#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৬
নিবিড় দরজা খুলছে না দেখে সালমা বেগম সবাইকে থামতে বললেন।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,তোমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যাও।আমার ছেলে এতোটা অবুঝ নয় উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে।ওর রাগ কমলে ও নিজে থেকেই দরজা খুলে দিবে।প্রিয়তা তুই আজ পাশের রুমে ঘুমা,একদিনে কিছু যায় আসবে না।
সবাই সালমা বেগমের কথা শুনে যেই যার রুমে চলে গেলো।কিন্তু প্রিয়তা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ যেতেই প্রিয়তা পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।মা সত্যিই বলেছে নিবিড়ের যতক্ষণ না রাগ কমবে এইভাবেই দরজা বন্ধ করে থাকবে।এরচেয়ে ভালো আমি পাশের রুমেই ঘুমাই।
ভোরের সূর্যের আলো চিকচিক করতেই প্রিয়তা চোখ খুলে নিজেকে নিবিড়ের বুকের সাথে লেগে থাকতে দেখে ধড়পড় করে উঠে বসলো।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা বন্ধই আছে তাহলে আমি এইরুমে কীভাবে এলাম? নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে আরও অবাক হয়ে সবগুল জুয়েলারি খুলে রাখা পাশে ল্যাম্প বক্সের উপরে।তারমানে রাতে নিবিড়ই তাকে এইরুমে নিয়ে এসেছে।কিন্তু কখন এনেছে যার কারণে আমি একটুও টের পাইনি।
নিবিড়ের দিকে অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে,আপনি বড়ই আজব মানুষ। এতো রাগ এতো অভিমান কিন্তু ভালোবাসাটাও যেনো কমতি নেই।
প্রিয়তা উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রিসাদকে রুম থেকে বেরুতে দেখে প্রিয়তা তড়িঘড়ি করে নিচে নামতেই রিসাদ পিছন থেকে হাত ধরে ফেলে।প্রিয়তা সামনে ফিরে,হাত ছাড়ো রিসাদ সবাই এখন উঠে আসবে।
-তাতে কী হয়েছে? আমরা একটু কথা বলতেই পারি তাই না?
-না পারি না। নিবিড় এখন উঠে আসবে।যদি এসে তোমাকে আর আমাকে এইভাবে দেখে তাহলে বুজতে পারছো কী হবে? তোমার ভালোবাসা এখুনি গুজিয়ে দিবে।আর আমাকে নিয়ে এতোদিন যা প্ল্যান বানিয়েছো সবগুলোতে এক নিমিষেই পানি ঢেলে দিবে।
প্রিয়তা কথাটা বলে রিসাদের হাত ছাড়িয়ে রিসাদের পিছনে তাকিয়ে দেখে নাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে, ধীর গলায় বললো আপু,,,,!
নাদিয়া গম্ভীরমুখে প্রিয়তার কাছাকাছি এসে প্রিয়তার গালে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিয়ে,এতোবড় বিশ্বাস ঘাতকতা করলে? আমার ভাই তোমাকে কিসে কম রেখেছে আমায় একটু বলবে?
নাদিয়ার চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে বেরিয়ে এলো।
মোশারফ হোসেন আর সালমা বেগম এসে,কী হয়েছে নাদিয়া?
-কী হয়নি বাবা? দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষে নিচ্ছে আমার ভাই।তোমরা বলতে না প্রিয়তা তোমদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।সব ছিলো তো এই মেয়ের অভিনয়।
রিসাদ নাদিয়ার বাহুডোর জড়িয়ে, নাদু কী বলছো? চুপ করো।আমি তোমায় বুজিয়ে বলছি।
-কী বুজাবে তুমি আমায়? আমার নিজের চোখে যা দেখলাম তারপরও কি কিছু বলার আছে? বলো তুমি? এই মেয়ে তুমি আমার এতো বড় সর্বনাশ করার আগে আমায় খুন করলে না কেনো?
কথাটা বললেই নাদিয়া প্রিয়তার গালে আরেকটা থাপ্পড় দিতেই নিবিড় এসে হাত ধরে,তুই আর একটা থাপ্পড়ও আমার স্ত্রীর গায়ে দিবি না।
কথাটা শুনেই প্রিয়তা কান্নাজড়িত চোখে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। নাদিয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে, ভাই,,,,,!তুই জানিস না তোর বউ আমার কতবড় ক্ষতি করেছে।
এই মেয়েটা রিসাদকে কি বলে জানিস?রিসাদ নাকি ওকে ভালোবাসে আর তুই জানতে পারলে নাকি ওদের ভালোবাসায় পানি ঢেলে দিবি।ওদের সব প্ল্যান নাকি নষ্ট হয়ে যাবে।
কথাটা শুনেই প্রিয়তা নিচের দিকে দৌড়ে নেমে যেতেই মোশারফ হোসেন সামনে দাঁড় করিয়ে নাদিয়া কী বলছে এসব?
প্রিয়াতা কোনো কথা বলছে না।নিবিড় নেমে এসে,প্রিয়তা!আপু যা বলছে সব সত্যি? প্রিয়তা আমি জানি তুমি আমায় ঠকাতে পারো না।তোমার চোখে আমার জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি সেটা মিথ্যা হতে পারে না।প্রিয়তা তুমি চুপ করে থেকো না।
নাদিয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ও কী বলবে ভাই? ওর কী বলার মতো কিছু আছে?
আমি তো নিজের কানে যা শুনেছি এরপরেও এই মেয়ে মিথ্যা বলবে কী করে?
-এনাফ আপু।আমি প্রিয়তার মুখ থেকে শুনতে চাই।
কথাটা বলতেই রিসাদ মনে মনে ভাবলো,আমি যদি চুপ করে থাকি তাহলে আমি আজ প্রিয়তাকে হারাবো।প্রিয়তাকে যেই করে হোক এই বাড়ি থেকে বের করতে হবে।রিসাদ নাদিয়ার হাত ধরে,নাদু আমি প্রিয়তাকে অনেক বুজিয়েছি।আমাদের এই সম্পর্কটা হয় না।কিন্তু প্রিয়তা বললো,নিবিড় নাকি তাকে সারাক্ষণ বকাবকি করে,রাগ দেখায়।এইরকম উটকো মেজাজী ছেলের সাথে নাকি সে সংসার করতে চায় না।সে আরও বললো,নিবিড়কে শুধু ভালোবাসে তার টাকার কারনে না হলে এইরকম একটা ছেলের সাথে জীবনেও সংসার করতো না।
আমাকে বললো,সে নাকি আমাকে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই ভালোবেসে পেলেছে।তোমার প্রতি আমার যে ভালোবাসা সেটা দেখে নাকি ওর খুব হিংসা হয়।
নাদিয়া এসব শুনে,দেখেছিস ভাই এরপরও বলবি এই মেয়ের থেকে কিছু শুনার বাকি আছে?
মোশারফ হোসেন বুকের ব্যাথা বেড়ে যেতেই সালমা বেগম নিয়ে সোফায় বসিয়ে, জুহি তোর বাবার ঔষধগুলো নিয়ে আয়।
নিবিড় প্রিয়তার দিকেই তাকিয়ে আছে।তার একেকটা নিশ্বাস যেনো ভারি পাথরে পরিনত হয়েছে।কিন্তু প্রিয়তার চোখের পানি বলছে অন্য কথা।প্রিয়তা কখনো মিথ্যা বলে না।প্রিয়তা প্লিজ যা ঘটেছে তুমি সব বলো! আমি শুনতে চাই প্রিয়তা।কেনো চুপ করে আছো? আমি তো মুখে ফুটে কিছু বলতেও পারছি না। তুমি কিছু বললে আমি তোমার হয়ে বলতে পারি।প্লিজ কিছু বলো।
নিবিড় মনে মনে কথাগুলো বলে যাচ্ছে।
নাদিয়া নিবিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে, কিরে ভাই? তুই বল,আমার কী এই বাড়িতে থাকা আর সম্ভব? মা অন্যায় করেছিলো বলে তুই সবার সামনে শাস্তি দিয়েছিস।বাবারও ধৈর্য্য ধরার শক্তি ছিলো তাই ধরেছে।কিন্তু আমি? ভাই আমার কোনোটাই নেই।আমি বাবার মতো এতো দয়াবান হতে পারবো না।আমি পারবো না আমার মেয়েকে বাবা হারা করতে। আমি পারবো না রিসাদকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য জীবন পার করতে।
নাদিয়া চিৎকার করে কান্না করতে করতে নিবিড়ের বুকের সাথে মিশে গেলো।
নিবিড় নাদিয়াকে জড়িয়ে শুধু প্রিয়তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
জুহি মোশারফ হোসেনকে ঔষধ খাইয়ে প্রিয়তার কাছে এগিয়ে এসে,ভাবী তুমি কিচ্ছু বলবে না? ভাইয়ার কথাটা একবার ভেবেছো? ভাইয়া কতটা কষ্ট পাচ্ছে? সালমা বেগম প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে, আমার ছেলেটাও রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষ।ও কোনো রোবট নয় যে যা ঘটে যাক না কেনো কষ্ট হবে না।দুইদিন হলো না ছেলেটা একটা পাড়া না কাটাতেই তোরা এতোবড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে বসে আছিস।
প্রিয়তা তুই কেনো চুপ করে আছিস? আমার ছেলেটার মুখের দিকে একবার তাকা? দেখ সে তোর মুখ থেকে কিছু শুনার আশায় তোর দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, আপনি আমায় ক্ষমা করে দিন নিবিড়। আমি যা বলতে চেয়েছিলাম সেটা অনেক দেরী হয়ে গেছে। আমি যদি এখন কিছু বলি আপনার বোন বাঁচবে না।হয়তো খারাপ কিছু করে বসতে পারে।কারণ আপু যে রিসাদকে অনেক ভালোবাসে,বিশ্বাস করে।আমি তো জানি আপনি আপনার বোনকে কতটা ভালোবাসেন।আপুর কিছু হলে যে আপনি বাঁচবেন না।সেটা আমি ভালো করেই জানি।এরচেয়ে ভালো আমি পর, পর হয়েই থাকি।জানি না আজ আমার ভাগ্যে কী আছে।যদি খারাপ কিছুও হয় তবুও দূর থেকে তো জানবো আপনারা ভালো আছেন।এমনি তে তো এই বাড়িতে আমার সময় আর বেশি নেই।মাত্র দুই মাস।দুই মাসের জন্য আপনার ফ্যামিলির মাঝে কোনো ফাঁটল ধরুক আমি চাই না।
আমাকে তো চলেই যেতে হবে আজ নয়তো কাল।কিন্তু আপুর ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস কমে যাক আমি চাই না।হয়তো আপুও আমার কথা বিশ্বাস করবে না। মাঝ থেকে আপনাদের ভাই বোনের সম্পর্ক আমার জন্যই নষ্ট হয়ে যাবে।এরচেয়ে ভালো আমার চুপ করে থাকাটাই।
নিবিড় নাদিয়াকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে, আমার চোখের দিকে তাকাও।
প্রিয়তা নিজের চোখের পানি মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় ধমক দিয়ে,কী হলো তাকাও বলছি!
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে তাকাতেই,তুমি বলো এইসব কিছু মিথ্যা। বলো প্রিয়তা সত্যিটা কী? আমার কেনো মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হতে পারে না।
নিবিড়ের দাদী আর তনুসা নিজেদের রুম থেকে বেরিয়ে এসে দাদী বলতে লাগলো,ছিঃ ছিঃ,শেষে কিনা এইসব দেখবার জন্য বাঁচাইয়া রাখলো আল্লা।
নিবিড় দাদীর কথায় কিছু না বলে, প্রিয়তা প্লিজ আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।তুমি জানো না আমি এখন কী করতে পা,,,,,,,,,
প্রিয়তা চিৎকার দিয়ে,কী করবেন আপনি? মেরে ফেলবেন আমায়? তাহলে মেরেই ফেলুন।এই ছাড়া আপনি কি করতে পারেন? ওওও আমি তো ভুলেই গিয়েছি, আপনি তো ইসতিয়াক ইসলাম নিবিড়, একজন বিখ্যাত বিজনেসম্যান। যার কথায় সবাইকে উঠতে হয় বসতে হয়। সবাইকে আপনি চাকর বানিয়ে রাখতে চান।নিজেকে আকাশ সমান বসিয়ে রেখেছেন এবার একটু নিচে নামুন নিবিড় সাহেব।আর কত উপরে বসে থাকবেন, পরের উপরে হুকুম চালাবেন? আপনি কী ভাবেন সবাই আপনাকে ভয় পায়? না আমি অন্তত পাই না।কারণ আমি আপনাকে রাক্ষস ছাড়া কিছুই ভাবি না।
নিবিড় প্রিয়তার বাহুডোর ঝাঁকিয়ে,তাহলে এতোদিন তোমার সব মিথ্যা ছিলো? বলো তুমি? আমি যে তোমাকে ভালোবেসেছি তাও কি মিথ্যা? সব বাদ দিয়ে দিলাম,কাল রাতে যে তোমাকে পাশের রুম থেকে কোলে করে নিয়ে এসে নিজের বুকে জায়গা দিলাম সে ভালোবাসাটুকুও মিথ্যা?
– হ্যাঁ সব মিথ্যা মিথ্যা। আপনি নিজের শরীরের জ্বালা মিটিয়েছেন আমাকে দিয়ে।দিনের পর দিন আমাকে ব্যাবহার করেছেন।কথাগুলো বলতেই নিবিড় প্রিয়তার গালে সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরে চোখ বন্ধ করে আছে।মোশারফ হোসেন আর সালমা বেগমও চোখ বন্ধ করে নিজেদের চোখ মুছচ্ছে।
নাদিয়া নিবিড়ের কাছে এগিয়ে এসে,ভাই ওকে আর মারতে হবে না।আমি চলে যাচ্ছি।আমার ছোটো বাড়িটাই আমার ভালো।আমার কপালে যা আছে তাই হবে।তবুও আমি রিসাদকে হারাতে পারবো না।
নিবিড় নাদিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে,তুই কোথাও যাবি না আপু।যার কারণে এতো প্রবলেম সেই এই বাড়ি থেকে চলে যাবে।আমার বাড়িতে কখনো বেঈমানের জায়গা নেই।যে ভালোবাসার মূল্য দিতে যানে না তাকে আমি এইবাড়িতে কিছুতেই দেখতে চাই না।
প্রিয়তাকে বিড়বিড় করে বললো,আমি আমার শরীরের জ্বালা মিটেছি তোমাকে দিয়ে? আমি যদি তাই করে থাকি তাহলে একি অন্যায় তুমিও করেছো।তুমি আমার ফ্যামিলির সামনে যে ছোটো আমায় করেছো তার কনো ক্ষমা নেই।
নিবিড় কথাগুলো বলে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।নাদিয়াও রুমে যেতেই রিসাদও পিছন পিছন চলে গেলো।একে একে সবাই চলে গেলেও শেফালী প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে, ভাবী! তুমি মিথ্যা কইলা কেন? ওই লোকটা যে তোমারে মাঝে মাঝে বিরক্তি করে তুমি কইলা না কেন।
-শেফালী আফা,,,,,
-ভাবী আমি সব বুইজা ফেলাইছি আগেই।এই লোকডা পাই সময় তোমারে এইটাওইটা বইলা ভয় দেকাইতো।আর তুমি কাউরে কিছু কও নাই।সবাইরে না কইতা ছোটো ভাইজানরে তো একখান বার কইতা?
-শেফালী আপা।আমি যেদিন প্রথম তোমার ভাইজান রে বলছি,সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।কিছু শুনতে পায়নি।
পরে যখন বলতে চাইছি সেদিন শুনলাম তোমার ভাইজান রিসাদকে পুরোনো অফিসের এমডি বানিয়েছে।তখন বললে নিবিড় বলতো আমি ওর বোনের ভালো চাই না তাই এসব বলছি।আর আমার হাতে তো কোনো প্রমাণ ও নেই ওকে দেখাবো।
-এখন কি করবা ভাবী? সত্যি সত্যি চইলা যাবা?
-এইছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
-তয়ে কই যাইবা? বাপের বাড়ি?
-জানি আপা।তোমার তো একখান আশ্রয় আছে।আমার সেটাও নেই।মায়ের কাছে গেলে থাকতে দিবে কিনা সেটা আমি জানি না।তবে ওই বাড়ি ছাড়ে দেওয়া ছাড়া উপায়ও নেই।
প্রিয়তা ধীরে ধীরে রুমে গিয়ে দেখে নিবিড় ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দিয়ে।
প্রিয়তা ব্যাগ নিয়ে নিজের কয়েকটা শাড়ি আর কয়েকটা জামা গুছিয়ে নিয়েছে।
নিবিড় প্রিয়তার আলমারি খোলা আর বন্ধ করার শব্দ পেয়ে চোখ খুলে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা ব্যাগ হাতে নিয়ে নিবড়ের সামনে দাঁড়িয়ে, ক্ষমা করে দিবেন আমায়।নিজের খেয়াল রাখবেন।তনুসা তো এখনো আছে পারলে বিয়েটা করে নিন।আপনার ইচ্ছে হলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন, আমি সাইন করে দিবো।
নিবিড় চুপ করেই আছে।
-ভালো থাকবেন।আজ থেকে কেউ আপনাকে আর বকবক করে জ্বালিয়ে মারবে না।আপনারও বলতে হবে না।প্রিয়তা প্লিজ বকবকানি বন্ধ করো।
বেশি রাত করে অফিসের কাজ করবেন না।
-শেটাপ।তোমার কাছ থেকে কোনো পরামর্শ শুনতে চাই না।
প্রিয়তা কিছু বললো না।চোখ মুছে দরজা পর্যন্ত যেতেও নিবিড় আবার বললো,প্রিয়তা এখনো সময় আছে সত্যিটা বলার।তুমি শুধু একবার বলো সব মিথ্যা রিসাদ যা বলেছে।
প্রিয়তা কিছু না বলে ঘনঘন পায়ে হেঁটে চলে এলো নিচে নেমে।নিবিড় দীর্ঘশ্বাস পেলে,তুমিও আমার মায়ের মতো আমায় ঠকালে?আমি যাদের ভালোবাসি তারা কেনো আমায় এমন করে ঠকায় বলতে পারো?
প্রিয়তা রুমে ঢুকতেই সালমা বেগম বেরিয়ে গেলো। প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে মোশারফ হোসেনের কাছে এগিয়ে গিয়ে,বাবা আমি আসি।তোমার ছেলেটার দিকে একটু খেয়াল রেখো।
-এতোই যখন ভালোবাসিস তাহলে ছেড়ে যাচ্ছিস কেনো?কেনো করলি সকাল থেকে এই নাটক?
তুই যে কাউকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলছিস আমি ঠিক বুজেছিরে মা।
কথাটা বলতেই প্রিয়তা নিজেকে সামলাতে না পেরে মোশারফ হোসেনকে জড়িয়ে, বাবা এই ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। আমি যে উনাকে বড্ড ভালোবাসি বাবা।আমি ছেড়ে গেলে হয়তো উনি ক্ষনিকের জন্য কষ্ট পাবেন কিন্তু আপু গেলে উনি সারাজীবন আমায় ক্ষমা করতে পারবেন না।
উনি আপুকে কতোটা ভালোবাসেন আমি তো জানি।
-তাই বলে নিজেকে বির্সজন দিয়ে দিবি?আরে পাগলি অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে দুজনেই সমান অপরাধী।
জুহি এসে,বাবা তুমি ঠিক বলেছো।আমি বিশ্বাস করিনা ভাবী কোনো অন্যায় করবে।
প্রিয়তা মাথা উঠিয়ে, পরীক্ষা ভালো করে দিও।বাবা মায়ের দিকে একটু খেয়াল রাখিও।সাথে তোমার ভাইয়াকে।ও অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে।
-তুই সত্যিই চলে যাবি?
– হ্যাঁ বাবা।
-ঠিক আছে আমি তোকে আটকাবো না।একদিন আমার ছেলে তোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে এইটা আমি বলে রাখলাম।
প্রিয়তা কথা না বাড়িয়ে বিদায় নিলো নিবিড়ের বাড়ি থেকে।কোথায় যাবে এখনো ঠিক করেনি সে।ক্ষনিকের স্বপ্নের রাজ্যের রানী ছিলো এই কয়েকটা মাস।ঘুম থেকে জেগেই কষ্ট কে আবার আপন করে নিয়েছে ।হয়তো অনেক কথা শুনতে হবে তাকে।সমাজের লোকেরা তো কখনোই তাকে ছাড় দিবে না সাথে নিজের মায়ের পেটের বোনগুলোও।নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বাড়ি এসে পৌঁছালো প্রিয়তা।
চলবে,,,,