যখন দুজনে একা পর্ব-৩৪

0
3246

#যখন_দুজনে_একা

৩৪ পর্ব

রুবার হাসি দেখে মাহি বলল, তোমার হাসি আসছে !
এদের কি করা উচিত বলো?
রুবা হাসতে হাসতে বলল, ওরা কিভাবে জানবে….কথাটা রুবা শেষ করতে পারল না আবার হাসতে থাকলো।
মাহি দরজা খুলে ল্যাপটপ নিলো ! বুয়াকে বলল, থেঙ্কস বুয়া , আর কিছু বলবা? তোমার ভাবিকে কিছু ?
না ,বলে বুয়া চলে গেল।
মাহি দরজা লাগালো!
রুবা তখনো হাসছে! আর বলল, তুমি ল্যাপটপ ডাইনিং এ রেখে এসেছিলে কেন , ওদের আর দোষ কি?
বিকেলে তোমার চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম তখন ল্যাপটপ ওখানে ই রেখে এসেছি!
মাহি রুবার হাত ধরে টেনে বলল, এদিকে এসো আয়নার সামনে দেখো কেমন লাগছে তোমাকে !
দুজন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
রুবা বলল, সুন্দর নোজপিন টা ! থেঙ্কস!
ওয়েল কাম !
পড়ানোর সময় অনেক ব্যাথা পেয়েছি।
ব্যথার ওষুধ এনেছি খেয়ে নাও, মাহি বলল।
তুমি এমন পাগল কেন রুবা বলোতো , এই কাজ কেন করলে বুয়াকে দিয়ে ?
রুবা বলল, সরি বলেছি তো !
হুঁ সরি !

বিছানায় শুয়ে রুবা বলল, মা বলছিলেন রিয়া আপু র বিয়েতে নিঝুম আপুরা গায়ে হলুদ এ দারুন মাস্তি র প্ল্যান করছে! শ্রুতি, মিতি তারপর অন্য ভাবি রা!
মাহি বলল,তাই বুঝি তোমার কি প্ল্যান রুবা?
তুমি জানো না নিঝুম আপু বলে নাই , আজ না লান্চ করলা একসঙ্গে ?
মাহি রুবার হাত ধরলো বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়নি!
তুমি বললে না তোমার কি প্ল্যান রুবা?
আমার আবার কিসের প্ল্যান?
কেন কিভাবে সাজবে, কি পরবে এসব !
ও শাড়ি পড়ব আর প্রোগ্রাম বুঝে সাজ , এই তো !
তুমি কি করবে, রুবা বলল?
আমার আবার কি প্ল্যান, ঐদিন বললে না ছেলেদের অপশন কম তাই ঐ ঘুরে ফিরে স্যুট বা পাঞ্জাবি এসব ই তো !
ঘুমাবে না অনেক রাত হলো তো, কালকে হসপিটাল আছে তোমার ?
গল্প করতে ভালো লাগছে তোমার সঙ্গে, কালকে আমার ইভিনিং দুপুরে যাব!
অনেক রাত হবে আসতে নাকি রাতেও আসবে না , রুবা প্রশ্ন করলো?
রাতে নাও আসতে পারি কেন তোমার ভয় লাগবে ?
না কেন আমি তো মায়ের সঙ্গে থাকতে চলে যাই বাবা দাদী র ঘরে থাকে । মা ই নিতে চলে আসে!
আমি জানি !
তোমার ভাইয়া যাওয়ার পর আমি তো মায়ের সঙ্গে ই থাকতাম! দুজনেই সারা রাত জেগে থাকতাম। মা উঠে চেয়ারে বসে থাকতো, কখনো হাটতো, নামাজ পড়তো রাত জেগে জেগে, আমার শরীরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে যেত , আমি শুধু তাকিয়ে দেখতাম বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতাম ! কখনো কখনো খুব দম বন্ধ লাগতো বারান্দায় এসে দাঁড়ালে কিংবা রুমের কাছে আসলে দেখতাম তুমি ও পোর্চের উপর বসে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছ, তুমিও জেগে আছো দেখতাম, রুবার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !
মাহি ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিল! এই প্রথম সে রুবাকে টেনে ওর বুকের কাছে নিয়ে এলো। ওর কপালে চুমু দিল । রুবাও এই প্রথম মাহির বুকে শক্ত করে জড়িয়ে গেল । দুজনের কারো শরীরের মধ্যে কামনা নেই একজনের মাঝে আরেক জনের আশ্রয় খুঁজে নেয়া শুধু। রুবা মাহির বুকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মাহি শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর চোখে ও পানি । দুজন একা মানুষ নিজেদের দুঃখ গুলো সারাক্ষণ ভুলে থাকলেও কোন একটা সময় দুঃখের এই বরফ গলে যায় তখন আর আটকে রাখা যায় না তার প্রবাহ ।
কান্নার দমকে রুবা কাঁপছে মাহি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, ঘুমাও রুবা প্লিজ আর না।

একটা সময় রুবা মাহির বুকেই ঘুমিয়ে গেল । মাহির গেঞ্জি ভিজে গেছে ওর চোখের পানিতে।
সাবধানে রুবাকে বালিসে শুয়ে দিল! তারপর বিছানা ছেড়ে উঠলো, বারান্দায় গিয়ে দরজা টা চাপিয়ে সিগারেট ধরালো মাহি। একবার উঁকি দিয়ে দেখলো রুবা কে। ঘুমাচ্ছে। মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
ওর মনে পড়ছে কত রাত গেছে রুবা তখন মায়ের ঘর থেকে চলে আসতো শিহাবের ঘরে । কা‌দতো , অন্ধকারে বসে থাকত। কখনো মা কখনো মাহি ওকে বের করে নিয়ে আসত।
এর পর একদিন মা শিহাবের ঘর লক করে দিল। বাচ্চা টা মিসকারেজ হয়ে যাওয়ার পর এক রাতে যখন আবার সেই রুমে ঢুকে তখন নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল রুবা, সাইকোলজিস্ট ইফতেখার ভাই এর সঙ্গে কথা বললে তিনি ই মাহিকে বলেছিলেন, এখন পুরো দ্বায়িত্ব তোমার, এই মানসিক অবস্থা থেকে বের করার ওকে। এভাবে অনেক সময় মানুষ সুইসাইডাল হয়ে যায়।
কেউ জানে না মাহি জানে শুধু সেদিন থেকে সে রুবাকে মনে প্রাণে চাইছে ভালো রাখতে।
তার সেই চেষ্টা ই তাকে রুবার কাছে নিয়ে এসেছে । সেও রুবাকে ভালো রাখতে রাখতে রুবার সঙ্গে ভালো থাকা শুরু করেছে। রুবাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
ওর পাগলামী গুলো, ওর ছেলেমানুষী গুলো ওকে রুবার প্রতি দূর্বল করে দেয় । রুবাকে বকা দেয় ঠিকই, মাহি জানে রুবার এই পাগলামী গুলো কতটা বাঁচিয়ে রাখে ওকে । মা ও রুবার এই পাগলামী গুলো খুব এনজয় করে। আজ তবে এই নাক ফোঁড়ানো টা দেখে ওর মেজাজ খারাপ হয়েছে খুব কিন্তু রুবার মুখটা দেখলে ওর উপর কঠোর হ‌ওয়া যায় না। তাও আজ কত ধমক দিয়েছে। কেঁদেছে সেই জন্য রুবা! পাগলী কোথাকার!
নেক্সট আবার কোন কান্ড ঘটায় কে জানে ? মাহি হাসলো একা একা ।
সিগারেট ফেলে ঘরে ঢুকলো মাহি , ওয়াস রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসলো ! রুবার কান্না য় ভেজা গেঞ্জি টা খুলে ফেলল । থাক এই গেঞ্জি গায়ে রুবার ঘ্রাণ মেখে আছে এটাতে আবার পরে নিল গেঞ্জি টা।
তাকিয়ে দেখে রুবা এসির ঠান্ডায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে ওর গায়ের কাঁথা সরে গেছে, মাহি এসির টেম্পারেচার চেন্জ করলো । রুবার মাথায় হাত বুলিয়ে ওর কপালে চুমু দিল , কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে রুবা!
ওর ঘুম পাচ্ছে না কেন জানি ! রুবার গায়ে কাঁথা টা ঠিক করে জড়িয়ে দিল, নিজেও সেই কাঁথা র নিচে বেডে হেলান দিয়ে পা পর্যন্ত কাথায় ঢেকে নিল।
একটা ব‌ই খুলে পড়ার চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ। কিন্তু কত ভাবনা যে ভর করে এই একলা ঘুমহীন রাতে।
মাহি নিঝুমের কথা ভাবছে, নিয়াজ প্রোপোজ করলে কি বলবে নিঝুম?
সম্ভাবনা খুবই কম। নিঝুম মুখে যাই বলুক সে মাহিকে এত সহজে মন থেকে বের করতে পারবে না!
ও পুরুষ মানুষ বলেই কি নিঝুমের থেকে এত দ্রুত রুবার দিকে ঝুঁকে গেছে ? হয়তো ব্যাপার টা এমন নাও হতে পারে , একজন সঙ্গী থাকলে ইচ্ছা করলেই অতীত ভোলা যায়, রুবা ছিল বলেই ও পেরেছে হয়তো! নিঝুম জীবনে কাউকে পেলে অন্তত বন্ধু র মত কাউকে পেলে ওকে ভুলতে পারবে মাহির বিশ্বাস।
এখন দেখা যাক নিয়াজ কি সত্যিই তার এত দিনের আবেগ নিয়ে নিঝুমের কষ্ট দূর করতে পারে কিনা?
মাহি চশমা খুলে রাখলো । বালিশে মাথা রেখে ভাবছে বাবা মা কে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রোগ্রাম টা ফাইনাল করতে হবে । মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। রিয়া আপু র বিয়ে শেষ হলেই যাওয়া দরকার।
চারজনের ভিসার কাজটা শুরু করতে হবে। রুবাকে একা রেখে যাওয়া যাবে না মাথা খারাপ ও যে পাগল সবচেয়ে বড় কথা রুবাকে রেখে সেই থাকতে পারবে না । মা বাবা ও চাইবে না ।‌ এই বাড়িতে একা রুবা অসম্ভব !
পাশ ফিরে রুবার মুখ টা দেখলো! মনে মনে বলল, পাগল!
লাইট অফ করে দিয়েও অনেকক্ষণ জেগে র‌ইল মাহি। প্রায় ভোর রাতের দিকে ওর ঘুম এলো।

সকালে অনেক বেলা করে মাহির ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখে রুবা নেই! সাড়ে দশটা বাজে।
রুবা কখন উঠে গেছে ও টের পায়নি। কোথায় রুবা?
কালকে এত দেরীতে ঘুমিয়েছে এখনো চোখ লেগে যাচ্ছে।
মাহি মোবাইল হাতে নিল।
রিয়াদ ভাই মেসেজ দিয়েছে, “কথা আছে দুপুরে দেখা করিস”!
মাহি রিপ্লাই দিল ।
তারপর রুবাকে ইনবক্স করলো,
” হতে পারি রোদ্দুর
হতে পারি বৃষ্টি
হতে পারি রাস্তা
তোমারি জন্যে
হতে পারি বদনাম
হতে পারি ডাকনাম
হতে পারি সত্যি
তোমারি জন্যে ! ”
মাহি চিন্তা করছে এরকম টিন‌এজার দের মত প্রেম তো ও নিঝুমের সাথেও করতে পারে নি। ও কি হাস্যকর কাজ কর্ম করছে? রুবার সঙ্গে রুবার মত ছেলেমানুষী ভর করে ওর উপর। কিন্তু কেন যেন খুব ভালো লাগছে ওর ব্যাপারটা!

মেসেজ সীন করেনি রুবা ! কি করছে ভদ্রমহিলা , আমার কোন খেয়াল ই নাই তার!
মাহি উঠে ফ্রেশ হতে গেল।
ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং এর দিকে র‌ওনা হলো। মোবাইল এ রুবার মেসেজ এলো,
“কথা দিল রোদ্দুর
কথা দিল বৃষ্টি
কথা দিল রাস্তা
তোমার‌ই জন্যে
খেলাধুলো সংসার
আসা যাওয়া বারবার
রাজি হল ইচ্ছে
তোমারই জন্যে !”

মাহি মেসেজ পড়ে মনে মনে বলল, মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু ঘুম থেকে উঠেছি বুঝেও এদিকে আসছে না ! কোথায় সে ?
মাহি লিভিং রুমে র দিকে আসতে আসতে শুনছে বাসায় অনেক লোকজন । ওর কাজিন দের গলা হাসাহাসি র শব্দ।
রুমে ঢুকতেই দেখে ছোট মামি তারানা, তাঁর দুই মেয়ে, বড় মামার দুই জমজ মেয়ে তানহা- মানহা এরা দুটো ঢাকার বাহিরে একটা প্রাইভেট মেডিকেল এ পড়ে। কাজিন রা সব হা হা হি হি করছে।
ওকে দেখে ই বড় মামার মেয়ে তানহা বলল, ভাইয়া তুমি তো দেখি বিয়ের পর সুন্দর হয়ে গেছো !
কি বলছিস , আগে ছিলাম না সুন্দর মাহি বলল?
মানহা বলল, রুবা ভাবির সৌন্দর্যের ম্যাজিক এটা ! বলেই ওদের হা হা হি হি শুরু।
তো চশমা চোখে উঠেছে কবে ভাইয়া, তানহা বলল?
ঐ তোর ভাবির রূপ দেখে চোখ ঝলসে গেছে রে !
সব আবার হেসে ভেঙে পড়ছে।
তোরা দুই বোন ঢাকায় আসলি কবে?
প্রোফ শেষ হল চলে এসেছি একেবারে রিয়া আপুর বিয়ে খেয়ে তারপর যাব!
সাফিয়া বেগম আর তারানা মামির সঙ্গে রুবা রুমে ঢুকলো।
সাফিয়া বেগম বললেন,রুবা মাহির নাস্তা দিতে বলো ।
রুবা ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো শুধু।

সবাই কিসব কাপড় মেলে বসে আছে । এগুলো কিসের এত কাপড়, মাহি বলল?
শ্রুতি বলল, ভাইয়া রিয়া আপু র গায়ে হলুদ এ আমরা সবাই এক রকম ড্রেস পড়ব সেই কাপড়।
রুবা ভাবিও পড়বে ।
মাহি রুবার দিকে তাকালো! নাস্তা খাচ্ছে আর দেখছে মাহি !
আচ্ছা ছেলেদের ইউনিফর্ম কি হবে গায়ে হলুদে এটা তো তোদের , আমাদের কি ব্যবস্থা, মাহি হেসে বলল?
ওটা নিঝুম আপু এখনও সিলেক্ট করেনি, তানহা বলল!
মাহি বলল, তাহলেই হয়েছে হলুদের দিন ও হাতে পাই কিনা সন্দেহ আছে ও যে কনফিউজড এসব ব্যাপারে।
না ভাইয়া টেনশন নিও না হয়ে যাবে , মিতি বলল!
এদের হৈচৈ দেখে মাহির ভালো লাগছে!
মামি বলল, আমরা মুরুব্বি রা ও কিন্তু একরকম পড়ছি !
তাই নাকি মামি, পুরাই স্কুল স্কুল ভাব হবে মাহি বলল!
মিতি বলল, এখন এই হয় ভাইয়া!
তানহা বলে উঠলো, মাহি ভাইয়া যেহেতু বাসায় আছে তাহলে আমাদের এখন পিঙ্ক সিটিতে ভাইয়া নিয়ে যাবে!
সব গুলো এক সঙ্গে বলে উঠলো ইয়েস ইয়েস ইয়েস।
মাহি বলল, কে বলেছে আমি যাচ্ছি আমার কাজ নাই, আমি হসপিটালে যাব !
ভাইয়া প্লীজ । আজ একটা ড্রাইভার ও নাই তানহা বলল!
আমি তোদের ড্রাইভার নাকি, উবারে যা !
এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে যেতে হবে ভাইয়া অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হবে প্লিজ চলো না !
মিতি বলল, রুবা ভাবি ড্রাইভ করতে পারে তো আচ্ছা ভাইয়া তুমি যাও ভাবি নিয়ে যাবে।
কি কি রুবা যাবে তোদের সাথে তাও আবার ড্রাইভ করে অসম্ভব, মাহি বলল!
কেন ভাইয়া প্লীজ অনুরোধে সুরে শ্রুতি বলল!
চুপ কর মাথা খারাপ তোদের, তোদের সাথে রুবাকে ছাড়ব না !
কেন আমরা হারায় রেখে আসব তোমার ব‌উ কে , ভাইয়া বলেই মানহা হেসে উঠলো!
মাহি বলল, তোদের কোন ভরসা নাই চলাফেরার কোন দিক থেকে কোন দিকে হাঁটতে হাঁটতে ম্যানহোলের ভেতরে পড়বি, আর রুবা ড্রাইভ করবে না এখন, এই বেলায় যে জ্যাম বাহিরে।
মা ই দিবে না রুবাকে দেখিস!
ভাইয়া ভাবিকে টেইলার্স এ ড্রেসে র মাপ দিতে যেতে হবে!
ফুফু এই দেখেন ভাইয়া ভাবিকে যেতে দিতে চাচ্ছে না আমাদের সঙ্গে!
কেন মাহি সবাই শপিং করবে রুবাও যাক, মা বলল!
মা রুবা ড্রাইভ করে যাবে এদের সাথে ?
তা কেন হবে , সাফিয়া বেগম বললেন!
আশরাফ তোমার বাবার সাথে গেছে ! তুমি ও তো হসপিটালে যাচ্ছো এদের নামিয়ে দিয়ে যাও ।
মা তারপর , এরা আসবে কিভাবে এরা আবার এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ছুটে বেড়াবে !
তুমি কি এদের নিয়ে চিন্তিত, নাকি রুবা কে নিয়ে বলেই মামি হাসলো।
মামি সব গুলো কে নিয়ে , রুবার কাজ কর্মের ঠিক নাই মার কাছ থেকে ঘটনা শুনেন! আর মা নিজেই কখনো রুবাকে একা ছাড়তো না ! ও তো ছোটবেলা থেকেই ফার্মের মুরগির মত বড় হয়েছে ।
হ্যাঁ শুনেছি তুমি বেশি চিন্তা করছো মাহি, ও অনেক লক্ষী একটা মেয়ে মামি বলল!
রুবা ঘরে ঢুকলো চা নিয়ে সবার জন্য!
রুবা তুমি কি যাচ্ছো সবার সঙ্গে মাহি রুবাকে বলল?
তুমি যেতে দিলে যাব !
মাহি মনে মনে বলল, ভালো বিপদে পড়লাম। না যেতে দিলে রুবা আবার মন খারাপ না করে বসে! কিন্তু এরা সব যে অস্থির রুবাকে এদের সঙ্গে দেয়া টা কি ঠিক হবে?

ডিসিশন হলো, তারানা মামি সঙ্গে যাবে এদের! কুদরত ভাই ড্রাইভ করবে এক গাড়ি আর এক গাড়ি তে মাহি নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে চলে যাবে!
বাবা বাসায় আসলে ড্রাইভার আশরাফ আরেক গাড়ি নিয়ে যাবে তার আগে অন্য কোন মার্কেটে যেতে হলে উবার নিবে কিন্তু রিক্সায় উঠা যাবে না।
মানহা বলল, ঠিক আছে ভাইয়া ভাবিকে আমরা রিক্সায় তুলব না এখন খুশী তো তুমি !
খুশি থেঙ্কস , মাহি বলল!
মাহি রুবাকে নিয়ে কেন জানি ওভারপ্রোটেকটিভ হয়ে গেছে ! হয়তো রুবার ভাগ্যের জন্য ই!
রুবার কাছে এসে মাহি বলল, এবার খুশি তো!
রুবা হাসলো!
একটু পর শ্রুতি এনাউন্স করলো , নিঝুম আপু মেসেজ দিয়েছে হসপিটাল থেকে সরাসরি ও আমাদের সঙ্গে জয়েন করবে পিঙ্ক সিটিতে!
হৈ চৈ পার্টি আবার খুশিতে হৈ হৈ করে উঠলো!
মিতি বলল, ভাইয়া তুমি চল আমাদের সঙ্গে ভাবিকে বডি গার্ড দিলে !
যা ভাগ এখান থেকে ফাজলামো করছিস তাই না ! আমি মেয়েদের সাথে শপিং এ যাই না !
সবার সঙ্গে রুবাও হাসছে!

মাহি রুমে গেল হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হবে ! রুবাও আসছে পিছুপিছু!
তুমি কিন্তু মামির সঙ্গে থেকো রুবা !
ঠিক আছে বাবা তুমি এসব করছো ওরা হাসছে।
হাসুক, তুমি কখনও একা গেছো শপিং এ , তাহলে?
এরা এক দোকানে একটা ঢুকবে , আরেক দোকানে আরেক টা ঢুকবে তারপর একটা আরেকটাকে অর্ধেক সময় খুঁজে বেড়াবে! শপিং যত না করবে তারচেয়ে বেশি হা হা হি হি করেই সময় যাবে !

ভালো তো মজা করে ওরা, রুবা বলল!
মাহি ওর কাছে এসে বলল, তোমার খুব ইচ্ছে করে ওদের মত ঘুরতে ?
রুবা বলল, না , আমার কি সেই বয়স আছে?
ও আচ্ছা তুমি তো বুড়ি হয়ে গোছো , কথাটা বলেই মাহি রুবার নাক টিপে হাসলো!
রুবা ও হাসলো!

মাহি হসপিটালে র জন্য রেডি হলো রুবাও রেডি হয়ে আলমারি তে কি খুঁজছে!
মাহি জিজ্ঞেস করল ,কি খুজো?
মা আর তুমি নতুন যে শাড়ি গুলো দিলে সব গুলোর ব্লাউজ বানাতে দিব সেগুলো খুঁজে নিচ্ছি!
ও!
এদিকে আসো রুবা ! আসো না!
আসছি ! আসছি !
সামনে এসে রুবা বলল, কি বলো?
মাহি ওর হাত ধরলো, খুব সাবধানে থাকবে ওদের হারিয়ে ফেললে পাজেল হবে না আমাকে ফোন দিবে!
হু ঠিক আছে, কিন্তু তোমাকে ফোন দিলে এত দূর থেকে তুমি কি করবে! রুবা হাসছে?
রুবা দুষ্টুমি না , মামি কে , কুদরত ভাই কে কিংবা নিঝুম কে ফোন দিবে ঠিক আছে!
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে!
এরকম তো আমার মা ও স্কুল , কলেজে বা ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় করতো না !
তুমি বুঝবে না রুবা !
ঠিক আছে ঠিক আছে নিঝুম আপু বা মামির হাত ধরে থাকব ! একটা ললিপপ হাতে নিয়ে নেই কি বলো, রুবা হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছে।
মাহি কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
রুবা মাহির গাল স্পর্শ করে বলল, চিন্তা করো না আমি ঠিক থাকব ইনশাআল্লাহ।
মাহি মনে মনে বলল, ইনশাআল্লাহ।
আমি দেশের বাহিরে একা হোটেল থেকে গিয়ে শপিং করে হোটেলে ফেরত এসেছি একটা সময়, রুবা বলল!
মাহি মনে মনে বলল, সেই তুমি আর এখনের তুমি এক না রুবা। এখন তুমি মাহির ব‌উ যে তোমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করে, কারণ টা তুমি এবং তোমার হেয়ালী !

ওরা দুই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল ! মাহি রুবা আর তারানা মামি এক গাড়িতে ! বাকি রা আরেক গাড়িতে।
মামি নিঝুমের সঙ্গে গাড়ি থাকবে তো?
তারানা বলল, হ্যাঁ তাই তো বলল! মাহি তুমি চিন্তা করো না!
পিঙ্ক সিটিতে এসে সবাই নামার পর মাহি রুবাকে ডেকে বলল, সাবধানে থেকো আর ফোন হাতে রাখবে আমি ফোন দিব! না ধরলে আমার টেনশন হবে !
ঠিক আছে এখন যাই!
আচ্ছা তোমার কাছে টাকা আছে ? বলে মাহি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে রুবাকে দিল !
রুবা বলল, তোমার কার্ড আছে আমার কাছে !
তারপরও ক্যাশ রাখো আর যা ইচ্ছা হয় কিনো!
মিতি এসে বলল, ভাবি চলো তো !
মাহি রুবা ঢুকে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইল !

গাড়িতে উঠে ওর মন খচখচ করছে ! এদের সঙ্গে রুবা ঠিক থাকবে তো? এখন পুরো সময়টা টেনশনে যাবে!
গুলশান এক নাম্বার এর সিগন্যাল এ বসে সে যখন এসব ভাবছে ,রুবা মেসেজ পাঠালো,
” হতে পারি গল্প
তুমি কাছে টানলে
হতে পারি জানলা
এ হাওয়া ও তোমার কারণে
শুধু তুমি চাও যদি সাজাব আবার নদী
এসেছি হাজার বারনে !
শুধু তোমার জন্য ” ।
মাহি রুবাকে মেসেজ লিখলো,
আই লাভ ইউ রুবা !
লিখে আবার ডিলিট করে দিল তারপর লিখে পাঠালো,
“মিস ইউ, স্টে সেইফ ”

মুখে বলল, আই লাভ ইউ রুবা !
মিউজিক অন করলো, আরিজিৎ সিং গাইছে , মাহির প্রিয় গান…..

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here