#ইস্ক
#সাদিয়া
২৮
আকস্মিক ঘটনা পিনপতন নীরবতা ঢেলে দিয়েছে। তিতিল ভয়ার্ত কপাল কুঁচকানো চোখ মুখ নিয়ে ইয়াদের গাম্ভীর্য কে দেখে যাচ্ছে। ইয়াদ তিতিলের কোমর চেঁপে কাছে টেনে নিয়ে এলো। তিতিল অজানা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। ইয়াদ চুপচাপ আলতো হাতে তিতিলের কপালের ছোট চুল গুলি সরিয়ে গালে চুমু দিতেই কেঁপে উঠে সে। ফুস করে নিশ্বাস ছাড়ে মেয়েটা। তিতিলের এমন চাউনি দেখে ইয়াদ গভীর ভাবে স্পর্শ করে তিতিল কে আরো কাছে টেনে আনল। শান্ত গলায় বলল “তিতিল পাখি তুমি কি ভেবেছো ইয়াদ কে বোকা বানাবে?” ইয়াদের এমন কথায় তিতিল বিস্মিত হলো। কি বলতে চাইছে লোকটা? তাহলে কি..
“জ্বি ময়নাপাখি আমি বুঝতে পেরেছি আপনি ইচ্ছা করে আমার সাথে এমন করছেন। আর নিয়ামের সাথে কথা বলার সাহস আপনারও নেই। শুধু আমাকে দেখিয়ে কষ্ট দিবেন বলে এমন করছেন।”
ইয়াদের কথা শুনে ছোট করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। তারমানে আর কিছু জানে না লোকটা।
“ত তো? কি কি হয়েছে তাতে?”
ইয়াদ কিছু বলল না। মুচকি হাসল অন্যদিকে তাকিয়ে। আবার তাকাল তিতিলের দিকে। মেয়েটার এমন মুখ দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছে তার। ইয়াদ নিজের মুখটা আরো বাড়িয়ে নিতেই তিতিল মুখ সরিয়ে নিতে চাইলেও দেওয়ালের সাথে চেঁপে থাকার কারণে পারল না। ইয়াদ মুচকি হেসে তার গালে নিজের নাক টা ঘষে দিল। তারপর মৃদু ফিসফিসানো কন্ঠে বলল “আরো একটা বিষয় আমার অবগত আছে তিতিলপাখি।” এবার তিতিলের পিলে চমকে উঠল। বুক ধুকধুক করছে। কাঁপাকাঁপা চোখে সে ইয়াদের চোখের দিকে তাকাল। ইয়াদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
“পরশু রাতে যে আপনার গায়ে জ্বর থাকলেও ইচ্ছা করে সজ্ঞানে ওমন পাগলামু করেছিলেন আমাকে পাবার জন্যে সেটা আমি জানি প্রিয়।” লজ্জায় তিতিলের মড়মড় অবস্থা। দাঁত কিটে চোখ বন্ধ করে নিল সে। কি এক নাস্তানাবুদ অবস্থা! ইয়াদ ঠোঁট টিপে মুচকি হাসল।
“আপনি মাঝেমাঝে আমাকে পাওয়ার জন্যে পাগলামু করবেন। বিশ্বাস করেন আমি একটুও রাগ করব না। বরং আপনাকে শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা উপহার দিব।”
লজ্জায় তিতিল সরে যেতে চাইলে ইয়াদ দেওয়ালে হাত ঠেকিয়ে আটকাল তাকে। মেয়েটা লজ্জাবতী পাতার মতো নুয়ে পড়েছে। তবে ফর্সা গাল গুলি লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। যা ইয়াদের মনে অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি করছিল। সে তিতিলের থুতনি ধরে মুখ টা উপরে তুলল।
“আমাকে কষ্ট দেওয়ার অভিনয় করে সুখে থাকলে তাই করুন। কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি। ছাড়ছি না।”
ইয়াদ কপালে চুমু দিয়ে চলে যাবে এমন সময় তিতিল তার কলার চেঁপে কানে নিয়ে এলো। কাছে নয় খুব কাছে। যতটা কাছে গেলে তিতিলের গরম নিশ্বাস ছুড়তে পারে ইয়াদের উপর ততটা কাছে। দাঁত কিড়িমিড়ি করল তিতিল বলতে লাগল “স্বামী হিসাবে আপনাকে শুরু থেকে ভালোবেসেছি। বিনিময়ে শুধু কষ্ট দিয়েছেন।” তিতিল কে থামিয়ে ইয়াদ বলল “দেখো তিতিল আগ..” তিতিল কথা শেষ হওয়ার আগে অন্য হাতে ইয়াদের ঠোঁটের উপর নিজের তর্জনী আঙ্গুল ঠেকিয়ে দিল। আবার বলা শুরু করল,
“প্রতিদিন আপনার জন্যে কষ্ট পেয়েছি। কেঁদেছি আপনার এই ঘরে ওই ছবির সামনে। ওই বিছানার আর বালিশ তার সাক্ষী। মনে মনে খুব চাইতাম আপনার সাথে কথা বলতে। তবে আপনি আমার কথা মনেই রাখেন নি। আরো কষ্ট পেতাম। আপনি কি জানেন আপনার খুব ইচ্ছা করতো স্বামীর সাথে সংসার করব। কিন্তু দুইটা বছর আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সেদিন বাগানবাড়িতে আপনি কি কেঁদেছেন তার শতগুণ আমার কাঁদতে হয়েছে আপনারই বিরহে। যদিও আপনি এখনও কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছেন। তবুও আমার কষ্ট ছুতে পারবেন না আপনি। হ্যাঁ আপনাকে ভালোবাসি আমি। আমরা মেয়েরা ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিতে নিজে কষ্ট পাই। বাঙ্গালি মেয়েরা নরম হয়। আমিও চাইব না আপনাকে কষ্ট দিতে। কারণ আপনাকে একটু কষ্ট দিব তার চেয়ে হাজারগুন বেশি কষ্ট পাবো নিজে। কি দরকার নিজের কষ্ট নিজে বুকে পুষে রাখার? সেই কষ্ট বুকে পুষে লালন পালন করে বড় করার মতো আস ধৈর্য্য শক্তি নেই আমার। তবে এত সহজেও আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি না। ভালোবাসার মানুষের অত্যাচার নিতে আপনিও তৈরি হয়ে যান মিস্টার ইয়াদ সাহেব।”
ইয়াদের চোখ ফেটে কয়েক ফুটা পানি গড়িয়ে এলো। তিতিল কে সটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। তবে বুকে জড়ানোর আগে গভীর চুমু এঁকে দিল কপালে। তিতিল কে আরো শক্তে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিল।
“তোর সব অত্যাচার বুক পেতে মেনে নিব। কিন্তু বিরহের আগুনে ঠেলে দিস না আমায়। তিলে তিলে নয় একদম নিঃশেষ হয়ে যাবো।” বলে ইয়াদ আবার তিতিলের মাথায় চুমু খেল। মেয়েটা প্রাপ্তির এক প্রশান্তিময় হাসি হাসল। গাল বেয়ে তার মুক্তদানা গড়িয়ে পড়ল এত ভালোবাসার দরুনে। ভালোবাসলে তো ছাড় দিতেই হয়। নয়তো নিজেরও কষ্ট অপর প্রান্তের মানুষটারও কষ্ট। ভালোবাসায় থাকুক না একটু ছাড় মন্দ কি তাতে? ভুলে গেলে সুখী হয়ে তৃপ্ত হতে পারলে ভুলে যাওয়াই উত্তম।
“এখন আমাকে কোলে নিয়ে আপনি দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকবেন। একটু নড়লেও চলবে না।”
ইয়াদ কিছু বলল না। সে জানে এটা তার ভুলের শাস্তি। আর এ’ও জানে এমন আরো অনেক শাস্তিই তাকে মানতে হবে। আরো কত শাস্তি যে অপেক্ষায় আছে।
“আমি চাই তুমি এই রকম মিষ্টি অত্যাচার সারাজীবন করো। জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত আমাকে জ্বালাতন করো।”
তিতিল স্মিত হাসল। তাকে কোলে নিয়ে ইয়াদ ব্যালকুনিতে চলে গেল। মৃদু হাওয়া তিতিলের হাতের ফাঁকে পড়ে থাকা লম্বা চুল গুলি এলোমেলো করে দিচ্ছে। ইয়াদ মুগ্ধতা নিয়ে তিতিল কে দেখছে। আর তিতিল তার চোখের মাঝ বরাবর চেয়ে আছে। হয়তো নিজের পূর্ণতা খুঁজে চলছে।
—-
দিনদিন তিতিলের অত্যাচার মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। আজ রাতের আবদার তাকে নিয়ে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো তে হাটতে হবে। ইয়াদ রাজি হতে চাইছে না বলে সারাদিনেও মেয়েটা একটা কথা বলে নি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
ইয়াদ একটা শপিং ব্যাগ বের করে তিতিল কে দিয়ে বলল “নাও এটা।”
“ঘুষ নেই না আমি।”
“খুলে দেখো।”
“বললাম তো ঘুষ নেই না আমি।”
“এটা ঘুষ না পাগলি খুলে দেখ কি আছে।”
“আবার তুইতোকারি করছো? কথাই বলবো না তোমার সাথে।”
“আরে পাগলি আমি তো ভালোবেসে তুই ডাকি। তুমি রাগ করছো কেন? রেগে গেলে তুমিও তো আমাকে আপনি আপনি করো। আর ভয়ংকর রেগে গেলে আরকি তুই..”
“আমি এবার..”
“ওকে ওকে সরি। তুমি একদম কিছুই বলো না আমায়। যা বলি করি সব আমি। যত দোষ নন্দঘোষ। হয়েছে?”
“….
“রেডি হয়ে এসো।”
“কোথায় যাবো?”
“তোমায় নিয়ে মরতে।”
“কি বলতে চাইছো তুমি?”
“আমি ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে যেন দেখি তুমি রেডি নয়তো কেন্সেল। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইয়াদ ওয়াশরুমে চলে গেল।
“তিতিল কই তোরা? খেতে আসবি না?”
“মা ও ওয়াশরুমে।”
“কিরে বাবা কোথাও যাবি নাকি?”
“হ্যাঁ মা তিতিল কে নিয়ে একবার বের হবো।”
“খেয়ে যাবি না।”
“বাহিরে খেয়ে নিব।”
মা ছেলের কথার মাঝে হিমা বলে উঠল “ভাইয়া আমার জন্যে একটা বার্গার এনো।” হেসে ইয়াদ জবাব দিল “আচ্ছা আনব।”
“তাহলে আমার জন্যে একটা পিজ্জা আনিস” বলল ইনা।
বেশ অবাক হয়ে ইমাদ বলল “কি বলছো আপু?”
“কেন?”
“তুমি তো এসব খাও না।”
“তাই বলে খেতেও পারব না?”
“মুটেও না। আপু চলো না আজ আমরা সবাই মিলে বাহিরে ডিনার করি।”
“মা এতসব রান্না করেছে বাহিরে ডিনার করব বলে? আজ তিতিল কে নিয়ে যা। সময় করে আমরা সবাই একদিন যাবো।”
“খুব মজা হবে তাই না আপু?” আনন্দে বলে উঠল হিমা।
জবাবে ইনা বলে “হুম হবে এবার খেয়ে নাও।”
রাহেলা বেগম তাকিয়ে আছেন উনার পরিবারের দিকে। সেই আগের মতোই তার হাসিখুশি পরিবার টা। অথচ যে লোকটা এসব দেখে যেতে চেয়েছিল সেই মানুষটাই নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেহেলা বেগম বললেন “বাবা রাত করিস না বেশি তাড়াতাড়ি চলে আসিস।”
ইয়াদ কিছু বলতে যাবে এর আগেই উপর থেকে ভেসে এলো “আমার হয়ে গেছে।”
ইয়াদ বিস্মিত চোখে অপলক তাকাল। তিতিল শাড়ীর আঁচল ঠিক করতে করতে নীচে নামছে। ইয়াদ বিমুগ্ধতা ঢেলে একবার দেখে নিল মেয়েটা কে। কালো শাড়ী চুড়ি, কেশকন্যার কালো কেশ আর কাজলে হৃদয় ঢেউ তুলে দিচ্ছে। ইয়াদের বিশ্বাসই হচ্ছে না এটা তার সেই পিচ্চি তিতিলপাখি।
চলবে
(মন্তব্য আশা করছি। আমার মেহেরজান আজ আসবে না।)