#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৩(বোনাস)
#Tahmina_Akther
————-
-কি বলেছিলো চাচ্চু?
জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন রোকন জামান।
-অভিক আমার ঠিক এইপাশটায় (বা পায়ের উরু দেখিয়ে)মাথা রেখে শুয়েছিলো।অথচ অভিকের কিন্তু আমার সাথে তেমন সখ্যতাও নেই। এরপর, আমার ডান হাতটি টেনে নিয়ে ওর বুকের বাপাশে রাখলো। আমি ওর হ্রদ স্পন্দন অনুভব করতে পারছিলাম। তারপর;সে বললো,
-বাবা, বলো তো আমার হৃদয়ের বিট গুলো কার জন্য হয়?
-কার জন্য অভিক? ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
-ফুলের জন্য ;তোমাদের হিয়ার জন্য ।
আমি ওর মুখে তোর কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম জানিস। তারপরও ওকে না থামিয়ে আমি ওর কথাগুলো শুনছিলাম।
-হিয়া কিন্তু, তোর চেয়ে বয়সে বড় এইটা কি তুই ভুলে গেছিস অভিক?
-না বাবা আমি ভুলিনি। কিন্তু, কেন যে এই কথাটি মনটাকে বুঝাতে পারিনা!
আমিও চাইনি আমার দ্বারা এই ভুলটি হোক তবুও আমার অজান্তেই এই ভুলটি আমার হৃদয় করেছে বাবা।
বাবা, এখন আমি কি করবো? ফুল যে আজ আমায় ভুল বুঝলো।আমি তো চাইনি ও আমাকে ভুল বুঝুক। আমি চেয়েছিলাম ও যেন আমায় ভালোবাসে।
-ও তোকে ভুল বুঝলো কেন?
-বাবা ওকে আজ আমার মনের কথা বলেছিলাম আর এতেই ও আমাকে ভুল বুঝেছে।বাবা আমি ফুলের সাথে কোনোপ্রকার জোর করিনি। কিন্তু, বাড়ির সবাই আমায় ভুল বুঝলো।
-এখন আমি কি করবো অভিক?তুমি যদি হিয়াকে তোমার ভালোবাসার কথা বলই থাকো আর সে যদি রিজেক্ট করে তাহলে এখানে আমার কি করার আছে?
-বাবা তুমি একবার ওকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিক বুঝবে। বাবা, তুমি যদি এখন ওকে না বোঝাও তাহলে ও চিরদিনের জন্য নিঝুমের হয়ে যাবে। আর আমি এই দৃশ্য দেখার আগেই আমি মরে যাবো। তুমিও নিশ্চয়ই চাইবে না তোমার ছেলের মরা মুখ দেখতে।
-অভিক এই সব তুই কি বলছিস? তুই কি পাগল হলি বাবা?
-হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে যাবো। মা’কে বললাম, মা বলে তুমি মানবে না। এই সমাজ মেনে নিবে না। আর আজ তো ফুলই বলে দিলো। এখন আমি কি করবো?
বলেই হাউমাউ করে কেদে ফেললো অভিক।
সে রাতে অভিককে আমি কোনোভাবে বুঝিয়ে চলে এসেছিলাম। এরপর, আর কোনো উপায়ন্তর নে পেয়ে তোর কাছে আমি শর্ত রেখেছিলাম হিয়া। তোর বাবার সাথে আমার কোনো প্রকার টাকার দেনা নেই। বড় ভাইজান অভিকের সব কথা শুনে বললো, আমি যেন তোকে টাকার ব্যাপারে ফোর্স করি তাহলে তুই এই বিয়ের জন্য রাজি হবি।
দেখ মা তোকে কোনোপ্রকার কষ্ট দেয়া আমার ইচ্ছে ছিলো না। তবু্ও, আমি যে বাবা এক সন্তানের সুখের জন্য আরেক সন্তানের কাছে আজ মিনতি করছি।
মা’রে তুই আমার অভিককে মেনে নে। তুই কখনোই অসুখি হবি না কারণ অভিক যে তোকে অনেক ভালোবাসে। আমার ছেলের কাছে কোনো উপায় ছিলো না রে তাই সে এরকম আচরণ করেছিলো তোর সাথে।
চাচ্চুর কাছে অভিকের কথাগুলো শুনে বেশ কান্না পাচ্ছে আমার। আমার জায়গায় অন্যকোনো মেয়ে হলে নিশ্চয়ই খুশি খুশি অভিককে মেনে নিতো। কিন্তু, আমি যে পারছি না আমার মনের এক সুপ্ত কোনে আজও আহানের ভালোবাসার বিচরণ।
আমার এসআই চাচ্চু তার ছেলের জন্য আজ আমার কাছে শিশুদের মতো করে কাঁদছে আমার কাছে মিনতি করছে। সন্তানের জন্য সকল বাবা মা বুঝি এমন করে!
চাচ্চু উঠে এসে আমার চেয়ারের পাশে দাড়িয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
-মা’রে আমি জানি তোর মনে এখন কি চলছে। তবুও বলি আহান দুনিয়া থেকে চলে গেছে ঠিকই তবে ওর জন্য তোর ভালোবাসা আজও আছে। তোর থেকে ভালো কে জানবে যে ভালোবাসা না পেলে কেমন অনুভূত হয়?
তুই নাহয় অভিকের ভালোবাসা হয়ে থাক। একজনের ভালোবাসার মানুষ হয়ে নাহয় তুই হবি। যে তোকে ভালোবেসে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হবে।
মা’রে প্রকৃত সুখ হলো এই স্বার্থপর পৃথিবীতে তোকে কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে আর এই কেউ হবে তোর অভিক।
একবার ওর হাতটি ধরে দেখ নিরাশ হবি না। কারণ, তোর এই পচা বাবা মানুষ চিনতে ভুল করে না।
হিয়া তার চাচ্চুর পেটে মুখ গুজে নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো। আর ওর মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো হিয়ার পচা বাবা।
রেস্টুরেন্টে এমন এক দৃশ্য দেখে অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।
————
সন্ধ্যা নাগাদ বাড়িতে ফিরে এলো রোকন জামান আর হিয়া। আসার সময় সবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছে দুজন। হিয়া বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে অভিকের মুখটি দেখতে পেলো। একদিনেই বেশ মলিন হয়ে গেছে মুখটি। হিয়া আর নিচে না থেকে উপরে ওর রুমে চলে গেলো। বাইরে থেকে এসেছে ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন।
কাপড় নিয়ে ঢুকে পড়লো ওয়াসরুমে।প্রায় আধঘন্টার মতো সময় নিয়ে ফ্রেশ হলো হিয়া। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো ওর রুমের সিঙ্গেল সোফায় অভিক বসে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
হাতের তোয়ালে রেখে অভিকের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আমার রুমে এই অসময়ে?
-তোমার রুমে আমি কখনো সময় বা অসময় দেখে আসি না ফুল। তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিলো তাই বলতে এলাম।
-বল কি বলবি?
-আসলে বাবা তোমাকে মিথ্যে বলেছে, চাচ্চুকে বাবা কোনো টাকা দেয় নি।
-চাচ্চু, আমাকে বলেছে আজ দুপুরে।
-তাহলে আর কোনো সমস্যা রইলো না। বাবাকে বিয়ের জন্য আমি মানা করে দিবো।
-কেন?
-কেন আবার কি? তুমি তো এই টাকার রেশ ধরেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে তাই না। এখন যেহেতু সব সত্য জানো তাহলে এই বিয়ে করার দরকার নেই।
-আমি যদি বলি বিয়ের দরকার আছে তাহলে?
-মজা করো না ফুল আমার সঙ্গে। আমি সব মেনে নিতে পারি কিন্তু এই বিয়ের ব্যাপারে কোনোপ্রকার মজা আমি মেনে নিবো না।
-আমি মজা করছি না। আমি এই বিয়েতে রাজি আছি।
-মদ খেয়ে এসেছো নাকি ফুল?
-ছিহ,আমি এইসব খাই নাকি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোর বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখ।
আসলেই অভিকের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তাই। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো তার বাবার উদ্দেশ্য। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে বলছে,
আল্লাহ আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা যেন সত্যি হয়।
#চলবে