সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-২৭

0
1394

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২৭

#Tahmina_Akther

-এভাবে দেয়াল পা ঠেস দিয়ে না দাঁড়িয়ে রুমে চলো। রাতের খাবার খেতে হবে এরপর ঔষধ। আর যদি নিয়ম মতো না চলো তাহলে এই ভাঙা হাত সারাজীবন গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।

হিয়া কথাগুলো কথা শেষ করার আগেই হেচকা টানে ওকে কাছে টেনে নিলো অভিক।আরেহ বলে অভিকের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো হিয়া।
হিয়া অভিকের বুক থেকে মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই ওর বেবি চুল গুলো সারা কপালে ছড়িয়ে পড়লো।অভিকের মনে তখন উদম্য ইচ্ছে জাগলো হিয়ার কপালের চুলগুলো সরিয়ে ওর ঠোঁটের উষ্ণ পরশ ছুঁয়ে দেবার।
অভিক ফুঁ দিয়ে হিয়ার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো এরপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ওর ফুলের কপালে।

হিয়া অভিকের এমন আচমকা বিহেভিয়ারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো বেশ লজ্জাও পেলো এখন অভিকের সামনে দাড়িয়ে থাকতেও বেশ লজ্জা লাগছে।

অভিকের থেকে ছাড়া পেতে চাইলেও হিয়া ছাড়া পেলো না। হিয়ার কানের সামনে মুখ এনে অভিক বললো,

-আমার ফুল কি তবে লজ্জা পেলো?আমি তো তোমাকে লজ্জা দিতে চাই নি কিন্তু তোমার এই কপাল দেখে কেন যেন লোভ জেগে গেলো একটুখানি পরশ দেয়ার জন্য তাই লোভ নিবারণ করলাম।

বলেই হিয়ার কানে বেশ শব্দ করে চুমু খেলো অভিক।আর হিয়া এবার যেন পুরো ফ্রিজড হয়ে গেলো।শরীরটাকে কোনোভাবে অভিকের থেকে ছাড়িয়ে একদৌড়ে রুমে চলে এলো।এরপর, বুকে হাত রেখে দেখলো হৃদস্পন্দন যেন দিগুণ বেড় গেছে।ছোট ছোট এই পরশগুলোতে এত হৃদয় কাপানো অনুভূতি হয় কেন?

আর এদিকে হতে হিয়াকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে অভিক হেসে ফেললো। বেজায় নাস্তানাবুদ হলো তার বউটা।
“বউ” শব্দটা দু’বার উচ্চারণ করলো অভিক।বউ শব্দটিতে যেন কি এক জাদু আছে? নিজের ভালোবাসার মানুষকে বউ হিসেবে পাওয়া ভাগ্য করে পাওয়া যায়। তার ফুল এখন তার বউ।যাকে পাবার জন্য কতশত রাত কেঁদেছে আলোর অন্তরালে।সকালে চোখেমুখে পানি দিয়ে চোখ ফোলা কমানোর সেকি অদম্য চেষ্টা!
আজ সে পেয়েছে তাকে সবই হয়তো বিধাতার ইচ্ছায়।নয়তো হিয়া কখনোই তার হবার কথা ছিলো না।

তবে,আয়ুশের জন্য বেশ খারাপ লাগছে।ভালোবাসা সত্যিই মানুষকে পোড়ায়। প্রথমত, তার মা আয়ুশকে আমাদের সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলো,কিন্তু, লাভ কিছুই হলো না উল্টো নিজের স্বামী, ছেলে মেরে ফেললো নিজেরই ছোট ছেলে এরপর তাকেও। শেষমেষ, আয়ুশ নিজেও মরলো।তার ভালোবাসা হয়তো ঠিক ছিলো হিয়ার জন্য কিন্তু ওকে আপন করে পাবার জন্য ও যে পথ বেছে নিয়েছিলো সে পথ সঠিক ছিলো না।

গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো অভিক।গিয়ে দেখলো হিয়া রুমের সাজানো ফুল গুলো সব সরিয়ে পলিথিনে ভরে বারান্দায় রেখে আসছে।অভিককে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো,

-সব পরিষ্কার করে ফেলেছি।তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিবো এখন?

-হু ফ্রেশ হওয়ার তো দরকার। কিন্তু এই শার্ট খুলবো কিভাবে? ভাগ্যিস, হসপিটালে শেরওয়ানি চেঞ্জ করিয়েছিলো নয়তো যে কি হতো এখন?ওই ড্রয়ারে একটা কাঁচি আছে ওটা নিয়ে আসো তো।

-কাঁচি দিয়ে কি করবে?

-শার্টের ডান হাতাটা কেটে ফেলবে জলদি নিয়ে এসো।

অগত্যা, হিয়া ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে এনে শার্টের হাতাটি কেটে ফেললো।এরপর,শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলে ফেললো। হিয়া তো আর তাকালো না অভিকের দিকে কিন্তু আমাদের অভিক হিয়ার থেকে আর চোখ সরিয়ে রাখলো না।বোতাম খোলা শেষ হতেই হিয়া আস্তে করে শার্টটি খুলে রাখলো।এরপর,অভিককে ওয়াশরুমে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে মুছিয়ে দিলো। রুমে এনে বসিয়ে দিলো সিঙ্গেল সোফায়। এরপর,খাবার সমেত ট্রে এনে রাখলো সোফার সামনের ছোট টেবিলের উপর।একটি প্লেটে ভাত নিয়ে, গরু মাংসের তরকারি নিয়ে মাখিয়ে অভিকের মুখের সামনে তুলে ধরলো।অভিক বিনাবাক্যে খেয়ে নিলো।আর হিয়া মনে মনে বলছে, এতক্ষণ তো বেশ ফল খেয়ে ঘুমানো হচ্ছিল আর এখন যেই না ভাত মাখিয়ে দিচ্ছি এখন খাচ্ছে চুপচাপ বসে। অভিকের খাওয়া শেষ হতেই মুখ মুছিয়ে দিলো হাত দিয়ে। অভিক হিয়ার শাড়ির আঁচল টেনে মুখ মুছে বসে রইলো।হিয়া কোনোকিছু না বলে ভাত খেয়ে নিলো।অভিক পুরোটা সময়জুড়ে তাকিয়ে আছে তার হিয়ার মাঝে।

-এইভাবে তাকিয়ে থাকলে কি কিছু খাওয়া যায় অভিক?

-কেন আমি কি মানা করছি?তুমি খাও আমি দেখি। আমার হাত যদি ভালো থাকতো না তোমাকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম যেমনটা আগে খাইয়ে দিতাম মনে আছে তোমার?

-হুম মনে আছে।এখন, এই ঔষুধ গুলো খাও।
প্যাকেট থেকে ঔষধ বের করে অভিকের হাতে দিয়ে।
অভিক ঔষধ খাওয়া হলে হিয়া বলে উঠে

-খাটে যাও আমি এগুলো গুছিয়ে রেখে আসি।

-আরে আরে এখন তুমি রুম থেকে বের হলে সবাই কি ভাব্বে বলো তো?
একপাশে রেখে দাও সকালে জরি খালা এসে নিয়ে যাবে।

হিয়া ভেবে দেখলো সত্যি তো এখন বের হলে সবাই কি ভাব্বে?

-অভিক ঘুমোতে যাও, আমি একটু পরে শুবো।

-সমস্যা নেই, তবে আমার মাথাটা একটু টিপে দিবে প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
বেশ অনুনয়ের স্বরে বললো অভিক। হিয়া আর মানা করেনি। অভিককে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে বাম করে অভিকের শিয়রের কাছে বসলো।এরপর হাতে একটু বাম নিয়ে কপালে লাগিয়ে আস্তে করে টিপে দিচ্ছিলো হিয়া।

প্রায় দশমিনিট হবার পর হিয়া দেখলো অভিক ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে করে উঠে ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে অভিকের গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। লাইট নিভিয়ে খাটের একপাশে শুয়ে পড়লো হিয়া। ভাগ্যিস অভিক ঘুমিয়ে পড়েছে নয়তো বেশ অস্বস্তি হতো ওর পাশে ঘুমাতে।

এদিকে, হিয়া লাইট নিভানোর পরই অভিক চোখ মেলে তাকায়।মনে মনে বলছে,

-আমি জানি আজ সারাদিনের ধকলে হিয়ার শরীর বেশ খারাপ লাগছে।ওর হয়তো আজ আমার পাশে শুতে অস্বস্তি হতে পারে তাই একটু ঘুমের ভান ধরলাম। ও এখন এমনিতেই ঘুমিয়ে পড়বে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here