#যখন_দুজনে_একা
৬৪ পর্ব
মাহি ওয়েস্টিনের লবিতে বসে আছে । আসার পথেই সে দিশার সঙ্গে কথা বলেছে! গত দশ মিনিট ধরে সে লবিতে বসে মোবাইলে টাইম পাস করছে! বাসায় সব গেস্ট রেখে সে এখন এক অজানা অদেখা মেয়ের জন্য হোটেলের লবিতে বসা !
তার খুব একটা খারাপ লাগছে না কারণ এই দিশার জন্যেই সে আজ নিজের রুমে থাকতে পারবে!
একদিক দিয়ে দিশার আসাটা ভালো ই হলো!
প্রায় পঁচিশ মিনিট পর একজন সেলোয়ার কামিজ পড়া চোখে চশমা পড়া মেয়ে মাহির সামনে এসে দাঁড়ালো !
: মাহির আজগর?
: জ্বি আপনি দিশা আপুবলে মাহি উঠে দাঁড়ালো ?
আমিই দিশা বলে মাহির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়া মাঝারি হাইটের ছোট চুলের মেয়েটিকে দেখে মাহি অবাক হলো ! সে ভেবেছিল লম্বা দেখতে আরেকটু বয়স্ক কেউ হবে !
হাত মিলিয়ে মাহি হাসি মুখে তাকালো দিশার দিকে!
: সরি একটু দেরি করে ফেলেছি । আসলে আমি রেডি ছিলাম না তুমি যখন ফোন দিয়ে বললে তোমার মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে আমি তারপর রেডি হতে গিয়েছি!
: এখন যেতে পারবেন তো ?
: হুম চলো !
: হোটেলের ফর্মালিটিজ ?
: শেষ করেছি !
: তাহলে আমি গাড়ি নিয়ে আসছি আপু আপনি আসেন ।
মাহি গাড়ি নিয়ে আসার জন্য এগিয়ে গেল !
গাড়িতে উঠেই দিশা মাহিকে জিজ্ঞাসা করলো
: কতক্ষন লাগবে এখান থেকে তোমাদের বাসা?
: পাঁচ থেকে সাত মিনিট !
ওরা গুলশান দুই এর সিগন্যাল এ বসে আছে !
: মাহির তুমি তো ব্যারিস্টার তাই না ?
: না আপু আমার বড় ভাই ব্যারিস্টার ! আমি ডাক্তার !
: ও আচ্ছা শিহাব ব্যারিস্টার ছিল ! ওর এক্সিডেন্ট এর খবর পেয়ে খুব খারাপ লেগেছে নিউইয়র্ক এ আমাদের বাসায় যখন ওয়াইফ নিয়ে গিয়েছে আমার সঙ্গে দেখা হয়নি যদিও।
আমি তখন আটলান্টায় ছিলাম কিন্তু আমার আম্মু বলেছিল খুব সুন্দর একটা বউ নিয়ে শিহাব এসেছে ।
: জ্বি আপু!
: ওয়েট তুমি আমাকে আপু, আপনি করছো কেন ! আমাকে কি তোমার খুব বয়স্ক মনে হচ্ছে ?
: আমাকে বলা হয়েছে আপনি আমার বয়সে বড় ! এদেশে বড় দের এই সন্মান টুকু করা হয় মাহি হেসে বলল !
: হতে পারে কিন্তু প্লিজ আমাকে নাম ধরে এবং তুমি বলে ডাকলে খুশি হব !
: জ্বি আচ্ছা ! আপনি ভালো বাংলা বলেন দেখছি!
: আমাদের বাসায় সব সময়ই বাংলা টাই বলে সবাই !
: ও
: একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, আমি যদিও ফ্যামিলি র খুব একটা খবর রাখতে পারি না কিন্তু আমি শুনেছি শিহাবের ওয়াইফ এর সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়েছে ! কথা টা কি সত্যি?
: জ্বি ঠিক শুনেছো !
: দিশা মাহির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো !
সিগন্যাল ছেড়েছে মাহি গাড়ি সামনের দিকে টান দিলো!
: তুমি কক্সবাজার যাবে তাই না ?
: হুম দিশার মাহিকে দেখে একটু অবাক লাগছে হ্যান্ডসাম গুড লুকিং, আনম্যারেড একটা ছেলে এই যুগে ভাইয়ের উইডো কে বিয়ে করতে রাজি হলো !
: তুমি মনে হয় একটু অবাক হয়েছো দিশা, অবাক হওয়ার কিছু নেই দিস ইজ লাইফ এন্ড লাক !
: আমি শুনে বিশ্বাস করিনি তোমার মুখে শুনে অবাক হয়েছি সত্যি। ইউ আর কোয়াইট ইন্টারেস্টিং মাহি ।
মাহি হাসলো ! প্রসঙ্গ এড়াতে মাহি অন্য প্রশ্ন করলো !
: তোমার এখানে কাজ টা কি ?
: আমার অর্গানাইজেশন ডাব্লিউ এইচ ও এর সঙ্গে একটা প্রজেক্ট এ আছে সেটার ভিজিটেই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে । কক্সবাজার এ গিয়ে থাকতে হবে কিছুদিন । রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো ভিজিট করব।
: আচ্ছা । আগে গিয়েছো কক্সবাজার ?
: অনেক ছোটবেলায় যা আমার মনে নেই !
মাহির গাড়ি বাসার বাহিরে পার্ক করতে হয়েছে বাসা ভর্তি গেস্ট দের গাড়ি !
:এসো বলে মাহি দিশার দরজা খুলে দাঁড়ালো !
: থেঙ্কস মাহির!
: আমার লাগেজ ?
: তুমি চলো লোকজন আছে নিয়ে আসবে !
মাহি ড্রাইভার আসরাফ কে চাবি দিয়ে বলল,
: লাগেজ উপরে পাঠাও !
: তোমাদের এখানে হেল্পিং হ্যান্ড ব্যাপার টা দারুন মজার , ওয়েট এত গাড়ি কেন তোমাদের ?
: সব গাড়ি আমাদের না বাসায় গেস্ট এসেছে তাদের গাড়ি বলে মাহি এগিয়ে গেল!
: আজ কি কোন সেলিব্রেশন ?
: হুম আমার ছেলেদের দেখতে এসেছে সব রিলেটিভ !
: তোমার ছেলেও হয়ে গেছে, ইন্টারেস্টিং ! দিশা অবাক হয়ে বললো।
: আমার দুটো টুইন ছেলে হয়েছে দেড় মাস আগে !
: সো সুইট ।
ওরা কথা বলতে বলতে দোতলায় উঠে এলো !
সাফিয়া বেগম দিশার দিকে এগিয়ে এলেন ! দিশা সাফিয়া বেগম এর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো !
: কেমন আছেন চাচী ?
: আমি ভালো আছি , তোমার আম্মু না ফোন দিলে তো জানতেই পারতাম না তুমি এসেছো বাংলাদেশে ?
: বিশ্বাস করেন চাচী আমি ফোন দিতাম আপনাকে !
: তুমি হোটেলে উঠতে গেলে কেন ?
: অফিসিয়াল ভিজিট চাচী তাই ভাবলাম হোটেল ই ভালো হবে তবে আমি আসতাম আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে !
: এসো ভেতরে এসো দিশা , আজ বাসায় একটা পার্টি চলছে আরো লোকজন আছে পরিচয় করিয়ে দেই!
: জ্বি মাহির বলল !
মাহি এসে ছেলেদের কোলে নিয়ে বসেছে ! ওর সব সময় দুজনকে একসাথে নিতে ভালো লাগে । কয়দিন পর আর পারা যাবে না এখনই দুজন খুব নড়াচড়া করে !
রুবা মাহির পাশে গিয়ে বসলো !
: কি অবস্থা তোমার অনেক্ষণ বসে আছো খারাপ লাগছে না তো রুবা ?
: না খুব এনজয় করছি সবার সঙ্গে গল্প করে !
: দারুন খবর আছে , আজ তোমাদের সঙ্গে থাকব আমি !
: মা কিছু বলবে না ?
: না তোমার মা ই আমাকে ডাকবে দেখো , এমনও হতে পারে শুধু আমি তুমি আর ছেলেরা থাকবো!
: সত্যিই ?
: হুম , গেস্ট যে মেয়েটা এসেছে ওর জন্য গেস্ট রুম ছেড়ে দিতে হলো আমাকে !
: তাহলে তো তোমার মনে লাড্ডু ফুটছে ডাক্তার সাহেব!
: হুম , তোমার জন্য কিন্তু না আমার ছেলেদের জন্য !
: তাহলে ঠিক আছে , আমাকে ধরতে আসলে দেখো ছেলেদের সহ আমিও চিৎকার দিব গলা ছেড়ে, রুবা ফিসফিস করে বলল!
: আচ্ছা দিও, মাহি হাসছে !
দিশা ওদের কাছে এগিয়ে এলো ! মাহি কোলে ছেলেদের দেখে আদর করলো!
: দিশা এই যে রুবা আমার ছেলেদের মা ! রুবা, দিশাকে আনতেই গিয়েছিলাম ! তুমি তো গিয়েছো দিশাদের বাসায় নিউইয়র্কে ।
: রুবা তোমার কথা আম্মু র কাছে শুনেছি , যতটা শুনেছি তুমি তারচেয়েও বেশি সুন্দর।
: আপনার সঙ্গে দেখা হয়নি তখন আপু!
: আমি তখন আটলান্টায় ছিলাম ! তোমার ছেলেরা মাসাআল্লাহ খুব ই কিউট হয়েছে বয়স কত দিন ?
: দেড় মাস হলো !
নিঝুম এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে ।
: আপু নিঝুম আপুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই আপনাকে, মাহির খালাতো বোন আপুও ডাক্তার! আপু দিশা আপু বাবার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে।
: ও আচ্ছা !
মাহি রুবাকে বলল , দিশাকে ডিনার করাও রুবা !
: আপু আসেন ডিনার করতে!
: আমি এখন কিছু খাব না !
: না বললে হবে নাকি আসেন তো বলে রুবা দিশাকে টেনে নিয়ে গেল ।
: তোর কাজিন হয় মেয়েটা ? কি করে?
: হুম! এনজিও তে জব করে !
: বিবাহিত ?
: এত কিছু জিজ্ঞাসা করিনি তো , হবে হয়তো আমার চেয়ে বয়সে বড় অলরেডি বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা!
কেন ঘটকালি করবি ?
: ভেরি ফানি এমনি জানতে চাইলাম !
: আগে ছেলেরা এসব জানতে চাইতো একটা মেয়ে বিবাহিত না অবিবাহিত ! এখন দেখি মেয়েদের একটা মেয়ে কে দেখলে টেনশন বেশি বিবাহিত না অবিবাহিত ?
: বলছে তোকে , বেশি বুঝিস !
: ভুল কি বললাম নিঝুম ?
: দেখ তোর কথা শুনে তোর ছেলেও হাসছে !
: আমার বড়টা ঘুমের মধ্যে এত হাসে , দেখবি একটু পর পর হাসছে !
: রাতে জেগে থাকে ?
: ছোটজন বারবার উঠে !
: তুই রাখতে পারিস , রাত জাগিস মাহি ?
: আমাকে তো মা রুম থেকে বের করে দিয়েছে আমি থাকি গেস্ট রুমে মা ওদের সঙ্গে থাকে !
: নিঝুম হাসছে তাই তাহলে তো ভালো ই আছিস আরামে ঘুমাচ্ছিস !
: মোটেও সেরকম কিছু না আমার ওদের তিন জনের সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু মা তো মা জানিস যা বলবে তাই !
: ও এখন তোর বিরহ চলছে বউ বাচ্চার পাশের রুমে আর তুই আরেক রুমে !
: হুম !
: দে একজন কে কোলে দে !
নিঝুম মাহির ছোট ছেলে কে কোলে নিলো!
মিতি কে ডেকে নিঝুম বলল ,
: আমাদের একটা ছবি তুলে দে তো ! ছবি তোলার পর নিঝুম টা দেখিয়ে মাহিকে বলল,
: মাহি দেখ ছবিটা সুন্দর হয়েছে !
: হুম!
: ছবিটা অন্যরকম ও হতে পারতো তাই না মাহি ?
: কি জানি হয়তো , আবার এটাই সত্য !
: এবং এই সত্য টা ই অনেক সুন্দর তোর জন্য আমার জন্যে ও !
: সেটাই নিঝুম!
: তুই ছেলেদের কোলে নিয়ে বসে আছিস আমি দূর থেকে দেখছি তোকে খুব সুন্দর লাগছিল ! একজন পরিপূর্ণ মানুষ !
: দোয়া করিস !
: আসার পর থেকে আমার এদের দুজনকে এত আদর আদর লাগছে আমি তাকিয়ে বারবার দেখি আর বুকে জড়িয়ে আদর করছি ! তোর ছেলে মাহি , হয়তো সেই জন্যই ওরা আমাকে এত মায়ায় জড়িয়ে ফেলছে।
: ছোট বাচ্চা মানেই মায়া নিঝুম !
: সবার বাচ্চা মায়ায় জড়ায় না রে !
রুবা এখন কেমন আছে ?
: আছে ছেলেদের নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত । নিজের দিকেও তাকানোর সময় নেই তার !
: নতুন মা দের এই অবস্থাই হয় ! তার মধ্যে দুই বাচ্চা একসঙ্গে পাগল হয়ে যাওয়ার ই কথা।
: ও পাগল ই হয়ে গেছে !
সব গেস্ট চলে গেছে মাহি বাচ্চাদের নিয়ে নিজের রুমে বসে আছে! রুবা কি করছে কে জানে কখন গেছে রুমে আসেনি এখনো !
সাফিয়া বেগম রুমে এসে ঢুকলো !
: দিশা কে রুমে দিয়ে আসলাম!
: রুবা কোথায় মা ?
: কিচেনে কিছু একটা করছে !
: এত রাতে ওর কিচেনে কি কাজ ?
: ছেলেদের ফিডার ধুয়ে আনছে হয়তো ! তোমার কষ্ট হবে না তো সোফায় থাকতে মাহি ?
: আমি ঠিক আছি মা ! মাহি মোবাইল চার্জ দিতে উঠে দেখে চার্জার গেস্ট রুমে ! এখন আনতে যেতে হবে ! রুম থেকে বের হয়ে,
গেস্ট রুমের দরজায় নক করলো মাহি ! ওর একটু আনইজি লাগছে !
দিশা দরজা খুলে দিল।
: সরি দিশা আমার মোবাইল এর চার্জার এই রুমে আছে !
: শিওর আসো ভেতরে ! তোমার আরো জিনিস মনে হয় এখানে ।
: ও আচ্ছা ল্যাপটপ !
: পারফিউম, ঘড়ি, অনেক কিছু, তুমি এখানে ছিলে মাহির ?
মাহি বেড সাইড ড্রয়ার খুলে সিগারেট এর প্যাকেট টা নিয়ে পকেটে ঢুকালো !
: বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের দাদি থাকে তো আমাকে গেস্ট রুমে এক্সপোর্ট করে দিয়েছে বলে হাসলো মাহি!
: ইন্টারেস্টিং চাচী টেক কেয়ার করে ওদের?
: টুইন তো রুবা একা পারে না !
: দেড় মাস থেকে তুমি গেস্ট রুমে থাকো ? দারুন তো !
: এই দেশে এই হয় নানি দাদি রা বাবাদের বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে দেয় ।
: তুমি তাহলে তো খুব কষ্টে আছো দিশা ঠোঁট চেপে হাসছে ।
: খুব , থ্যাঙ্কস টু ইউ দিশা তুমি এলে বলেই মা আমাকে রুমে এলাউ করেছে । এখন আসি অনেক রাত হয়েছে বাকি জিনিস কালকে নেয়া যাবে ! গুড নাইট !
মাহি বের হয়ে গেল !
: দিশার মজাই লাগছে সব কিছু !
দুই ছেলে ঘুমিয়ে গেছে মাহি ওদের আদর করে দিল। দুজনকে জড়িয়ে সে কিছুক্ষণ শুয়ে রইল !
: ওদের এভাবে ধরে থাকলে খুব শান্তি লাগে মা !
: হুম , আজ সারাদিন আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু মনটা ছটফট করছিল ওদের কাছে আসার জন্য!
: বাসার বাহিরে থাকলে আমার এমন লাগে !
: যাও মাহি শুয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে!
: হুম!
রুবা রুমে ঢুকলো । মাহিকে বলল,
: একটু আসবে ?
: কোথায় ?
: আমার সঙ্গে বলে বের হয়ে গেল!
: যাও মাহি কোন দরকারে ডাকছে হয়তো ! আমি শুয়ে পরলাম দরজায় শব্দ যেন না হয় ওদের ঘুম খুব পাতলা!
: মাহি রুম থেকে বের হয়ে গেল !
রুবা পোর্চের উপর দাঁড়িয়ে আছে ! মাহি রুবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো!
: ডাকলে কেন ?
: এমনি চলো এখানে বসি কিছুক্ষণ !
: কি ব্যাপার রুবা শরীর ঠিক আছে তোমার হঠাৎ আমার সঙ্গে এত রাতে এখানে বসতে চাইছো !
: ঢং করো না তো, কত দিন এখানে দুজন বসি না তাই ভাবলাম, দুজন বসে চা খাই!
: আজ চাঁদ কোন দিকে উঠলো, রুবা তার ছেলেদের রেখে আমার কথাও ভাবছে মাহি দুষ্টামি করে বলল!
: এসব বললে চলে যাব কিন্তু !
মাহি হাত ধরে টেনে আনলো
: দুষ্টামি করছি ! বসো!
: রুবা চায়ের মগ এগিয়ে দিল মাহির কাছে !
: তুমি খাবে না?
: তোমার টা থেকে খাব !
মাহি কাছ ঘেঁষে রুবাকে ধরলো !
: কত দিন পর তাই না রুবা? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম এভাবে কখনো রাতে বসে গল্প করতাম আমরা!
: আমি ভুলিনি , আমার ও খুব ইচ্ছে করে কিন্তু বাচ্চাদের সামলে পারছি কোথায় তোমার দিকে তাকাতে ?
: আমার দিকে তাকানোর দরকার নেই , আপাতত নিজের দিকে তাকাও !
: আজ কি বলছিলে ডাক্তার সাহেব, তুমি আমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে বিয়ের পর কিন্তু আমি তো খেয়াল করিনি কখনো তোমার চোখে কিছু ?
ঐ কপোলে দেখেছি লাল পদ্ম
যেন দল মেলে ফুটেছে সে সদ্য
আমি ভ্রমোরের গুঞ্জনে তোমারেই ডেকেছি
দূর হতে তোমারে দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি…..
:আপনার কি আর সেই খেয়াল ছিল রুবা ম্যাডাম?
: কতদিন পর তোমার গান শুনলাম !
: আমাদের জীবন টা এখন গতানুগতিক এক ট্রেকে ঢুকে গেছে রুবা , এখন তুমি ব্যস্ত আমাকে সময় দিতে পারছো না । আবার কখনো এমন সময় এসেছে আবার আসবে আমি সময় দিতে পারব না ! তখন বুঝতে হবে একে অপরকে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
: তুমি এত কিছু চিন্তা করো কিভাবে , এত সুন্দর করে?
: করতে হয় জীবনে ভালো থাকতে হলে চিন্তা করতে হয় রুবা ! কিন্তু আমি খুব বিরক্ত হচ্ছি মায়ের উপর মাহি বলল !
: কেন ?
: মা আমাকে খুব আন্ডারইস্টিমেট করছে ছেলেদের টেক কেয়ার করা নিয়ে !
: কোথায় ?
: আমার ছেলেদের আমি কি বুঝি না কোনটা ভালো হবে ? এই বলবে দরজা এভাবে বন্ধ করবে , এভাবে খুলবে । এভাবে কোলে নিবে না ,ঐ ভাবে খাওয়াবে না আশ্চর্য !
: তুমি মন খারাপ করছো কেন মা ওদের নিয়ে পজেসিভ একটু ! তুমি তো জানো না বাবা কি করে কোলে নিয়ে, একদিন স্টাডি রুমে নিয়ে গেল পুরো বাড়ি ঘুরালো বাচ্চাদের!
: এই কাজ আমি করলেই তোমার শ্বাশুড়ি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিত রুবা !
: ওরে বাবা বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে আছো তুমি ! একদম ছোটটা ফর্সা মুখ এমন লাল হয়ে যায় রাগে বাবার মত বলে রুবা মাহির গাল টেনে দিল, রুবা হাসছে !
: মাহি ও হেসে দিল !
দূর থেকে দিশা অবাক হয়ে দেখছে ওদের। ওর খুব অবাক লাগছে দুটো মানুষ একটা সময় একে অপরের সঙ্গে দেবর ভাবীর সম্পর্কে বাঁধা ছিল , একটা দূর্ঘটনা একজন মানুষের মৃত্যু তাদের জীবনের রূপ , নাম সব চেন্জ করে দিলো কিন্তু ওরা ঐ অবস্থা থেকে কত সুন্দর জীবন টা কে গুছিয়ে নিয়েছে কত সুন্দর ভালোবাসা, প্রেম!
এই রাতে ছাদে বসে গান গেয়ে শোনাচ্ছে মাহি, আবার রুবা পরম নির্ভরতায় তার ঘাড়ে মাথা রেখে বসে আছে। এক মগ থেকে চা শেয়ার করছে ।
কত সুন্দর ওদের সম্পর্কটা ! চাঁদের আলোয় দুজন ভালোবাসার মানুষ নিজেদের মধ্যে মগ্ন হয়ে আছে।
মাহির কে এই কয় ঘন্টা দেখেই ওর এত ইন্টারেস্টিং লাগছে ছেলেটাকে! অদ্ভুত এক মানুষ , কখনো মনে হচ্ছে শান্ত, কখনো চটপটে কখনো ইমোশনাল । নিজের সন্তানদের নিয়ে কতটা আবেগপ্রবণ । ছেলেদের সঙ্গে থাকতে পারছে না সেজন্য সামান্য কথাতেই বোঝা গেল সে কতটা ফীল করছে তাদের।
সব চেয়ে অদ্ভুত লাগছে , যে মেয়েটা কে কয়েক বছর ভাবি হিসেবে গ্রহণ করেছে বিয়ে করে কি সুন্দর সেই মেয়েটাকে এক অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধনে সে জড়িয়ে রেখেছে।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে মানুষটাকে।
এই জীবনে কম তো দেখা হলো না মেকি আবেগের মুখোশ পড়া মানুষদের। এর মাঝে এরকম মানুষ ও তাহলে আছে কোথাও না কোথাও !
দিশা ওদের দিকে তাকিয়ে থাকার লোভ সামলাতে পারছে না !
অনেক অনেক বছর সত্যিকারের ভালোবাসা দেখা হয় না !
সত্যিকারের মানুষ দেখা হয়নি তার !
( চলবে )