#বসন্তের_ফুল🌺🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট৩৭
আবছা আলোতে বসে আছে অভ্র। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে বুকের মধ্যে। সব রাগ আরিয়ানের উপরে হচ্ছে। আরিয়ানকে ইচ্ছে মতো পিঠাতে পারলেই অভ্র শান্তি পেতো। কিন্তু এখন তা এখন সম্ভব না।তাই পিঠানোর বদলে অন্যভাবে শাস্তি দিবে আরিয়ানকে।
” প্রেমা আমার,ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে শুধু আমার অস্তিত্বের বিচরণ হবে।(অভ্র)
ঘন শ্বাস নিয়ে বসা থেকে উঠে অভ্র। টেবিলের পাশে থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট নিয়ে রুম থেকে বের হয়।এবং আরিয়ানের রুমে চলে যায়।
অভ্র তার কাজ সমাপ্ত করে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।
-কাল আমাদের বিয়ে,নতুন জীবণ শুরু করতে যাচ্ছি আমরা। তুমি হ্যাপি তো?
-(হ্যাপি গোষ্ঠীরে কিলাই হালার-বেডা। হ্যােপি কি না এখন জিজ্ঞেস করতে আসছে,)
মনেমনে কথাটা বলে প্রেমা রাগে ফুঁসছে। তখন রুম থেকে বের হয়ে অভ্রের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াচ্ছিলো,ঠিক সেই মুহুর্তে আরিয়ান প্রেমার সামনে চলে আসে। এবং প্রেমার হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে যায়।ভাগ্য খারাপ হওয়ায় দৃশ্যটা অভ্রের চোখে পড়ে।যেটা অভ্র সহ্য করছিতে পারেনা সেটাই হয়েছে আজ।
-কি হলো কিছু বলছো না কেন?(আরিয়ান)
প্রেমা দাঁত কটমট করে আরিয়ানের
দিকে তাকিয়ে বছলে,
“-ভাবছি সত্যি বলবো নাকি মিথ্যে? (প্রেমা)
-মানে? সত্যি মিথ্যের কথা কেন আসছে?(আরিয়ান)
-” আপনি কোনটা শুনতে চান?(রেগে)
-” অবশ্যই সত্যিটা শুনতে চাই,
প্লিজ রাগ করো না(আরিয়ান)
-আমি সত্যিই হ্যাপি না,আপনাকে বিয়ে করার ইচ্ছেও নেই আমার।বাধ্য হয়ে করছি বুঝেছেন?(চেঁচিয়ে)
প্রেমা কথাটা বলে ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য দরজার কাছাকাছি চলে আসে। দরজা পার হতেই অভ্র প্রেমার হাত ধরে টেনে মুখ চেপে ধরে।এবং দরজার কোণায় গিয়ে নিজেদের আড়াল করে।
প্রেমার কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে থাকে।ভাবছে পিয়াস বলেছিলো প্রেমা মত দিয়েছে তাই বিয়ের কথা আগে বাড়িয়েছিলো।এখন প্রেমার কথা শুনে বেশ চিন্তায় পরে যায় আরিয়ান। এসব ভাবতে ভাবতে ছাদ থেকে প্রস্থান করে।
এভাবে টেনে কেউ মুখ চেপে ধরায় প্রেমা বিষণ ভয় পেয়ে যায়।আতংকে সর্ব শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠে প্রেমার।কিন্তু পরিচিত ঘ্রাণ নাকে আসতেই প্রেমার চোখেমুখে হাসির ভাবভঙ্গি ফুটে উঠে।কিন্তু মুখ অভ্রের হাত দ্বারা আবদ্ধ হওয়ায় সেই হাসিটা আর প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।তাই চুপ মেরে থাকে।প্রেমা আলতো করে নিজের হাতটা অভ্রের হাতের উপর রাখে। তখনি অভ্র তার হাত আলগা করে প্রেমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলতে নেয়।কিন্তু প্রেমা আটকায়।মুখের সাথে অভ্রের হাতটা চেপে ধরে আবারও।
প্রেমা নিজের প্রেমময় অনুভুতিতে ডুবে যাচ্ছিলো।কিন্তু অভ্রের সেদিকে হুস নেই। সে অপেক্ষায় আছে আরিয়ান যাওয়ার। আরিয়ান যেতেই অভ্র প্রেমাকে ছেড়ে দূরে সরে আসে। একবার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়। কারোছ উপস্থিতি আছে কি না। নিচ থেকে চোখ সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রেমার দিকে তাঁকায় অভ্র।
নিজের গরম নিঃশ্বাসের উত্তাপে নিজেই পুড়ে যাচ্ছে।তাহলে প্রেমা কীভাবে সহ্য করবে।এটা ভেবে নিজেকে শান্ত করা চেষ্টা করে।তার ক্রোধের সাথে প্রেমাকেও অভ্যস্থ হতে হবে। নীরব নিস্তব্ধতা ভেঙে অভ্র দূর থেকেই প্রেমার উদ্দেশ্যে মৃদু শব্দে বলে উঠে,
-প্রেমা এটা লাস্টবার।এবারের মতো ছাড় দিলাম।
-” আমি কী করেছি? (প্রেমাও মৃদু শব্দে জিজ্ঞেস করে)
-রুম থেকে বের হয়েছিলে কেন? কোনো প্রয়োজন ছিলো? আর থাকলেও আমি তো জেরিনকে পাঠিয়েছিলাম।তোমার প্রয়োজনটা জেরিনকে বলোনি কেন? বের হয়েছো কেন রুম থেকে? (অভ্র)
-ঘু…ঘুম আসছিলো না তাই তোমার কাছে যাচ্ছিলাম। (প্রেমার গাল ফুলিয়ে বলে)
প্রেমার কথা শুনে অভ্রের রাগ কমার
বদলে আরো বাড়ে।
“- মানুষ ভুল বলে না,মেয়েদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে।নাহলে তুমি রুম থেকে বের হতেনা।আমি বলেছি তোমাকে আমার কাছে আসলে তোমার ঘুম হবে।(অভ্র)
মন দিয়ে অভ্রের কথা শুনে প্রেমার আঁখিজোড়া ভিজতে শুরু করে দেয়।একরাশ অভিমান এসে ঝেঁকে ধরে।প্রেমা এতোসব ভাবেনি।ভালো লাগছিলোনা ঘুম আসছিলো না বলেই রুমের বাহির হয়েছিলো।কিন্তু এজন্য অভ্র ওকে এভাবে বকবে ধারনাও ছিলোনা।
হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ফেলে।অভ্রকে পাশ কেটে নেমে যেতে চাইলে অভ্র প্রেমার সামনে এসে দাঁড়ায়। এতোক্ষণের রাগ এখন উবে গেছে। আর যাই হোক প্রেমার অভিমান সে সহ্য করবেনা।
“-চলে যাচ্ছো? (অভ্র)
– নিশ্চুপ থাকে প্রেমা।
– ঠিক আছে যাও,আমি কাল সকালে চলে যাবো
এখান থেকে। বিয়ে করে নিও। (অভ্র)
অভ্র কথাটা বলে মিটিমিটি হেসে পেঁছন ফিরে চলে যাওয়ার জন্য। তখনি শার্টে টান অনুভুব করে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মৃদু হাসে অভ্র। ঘাঁড় বাঁকা করে পেঁছন ফিরে তাঁকায়।অভ্রের দৃষ্টিতে নিবদ্ধ হওয়ার আগেই প্রেমা সরে যায়।ঠোঁটে দু্ষ্ট হাসির রেখা। প্রেমার মজা করা দেখে অভ্র একটা শ্বাস ছাড়ে।প্রেমা যত দ্রুত রাগ হয় তত দ্রুত রাগ কমেও যায়। প্রেমার দিকে ফিরে অভ্র তার হাত প্রেমার চুলে চালান করে। নিভু স্বরে বলে,
-ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখেছিলাম, হাত খোঁপা কীভাবে করে শিখে নিয়েছি। শুধু তোমার জন্য।
বলেই অভ্র প্রেমার অগোছালো চুলের গুচ্ছ ধরে খোঁপা করে দেয়।
প্রেমার রুমে কাছাকাছি আসতেই অভ্র বলে উঠে,
– কালকের জন্য আইডিয়াটা কেমন?
-সুপার-ডুপার। (প্রেমা)
হেসে দেয় অভ্র। প্রেমাকে রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।এবং নিজে রুমের দিকে পা অগ্রসর করে।
যেতে যেতে অভ্র মনেমনে বলে উঠে,
-সত্যিটাকে মিথ্যেভাবে দেখানো হবে। উফ্ ভাইয়া আমাকে বিশ্বাস করাটা কী খুব জরুরি ছিলো?
কিন্তু আমি কি করতাম। “ইউ নোউ না? হাউ মাচ আই ওয়েন্ট হার?”
________________
সকাল ছয়টা। সবাই আজ তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়েছে।বিয়ে বাড়ির হবে সকাল থেকেই হৈ-চৈ এ ভরপুর।নানা রকমের খাবারের সুভাস-গন্ধ। এতোদিনের তুলনায় আজ গরমরে রেশ বেশি।এই মুছে তো আবার এই ঘেমে যাচ্ছে সকলে। আজকের গগনে কালো মেঘে ছেঁয়ে আছে। যেনো বৃষ্টি পড়ে বন্যা বয়ে আনবে।কিন্তু গরমের কেমন এমন ভাবনা কারো মনে আসছেনা। জড়ো হাওয়াও বইছে না।
প্রেমা আর জেরিন বসে গল্প করছে।পাশে প্রিয়া আর আদ্র। দু’গালে হাত দিয়ে প্রিয়াকে দেখতে ব্যস্ত আদ্র। আর প্রিয়া বারবার প্রেমার পেঁছনে লুকাচ্ছে। হঠাৎ প্রিয়ার লুকানো দেখে অাদ্র রেগে চেঁচিয়ে উঠে,
“-এই শু্টকি আরেকবার লুকালে ‘মামা উয়েফার’ দিবো না। বলে দিলাম। (আদ্র)
আদ্রের চিৎকারে প্রেমা আর জেরিনের কান যেনো ফেটে যাওয়ার উপক্রম।হতবাক হয়ে প্রেমা আদ্রকে জিজ্ঞেস করে,’ এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?”
এবার আদ্রও হকচকিয়ে যায়। আঁড়চোখে প্রিয়াকে দেখে নেয় একবার।এরপর বলে,
“বলছি আমার সাথে খেলার জন্য যেতে।প্রিয়া যাচ্ছে না।আমি কিন্তু রাগ করবো প্রিয়া।চলো,(আদ্র)
“প্রিয়ামণি আংকেলের সাথে গিয়ে খেলো।যাও,(প্রেমা)
“আমি যাবো কেন? আংকেলের গালপেন (গার্লফ্রেন্ড) আছে।তার সাথে গিয়ে খেলতে বলো।আমি যাবোনা প্রেমুফুফি। (প্রিয়া)
প্রেমা একবার প্রিয়ার দিকে একবার আদ্রের দিকে তাকায়।এবং বলে,
” দুজনে বের হও রুম থেকে। (প্রেমা)
প্রেমার ধমক শুনে আদ্র-প্রিয়া দুজনে পালিয়ে যায়।
ওদের কান্ডে প্রেমা-জেরিন দুজনে হেসে উঠে।
________
এগারোটা হওয়ার সাথে আরিয়ানের মা প্রেমা আর জেরিনকে পার্লারে যাওয়ার জন্য রেডি হতে বলে।
নিচে হলরুমে আসতেই প্রেমার চোখ পাগলের মতো অভ্রকে খোঁজতে শুরু করে।যেনো সেখানেই শ্বাস আটকে অন্তিম ঘটবে প্রেমার।অবশেষে অশান্ত দৃষ্টিতে শীতলতার ছোঁয়া নামে।অভ্রের স্নিগ্ধময় চেহারা দেখে।সদ্য গোসল সেরেছে অভ্র। চোখমুখে এখনো বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। চুল থেকেও টপটপ পানি পড়ছে।
অভ্র মৃদু হেসে প্রেমার দিকে তাকিয়ে ফোন দেখায়। প্রথমে প্রেমা অভ্রের ইশারা বুঝেনি তাই আবারও ফোন দেখায়।প্রেমা দ্রুত নিজের ফোন আনলক করে।তখনি দেখে অভ্রের মেসেজ। দ্রুত মেসেজটা পড়তে শুরু করে,
“অতিরিক্ত সাজার দরজার নেই। ওদের বলে দিও তোমার মুখে জ্বালা করছে। এলার্জিক প্রবলেম।”(সাথে একটা নাকের ইমুজি দেয়)
নাকের ইমুজি দেওয়ার মানে উদ্ধার করতে অক্ষম প্রেমা।প্রশ্নাত্বক দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকায়।তখনি অভ্র নিজের আঙুল দ্বারা নাক স্পর্শ করে।এবং মুচকি হাসে।
তখনি আবার মেসেজ আসে।তাতে লেখা ছিলো “পরে বলবো।”
প্রেমা এবার হেসে মাথা নাড়ায়। এরপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পার্লারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
_______________________
ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিয়ে বিয়ে সারার কথা থাকলেও,আরিয়ান বিয়ের কথা শুনে অনেকে চলে আসে। মেহমানে গিজগিজ করছে।আরিয়ানের মা খুশী হবেন নাকি রাগ করবেন ভেবে পাচ্ছেনা। কারণ উনার ভয় হচ্ছে প্রেমা যদি কোন তুলকালাম বাঁধায় তাহলে সব শেষ।
মেহমানদের সমাগম দেখে প্রেমার কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকায়।তবে চুপচাপ সোফায় বসে থাকে। অভ্রের কথায় নরমাল একটা সাজ দিয়েছে।কিন্তু সেই অভ্রকেই দেখতে পাচ্ছেনা।ইতিমধ্যে প্রশংসার সমুদ্রের ভাসছে প্রেমা।সবাই বেশ খু্ঁটিয়ে দেখছে প্রেমাকে।যার ফলে প্রেমা এখন একঝাঁক বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।
একটু বাদেই দুলার বেশে সিঁড়ি বেঁয়ে নেমে আসে আরিয়ান। তার পাশেই অভ্র।অভ্রকে দেখেই প্রেমার স্পন্দন কেঁপে উঠে। হৃদপিন্ডের দুরুদুরু শব্দে হারিয়ে যাচ্ছে প্রেমা। বহু কষ্টে নিজের দৃষ্টি সরায়। বধু বেসে বসে থাকা কোনো মেয়ে এভাবে যদি তাঁকায়।তাহলে লোকে গালমন্দ করবে।
আরিয়ান আসার পরেই কাজী সাহেব আসেন। আরিয়ান প্রেমার হাত ধরে স্টেজে নিয়ে যায়।তখন প্রেমা অভ্রের দিকে তাকিয়েছিলো একবারের জন্য। অভ্রের দৃষ্টি অন্যদিকে। যার অর্থ অভ্র এ দৃশ্য দেখতে চাই না।
কাজী সাহেব একবার প্রেমা এবং একবার আরিয়ানকে দেখে নেয়।এবং সাথে সাথে তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠলেন,
-এই বিয়ে হবে না। (কাজী সাহেব)
মুহুর্তে লোক সমাগমের মধ্যকার সব কথাবার্তা মৌনতায় রুপ ধারন করে। নীরব-নিস্তব্দতায় ছেঁয়ে যায়।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সকলে তাঁকিয়ে থাকে কাজী সাহেবের দিকে।
(চলবে)
Tarin Jannat
কেমন হয়েছে না বললে কাল দিবোনা😒