#পরাণ_প্রিয়া
#রাবেয়া_সুলতানা
#৪১তথা শেষ পর্ব
__আকাশের তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।চাঁদটা মেঘের আড়ালে বারবার নিজেকে লুকিয়ে নিচ্ছে।লজ্জায় যেনো ডেকে রাখতে চাইছে নিজেকে।হালকা বাতাস মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।নিবিড় বুকে হাত বেঁধে সামনের বিস্তৃতের দিকে তাকিয়ে আছে।এর মাঝেই নিবিড় প্রিয়তার কথাটা শুনে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আবার সামনের দিকে তাকিয়ে, মাহিদের একটা পরিচয় আছে যেটা কেউ জানে না।
কথাটা শুনে প্রিয়তা অবাক চোখে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো।
নিবিড় শান্ত গলায় বললো,ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেছে।মাহিদকে আমি অনেক বছর আগে থেকেই চিনি।যখন জুহি দশম শ্রেনীতে পড়তো।আর মাহিদ ছুটির সময় দূর থেকে জুহিকে দেখে ফিরে যেতো কখনো ডিস্টার্ব করতো না।যেটা জুহিও এখনো জানে না।মাহিদের ফ্যামিলিতে বাবা ছাড়া আর কেউ নেই বলতে পারো।জুহির এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই একদিন আমি ছুটির পরে জুহিকে নিতে এসে ওকে আটকালাম।
সব কিছু জিজ্ঞেস করে বুজলাম ছেলেটা অনেক দূর এগুতে পারবে।ও যখন বললো ওর বাবা আছে কিন্তু তার সাথে উনি থাকতে নারাজ।পড়াশোনাও হয়তো মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হবে।কথাগুলো শুনো আমি অনেক অবাক হলাম।একটা ছেলে কতটা সহজসরল হলে যাকে সে পছন্দ করে তার বড় ভাইয়ের কাছেই অকপটে সবকিছু স্বীকার করছে!
তখন আমিই সেইদিনওকে নিয়ে গিয়ে সব ব্যবস্থা করি।কিছুদিন পর পাঠিয়ে দিলাম দেশের বাহিরে পড়ার জন্য।ভেবেছিলাম দেশে এসে হয়তো সে আমাকে ভুলেই যাবে।কারণ কতজনের জন্যই তো কত কী করলাম কেউ তো মনে রাখেনি।কিন্তু না মাহিদ দেশে এসেই আগে আমার সাথেই দেখা করে।তুমি জানো প্রিয়তা? ওর আমেরিকায় চাকরি হয়েছিলো।কিন্তু সে দেশে আমার কোম্পানিতে জয়েন করবে বলে চলে এসেছে।তোমার মনে আছে মাহিদ কিন্তু হঠাৎই আমার সাথে আমাদের বাসায় গিয়েছিলো?
প্রিয়তা উচ্ছ্বসিত গলায় বললো,হ্যাঁ মনে আছে।মাহিদ হঠাৎই কোম্পানিতে জয়েন করেছিলো।এবং কী আপনি সেদিনই বাসায় নিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
-হুম,,,,ঠিক।কিন্তু জুহির বিষয়ে ওর সাথে আমি কখনোই তুলেনি।কারণ আমি জানতাম একদিন আসবে আমি যা বলবো জুহি সব মেনে নিবে এবং মাহিদও।কিন্তু আমি এইটা জানতাম না জুহি মাহিদকে ভালোবাসে। কাল যখন জুহি তোমায় জড়িয়ে ধরে কাঁছিলো এবং মাহিদের ব্যাপারে বলছিলো আমি সব দরজায় দাঁড়িয়ে শুনেছি।
আমার বিশ্বাস মাহিদ ছাড়া কেউ আমার বোনকে ভালোবাসতে পারবে না।
কথাগুলো শুনে হঠাৎই প্রিয়তা মন খারাপ করে কাঁদতে লাগলো ফুঁপিয়ে।
নিবিড় পাশে ফিরে,তোমার আবার কী হলো?
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায়,কাল আমি আপনাকে কত ভুল বুজেছি।আর আপনি সবকিছু খুব সহজে মিটিয়ে নিলেন। আপনার সাথে আমি সারাজীবন থাকতে চাই। প্লিজ আপনি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেন না।আমার কেনো জানি আপনাকে নিয়ে খুব ভয় হয়।কথাগুলো বলেই নিবিড়ের বাহুডোর জড়িয়ে ধরলো।
নিবিড় অন্য হাতটা দিয়ে টেনে এনে প্রিয়তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে,যে মানুষটার জন্য আমি নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলেছি তাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।কথা দিলাম।রাত অনেক হয়েছে।এবার চলো ঘুমাবে।
-আমি এখানে ঘুমাবো আপনার কোলে মাথা রেখে।
কথাটা বলেই প্রিয়তা নিবিড়ের কোলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।
নিবিড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, প্রিয়তার কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে,
তাকিয়ে থাকি অপলক দুটি চোখে,
তোর ওই মায়া ভরা মুখটায়।
হো,,,,,,,,,,,,,,
মিশে গেছি যেনো আমি তোর হয়ে আজ পুরোটা।
হাতটা বাড়িয়ে তোকে ছুতে চাই
কোনো নিয়ম না মেনে ভালোবেসে যাই।
হাতটা বাড়িয়ে তোকে ছুতে চাই
কোনো নিয়ম না মেনে ভালোবেসে যাই।
গানের এই কয়েকটা লাইন গেয়ে বন্ধ করতেই প্রিয়তা চোখ খুলে,থামলেন কেনো?
নিবিড় চমকে উঠে, ঘুমাওনি?
-না!আপনি এতো সুন্দর করে গান গাইতে পারেন আমার তো জানা ছিলো না।
নিবিড় মুচকি হেসে,উঠো এখন নিচে যাবে। প্রচুর ঠান্ডা পড়তেছে।তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।অন্য একদিন তোমায় মন ভরে গান শুনাবো।
প্রিয়তা উঠে বসে গোমড়া মুখে বললো,থাকি না আজ রাতটা ছাদে।
নিবিড় কিছু না বলেই উঠে দাঁড়িয়ে, প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে,শুধু নিজে একাএকা ভালোবাসা নিবে? আমাকে দিবেটা কে শুনি?
কথাটা শুনে প্রিয়তা লজ্জায় দুইহাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিলো।
নিবিড় মুচকি হেসে পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য।
ফোন বাজতেই মাহিদ ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে, হ্যালো কে বলছেন?
-তোমার বউ।
কথাটা শুনেই মাহিদ হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে,ম্যাডাম আপনি?
জুহি অবাক হয়ে, ম্যাডাম! আমি তোমার ম্যাডাম?
মাহিদ শুকনো গলায় ঢোক গিলে বললো,আসলে আপনি এতো রাতে আমায় ফোন দিয়েছেন কেনো?
জুহি রাগী গলায় বললো, তোমার ঘাড় মটকাত। আর একবার যদি ম্যাডাম বলেছো তো খবর আছে।
মাহিদ হালকা কাশি দিয়ে, আচ্ছা,জ্বি বলুন কেনো ফোন দিয়েছেন?
-আগে তুমি করে বলো।
-এতো তাড়াতাড়ি?
-হু,,,এবার বলো?
-তু তু,,,,তুমি! হ্যাঁ তুমি!
-এইবার ঠিক আছে।বাসায় এখন কে কে আছে?
-কেউ নেই।
-তাহলে রান্না করে কে?
-আমি হোটেলে খাই।বেশির ভাগ তো স্যারের সাথেই খাওয়া হয় বাহিরে।
– ওকে নো প্রবলেম। আমি সামলে নিবো।
-কি সামলাবে?
-তোমাকে! হ্যাঁ বিয়ের আগে বাসায় কাজে বুয়া রাখবে।আমিও রান্না করতে পারি না।
-আমি রান্না করলে সমস্যা হবে?
-তুমি পারো?
মাহিদ শান্ত গলায় মুচকি হেসে,শিখেছিলাম কোনো এক রাজকন্যার জন্য।কারণ আমি জানতাম রাজকন্যা তার ভাইয়ের হৃদপিণ্ড। তাকে যে কাজ মানায় না।কথাগুলো বলতে বলতে মাহিদ হেলান দিয়ে স্থির হয়ে শুয়ে পড়লো ফোন কানে নিয়ে।
-তুমি যদি আগে থেকেই জানতে তাহলে আমার ডাকে সাড়া দাওনি কেনো?
-আমি যে চাইনি তার ভাই কষ্ট পাক।যে আমার জন্য এতোকিছু করলো তাকে আমি কীভাবে কষ্ট দিবো?যে দায়িত্ব আমার বাবার করার কথা সে দায়িত্ব যে নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়, সে মানুষটাকে কষ্ট আমি কখনো দিতে পারবো না।
জুহি চমকালো মাহিদের কথা শুনে।অবাক হয়ে বললো,তুমি কী বলছো বলো তো?
-বিয়ের পরে ওসব নিয়ে গল্প করবো। এখন বলো কান্না করছিলে কেনো পার্টিতে?
-কিছু চোখের পানি কষ্টে নয় আনন্দে আসে।তুমি আমাদের বাড়িতে আসার পর কখন যে তোমাকে মনে জায়গা দিয়েছি বুজতেই পারিনি।
সারারাত চলতে লাগলো দুজনের ভালোবাসার কথা।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই প্রিয়তা সবার জন্য নাশতা বানিয়ে টেবিলে রেখে, মা,ও মা বাবাকে নিয়ে আসো।
নাদিয়া নিচে নেমে সে,প্রিয়তা এতো সকাল সকাল নাশতা বানিয়ে ফেললে? ভাই উঠেছে?
-উঠেছে আপু,উনি নাকি আজ সকাল সকাল অফিসে যাবে।
মোশারফ হোসেন এসে চেয়ার টেনে বসতেই দেখে মাহিদ সদর দরজা দিয়ে ঢুকছে।
-আরে জামাই যে?
কথাটা শুনে মাহিদের চোখেমুখে লজ্জার ভাব।
-স্যার ডেকেছেন তাই আসতে হলো।
মাহিদ কথাটা বলে চোখ দুটো জুহিকে খুঁজছে।
প্রিয়তা এগিয়ে মাহিদের পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,ও ঘুমাচ্ছে।ওই দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।
মাহিদ কথাটা শুনে মুচকি হাসলো।সারারাত ফোনে কথা বললে তো ঘুমাবেই।আমি কি আর ইচ্ছে করে উঠে এসেছি? শুধু স্যার বলাতে আসতে হলো।
মাহিদ নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে।এমন সময় নিবিড় এসে,কি অবস্থা মাহিদ?
-ফাইন,,
-গুড,নাশতা করতে বসো।তোমার ভাবী আজ নাশতা বানিয়েছে।
-স্যার আমি খেয়ে আসছি।আপনারা খেয়ে নিন।আমি ওয়েট করছি আপনার জন্য।
নিবিড় মাহিদকে শান্ত গলায় বললো, মাহিদ মিথ্যা তুমি আমার সাথে বলছো? নাশতা করে নাও।
-স্যরি স্যার।
-ইট’স ওকে।এখানে তোমার কিসের লজ্জা? এটা তোমারও বাড়ি। আর আমি চাই বিয়ের পর তুমি এই বাড়িতেই থাকবে আমাদের সাথে।
প্রিয়তা এগিয়ে এসে,বিয়ে বিয়ে যে করছেন বিয়েটা কবে? ভেবেছিলাম জুহির পড়ালেখা শেষ করার পর।এখন ভাবছি মাহিদ যেহেতু একাই থাকে বিয়েটা হয়ে যাক।তাহলে ও এইবাড়িতে থাকতে পারবে।
মোশারফ হোসেন মুচকি হেসে,নিবিড় তুই ঠিক বলেছিস।ও শুধু শুধু বাহিরে বাসা নিয়ে থাকবে কেনো? আমাদের সাথেই থাকুক।
নাদিয়া সহ সবাই একমত জানালো।মাহিদ মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে,যাক অপেক্ষার প্রহরটা তাহলে কমলো।কিন্তু বিয়ের পর এই বাড়িতে থাকতে হবে সেটা মাহিদের ভালো না লাগলেও নিবিড়ের সামনে মুখ ফুটে বলতে পারলো না।মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে সবার সাথে তাল মিলেয়ে নিলো।
-তোমরা কেনো আমাকে এখানে আটকে রেখেছো? এইভাবে আর কতদিন?
-আমরা কী করে জানবো? ওইটা নিবিড় স্যার জানেন।
রিসাদ ক্রোধ গলায় বললো,ওই নিবিড় নিবিড় আর নিবিড়।দুনিয়াতে কী ওই একটাই নাম?
যেখানেই যাই শুধু এই নামটাই আমাকে শুনতে হয়।
প্লিজ তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও দরকার প্রয়োজনে আমি তোমাদের টাকা দিবো।
নিবিড় এসে দরজায় দাঁড়িয়ে, কোথায় থেকে দিবি? আছে কোনো কিছু?
রিসাদ চমকে পিছনে ফিরে নিবিড়কে দেখে চেয়ার থেকে উঠার চেষ্টা করছে।
নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, বাঁধগুলো খুলে দাও।দেখি শালার কতটা শক্তি।
কথাটা বলেই নিবিড় মোটা রোড নিয়ে এসে রিসাদের পায়ের মাঝে এলোপাতাড়ি পিটাতে লাগলো।
রিসাদের চিৎকারে যেনো চারদিক ভারী হয়ে গেলো।
মাহিদ দম বন্ধ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।পাশে থাকা লোকগুলো যেনো হতভম্ব হয়ে আছে নিবিড়ের রাগ দেখে।
রিসাদের শুধু একটাই চিৎকার এখন কানে ভেসে আসে,প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।আমায় ছেড়ে দাও।
চিৎকারটা ধীরে ধীরে কমতে লাগলো।
নিবিড় ক্রোধে গর্জন করে রোডটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে রিসাদের সামনে বসে, বললাম না! নিবিড় ভালোর ভালো খারাপের খারাপ।তুই আমার লাইফটাকে বরবাদ করতে চেয়েছিলি।আর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ তোর জায়গাটা এখন কোথায়?কথায় আছে না,দুষ্টু গরুর অপেক্ষায় শূন্য গোয়াল ভাল।তোকে এখানে মেরে ফেললেও কেউ টের পাবে না।কিন্তু তোর মতো ময়লা মেরে হাত নোংরা করা নিবিড় ইসলামের শোভা পায় না।
নিবিড় লোকটার দিকে তাকিয়ে কাল থেকে কারেন্টের শকডটা আরেকটু বাড়িয়ে দাও।পাঁচ দিন এইভাবে চলবে তারপর পুলিশ খবর দিয়ে দিয়ে আসবে।
মাহিদ নিচের দিকে তাকিয়ে, স্যার পুলিশের কাছে আগেই দিয়ে দিলেন না কেন?
নিবিড় উঠে বাহিরে এসে গাড়ির দরজা খুলে বসে,পুলিশে দিলে ওর শাস্তিটা তো নিজের চোখে দেখতে পারতাম না।
কথাটা শুনেই মাহিদ চুপ হয়ে গেলো।নিবিড় আর কথা না বাড়িয়ে সোজা অফিসে চলে গেলো।
কয়েক মাস পর,,
কাল জুহির বিয়ে,বাড়িতে সবাই হৈচৈ করছে জুহির গায়ে হলুদ নিয়ে।সকাল থেকে নানা আয়োজনে সবাই ব্যস্ত। নিবিড়ও গায়ের হলুদের পাঞ্জাবী পরে বেরিয়ে এসে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চোখজোড়া প্রিয়তাকে খুঁজছে।কেমন লাগছে দেখতে প্রিয়তাকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে না? পাঞ্জাবীটা বিয়ের শপিং করার সময় প্রিয়তা তার জন্য নিয়ে এসেছে। নেমে আসতেই নিবিড়ের বড় ফুফুর মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে, স্যরি! কিরে তুই কখন এলি?
-এইতো ভাইয়া বিকেলেই।ভাবীকে খোঁজছো?
-হু,,দেখেছিস?
মাহিদের দিকে দেখিয়ে, ওইযে!
নিবিড় সেইদিকে তাকিয়ে রইলো।আজ এই বাড়িতে মাহিদেরও গাঁয়ে হলুদ।প্রিয়তা তাকে রুম থেকে বের করিয়ে বন্ধুদের হাতে ধরিয়ে দিলো ছাদে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
নিজে চুল ঠিক করতে করতে এসে নিবিড়ের গায়ের সাথে ধাক্কা লেগে উপরে দিকে তাকিয়ে, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
সবাই ছাদে চলে গেছে।জুহিকে তো আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নিবিড় প্রিয়তার ঘাড়ের দুইপাশে হাত দিয়ে জড়িয়ে, তুমি নিচে কী করছো? এখনো দেখছি ঠিক করে রেডি হওনি।
প্রিয়তা অবাক হয়ে, আপনার চোখ কানা নাকি?
নিবিড় মুখে কিছু না বলে, সামনের সেন্টার টেবিল থেকে ফুলের মালার ট্রের থেকে একটা মালা খোঁপায় পরিয়ে, এবার ঠিক আছে।
প্রিয়তা মুচকি হাসতেই নিবিড় কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে ছাদের নিয়ে গেলো।
সবাই সেই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।নাদিয়া নিবিড়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে, ভাই! বিয়েটা কার?
-জুহির!
-কিন্তু সুযোগ দেখছি তোরা নিচ্ছিস।
কথাটা শুনে সবাই অট্র হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে।
গাঁয়ের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো।সবাই নিচে গেলেও নিবিড় এখনো নামেনি।
কাঁধে হালকা স্পর্শ পেয়ে,তুমি যাওনি?
প্রিয়তা শান্ত গলায় বললো,কী করে যাবো আপনাকে এভাবে একা রেখে?
কথাটা শুনেই হঠাৎই নিবিড় পিছন ফিরে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা একটুও অবাক হলো না।নিবিড় যে মনে মনে কান্নার সাগরে এতোক্ষণ ভেসে যাচ্ছিলো কেউ না জানলেও প্রিয়তা ঠিক বুজতে পেরেছে।
কিছুক্ষণ পর নিবিড় প্রিয়তাকে ছেড়ে, যাও নিচে যাও। সকালে কনভেনশন সেন্টারে যেতে হবে। তুমি এইবাড়ির বউ অনেক দায়িত্ব সবার উপর তোমার।
-আপনি কেনো নিজেকে লুকাচ্ছেন?
ভারী গলায় মুচকি হেসে কোথায় লুকালাম।আমি একদম ঠিক আছি।
প্রিয়তা নিজেই নিবিড়কে জড়িয়ে,জুহি এইবাড়িতেই থাকছে।তাহলে আর মন খারাপ করছেন কেনো?
নিবিড় মুচকি হেসে,ঠিকি তো,কেনো যে মন খারাপ করছি নিজেই বুজতেছি না।
প্রিয়তা মুচকি হেসে নিবিড়কে স্বাভাবিক করার জন্য ,তারা গুনবেন?
নিবিড় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে, হু,তোমার সাথে।
তবে এক শর্তে!
-কিসের?
নিবিড় কিছু না বলে প্রিয়তাকে নিজের কাছে এনে নিজের বুকের সাথে প্রিয়তার পিঠ লাগিয়ে জড়িয়ে নিয়ে,প্রিয়তার কানের কাছে নিজের মুখ গুজে তুমি তারা গুনো, আমি আমার ভালোবাসায় তোমায় ঘিরে রেখেছি।তুমি বলেছিলে না, আমাকে হারানো তোমার অনেক ভয়! আজ বলছি,ভয় নেই সারাজীবন তোমায় নিয়ে এভাবেই তারা গুনবো।
————————-সমাপ্ত————————–