যখন দুজনে একা পর্ব-৬৯ শেষ পর্ব

0
4244

#যখন_দুজনে_একা

৬৯ পর্ব

মাহি রুবাকে বুকের মাঝে নিয়ে বেঁচে থাকাটা অনুভব করছে।
রুবা চুপচাপ মাহির বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে! নিরবতা ভেঙ্গে রুবাই প্রথম কথা বলল,
: চুপ করে আছো যে ?
: অনুভব করছি !
: কি ?
: বেঁচে থাকাটা, তোমার আমার জীবনটা আমাদের পথ চলাটা রুবা! আমরা যখন দুজনে একা ছিলাম , তখন আমরা আমাদের পথ চলা টা এক সঙ্গে শুরু করেছিলাম । আজ আমাদের সব কিছু এক। স্বপ্ন, পথ, আনন্দ, কষ্ট । এটাই তো জীবন !
: এবং তোমার জন্যই খুব সুন্দর হয়েছে আমার জীবনটা !
: আমি তো বলবো তুমি আছো আমার কাছে তাই সব সুন্দর রুবা!
: থ্যাঙ্কস মাহি !
: কেন?
: আমাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য !
: ধুর রুবা , আমি তোমার ভুল বুঝাবুঝির এই ব্যাপারটা তে কষ্ট পাইনি অবাক হয়েছি শুধু ! কারণ আমি জানি আমার রুবা আমাকে কষ্ট দেয়ার আগে নিজেই কষ্টের সাগরে ডুবে যাবে । কোথাও একটা ভুল ওর মনে দানা বেঁধেছে যা কিছুক্ষণ আগে আর পরে ঠিক হবেই হবে ।
রুবা বলল, আচ্ছা তুমি স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে কেন কালকে?
আমি এতটা অবাক হয়েছিলাম রুবা তার চেয়েও বড় কথা, কি করতাম তোমার সঙ্গে তর্ক করতাম ?
তুমি বলতে তুমি যাওনি !
তুমি নিজেই তখন কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলে । আমি জানতাম তুমি জানবে সত্যি টা । তাই তোমার কাছে আমার সহজ স্বীকারোক্তি!
হাসলো মাহি!
রুবা মাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমাকে এতটা ভালবাসি কেন বলতো মাহি?
: কারণ তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি যে রুবা ! এতটা ভালোবাসা দিতে পেরেছি বলেই তো তোমার ভালোবাসা পেয়েছি ! মাহি রুবার ঠোঁটে চুমু খেল।
রুবা মাহিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ! আমাকে সব সময় এভাবেই ভালোবেসো তুমি!
: আমার আর কোন অপশন নেই এই পাগলী মেয়ে টা কে ভালোবাসা দেয়া ছাড়া বুঝলে !
: অপশন থাকলে ?
মাহি রুবার দিকে তাকালো , আচ্ছা যাও চিন্তা করে দেখব বলেই মাহি হাসছে।
এই কথা বললে মেরেই ফেলবো ডাক্তার তোমাকে !
রুবা আমার জীবনে তুমি আর আমাদের ছেলেরা ই সব । তোমাদের জন্য আর বাবা মায়ের জন্য আমার বেঁচে থাকা, তোমাদের জন্য জীবনটা আমার এত সুন্দর।
: আমি তো মাহি তোমাকে দেখি আর রাহিল, সাহিল কে দেখি আর ভাবি সত্যি ই কি তোমরা আমার জীবনে আছো ? এতটা সুন্দর ও আমার জীবনটা !
তোমার ছেলেদের দেখলে মনে হয় তুমি সত্যিই পূর্ণ করে দিয়েছো আমাকে মাহি!
: আচ্ছা কোথায় আমার জান বাচ্চারা রুবা ?
: আর কোথায় তাদের দাদির কাছে , তাদের সবচেয়ে প্রিয়, নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেখানে!
: নিয়ে এসো প্লিজ সারাদিন দেখিনি ওদের!
: ঠিক আছে আনব !
: রুবা তুমি এমন‌ই থেকো অবুঝ, পাগল। আর আমাকে তোমার ভালোবাসা র উন্মাদনা তে পাগল করে রেখো সব সময়। আমরা একদিন বুড়ো হয়ে যাব ছেলেরা বড় হয়ে যাবে কিন্তু তুমি দিন শেষে আমার বুকে এভাবে মাথা রেখে আমাকে বেঁচে থাকার অনুভূতি দিবে !
আমাদের ভালোবাসা টা তে এক ঘেয়েমি আসতে দিও না ! বৃষ্টি এলে আমরা ভিজব, একটু সময় পেলেই আমরা ছেলেদের নিয়ে ছুটে যাব ছুটি কাটাতে , সুযোগ বের করে বাইক নিয়ে তোমাকে নিয়ে উড়তে বের হব !
: হুম।
: এখন যাও ছেলেদের নিয়ে এসো!
রুবার শাড়ি পড়া শেষ হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজায় নক করলো তার শ্বাশুড়ি !
মাহি নিজের গেঞ্জি পড়ে দরজা খুলতেই সাফিয়া বেগম আর ফরিদা বুয়া ঢুকলেন মাহি রুবার ছেলেদের নিয়ে ।
: মাহি নাও তোমার ছেলেদের, ওদের সঙ্গে আমার রাগ !
: কেন আমার ছেলেরা কি করলো মা ?
: তারা দাদির কাছে থাকবে না বাবার কাছে আসবে , মেজাজ দেখাচ্ছে দাদির সঙ্গে!
: ঠিকই তো আছে সারাদিন বাবাকে দেখেনি মেজাজ তো দেখাবেই!
মাহি ছেলেদের কোলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল ওদের সঙ্গে বাচ্চাদের মত খেলা শুরু করলো।
সাফিয়া বেগম আর রুবা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দেখছে মাহি আর ছেলেদের ছেলেমানুষী !
সাফিয়া বেগম রুবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
: সব মিটমাট হয়েছে রুবা ? মান অভিমান ভেঙেছে?
: রুবা শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো শুধু।
: আমি জানতাম আমার মাহি কখনো বেশিক্ষন মন খারাপ করে থাকে না কাউকে থাকতেও দিবে না । ও যেমন দেখতে সুন্দর ওর মনটাও তেমন সুন্দর।
রুবা শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরলো !
: জ্বি মা আপনার মতো !
: খুব ভালো থাকো ! আর আজ চারজন এখানে থাকো । বুঝলে দুরত্ব বাড়লেই ভুল বোঝাবুঝি গুলো সেই গ্যাপে ঢুকে যায়।
সাফিয়া বেগম ওদের ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন । যাওয়ার সময় অনেক দিন পর তিনি শিহাবের ঘরে ঢুকলেন। আজ খুব ইচ্ছে করছে তার শিহাবের সৃত্মি গুলো হাতড়ে বেড়াতে ! ঘরে ঢুকতেই তিনি শিহাব কে অনুভব করা শুরু করলেন নিজের আশেপাশে !

দিশা তার ভিজিট শেষ হ‌ওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে ই চলে গেল নিউইয়র্ক। যাওয়ার আগে মাহির সঙ্গে গল্প করার সময় বলল,
: আমি তোমাকে আর রুবাকে দেখে একটা ডিসিশন নিয়েছি ।
: কি সেটা?
: আমি সংসার টাকে আবার একটা চান্স দিব ! তোমার আর রুবার মত সুখী হ‌ওয়া যায় কিনা দেখব !
: আমাদের মত না দিশা সুখ টা তুমি তোমার মত খুঁজে নিও তাহলেই পারবে দেখো !
: ঠিক আছে !
যাওয়ার দিন রুবা দিশাকে একটা খুব সুন্দর জামদানি শাড়ি গিফট দিল ! দিশা খুব খুশি হলো !
: তোমার মত সুন্দরী আমি না রুবা কিন্তু আমার বিশ্বাস এই শাড়িতে আমাকে অনেক সুন্দর লাগবে !
: আপু তুমি তোমার মেয়ে আর বর কে নিয়ে আবার আসবে কথা দাও !
: ঠিক আছে কথা দিলাম! তুমি মাহি আর ছেলেদের নিয়ে এভাবে ই ভালো থেকো। রুবা তোমাদের দেখলে ভালো থাকতে ইচ্ছে করে । জীবনটাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে!
: দোয়া করো তুমি আপু!

মাহি আর রুবা একদিন বাচ্চাদের নিয়ে নিয়াজ আর নিঝুমের সংসার থেকে ঘুরে এলো!
ভালোবাসা মানুষের জীবনে সব বদলে দিতে পারে । নিয়াজ নিঝুমের জন্য নিজের গন্তব্য পরিবর্তন করে ফেলেছে । অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পর ও সে নিঝুম কে রেখে যেতে পারেনি। ঢাকাতেই নিঝুম আর নিয়াজের ছোট সংসার।
মাহি আর নিয়াজ যখন রাহিল , সাহিল কে নিয়ে ব্যস্ত । নিঝুম রুবাকে বলল,
: তোমাদের চারজনকে দেখে খুব ভালো লাগছে রুবা !
: আমি আমাদের চারজনকে দেখি আর তোমার কাছে সরি বলি আপু !
: কেন ? নিঝুম অবাক হয়ে তাকালো রুবার দিকে !
রুবা নিঝুমের হাত ধরলো !
: সরি আপু , তোমার অনেক প্রিয় একটা জিনিস আমি আমার করে নিয়েছি তাই আমি সরি !
: রুবা যার কথা বলছো এটা ঠিক সে আমার খুব প্রিয় ছিল কিন্তু ও তোমার ই ছিল আমি মাঝখান থেকে কিছুদিন ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি শুধু মাত্র ! তোমরা দুজন দুজনের ভাগ্যে ছিলে এটাই সত্য। আর ঐ যে তাকিয়ে দেখো তোমাদের দুটো ভবিষ্যত , স্বপ্ন এটাই বাস্তবতা আর কিছুই না। নিঝুম হাসলো।
: রুবা নিঝুম কে জড়িয়ে ধরলো ।

জীবনে যদি ভালোবাসা , বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ আর কিছু ভালো মানুষ এর ছায়া থাকে তাহলে জীবন সুন্দর হতে বাধ্য। ভাগ্য সব সময় সব কেড়ে নেয় না । যখন কিছু নিয়ে যায় পরিবর্তে অন্যদিক দিয়ে আবার দ্বিগুণ দিয়ে ভরিয়ে দেয়।
রুবার জীবন থেকে প্রিয়জন যেমন হারিয়ে গেছে ভাগ্য আবার তাকে সাফিয়া বেগম এর মত স্নেহের ছায়া দিয়েছে, মাহির মত ভালোবাসার মানুষ দিয়েছে । যাদের নিখাদ ভালোবাসায় জীবনের বাকি অংশটুকু রুবা আনন্দে কাটিয়ে দিবে।
মাহির মত মানুষ যার পাশে থাকে সুখী জীবন কাটাতে তার আর কিছু লাগে না।

রুবা আর মাহি সেই আগের মত পোর্চের ছাদে এসে বসে প্রতিদিন রাতে কিছুটা সময়। রুবা মাহির ঘাড়ে মাথা রেখে বসে থাকে আর মাহি রুবাকে গান শোনায় কখনো , কখনো দুষ্টামি ,খুনশুটি তে মাতিয়ে রাখে। জীবনের ক্লান্তি গুলো ভুলতে এর চেয়ে বেশি কিছু কি লাগে!
পূর্ণিমা হোক আর অমাবস্যা ওদের ভালোবাসায় কোন প্রভাব পড়ে না।
কিছু ভালোবাসা এমন‌ই হয় সুন্দর, মাঝরাতে র চাঁদের মত মায়াময়। ভোরের আলোর মত সিগ্ধ !

সমাপ্ত

ধন্যবাদ সবাইকে।

সিনথিয়া মাহরূখ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here