাইল্ড ওয়ার্ড এর দিকে ! আরেক বার রিং দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিঝুম ধরলো , হু বল ।
কোথায় তুই?
কেন ?
পার্কিং এ আয় কাজ আছে , বলে মাহি ফোন কেটে দিল!
মাহি তার গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে ! নিঝুম আসছে দেখে, চোখে সানগ্লাস টা পড়ে সে গাড়ির দরজা খুলল!
উঠ নিঝুম !
কোথায় ?
লান্চ করে আসি !
নিঝুম একটু আবাক হলো , হঠাৎ সূর্য কোন দিকে উঠলো আজ মাহি!
সেটাও দেখে আসবি চল, মাহি বলল!
নিঝুম উঠলো গাড়িতে! মাহি গাড়ি স্টার্ট দিল । ঘুরিয়ে রাস্তায় এসে নিঝুম কে বলল তোর হাতে সময় আছে তো ?
তোর জন্য আমার জীবন নিয়ে বসে আছি , তুই সময় এর কথা বলছিস ! চূলায় যাক চাকরি এক নিঃশ্বাসে নিঝুম বলছে!
মাহি বলল, এটাই হলো তোর সমস্যা সব কিছু চূলায় দিয়ে দিচ্ছিস!
মানে ?
এই যে বললি না চূলায় যাক সেটা বললাম, মাহি বলল!
ও এটা তো কথার কথা ! আচ্ছা কি প্ল্যান তোর মাহি ? কোথায় যাচ্ছি আমরা !
এই তো সামনে ! মাহি নিজেও বুঝতে পারছে না কোথায় যাচ্ছে! মিরপুর রোড দিয়ে যাচ্ছে ওরা।
সাইন্স ল্যাব এর কাছে এসে মাহি বামে ধানমন্ডি তে ঢুকলো এই এলাকায় একটা রেস্টুরেন্টে একদিন রিয়াদ ভাই এর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিল । সেটাতে গিয়ে থামলো। নিরিবিলি একটা বসার জায়গা।
দোতলা একটা বাড়ি পুরোটা নিয়ে ই রেস্টুরেন্ট ।
নিঝুম বলল, বাহির থেকে মনেই হয় না এটা রেস্টুরেন্ট !
হু বস , কি খাবি ?
তুই যা ইচ্ছা অর্ডার দে !
মাহি বলল, এখানে দুপুরে বাঙালি আইটেম পাওয়া যায় বলব ?
বল ! আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি বলে উঠে গেল নিঝুম!
মাহি খাবার অর্ডার দিল !
নিঝুম অনেকখানি সময় নিয়ে আসলো । এর মধ্যে সাজগোজ ও করছে !
খাবার ও চলে আসছে ।
মাহি খুব সামান্য খেলো ।
কি ব্যাপার তোর খাওয়া শেষ , নিঝুম বলল!
হু শেষ ! হাত ধুয়ে আসছি তুই শেষ কর! বলে মাহি উঠে গেল !
নিঝুম হাত ধুয়ে এসে বলল, আচ্ছা হঠাৎ এত এত দিন পর তুই আমাকে লান্চ করাতে আনলি মাহি কোন ব্যাপার তো অবশ্যই আছে?
মাহি বলল , ব্যাপার তো আছেই , কিন্তু বলে কি লাভ নিঝুম!
মানে?
মানে আমি বলব আর তুই তো আমার কথা পাত্তা ও দিবি না!
আমি তোকে পাত্তা দিচ্চি না মাহি! এক নজর তোকে দেখার জন্য বেহায়ার মত তোদের বাসায় ছুটে যাই , তোর আর তোর বউ এর মাখামাখি দেখি তার পরেও বলবি আমি পাত্তা দিচ্চি না !
কেন যাচ্ছিস নিঝুম ? একবার নিজেকে প্রশ্ন করতো? এই যে আমাকে মেসেজ দিচ্ছিস, আমাকে বিভিন্ন ভাবে অপ্রস্তুত করতে চাইছিস কেন করছিস বল ? কি পাবি এসব করে?
যা আমার তাই পাব !
কি সেটা ?
তুই মাহি তুই ।
ও তুই যা করছিস তার উদ্দেশ্য হলো তুই আমাকে পাবি ! কিভাবে ? আমি রুবাকে ডিভোর্স দিয়ে তোকে বিয়ে করব ?
জানি না !
না জানতে হবে ! জানতে হবে নিঝুম! যা করছিস তার রেজাল্ট কি হতে পারে সেটা জানতে হবে না ?
আমি যা রুবাকে ডিভোর্স দিলাম তারপর কি হবে ? তোর ফ্যামিলি আমার কাছে তোকে বিয়ে দিবে ! একটা ডিভোর্সি ছেলের কাছে !
আমি রাজি করাব সবাই কে মাহি!
নিঝুম কোন দুনিয়ায় বসবাস করিস ! তুই আমাদের প্রেমের বিষয় টা জানাতে পারলি না কাউকে, একটা বান্দাহ কে না আর তুই রাজি করাবি তোর ফ্যামিলি কে !
আর আমার বাবা মা মেনে নিবে রুবাকে ছেড়ে তোকে বিয়ে করাটা ?
আমরা চল দেশের বাহিরে চলে যাই মাহি সেখানে তো কারো ধার ধারতে হবে না !
সেই ঘুরে ফিরে এক কথা তাই না নিঝুম! এত দিনে তুই এই চিনলি আমাকে ! আমি আমার বয়স্ক বাবা মা কে ফেলে চলে যাব বাহিরে!
গিয়ে তোকে বিয়ে করে সংসার করব ! এত টা স্বার্থপর আমাকে মনে হয় তোর?
নিজের সুখের কথা পাগলেও চিন্তা করে মাহি।
আমি পাগল না নিঝুম ! আমি সুস্থ সবল একজন মানুষ যে তার বাবা মায়ের জন্য তার ভাইয়ের বিধবা বউ কে বিয়ে করেছে। এখন সেই মেয়েটি কে নিয়ে সুখে থাকতে চাইছে ।
তাহলে আমার কাছে কি চাইতে আসছিস মাহি?
তোর কাছ থেকে মুক্তি চাইতে আসছি ।
ঠিক আছে যা মুক্তি দিলাম!
মাহি চুপ করে গেল। নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে নিঝুমের পাশে বসলো । নিঝুম আমার দিকে তাকা । প্লিজ ।
আমার আর তোর ইচ্ছায় এখন আর কিছু নেই রে, বোঝার চেষ্টা কর।
তুই আমার একটা অনুরোধ রাখ প্লিজ । পাগলামী গুলো বন্ধ কর ! এতে কারো ভালো হবে না ! দুটো ফ্যামিলি ধংস হয়ে যাবে ।
আমি তোর কাছে অপরাধ করেছি তাই বলে পুরো ফ্যামিলি কে পানিসমেন্ট দিতে হবে ?
তুই চিন্তা করে দেখ তো খালামনি, খালুর কি রিয়েকশন হবে জানলে? রিয়া আপু র তো নতুন নতুন বিয়ে হচ্ছে তার শ্বশুরবাড়ি র লোকজন , মামা রা আছে, আমার আত্মীয় স্বজন আছে সবাই কি ভাববে মাহি নিঝুম পরকীয়া করছে !
এটা কে এভাবে বলছিস কেন ! আমাদের রিলেশন আগে থেকেই ছিল ।
কে জানে ব্যাপার টা নিঝুম? কেউ জানে না ! তাহলে কিভাবে প্রমাণ করবি ?
প্রমাণ করতে চাই না মাহি !
সব তো তোর আমার ইচ্ছে তে হবে না।
তুই মুভ কর জীবনে আমাকে নিয়ে যত ভাববি তত কষ্ট পাবি। আমি সত্যি করে বলছি, আমি রুবাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি!
এটা তুই আমাকে বুঝ দেয়ার জন্য বলছিস মাহি!
না নিঝুম সত্যি করেই বলছি!
একটা কথা কি জানিস আমি নিজেও ভাবিনি এতটা তাড়াতাড়ি আমি রুবাকে নিয়ে চিন্তা করব ! প্রথমে যেটা ছিল ওর প্রতি দ্বায়িত্ব এখন সেটা দ্বায়িত্বে র চেয়ে বেশি কিছু !
তুই ভালোবেসে ফেলেছিস মাহি রুবাকে?
নিঝুম মিথ্যা বলব না , আমি রুবাকে নিয়ে ভালো থাকতে শুরু করেছি। এটাই যদি ভালো বাসা হয় তাহলে হয়তো ভালোবাসি !
আর রুবা তোকে ভালোবাসে , শিহাব ভাইকে ভুলে গেল ?
মৃত মানুষ কে ভুলে যাওয়া যায় রে ! প্রকৃতি ভুলিয়ে দেয় । তা না হলে সন্তান মারা গেলে কোন মা বাঁচতে পারতো না , বাবা মা মারা গেলে কোন সন্তান বাঁচতে পারতো না !
আর আমি রুবাকে ভুলিয়ে দিয়েছি ভাইয়ার অস্তিত্ব । আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে ভাইয়া কে ! ভাইয়া ছিল শান্ত, ধীর স্থির ওর ভালোবাসা র প্রকাশ ওর দ্বায়িত্ব বোধ সব ওর মত । আমি ওর বিপরীত মানুষ , রুবা আমার ভালোবাসার পাগলামো দেখেই ভুলে গেছে ভাইয়া কে!
ঐ মুহুর্তে রুবার জন্য দরকার ছিল যেমন, আমি তেমন ছিলাম।
তার মানে তুই রুবার সঙ্গে ভালোবাসা র অভিনয় করছিস ।
তখন কি ছিল জানি না কিন্তু আজ রুবাকে আমি ভালোবাসি রে !
রুবাকে নিয়েই ভালো থাকতে চাই ! আর একটা জিনিস চাই ,তোকে ভালো দেখতে চাই নিঝুম।
আমি তোর জীবনটা খারাপ করেছি আমি চাই তুই দয়া করে জীবন টা নিয়ে হেলাফেলা করবি না !
প্লিজ নিঝুম প্লিজ।
এভাবে জীবন চলে না রে।
নিঝুম কাঁদছে। মাহি র চোখেও পানি।
নিঝুম তুই আজ আমাকে কথা দে তুই এমন কিছু করবি না যাতে আমার আর তোর জীবন যাদের ঘিরে তারা কষ্ট পাবে ?
প্লিজ কথা দে ।
নিঝুম প্লিজ।
নিঝুম মাহির হাত ধরলো ।
জীবন টা একবার ই আসে রে এভাবে এক জায়গায় পড়ে থাকার নাম জীবন না রে !
চল নিঝুম উঠি অনেক সময় হয়েছে!
মাহি উঠে দাঁড়ালো !
নিঝুম চোখ মুছলো ।
মাহি দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে !
নিঝুম নামছে আগে সিঁড়ি দিয়ে মাহি পেছনে । হঠাৎ নিঝুম ওকে জড়িয়ে ধরলো , কিভাবে থাকব তোকে ভুলে মাহি!
মাহি নিঝুমের মাথায় হাত রাখলো , চেষ্টা কর দেখবি পারছিস । চল নামি !
ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো । আমি বাসায় যাব , মাহি বলল!
নিঝুম বলল, আমাকে নামিয়ে দিয়ে যা বাসায়।
চল।
দুজনেই চুপ করে আছে !
নিঝুম বলল, রুবা কেমন আছে ?
ভালো আছে!
রুবাকে দেখলেই বোঝা যায় এখন কতটা ভালো আছে!
মাহি চুপ করে আছে!
আচ্ছা ও যদি কখনো জানতে পারে তোর আর আমার কথা তখন , নিঝুম বলল?
আমি জানি না সেদিন কি হবে, আমি কি বলব !
রুবা অনেক সেনসেটিভ একটা মেয়ে ।
নিঝুম বলল, ওর লাইফ ওকে তাই বানিয়েছে।
আমি খুব সাবধানে হেন্ডল করি ! আমাকে একটু ভয় ও পায় !
তোকে ভয় পাওয়ার কি আছে ? হাসলো নিঝুম।
আমি যখন অসুস্থ ছিল তখন ধমক দিয়ে খাওয়াতাম হাত ভাঙল তখন বকা দিসি হয়তো সেই জন্য।
মাহি তুই ভালো আছিস তো ?
আছি ভালো ! এখন ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করে নিঝুম।
তাহলে ই ভালো।
যাওয়ার সময় মাহি নিঝুম কে বলল, থেঙ্কস নিঝুম আমার কথা শোনার জন্য আমাকে বোঝার জন্য ।
নিঝুম হাসলো । ভালো থাকিস।
মাহি বাসার দিকে রওনা হলো।
আজ অনেক দিন পর খুব নির্ভার লাগছে। ওর বিশ্বাস নিঝুম আর কোন পাগলামী করবে না !
মাহির মোবাইল এ মেসেজ আসছে ।
গাড়ি যখন গুলশান দুই নাম্বার সিগন্যাল এ দাঁড়ালো , ইনবক্স চেক করে দেখে যা ভাবছে তাই রুবার মেসেজ,
” ইচ্ছে রা আজ পেয়ে গেছে ডানা
ওলোটপালোট সুরের বাহানা,
ইচ্ছে রা আজ নৌকার পাল
ইচ্ছে দুপুর ,ইচ্ছে সকাল !
নদী নিয়ে যায় তাকে বহুদূর
ইচ্ছে ইচ্ছে কোন মধুপুর ” !
মাহির মনটা ভালো হয়ে গেল ! রুবা আমি আসছি !
( চলবে )