#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩৬
দু’জনের ঠোঁটেই লেগে আছে প্রশান্তির হাসি। কিন্তু প্রেমার কান্না থামার নাম নেই৷ ভয় পাচ্ছে।অভ্র আর ওর মধ্যে সব এখন মিটমাট। কিন্তু আরিয়ানের সাথে বিয়েটা কীভাবে ভাঙবে।ভেবে পাচ্ছেনা। কিন্তু অভ্র যে চুপ থাকার মতো মানুষ না সেটা ভেবে কিছুটা নিজেকে সামলায়।হঠাৎ প্রেমা অভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।ধাক্কা খেলেও অভ্র প্রেমার হাত ছাড়েনি। যার ফলে প্রেমা আবারও অভ্রের বুকে গিয়ে পড়ে।
“কী হয়েছে?(অভ্র)
” ইউ মিথ্যাুক! (প্রেমা)
“আমি কী করেছি। (অভ্র)
” তুমি বলেছিলে তোমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই
তাহলে ওই মেয়েটা কে?(নাক টেনে)
প্রেমার কথা শুনে অভ্র হেসে রসিকতার স্বরে বলে,
“আমার এক্স ছিলো।
প্রেমা সঙ্গে সঙ্গে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে।
” যাও তোমার এক্সের কাছে।
প্রেমা চলে যেতে চাইলে অভ্র হাত ধরে
আঁটকায়। এবং বলে,
“মজা করছি,আমার লাইফের ফাস্ট লেডি তুমি,
এবং লাস্ট লেডি তুমিই থাকবে।চিন্তা করো না।”
অভ্রের কথায় একটু স্বস্তি পাই প্রেমা। তাই অভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।প্রেমাকে রেখে অভ্র রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়।প্রেমা কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে যায়।লাইট বন্ধ করার কোনো কারণ ও দেখছে না। অভ্র ফোন বের করে নাতাশাকে একটা মেসেজ দেয়। এরপর ফোন পকেটে রাখে।প্রেমা আবছা আলোতে অভ্রের কান্ড দেখছে। অভ্র এসে প্রেমার হাত ধরে ব্যালকনির দিকে এগোয়। যাওয়ার পথে ব্যালকনির
লাইটটাও নিভিয়ে দেয়।
“লাইট বন্ধ করছো কেন?(প্রেমা)
” লাইট বন্ধ করে মানুষ কী করে?(মজা করে)
কথাটা বলে অভ্র ব্যালকনির দরজাটাও বন্ধ করে দেয়।
প্রেমা ভয়ে একটা ঢোক গিলে। প্রেমার ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে অভ্র আলতো হাসে। এবং বলে,
“রিলেক্স! নিরাপদ জায়গায় আসছি।যাতে
কেউ বিরক্ত না করে। ” (অভ্র)
“দেখো আমাকে সবাই খোঁজবে।আমি চলে
গেলে ভালো হবে।(প্রেমা)
” এসেছিলে কেন? আমি আসতে বলেছি?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা চুপ থেকে আমতা আমতা করতে
শুরু করে। ওদের দু’জনকে একসাথে দেখলে কেউ ভালো চোখে দেখবেনা।
“অভ্র প্লিজ আমি যাই,(প্রেমা)
অভ্র প্রেমার কথা কানে না নিয়ে বলে,
” বাইরে ভাবি..নাতাশা ভাবি দাঁড়িয়ে আছে।কেউ আসলে ভাবি রুমে চলে আসবে।তখন বলবো আমরা
আড্ডা দিচ্ছিলাম।দরজার লক খুলে দিয়েছি।(অভ্র)
অভ্র কথায় চমকে যায় প্রেমা।নাতাশা বাইরে
দাঁড়িয়ে। তারমানে সে সব জানে।
“ভাবি সব জানে,(প্রেমা)
” জানে, (অভ্র)
ব্যালকনির দক্ষিণ দিকে ফুলের বাগান।প্রেমার হাত ধরে টেনে নিচে বসে অভ্র। প্রেমার থেকে একটু দূরে অভ্র বসে। আঁধার গগনের দিকে চোখ দেয় অভ্র।
“তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম,আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস টেন এ পড়তাম। আরিয়ান ভাইয়ার সাথে সেদিন না গেলে হয়তো,(থেমে প্রেমার দিকে তাকায়)
অন্ধকারে প্রেমার ছায়া স্পষ্ট। অভ্র কথাটা অসম্পূর্ণ রেখে মৃদু হেসে প্রেমার হাতটা ধরে। চেপে ধরে বলে,
” আমি ঘুমাতে পারিনা,ঘুম হয় না আমার। বড়জোর দু’ঘন্টা ঘুমায়।কখনো কখনো সারারাত সজাগ থাকি। আজ ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাতে চাই আমি। (অভ্র)
“কেন ঘুমাতে পারো না? আর সারা রাত কীভাবে জেগে থাকো? আমার তো মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়।(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র ছোট করে শ্বাস ছাড়ে। মনের মধ্যে কষ্ট থাকলে কীভাবে ঘুম আসে।জানা নেই অভ্রের।
অভ্রের মৌনতায় প্রেমার আবার বলে উঠে,
” তুমি ঘুমাও তাহলে,আমি যায়।(প্রেমা)
“না, প্লিজ থাকো। আরেকটু, (অভ্র)
অভ্রের অনুরোধ ফেলতে পারেনা প্রেমা।
মাথা নাড়ায়। প্রেমার থেকে চোখ সরিয়ে অভ্র বলে,
” তোমার চুল দেখেই আমি সেদিন ঘায়েল হয়েছিলাম।
অভ্রের কথায় প্রেমা একটু নড়েচড়ে বসে,
এরপর চুলে হাত দেয়। এরপর ছোট করে বলে,
“ওহ, (প্রেমা)
” তারপর লাস্ট তোমার থুতনিতে থাকা তিল দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। (অভ্র)
ইতিমধ্যে প্রেমা লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে।এসব ডাইরেক্ট প্রশংসা ওর সহ্য হচ্ছে না।
তারপর কিছু সময় কেটে যায়।দু’জনে চুপ মেরে যায়।
নিরবতা ভেঙে প্রেমা বলে,
“কাল বিয়ে কীভাবে আটকাবে?(প্রেমা)
প্রেমার কথায় অভ্র প্রেমার দিকে তাঁকায় এবং বলে,
” কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করো,দেখতে পাবে।(অভ্র)
“মারিও না প্লিজ,এমনে অন্য উপায়ে আঁটকাও,(প্রেমা)
অভ্র হেসে বলে,
” না মারবো না। (অভ্র)
এরপর অভ্র দাঁড়িয়ে যায়,এবং প্রেমার হাত ধরে টেনে দাড় করায়। একটু ঝুঁকে প্রেমার কানের পাশে এসে মৃদু স্বরে বলে,
“মেহেদী পড়বা,ভালো কথা তবে দু’হাতে না,শুধু এক হাতের তালুতে,জাস্ট একটা ফুল আর ফুলের মাঝে যেনো আমার নামটা থাকে,(অভ্র)
” আরে একটু দিবো কেন? আর নাম দিলে তো সমস্যায় পরবো।কেউ যদি হাত দেখতে চাই তাহলে? (প্রেমা)
” সেটা তুমি জানো,বাট আমি আমার নাম দেখতে চাই।আমি আমার স্পর্শ ছাড়া অন্য কিছুর স্পর্শ ও সহ্য করবো না।(ব্যালকনির দরজা খুলতে খুলতে বলে অভ্র)
” চলো, (অভ্র)
প্রেমার উরনাটা মাটি থেকে তুলে প্রেমার
মাথায় পড়িয়ে দেয় অভ্র।
“যাও,ভাবির সাথে নিচে যাও,
” তু..তুমি? (প্রেমা)
অভ্র রুমের লাইট জ্বালিয়ে বলে,
“আমি এখানেই থাকবো,(অভ্র)
” আমার ভালো লাগবেনা তুমিও প্লিজ চলো,
প্রেমার কথায় কিছু একটা ভেবে মাথা নাড়ায় অভ্র,
যার অর্থ সে যাবে। অভ্র আগে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। তাই প্রেমা চলে যায়।অভ্র একটা কালো রঙের টি-শার্ট বের করে গায়ে দেয়। রুম থেকে বের হতেই প্রেমা নাতাশার মুখোমুখি হয়। লজ্জায় প্রেমা মাথা নিচু করে ফেলে। তাই নাতাশা হেসে বলে,
“বেশ ভালোয় জাদু করেছে অভ্র,নাহলে
এভাবে কেউ পাগল হয়?(নাতাশা)
” ধুর, চলো তো। (প্রেমা)
প্রেমা আর নাতাশা নিচে নেমে দেখে পরিবেশ আগের মতোই।সবাই সবার মতো ব্যস্ত। নাতাশা আর প্রেমা সোফায় বসে যায়।পাশে তাকাতেই দু’জনে চমকে যায়। প্রিয়া আদ্রের কোলে ঘুমোচ্ছে।আর আদ্র প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাতাশা আদ্রর কাছে গিয়ে বলে,
“আদ্র দাঁড়াও আমি ওকে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিচ্ছি।
নাতাশার কথায় আদ্র দাঁত কটমট করে তাঁকায় তবে মুখে কিছু বলতে পারেনি।
অভ্র রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে আসে। তারপর অভ্রর চোখ যায় ডানদিকে। সেখানে পিয়াস দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। অভ্র বাঁকা হেসে পেন্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে দিয়ে পিয়াসের দিকে এগোয়। পিয়াসের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় স্বজোরে বাহু দিয়ে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পিয়াস রেগে পাশে তাঁকায়। অভ্রকে দেখে আরো দ্বিগুন রেগে যায়। তখন অভ্র মিটিমিটি হেসে ঘাঁড় বাঁকা করে পিয়াসের দিকে তাঁকায়,
” উপ’স স…রি! আমি দেখিনি, ভাইয়া। (অভ্র)
পিয়াস রেগে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও চুপ মেরে যায়। নতুন আত্মীয়। এভাবে হুট করে কিছু বলা ভালো হবেনা।তাই নিশ্চুপ থেকে চোখ গরম করে অভ্রের দিকে তাঁকায়।অভ্র পিয়াসে রাগীমুখ দেখে দেখে লম্বা একটা হাসি দেয়।
সাড়ে এগারোটা হতেই নাতাশা প্রেমা মেহেদী পড়িয়ে দেয়।শুধু হাতের তালুতে। একটা ফুল,তার মাঝে অভ্রের নাম সুন্দর করে ছোট করে লিখে দেয়। মেহেদী দেওয়ার ফাঁকে প্রেমা বারবার অভ্রকেই দেখেছে।অন্যদিকে তাকানোর সময় ছিলোনা।
প্রেমার পর আরিয়ানকে মেহেদী পড়ায়।আরিয়ানের এক মেয়ে বান্ধবী। আরিয়ান প্রেমার পাশেই বসেছিলো। সেসময় একটুর জন্য অভ্র তাদের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো। অনেক শান্ত চাহনিতে।প্রেমা না বুঝলেও সাইকান বুঝতে পারে অভ্রের শান্ত দৃষ্টির মধ্যে কতোটা হিংস্রতা লুকিয়ে থাকে।যদিওবা প্রেমা এখনো অবধি অভ্রের সেই রুপের সাথে পরিচিত হয়নি।
বারোটায় অনুষ্ঠান শেষ যায়। আরিয়ানের ফ্রেন্ডরা চলে যায়। বাকিরা সবাই ঘুমানোর জন্য চলে যায়। প্রেমা চেঞ্জ করে বিছানার দিকে যাচ্ছিলো। তখনি দরজায় করাঘাত কনে ভেসে আসে। তাই প্রেমা বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলতেই প্রেমা ভ্রু কুঁচকে ফেলে,সামনে থাকা মানুষটিকে সে হয়তো আশা করেনি।
“আসবো? (জেরিন)
” হ্য হ্যাঁ আসেন। (প্রেমা)
“আমি কিন্তু তোমার ছোট আপু,তুমি বলতে পারো।
প্রেমা বিরক্তি চোখে হেসে মাথা নাড়ায়,
” আমাকে অভ্র পাঠিয়েছে তোমার সাথে থাকার জন্য।
অভ্রের কথা শুনে প্রেমা সচকিত চোখে জেরিনের দিকে তাকায়। তারপর স্পষ্ট স্বরে বলে ” অভ্র ”
জেরিন দরজা চেপে দিয়ে প্রেমাকে সহ টেনে বিছানায় বসে।এরপর বলে “সাইকানকে চিনো আপু?
” হ্যাঁ..(প্রেমা)
“আমি সাইকানের গার্লফ্রেন্ড।আমি, অভ্র, সাইকান সেম কলেজে,সেইম ক্লাসে। (মিষ্টি হেসে বলে)
এবার প্রেমা জেরিনের দিকে ভালো করে তাঁকায়।মোটামুটি সুন্দরই আছে।
” আচ্ছা আমি শুয়ে পড়ছি আপু,তুমিও শুয়ে পড়ো।
“আচ্ছা অভ্র কোথায়? ঘুমিয়েছে? (প্রেমা)
জেরিন প্রেমার দিকে তাঁকিয়ে বলে,
” জানিনা,তুমি গিয়ে দেখে আসতে পারো।(জেরিন)
জেরিনের কথায় কিছু একটা ভাবে প্রেমা।তারপর জেরিনের পাশে শুয়ে পড়ে।কালকের কী হবে কে জানে। চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে গিয়ে অভ্রের কথা মনে পড়ছিলো প্রেমার। ঘুমাতে পারছেনা।তাই শুয়া থেকে উঠে যায়। এবং রুম থেকে বের হয়ে যায়।
(চলবে)
গল্প ছোট হলে দুঃখীত!😓 Tarin Jannat
_______________