#বসন্তের_ফুল 🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট২৯
রাতের নিরিবিলি পিচঢালা রাস্তা দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে নিজ গন্তব্যে।জানালা খোলা থাকায় বাতাসের প্রবেশে প্রেমার চুল আউলিয়ে দিচ্ছে। বিরক্তিতে নাক ছিটকে চুলে কাটা খুঁজতে শুরু করে। চোখ যায় উরনার দিকে।কাটাটা সেখানেই আটকানো আছে। মনে পড়ে যায় তখন অভ্র ওর চুল থেকে কাটা নিয়ে উরনার সাথে আটকে দিয়েছিলো।
আবারও চোখের পানি চিকচিক করছে প্রেমার। ঘন নিঃশাস নিয়ে কান্নাকে কাবু করতে চাইছে।যা আঁড়চোখে পাশে বসা অভ্রের নানি খেয়াল করছেন।উরনা থেকে কাটা নিয়ে প্রেমার চুল বাঁধতে বাঁধতে উনি বললেন,
‘ছেলেটা তোমার জন্য বিষণ পাগল। তাই এতো কিছু করেছে।’
বাক্যসমূহ প্রেমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অল্প কেঁপে উঠে।সচকিত হয় বেশ। বিষয়টা অনেক গভীর।করুনদৃষ্টে তাকায় প্রেমা। বিষণ ইচ্ছে করছে কিছু বলতে।কিন্তু সে ইচ্ছেটা নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছে।নির্বিকার চেয়ে থাকে।মৌনতাকে নিজের সঙ্গী করে নেয় আপাততে।
‘সব চিন্তা বাইরে রেখে নিজের মন কি চাই সেটা বুঝো।সব সহজ হয়ে যাবে।'(মুচকি হেসে নানু বললেন)
‘উদাসীন ভঙ্গিতে প্রেমা ঠোঁট নাড়িয়ে বলে উঠে,
‘ আমার বিয়ে ভেঙেছে ও, আমার পরিবার কতোটা কষ্ট পেয়েছিলো।সব শেষে অপয়া নামের একটা ট্যাগ পেতে হয়েছে।সবই অভ্রের জন্য।(প্রেমা)
বুক চিরে শ্বাস বেড়িয়ে আসে অভ্রের নানুর।বুঝতে পারেন প্রেমাকে কোনো ভাবেই বুঝানো যাবেনা।যা মাথায় গেঁথে গিয়েছে তা সহজে বের হবে না।পরমুহূর্তে কিছু একটা ভেবে আপনমনে হাসলেন।
“আমি আর কিছু বলবো না।যা করার অভ্রই করবে।(মনেমনে কথাটা বলেন,এবং আলতো করে প্রেমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন)
তখন প্রেমার দৃষ্টি জানালার বাইরে। বারবার অভ্রের স্বচ্চ,হাস্যজ্বল মুখটা প্রেমার চোখের সামনে ভাসছে।যতবার ভাবছে অভ্রের সাথে কঠিন ব্যাবহার করবে ততই বুকটা ভাড় হয়ে আসছে তার। যেনো মুহুর্তে নিঃশ্বাস আঁটকে মারা যাবে।
বাসায় পৌঁছেই নিশ্বব্দে পা চালিয়ে রুমে চলে যায় প্রেমা। রুমে প্রবেশ করতেই এলোমেলো ভাবে বিছানায় শুয়ে পরে।কাঁদার ফলে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। এখন আরো দ্বিগুন কান্নায় মেতে উঠেছে।
বালিশ খামছে ধরে প্রেমা নিঃশব্দে আবারও কান্নার গতি বাড়িয়ে দেয়।নিজের কান্নার কারন নিজেই বুঝতে পারছেনা।
‘কেন এতো কষ্ট হচ্ছে,কান্না আসছে এতো,কি চাই আমি?? কেন আমার লাইফে আসলে অভ্র।ভালোই তো ছিলাম। কেন করলে এমনটা? (প্রেমা)
বেশকিছুক্ষণ কাঁদার পরে অনেকটা শান্ত হয় প্রেমা।চোখমুখ মুছেই ওয়াসরুমে চলে যায়। আর তখনি দরজায় টকটক শব্দ হয়।বিরক্ত হয়ে বের হয়ে যায় প্রেমা। দরজা খুলেই দেখে অভ্রের নানু দাড়িয়ে খাবার নিয়ে।প্রমাকে দেখে উনি স্বস্থির শ্বাস ছাড়েন।কারন অভ্র একটু আগে ফোন করে প্রেমাকে গোসল করা থেকে আটকাতে বলে। সে জানতো এতো কিছুর পর সেদিনের মতো প্রেমা আবারও রাতে গোসল করবেই।তাই অভ্র ফোনে সব জানিয়ে দেয়।
“ফ্রেস হওনি এখনো?
‘ না আসলে গোসল করতে যাচ্ছিলাম।'(প্রেমা)
‘এতো রাতে গোসল,ঠান্ডা লেগে যাবে।তুমি বরং মুখহাত ধুয়ে খাবার খেয়ে নাও।(নানু)
‘খাবো না নানু,খেতে ইচ্ছে করছে না প্লিজ। (প্রেমা)
‘আমি এতো কথা জানিনা,ফ্রেস হয়ে আসো।আমি অপেক্ষা করছি।তুমি খাওয়ার পর শুয়ে পরো আমি নিজ হাতে তোমার মাথায় বিলি কেটে দিবো।(নানু)
উনার বিনীত স্বরে বলা কথাগুলো প্রেমা চেয়েও ফেলতে পারেনি।ফ্রেস হয়ে খেয়ে শুয়ে পরে।মাথায় বিলি কাটার ফলে প্রেমা দ্রুত ঘুমিয়ে পরে।এতো চাপ গেলো তাই শুতেই আরামের ঘুম চোখে নামে।
ফোন বাজলেই নানু ফোনটা রিসিভ করেন,
‘ নানু প্রেমা ঘুমিয়েছ?(ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে অভ্র)
‘হ্যাঁ,ঘুমিয়েছে,খেয়েছিস?(নানু)
” হ্যাঁ, একটু আগে। (অভ্র)
“এখন কোথায় তুই? কবে আসবি?
‘সবসময় যেখানে থাকি সেখানেই আছি।কাল সকালেই আসছি।রাখছি এখন। (অভ্র)
প্রলুদ্ধ হয়ে যান অভ্রের আচরণে। কতোটা খেয়ারিং ছেলে অভ্র।তা ভেবেই ভালোলাগার শ্বাস ত্যাগ করছেন অভ্রের নানু। অতীতের কথাটা মনে আসলেই আবারও অভ্রের মুখটা উনার চোখে ভাসিত হন।
ফোন কাটার পর অভ্র ছাদের উপর গার্ডেন সাইডের কোণায় রেলিং এ হাতের ভর দিয়ে হালকা ঝুঁকে। এবং আবারও সোজা হয়ে দাড়ায়। ফোনটার ওয়েলপেপারের দিকে নজর দেয়। ফুলের মাঝখানে বসে থাকা প্রেমার ছবিটায় নিজের গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অভ্র। হৃৎপিণ্ডের দুরুদুরু চলাচলের শব্দ অনুভব করতে পারছে। বুকের মাঝে আজ আর কোনো ব্যথা অনুভব করছেনা সে।সুখ লাগছে।
সাইকান এসে অভ্রের পাশে দাঁড়ায়। মাঝেমধ্যে অভ্রের কাছে নিজেকে নগন্য লাগে তার।সব দিক দিয়ে অভ্র অনবদ্য। পার্ফেক্টও বলা যায়। ভাবছে প্রেমা ওকে কোনোরকম কষ্ট দিবে না তো।নাহলে ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে সে নিশ্চিত।
‘বাহ! শুধু ছবিই দেখোস সারাদিন।ফোনে তোর ছবি-টবি আছে? নাকি সব প্রেমাপুর ছবি?
সাইকানর কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় অভ্র,
‘আমার ছবি দিয়ে কি করবো?(অভ্র)
‘না মানে….
সাইকানের পুরো কথা না শুনে অভ্র ধপাধপ পা চালিয়ে চলে যায়।পেঁছন থেকে সাইকান অভ্রে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে বিড়বিড় করে বলে উঠে,
“বাইরে থেকে শালা ভালো সেজে থাকোস,ভেতরে তুই কেমন সেটা আমি আর আদ্রই ভালা জানি।
অভ্রের শ্রবণ শক্তি অনেক প্রকড়,তাই সাইকানের কথা ওর কানে আসতে সময় নেইনি।পা থেকে একটা স্লিপার খুলে সাইকানের পেট বরাবর ছুঁড়ে মারে।
সাইকান হালকা ব্যথা পাওয়ার বান করে বলে,
” শালা তোর ভালো হবেনা।
তখনি অভ্র অপর স্লিপারটা ছুঁড়ে মারে আবারও।
সাইকান হেসে ক্যাচ ধরে ফেলে।
রুমে এসেই অভ্র আরিয়ানকে ফোন দেয়।
‘হ্যালো,কে বলছেন এতো রাতে?(আরিয়ান)
‘আমি ‘(অভ্র)
আরিয়ান সাথে সাথে চমকে শুয়া থেকে উঠে যায়,
‘অভ্র,তুই? এতোরাতে,? কোনো সমস্যা হয়েছে?
আরিয়ানের কথায় অভ্রের বিরক্তিতে গা জ্বলে উঠে,
ন্যাকা কথা বাদ দিয়ে সোজা কথায় চলে যায়।
‘কাল বিকালে তোমাকে দেখা করতে হবে,ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে?(অভ্র)
‘ইম্পর্ট্যান্ট কথা? কি কথা বলবি অভ্র?
” দেখা হলেই জানতে পারবা।(অভ্র)
কথাটা বলে ঠাস করে আরিয়ানের মুখের উপর ফোনটা কেটে দেয় অভ্র। ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে সোফায় গিয়ে ধপ করে বসে পরে। ঘন সিল্কি চুল হাত দিয়ে উপরের দিকে তুলে দিয়ে,অদ্ভুদ একটা হাসি দেয়।
__________________
সকালের দিকে প্রেমা সম্পূর্ণ রেডি হয়ে বের হয় বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে প্রিয়াও।দাদি যাবে না।উনার সেখানে ভালো লাগে না।বাধ্য হয়ে প্রেমা প্রিয়াকে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। সবার থেকে বের হয়ে বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে,সেই মুহুর্তে অভ্রের প্রবেশ।
অভ্রকে দেখে প্রেমার এবার অস্থিরতা বেড়ে যায়।এ্যাশ কালারের শার্ট,আর মুখটা সবসময়ের মতো ফ্রেস।যেটা দেখেই প্রেমার আরো বেসামাল অবস্থা।অভ্র প্রেমার দিকে না তাকিয়ে পাশ কেটে চলে যায়। প্রিয়ার হাত ধরে বলে উঠে,
“কিউটি! কেমন আছো?(অভ্র)
‘ভালো,আংকেল তুমি কেমন আছো?
‘ভালো। (অভ্র)
” অভ্র নাস্তা করেছিস? ( অভ্রের মা)
“হ্যাঁ করেছি,(অভ্র)
‘তাহলে বাবা প্রেমা আর প্রিয়াকে দিয়ে আয়,(মা)
কথাটা শুনার সাথে সাথেই প্রেমা কাঁপা গলায় বলে উঠে,’না আন্টি আমরা যেতে পারবো।’
কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভ্র বলে উঠে,
‘মা আমি দিয়ে আসছি, চলো কিউটি। (অভ্র)
প্রিয়াকে নিয়ে অভ্র চলে যায়। উপায় না পেয়ে প্রেমাও অভ্রের পেঁছন পেঁছন হাঁটা দেয়।
প্রিয়াকে পেঁছনে বসিয়ে দিয়ে অভ্র সামনে ড্রাইবারের পাশের সিটে বসে।আর প্রেমা চুপচাপ প্রিয়ার পাশে বসে যায়।কারো মুখে কোনো কথা নেই।প্রেমা অনেকবার অভ্রকে বাঁকা চোখে দেখেছে।কিন্তু অভ্রের কোনো হেলদেল নেই।সে ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত।
(চলবে) Tarin Jannat