সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-২৩

0
1219

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২৩

#Tahmina_Akther

-আমার এতসব দেখে মা বাঁধা দিতে চাইতো কিন্তু আমি এইসব গায়ে মাখি নি। এরপর, মায়ের করা একটি কাজে আমি ভীষণ ভাবে ফেঁসে গিয়েছিলাম। যার জন্য এই চারটি বছর আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম।
আমার বড় খালামনি নাকি অসুস্থ ছিলো তাই উনাকে দেখতে যেতে হবে কানাডায় গেলাম মায়ের সাথে তিনমাসের তো ব্যাপার।
কিন্তু, তখনও আমি বুঝতে পারিনি মা আমাকে সেখানে নিয়ে একপ্রকার বন্দী করে রাখবে। আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব লুকিয়ে রাখে যেন আমি দেশে ফিরে আসতে না পারি। এভাবেই কেটে গেলো সাড়ে তিন বছর হালকা পাতলা জব করতাম।
একদিন এক জরুরি বিষয়ে মা বাড়িতে ছিলো না। এই ফাঁক আমি মায়ের রুমে তন্নতন্ন করে আমার পাসপোর্ট খুজলাম। আল্লাহ হয়তো আমার প্রতি সহায় ছিলেন পেয়ে গেলাম। মা’কে আর বুঝতে দেয় নি এরপর গোপনে টিকিট কেটে বাংলাদেশে চলে এলাম।
কিন্তু, এখানে আসার পর তোমার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তুমি বিয়ে করছো তাও আবার কাকে এই অভিককে!আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য কি কি করেছি তোমার ধারণার বাহিরে। জানো হিয়া আমি চাই নি মাকে জানে মেরে ফেলতে।
কিন্তু উনি কেন তোমায় সব বলে দিলো? আবার আমার পিছু পিছু চলে এসেছে। কিন্তু, এখান আর বাঁধা নেই তোমাকে আমার করে নিতে চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি এরপর আমরা এদেশ ছেড়ে চলে যাবো চিরজীবনের জন্য।

আয়ুশের কথা শেষ হতেই আমি উঠে দাড়ালাম। এই উন্মাদের সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে। কি করে পারলো তার বাবা ভাই জন্মদায়িনী মাকে হত্যা করতে!
হাতে আবার টান পরতেই আমার রাগ উঠে গেলো। ঘুরে এক থাপ্পড় মেরে বসলাম আয়ুশের গালে। ও হয়তো আশা করতে পারিনি যে আমি এমনটা আচরণ করবো ওর সঙ্গে।

অভিকও বেশ চমকে গেলো আমার আচমকা এমন বিহেভিয়ার দেখে ও আমার দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে আমি হাতের ইশারায় ওকে মানা করে দিলাম। এরইমাঝে আয়ুশের হুংকার শোনা গেলো।

– এই তুমি আমায় থাপ্পড় মারতে পারলে হিয়াপাখি! আমি কি এমন করেছি বলো? আমার কোনো কাজে তুমি দুঃখ পেয়েছো? বলো আমাকে?
কথাগুলো বলতে বলতে আমার দিকে হাত বাড়াতে চাইলো আয়ুশ।

-ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ মি? তোমার সাহস কি করে হয় বারবার আমাকে স্পর্শ করার?

-তোমাকে আমি স্পর্শ না করলে আর কে করবে? এই অভিক করবে!

-তোমার সাথে আমার কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে। তুমি কি মনে করেছো তোমার এই প্রেমগীত শুনে আমি হাওয়ায় উড়ে তোমার কাছে যাবো। নো, ইট’স ইউর ড্রিমস নট মাইন। তুমি একটা খুনি।তুমি আমার আহানের, তোমার বাবা এবং তোমার মায়ের হত্যাকারী। আমি তোমাকে পুলিশে দিবো চাচ্চু ওকে গ্রেফতার করো এখানকার সবাই সাক্ষী দিবে ওর নামে। এতগুলো মানুষের সামনে কিভাবে ও নিজের মা’কে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।

-সেই ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি হিয়া। রফিক ওর হাতে হ্যান্ডকাপ পড়াও।
কথাগুলো বললেন অভিকের বাবা।

-হা হা হা আমাকে গ্রেফতার করবেন। বেশ হাসি পাচ্ছে আপনার কথা শুনে। আমাকে এইখান থেকে কেউ একরত্তি সরাতে পারবে না। আমি আজ হিয়াকে আমার করে তবেই যাবো তার আগে নয়। দরকার হলে আরো দু-চারটা লাশ পড়বে এখানে।
আয়ুশ কথাগুলো বলতে বলতেই অভিকের দিকে গান তাক করলো। হিয়া সহ উপস্থিত সকলে ভড়কে গেলো এহেন কার্য দেখে।

-আয়ুশ গান নিচে নামাও, অভিককে কিছু করবে না তুমি। গান নামাও বলছি।

অভিককে নিজের পিছনে আড়াল করে বললো হিয়া। আর অভিক ভয় পাচ্ছে কখন জানি এই সাইকোটা আবার কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। যা কিছু ঘটুক তার পরিবার আর হিয়া যেন সহি সালামতে থাকে।

-ওকে নামালাম। তো বলো তুমি আমায় বিয়ে করতে রাজি আছো? আহহ

বলেই মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো আয়ুশ। কয়েকজন এসেই ওকে ধরে ফেললো।বেশ ছোটাছুটি করছে ওকে ধরে রাখাও বেশ মুশকিল যেন অসুরের শক্তি ওর সারা গায়ে!

আয়ুশের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসলো অভিকের বাবা রোকন জামান, আয়ুশের থুতনি চেপে বলছেন,

-আমি এত সস্তা খেলোয়াড় না বুঝলে। আমি জানতাম বিয়ের দিন তুমি এখানে অবশ্যই আসবে এবং তুমি সত্যিই এসেছো।যেদিন অভিক আমাকে মেসেজকৃত নাম্বার দিলো সে রাতেই আমি এই নাম্বারের মালিক কে জানতে পেরেছি।তুমি তোমার রেজিষ্ট্রেশনকৃত নাম্বার দিয়ে হিয়াকে হুমকির বার্তা পাঠিয়েছো। তোমার ইনফরমেশন দেখে আমি প্রথমে শকড হয়েছিলাম।তোমার বাবার নাম, তোমার মায়ের নাম সর্বশেষ তুমি আয়ুশ মির্জা।কিন্তু, হুবহু আহানের মতো দেখতে তার আরও একটি ভাই ছিলো আমরা কেউই জানতাম না। তোমার মায়ের ইচ্ছাকৃত কাজ হয়তো!
তুমি বহু পাপ করে ফেলেছো আয়ুশ এখন জেলে বসে নাহয় প্রহর গুনো কবে এর শাস্তি পাবে? তোমার সব কথার রেকর্ড আছে রেকর্ডারে। বেশি বেগ পেতে হবে না আমার তোমাকে শাস্তি দেয়াতে।

-হাহ হাসালেন আমায় রোকন জামান।আমাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি আটকে রাখতে পারবে না। আমি হিয়াকে আমার করেই ছাড়বো। হয়তো আজ নয়তো কাল কিন্তু হিয়া আমার হবেই।

-ও রিয়েলি! হিয়াকে কিভাবে তোমার করবে? হিয়া এখন অভিকের লিগ্যালি ও ধর্মমতে স্ত্রী। তুমি যেই কথাগুলো বলছো এগুলো যাস্ট জোক এখন।

-কই আমি তে দেখলাম না ওদের বিয়ে হতে। আপনি আমাকে মিথ্যে বললে কি আমি বিশ্বাস করবো?

-তোমার সাথে নিশ্চয়ই আমার মজার সম্পর্ক নেই।
ওদের দুজনের বিয়ে কখন হয়েছে জানো গতকাল সকালে অর্থ্যাৎ হলুদের দিন সকালে। আমি জানতাম তুমি এই বিয়েতে ঝামেলা করবে তাই সকলের সাথে পরামর্শ করে ওদের বিয়ে গতকাল সকালে সম্পন্ন করেছি আমি। তারা দুজন এখন স্বামী-স্ত্রী। আয়ুশ কখনো কি দেখেছো বিয়েতে এত কম মানুষ থাকতে? এই যে কয়েকজনকে দেখছো এদের মাঝে কয়েকজন আইনের লোক। এরা সবাই তোমার সব কূকৃর্তি সম্পর্কে জেনে গেছে। আর বাকি যারা আছে তারাও তোমার বিরুদ্ধে।

-এত বড় ধোঁকা আমার সঙ্গে

বলেই এক ঝটকায় নিজেকে মুক্ত করে নেয় আয়ুশ। হঠাৎ আয়ুশের এহেন কর্মে উপস্থিত সকলে ভয় পেয়ে যায়। এরই মাঝে ও বলে উঠে

-আমি যদি হিয়াকে না পাই তবে আর কেউ ওকে পাবে না

পরপর দুটো গুলির শব্দ ভেসে এলো। চারপাশে থমথমে অবস্থা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। শুধু হিয়ার একটি আর্তনাদই শোনা গেলো এই নিস্তব্ধ কক্ষ থেকে ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here