বসন্তের_ফুল🌺পার্ট ২০

0
1899

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২০

আকাশে মেঘ ছেঁয়ে আছে।কিন্তু বৃষ্টি পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না। বাতাসের কোনো আনাগুনা নেই বরং অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পড়ছে। অভ্রের শার্টটা ভিজে শরীরের সাথে ল্যাপ্টে আছে। গরম সহ্য করতে বেশ সক্ষম অভ্র।

প্রেমার যাওয়ার পর পর আরিয়ান আসে। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি একদম আলাদা দেখাচ্ছে। সব জানতে পেরেছে সে এখন।আরিয়ানকে দেখতেই অভ্র শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে অন্যদিকে ফিরে যায়। বুকের উপরে শার্টের দু’টো বোতাম খুলে দেয়। যাতে একটু হওয়া ঢুকতে পারে।

আরিয়ান অভ্রের পাশে এসে দাঁড়ায়। অভ্রের সেদিকে কোনো হেলদেল নেই।আরিয়ানকে দেখলেই ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে যায় ভীষণ। এজন্যই অভ্র বরাবরেই আরিয়ানের প্রতি বিরক্ত। চোখ ভিজে আসছে অভ্রের। কোনো রকম বাইরে গড়িয়ে পড়ার আগেই আটকায়।

” তোর থেকে আমি এটা কোনোদিনও আশা করিনি অভ্র,শেষমেশ তুই এমনটা করলি? (আরিয়ান)

আরিয়ান কথাটা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললেও, অভ্রের দৃষ্টি সামনের দিকে।

“নিরুত্তর অভ্র,

অভ্রের নিশ্চুপতা দেখে আরিয়ান বলে উঠে,
” তোর সাথে কথা বলছি আমি,উত্তর দিচ্ছিস না কেন?

“কিসের উত্তর,(অভ্র)

” কাল তোকে প্রেমার রুম থেকে বের হতে দেখেছিলাম,মাঝরাতে একটা মেয়ের রুমে প্রবেশ করাটা কী আদৌ ভালো কাজ?? (আরিয়ান)

” আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়।(অভ্র)

অভ্রের ত্যাঁড়া উত্তরে আরিয়ানের ক্ষ্রিপ্তগতিতে রাগ উঠে যায়,” আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো? তখন কিন্তু ভীষণ পস্তাবি তুই,ভালোই ভালোই আগে থেকে সরে যা,নিজের সীমান্তের মধ্যে থাক। (আরিয়ান)

বিরক্তির স্বরে বলে উঠে,
” যেহেতু সীমান্ত আমার, লঙ্ঘন করার অধিকারও আমার,বাইরের মানুষের কথায় আমি আমার লক্ষ্য থেকে নড়বো না, রইলো কথা সবাইকে বলার; তো আমি বলবো এই কাজটা তুমিই করে দাও আমার হয়ে,(অভ্র)

মিনতির স্বরে আরিয়ান বলে উঠে,
“দেখ ভাই এখনো কিছুর শুরু হইনি,তোর মনের মধ্যেও যদি প্রেমাকে নিয়ে কোনো অনুভূতি থাকে,তাহলে প্লিজ ভাই মুছে ফেল, একটা কথা ভাব প্রেমা বয়সের তোর বড়, এটা কেমন যেনো দেখায় তাই না, আমি জানি এটা তোর ক্ষণিকের মোহ মাত্র, কেটে যাবে এটা আমার বিশ্বাস,তোর জন্য আমি আরো অনেক সুন্দরী মেয়ে খুঁজে আনবো,দেখিস!(আরিয়ান)

অভ্র আরিয়ানের কথায় মৃদু হাসে, আরিয়ানকে এভাবে কথা বলতে দেখে অভ্রের বড়সড় হাসি দিতে মন চাইছিলো।কিন্তু দেয়নি,এটা বেমানান এ মুহূর্তে।

” বড় ভাই হিসেবে আমাকে উপদেশ দিয়েছো,তার জন্য ধন্যবাদ। এখন ছোট ভাই হিসেবে আমি একটা উপদেশ দেই, সুন্দরী মেয়ে খুঁজে তুমি নিজে বিয়ে করে নাও, কারন প্রেমাকে আমি ছাড়ছি না,(অভ্র)

“সবই তোর রুচি। নাহলে বয়সে বড় কেউ চুজ করে,”

(আরিয়ান অভ্রকে ফোঁড়ন কেটে কথাটা বলে যাতে অভ্র রেগে যায়)

“জানোই তো আমি অন্যরকম! কেনো যে আসো আমার সাথে কথা বলতে, এমনিতেই তোমার সাথে আমি কথা বলি না প্রয়োজন ছাড়া।তার উপর আজ এতো কথা বললাম।ফুরিয়ে গেছে কথা,ইচ্ছুক নই তোমার সাথে কথা বলতে,
আরেকটা কথা,
হেরে যাবে তুমি,যেমনটা ছোটবেলা থেকে হেরে আসছো।(অভ্র)

কথাগুলো বলে অভ্র নেমে যায়।নামতে নামতে ভাবে কাল রাতে আরিয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে সে দেখেছিলো।আর আজ ওকে এইসব ব্যাপারে প্রশ্ন করবে জানতই, পরিবারে জানবে এসব নিয়ে অভ্রের ভয় নেই,

অভ্রের কথাগুলো যনো আরিয়ানের শরীরে ফোসকা পড়ে জ্বলে উঠে,হাত মুঠো করে নেয়।এখন সে একটা বিষয় আন্দাজ করতে পারে,সেদিনের ছবিগুলো অভ্রই তুলেছে,কারন অভ্রের হুটহাট ছবির তুলার অভ্যাস আছে।

_________

কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হবে। দু’টোর দিকে বরযাত্রা শুরু হবে। সবাই একসাথেই রওনা দিবে। তাই প্রয়োজনীয় সব ঠিকঠাক করে নেয়।

প্রেমা নাস্তা করে রুমে এসে প্রিয়া আর আদ্রের সাথে গল্প করছিলো এবং মোবাইল টিপছিলো। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তিনজনে সাদা রঙের জামা পরিধান করবে।

“প্রেমাপু?? (আদ্র)

” হুম,বলো।( মোবাইলের দিকে তাকিয়ে)

“আমি আর প্রিয়া একটু বাইরে যায়,হাঁটবো শুধু,

আদ্রের হঠাৎ অনুমতিতে প্রেমা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

” আসলে,তুমি যদি আবার খুঁজো,তাই জিজ্ঞেস করছি।

“আচ্ছা ঠিক আছে যাও,(মৃদু হেসে)

” ফুফি,আমি যাবো না,এ ছেলেটা পাগল,(প্রিয়া)

“আরে প্রিয়ু তোমার আংকেল হয়,এভাবে বলতে নেই,যাও কিছুক্ষণ পর আমরা রেডি হবো,(প্রেমা)

প্রেমার অনুমতি পেয়ে আদ্র প্রিয়াকে যেতে ইশারা করলেই,প্রিয়া প্রথমে মাথা নেড়ে ন জানায়,পরে আদ্র চকলেট দেখালে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায় যাওয়ার জন্য,

রুম থেকে বের হতেই আদ্র প্রিয়ার হাত ধরে হাঁটতে লাগে, কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখে অভ্র ওদের দিকে আসছে,একসময় তাদের সামনে চলে আসে।আদ্র ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, অভ্র তাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদ্র বলে উঠে,
” এই প্রিয়া,বাইরে বাইরে ঘুরছো কেন?? যাও গিয়ে রেডি হও, বিয়েতে যাওয়ার জন্য, সবাই এখনি বের হবে,
দেখেছো ভাইয়া, এখানে ঘুরছে,যদি হারিয়ে যায়,তাই আমি হাত ধরেছিলাম। (আদ্র নরম গলায় বলে উঠে)

আদ্রের কথায় অভ্র ঠোঁট চেপে হাসি আটকায়।ভাই তার বয়সের আগে পেঁকে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে।

আদ্রের কথায় প্রিয়া চলে যায় চুপচাপ।আদ্র চলে যেতে চাইলে অভ্র হাত ধরে আটকায়। একটু ঝুঁকে ভাইয়ের গালে একটা চুমু খায়।তারপর জড়িয়ে ধরে। এই একজনই আছে তার আপন বলতে, নিজের শরীরের একটা অংশ ও বলা যায়।

______

প্রেমা সাদা একটা গাউন, প্রিয়া সাদা ফ্রক, আর আদ্র একটা সাদা শার্ট,এবং কালো পেন্ট পরে। তিনজনে রেডি হয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।

রুম থেকে বের হয়ে তিনজনে গাড়ির কাছে চলে যায়।অভ্র আগে থেকে রেডি হয়ে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। অভ্রকে দেখেই প্রেমা থেমে যায়। সাদা শার্ট পড়েছে সেও। খুব ফ্রেস দেখাচ্ছিলো অভ্রকে। যেনো ছুঁয়ে দিলেই ময়লা লেগে যাবে। প্রেমার মনে সেই আবারও উদ্ভট চিন্তা এসে উঁকি মারে।মাথা ঝাঁকিয়ে এসব ভাবনা মাথা থেকে ফেলে দেয়।

অভ্র প্রেমাকে দেখতেই একটা হাসি দেয়। অভ্রের হাসি দেখেই প্রেমা আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠে..

“লাগাইছে একগাদা লিপস্টিক। আমারটা যে কই হারালো।নাহলে আমিও এভাবে লিপস্টিক দিয়ে বসে থাকতাম।(প্রেমা)

” কিছু বলেছো?? (অভ্র)

“না, কিছু বলিনি, (থমথম গলায় উত্তর দেয় প্রেমা)

অভ্র হাসে।কারন প্রেমার বিড়বিড়িয়ে কথা বলা সে শুনতে পেয়েছে।যে জোরে বলেছে কথাটা শুনতে পাওয়া স্বাভাবিক।

(চলবে)

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here