#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_২৮
#Tahmina_Akther
সকালের মিষ্টি রোদের পরশে ঘুম ভাঙল হিয়ার।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতেই চেনা ঘরটি বেশ অচেনা মনে হলো।পরক্ষণেই খেয়ালে এলো,নতুন জীবনে পর্দাপণে সব পরিবর্তনের মাঝে তার ঘরখানাও পরিবর্তন হয়েছে।
অভিক কি করছে দেখার জন্য পাশ ফিরে তাকালো,
-একি অভিক তো নেই! এত সকালে গেলো কোথায়? বারান্দায় গিয়ে দেখি তো আছে কি না?
খাট থেকে নেমে বারান্দায় যেতে দেখি মহাশয় একধ্যানে দাঁড়িয়ে আছেন হয়তো কোনো ভাবনায় মশগুল।
-অভিক?
কারো ডাকে ভাবনার জগত থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলাম। পিছনে ঘুরে দেখলাম আমার ফুল দাঁড়িয়ে আছে। এলোমেলো শাড়ি, কাজল লেপ্টানো ঘুম জোড়ানো চোখ, এলোমেলো চুলের খোপায় বেশ মোহনীয় দেখাচ্ছে ওকে।
ধীর পায়ে এগিয়ে দাড়ালাম ওর সামনে।
-ডেকেছো আমায়? কিছু প্রয়োজন তোমার?
– না তেমন কিছু প্রয়োজন নেই, এমনিতেই ঘুম থেকে জেগে তোমার দেখা পেলাম না তাই তোমায় খুজছিলাম। এখানে এসে তোমায় পেলাম ঠিকই তবে ভাবনার জগতে মগ্নরত অবস্থায়।তোমাকে ভাবনার জগত থেকে বের করতে ডাক দিয়েছি।
চলো তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দেই,দুপুরে তো আবার রিসিপশন আছে তাড়াতাড়ি এসো।পরে আর সময় পাবো না। ছোট আম্মুর উপর তখন বেশ চাপ পড়ে যাবে।
-হুম,আমার গোসল করা প্রয়োজন তুমি একটু কষ্ট করে আবির বা সাঈদকে কল করে বলো আমাদের রুমে আসতে।
-কিন্তু, ওদের কল দিব কেন?
-কারণ, আমাকে গোসল করাতে ওরা সাহায্য করবে তাই।
-কিন্তু,
-কোনো কিন্তু নয় যা করতে বলেছি সেটা করো।
আচ্ছা, বলে রুমে এসে আবিরকে কল করে আসতে বললো হিয়া। পাঁচ মিনিটের মাঝে দরজায় নক পড়লো।হিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আবির রুমে প্রবেশ করে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে? কল করে আসতে বললে যে?
-ফুলকে আমি বলেছি তোকে কল করে আসতে বলতে।দোস্ত, একটু হ্যাল্প কর, আমায় গোসল করিয়ে দিবি?
বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো অভিক,
-অবশ্যই করিয়ে দিবো চল।হিয়া ওর তোয়ালে দিয়ে যাও তো।
বলেই অভিককে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আবির।
এদিকে, হিয়া মনে মনে বলছে,
-কি হতো যদি আমি গোসল করিয়ে দিতাম? এখন আবির ভাইয়া কি মনে করবে? কিন্তু, এভাবে আমিও তো পারতাম না ওকে গোসল করিয়ে দিতে অস্বস্তি হতো। হয়তো অভিক বুঝতে পেরেছে যাই তোয়ালেটা দিয়ে আসি।
—————–
-কি রে তোদের মাঝে সব স্বাভাবিক আছে তো? মানে বিয়ের পরদিন সকালে আমাকে ডেকে নিয়ে আসলি তোকে গোসল করিয়ে দিতে।
-আবির, বোকাদের মতো কথা বলিস না। বিয়েটা হয়তো আগেই হয়েছে তবুও কাল যে পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম এইসময়ে ওসব ব্যাপার জাস্ট উইয়ার্ড। আর হিয়াকে কিছু সময় দিতে চাই আমি যেন কোনোপ্রকার দ্বিধা না থাকে ওর মনে আমাকে নিয়ে।আমি চাই ও আমাকে ভালোবেসে আমার কাছে আসুক।
-ওকে দোস্ত বুঝলাম, আপনি আপনার ফুলের ভালোবাসায় পুরো দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
এখন হাতটা একটু আলগা কর তো পলিথিন পেচিয়ে দেই নয়তো পানিতে ভিজে যাবে ব্যান্ডেজ। এখনো কি ব্যাথা আছে?
-হুম, ব্যাথা তো আছেই। জানিস না ভেবে ছিলাম মরে যাবো। তবুও মনের মাঝে একটা আলাদা আনন্দ ছিলো যে আমার হিয়া তো আমার স্ত্রী, আমার অর্ধাঙ্গিনী, পরকালেও তাকে আমি আমার করে পাবো।
কিন্তু, দেখ আল্লাহ আমায় সহি সালামতে রাখলেন।
-তোর যখন গুলি লাগলো আর মাটিতে পড়ে গেলি, হিয়ার সে কি চিৎকার? হিয়া তোকে একদিন অনেক ভালোবাসবে বন্ধু। তোর এতদিনের সুপ্ত ভালোবাসা হিয়ার মনের দরজায় ঠকঠকিয়ে জানান দিচ্ছে তোর আগমন হয়তো একদিন হিয়ার মনের দরজা খুলবে আর সেদিন তুই হবি হিয়ার হৃদয়ের একছত্র মালিক।
অভিক হেসে ফেললো তার বন্ধুর কথা শুনে জবাবে বললো,
-আমার ভালোবাসা নিয়ে গবেষণা না করে তোর ভালোবাসার খবর কি সেটা বল?
-তিয়ানা বেশ রেগে আছে।আজ তোদের রিসেপশন শেষ হলে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।কারণ, তিয়ানা ওর মুখে বলে দিয়েছে ও যেটা বলে ও সেটা করে ছাড়বে, যদি সত্যি সত্যি আরেকজনকে বিয়ে করে তাহলে আমার কি হবে দোস্ত আমি তো পাগল হয়ে যাবো ওই শাঁকচুন্নিকে ছাড়া।
-হা হা হা, তিয়ানা যদি শুনে তুই ওকে শাঁকচুন্নি বলেছিস তাহলে তোর মাথার একটা চুলও বোধহয় অক্ষত থাকবে না।
-তা ঠিক, ব্যস তোর গোসল সম্পূর্ণ।হিয়া তোয়ালে লাগবে না এখানে আছে একটা।
আবির বেশ জোরেই বললো যেন হিয়া শুনতে পায়।হিয়া তোয়ালে নিয়ে আসছিলো কিন্তু, আবিরের কথা শুনে রেখে দিলো।
অভিক আর আবির ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই হিয়া ওয়াশরুমে চলে গেলো।শব্দহীন ভাবে চলে যাওয়াতে আবির আর অভিক একে অপরের মুখের দিকে তাকালো ইশারায় এটাও বললো
– কি হয়েছে?
আবার নিজেরা বললো
-জানিনা,
অভিককে কাপড় চেন্জ করিয়ে আবির চলে গেলো কারণ ওর শরীর খানিকটা ভিজে গেছে ওর এখন শাওয়ারের প্রয়োজন।
অভিক বসে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো,অনেকেই বিয়ের জন্য অভিবাদন জানাচ্ছে।কিছু কমেন্টে রিপ্লাই করে মোবাইল রেখে দিলো।
এরইমাঝে দরজা ঠেলে ওর নানু, মিরা আর তিয়ানা প্রবেশ করলো।মিরা আর তিয়ানার মুখে ছিলো দুষ্টহাসি।অভিকের নানু রুমে এসে হিয়াকে দেখতে না পেয়ে অভিককে বললো,
-কি রে তোর ফুল কই?আবার দেখি এই ব্যান্ডেজ নিয়ে গোসল করছিস?কে গোসল করিয়ে দিলো?
-একসাথে কত প্রশ্ন করো তুমি! ফুল ওয়াশরুমে, গরম লাগছিলো তাই আবিরের সাহায্যে নিয়ে করলাম। পেয়েছো জবাব এবার এই চোরামার্কা হাসি দেয়া বন্ধ করো তোমরা।
-ও আমরা তো ভাবলাম, আমাদের অভিক সাহেব আজ পুরোনো রাজাদের মতো তার রানীর হাতে স্নান করবেন। কিন্তু আমাদের ভাবনার জলাঞ্জলি দিয়ে উনি গোসল করেছেন উনার সখার হাতে বলেই হাসতে লাগলো মিরা সাথে নানু আর তিয়ানাও।
অভিক বেশ লজ্জা পাচ্ছে ওদের ঠোঁটকাটা কথা শুনে।
হিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলো ওরা তিনজন কি নিয়ে হাসাহাসি করছে অভিকের সাথে?মিরা হিয়াকে বেরুতে দেখেই হিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে এনে অভিকের পাশে বসিয়ে দিলো।এরপর, ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেললো।
অভিক আর হিয়া কি রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছে না। মানে এত কম সময়ে কি করলো?নানু এবার বলে উঠলো,
-তোদের দু’জনকে নিচে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু, থাক তোদের আর যাওয়ার দরকার নেই। এখানেই নাশতা পাঠিয়ে দিবো তোরা খেয়ে নিস।আর চিন্তা করিস না আত্মীয় স্বজন তেমন কেউ নেই কিছু বলবে না তোদের নিয়ে।
দশটায় পার্লার থেকে দুজন মেয়ে আসবে হিয়াকে সাজিয়ে দেয়ার জন্য।আর হিয়া অভিককে একটু তৈরি করে দিস। পার্লারের মেয়েরা এলে ও ওর বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসে থাকবে কেমন?
আমি তোদের সবকিছু পাঠিয়ে দিবো। মিরা তিয়ানা চলো ওদের খাবারগুলো একটু কষ্ট করে এনে দাও তো।
-কিন্তু, নানু আম্মু-আব্বু কই? একবারও এলো না আমায় দেখতে?
বেশ মন খারাপের সুরে বললো হিয়া।
-বাড়ির গার্ডেনে রিসেপশনের ব্যাবস্থা করেছে তাই একটু ব্যস্ত সবাই। একবাড়িতে তো আছিস কথা হবে চিন্তা কিসের? তোর তো ভাগ্য ভালো বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই আছিস।
ওই যে ওরা খাবার নিয়ে এসেছে খেয়ে নে আমরা চলি পরে দেখা হচ্ছে।
ওরা তিনজন চলে যেতেই হিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভিককে খাবার খাইয়ে নিজে খেয়ে নিলো।
ঘড়িতে সময় তখন সাড়ে নয়টা। অভিককে আস্তে করে সাবধানে শেরওয়ানি পরিয়ে দিলো হিয়া।
সমস্যা হলো অন্যক্ষেত্রে অভিকের চুলগুলো ছুঁতে পারছে না। কারণ, অভিকের বুক সমান লম্বা হিয়া হয়তো অভিককে মাথা নিচু করতে হবে নয়তো হিয়াকে উঁচু কিছুতে দাঁড়াতে হবে।
অভিক কিভাবে যেন বুঝে গেলো তাই হিয়ার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।হিয়া হেসে অভিকের চুল গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে কপালে ছড়িয়ে দিলো।
-তোমায় বেশ সুন্দর লাগছে অভিক।কারো নজর যাতে না লাগে।
-কারো নজর আমার চাই না শুধু তোমার নজর আমার উপর থাকলেই চলবে।
হিয়া অভিকের কথার জবাব না দিয়ে লাজুক হাসি দিলো।
-হ্যালো আভিক, হাউ আর ইউ? ও মাই গড ইয়া! ইউ আর সো মাচ প্রিটি।
বলেই কেউ একজন হিয়াকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলো তবে সে বিফল হলো কারণ আমাদের অভিক তার হিয়াকে কাছে টেনে নিলো।
হিয়া অবাক হয়ে কথা বলার মালিকটির দিকে তাকিয়ে আছে কারণ, বিদেশি এক ছেলে যাকে কি না হিয়া চিনে না কিন্তু ওকে চিনে কিভাবে?
হয়তো অভিকের সাথে এই ভিনদেশির পরিচয় আছে!
#চলবে