#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২৭
সকালে মিষ্টি রোদ শরীরে জড়িয়ে নিচ্ছে প্রেমা।সাথে রয়েছে শীতল বাতাস। ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে সকালটা উপভোগ করছে। মনটা তার বড্ড অশান্ত।চারপাশের সবকিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে তার।
কাল মধ্যরাতে বাড়ি ফেরার পর বাকিটা সময় নির্ঘুমে কাটিয়েছে প্রেমা।মনের মধ্যে এক অজানা অনুভূতিতে মরিমরি অবস্থা হয়েছিলো তার।
ঘুমানোর জন্য চোখজোড়া বন্ধ করলেই একজনের মুখটা চোখের সামনে ভেসে আসছিলো বারেবারে।
“প্রেমা,(অভ্রের নানি)
” নানু, তুমি?
“চলো নাস্তা করবা।(নানি)
প্রেমা হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে অভ্রের নানির পেঁছন পেঁছন নিচে নেমে যায়।
নাস্তার টেবিলে সকলে উপস্থিত ছিলো।অভ্র বাদে।তাই প্রেমা জিজ্ঞেস করে বসে,
” অভ্রে কোথায় আন্টি?দেখছি না! (প্রেমা)
“কি জানি একটা কাজে গিয়েছে মা,বলেনি!(অভ্রের মা মুচকি হেসে উত্তর দেয়)
প্রেমা মাথা নিচু করে খাওয়ায় মন দেয়।একটু বাদে সবার দিকে তাকিয়ে প্রেমা আমতা আমতা করে বলে,
” দাদু,আমি বাড়ি চলে যেতে চাই,(প্রেমা)
প্রেমা কথাটা বলেই সবার দিকে তাঁকায়।অভ্রের মা কিছুক্ষণ প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন,
“কেন মা আমাদের সাথে থাকতে ভালো লাগছে না?
” না,আন্টি আসলে বাড়ির কথা মনে পরছে তাই(প্রেমা)
“তো মা বিয়ের পর শশুর বাড়িতে গেলে কী করবে শুনি? তখন বাড়ির কথা মনে পরবে না? এখন থেকে অভ্যাস করে নাও সুবিধা হবে।(অভ্রের মা)
প্রেমা কোনো রকম ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করে।এরপর তার দাদির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে কিছু বলতে।তখনি উনি বলে উঠেন,
” তোর যাওয়ার ইচ্ছে হইলে তুই যা।আমি আরো মেলা দিন আমার বান্ধবীর সাথে কাটামো।দুজনেই একা।দুজনেরই পরাণ পাখি চইলা গেছে।শেষ কালে দুই বান্ধবী একলগেই থাকমো।ঠিক শৈশবকালে যেমনে ছিলাম। এখন থেকে ভিন্য জায়গায়ও ঘুরতে যামু আমরা।যা তুই চইলা যা।(প্রেমার দাদি)
কথাগুলো শুনে প্রেমা চোখ ছোটছোট করে তাঁকায়।এবং ভেবে নেয়। সে একাই প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাবে।
“ঠিক আছে,আমি আর প্রিয়া চলে যাবো।(প্রেমা)
মুচকি হেসে কথাটা বলে প্রেমা নাস্তায় মনোযোগ দেয়।
ফোনে কল আসতেই অভ্র থেমে যায়।ফোন বের করে দেখে তার নানির নাম্বার।
” হ্যাঁ,নানু বলো?(অভ্র)
“শুন অভ্র প্রেমা তো চলে যেতে চাইছে,কি করবো?
” আটকাও’ যে কোন একটা বাহানা দিয়ে।
কথাটা বলেই অভ্র ফোনটা কেটে দেয়।সামনের দিকে এগোবে ঠিক সে সময় কারো সাথে একটা ধাক্কা খায়।
অভ্র দ্রুতগতিতে সে ব্যাক্তিতে ধরে ফেলে।
দ্রুত কন্ঠে বলে উঠে,
“আন্টি আপনি ঠিক আছেন?(অভ্র)
কুচকুচে কালো বোরকা পরিহিতা মহিলাটি ভেজা চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।
অতৃপ্ত চোখজোড়া আজ তৃপ্তি পেয়েছে মহিলাটির।
কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,
” বাবা তোমার নাম কি?(মহিলাটি)
“জ্বি! অভ্র,(মহিলাটিকে দাড় করাতে করাতে বলে)
” বাবা আমাকে একটু বড় রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে? আমার শরীরটা বিষণ খারাপ।(মহিলাটি)
অভ্র মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।
এরপর অভ্র মহিলাটির হাত ধরে বড় রাস্তায় নিয়ে আসে।এবং একটা রিক্সা ডেকে মহিলাটিকে রিক্সায় তুলে দেয়।তখনি মহিলাটি অভ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠে-
“সুখী হও বাবা! অনেক দোয়া করি।তুমি না থাকলে আমি এতোটা পথ আসতে পারতাম না।
” অভ্র মুচকি হাসি দিয়ে বলে –
“জ্বি! ভালো থাকবেন।
ঘুরে অভ্র হাঁটা দেয় নিজের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।অপরদিকে মহিলাটি অভ্রের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে এবং নিঃশব্দে কেঁদে উঠে।
___________________________
সকাল গড়িয়ে এখন প্রায় দুপুর।অভ্রের বাড়ি আসার কোন নামগন্ধ নেই।প্রেমা এবার বিষণ বিরক্ত হচ্ছে।অভ্র থাকলে অভ্রের সাথে গল্প করে সময়টা কাটানো যেতো।অভ্রকে ছাড়া প্রেমার ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।
এখন রাগও হচ্ছে অভ্রের উপর প্রেমার।হুট করে না বলে ঘায়েব হওয়ায়। বাড়ি যেতে চেয়েছে তাও পারছে না।অভ্রের নানি আটকে ফেলেছে।
তাই অাদ্র এবং প্রিয়ার সাথে বসে আছে। তারা দুজনেই গেম খেলছে ওর ফোনে।আর প্রেমা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
শেষ বিকেলের দিকে প্রেমার ফোনে কল আসতেই ঘুম ভেঙে যায়।ফোন হাতে নিয়ে দেখে অভ্রের কল।তাই রিসিভ করে।
” প্রেমা! (অভ্র)
“হ্যাঁ অভ্র বলো,আর কোথায় তুমি? সকাল থেকে বাসায় আসোনি কেন?(এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে)
অভ্র হালকা হাসে,কিন্তু প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কথাটা বলে,
” তোমার জন্য একটা সাপ্রাইজ আছে সন্ধ্যার পর।এড্রেস সেন্ড করছি মেসেজে।চলে এসো। (অভ্র)
“আমি একা? কীভাবে?(প্রেমা)
” না নানুর সাথে।তোমাকে এনে দিবে।(অভ্র)
“ওহ,বলছি কি দিবে বাসায় নিয়ে এসোনা আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।(প্রেমা)
প্রেমার কথাটা অভ্র শুনলেও কোনো উত্তর দেয়নি।ফোন কেটে দেয়। ফোন পকেটে রেখে,চুল হাত দিয়ে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে আলতো হেসে অভ্র বলে উঠে-
” এতোদিন আমি ছটপট করেছি।এবার তোমার পালা! ডিয়ার প্রে..মা..ভ্র!। কথাটা বলে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে শুয়ে পরে অভ্র।
_____________________
সন্ধ্যার ঝিরিঝিরি বাতাসে প্রেমার মনটা খুশীতে বাকবাকুম। সারাদিনের উদাসীনতা কেটে যায় নিমিষেই। কিন্তু এখন বিষণ ভয় করছে তার।অভ্রের নানি হঠাৎ এমন একটা জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে যে জায়গাটা বেশ নিস্তব্ধ।কোনো মানবের চিন্হ নেই। চারোশটায় চাঁদের আলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।
“নানু,এখানে এনেছেন কেন?অভ্র কোথায়?
” জানিনা,এখানে আসতে বলেছে আমাকে।
দুজনে চুপ মেরে যায়। একটু পর পাশে একটা নদীর দিকে চোখ যায় অভ্রের নানুর।তখনি অভ্রের নানু হেসে বলে ওইতো অভ্র আসছে।
পেঁছন ফিরে তাকায় প্রেমা।নদীতে একটা ছোট নৌকা।হালকা আলোতে অভ্রের মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।প্রেমা সেদিকে তাকানোর পর চোখ ফেরাতে পারছিলো না।প্রেমা দৃষ্টি অভ্রের অমায়িক সুন্দর চেহারাতে নিবদ্ধ।প্রেমা নিজেও মুচকি হেসে উঠে।
নৌকা থেকে অভ্র এক লাফে নেমে প্রেমার সামনে এসে দাঁড়ায়। অভ্রের চোখে মুখে আলাদা এক খুশীর চাপ দেখা যাচ্ছে। নানুর দিকে তাকিয়ে অভ্র একটা হাসি দেয়। উনিও প্রতিউত্তরে হেসে দেন,
“অল দ্যা বেস্ট,অভু! আমি আসছি তাহলে,
” আপনি কোথায় যাচ্ছেন নানু,আমাদের সাথে চলেন!
“না, তুমি আর অভ্র যাও,ফেরার সময় আমরা একসাথেই বাড়ি ফিরবো। আমার আরেকটা কাজ আছে সেটা সেরে ফেলি ততক্ষণে।তোমরা যাও,
কথাটা বলে উনি চলে যন।আর অভ্র প্রেমার হাতটা শক্ত করে ধরে।তখনি প্রেমা অভ্রের দিকে তাকায়।
” চলো!(অভ্র)
“কোথায় যাবো,ওইদিকে কি? আর বেশি অন্ধকার দেখাচ্ছে।(প্রেমা)
প্রেমার কথার উত্তর না দিয়ে হাঁটা দেয় অভ্র।সে জানে প্রেমার প্রশ্নের ঝুড়ি থেকে প্রশ্ন কমবার নয়।
প্রেমাকে নিয়ে অভ্র নদীর কিনারায় এসে দাড়ায়।
” পায়ের জুতা খুলে এখানে রেখে দাও।(অভ্র)
“জু….(প্রেমা)
” যেটা বলেছি করো।কোনো প্রশ্ন না করে,
অভ্রের তীক্ষ্ণ স্বরে বলা কথায় প্রেমায় দ্রুত জুতা খুলে ফেলে। আবারও অভ্র প্রেমার হাত ধরে নৌকার কাছে নিয়ে যায়।এবং প্রেমাকে নৌকায় তুলে দেয়।পেঁছন পেঁছন অভ্র ও উঠে যায়। নৌকার মধ্যে পা রাখতোই প্রেমার পায়ে সুরসুরি অনুভব হয়।সাথে সাথে প্রেমা পিছিয়ে যায়।
“কি হয়েছে?
” অভ্র এখানে কি আছে? আমার পায়ে সুরসুরি লাগছে।
প্রেমার কথায় অভ্র শব্দ করে হেসে উঠে,
“হাকিম ভাই লাইটটা জ্বালান।
সঙ্গে সঙ্গে চার্জের লাইট জ্বালান নৌকায় থাকায় অপর ব্যাক্তিটি।প্রেমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।এখানে অভ্র বাদে আরো একজন ছিলো সে বুঝতেও পারেনি।লাইট জ্বলতেই প্রেমার প্রথম দৃষ্টি যায় নৌকার মধ্যে থাকা ফুলগুলোর দিকে।এবার প্রেমার চোখ ছানাবড়া। অবাকের স্বরে বলে উঠে,
” এত্তোফুল??
প্রেমা ফুলগুলোর মাঝে বসে যায়।এতোক্ষণে তার নাকে ফুলের মিষ্টি সুগন্ধ্য প্রবেশ করে।নৌকা ভর্তি ফুল দেখে সে নিজেই ফুলের ঘ্রাণে মাতাল প্রায়।সব ফুলের নামও জানেনা সে।তবে চিরচেনা ফুলগুলোর মাঝে অচেনা ফুলগুলো প্রেমার অতিথি মনে হচ্ছিলো।আমোদিত দৃষ্টি নিয়ে প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।
“এখানে যতগুলো ফুল আছে ততগুলা ধন্যবাদ তোমাকে।(প্রেমা)
অভ্র মৃদু হেসে প্রেমার সোজাসোজি বসে ফুল হাতে নিয়ে প্রেমার দিকে ছুঁড়ে মারে।অভ্রের থেকে দেখে প্রেমাও হাতে ফুল নিয়ে অভ্রের দিকে ছুড়ে মারে।পরমুহূর্তে প্রেমা শব্দ করে হেসে উঠে। প্রেমার নিষ্পাপ হাসিটাকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে অভ্র।হাসি এবং হাসির শব্দ দু’টোই সোজা অভ্রের বুকে গিয়ে লাগছে।ঘন নিঃশ্বানের মধ্যে লুপে নিচ্ছে নিজের সেই অনুভূতি গুলোকে। চাঁদের জ্বলমলে আলো এবং হাজারো ফুলের মধ্যে বসে থাকা মেয়েটিকেই সে চাই,খুব করে চাই,যতদিন পর্যন্ত নিঃশ্বাস থাকবে ততদিন পর্যন্ত চাই।
অবশেষে নৌকা এসে থামে অপর প্রান্তের কিনারায়।সিমেন্টের ঘাট থাকায় তেমন একটা অসুবিধা হয়নি উঠতে। প্রেমাকে নিয়ে অভ্র সিঁড়ির দিকে উঠতে উঠতে একবার পিছু তাঁকায়।অভ্রের হালকা ইশারা বুঝতে পেরে হাকিম ভাই মাথা নাড়ায়।
(চলবে) Tarin Jannat