সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত চলে এলো…😴
“হালাল প্রেম”
পর্ব- ২১
(নূর নাফিসা)
.
.
এই প্রথম প্রিয় মানুষের হাত ধরে দীর্ঘক্ষণ পথ পাড়ি দিলো শারমায়া। প্রায় এক ঘন্টা জোভানের হাত ধরে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় হাটলো। অতঃপর জোভান তাদের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিলো। শারমায়া গেইটের ভেতর প্রবেশ করা পর্যন্ত সে দাঁড়িয়েই রইলো। শারমায়াকে বলে দিলো রুমে প্রবেশ করে যেন তাকে কল করে কনফার্ম করে। এমন বাচ্চামো কর্মকাণ্ড দেখে শারমায়া কিছু বলতে গিয়েও বললো না। জোভান যেহেতু তার কেয়ার করতে এতোটা পছন্দ করে সেহেতু তার পছন্দে বাধা সৃষ্টি করবে না শারমায়া। সে ফ্ল্যাটের সামনে এসে বোরকা হিজাব খুলে হাতে নিয়ে কলিং বেল চাপলো। দরজা খুললো সাফওয়ানা। তার আত্মা এমনিতেই ধুকপুক করছে তার উপর শারমিন সাখাওয়াতের জিজ্ঞাসা,
“পড়াশোনা রেখে এতোক্ষণ যাবত ফারিয়ার কাছে কি?”
“একটু প্রয়োজন ছিলো, আম্মু।”
“হাতে বোরকা কেন?”
“এটাই দেখাতে গিয়েছিলাম। আপুর হয় কি না, ট্রাই করে দেখলাম।”
“তোর বোরকা আবার ফারিয়ার হয় কি করে!”
“ধুর! সেটাই তো দেখতে গেলাম।”
জবাব দিয়ে শারমায়া হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো। ওদিকে শারমিন বকবক করছেন পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে যত্তসব গল্পগুজবে মেতে থাকা নিয়ে! সাফওয়ানা এসে বলতে লাগলো,
“কি মিথ্যুক! কি মিথ্যুক! ”
“ইশ! কি সত্যবাদী রে!”
“হিহিহি… কিটক্যাট আনছো?”
“এখন কিটক্যাট! পরে কিনে দিবো।”
“মনে থাকে যেন।”
“তোর মন থেকে উড়ে যাক। তাহলেই হয়।”
“সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না গো। বাকিতে ফাঁকি দিলে সত্য ফাঁস হয়ে যাবে কিন্তু!”
“হলে হোক। আমি আমার হাসব্যান্ড এর সাথে বেরিয়েছি।”
“কেউ কি দেখেছে সে তোমার হাসব্যান্ডই ছিলো নাকি অন্য কেউ!”
“সেটা প্রমাণ করার জন্য উনি আছেন।”
“কিছুক্ষণের জন্য তোমার উনিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখবো।”
“বেশি কথা বলবি, তো কিটক্যাট পাবি না।”
“ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়ে নিবো।”
“যা , নিয়ে নে।”
“আমি আবার তোমার মতো ছ্যাচড়া না বুঝছো? কালকের মধ্যেই কিন্তু চাই।”
বলতে বলতে সাফওয়ানা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। শারমায়া বোরকা হিজাব ওয়ারড্রোবে রেখে বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে এক গ্লাস পানি পান করলো। অতঃপর ফোন হাতে নিয়ে জোভানের নম্বরে ডায়াল করলো।
“বাসায় পৌঁছেছেন?”
“হুম পৌঁছেছি? তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এতোক্ষণে কল করার সময় হলো!”
“এখনো দাঁড়িয়ে আছেন!”
শারমায়া জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলো সত্যিই জোভান রিকশায় বসে আছে! সে সামান্য বিরক্তির সাথে বললো,
“আমি কি বাচ্চা, এইটুকু নিশ্চিত থাকতে পারলেন না যে আমি ফ্ল্যাট পর্যন্ত আসতে পারবো? এতোক্ষণ যাবত আপনি রিকশা থামিয়ে বসে আছেন!”
“তুমি বাচ্চার চেয়েও খারাপ! তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? এইটুকু যেতে যেতেই ভুলে গেলে?”
শারমায়া জিভ কেটে নিচু স্বরে বললো,
“সাফওয়ানার সাথে কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেলো।”
“আন্টি কিছু বলেছে?”
“উহুম।”
জোভান রিকশাওয়ালাকে ইশারা করলে রিকশা চলতে লাগলো। এদিকে শারমায়াকে বললো,
“তুমি একা একা ফ্ল্যাট পর্যন্ত যেতে পারবে না সেটা ভেবে আমি বসে থাকিনি। কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হও কি না সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করলাম। নতুবা আবার দূর থেকে আসতে হতো ঝামেলা মেটাতে। এদিকে তুমি তো ভুলেই বসে আছো আমাকে ইনফর্ম করার কথা! আর এক মিনিট দেরি হলে আমি রিকশা থেকে নেমে আসতাম।”
“তো আসতেন।”
“আসতাম? আরেকটু আগে বললে তো রিকশা চলতে দিতাম না। ঠিকই নেমে চলে আসতাম।”
শারমায়া হেসে বললো,
“থাকুক, আরেকটু পরেই নেমে যেয়েন।”
“ওকে, রাখি এখন। ডিনার করো।”
“বাসায় পৌঁছে কল করবেন।”
“ওকে।”
সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা বাসায় ফিরেছেন। শারমায়া টেবিলে খাবার গুছিয়ে দিয়ে ডিনার না করেই চলে এলো রুমে। বসে রইলো জোভানের কলের আশায়। জোভান বাসায় প্রবেশ করেই শারমায়াকে কল করে জানালো। অতঃপর সে ডিনার করতে গেলো।
দুদিন পর শারমায়া সাফওয়ানাকে সাথে নিয়ে নিউমার্কেট এলো। জুতার শোরুম থেকে বের হতেই “ভাইয়া” বলে ডেকে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো সাফওয়ানা। শারমায়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আশেপাশে তাকিয়ে ডানদিকে জোভানকে দেখতে পেল। জোভানও তাদের লক্ষ্য করেনি। সাফওয়ানা হাক ছাড়ায় দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে এলো। শারমায়া সালাম দিলে জোভান জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমরা হঠাৎ এখানে? শপিংয়ে এসেছো?”
“না, আম্মুর ফোন কাস্টোমার কেয়ারে আছে। নিতে এলাম। সাফওয়ানার জুতা প্রয়োজন ছিলো তাই এখানে আসা।”
“ওহ্!”
সাফওয়ানা বলে উঠলো,
“ভাইয়া, আপনিও কি শপিং করতে এসেছেন?”
“না, একজায়গায় গিয়েছিলাম। লাঞ্চ করার জন্য কার ব্রেক করলাম। মিরাজ বললো ওয়ালেট কিনবে তাই আগে এখানে এলাম।”
শারমায়া বললো,
“চারটা বাজে, এতোক্ষণে লাঞ্চ?”
জোভান ক্লান্ত মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললো,
“মাঝে মাঝে হয়ে যায় এমন। জুতা কিনেছো?”
“হুম।”
“তাহলে চলো, একসাথে লাঞ্চ করি।”
“না। আমরা লাঞ্চ করেছি আরও আড়াই ঘন্টা আগে।”
“তাহলে তো হজম হয়েই গেছে। এসো।”
“উহুম। আপনি যান।”
“আরে এসো তো। আরও কেনাকাটা বাকি আছে?”
“না, বাসায় চলে যাবো।”
“বলেছি না আসতে? খেয়ো না। বসে বসে আমার আর সাফওয়ানার খাওয়া দেখো। ঠিক আছে না সাফওয়ানা?”
সাফওয়ানা হেসে উঠলো আর শারমায়া চোখ পাকালো। ওদিকে ইফাজ আর মিরাজ এগিয়ে এসে লম্বা সালাম দিলো শারমায়াকে। তবে সালামের জবাব স্বাভাবিকভাবেই দিলো শারমায়া। জোভান সাফওয়ানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো,
“সাফওয়ানা, তারা আমার ভাইবন্ধু ইফাজ ও মিরাজ।”
অতঃপর ফ্রেন্ডেদের উদ্দেশ্যে বললো,
“এই হচ্ছে আমার একমাত্র ছোটবোন সাফওয়ানা শিফা।”
সাফওয়ানা সালাম দিলো আর দুজনেই সালামের জবাব দিলো সাথে মিরাজ হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বললো,
“হ্যালো, শিফা।”
কিন্তু হ্যান্ডশেক করলো জোভান। সে মিরাজের হাতে চাপ দিয়ে বললো,
“ক্ষুধা লাগছে, চলুন একসাথে লাঞ্চ করি।”
মিরাজ জোভানের হাত থেকে নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“ওফ্ফ! এমন করিস কেন! জানিস না আমার গার্লফ্রেন্ড আছে? তোর শালি নিয়ে ভাগবো না। তোর শালি মানে আমার শালি, সেটা আমি জানি এবং মানি।”
ইফাজ হেসে মিরাজের মাথায় ঠুসি দিলো। মিরাজ শারমায়াকে বললো,
“স্যরি, ভাবি। ফান করলাম। আমার বউ ও তো আপনাদের বোনই হবে তাই না?”
শারমায়া মুচকি হাসলেও সাফওয়ানা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব এনে হাটতে লাগলো। কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টে এসে যখন মিরাজ চেয়ার টেনে বসতে যাচ্ছিলো তখন শারমায়া তার চেয়ার পেছনে টেনে নিলো। তবে মিরাজ আজ ফ্লোরে বসে যায়নি। সে অর্ধেক বসা থেকেই ধরফরিয়ে ইফাজের অপর পাশে চলে গেলো। সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আর শারমায়া নিজের চেয়ারে বসে বললো,
“সেদিন চিনতে না পারলেও আজ কিন্তু চিনতে পেরেছি ভাইয়া, আপনি যে পূর্ব পরিচিত।”
মিরাজ জোভানের উদ্দেশ্যে বললো,
“আমার কথা তো সেদিন বিশ্বাস করিসনি। দেখছিস তো এবার, তোর বউ যে কত ডেঞ্জারাস!”
জোভান মৃদু হেসে বললো,
“যেমন কুকুর, তেমন মুগুর। সাফওয়ানা, কি খাবে বলো?”
“আপনার ইচ্ছা, ভাইয়া।”
“ফ্রাইড রাইস অর্ডার করি সবার জন্য? সাথে চিকেন…”
“ওকে।”
ইফাজ বললো,
“ভাবির পছন্দ জানতে চাইলি না?”
“তুই যেই ক্ষুধা নিয়ে বসে আছিস, তোর ভাবির পছন্দ অনুয়ায়ী খাবার অর্ডার করলে অনাহারে মারা যাবি।”
“যাক, বাবা! তাহলে ক্যান্সেল।”
শারমায়া মুখ চেপে হাসলো। সাফওয়ানা বরাবরের মতো খিলখিলিয়ে উঠলো এবং বললো,
“আপনারা দুজন কি সবসময়ই একসাথে থাকেন?”
ইফাজ জবাব দিলো,
“উহুম, আমরা চারজন একসাথে থাকি।”
“আপনাদের দুজনকেই সবসময় একসাথে দেখি।”
“আরও কোথাও দেখেছো নাকি?”
“কেন, মনে নাই? আরিফ ভাইয়ার বিয়েতে বরযাত্রী ছিলেন।”
মিরাজ শরীর কাপিয়ে হেসে উঠলো আর ইফাজও হেসে বললো,
“সেখানেও তো চারজনেরই যাওয়ার কথা ছিলো।”
“তাই নাকি! ভাইয়া, আপনি যাননি কেন তাহলে?”
“আমি তখন ঢাকায় ছিলাম না, তাই যেতে পারিনি। পরে যখন জানলাম তখন আফসোস করলাম, গেলে তো তোমাদের সাথে আগেই দেখা হয়ে যেতো।”
শারমায়া পানির বোতল খুলতে খুলতে বললো,
“তারচেয়ে কি বেশি ইন্টারেস্টিং ছিলো না এনগেজমেন্ট এ ফার্স্ট দেখা!”
জোভান মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো শুধু। মিরাজ টেবিলে হাত চাপড়ে বলে উঠলো,
“বাহ! ক্যায়া মহব্বত হ্যা!”