#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৫
সকালে রুমের দরজা নক করায় নিবিড় কানের মধ্যে একটা বালিশ চেপে ধরে ঘুম ঘুম চোখে,প্রিয়তা যাও তো কে এসেছে একটু দেখো।
প্রিয়তা উঠে বসে, আসছি!
প্রিয়তা শাড়ি ঠিক করে গিয়ে দরজা খুলে,দাদী তুমি?
-হ আমি।দাদু ভাই কি এহনো ঘুমাইতাছে?
-জ্বি।
-ওরে ডাইকা উঠাও আর বলো নিচে বাড়ি সাজানোর জন্য লোকজন আইয়া পড়ছে।
-আচ্ছা দাদী।
দাদী রুম থেকে একটু বের হয়ে আবার দাঁড়িয়ে, হেরে পিউ।
-জ্বি দাদী?
-হঠাৎ বাড়িতে পার্টির আয়োজন কইরলো কেন?
-দাদী ওইটা উনিই ভালো বলতে পারবেন।
-আইচ্ছা,এহন গোসল সাইরা নিচে আহো।
কথাটা শুনে প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে, মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।
প্রিয়তা দরজা লাগিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোয়ালে নিয়ে নিবিড়ের কাছে এসে,আপনি ঘুমাচ্ছেন দাদী ডেকে গেছে।
-চিন্তা নেই মাহিদ এখুনি এসে পড়বে।সে সব সামলে নিবো।
প্রিয়তা আর কিছু না বলে ওয়াশরুমের জন্য পা বাড়াতেই, নিবিড় এক হাত টেনে প্রিয়তাকে নিজের বুকের সাথে এনে,গোসল পরে করলে হয় না?
-না হয় না।দাদী এবার এসে দেখলে তোমাকেও কথা শুনাবে।
-কারো সেই সাহস নেই প্রিয়তা যে নিবিড়কে কথা শুনাবে।
-তা ঠিক।রাক্ষস কে তো সবাই ভয় পায়।
-কিন্তু তুমি পাও না।এইটা আমি ভালো করেই বুজি।
-কি করে বুজলেন?
-যদি তুমি ভয় পেতে তাহলে আমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া কখনোই দিতে না।তোমার চোখে যে ভয় সেটা হলো ভালোবাসার ভয়।
-হয়েছে, হয়েছে এবার উঠুন।
প্রিয়তা উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দরজায় শেফালীর ডাক শুনে,ভেতরে আসো।
-ভাবী আপনার চা আর ছোটো ভাইজানের কফি।
-টেবিলের উপরে রাখো।
নিবিড় শেফালীকে দেখে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
-ভাবী একখানা কতা কই?
-হুম বলো।
-ছোটো ভাইজান আপনার সাথে কথা বলে ঠিক মতো?
– হঠাৎ এই কথা?
-না উনারে আমি কহোনো দেহি নাই কারো সাথে তেমনডা মিশতে।আচ্ছা রাইতে আপনার লগে ভালো কইরা কতা কয়?
-শেফালী আপা,তোমার ছোটো ভাইজান আমার সাথে সব ঠিক আছে।এবং কি রাতেও কথা বলে।
তুমি যাও,আমি নিচে আসছি।
-আইচ্ছা! আমি গেলাম।
মাহিদ এসে নিচে ডেকোরেশনের লোকদের সব দেখিয়ে দিচ্ছে।বাড়িতে প্রচুর লাইটিং আর বেলুন ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে।রাতে সবার জন্য ডিনারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নাদিয়া মাহিদের জন্য জুস বানিয়ে আসতেই জুহি দৌড়ে এসে,আপু আমি নিয়ে যাই।তুমি গিয়ে অধরাকে সামলাও।
-এই নে।সাবধানে নিস।
জুহি মাহিদের পাশে দাঁড়িয়ে, আপনার জুস।
মাহিদ নিচের দিকে তাকিয়ে, আপনার কি প্রয়োজন ছিলো কষ্ট করার?
-কাছের মানুষদের জন্য একটু কষ্ট করলে কিচ্ছু হয় না।
কথাটা শুনে মাহিদ তাকিয়ে,আপনি যদি আমাকে কিছু বুজাতে চান তাহলে ভুল করবেন।আমি সে ধনের ছেলে নয়।
-ক্ষতি কি যদি আমি কিছু বুজাতে চাই?
-আমি কখনো স্যারর সাথে বেঈমানী করতে পারবো না।আপনি এইখান থেকে যান।আর আপনি আমার সামনে বেশি আসবেন না।আমার ভালো লাগে না।
জুহি কিছু না বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
মাহিদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,নিচে থেকে তারায় হাত বাড়ানোর স্বপ্ন আমার নেই।স্যার আপনাকে কতটা ভালোবাসেন সেটা তো আমি জানি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে,নিবিড়ের চাচা, চাচী,ফুফুরা সবাই এসে উপস্থিত হয়েছেন।নাদিয়া,জুহি সেজেগুজে নিচে নেমে এসেছে।
নিবিড়ের বড় ফুফু নাদিয়াকে বললো,হেরে নাদু।নিবিড় হঠাৎ করে সবাইকে আসতে বললো কেনো? ওই মেয়েটার জন্য এতো টাকা খরচ করে পার্টি দেওয়ার কি দরকার ছিলো?
-ফুফু ভাই শুনলে রাগ করবে।
নাদিয়া ওয়েটারদের ইশারা করলো সবাইকে ড্রিংক দেওয়ার জন্য।
সালমা বেগম এসে, কিরে জুহি তোর ভাবী এখনো নেমে আসেনি?
-না মা,ভাইয়াও তো আসেনি।মনে হয়ে তারা রেডি হচ্ছে।
মাহিদ অফিসের স্টাফদের নিয়ে চলে এসে সবার সাথে পরিচয় হচ্ছে।
নিবিড় সালমা বেগমের থেকে ডায়মন্ড সেটটা নিয়ে এসেছে বিকাল বেলা।
প্রিয়তাকে পরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে,কখনো নিজেকে ছোটো ভেবো না। সবসময় মনে রাখবে তুমি নিবিড়ের ওয়াইফ।তোমাকে যেই যাই বলুক না কেনো আমার ভালোবাসার কথা ভেবে সব মন থেকে মুছে ফেলবে।কথাগুলো বলতে বলতে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখো, কতটা সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায়?
-আপনাকেও কম সুন্দর লাগছে না।এখন কথা হচ্ছে আমার খুব টেনশন হচ্ছে।
-কেনো?
-আপনার মা এলে,,,,,
প্রিয়তাকে ছেড়ে, শেটাপ! মা এলে মানেটা কী? মা আমার বাড়িতেই আছে।নাজিফা বেগম বলো।
-ওই হলো।কিন্তু উনি আসলে সবার মনের অবস্থা কী হবে আমি সেটাই ভাবছি।
-তুমি শুধু বাবাকে বলবে তখন যেনো বাহিরে না আসে।বাকী নাটকটা সবাই দেখবে।
নিবিড় আর প্রিয়তা পাশাপাশি হয়ে একসাথেই নিচে নেমে এসেছে।নিবিড় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,আজকের এই পার্টি আমার ওয়াইফের জন্য।
সাংবাদিকরা সবাই নিবিড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
কেউ ছবি তুলছে কেউ ভিডিও করছে, কেউ লিখছে।
একজন সাংবাদিক বললো,শেষে তাহলে আপনার বিয়ের ফুল ফুটলো।কিন্তু আপনার মতো একজন বিখ্যাত লোক কাউকে না জানিয়ে কেনো?
-আমার বিয়ে নিয়ে অনেকের অনেক জল্পনা কল্পনা ছিলো।এইটা ঠিক আমি বিয়েটা করেছি কাউকে জানাতে পারিনি।আমার ওয়াইফ প্রিয়তা যে আমার বাবার পছন্দের মেয়ে।কিন্তু এখন আমার ভালোবাসা বলতে পারেন।এতোদিন আমি ব্যস্ততার কারণে সেইরকম কোনো আয়োজন করে জানাতে পারিনি।তাই আজ আমার কাছের এবং দূরের সবাইকে ইনভাইট করেছি এবং আমি আশা করছি আপনার শেষ পর্যন্ত আমার পাশে থাকবেন।
-স্যার আপনার ফ্যামিলি নিয়ে কিছু বলুন?
-আমার ফ্যামিলি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।কারণ প্রতিটি মানুষ আমার ভালোবাসার, আমার মা,বাবা, বোনেরা সবাই আমার আপন।
নিবিড়কে সাংবাদিকরা আরও অনেক প্রশ্ন করলো।সব উত্তর দিয়ে সবাইকে ড্রিংক দিতে বললো নিবিড়।
প্রিয়তা নিবিড়ের কানের কাছে এসে,কিন্তু উনারা তো এখনো এলো না?
-এসেছে।
-মানে? কোথায় উনারা?
একটু আগে গার্ড ফোন করেছে তারা গাড়ি থেকে নেমেছে।এখুনি,,,,,নিবিড় সদর দরজার দিকে তাকিয়ে, ওই যে এসে গেছে।
নাজিফা বেগম ভিতরে ঢুকে মোজাম্মেল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে,বাড়ি দেখেছো? কতো বড় বাড়ি। বাড়ির বাহিরে এবং ভিতরে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা।অবশ্য বড় বড় বিজনেসম্যানদের আলাদা একটা ব্যাপার স্যাপার।
নিবিড় মাহিদকে ইশারা করতেই ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেছে নিবিড়ের ঠিক করা লোকেরা।
সালমা বেগম নাদিয়া আর জুহি সবাই অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবাই আতংকিত হয়ে একে উপরের দিকে তাকাচ্ছে।
নিবিড় মাহিদকে আবারও ইশারা করলো,তার বোন আর মা ছাড়া আপাতত কেউ যেনো সামনে না আসে।
সাজিদ এসে, রাফিয়া, তোমাদের এতো লেট?
-আর বলো না।মা তো প্রিয়তার জন্য কিছু কেনাকাটা করছিলো।
মাহিদ এগিয়ে এসে,আসুন স্যারের ফ্যামিলি ওইদিকে।নিবিড় আর প্রিয়তা এগিয়ে যেতেই নাদিয়া আর সালমা বেগম আরও অবাক হলো। নাদিয়া সালমা বেগমের দিকে তাকিয়ে, ছোটো মা! তুমি কিছু দেখতে পাচ্ছো? ভাই এতোটা স্বাভাবিক কি করে?
ছোটো মা, আমাদের মা! সাথে,,,,,,,
সালমা বেগম নাদিয়াকে জড়িয়ে, তুই শান্ত হ। নিবিড় নিজেকে সামলাতে পারে তুই কেনো পারবি না?
-প্রিয়তা দাদী কোথায়?
-উনার রুমে।
-গুড।
নিবিড় মোজাম্মেলের দিকে হাত বাড়িয়ে, আপনাদের আসতে এতো দেরি?সমস্যা হয়নি তো?
নাজিফা বেগম আর মোজাম্মেল হোসেনকে সালমা বেগমের সামনে এনে,আমার মা,বড় বোন আর ছোটো বোন।
নাদিয়া নিবিড়ের দিকে কাঁদো কাঁদো গলায়, ভাই তুই ঠিক আছিস তো?
-একদম।
-ভাই তুই আমাদের মাকে কোথায়,,,,,,
-আপু,উনি হচ্ছেন সাজিদের হবু ওয়াইফের মা।
-মানে?
-একটু পর ভালো করে বুজবি।
মোজাম্মেল হোসেন হাসি মুখে বললো,তোমার বাবাকে তো দেখছি না?
-আপনি ঠিক বলেছেন আংকেল। বাবা! বাবা! আপনি এখানে আসুন।আপনার আদরের ছোটো ভাই আপনাকে দেখতে চাইছে।
কথাটা শুনে মোজাম্মেল হোসেন আর নাজিফা বেগম অবাক হয়ে একে উপরে দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়তা গিয়ে মোশারফ হোসেনকে এনে দাঁড় করাতেই নাজিফা বেগমের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাচ্ছে।নাজিফা বেগম বার বার ঢোক গিলে যাচ্ছে।
মোজাম্মেল হোসেন নাজিফা বেগমকে বাহুডোরে জড়িয়ে, আমরা আসি।
নিবিড় অট্র হাসি দিয়ে, আসবেন মানে? এখনো তো অনেক নাটক বাকী আছে। আপনার সাথে যে অনেক হিসাবে বাকী মিস্টার মোজাম্মেল হোসেন।
নাজিফা বেগমের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গুড়িয়ে পড়ছে।নিবিড়ের চাচী আর ফুফুরা এসে চারদিক থেকে ঘেরাও করে,একেকজন একেক রকমের কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।
নিবিড় অনেকক্ষণ পর চেঁচিয়ে বললো,স্টোপ প্লিজ স্টোপ।আজ এইখানে শুধু আমরা কথা বলবো।আর সবাই দেখবেন।
বাবা,আপনার কিছু বলার নেই?
মোশারফ হোসেন ভারী গলায় শান্ত হয়ে বললো,বাবা নিবিড় আমার কোনো অভিযোগ নেই। আজ তোদের যা করার কর।আমার এখানে কিছু বলার নেই।
নাজিফা বেগম নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে একটু এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে গাল ছুয়ে দিতেই নিবিড় হাত ধরে,আপনার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত দেওয়া? আপনি কী ভেবেছেন? আমি আমার বাবার মতো? আপনার সব ভুলে গিয়ে আপনাকে মা বলে স্বীকার করবো?
নাজিফা বেগম করুণ গলায় বললো,নিবি,,,,ড়।
-শেটাপ। আমার নাম ধরে ডাকার অধিকার শুধু আমার ফ্যামিলি লোকের।আপনার মতো চরিত্রহীন মহিলার না।
মোজাম্মেল হোসেন নাজিফা বেগমকে হাত ধরে কাছে টেনে নিতেই নাজিফা বেগম হাত ছাড়িয়ে, তুমি আমাকে ছাড়ো।আমার ছেলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর সে আমাকে চরিত্রহীনা বলছে শুধু তোমার কারণে। সেদিন তোমার ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি আজ আমি হাঁড়ে হাঁড়ে পাচ্ছি।আমার নাদু, নাদিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে, নাদু তুইও কি আমার কাছে আসবি না?
নাদিয়া নিবিড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে, ভাই এসব কি হচ্ছে আমাকে একটু বুজিয়ে বলবি? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি নারে ভাই।
নিবিড় নাদিয়াকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ছলছল চোখে,বোন তুই কাঁদিস না।আমাদের বাবা, মা সবাই আছে।কিন্তু এই মহিলা কিছুতেই আমাদের মা হতে পারে না।
নিবিড়ের বড় ফুফু এগিয়ে এসে মোজাম্মেল হোসেনের গালে দুই থাপ্পড় দিয়ে,কি করে পারলি এসব করতে? তোরা এতোগুলা লোককে কীভাবে ঠোকালি? ছোটো ছোটো দুইটা বাচ্চার কথাও কি সেদিন ভাবতে পারলি না?ছিঃ ছিঃ”
কোন মুখে আবার এখানে এসেছিস? তোদের লজ্জা করে না।
নাজিফা বেগম নিবিড়ের কাছে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে, তুমি আমার এতো কাছে গিয়েছিলে তবুও আমি তোকে চিনতে পারলাম না বাবা।আমায় তোরা ক্ষমা করে দে।
-ক্ষমা!আমার অফিসে স্টাফগুলোর যে মূল্য আছে আপনার তো সেটাও নেই।মাহিদ তোমার বেতন কতো?
-স্যার এক লক্ষ্য বিশ হাজার।
মাহিদের পাশে দুজন স্টাফ দাঁড়িয়ে আছে,নিবিড় তাদের উদ্দেশ্য করে, আপনাদের?
-স্যার এক লাখ করে।
নিবিড় এবার তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে এবার দেখুন মিস নাজিফা বেগম এদের যে মূল্য আছে আপনার তো সেটাও নেই।সেদিন আপনি আপনার চরিত্রটা কতো টাকায় বিক্রি করেছিলেন ওই লোকটার কাছে?
ওরা যে টাকা মাইনে পায় তার থেকেও বেশি?
নাজিফা বেগম নিবিড়ের মুখ থেকে এসব শুনে চুপ করো, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।তুমি চুপ করো।
-আপনার কী মনে হয়?এখানের লোকেদের কী বুজার বাকী আছে আপনার চরিত্রের কথা?আমার বাবার কী কমতি ছিলো আপনার কাছে? টাকা, সম্মান, নাকি ভালোবাসা?
-নিবিড় আমি ভুল করেছি বাবা।আমাকে তোরা সবাই ক্ষমা করে দে।
-ক্ষমা! কিসের ক্ষমা? কাজের মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার? নাকি একটা মানুষকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে যাওয়ার?নাকি দুইটা বাচ্চার কাছ থেকে তাদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার?
আপনিই বলুন আপনাদের কিসের ক্ষমা করবো?
আরে আপনারা যে বিয়েটা করেছেন সেটাও তো বৈধ না।কারণ আমার বাবা তো আপনাকে ডিভোর্সই দেয়নি।তাহলে আপনার আর ওই লোকটা যে সন্তান রাফিয়া সে তো অবৈধ সন্তান। যাকে নিচ থেকে বলা যায় জারজ সন্তান।
রাফিয়া নিবিড়ের কথা শুনে, চিৎকার দিয়ে,না”মা,, ও মা। তুমি চুপ করে আছো কেনো? আমি সত্যিই জারজ সন্তান? সাজিদ তোমার বন্ধু কী বলছে? প্লিজ উনাকে চুপ করতে বলো।আমি অনেক সয়েছি এতোক্ষণ। আর পারবো না।আমাদের এইভাবে ডেকে এনে সবার সামনে অপমান করার উনার কোনো অধিকার নেই।দুইদিনের পরিচয় উনি আমার মাকে এসব বলতে পারেন না।আমার মা কখনো কোনো অন্যায় করতে পারে না সাজিদ।প্লিজ উনাকে চুপ করতে বলো।সাজিদ চুপ করে আছে।রাফিয়াকে বাহুডোরে জড়িয়ে,নিবিড় মিথ্যা বলে না রাফিয়া।তোমার মাই নিবিড়ের নিজের মা।
রাফিয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সাজিদের দিকে।কিছু বলতে পারছে না সে।
নিবিড় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,আমার পরিবারের সকলেই এইখানে আছেন শুধু একজন মানুষ ছাড়া। সে হলো আমার দাদী।আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের এইভাবে ডেকে এনে হেনস্তা করার জন্য।আমাদের সমাজে এমন অনেক ঘটনা ঘটে আমাদেরই জানতে অজান্তেই।আমাদের দেখার বাহিরেও যে কিছু আছে সেটাও আমাদের বুজা উচিত। আমার মতো যারা চোখের সামনে কি ঘটেছে সেটা নিয়েই জীবনের পাড়ি দেওয়াটা সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভুল।আমি সেসব মায়েদের বলবো যারা সামান্য সুখের জন্য নিজের সন্তান্দের ছেড়ে আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে যান আপনি কী একবারও ভেবে দেখেছেন এই সন্তান বড় হলে আপনাকে কোন চোখে দেখবে? আপনার ব্যাপারে ধারণাটা কী জন্মনিবে?
আপনি কী সুখী হতে পারবেন আপনার স্বামী সন্তান্দের কষ্ট দিয়ে? উনাকে যদি আমি আজ এইখানে নিয়ে না আসতাম সারাজীবন উনি সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতেন।এবং উনার ছোটো সন্তানের কাছেও। সেও তো জানতো না তার মা বাবা কতোটা র্নিলজ্জ আর বেহায়া। আমি মনে করি আজ সবার সামনে যে অপমান আর লাঞ্চিত হয়েছেন এরচেয়ে বড় শাস্তি আর পৃথিবীতে নেই।যতদিন বেঁচে থাকবে এই সমাজের মানুষ আপনাদের কোন চোখে দেখবে একটু চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন।
নাজিফা বেগম চোখ মুছে নিবিড়ের মাথায় হাত দিয়ে,আমি তোমার মা হওয়ার যোগ্য নয় বাবা।আজ তোমার কথায় সত্যিই আমি লজ্জিত। সেদিনের ভুলের জন্য আজ আমায় এইভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আমি ভাবিনি। তুমি আমায় চোখ খুলে দিয়েছো।তবে সেটা অনেক দেরী হয়ে গেছে।তুমি আজ যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো বাবা।
-আপনার মতো করে আমার বাবা আর মা আমাকে বানায়নি।মাকে কাকে বলে জানেন?
নিবিড় সালমা বেগমকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে,এইতো মা।যার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালেই পৃথিবীর সব ভুলে থাকা যায়।মা আমি তোমাকে এতোক্ষণ অনেক কষ্ট দিয়েছি তাই না?
-না বাবা আমার কোনো কষ্ট হয়নি।আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া তোর মতো সন্তান আমাকে দিয়েছে।
নিবিড় রিসাদকে ডেকে, সবার খাবারের ব্যবস্থা করো।আমি চাই না আমার বাড়ি থেকে কেউ খালি মুখে বাড়ি ফিরে যাক। নাজিফা বেগমের দিকে আঙ্গুল তুলে, আর হ্যাঁ কখনো আমার পরিচয় আপনি দিবেন না।এতোদিন যেভাবে ছিলেন সেভাবেই থাকবেন।আপনাকে এখানে এনেছি শুধু আমার ফ্যামিলির লোকদের দেখানোর জন্য।যারা এতোদিন ঠোকতে ঠোকতে এইখান পর্যন্ত এসেছে।বোন এখন তুই ঠিক আছিস? আমি কিন্তু এখনো ঠিক আছি।
নাদিয়ার গাল বেয়ে বেয়ে চোখের পানি নিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়লো।
নিবিড় আর কাউকে কিছু না বলে উপরে নিজের রুমে গিলো।
প্রিয়তা পিছন পিছন গেলেও সে পৌঁছানোর আগেই নিবিড় দরজার ভিতর থেকে আটকিয়ে দিলো।
সবাই যে যার মতো করে বিদায় নিয়ে চলে গেছে।রাফিয়াকে সাজিদ নিজের সাথে করে নিয়ে গেছে।নাজিফা বেগম আর মোজাম্মেল হোসেন কেউ কারো সাথে একটাও কথাও বলেনি।যে যার মতো করে বাসায় এসে নির্বিকার হয়ে আছে।
সবাই এসে নিবিড়ের দরজা ধাক্কাছে।রিসাদ দূরে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা কান্না করতে করতে, আপনি প্লিজ দরজাটা খুলুন।আপনি না বললেন আপনি নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছেন? তাহলে এখন কেনো এমন করছেন?
মোশারফ হোসেন শান্ত গলায় বললো,আমি জানি বাবা,তুই তোর মাকে অনেক ভালোবাসিস।তুই মন থেকে যে কথাগুলো বলিসনি আমি তো জানি।তুই যদি চাস আমি নিজে গিয়ে ওদের এই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
চলবে,,,,,,,