#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩৫
গাঢ় কাজলমাখা চোখজোড়ায় অজস্র বৃষ্টির ধারা। ইতিমধ্যে চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। সমান তালে নাক টেনে যাচ্ছে প্রেমা। দৃষ্টি অভ্রের দিকে নিবদ্ধ। অভ্র যেদিকে যাচ্ছে প্রেমাও সেদিকে তাকাচ্ছে।তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটিকে একবার পরখ করে নেই।
“মিথ্যুক’ কোনো মেয়ের সাথে নাকি কথা বলেনি।(প্রেমা মনে মনে বলে)
হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে ধ্যান ভাঙে প্রেমার।
” কাঁদছো কেন প্রেমাপু।” (আদ্র)
আদ্রের কথায় প্রেমা অভ্রের থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রের দিকে তাকায়। দেখে আদ্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রেমা হালকা হেসে জবাবে বলে,
“কাঁদছি না তো,আচ্ছা বলো কেমন আছো?(প্রেমা)
” আমি ভনিতা পছন্দ করিনা,তাই সোজা উত্তর দিচ্ছি আমি ভালো নেই। (আদ্র)
প্রেমা আদ্রের কথায় হাসে।এবং জিজ্ঞেস করে,
“কেন ভালো নেই। (প্রেমা)
” কারণ তুমি এই বিয়েতে খুশী নও,আর আমিও চাই না আরিয়ান ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে হোক।তাই আমি ভালো নেই। (মৃদু কন্ঠে বলে আদ্র)
আদ্রের কথায় প্রেমা চোখ বড় করে তাকায়। সাথে অবাক হয়।আদ্র কেমন বড় মানুষদের মতো কথাবার্তা বলছে।যা প্রেমার হজম হতে সময় নিচ্ছে।
“তেমন কিছু না আদ্র।আমি..(প্রেমা)
” সময় এখনো আছে…(কথাটা বলে আদ্র ধুম করে প্রেমার পাশ থেকে উঠে চলে যায়)
প্রেমা হতবাক হয়ে আদ্রের যাওয়ার দিকে থাকে।আদ্র যেতে যেতে একবার ডানপাশে তাকায়।তারপর বড় একটা হাসি দিয়ে উপরে চলে যায়।
অনেক্ষণ ধরে সাইকান মুখ ভাড় একবার অভ্রের দিকে একবার অভ্রের সোজা দাড়ানো মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কার উপর রাগ করবে ভেবে পাচ্ছেনা। নিজের বন্ধু সমতূল্য ভাইয়ের উপর নাকি নিজের প্রাণপ্রিয় গার্লফ্রেন্ডের উপর। তবে মুখে কিছু উচ্চারণ করার সাহস নেই। হয় একজন পা থেকে জুতা খুলে ছুড়ে মারবে,আর অপরজন ব্রেক-আপ দিয়ে দিবে।
তাই নিরুপায় হয়ে চেয়ে আছে। কারণ অভ্রের কথায় জেরিন সাইকানের সাথে রিলেশন করতে রাজি হয়েছিলো।তল-বেতাল হলেই ভালাবাসার মানুষ হারাতে হবে।
” এতো হাইপার হচ্ছিস কেন?(অভ্র)
“কোথায়? (মুখ ভেংচি দিয়ে বলে সাইকান)
সাইকানের মুখ ভেংচি দেখে অভ্র আর জেরিন দুজনে হেসে উঠে।
ঘড়িতে নয়টা হওয়ার সাথে সাথেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। সবাই রেডি হয়ে চলে আসে। হলুদ মাখিয়ে গোসল আগে করানো হয়েছে।তাই এখন মেহেদী দেওয়া বাকি।এবং কেক কাটবে।
আরিয়ানের সাথে স্টেজে বসাতে চাইলে প্রেমা না করে দেয়। শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে। তাই আরিয়ানের মা মন খারাপ করে ফেলে।পরে প্রেমার শরীরের কথা ভেবে আর কিছু বলেনি।
সবাই বসে আছে আরিয়ানের সাথে স্টেজে উঠার জন্য।আর অন্যদিকে আরিয়ানের ফ্রেন্ডরা মিউজিক অন করে রীতিমতো নাচতে শুরু করে দেয়। সবকিছুতেই এখন প্রেমা বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তির একদম শেষ সীমান্তে পৌঁছে গেছে তবুও চুপচাপ বসে আছে সোফায়। অভ্রকেও দেখছেনা প্রেমা।নাহলে অভ্রের দিকে হলেও তাকিয়ে থাকতো। এ কাজটাই প্রেমা বিষণ তৃপ্তি পায় এখন।
দশটার কাছাকাছি। এখনো সবার স্টেজে উঠা শেষ হচ্ছেনা। প্রেমাক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মানুষ কয়বার কেক খাওয়ার জন্য স্টেজে উঠতে পারে এসব ভেবে। প্রেমার একপাশে নাতাশা।অন্যপাশে প্রিয়া বসে আছে। প্রেমার মা-বাবা আরিয়ানের মা-বাবার সাথে ব্যস্ত।
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে অভ্রকে বের হতে দেখে প্রেমা।
ফোনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ।আশেপাশে কোনো কিছুর খেয়াল নেই তার।প্রেমার দিকে তো এক সেকেন্ডের জন্যও তাকায়নি অভ্র।যা দেখে প্রেমার চোখে পানি চলে আসে আবারও। অভ্র ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে সিঁড়ি বেঁয়ে উপড়ের দিকে উঠতে শুরু করে।
প্রেমা অভ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর নাতাশার দিকে তাকায়।দেখে মনোযোগ দিয়ে নাচ দেখছে।
” ভাবি? (প্রেমা)
“হু বলো। (নাতাশা)
” মেহেদী পড়াবে কখন? (প্রেমা)
“এখন না,সাড়ে এগারোটার দিকে,অনুষ্টান শেষ
হোক (নাতাশা)
” আমার শরীর খারাপ লাগছে,একটু রেস্ট নিলে
ভালো লাগতো। যাবো?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় নাতাশা প্রেমার দিকে চোখ দেয়,তারপর কিছু একটা ভেবে বলে” ঠিক আছে যা।আমি ডেকে নিবো। “(নাতাশা)
প্রেমা অপেক্ষা না করে সবার দৃষ্টি অগোচরে অভ্রকে অনুসরণ করে উপরের দিকে চলে যায়। অভ্র রুমে প্রবেশ করার পরপরেই প্রেমা প্রবেশ করে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
এতো শব্দের মাঝে দরজা বাঁধার শব্দ অন্য কারো কানে না পৌঁছালেও অভ্রের কানে এসে ঠিকি পৌঁছেছে। প্রেমার দিকে না তাকিয়ে মৃদু হেসে অভ্র মনেমনে অভ্র বলে উঠে,
” পাখি এবার নিজ থেকে এসে ধরা দিয়েছে।”(অভ্র)
প্রেমা দরজা লাগিয়ে অভ্রের দিকে ফিরে তাকায়। দেখে অভ্র অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আজ যাই হোক অভ্রকে ওর মনের কথা বলবেই বলবে।যদি ফিরিয়ে দেয় তাহলে তাহলে বুঝিয়ে দেবে প্রেমা আসলে কী? কিন্তু এতো সাহস অভ্রের চোখের দিকে তাকালে নিমিষে উধাও হয়ে যায়৷ কীভাবে বলবে? শুরুটা কেমন হলে ভালো হবে ভেবে পাচ্ছেনা।
প্রেমা ক্ষ্রীপ্তগতিতে অভ্রের কাছে এসে দাঁড়ায়। এবং অভ্রের হাত ধরে। প্রেমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে তাকায়। প্রেমাকে দেখতেই অভ্রের বুক কেঁপে উঠে। বাইরে থেকে যতোই স্বাভাবিক দেখাক না কেন? প্রেমার সামনে অভ্র নিজেই বেসামাল হয়ে যায়।তার উপর আজকের সাজটাও অভ্রের মনমতন। অভ্র একবার প্রেমার চোখের দিকে তাঁকায়।লাল টকটকে হয়ে আছে এরপর চোখ সরিয়ে থুতনির দিকে তাকায়। রাগ লাগছে এবার অভ্রের।অতিরিক্ত সাজের কারণে তিলটা দেখতে পাচ্ছেনা। জোরপূর্বক নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় অভ্র।
” এখানে কী? (অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার রাগ আরো দ্বিগুন রুপ নেয়।
রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে মাথার উরনাটা টেনে মাটিতে ছুড়ে মারে।
এবার অভ্রের চোখ ছানাবড়া। হঠাৎ এক্সট্রা উরনাটা ফেলে দেওয়াই অভ্র ইতস্তত বোধ করে।
“লেহেঙ্গাটা তুমি পাঠিয়েছিলে তাই না? (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ডোন্ট-খেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে শুরু করে।
” আমি তোমার সাথে কথা বলছি,কথা
কান দিয়ে যায় না? (প্রেমা)
” বের হও আমার রুম থেকে,আমি ঘুমাবো।(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমার এবার কান্না চলে আসে। এ কেমন ছেলের জন্য কাঁদছে ও ভেবে পাচ্ছেনা।
” তখন তুমি ভাবিকে ইশারা করেছিলে
আমি দেখেছি অভ্র।(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র মৃদু হেসে প্রেমার দিকে
তাঁকায়,এবং বলে,
“তুমি দেখার জন্যেইতো ইশারা করেছিলাম, নাহলে কথাটা তো আমি ফোনে মেসেজ দিয়েও জানাতাম পারতাম।ইশারার কী দরকার ছিলো?
‘হাউ স্টুপিড ইউ আর।”(অভ্র)
অভ্রের কথায় এবার প্রেমা শান্ত হয়ে যায়।
নিজের কথায় নিজে লজ্জায় পড়ে যায়। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে অভ্রের দিকে তাকায়। দেখে অভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। এরপর হঠাৎ প্রেমার আদ্রের বলা একটা কথা মনে পড়ে যায়।অভ্র অপরিপক্ক বিছানা পছন্দ করেনা। তাই দ্রুত পা চালিয়ে প্রেমা বিছানার পাশে গিয়ে বিছানা এলোমেলো করে দেয়।এবং অভ্রের দিকে তাকায়।দেখে অভ্র ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রেমা দেখছে অভ্র তাতেও রেগে যাচ্ছেনা।
তাই ফুলের গহনাগুলে খুলার জন্য হাত দিচ্ছে। ঠিক তখনি অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে ফেলে,
“পাগলামি করার ইচ্ছে থাকলে,আমার রুমের বাহিরে গিয়ে করো! যাও,(অভ্র)
“যাবো না,তোমার ভাইকে বিয়ে করবো
না আমি। (প্রেমা)
“তো কাকে করবে? বি…য়ে..? (ভেঙে বলে অভ্র)
প্রেমা ঝাটকা মেরে অভ্রের হাত সরিয়ে দেয়,
তরপর বলে,
“তোমাকে, তোমাকে, তোমাকে করবো বিয়ে,তোমাকে চাই আমি। আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে নিজে ঘুমাতে যাচ্ছে।মিথ্যুক,জীবণেও নাকি কোন মেয়ের সাথে কথা বলেনি।অথচ আজ দাঁত সব বের করে হাসছিলে।মিথ্যুক!!
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে প্রেমা ধপ করে বিছানায় বসে যায়।এবং কাঁদতে শুরু করে। চোখের জল থামার নাম নিবে না হয়তো আর। এতো কষ্ট এর আগে হয়নি প্রেমার।যতটা অভ্রের ইগনোর করাতে হয়েছে।
প্রেমার কথা শুনে অভ্র একটা শান্তির শ্বাস ছাড়ে।ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা স্পষ্ট। নিজের অনুভুতির মাঝে আজ প্রেমার অনুভুতিও যোগ হয়েছে।জিতে গেছে সে। না প্রেমাকে হারিয়ে নয়।নিজের অনুভুতির সাথে ধরেছিলো বাজি।সেই বাজি তে জিতেছে সে।প্রেমাও তেমন ভাবে ওকে চাই যেমন ভাবে অভ্র প্রেমাকে চেয়ে এসেছে।
প্রেমার সোজা একটা চেয়ার নিয়ে বসে অভ্র।প্রেমা তখনো কান্নাতে ব্যস্ত। অভ্রকে বসতে দেখে প্রেমা অভ্রের দিকে তাঁকায়।
” শেষ??(অভ্র)
প্রেমা এবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় অভ্রের দিকে।
“কান্না শেষ নাকি বললাম?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা আরো জোরে কেঁদে উঠে,
প্রেমার কান্না দেখে অভ্র এবার জোরে হেসে দেয়।এবং একটা রুমাল বের করে প্রেমার চোখ আলতো করে মুছে দেয়।এরপর জিজ্ঞেস করে,
” সিউর! তুমি আমাকে..ই চাও?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চট করে উপর-নিচে মাথায় নাড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ।
“তাহলে কান্না থামাও,(অভ্র)
” আমার উত্তর? (প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র একবার প্রেমার দিকে তাকায়।
এরপর দাড়িয়ে যায়।ডান হাতের বাহু ধরে টেনে দাড় করিয়ে স্বজোরে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে প্রেমাকে।হঠাৎ অভ্রের এমন আচরণের জন্য প্রেমা প্রস্তুত ছিলো না। পরে বুঝতে পারে অভ্র তার উত্তর দিয়ে দিয়েছে। সব কথার উত্তর মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে দিতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। কিছু অভ্যক্ত কথা প্রকাশের মাধ্যম অন্যরকমও হয়।যেমনটা অভ্র তার উত্তর দিয়েছে প্রেমাকে। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় অভ্র বলে উঠে,”তোমার প্রতি আমার এই কঠিন অনুভুতির জোরেই আজ তুমি আমার কাছে,আমার বুকে,
ইউ আর মাই ওমেন,জাস্ট মাইন”(অভ্র).
(চলবে) Tarin Jannat