🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২১
দশমিনিট যাবৎ রাগে ফোঁসফোঁস শব্দ করছে অভ্র। তীব্র ইচ্ছে পাশে বসা মেয়েটিকে কয়েকটা কষে চড় দিতে।শরীর জ্বালা করছে রাগের কারনে। নিজেকে সংযত রাখা দ্বায়।
একটু আগে….
প্রেমারা আসার পর যেই গাড়িতে উঠতে যাবে,তার আগেই সাইকা আর সাইরা বসে পরে।অভ্র আগেই বসে গিয়েছিলে।যার ফলে প্রেমা বসার আগেই সাইকা সাইরাকে নিয়ে বসে পরেছে।
আর প্রেমারা গিয়ে অন্য গাড়িতে বসে। প্রেমার আশে পাশে কিছুর খেয়াল নেই সে নিজ মনেই চলে। কিন্তু আদ্র তো নাছোড়বান্দা। সে প্রেমার সাথেই বসবে। তাইতো অভ্রকে সাইকার সাথে বসতে হচ্ছে।
রাগ-বিরক্তি নিয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় অভ্র। চোখ আটকায় আরিয়ানের দিকে।চোখেমুখে একরাশ হাসি নিয়ে অভ্রের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র নিজের ভ্রু জোড়া হালকা উঁচু করে। পাশ ফিরে সাইকার দিকে তাকাই।দেখে ড্যাবড্যাব করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
এবার সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় অভ্রের কাছে। আরিয়ান আর সাইকা তাহলে এখন একজোট হয়েছে।সাইকা অভ্রকে পছন্দ করে সেটা আরিয়ান জানতো।তাই তো এই সুযোগটার ব্যাবহার করেছে।
সাইকার দিকে তাকিয়ে অভ্র বলে উঠে,
“তোর মতো মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আমার রুচিতে বাঁধে,তাই আজ আর চড় দিলাম না।(অভ্র)
” কেন আমি দেখতে খারাপ?(সাইকা)
অভ্র এবার একরাশ ঘৃনা নিয়ে সাইকার দিকে চোখ দেয়।আবার পেছনের দিকে তাকায়।দেখে একটা অর্ধেক পানির বোতল রয়েছে। দেড়ি না করে বোতলটা হাতে নিয়ে মুখ খুলে সব পানি সাইকার মাথার উপর ঢেলে দেয়। বোতলটা মুখে ছুড়ে মারে। এরপর সাইরার দিকে একবার তাকায়। উল্টোদিক ফিরে গাড়ির দরজাটা খুলে দাঁড়ায়।
আবারও সাইকার দিকে ফিরে হালকা ঝুঁকে।
“সময় আছে,নিজেকে শুধরা। কারো চামচাগিরি করার ইচ্ছে থাকলে সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে।
আর খুব বেশিই যদি “কামের বেডি” হওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে আমাকে বলিস, সারাদিন তোকে দিয়ে; আমার প্রেমার হাত-পা টেপাবো।
(অভ্র কথাগুলো বলে সামনের সিল্কি চুল হাত দিয়ে উপরে তুলে দেয়।এবং অন্য গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে)
কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা পড়ার মতো অভ্রের কথাগুলো সাইকার গায়ে গিয়ে বিঁধে। দাঁতে দাঁত চেপে শুধু সহ্য করে নেই।
||
বিকট একটা শব্দে আকস্মিক ভাবে প্রেমার ঘোর কাঁটে।শব্দটা ফোন থেকেই আসে।ফোনের স্ক্রিনের দিকে চোখ দিতেই একটা নাম ভেসে উঠে ‘অর্পণ’, মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে প্রেমা।
“কিরে মুটকি? এখনো আসিস নি??(অর্পণ)
” না রে,চলে এসেছিস?? (প্রেমা)
“হ্যাঁ,আধ ঘন্টা যাবৎ! তোর অপেক্ষায় আছি,আয় তাড়াতাড়ি। (অর্পণ)
” আসছি, (প্রেমা)
ফোনটা কেটে দিয়ে আবারও ভাবনায় ডুব দেয় প্রেমা। এ ভাবনার অন্তিম ঘটছে না।কূল-কিনারা পাচ্ছে না।অজানা কিছু কথা মনের বারবার উঁকিঝুঁকি মারছে।
কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেয় প্রেমা আগে ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে হলরুমে প্রবেশ করে। সাথে প্রিয়া আর আদ্র ও রয়েছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়।অর্পণকে দেখতে পায়নি। একটু এগিয়ে যেতেই হাসির শব্দ আসে কানে।পেঁছন ফিরতেই দেখে অর্পণ প্রিয়ার সাথে কথা বলছে হেসেহেসে।
প্রেমা গিয়ে অর্পণকে একটা ঘুষি মারে,
” আরে মুটকি মারছিস কেন? (অর্পণ)
“তখনও মুটকি বললি আর এখনো?? (প্রেমা)
” তাই বলে ঘুষি দিবি,তোর পেট পুড়ে না?? (অর্পণ)
” না, আমার কলিজা জ্বলে, মুটকি বলবি না আর আমাকে,আমি এখন যতেষ্ট স্লিম আছি,(ভাব নিয়ে)
“এ্যাঁহ, শুটকির মতো হয়ে বলছিস স্লিম আছি,ছোটবেলাই ঠিক ছিলি কতো কিউট আর গুলুমুলু,(অর্পণ)
“আমাকে মুটকি বলেছিস,সময় আমারও আসবে।(প্রেমা)
” তখন দেখে নিস। (অর্পন হেসে কথা বলে)
“মামা মামি কেমন আছে?? (প্রেমা)
” ভালো আছে,তোর কথা বলে সবসময়, এখন আর যাস না স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিস।(অর্পন)
“সময় নেই রে, আচ্ছা তুই কোন পক্ষে এসেছিস??(প্রেমা)
” কনে পক্ষ। কনের ভাই আমার বন্ধু হয়। (অর্পন)
ওরা আরো টুকিটাকি কথা বলে সেখান থেকে দ্বিতীয় ফ্লোরে উঠে, খুলামেলা জায়গা। অনেক বাতাস সেখানে। বসে তারা আয়েশ করে গল্প করছে। অপরদিকে অভ্র প্রেমাকে না পেয়ে নিচে সবখানে খুঁজে নেয়। শেষ ফোন দেয় প্রেমাকে।
দ্রুত পায়ে উঠে দ্বিতীয় ফ্লোরে যায় অভ্র। দেখে প্রিয়া আর আদ্র একপাশে হাঁটছে।প্রেমা আর একটি ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছে।
দৃঢ় পায়ে প্রেমার কাছাকাছির গিয়ে কল দেয়। প্রেমা রিসিভ করে পেঁছন ফিরতেই দেখো অভ্র দাঁড়ানো।ঠোঁটের কোণায় হালকা মৃদু হাসি। প্রেমা কল কেটে অভ্রকে ডাকতেই অভ্র প্রেমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিজের চোখ দিয়ে একবার প্রেমার বামপাশে দাঁড়ানো অর্পণকে দেখে নেয়।
“অভ্র ও হচ্ছে অর্পণ,আমার মামাতো ভাই।(প্রেমা)
” হাই ভাইয়া। (একটু হেসে!অভ্র)
“হ্যালো ভাইয়া,(বলেই অভ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়)
দুজনে হ্যান্ডসেক করে। তারপর টুকটাক কথা বলে।
” শুন, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। (অর্পণ)
“হ্যাঁ বল, শুনছি।(প্রেমা)
” আসলে কথাগুলো অনেক পার্সনাল। (অর্পণ)
প্রেমা একবার অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তাই অর্পণকে সহ সাথে নিয়ে অন্যপাশটাই চলে যায়।
প্রেমা অর্পণের সাথে যেতেই অভ্র ফিরে তাকায়। চেহারার রঙটা এক মিনিট ও সময় নিচ্ছে না পরিবর্তন হতে। অভ্র চাপা স্বভাবের তাই রাগটা এখনো চেপে রেখেছে। কিন্তু নিজের রক্তিম বর্ণটা চেপে রাখতে পারছেনা। অসহ্যকর একটা পরিস্থিতিতে সে এখন।
“বিয়ে-শাদিতে যদি তোমার কাজিন ভাইরা উপস্থিত থাকে,তাহলে তোমার জন্য সব অনুষ্ঠান বন্ধ৷ কিন্তু আপাততে কোনো অধিকার জারি করছি না। শুধু সময়টা আসুক,(অভ্র)
অভ্র মনেমনে কথাগুলো প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে।ভালোভাবে পরখ করছে তাদের। এখন অবধি অস্বাভাবিক আচরণ দেখেনি তাদের মধ্যে তাই চুপ করে আছে। নাহলে অর্পণকে মেরে প্রেমাকে নিয়ো আসতে সময় লাগবে না অভ্রের।
” আগে বলিসনি কেন? নাহলে আমি ভেবে দেখতাম।(প্রেমা)
“আরে তোরে ঢর লাগে আমার তাই,(অর্পণ)
” আচ্ছা ভালো।এখনও কিন্তু আমি না বললে উত্তরটা না ই আসবে।(প্রেমা)
“এমনটা করিসনা বইন,আমি না তোর ভাই!একটু দয়া কর।
অর্পণের কথায় প্রেমার হাসি পাই। অর্পণের কান ধরে টেনে দেয়। এবং বলে” ঠিক আছে চল”
প্রেমা অভ্রের কাছে গিয়ে দেখে অভ্র এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। প্রেমার উপস্থিতি পেয়ে অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে। মৃদু হাসি দিয়ে বলে উঠে,
“খাওয়ার জন্য ডাক পরেছে,আর কোনো কথা আছে??
” না ভাই,চলো আমি এখন শান্তিতে খেতে পারবো,টেনশন কমে গিয়েছে।(অর্পণ)
অর্পণের কথায় অভ্র ভ্রু কুঁচকায়।প্রেমার জন্যই অর্পণকে সহ্য করছে অভ্র। নাহলে প্রেমা আশেপাশে কাউকে ঘেঁষতে ও দিতো না।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।সবাই সবার মতো বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির পাশে চলে আসে। আদ্র আর প্রিয়াকে উঠানোর পর প্রেমা উঠতে নিলেই অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে টান দেয়।
হঠাৎ এভাবে টান দেওয়াই প্রেমা খানিকটা ভয় পাই।তবে সেটা অভ্রকে বুঝতে দেয়নি৷ কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই অভ্র নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে ইশারা করে। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় প্রেমা। অভ্র একবার আশেপাশে তাঁকায়। সবাই সবার মতো ব্যাস্ত হয়ে গাড়িতে উঠছে, তারপর একজনের দিকে তাঁকায়। সেই ব্যাক্তিটি ইশারা করে সেখান থেকে সরে যেতে।তাই অভ্র প্রেমার হাত ধরে টেনে সবার আড়ালে একপাশে নিয়ে যায়।
একটা কোণায় গিয়ে প্রেমাকে দাঁড় করাই।এবং প্রেমার মুখোমুখি হয়ে অভ্র দাঁড়ায়। অভ্রের জন্য প্রেমাকে দেখা যাচ্ছে না। প্রেমা নিজেও বোকা হয়ে যায় অভ্রের কান্ডে। হাত তুলছিলো অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর জন্য,তার আগেই অভ্র প্রেমার হাত ধরে ফেলে।
“একটু চুপ থাকো, (অভ্র)
” কি হয়েছে এভাবে নিয়ে এসেছো কেন?(প্রেমা)
“চুপ থাকতে বললাম। (ধমক দিয়ে)
অভ্রের ধমকে চুপ হয়ে যায় প্রেমা। কিন্তু ইচ্ছে করছিলো অভ্রকে কয়েকটা তাপ্পর দিয়ে সামনে থেকো সরিয়ে চলে যেতে। বিড়বিড় করে উঠে,
” বাড়ির যাওয়ার সময়ে নাটক,(প্রেমা)
“কিছু বলেছো?? (প্রেমার দিকে তাকিয়ে)
” না (লম্বা একটা হাসি দিয়ে)
এরপর অভ্রে পেঁছনে তাঁকায়।গাড়ি আসছে দেখেই প্রেমার দুপাশো হাত দিয়ে হালকা ঝুঁকে অন্যদিকে তাঁকায়। এতে যেনো প্রেমার শ্বাস আটকে যাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছে না,নড়া তো দূরের কথা।
সব গাড়িগুলো যেতেই। অভ্র প্রেমার দিকে তাকায়।দেখে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।তাই প্রেমার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।এতেই যেনো প্রেমা শান্তি নিঃশ্বাস ছাড়ে।
একটা রিক্সা আসতেই প্রেমার হাত ধরে অভ্র রিক্সার দিকে নিয়ে যায়।এবং রিক্সায় বসিয়ে অভ্র নিজেও পাশে বসে যায় প্রেমার।রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে।অভ্রের হুটহাট হাত ধরাটা প্রেমার অস্বস্তি আরো বাড়তে লাগে।তবুও চুপচাপ থাকে। প্রেমার অস্বস্তি হওয়া বুঝতে পেরে যায় অভ্র।
” আজ আর থামবো না,যতবার ইচ্ছে ততবার হাত ধরবো। (মনেমনে কথাটা বলে অভ্র)
খানিক্ষন বাদে কিছু একটা ভেবে অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকায়,
“আমার উপর বিশ্বাস আছে তো??(অভ্র)
অভ্রের প্রশ্নে প্রেমার দ্রুতগতিতে মাথা নাড়িয়ে জানায়;
” না বিশ্বাস নেই”
অভ্র হাসে প্রেমার আচরণে।বিশ্বাস না করাই ভালো এ মুহুর্তে। যদিও বা সে আহামরি ভালো মানুষ না যে বিশ্বাস করতে হবে। তবুও অভ্র প্রেমাকে বলে,
“একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো,তাই এভাবে নিয়ে এসেছি।নাহলে আদ্র আসার জন্য কান্না করতো।(অভ্র)
” আসলে আসতো,ক্ষতি কি হতো। বরং আরো মজা হতো। (প্রেমা গাল ফুলিয়ে কথাটা বলে)
মিটিমিটি আলোয় প্রেমার গাল ফুলানো দৃশ্যটা যেনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দৃশ্য অভ্রের কাছে। আলতো স্পর্শ করলে যেনো গলে যাবে এ রাগ। অভ্র এবার অন্যদিকে তাঁকিয়ে হাসে।
সন্ধ্যার ঠান্ডা মিষ্টি বাতাস প্রেমার শরীরে সংস্পর্শে আসতেই সব রাগ উবে যায়। এলোমেলো চুলে নিজেকে দিশাহীন পাখি মনে হচ্ছে প্রেমার। খুশীর চোটে অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে প্রেমার একটা বড়সড় হাসি দেয়। যার অর্থ “শুকরিয়া”
প্রতিউত্তরে অভ্রও একটা হাসি দেয়। যে হাসিতে লুকিয়ে আছে নানা রকম অনুভূতির মিশ্রণ।হাসি,কষ্ট,চাওয়া,পাওয়ার আকাঙ্খা, অপ্রকাশিত কিছু কথার চাপা আর্তনাদ।সব মিলে অভ্র হাজারগুণ খুশী এ মুহুর্তে।
(চলবে)
রি-চেক দেওয়া হইনি।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন একটু।
Tarin Jannat