বসন্তের_ফুল🌺পার্ট ২২

0
1895

🌺#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২২

দিঘির ঝিরিঝিরি বাতাসে উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে প্রেমা। খুশীতে চোখমুখ চিকচিক করছে।এতোবড় দিঘি সে আগে কখনো দেখেনি। সবচেয়ে নজরকাঁড়া দৃশ্য গোল আঁকার ধারন করা চাঁদটি। দিঘির পানিতে নিজের প্রদীপ্ত আলোসহ রুপ ধারন করে রেখেছে। সাথে বেলিফুলের মিষ্টি গন্ধ্যে মাতাল প্রায়। আশেপাশে কোনো বেলি ফুলের গাছ সে দেখেনি। তাই নিস্তব্ধতার সহে বেলির ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ লুপে নিচ্ছে নিজের মধ্যে।

পাশাপাশি অভ্রের দৃষ্টিও তার প্রেমার দিকে।কোনো নেশা,উত্তেজন নেই এই দৃষ্টিতে। শুধু নিজের চোখ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা কোনো পরীকে দেখছে সে। খোলা চুলের একপাশে শুধু সাদা রঙের ফুলের অভাব।তাহলেই হয়তো তার চোখ তৃপ্তি পাবে।

বেলি ফুলের ঘ্রান আসতেই ব্যাস্ত হয়ে চারপাশে নজর দেয় অভ্র।মনটা অশান্ত হয়ে উঠে মুহূর্তে। যেকরেই হোক বেলি ফুল ও চাই-ই-চাই।

প্রেমার অগোচরে পেঁছন দিকে হাঁটা দেয় অভ্র। তারা এখন দিঘির পেঁছনের দিকে আছে।তাদের সামনেই রয়েছে কয়েকটা দোকান।

পাঁচমিনিট পর ফিরে আসে হাতে ফুল নিয়ে।হুঁসহীন প্রেমা এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে।আশেপাশের খবর সে রাখেনা। অভ্র প্রেমার পাশে এসে দাঁড়াতেই প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়,ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকায়,

“তুমি কোথায় থেকে আসছো,এতক্ষণ ছিলে না?(প্রেমা)
নিচু শব্দে অভ্র উত্তর দেয়,
” না’
এবার প্রেমা দেখে অভ্রের হাতে বেলিফুল,
এগুলা কই ফেলে?? গাছ তো দেখিনি!(প্রেমা)
পেয়েছি আর কি,নাও! (প্রেমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
চুপচাপ নিয়ে নেয়। অভ্র বলতে চেয়েও বলতে পারেনি,যে প্রেমা এ ফুল তুমি তোমার কানের পাশে গুজে দাও। ছোট শ্বাস ছাড়ে অভ্র,সব কথা বলা ঠিক নয়। কিছু কথা সময়ের জন্য সঞ্চয় রাখা শ্রেয়।

অভ্রের মনের কথা প্রেমা কর্ণে প্রবেশ না করলেও,অভ্রের ইচ্ছে সে অপূর্ণ রাখেনি। অল্প ফুল হাত রেখে বাকি অল্প ফুল কানের পাশে গুজে দেয়,এবং ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয় প্রেমা। হঠাৎ অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকাতেই অটোমেটিক হাসি চলে আসে।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো,প্রেমা ছবি তুলার জন্য হলেও ফুল কানের পাশে গুজাবে।

নিরবতা ভেঙে অভ্র বলে উঠে,
“চলো, আরেকটা জায়গাতেও যেতে হবে।(অভ্র)
” আরেকটা?? রাত হয়ে যাবে তো।(প্রেমা)
“হোক রাত, (বলেই অভ্র হাঁটা দেয়)
অভ্রকে হাঁটতে দেখে প্রেমা নিজেও অভ্রের পেঁছন পেঁছন হাঁটা দেয়।একসময় অভ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অল্পদূর হেঁটে দোকানের সামনে আসতেই অভ্র চোখ গিয়ে পরে ফুচকার দোকানের দিকে,

” ফুচকা খাও প্রেমা?”(অভ্র)
“না, খায় না তো।(প্রেমা)
” কি বলো? মেয়েরা তো ফুচকার জন্য পাগল।(অভ্র)
“আগে খেতাম, এখন ইচ্ছে করে না।(প্রেমা)
” খাবে??
“কী??”
“ফুচকা?
” (প্রেমা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছিলো না)
“আচ্ছা একটা গেম হয়ে যাক??
” কিসের??(প্রেমার)
“এক প্লেট কড়া ঝাল দিয়ে ফুচকা,যে আগে শেষ করতে পারবে সে উইনার!(হালকা হেসে অভ্র বলে)

” তুমি ঝাল খেতে পারো? (প্রেমা)
“মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় অভ্র,
” ওকে ডান,আমি জিতলে কি পাবো??(প্রেমা)
“নেক্সট ফ্রাইডে একটা বড় সাপ্রাইজ পাবে,ঠিক এই টাইমেই।(অভ্র).
চোখের পলক বারবার নাড়িয়ে প্রেমার অভ্রের দিকে তাঁকায়,তারপর বলে,”এখন দিলে কি হবে?” (প্রেমা)

হঠাৎ অভ্র শক্ত গলায় বলে উঠে,
খেতে হবে না,বাড়ি চলো।(অভ্র কথা বলে আবারও হাঁটতে লাগে)
তখনি পেঁছন থেকে অভ্রের শার্টে টান পড়ে,পেঁছন ফিরতেই দেখে প্রেমা তার শার্ট ধরে আছে,

“রাগ দেখাও,দিঘির পানিতে ছুড়ে ফেলে দিবো!(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র হালকা ঠোঁট চেপে হাসি আটকিয়ে বলে,” সেই শক্তি আছে তোমার? (প্রেমা)
প্রেমা অভ্রের শার্ট ছেড়ে দিয়ে অভ্রকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরে,পেঁছন থেকে অভ্র এবার হাসতে লাগলো,প্রেমা ক্ষেপেছে,তাইতো ধাক্কা দিলো।

ফুচকার দোকানের সামনের গিয়ে,
“মামা বেশি বেশি অতিরিক্ত কড়া ঝাল দিয়ে দুই প্লেট ফুচকা দেন? (অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে নাক ফুঁলিয়ে বলে)

টেবিলে দু’জন দু’মাথায় বসছে, ফুচকা আসতেই প্রেমা সাথে সাথে একটা ফুচকা মুখে পুড়ে নেয়।ক্ষিপ্রগতিতে খাচ্ছে প্রেমা।জেতার লক্ষ্যে । প্রেমার যখন পাঁচটা তখন অভ্র মাত্র দু’টো খেয়েছে। সে ইচ্ছে করেই ধীরে গতিতে খাচ্ছে যাতে প্রেমা জিতে যায়। ফুচকা খাওয়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিলো, প্রেমা ফুচকা খাবে আর সে দৃশ্যটা অভ্র দেখবে এবং উপভোগ করবে। ঝালের কারনে প্রেমা বারবার ঠোঁট উঁচিয়ে ঝাল কমানোর চেষ্টা করছে।এবং এ দৃশ্যটাই দেখতে চেয়েছিলো অভ্র। মনেমনে বলে উঠে,

” মারাত্বক সুন্দর! (অভ্র)
নিজের ফোনটা বের করে একটা ছবি তুলে নেয়, তাও প্রেমার অজান্তে।কারন প্রেমা তখন ফুচকা খেতে ব্যাস্ত।

অবশেষে প্রেমা জিতে যায় আর অভ্রে হারে। কিন্তু তাতে অভ্রের কিছুই যায় আসে না। সে যেটা দেখতে চেয়েছিলো সেটা দেখেছে তাতেই স্বার্থক। কি অদ্ভুত দু’জন দু’উপায়ে আনন্দিত।

প্রেমার জন্য দু’টো আইসক্রিম এনে প্রেমার হাতে দেয় অভ্র। দু’হাতে দুটো আইসক্রিম একসাথে খাচ্ছে।আর অভ্র মৃদু হাসি হাসে প্রেমার কাণ্ডে।ঝালটা আংশিক কমেছে তবে পুরোপুরি না।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে দুজনে। জনমানবহীন রাস্তা।মাঝেমাঝে কয়েকটা গাড়ি যায়।এরপর আবার নিস্তব্ধ।এ মুহূর্তে প্রেমার ভালোলগার অনুভূতি অপরিসীম। সে ভাবছে অভ্রের সাথে না আসলে সে কখনো এতো সব দেখতে পেতো না। এতো সুন্দর পরিবেশের সম্মুখীন হতো না।

হাঁটতে হাঁটতে তারা আরো একটু দূর চলে যায়।এখান থেকে বের হয়েই তারা বড় রাস্তায় উঠবে। আর তার আগেই ঘটে একটা অঘটন।

একটা বাইক থেকে দু’টো ছেলে এসে অভ্রের পেঁছনে দাঁড়ায়। একজন মোটা লাঠি দিয়ে অভ্রের মাথায় ভাড়ি দিতে যাবে তার আগেই প্রেমা দেখে ফেলে।চিৎকার দিতেই অভ্র পেঁছন ফিরে তাঁকায়।এবং সাথে সাথে লাঠিটা ধরে, অন্যহাতে প্রেমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আরেকজন ছুটে এসে ধরতে যাবে তার আগেই প্রেমা পাশ থেকে ভাঙা ইট নিয়ে ছুড়ে মারে। সে ছেলেটা আঘাত ফেলে কিছুটা পিছিয়ে যায়।তখনি লাঠি ধরা ছেলেটি লাঠি ছেড়ে ছুরি বের করে অভ্রের হাতে আঘাত করে।সঙ্গে সঙ্গে প্রেমা চিৎকার দিয়ে উঠে,লাঠি নিয়ে মারতে যাবে তার আগেই ছেলে দু’টো পালিয়ে যায়।হঠাৎ এমন ঘটনার প্রত্যাশা কেউ করেনি।খুব দ্রুতগতিতে হয়েছে সবটা।মাথা ঝিমঝিম করে উঠে,পরিস্থিতি অন্যরকম রূপ ধারন করে।

প্রেমা প্রচণ্ড ভয়ে অভ্রের হাতের দিকে তাঁকায়।কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। অভ্র নিজের অন্যহাত দিয়ে কেটে যাওয়া হাতটা চেপে ধরে।সে একটু ও অবাক হয়নি। এভাবে অরো আগে দু’বার আক্রমণ হয়েছিলো ওর উপরে।তবে সেটা অনেক দেড়ি হচ্ছে। কিন্তু কাজটা কার তা অভ্র কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে।

“অভ অভ্র তাড়াতাড়ি চলো,হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে,ক্লিনিকে চলো,(প্রেমা)
” ক্লিনিকে না,বাসায় যাবো,(অভ্র)
“কিন্তু,বা..বাসায়,(প্রেমা)
” চলো,আগে।
রক্তমাখা হাতে প্রেমার হাতটা চেপে ধরে সামনের দিকে হাঁটা ধরে অভ্র।দাঁড়িয়ে থাকলে প্রেমা প্রশ্ন করতে করতে পাগল করে দিবে।

“দেখো অভ্র, তোমার হাতে ব্যাথা পেয়েছো,সেটা ধরো,কতো রক্ত পরছে দেখো? তুমি আস্তে হাঁটো,আর আমার হাতটা ছাড়ো,(প্রেমা)
হাঁটা থামিয়ে অভ্র প্রেমার চোখে চোখ রাখে এরপর বলে,
” এ অল্প ব্যাথায় আমি মরে যাবো না,সো, চুপ করো(কড়া কন্ঠে বলে উঠে)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ হয়ে যায়।মরে যাওয়ার কথাটা শুনে কেমন যেনো অদ্ভুতভাবে ভয় পায় প্রেমা।সব বুঝার মতো পরিস্থিতিতে নেই তাই চুপ মেরে থাকে। অনেক্ষণ হাঁটার পর অভ্র একটা দু’তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। এবং বেলটা চেপে বাজায়।
দরজা খুলতেই দেখে….

(চলবে)

রিয়েল পাঠকরা হেল্প মি।গল্পটা কি ২৫ পর্বের শেষ করে দিবো? নাকি আরো পর্ব লিখবো?? আমার মনে হচ্ছে গল্পটা আপনাদের ভালো লাগছে না।তাই মতামত চাইছি।Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here