ইস্ক পর্ব-৬

0
1718

#ইস্ক
#সাদিয়া


ইয়াদের মনে কিছু একটা প্রবল বেগে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। কোথাও যেন সে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে আটকে আছে। বৃষ্টির ঝাপটা চোখ অস্পষ্ট করে দিচ্ছিল বলে ইয়াদ ডান হাতে চোখ মুছে আবার অপলক দৃষ্টে তাকাল সেই তরুণীর দিকে। ভেতরের এমন নাম না অনুভূতির ছুটাছুটিতে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে সে।
তিতিলের মনে হচ্ছিল কেউ তার পিছনে আছে। কিছুক্ষণ ধরেই এমন টা মনে হচ্ছে। তিতিল হঠাৎ করে পিছন ফিরতেই দেখতে পেল সুদর্শন সেই যুবক কে। যাকে ফোনের ছবিতে দেখে এসেছে। প্রতিরাত স্বপ্নে এসেছে। এটা তো সেই পুরুষ। তিতিলের চোখ বেয়ে দুই ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরল। কিন্তু তা বুঝার সাধ্যি কারো নেই। বৃষ্টি ভেজা চোখ মুখে দুই ফোঁটা নোনা পানি খুঁজ কে নিবে?

ইয়াদ তখনো শ্বাসবন্ধ হয়ে আসা পরিবেশে আটকে আছে। সামনের সেই তরুণীর চোখ গুলি হৃদয়ে ঢেউ তুলে দিচ্ছিল বারবার। চুল দিয়ে গাল ঠোঁট ঢাকা। চুল গুলি যে মেয়ের মস্তবড় পাহারাদার এতক্ষণে সে এটা বেশ বুঝেছে। মুখ বলতে ওই চোখ গুলিই যা অবলোকন করেছে সে। হঠাৎ খেয়াল করল মেয়েটি আবার উল্টো পিঠে ঘুরে ভিজে ওড়নাটা মাথায় তুলে নিল। ইয়াদের কপালে কয়েকটা ভাঁজ পরল তখন।
তিতিলের হৃদয় টা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই বিরহের যন্ত্রণা অসহনীয়। কেউ যেন তার পিঠে ছুড়িঘাত করার কষ্ট অনুভব করছে সে। দম টা আটকে আসছিল তার।কোনো রকম ইয়াদের পাশ কাটিয়ে আসার সময় লোকটা বলল,
“কে তুমি?”
পা আটকে আসল তার। বরফে একদম জমে যাওয়ার অভিপ্রায়। নিশ্বাস তার নাকের ঢগায় এসে আটকেছে। শরীর টা সামনে এগুনোর মতো শক্তি অবশিষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে না। মাথা টাও ঘুরছে। মাথা ঘুরে না পরলেই হয়। ঘনঘন ভিজে চোখের পাতি ফেলল তিতিল তবে ফিরে তাকাল না।

ইয়াদ আবার জিজ্ঞেস করেছে,
“কি হলো কে তুমি?”

তিতিলের বলার মতো শক্তি নেই। আর গলায় এসে সব যেন দলা পাকিয়ে গেছে। শরীর গুলোচ্ছে তার। দেরি না করে তিতিল কোনো রকম সেখান থেকে চলে এলো। ইয়াদ পিছন থেকে কয়েকবার ডাকল। কিছু না বলে চলে যাওয়াতে খানিক রাগ হলেও থামিয়ে নেয় সে। মেয়েটা কে সে জানতে চায়। চোখ গুলি বারবার ভেসে উঠছে কি না!

হিমা দৌড়ে ইনার রুমে গেল। আজ তো সে বাসাতেই আছে ইয়াদ আসছে বলে। গিয়ে দেখতে পেল ইনা ফোনে কথা বলছে। ‘আপু আপু’ বলে হিমা একদম তার কাছে গেল। হিমা কে ব্যস্ত হয়ে আসতে দেখে ইনা কল কেটে তাকে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে?”

“….

“কিরে বল কি হয়েছে?”

“আ আপু ভাইয়া..”

“কি হয়েছে ভাইয়ের?”

দম নিল একটু হিমা। তারপর বলল,
“বৃষ্টি হচ্ছিল বলে আমি তিতিল আপুর রুমে গেলাম গোসলের কথা বলতে গিয়ে দেখি নাই। তারপর ছাদে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম ভাইয়া আর তিতিল আপু ভিজে শরীরে দাঁড়িয়ে ছাদের মাথায় কি যেন বলছি। আপু ভাইয়া যদি তিতিল আপু কে..”

ইনা কতক্ষণ নিজের মতো করে কিছু একটা চিন্তা করল। তারপর হিমা কে কড়া গলায় শাসন করল ওদের বিষয়ে নাক না গলাতে। হিমা হেসে চলে যাওয়ার পর ইনা ভাবতে লাগল কিছু। হুট করে ঠোঁটের এক পাশ খানিক প্রসারিত হলো তার।

—-
মাঝরাত হয়ে গেলেও ইয়াদের চোখে ঘুম আসছে না। চোখের পাতায় ওই ঘন কালো ভিজে পাপড়ির দুটি চোখ ভেসে উঠছে। হৃদয়ের একটা অনুভূতি বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলছে বারবার। ও কেমন মোহিনী? হৃদয় নাড়া দেওয়া কি মুখশ্রী। যদিও দেখা হয় নি। ছটফট না করে ইয়াদ উঠে গেল। মুহূর্ত গুলি বড্ড বিরক্তিকর আর অস্থির লাগছে।

তিতিলের ঘরে আলো জ্বলছে। হাতে তার হুমায়ূনের “হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম” বইটা। হিমু চরিত্র টা তার কেমন যেন ভালো লাগে না তবুও পড়ছে। হিমু কে ভালো না লাগার একমাত্র কারণ হলো হলুদ পাঞ্জাবি পরা। যেখানে ইসলাম ছেলেদের জন্যে হলুদ রঙ হারাম করে দিয়েছে। কিন্তু হিমুর ওমন উদাসীন ভাব টা কেমন যেন লাগে। কিছুতে হয়তো লোকটা তেমন গুরুত্ব দেয় না, আবার হয়তো দেয়। শেষের অংশটা তার হৃদয়ে একটা অনুভূতির নাড়া দিয়ে উঠল। বইটা বন্ধ করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। ঠোঁট উল্টে উপরে তাকাল। ঘাড়টা খুব ধরেছে এতসময় নুয়ে বই পড়ায়। বইটা নিয়ে বসেছিল ইয়াদের ওমন মায়ামাখা সুদর্শন মুখটা ভুলার জন্যে। মায়ায় পড়তে চায় না সে। কষ্টই পাবে এতে।

তিতিল লাইট নিভাতে যাবে তার আগে দরজায় টোকা পড়ল। তিতিল ধীর গলায় জিজ্ঞেস করল “কে?”

তিতিলের মিষ্টি কন্ঠে বিস্মিত হলো ইয়াদ। এই রুমে কে থাকে জানতে ইচ্ছা হলো বলে এসেছে সে। ভেবেছিল হিমার ঘর। ইয়াদ কিছু বলতে পারছে না। টোকাও দিতে পারছে না।

তিতিল জিজ্ঞেস করল,
“কে ওখানে? আম্মা?”

আৎকে উঠল ইয়াদ। তার মানে এটা তিতিল নামের মেয়েটার রুম? অনেক কিছু ভাবতে লাগল সে কপাল কুঁচকে।

ইয়াদ শান্ত গলায় বলল,
“দরজা খুলো।”

কেঁপে উঠে তিতিলের শরীর। মন টা এখনো কাঁপছে। তার দরজার সামনে কি ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে? নয়তো কি? এবাড়িতে সে ছাড়া কোনো পুরুষ তো আর নেই। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসেছে সে। এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কি করবে কি বলবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে। শরীর টা এমন অবশ লাগছে কেন বুঝতে পারছে না। ঠোঁট গুলি এখনো মৃদু কাঁপছে তার।

“কে তুমি?”

কি উত্তর দিবে সে? কি বলবে সে তার বউ? নাকি দরজা খুলে দিবে? মাথায় তো কিছু আসছে না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাই মেরে। চারপাশ শূন্য লাগছে তিতিলের। গলাটা শুকিয়ে শুকনো কাঠ হয়ে গেছে।

“কি হলো? কে তুমি? দরজা খুলো।”

তিতিল কিছু বলতে পারছে না। লাইট টা কোনো রকম অফ করে ছুটে বিছানায় চলে গেল সে। বুকটা কাঁপছে শব্দ তুলে। নিশ্বাসের গতি বেড়েছে তার তবুও চুপ করে আছে।
ইয়াদ তখনো দুইবার ডাকল দরজায় দাঁড়িয়ে। আবার ডাকতে যাওয়ার আগে শুনা গেল,
“এখানে কি করছিস ইয়াদ?”

খানিক চমকে ইয়াদ পাশ ফিরে তাকাল। কণ্ঠস্বর চিনে তিতিলও শুয়া থেকে উঠে বসল।

ইয়াদ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই রুমে কে থাকে মা?”

“কেন কোনো দরকার?”

“ন না কোনো দরকার না। রাত ১ টা ২৫ বাজে এখনো লাইট জ্বালানো দেখে ভেবেছিলাম হিমা থাকে। কিন্তু ভেতর থেকে অন্য..”

“হিমার রুম ওদিকে।”

“তাহলে এখানে..”

“এখানে তিতিল থাকে।”

“….

আর কিছু বলতে পারল না ইয়াদ। চুপচাপ মায়ের পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিজের রুমে। ভেতরটা এমন অস্থির হওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। নিজেকে খুব উদগ্রীব লাগছে।

রেহেলা বেগম একবার পিছনের দিকে তাকিয়ে আবার দরজায় তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। এমনো হতে পারে যে ছেলে বউয়ের মুখ দেখেনি সেই ছেলেই বউয়ের জন্যে পাগল হতে পারে। উনার কেন যেন এমনটাই মনে হচ্ছে।

ইয়াদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পায়চারি করছে। মুখে স্পষ্ট উদ্বিগ্নতার ছাপ এঁটে আছে। ভেতরটা অস্থির লাগছে ওই মোহনীয় তরুণী কে দেখার স্পৃহায়। নিজেকে ব্যাকুল লাগছে যে। যতক্ষণ না তরুণীর মুখশ্রী চক্ষুদ্বয়ের সামনে স্পষ্ট ভাবে অবলোকিত না হচ্ছে হৃদয় ব্যাকুলতার গহ্বরে যে আটকে রইবে!

চলবে♥

(অনেকের কথা আমি গল্প বড় করে দেই না কেন। আমি অসুস্থ এইটা আর কতবার বলব আপনাদের? আশা করি এরপর বড় বড় করবে না। তবুও আমি চেষ্টা করি পাঠক❤️ গঠনমূলক মন্তব্য রাখবেন আশা করি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here