ইস্ক পর্ব-১৪

0
1522

#ইস্ক
#সাদিয়া

১৪
তিতিল চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু কেউ কাছে নেই এগিয়ে যাওয়ার। বড্ড বিরক্ত আর অসহায় লাগছে নিজেকে। ঘর থেকে বেরও হতে পারবে না এই অবস্থায়। চোখ মুখ এক করে রেখেছে সে। হিমা আপু কেউ নেই হয়তো সাজে ব্যস্ত।
ইয়াদ তিতিলের রুমেই আসছিল। ওর চিৎকার শুনে ভরকে গেল ছেলেটা। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সে।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। তিতিল দরজায় তাকিয়ে ইয়াদ কে দেখে আতকে উঠল। স্নিগ্ধ চোখে ইয়াদ কে একবার দেখল। পিত কালার কোটপ্যান্ট পরেছে ছেলেটা। ভেতরে সাদা শার্ট। সুঠাম দেহে যা মনকাড়া লাগছে তিতিলের বলে বুঝানো যাবে না। ক্লিন সেপে জামকালো ঠোঁট গুলিতে মুখ একদম ভেসে উঠছে। চুল গুলি স্পাইক করে রাখাতে আরো দারুণ রকম লাগছিল ইয়াদ কে। ছানাবড়া হয়ে আসছে চোখ সাথে ভয়ও চেঁপেছে। ঢোক গিলে পিঠ আড়াল করে দাঁড়াল সে। আয়নার সামনে দিব্বি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইয়াদ অবাক হয়।
“এভাবে ডাকছিলে কেন?”

“….

“কি হলো?”

“কি কিছু না।”

“মেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

“….
তিতিল জোর করে হাসার চেষ্টা করল। ইয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“যেভাবে ডাকছিলে মনে হচ্ছিল আমি বাদে কেউ রুমে চলে এসেছিল তোমার।”

মুখ কালো করে দিয়ে বলল,
“কি বলছেন এসব?”

“ডাকছিলে কেন?”

“….

“বলো?”

“এ এমনি। হিমা কোথায়?”

“মনে হয় রেডি হচ্ছে।”

“ও।”

ইয়াদ খেয়াল করল ডান হাত তিতিলের পেছনে। কেমন সাপের মতো বেঁকেবেঁকে উঠছে। সে জিজ্ঞেস করল?”

“কি হয়েছে পিছনে?”

তিতিল চটজলদি জবাব দিল,
“কিছু না তো।”

“আমার মনে হচ্ছে তুমি আনইজি ফিল করছো। কিছু হয়েছে কি?”

“একদমই না” বলে তিতিল আবারো হাসার চেষ্টা করল।

“দেখি” বলে ইয়াদ এগিয়ে আসতেই তিতিল চিৎকার করে উঠল। পা থামিয়ে দিয়ে ইয়াল ভ্রু কুঁচকাল। জিজ্ঞেস করল,

“সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে তিতিল?”

“কিছু হয়নি আপনি এখন যান।”

ইয়াদের এবার স্পষ্ট তিতিলের কিছু একটা হয়েছে তবে বলতে চাইছে না। কিছু না বলে ইয়াদ এগিয়ে গেল তিতিলের সামনে। দাঁত কিটে দুই হাত দিয়ে থামাল তিতিল।
“বললাম না আপনি যান।”

“কি হয়েছে তোমার সেটা বলো।”

“কিছুই না। যান তো।”

আচমকা ইয়াদ তাকে বাহু ধরে পিছন ঘুরাল। সঙ্গেসঙ্গে চমকে গেল ইয়াদ। সারাটা শরীর কেমন শিউড়ে উঠেছে তার। লোমকূপ গুলি সজাগ হয়ে গিয়েছে শরীরের। বুকের স্পন্দন বাড়তে লাগল ক্রশম। পুরো পিঠ যেন উন্মুক্ত। ইয়াদের যে কারণে শিহরণ লাগছে বারংবার তা হলো সাদা ধবধবে পিঠে মেরুদণ্ডের বা পাশে পর পর দুইটা কালো তিল দেখে। একটা একটু ছোট অন্যটা খানিক বড় টাইপে। ছোটটা বেশ কালো কিচকিচে আর হাল্কা বড় টা গাঢ় ধোঁয়াটে। ইয়াদের শরীরে আবার যেন কিছু একটা দৌড়ে গেল। আয়নায় সে তিতিলের দিকে তাকাল। মেয়েটা লজ্জায় চোখ মুখ গুটিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ এক গালে হাসল। বাহু ধরে আবার তিতিল কে কাছে টেনে নিল। তার বুকের সাথে লেগে আছে যেন তিতিলের কোমল পিঠ। আয়নায় তিতিলের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জামার চেইনটা লাগিয়ে দিতে শুরু করেছে সে। তার স্পর্শে যে তিতিল বারবার কেঁপে উঠছে তা সে ভালো করেই অনুধাবন করতে পারছে। তিতিলের কাঁপন আর চোখ বন্ধ করা মুখশ্রী যে তাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে তা কি করে বলবে মেয়েটাকে? চেইন লাগানো শেষে ইয়াদ তিতিলের কানের কাছে মুখ নিল। ফিসফিস কন্ঠে বলল,
“জামার চেইন লাগাতে হিমা আর আপু কে না ডেকে একবার ডাকতে ইয়াদ কে। ছুটে চলে আসত সব ছেড়ে। আর যাই হোক ওই শুভ্র কোমল পিঠের স্পর্শ আর ঘোর লাগিয়ে দেওয়া বুকে টর্নেডো সৃষ্টি করা কালো তিল গুলি দেখা হতো।”

ইয়াদ একটু দূরে গিয়ে তিতিলের কানে ফু দিতেই এলোমেলো রেশমি চুল গুলি কানের পাশ থেকে গিয়ে মুখে পড়েছে। তাকিয়ে দেখল চোখ বন্ধ করা মুখে ছোট চুল গুলি তে তিতিল কে ভয়ংকরী রূপসী লাগছিল। ইয়াদ মুচকি হাসল। সবসময় চুল সরিয়ে দিলেও এখন চুল গুলিতেই যেন মুখের আঁচ দ্বিগুণ লাগছে। ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল।

তিতিল পাথর হয়ে একেবারে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পাতা নড়ছে না তার। শরীরের হাড় পর্যন্ত হীম হয়ে অবশ লাগছে। ইয়াদের ফিসফিসানো কথা আর শিউড়ে উঠা স্পর্শ তাকে অসাড় করে দিচ্ছে ক্রমশ। এই অনুভূতির পাখি গুলি ডানা ঝাপটিয়ে উন্মাদের মতো উড়ছে কেন বুঝা হয়ে উঠছে না তার।

ইনা হিমা সবাই নিচে গিয়ে তিতিল কে ডাকছে। তিতিল এতক্ষণ আয়নার সামনে বসে ছিল স্তব্ধ হয়ে। ডাক যখন পড়ল তখন সে চোখ কাজল দিয়ে এঁকে দিচ্ছিল। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক টা হাল্কা দিয়ে ওড়না ঠিক করতে করতে নিচে নামল।

ইয়াদ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিল। আগে খেয়াল না করলেও এবার চোখের কোণায় লেগে গেছে এই দৃশ্য।টকটকে লাল একটা থ্রীপিজ পরেছে তিতিল। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক ছাড়া কিছুই নেই। চুল গুলি সামনে এসে ঠাই নিয়েছে। তিতিল কে এই মুহূর্তে ইয়াদের মোহনীয় অপ্সরী বাদে কিছু লাগছে না। চোখের পাতায় ওই মুখশ্রী এঁটে গেছে পুরোপুরি। ধুকধুক ধুকধুক আওয়াজ হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে। ইয়াদের মুহূর্ত টা মুখরিত করে তুলছে সব মিলিয়ে। তিতিল নিচে নামল একবার তাকাল ইয়াদের দিকে। কিন্তু ইয়াদের ওমন নেশা মাখা চাউনি দেখে চোখ নামিয়ে দিতে বাধ্য হলো মেয়েটা।

রেহেলা বেগম এগিয়ে গেলেন তিতিলের দিকে। ইনা একবার তিতিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। পরক্ষণে ইয়াদের দিকে নজর গেল তার। ইয়াদের ওমন চাউনি দেখে মুখ অদ্ভুত রকম হয়ে এসেছে। মুখে চিন্তা স্পষ্ট।

“তিতিল মা তোকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে। মাশাল্লা কারো নজর না লাগুক।”

তিতিল মুচকি হাসল।
“তিতিল আপু সত্যি তোমাকে একদম জোস লাগছে।”

তিতিল হিমার দিকে তাকাল। পরনে তার মেরুন কালার ড্রেস। তিতিল নম্র গলায় বলল,
“হিমা আমি মেরুন কালার জামাটা পরেছিলাম কিন্তু ওটা অনেক টাইট হয়ে গিয়েছে। অস্বস্তি লাগছিল বলে খুলে ফেলেছি।”

“বাদ দাও তো আপু। লালেই তোমাকে পুরো লাল লাগছে।”

ইনা হেসে বলল,
“তিতিল সত্যিই তোমাকে অনেক কিউট লাগছে। কি বলিস ভাই?”

সবার নজর ইয়াদের দিকে। সে চুপচাপ ছিল এতক্ষণ। কারো কথা কর্ণগোচর হয়েছে কিনা তাতে যথেষ্ট শঙ্কা আছে। সে তো মুগ্ধতা নিয়ে তার মনের কোণায় যত্ন করে রাখা রমনী কে দেখতে ব্যস্ত। তিতিল তাকাল ইয়াদের দিকে। ইয়াদের ওমন চোখের পাতা না ফেলা চাউনি দেখে লজ্জাময় ঠোঁট টিপে হাসল অল্প। নির্মল সুখানুভবের কোমল সুর ইয়াদকে ভালোবাসার রাজ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

চলবে♥
(গঠনমূলক কমেন্ট করতে না পারলে নাইস নেক্সট কমেন্ট করে কষ্ট করতে হবে না😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here