#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৯
গাড়ি থেকে নেমেই হসপিটালে ঢুকলো নিবিড়। রিসিপশনের দুইটা মেয়ে নিবিড়কে দেখে দৌড়ে এসে স্যার আপনি এখানে? আপনার কোনো পেশেন্ট আছে হসপিটাল?
-আমার ওয়াইফ আছে।কথাটা বলে রিয়াকে ফোন দিয়ে কথায় তোমরা?
-তিন তলায়।
নিবিড় মেয়েগুলোকে কিছু না বলে তিন তলায় চলে গেলো।
-নিবিড় স্যার আমাদের হসপিটাল ভাবতে পারছিস?
– হ্যাঁ। চল এমডিকে জানাই।স্যার পরে জানতে পারলে আমাদের অবস্থা খারাপ করবে।
নিবিড় নুর জাহান বেগম আর রিয়াকে করিডরে বসে থাকতে দেখে,প্রিয়তা কোথায়? প্লিজ তাড়াতাড়ি বলো।আমার বুড়ীর কি হয়েছে? ও ঠিক আছে?
রিয়া কিছুটা দূরে চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালো।
নিবিড় চিন্তিত মুখে সেদিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে আছে।
প্রিয়তা একজনের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। বাচ্চাটা কিছুতেই প্রিয়তাকে ছাড়তে চাইছে না।আর নিবিড় সেদিকেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে চোখে মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে উঠেছে।
এই মেয়ে যতই বড় হোক না কেনো বাচ্চা স্বভাবগুলো এখনো যাইনি।নিবিড় প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর প্রিয়তা পিছনে ফিরে রিয়ার সাথে নিবিড়কে দেখে বাচ্চাটা কোলে নিয়েই এগিয়ে এসে,আপনি কখন এলেন?
-অনেকক্ষণ।
-আপনি কী করে জানলেন আমি হসপিটাল আছি?
-রিয়া ফোন করে বলেছে।বাচ্চাটা কার?
-ওই যে ওই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে উনার।কি মিষ্টি দেখতে তাই না?
-শেটাপ। তুমি বাচ্চা দেখানোর জন্য আমাকে ফোন করে এখানে নিয়ে এসেছো? প্রিয়তা তুমি হসপিটাল শুনে আমার অবস্থা কী হয়েছিলো তুমি জানো? আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ক্যান্সেল করে আমি এখানে এসেছি।
প্রিয়তা রিয়ার দিকে তাকিয়ে তুই আমায় জিজ্ঞেস না করে উনাকে ফোন দিলি কেন?
রিয়া অবাক হয়ে,কি বলিস আপু এতো বড় একটা খবর ভাইয়াকে বলবো না?
নিবিড় রিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে,কি হয়েছে ওর? খারাপ কিছু?
নুর জাহান বেগম রিয়ার হাত ধরে, আমরা চল ওরা দুজন কথা বলুক।বাবা তুমি প্রিয়তাকে নিয়ে বাড়ি এসো। আমি গিয়ে রান্না করবো তোমার জন্য।
নিবিড় কিছু বলার আগেই নুর জাহান বেগম রিয়াকে নিয়ে চলে গেলেন।
নিবিড় প্রিয়তার কোলের বাচ্চার মাকে ডেকে,এক্সকিউজমি!
-জ্বি,বলুন।
-আপনার বাচ্চাটা নিয়ে যান।আমরা এখন বাড়ি যাবো।প্রিয়তা উনার বাচ্চা উনাকে দাও।
প্রিয়তা মন খারাপ করে বাচ্চাটাকে দিয়ে গাল ফুলিয়ে রেখেছে।নিবিড় বুজতে পেরে,এখন বাড়ি চলো।তোমাকে বাড়ি দিয়ে আমি অন্য একটা কাজে যাবো।
নিবিড় নিচ তলায় এসে একটু অবাক হয়ে হসপিটালের এমডি নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
নিবিড় আসতেই,আপনি হসপিটাল আসবেন আগে বলবেন না?
-নো প্রবলেম। আসলে আমার ওয়াইফ এসেছে আমি নিজেও জানি না।ওকে নিতে এসেছি।
ডাক্তার লাভীবা এসে,আপনার ওয়াইফ? কিন্তু ম্যাডাম আপনিতো টেষ্ট করারনোর সময় বলেননি আপনার হাজবেন্ড নিবিড়?
নিবিড় অবাক হয়ে, কিসের টেষ্ট? প্রিয়তা তুমি তো এ-ব্যাপারে আমায় কিছু বলনি?
লাভীবা মুচকি হেসে,অভিনন্দন স্যার।
-কিসের জন্য?
-কারণ ম্যাডাম মা হতে যাচ্ছেন?
নিবিড় কিছুটা সময় স্তব্ধ থেকে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে ফিরে,থ্যাংক ইউ।
নিবিড় আর কথা না বাড়িয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে বসলো।প্রিয়তাও চুপচাপ এসে পাশে বসতেই নিবিড় ড্রাইভ করতে লাগলো।
প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে, আপনি কী আমার উপর রাগ করেছেন?
নিবিড় চুপ,,,
-আপনি কি আমার সাথে কথা বলবেন না?
নিবিড় তখনও চুপ।
-ঠিক আছে,আপনি যখন বেবি আসাতে খুশি হচ্ছেন না তাহলে আপনি আমার সাথে আর যোগাযোগ করার দরকার নেই।আমি ভেবেছিলাম আপনি অনেক খুশি হবেন শুনে।কিন্তু না আপনি আমার উপর রেগে আছেন।
নিবিড় হটাৎই ব্রেককষিয়ে গাড়িটা থামাতেই প্রিয়তা ভয় পেয়ে,কি করলেন এইটা আপনি? একটুর জন্যই তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।
নিবিড় কিছু না বলে প্রিয়তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে খোলা একটা মাঠে নিয়ে দাঁড় করালো।
প্রিয়তা চারদিকে তাকিয়ে একটু ভয়ে পেয়ে গেলো।চারপাশে তেমন একটা বাড়িঘর নেই।মাঠের দক্ষিণ পাশের কিনারায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে।
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে খুব ভয় পেয়ে যায়।
নিবিড় প্রিয়তাকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, বিশ্বাস করুন আমি বুজতে পারিনি আপনি কথাটা শুনে এতোটা রেগে যাবেন।এখন তো কিছু করার নেই বলুন।আপনি যদি চান আমি আপনার জীবন থেকে চলে যাবো তবুও বেবিটা নষ্ট করতে পারবো না।আমি কিছুতেই খুনি হতে পারবো না।
প্রিয়তা আরও কিছু বলার আগেই নিবিড় প্রিয়তাকে বুকে নিয়ে সমস্ত শক্তি নিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।প্রিয়তা নিবিড়ের কিছুই বুজে উঠতে পারছে না।হতভম্ব হয়ে নির্বিকার হয়ে আছে।
নিবিড় প্রিয়তাকে ছেড়ে দিয়ে, নিজের চোখের পানি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে,হাত বাড়িয়ে দিয়ে,এই মুহূর্তে আমার কাছে কিচ্ছু নেই,তবুও র্নিলজ্জের মতো বলছি,তোমার বাচ্চার আর্দশ বাবা হতে দিবে?হতে দিবে একজন বিশ্বস্ত স্বামী। সারাজীবন চোখ বন্ধ করে যার উপর নিজের জীবনটা নির্ভর করে রাখবে।সুযোগ দিবে প্রতিটি মুহূর্তে তোমার পাশে থাকার?সুযোগ দিবে তোমার পেটে মাথা রেখে আমার বাচ্চার সাথে কথা বলার?
প্রিয়তা মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে, চোখের পানি মুছে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে, আপনি সত্যি সত্যিই রাক্ষস। কখন কি করেন আমি বুজতেই পারি না।কেউ বাবা হওয়ার কথা শুনলে এইরকম বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায়? আমি কতটা ভয় পেয়েছি আপনি জানেন?
-ন্যাকা কান্না রেখে আমার হাতটা কী ধরা যায় না? কতক্ষণ এইভাবে বসে থাকবো? অভ্যস্ত নয় তো, পা ব্যাথা করছে।
-আমি ন্যাকামি করি? ওকে বসে থাকুন। এইটাই আপনার শাস্তি।
– ওকে,আমার বুড়ী বলেছে তাহলে এভাবেই থাকি।
প্রিয়তা হাতের উপর হাত দিয়ে, এইবার উঠুন।বসে থাকলে পা ব্যাথা করবে।
নিবিড় উঠে দাঁড়িয়ে, বুড়ী আমার জামাই পাগলী।
আচ্ছা তুমি এতোবড় একটা খবর আমায় আগে দাওনি কেনো? দিলে তো পুরো হসপিটাল মিষ্টি খাইয়ে আসতাম।
-আমি কী করে জানবো।কয়েকদিন থেকে শরীর খারাপ দেখে মা জোর করেই হসপিটাল নিয়ে গেলো।আর খবরটা শুনে আমি কিন্তু আপনাকে এইভাবে দিতে চাইনি চেয়েছি সারপ্রাইজ দিতে।কিন্তু এখন আপনিই উল্টো আমায় সারপ্রাইজ দিয়ে দিলেন।
-আসলে বাবা হলে কীভাবে রিয়েক্ট করতে হয় আমি জানি না।যখন কথাটা শুনলাম মনের ভেতর কি হচ্ছিলো তোমাকে বুজাতে পারবো না।
নিবিড় মাথা চুলকাতে চুলকাতে মিনমিন করে,ফাস্ট টাইম তো তাই হয়তো!
প্রিয়তা রাগী গলায়,ওওও আরও বউ কয়েটা ছিলো নাকি?
-আরে না।কি বলবো আমি সব গুলিয়ে ফেলতেছি বুড়ী।
প্রিয়তা মুচকি হেসে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে,আপনি সারাজীবন আমায় এমন করে বুড়ী ডাকবেন।
আমি আপনার বুড়ী হয়েই থাকতে চাই।
-হু,এখন বাড়ি চলো।আমি আমার বাচ্চা আর বাচ্চার মাকে নিয়ে বাড়ি যেতে চাই।অনেকদিন তো হলো দূরে আছো।
-কিন্তু আপু আর রিসাদ?
-আমি সামলে নিবো।শুনো! বাড়ি গিয়ে আমি যা বলবো তুমি শুধু চুপচাপ শুনবা।আমার কথায় তুমি একটুও রাগ করবে না।উল্টো অসহায়ের মতো মুখ করে থাকবা।
-আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু মা তো রান্না করছে আপনার জন্য।না খেয়ে চলে যাবেন?
ঠিক আছে আগে তোমাদের বাড়ি যাবো।তারপর আমার বাড়ি।
নিবিড় প্রিয়তাকে নিয়ে অনেক শপিং করলো প্রিয়তার বাড়ির লোকের জন্য।
প্রিয়তাদের বাড়ি থেকে খেয়ে নিবিড় বাড়িতে এসে সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখে সবাই বসে আছে ড্রইংরুমে।
নিবিড়ের পিছনে প্রিয়তাকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নাদিয়া এগিয়ে এসে, ভাই! এই মেয়েটা তোর সাথে এই বাড়িতে কি করছে?
নিবিড় চুপ করে আছে।
ভাই আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।এই অসভ্য মেয়েটা এখানে কি করছে? ভাই আমি সুখে আছি এইটা কি তোর দেখতে মোটেও ভালো লাগে না? তাই এই মেয়েকে নিয়ে এসেছিস?
-আপু তুই আমার কথা শুন।
-কি শুনবো আমি?
সালমা বেগম উঠে এসে নাদিয়াকে জড়িয়ে, নাদিয়া তুই কি করছিস মা? তুই অসুস্থ হয়ে যাবি, শান্ত হও।
-কী শান্ত হবো? মা ও ওর বউকে ছাড়তে পারবে না এইটা আগে বললেই তো হতো।আমিই চলে যেতাম।
নিবিড় ধমকিয়ে, আপু তুই থামবি?
ওকে আমি কেনো নিয়ে এসেছি তুই জানিস? ও প্রেগন্যান্ট। এই ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
কথাটা শুনে নাদিয়া কিছুটা সময় নিস্তব্ধ হয়ে ছিলো।তারপর বললো,তাই বলে বাড়িতে নিয়ে আসবি ভাই? ও যদি রিসাদের দিকে আবার হাত বাড়ায় তখন?
-আপু সে সুযোগটাই ওকে দেওয়া হবে না।ওকে এই বাড়িতে না আনলে এসব মেয়েরা কি করে না করে তার কোনো ঠিক নেই।থানা পুলিশ এসব নিজের নামে আমি জড়াতে চাই না।আপু তুই ভালো করে জানিস থানা পুলিশ হলে আমার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
সালমা বেগম নিবিড়ের কথা শুনে,প্রিয়তা প্রেগন্যান্ট?
প্রিয়তার দিকে পা বাড়াতেই নাদিয়া সালমা বেগমের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই সালমা বেগম আবার দাঁড়িয়ে পড়লো।
নাদিয়া প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে, প্রিয়তা, বাচ্চাটা কার? সত্যি আমার ভাইয়ের তো? নাকি রিসাদের মতো অন্য কাউকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছো? এখন আসছো আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলাতে?
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে চোখের পানিকে মুছে নিচ্ছে।
নিবিড় মনকে শক্ত করে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তা,আমার ভাইকে সহজ সরল পেয়ে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো।এইটা তুমি ঠিক করোনি।এই বাড়িতে তুমি টিকতে পারবে? এই বাচ্চার বাবা আমার ভাই আমার তো একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না।ভাই তুই কীভাবে বিশ্বাস করেনিলি ওর কথা? যে মেয়ে সবাইকে ঠকাতে পারে তার কথা?
নিবিড় নাদিয়াকে বাহুডোরে জড়িয়ে, আপু তুই উপরে যা।কেনো শুধুশুধু ওর সাথে কথা বলে নিজেকেই ছোটো করছিস? তুই আর ওকি সমান?
এই মেয়ে তুমি এখনো আমার বোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছো? যাও উপরে যাও।একদম আমার বোনের সামনে আসবে না।
নাদিয়া অবাক হয়ে,ভাই এই মেয়ে তোর সাথে একি রুমে থাকবে?সেটা তো আমি মানবো না।
-আপু ওকে এই সময় অন্য রুমে দিলে সমস্যা আমাদেরই।ও খারাপ হতে পারে কিন্তু বাচ্চাটা তো আমার।আমি চাই না আমার বাচ্চা কোনো অযত্নে বড় হোক।
নাদিয়া আর কথা বাড়ালো না।
সালমা বেগম রুমে গিয়ে, শুনেছো?
-ড্রইংরুমে এতো চেঁচামেচি কিসের?
-প্রিয়তা এসেছে,নিবিড় নিয়ে এসেছে।আমাদের নিবিড় নাকি বাবা হচ্ছে।
-ভালো কথা।হঠাৎই মোশারফ হোসেন বসে,কে বাবা হচ্ছে?
-নিবিড়!
মোশারফ হোসেন উঠে দাঁড়িয়ে, আমি দাদা হচ্ছি?
সালমা তুমি এতো বড় একটা সংবাদ এতো দেরিতে দিচ্ছো?
কোথায় আমার মেয়ে? মোশারফ হোসেন রুম থেকে বের হতে হতে উৎকন্ঠে বলছে,ড্রাইভার কোথায়? ওকে বলো মিষ্টি দোকানের সব মিষ্টি আমার বাসায় নিয়ে আসতে।আত্মীয় স্বজন সবার বাড়িতে মিষ্টি পাঠাও।
কোথায় প্রিয়তা?
প্রিয়তা, প্রিয়তা!
প্রিয়তা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে,মোশারফ হোসেনকে সালাম করে,বাবা কেমন আছেন?
-এতোদিন তোকে ছাড়া একটুও ভালো ছিলাম না।তবে এই মূহুর্তে আমি খুবি ভালো এবং সুখি মানুষ।
নিবিড় নিচে নেমে এসে, মোশারফ হোসেনের কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।
নিবিড় তুই আমার মাকে ফিরিয়ে এনেছিস আমি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। আমার ঘরের লক্ষ্মী ঘরে ফিরে এসেছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।নাদিয়া অধরাকে কোলে নিয়ে নিচে এসে অধরাকে জুহির কোলে দিয়ে,রান্নাঘরে গিয়ে প্রিয়তাকে দেখে কিছু না বলেই অধরার জন্য স্যুপ বানানোর জন্য পাতিল চুলার উপর বসাতেই প্রিয়তা বললো,আপু তুমি যাও আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
নাদিয়া ধমকিয়ে,একদম চুপ।আমার সাথে একদম কথা বলবে না।তোমার মতো মেয়ের হাতের স্যুপ আমার মেয়েকে খাওয়াবো এইটা ভাবলে কি করে? নষ্টা মেয়ে একটা।তোমাকে নিবিড়ের জীবনে না, পতিতালয়েই মানাবে।
প্রিয়তা কিছু না বলেই দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে নিবিড়কে দেখে থমকে গেলো। নিবিড়কে সামনে দেখে চোখগুলো মুছে, আপনি?
তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম আপুর সামনে বেশি যাবে না,তারপরও কেনো গেলে? বল কেনো গেলে?
তুমি কি একটা কথাও শুনবে না নাকি?
-আমি কতক্ষণ বসে থাকবো? আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।তাই ভাবলাম সবার জন্য,,,
-জাস্ট শেটাপ, তুমি এই শরীর নিয়ে নাশতা বানাতে গেছো?তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাচ্চাটাকে কষ্ট দেওয়ার?সবসময় এইরুমে থাকবে।কোথাও যাবে না।আপুর সামনে তো যাবেই না।প্লিজ বুড়ী এবার নিজের একটু যত্ন নাও।
প্রিয়তা নিবিড়কে জড়িয়ে, আমি আর পারছি না গো,এইভাবে থাকা যায় না।
-আপু পতিতা বলেছে তাই?
-না, না আমি আপুর কথা কষ্ট পাইনি।আমার হয়তো এটাই প্রাপ্য ছিলো।ছোটো বেলা থেকে অনেক কথাই তো শুনে আসছি শুধু এটারই বাকী ছিলো।আজ এটাও শুনে নিলাম।হয়তো আরও অনেক কথা শুনতে হবে তার জন্য আমি ঠিক নিজেকে প্রস্তুত করে নিবো।
নিবিড় প্রিয়তার কপালে চুমু দিয়ে,প্লিজ বুড়ী আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরো। তোমার নিবিড় সব ঠিক করে দিবে। একদিম আপুই এসবের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে।
রাতে রিসাদ বাড়ি এসে মোশারফ হোসেন সহ সবাই নিচে জমজমাট ভাবে আড্ডা দিচ্ছে দেখে একটু অবাক হলো।
এগিয়ে এসে নাদিয়ার হাতে ফাইল আর ব্যাগ দিয়ে,কি হয়েছে নাদু, হঠাৎ এতো উল্লাস কেনো?
নাদিয়া আস্তে করে বললো,ওই মেয়েটা ফিরে এসেছে।তাও আবার নতুন নাটক নিয়ে।
-কিসের নাটক?
-ও নাকি প্রেগন্যান্ট।
-হোয়াট! নাদিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই, না মানে নাদু এইটা সত্যিই নাকি নাটক?
-আমিও সেটা ভাবছি।আচ্ছা তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
রিসাদ রুমে গিয়ে,এইটা কি করে সম্ভব? আমার সব প্ল্যান এইভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?এই কয়েকটা দিন আমি যা যা করেছি তা সব বিফলে যাবে?
নাদিয়া এসে,কি গো এখনো ফ্রেশ হওনি? তুমি আবার কি বসে বসে ভাবছো?
রিসাদ কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
চলবে,,,,