#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_২৬
#Tahmina_Akther
-পূর্ণ অধিকার বলতে শারীরিক অধিকারের কথা বলছো অভিক? কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললো হিয়া।
অভিক খানিকটা অবাক হলো হিয়ার কথা শুনে কারন, সে তো এমন মনোভাবে দেনমোহরের টাকা দেয় নি। ইসলাম ধর্মে নারীদের দেনমোহর দ্রুত পরিশোধের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে তাই ও পরিশোধ করে দিয়েছে। যেখানে মেয়েরা কাবিনের টাকা পেলে খুশি হয় আর ও কি না এই সব বলছে!
-ফুল, তুমি আমার সম্পর্কে ঠিক কেমন কেমন ধারনা রেখেছো জানতে পারি কি? কোনো কিছু বলার আগে অন্তত যাচাই তো করবে কেন কথাগুলো বলছি বা করছি?
বিয়ে শুধুই দুটি দেহের শারীরিক চাহিদা পূরণের চুক্তি নয়, দুটি হৃদয়েরও মিলন ঘটে এর মাধ্যমে। তুমি আমায় ভালোবাসো না আমি জানি তাই বলে তোমার সঙ্গে তোমারই বিরুদ্ধে গিয়ে আমি এমন কোনো আচরণ করবো না যা তোমার কাছে খারাপ লাগে।
-আসলে, আমি অন্য কিছু ভেবেছিলাম। সরি অভিক
মাথা নিচু করে বলল হিয়া। তার নিজের কাছেই এখন বেশ অস্বস্তি হচ্ছে ব্যাপারটি নিয়ে।
-ফুল,ভালোবাসা ছাড়া মেলবন্ধনহীন আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কে হৃদয়ের উষ্ণতা কতটুকু থাকবে তা একবার ভেবে দেখো আর সেখানে তুমি অন্যকিছুই বলছো।
আমি খাবো না, তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো।
-কিন্তু না খেলে ঔষধ খাবে কি করে?
-একটু পর কিছু ফল খাবো এরপর ঔষধ খেয়ে নিবো,তুমি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়ো আর একটাও কথা বলবে না। আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
হিয়া অভিকের কথার প্রেক্ষিতে আর কিছু বলতে পারলো না। উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে সুতি শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিছু সময় পর বেরিয়ে এসে দেখলো অভিক রুমে নেই।হাতের তোয়ালে রেখে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে হিয়া ভাবছে,
অভিকের সাথে মিলে কখনো যে এই ঘরের রুমমেট হবো কল্পনা করিনি। একদিন এই রুমেই তো অভিক আমায় তার ভালোবাসার কথা বললো, কত সাবলীলভাবে সে তার মনের কথাগুলো বলেছে।
“আমি তোমায় ভালোবাসি ফুল। তোমাকে ফুল বলে এই জন্যই সম্বোধন করি কারণ ফুল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধ, পবিত্রতম জিনিস ঠিক তোমার মতো। এই জন্যই আমি তোমার নাম রেখেছি ফুল। সেদিন তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি কবে থেকে সিগারেট খাচ্ছি? তবে শুনো, যেদিন থেকে আমি জানতে ও বুঝতে পেরেছি যে তোমাকে আমি ভালোবাসি ঠিক সেদিন থেকে। তোমার ভালোবাসার নেশা থেকে মুক্তি পেতে আমি সিগারেটের নেশাকে আপন করতে শিখেছি ফুল”
আপন মনেই হেসে উঠলাম আমি কিন্তু আরেকটি কথা মনে পড়তেই মন বিষাদে রূপান্তরিত হয়ে গেলো। কি অবস্থায় না হয়েছিল সেদিন অভিকের ভাগ্যিস ছোট আব্বু সময়মতো এসেছিলো।অভিক আমার বয়সে ছোট হলেও জানে,
“নিজের যেটা চাই সেটা অন্যকারো কখনোই হতে পারে না ”
অথচ আমি এখনো বুঝতেই পারছি না আমার মনে কি চায়?
মনের ভাবনা গুলো একপাশে রেখে বারান্দায় গেলাম মহাশয়কে খুঁজতে কারণ রুমের দরজা ভিতর থেকে লাগানো উনি বাইরে যান নি অর্থ্যাৎ বারান্দায় আছেন। ঠিক উনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। চারপাশে কেমন গন্ধ লাগছে, আর কেমন যেন ধোয়াশা। আরেকটু সামনে এগুতে বুঝতে পারলাম উনি সিগারেট খাচ্ছেন। আমার বেশ রাগ হলো ওর উপর । কেন ও এইসব ছাইপাঁশ খাবে?
ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ও আমাকে দেখতে পেয়ে সিগারেট পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেললো।আমার থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো।
-এখন কি আমাকে আর ভালো লাগছে না নাকি গায়ের থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে যে দূরে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে?
-সব সময় একচামচ বেশি বুঝো তুমি। আমার গায়ের সিগারেটের গন্ধ যদি তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই দূরত্ব বজায় রেখেছি।
-হুম, বুঝলাম। তুমি কি নামাজ পড়ো অভিক?
-ফজরের মাঝে মাঝে মিস হয়ে যায় আর চার ওয়াক্ত সবসময়। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছো? আমাদের বাড়ির সকলে যে নামাজ পড়ি এটা তোমার জানার কথা, রাইট?
-হুম,আমি জানি কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইলাম তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমার কিছু কথা আছে মনোযোগ দিয়ে শুনবে, ঠিক আছে?
-হুম শুনবো বলো তুমি।
– জানো ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। বিষয়টি জেনেও মানুষ নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর পরও মানুষ ধূমপান ছাড়তে রাজি নয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
এই আয়াতে সরাসরি ধূমপানের কথা উল্লেখ না থাকলেও ধূমপান এমন একটি কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! যে সমস্ত পাক-পবিত্র (উত্কৃষ্ট) জিনিস আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি সেগুলো খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ধূমপান করা কোনো মুমিনের জন্য শোভা পায় না। কোনো মুমিন ধূমপান করে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ অপরের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৩৫)।
এখন তুমি বলো ধূমপান করে নামাজ আদায় করলে কোনো লাভ হবে যদি নিজেকে একটু একটু করে মরণের দিকে ঠেলে দেও?তোমার যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে তোমার পরিবারের কি হবে ভেবে দেখেছো?তোমার কাছে হয়তো কথাগুলো খারাপ লাগতে পারে।
কিন্তু তুমি হয়তো ভেবেছো, আহারে আমার বৌ আমায় রোমান্টিক ভাবে সিগারেট খেতে না করবে কিন্তু আমার এই বিষয়ে রোমান্টিকতা আসে না, তাই এভাবেই বললাম। এবার এইসব ছাইঁপাশ খাওয়া বন্ধ করো।
অভিক বেশ মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনলো এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, আজ থেকে সে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিবে।অন্তত তার ফুলের জন্য হলেও কি সুন্দর করে তাকে বকা দিচ্ছে! এই বকা গুলো শোনার জন্য হলেও তাকে দীর্ঘদিন বাঁচতে হবে।
#চলবে