যখন দুজনে একা পর্ব-৬৩

0
2850

#যখন_দুজনে_একা

৬৩ পর্ব

রুবা তার শ্বাশুড়ি কে বলতে পারেনি মাহি সোফায় ঘুমাতে আসুক।
কোন কোন রাতে চুপি চুপি সে মাহির রুমে যায় কিন্তু দুই চার মিনিটের মধ্যে দৌড়ে চলে আসে।
মাহি তাকিয়ে থাকে রুবার দিকে!
আজ ছুটির দিন সকালে মাহি ঘোষণা দিয়েছে সে আজ সারাদিন বাচ্চাদের সঙ্গে থাকবে!
মেইনলি মা কে শুনিয়ে বলল সে !
: থাকো মাহি কিন্তু ওরা ঘুমালে ডিস্টার্ব করবে না !
: মা আমার ছেলেরা ঘুমিয়ে আছে দেখতেও আমার ভালো লাগে।
: আজ এমনিতেই আমি ব্যস্ত থাকব তুমি থাকো রুবার কাছে বাচ্চাদের নিয়ে!
: কি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তুমি ?
: আজ সব আত্মীয় স্বজনদের তোমার ছেলেদের দেখার জন্য দাওয়াত দিয়েছি । এতদিন ওদের সাবধানে রাখতে হয়েছে লোকজন কাউকে আসতে না করেছি । এখন তো দেড় মাস হয়েছে এখন তো ওরা সেইফ আছে!
তুমি থাকো এখানে আমি ওদিকে সামলাই । কিছু লাগলে ডেকো আমাকে!
মাহি একটু বিরক্ত হলো ।
কোথায় ছুটির দিন ছেলেদের সঙ্গে সময় কাটাবে মা বাসা ভরে ফেলবে লোকজন দিয়ে। এই এক জিনিস কোন একটা ছুতোয় মা লোকজন ডেকে ঘরে ভরে ফেলে।
মাহি রুবার দিকে তাকালো ! রুবা ছোট ছেলে ঘুমিয়ে গেছে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছে!
মাহি উঠে গিয়ে দরজা লক করলো!
: রুবা একটু এদিকে এসো তো !
: কি চাই ?
: তোমাকে এদিকে এসো!
: রুবা মাহির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো!
মাহি ওকে টেনে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো!
: কে এটা ?
: মানে বুঝলাম না !
: কত দিন আয়নায় নিজেকে দেখোনা বলো তো ?
: সময় কোথায় আয়নার সামনে বসে থাকার!
: নিজেকে খেয়াল করেছো তুমি রুবা ?
: মোটা হয়ে গেছি অনেক সেটা বলছো তো ?
: না তুমি ঠিক আছো! আমি সেটা বলছি না।
তুমি এখন শুধু ওদের পাগল মা হয়ে গেছো !
: আমি তো তাই মাহি !
: তার আগে তুমি আমার রুবা সেই মানুষটা কোথায় ?
ঠিক ভাবে গোসল দাও না, চুল চিরুনি করো না কি সব আলখাল্লা টাইপ ড্রেস পড়ে থাকো !
: ওদের সামলে সব হয়ে উঠে না ।
মাহি রুবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ! পাঁচ মিনিট তুমি এভাবে থাকবে আমার বুকের ভেতরে তারপর যাবে সময় নিয়ে গোসল করবে । আমি আছি ছেলেদের কাছে!
: মাত্র পাঁচ মিনিট জড়িয়ে রাখবে !
: তুমি চাইলে আমি পাঁচ ঘন্টাও রাখব রুবা।
: আর তোমার ছেলেরা থাকতে দিবে আমাকে ? রুবা হাসছে!
মাহি রুবাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে আছে। রুবা‌ও অনেক অনেক দিন পর মাহির বুকের কাছে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। দুজনেই চুপচাপ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে আছে একে অপরকে।
কিছুক্ষণ পর মাহি বলল, যাও গোসল করে এসো আমি আছি ওদের কাছে।
: তুমি একা রাখতে পারবে না ওদের!
: খুব পারব যাও রুবা !
মাহি একরকম জোর করেই রুবাকে ওয়াসরুমে পাঠালো।

মাহি ছেলেদের দিকে তাকিয়ে আছে! ওদের হাতে চুমু খাচ্ছে! কি সুন্দর ছোট ছোট হাত, ছোট ছোট আঙ্গুল! আবার কি সুন্দর হাই তোলে।
বড় জন কে মাহির রুবার মত লাগে । ঘুমের মধ্যে সে খুব হাসে! ছোট টা দেখতে মাহির মত সবাই বলছে ! তার নাকি রাগ বেশি বাবার মত!
ছোটজন উঠে গেছে! মুখে হাত ঢুকিয়ে চুষছে !
: কি বাবা তোমার খিদে পেয়েছে মুখে হাত কেন?
আবার হাসে ! আমার কথা তুমি বোঝো? মাহি ছেলের বুকে নাক ঘষে দিল। কি সুন্দর মিষ্টি একটা গন্ধ!
মাহির এত মায়া লাগে ওদের দেখে।
সন্তানের মুখ দেখলে সব বাবা মায়ের এত মায়া লাগে বুঝি ?
মাহি ছেলেকে কোলে নিয়ে দোল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল!
রুবা গোসল করে এসে দেখে মাহি ছোটটাকে বুকের উপর নিয়ে শুয়ে আছে!
: উঠে গেছে?
: গিয়েছিল ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি! ছেলেদের গায়ে কি অদ্ভুত সুন্দর একটা গন্ধ , তোমার গায়েও এরকম একটা ঘ্রাণ পেতাম রুবা।
: বাচ্চাদের গায়ে থাকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ। আমার গায়ে সে রকম কিছু নেই!
: পেতাম আমি রুবা!
: এখন পাও না ?
: এখন তুমি আমার কাছে আসো কোথায়?
ওদের বুকে রাখলে রুবা এত সুখ লাগে , মনে হয় ওরা আমার বুকের সবটা জুড়ে রয়েছে। তোমাকে খুব হিংসে হয় সারাক্ষণ ওদের সঙ্গে থাকতে পারো। আমার তো সারাক্ষণ মনে হয় কখন ওদের কাছে ফিরে আসব ।
ছেলেকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মাহি আলমারি খুলে রুবার একটা সেলোয়ার কামিজ বের করলো।
এটা পড়ে এসো, এসব আলখাল্লাহ আর পড়বে না তুমি!
: এটা মেটারনিটি ড্রেস। সমস্যা কিসের?
কোন সমস্যা নেই অনেক পড়েছো এখন থেকে নরমাল যা পড়তে তাই পড়বে! আর আজ সন্ধ্যায় শাড়ি পড়বে!
: কোন খুশিতে রুবা অবাক হয়ে বলল!
: আমি তোমাকে পড়তে বলেছি সেটা কি যথেষ্ট নয় রুবা ?
: আচ্ছা পড়ব কিন্তু কারণ টা ও বলো!
: ফটোগ্রাফার আসতে বলেছি ছেলেদের নিয়ে সবাই মিলে ফ্যামিলি ছবি তুলব !
রুবা সেলোয়ার কামিজ পড়ে এলো, সুন্দর করে চুল চিরুনি করলো।
: তাকিয়ে দেখো এখন কেমন লাগছে তোমাকে?
: আমি আমার আগের রুবাকে চাই আমার পাগল ব‌উ যে আমার জন্য নাক ফোঁড়ানোর মত পাগলামী করতো। সেই দুষ্টু মিষ্টি মেয়েটাকে চাই যে বিয়ের পর পর দূর থেকে আমাকে দেখতো কিন্তু চোখে চোখ পড়লেই চোখ নামিয়ে ফেলতো!
: না মোটেই সেরকম করতাম না!
: আপনি কি করতেন জানেন রুবা ম্যাডাম, আপনি নিজের আশেপাশে একটা দেয়াল তুলে আমাকে পাগল বানাতেন। আপনার গায়ে থেকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ পেতাম বললাম না , তোমার পাশে গেলেই ঐ ঘ্রাণ টা পেতাম আমি পাগল হয়ে যেতাম তুমি পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে।
গোসল করে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে তুমি যখন বের হতে একটা সিগ্ধ ভাব তোমার মধ্যে থাকতো আমার ইচ্ছে করতো তোমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ।
প্রথম যেদিন নিজে নিজে শাড়ি পড়লে তুমি, আমি রুমে ঢুকে তোমাকে দেখে পুরাই লস্ট হয়ে গেলাম মনে হচ্ছিল আমার সামনে একটা পরী দাঁড়িয়ে আছে । আমি জোর করে তোমার শাড়ি চেন্জ করিয়েছিলাম কারণ আমি চাইনি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি তোমার কাছে আসি! আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। হাসতে হাসতে বলল মাহি।
: রুবা ও হাসছে!
মাহি রুবাকে ধরে বলল, আমার সেই প্রেমিকা টি কে লাগবে। যে আমার জন্য অপেক্ষা করতো, আমার জন্য সাজতো , আমার আশেপাশে থাকতো সব সময়।
কত দিন হয় রুবা তুমি আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে খেতে দাও না !
আগে কত কি করতে, তোমার কাচ্চি রান্না করার কথা মনে আছে?
: ওফফ ঐ ফালতু কাচ্চির কথা আর মনে করিয়ে দিও না প্লিজ!
: আমার তো খুব ভালো লেগেছিল, আর সেই রাত টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিল! যে রাতে আমি তোমাকে আমার করে পেয়েছিলাম।
মাহি রুবাকে কাছে টেনে নিলো যেই বড় ছেলে কেঁদে উঠে গেল!
: রুবা ছেলেকে এসে কোলে তুলে নিল!
: আচ্ছা ব্যাপার টা বুঝলাম না , খুব একটা চান্স যদিও পাই না এখন, তুমি আমার কাছে আসলে তোমার ছেলে রা কেঁদে উঠে কেন, ওদের গায়ে কি সেন্সর লাগানো আছে নাকি! বুঝে কিভাবে ওদের মায়ের কাছে আমি ?
আগে ডিস্টার্ব করতো তোমার বুয়ারা এখন ছেলেরা! ভালোই।
রুবা হাসছে!
: এই যে বাবারা তোমাদের মা আগে আমার তারপর তোমাদের সম্পদ!
সবার আগে আমার অধিকার তারপর অন্য সবার!
রুবা বলল, ইসস এখন সম্পত্তি ভাগ করতে বসছে ছেলেদের সঙ্গে !
: করব‌ই তো আমার সম্পদ পুরোটা দখল করে আছে ওরা!
দুজন হাসছে!

সাফিয়া বেগম আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত। শিহাব চলে যাওয়ার পর এত টা উৎসাহ নিয়ে কোন আয়োজন করেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। আজ উনার নাতিদের সবাই দেখতে আসবে। কি যে ভালো লাগছে উনার।
মাহির ছেলেরা নতুন করে জীবনের বেঁচে থাকার তাগিদ দিচ্ছে দাদা দাদি কে।
এত মায়া লাগে দুটোকে দেখলে! নিজের সন্তান সব সময় ই প্রিয় আর সন্তানদের সন্তান বোনাস। ওদের মাঝে অন্য রকম সুখ।
আজ ওদের কাছে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি মন টা কেমন করছে উনার!

সন্ধ্যা থেকে ই আত্মীয় স্বজন আসছে । কি যে ভালো লাগছে। তিনি মাহির বাবার দিকে তাকালেন কি আনন্দ নিয়ে সবার সঙ্গে বসে গল্প করছে।
কেউ জানে না উনাদের দুজনের কাছে মাহির ছেলেরা শিহাবের ফিরে আসা।
মাহির বাবা প্রথম প্রথম জড়িয়ে ধরে দুজনকে নিরবে শুধু কাদতো!
সব সময় বলবে,
: সাফিয়া দেখো ওদের গায়ে শিহাবের গায়ের ঘ্রাণ টা পাবে! আমাদের শিহাব সত্যি ফিরে এসেছে সাফিয়া।
প্রতিদিন দুপুরে সাফিয়া বেগম বাচ্চাদের নিয়ে অনেকটা সময় ওদের দাদার সাথে কাটায়। নিজের ছেলেদের সঙ্গে কখনো এতটা নিবিড় ভাবে সময় কাটায় নি মাহির বাবা। নাতিদের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে রাখবে। কত কথা বলবে।
: সাফিয়া বেঁচে থাকার ইচ্ছে টাই শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মাহির ছেলেদের দেখে এখন অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে, জীবন আমাকে সেই সুযোগ দিবে তো?
সাফিয়া বেগম স্বামীর কাঁধে হাত রাখেন, তুমি ওদের বড় হতে দেখবে ইনশাআল্লাহ!
: ওদের আমি শিহাবের মত ব্যারিস্টার বানাব সাফিয়া! আসগর সাহেব চোখ মুছতে মুছতে বলেন।
: ঠিক আছে বানিয়ো।
: তুমি ওদের খুব যত্ন করে বড় করবে সাফিয়া । প্রয়োজনে আরো লোক রাখো তোমাকে আর রুবাকে সাহায্য করতে । আমার নাতিদের যেন কোন অযত্ন না হয়। মাহিকে যেন কোন টাকা খরচ করতে না হয় খেয়াল রেখো ওরা আমার দ্বায়িত্ব। তুমি মাহির কাছে তোমার কার্ড দিয়ে দাও ।
আমি আমার নাতি দের জন্য এত সুখ রেখে যেতে চাই সাফিয়া, ওরা হেসে খেলে জীবন পাড় করে দিতে যেন পারে।
: ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে শিহাবের বাবা।
: তুমি রুবার মাঝে শিহাব কে দেখো তাই হয়তো রুবার উছিলাতেই শিহাব আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে !
আজগর সাহেবের কথা গুলো মনে হতেই সাফিয়া বেগম এর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
রিয়া এসে ঘাড়ে হাত রাখতেই তিনি হকচকিয়ে গেলেন!
: কি হয়েছে খালাম্মা আপনার শরীর খারাপ ?
: না আমি দারুন আছি।
: তাহলে চোখে পানি কেন?
: ও কিছু না রে অনেক দিন পর বাসায় বাচ্চা এসেছে এখন যাই দেখি আনন্দে চোখে পানি চলে আসে।
: তো আপনার নাতিরা কোথায়?
: রুবার ঘরে আসবে বস তোরা!
: বড়পা রুবার শরীর কেমন ? নাহার বেগম বললেন।
: বলো না নাহার বাচ্চাদের জীবনের উপর দিয়ে জন্ম দিয়েছে খুব খারাপ অবস্থা ছিল রুবার । এখন ঠিক হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু নতুন মা তো সব কিছুতেই ভয় পায়! আর জানোই তো রুবা কেমন সেনসেটিভ সারাক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে অস্থির হয়ে যায়।
মাহির বড় মামি বলল, আমি জানি জমজ বাচ্চা কি কষ্ট, আমার দুই মেয়ের সময় কি কষ্ট করলাম। পেটে থাকতে কষ্ট ,হ‌ওয়ার পর পালতে কষ্ট। কয়টা বছর বিভিষিকার মত যায়!
: খালু খুব ফীল করে বাচ্চাদের তাই না খালাম্মা?
: তোর খালুর জান বাচ্চারা, কোর্ট থেকে দুপুর পরেই চলে আসবে বাচ্চাদের জন্য। বুকে জড়িয়ে বসে থাকবে, শুয়ে থাকবে। চুমু খাবে হাতে! বাচ্চা রা হাত পা ছুড়বে তিনিও আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়!
: নিয়ে আসেন খালাম্মা ওদের ঐ যে ওটির সামনে দেখেছিলাম আর তো দেখলাম না !
: আনছি, কিন্তু নিঝুম কোথায় ?
: আসছে একটু পর!
সাফিয়া বেগম বাচ্চাদের আনতে যাচ্ছেন !
: খালাম্মা সঙ্গে আসব ?
: আয় রিয়া !
সাফিয়া বেগম খুব সাবধানে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন শব্দে যেন ঘুম না ভাঙ্গে নাতিদের!
রুমে ঢুকে দেখেন মাহি বড় ছেলেকে বুকের উপর নিয়ে বেডে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে। আর ছোটটাকে জড়িয়ে ধরে পাশে রুবা ঘুমাচ্ছে।
সাফিয়া বেগম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। অনেক বছর এত সুন্দর দৃশ্য তিনি দেখেননি মনে হচ্ছে।
উনার চোখ ভিজে উঠলো!
: খালাম্মা ওরা সবাই ঘুমাচ্ছে তো।
: রিয়া তোর মোবাইল দিয়ে ওদের একটা ছবি তুলতো কি সুন্দর লাগছে সবাই কে মাসাআল্লাহ!
: রিয়া খালাম্মা র কথা মত ছবি তুলল।
: আমাকে দিবি ছবি টা।
: আপনার চোখে পানি কেন?
: বুঝবি না তুই এই চারজন এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ রে রিয়া, চল ওরা উঠুক পরে আসি আমরা।
দরজার শব্দে মাহির ঘুম ভেঙ্গে গেল।
: মা কিছু বলবে!
: উঠে গেছো মাহি, সবাই চলে এসেছে বাচ্চাদের জন্য অপেক্ষা করছে!
: আমরা আসছি মা !
: আচ্ছা এসো আমি গেলাম!
মাহি রুবাকে ডেকে রেডি হতে বলল!

রুবা মাহির কথা মত শাড়ি বের করলো । একটা লেমন ইয়োলো জমিনে ডীপ পিঙ্ক ফ্লোরাল প্রিন্টের হাফ সিল্ক শাড়ি পড়লো। সঙ্গে মাহির দেয়া পার্ল সেট গলায়, হাতে চুড়ি।
অনেক অনেক দিন পর সাজলো। চুল সুন্দর করে বাঁধলো।
মাহি পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
: এই তো আমার রুবা ! কি সুন্দর লাগছে তোমাকে!
: না সাজলে তোমার রুবা লাগে না বুঝি !
: লাগে কিন্তু পাগলের মত থাকলে লাগে না।
মাহির খুব ইচ্ছে করছে রুবাকে বলতে,
আজ রাতে একটু আমার রুমে আসবে রুবা ?
তারপর আর বলল না ,সে জানে মা কে রুমে রেখে রুবা জীবনেও আসবে না !
মাহি মিটমিট করে হাসছে!
: হাসছো কেন ?
: এমনি রুবা কিছু না চলো যাই !
আসেন বাবারা কত লোকজন এসেছে আপনাদের দেখতে !

মাহি আর রুবা লিভিং রুমে আসতেই সাফিয়া বেগম নাতি দের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন!
মাহি দেখে ডাইনিং টেবিলে র উপর বড় দুটো ডালা ঢেকে রাখা। কাপড় সরিয়ে দেখতে গেল , নিঝুম কোথা থেকে এসে বাঁধা দিল।
: অপেক্ষা কর খালাম্মা পরে দেখাবে!
: মা যে কত পাগলামী করতে পারে। বিশ্বাস করবি না হসপিটাল থেকে ছেলেদের নিয়ে এসে দেখি পুরো বাসা বিয়ে বাড়ির মত লাইটিং করা। অনেক অনুরোধ করে তিন দিন পর বন্ধ করেছি। প্রতিবেশী রা জিজ্ঞেস করা শুরু করেছিল কার বিয়ে!
মাহি হাসছে!
: তুই আর রুবা খালাম্মা কে এত বড় আনন্দের উপলক্ষ্য দিয়েছিস খালাম্মা তো প্রকাশ করবেই।
বাচ্চা রা তোর মত সুন্দর হয়েছে মাহি, নিঝুম বলল!
: রুবার মত হয়নি , আমার কাছে তো রুবার মত লাগে!
: আমার কাছে তোর মত লাগছে!
: কেমন আছিস নিঝুম?
: ফাস্ট ক্লাস!
: নিয়াজ কোথায়?
: আসবে একটু পর !
সাফিয়া বেগম মাহি আর রুবাকে ডাকলেন । দুটো ডালা তে গিফট আছে তাই দিবেন।
: মা জানি তো সব রুবার !
: সব কষ্ট মায়েরা করে তাই উপহার মা রাই পায় মাহি!
: আমার তো কোন ক্রেডিট ই নাই !
: নিঝুম মাহির কাছে ফিসফিস করে বলল তুই তো শুধু মাস্তি করেছিস আবার গিফট চাস বেসরম?
: রুবা তুমি বলো যখন থেকে পজেটিভ জেনেছি তারপর থেকে কত যত্ন করেছি তোমার!
: আপু এটা ঠিক ও আমার খুব যত্ন করেছে এরকম কেউ পারে না ! ওকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।
মাহি রুবার মাথায় হাত রাখলো , তোমার কষ্টের কাছে এটা কোন কিছুই ছিল না রুবা। আমি তো তাই বলি বাবা হ‌ওয়া অনেক সহজ।
রিয়া বলল, তুই রুবাকে কি দিলি মাহি ?
: রিয়া আপু একসঙ্গে দুই ছেলের মা বানিয়ে দিলাম আরো গিফট লাগবে রুবার ?
সবাই মাহির কথায় হাসছে!
: আপু তোমার ভাই এই পার্লের গলার সেট টা দিয়েছে আর গোল্ডের চুড়ি।
: আমি গরিব মানুষ আমার মায়ের মত এত কিছু দেয়ার সামর্থ্য নেই।
সাফিয়া বেগম রুবাকে দুই ডালাতে শাড়ি, গয়না, কোরআন শরীফ, বাচ্চাদের ড্রেস দিয়েছেন।
আমার শ্বাশুড়ি শিহাব, মাহি হ‌ওয়ার পর এভাবে দিয়েছিল আমিও তোমাকে দিলাম রুবা। তুমি এক সঙ্গে দুই বাচ্চার জন্ম দিয়েছো তাই তোমার জন্যে দুইটা গিফট ডালা। রুবার জন্য আজ স্প্যাশল খাবারের প্লেট ও আছে।
রিয়া বলল, মাহি তোর ছেলেদের বোন লাগবে না কয়েক বছর পর আবার একটা ট্রাই করে দেখিস।
: আপু আমার ছেলেদের গার্লফ্রেন্ড লাগবে এখন তুমি আর নিঝুম আগে সেটার ব্যবস্থা করো।
সবাই হাসছে ।
মাহিদের বাসাটা আজ হাসি আনন্দে ভরে উঠেছে।

সাফিয়া বেগম মাহিকে আলাদা করে ডেকে বললেন,
: মাহি তোমাকে একটু ওয়েস্টিনে যেতে হবে!
: এখন কেন? মাহি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালো!
: বলতে ভুলে গেছি তোমার তৌহিদ চাচার মেয়ে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় এসেছে। কি একটা এনজিও তে জব করে । রোহিঙ্গাদের ওখানে ভিজিটে যাবে। কিছুদিন ঢাকা কক্সবাজার মিলিয়ে থাকবে। কেমন দেখা যায় হোটেলে থাকবে মেয়েটা।
নিউইয়র্কে গেলে সব সময় ওদের বাসায় যাই আমরা !
: এখন কি করব সেটা বলো মা ?
: ওকে গিয়ে বাসায় নিয়ে আসো। তোমার চাচী ফোন না দিলে তো জানতাম ই না দিশা ঢাকায় এসেছে আজ। আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ।
: ড্রাইভার পাঠিয়ে দিলে হবে না মা ?
: তোমার বাবা বলল তোমাকে যেতে। আমরা গেলে সব সময় তোমার চাচা নয়তো উনার ছেলে গাড়ি নিয়ে হোটেলে আসে আমাদের নিতে। আর তুমি এখান থেকে এখানে যেতে পারবে না মাহি?
: ঠিক আছে যাচ্ছি , আমি কি চিনি উনাদের মা ?
: তোমার বাবার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। দিশাকে তোমার মনে আছে কিনা জানিনা ছোটবেলা যখন আসতো দেখেছো হয়তো। তোমার একটু বড় তবে শিহাবের ছোট। শিহাব আর রুবা নিউইয়র্ক এ ওদের বাসায় গেছে।
: আমার এত সম্পর্ক আর চেহারা মনে থাকে না মা ! আচ্ছা ভালো কথা কি নাম বললে দিশা। কিন্তু থাকবে কোথায়? গেস্ট রুম তো আমার দখলে?
: তোমার দাদির রুমে থাকবে !
: ঐ রুমের এসি কাজ করে না তাই তো আমি গেস্ট রুমে চলে আসছি মা।
: তাহলে এখন , নিচের গেস্ট রুমে দেয়াটা খারাপ দেখাবে। সাফিয়া বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন।
: মা আমি আমাদের রুমের সোফায় থাকি তাহলেই হয় ! মাহি মাকে কথাটা বলল।
: কষ্ট হবে না তোমার সোফায় থাকতে ?
: মোটেই না মা ছেলেদের সঙ্গে থাকব এতেই আমার শান্তি।
: আচ্ছা ঠিক আছে আমি গেস্ট রুম রেডি করতে বলি। তুমি দশটা বাজার আগেই চলে যেও, মোবাইল নাম্বার নিয়ে যেও।
: মাহি মনে মনে বলল, ডিয়ার সিস্টার দিশা হোয়াট এভার ইউ আর তুমি আরো আগে কেন এলে না ? থেঙ্কস ফর ইওর কামিং তোমার জন্য আমি আমার রুমে রুবা আর ছেলেদের সঙ্গে থাকতে পারব আজ।
মাহির আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছে।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here