THE BOOK পর্ব-১১

0
665

#THE_BOOK

#পর্ব_১১

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

“এটা কার গল্প??কি কুৎসিত ভাবে লেখা গল্পটা। না জানি এই কুৎসিত চেহারার লোকটা কতটাই না খারাপ!! এখন কি হবে??
আমরা এর হাত থেকে বাঁচব কিভাবে??”

পূর্ণাশার কথা শুনে রা’দ চুপ করে আছে। ওর কিছু বলার নেই। লাবন্য তো শকড,স্থির হয়ে বসে আছে। অভিনব বলল,”সে যাই হোক না কেন আমাদের ভয় পেলে চলবে না। আমরা কিছুতেই ওই খারাপ লোক বা ওর বাচ্চা কাউকেই আসতে দেব না।”
লাবন্য বলল,”তার আগে জানতে হবে এই গল্পটা কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে??”

“জানি না তবে শিঘ্রই জানতে পারবো।”

কেউ আর কোন কথা বলল না। পিনপতন নিরবতা সবার মাঝেই। একটার পর আরেকটা ঝামেলা হয়েই আছে।

রেডিও স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে লাবন্য। আজকে তাড়াতাড়ি ফিরবে। সন্ধ্যা নেমে গেছে। রা’দ আর অভিনব এখনো রেডিও স্টেশনে আছে। ওদের শো এখনও শেষ হয়নি তাই। বাস আসতেই লাবন্য বাসে উঠে বসে। জানালার পাশের সব সিটগুলো বুক হয়ে গেছে। লাবন্য হতাশ হয়ে একটা লোকের পাশে গিয়ে বসলো। বেশি বয়স নয় লোকটার সম্ভবত ত্রিশ এর বেশি হবে। লাবন্য চুপচাপ ফোন স্ক্রোল কলতেছে। পুরো বাসে একটা লাইট জ্বলছে বাকিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। লাবন্য হঠাৎ খেয়াল করলো পাশে বসা লোকটি তার মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করছে। কিন্তু বিড়বিড় করে কি বলছে তা বোঝা যাচ্ছে না। লাবন্য একটু ভয় পেলো তবুও নিজেকে সামলে নিলো কারণ বাসে এখনও আরও মানুষ রয়েছে।

একটু পর লাবন্য দেখলো লোকটা পকেট থেকে ছোট একটা ছুরি বের করেছে। এটা দেখে লাবন্যর গলা শুকিয়ে এসেছে। লোকটা ছিনতাইকারী নয়তো?? কিন্তু লাবন্যর ভাবনায় পানি ঢেলে লোকটা তার হাতের তালু বরাবর ছুরিটা ঢুকিয়ে দিলো। লাবন্য ভয়ে আঁতকে উঠে,ভয়ার্ত চোখে লোকটার দিকে তাকালো। অদ্ভুত দেখতে লোকটা মুখের পাশে একটা কাটা দাগ। লোকটা হাত থেকে ছুরিটা টান দিয়ে বের করে ফেলে সাথে সাথে রক্ত বের হতে লাগলো। রক্ত দেখে লাবন্য আরো ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু লোকটার কোন ভাবান্তর নেই। হাত থেকে ছুরিটা বের করে আবারো একই জায়গায় আঘাত করলো। মুখ দিয়ে একটু শব্দও করলো না।

লাবন্য এবার বেশ ভয় পাচ্ছে। কেউ এভাবে নিজেকে আঘাত করতে পারে??লাবন্য ভয়ে ভয়ে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল,”এ,,কি আ আপনি এভাবে নিজেকে আঘাত করছেন কেন?? আপনার কি ব্যথা লাগছে না??”

লোকটা এবার লাবন্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো যা দেখে লাবন্যর গায়ে কম্পন ধরে গেল। লোকটার চাহনি খুবই তীক্ষ্ণ, চোখের ভেতর হলুদ আভা ছড়িয়ে পড়ছে।লোকটা বলল,”নাহ আমার এরকম করতে খুবই ভালো লাগছে। আপনি করবেন এরকম??দিন আপনার হাত দিন”

লোকটা লাবন্যর দিকে হাত এগিয়ে দিতেই লাবন্য শক্ত হাতে নিজের ব্যাগটা চেপে ধরে বলল,”ন না না আমি এরকম করব না।”

লোকটা আর লাবন্যকে কিছু বলল না আবার ছুরিটা নিজের হাতে ঢুকিয়ে দিলো। রক্তে প্যান্ট ভিজে যাচ্ছে লোকটার তবুও থামছে না। আবারও বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।লাবন্য তো ভয়ে পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছে। কান পেতে বুঝতে চাইলো যে লোকটা কি বলছে?? কিন্তু লোকটার কোন কথাই লাবন্য বুঝতে পারছে না। শুধু একটা কথাই বোঝা যাচ্ছে,”কেউ আমাকে পছন্দ করে না। সব শেষ করে দেব।”

এই কথাগুলো বারবার বলছে। লাবন্যর এবার বুঝতে কিছুই বাকি রইল না যে এই সেই ব্যক্তি যার কথা দ্যা বুক এ লেখা ছিলো। আর দ্বিতীয় গল্প লাবন্য কে নিয়েই লেখা হয়েছে।লাবন্য কম্পিত হাতে রা’দকে ফোন করলো।
সবে শো শেষ করে বের হয়েছে রা’দ আর অভিনব। লাবন্যর ফোন পেয়ে দ্রুত রিসিভ করে বলল,”হ্যা বল।”

লাবন্য থেমে থেমে বলল,”রা’দ দ্যা বুক এর পরবর্তী শিকার আমি।”
রা’দ অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে বলে,”কি বলছিস তুই??তুই এখন কোথায়??”

“বাসের ভেতর আর ওই কুৎসিত লোকটা আমার পাশের সিটে বসা।”

“কি??”

লাবন্য কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,”রা’দ আমার খুব ভয় করছে আমি এখন কি করবো??”

“তুই বাস থেকে নেমে পড় আমরা আসছি।”

“ওকে তাড়াতাড়ি আয় আমার খুব ভয় করছে।”

লাবন্য ফোন রেখে আশেপাশে তাকালো। কিন্তু অবাক করা বিষয় যে বাসে ও আর ওই লোকটা ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই। একটু আগেও তো কতো যাত্রী ছিলো। আর বাস তো কোথাও থামেনি তাহলে সবাই গেলো কোথায়?? তাহলে সবটা কি চোখের ধাঁধা ছিলো??লাবন্যর ভয়টা আরো গাঢ় হচ্ছে।লাবন্য গলা উঁচিয়ে কন্ডাক্টরকে ডেকে বলল গাড়ি থামাতে কিন্তু কারো কোন সাড়া নেই বিধায় লাবন্য আবারও ডাকালো। এবারো কোন সাড়া নেই। লাবন্য উঠতে নিলেই লোকটা খপ করে লাবন্যর হাত চেপে ধরলো।লাবন্য ভয়ে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বলল,”ছাড়ুন আমায় বাঁচাও,কেউ আছো??”

লোকটা এবার তার বিশ্রি দাঁতগুলো বের করে হাসতে লাগলো। হলদে দাঁতগুলো জঘন্য দেখতে। যে কারো বমি এসে যাবে। এতে লাবন্য এতটাই ভয় পেলো যে জ্ঞান হারানোর উপক্রম। কিন্তু লাবন্য নিজেকে শক্ত করলো কারন এখন জ্ঞান হারালে চলবে না ওকে লড়তে হবে। লাবন্য লোকটার হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে আর বলছে,”ছেড়ে দাও আমাকে নাহলে কিন্তু,,,”

লোকটা আবারো হাসতে লাগলো। কি বিশ্রী সেই হাসি। লাবন্য বলল,”আমি বাড়ি যাব ছাড়ো আমাকে।”

“এই বাস তো তোমার বাড়ি যাবে না।”

“কোথায় যাবে তাহলে??”

লোকটি আবারো বিশ্রি হেসে বলল,”শশ্মানে যাবে।”

“কি???”

লাবন্য এবার কেঁদে দিয়েছে। ভাবছে এবার বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে। ওর আর বাঁচা হবে না। কিন্তু শেষ চেষ্টা করার জন্য লাবন্য লোকটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিলো কিন্তু তাতে লাভ হলো না। এক কদম যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মেঝেতে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো লোকটা আবারো ওর দিকেই আসছে। লোকটা কাছে আসতেই তার চেহারার পরিবর্তন হতে লাগলো। আগের থেকে আরো কুৎসিত আর ভয়ঙ্কর চেহারায় পরিণত হলো তার মুখ। যা লাবন্যর চোখে সইছে না। এমন বিদঘুটে চেহারা লাবন্য ওর লাইফে কোনদিন দেখেনি। লাবন্য ভয়ে জোরে জোরে চেঁচাতে লাগলো। কিন্তু ওর চিৎকার আশেপাশের কেউই শুনতে পেলো না। লাবন্য চিৎকার করে বলতে লাগলো,”সরে যাও আমার সামনে থেকে। তোমার মুখটা আমার সহ্য হচ্ছে না। সরে যাও আমি আর নিতে পারছি না।”
লাবন্যর কথায় কুৎসিত মানবি ভিশন খেপে গিয়ে বললো,”আমাকে আমার সুন্দর রূপ ফিরিয়ে দে। তুই পারবি, আমার বাচ্চা আমার রূপের পরিবর্তন আনবে। এখন আমাকে কেউ দেখতে পারে না। আমার বাচ্চা আসলে তার শক্তিতে আমি আমার চেহারা বদলাতে পারবো। তুই পারবি তুই পারবি।”

লাবন্য হামাগুড়ি দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে বলল,”আমি পারবো না তোমার মতো এক কুৎসিত মানুষকে আম সাহায্য করব না। তোমার মুখটা যেমন কুৎসিত তোমার মনটাও তেমন কুৎসিত। তুমি দূরে সরে যাও। তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”

লাবন্য চিৎকার করে কথাগুলো বলল।

“তোর অনুমতি আমার চাই না। আমি শুধু আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চাই।”

“এটাই দ্য বুক এ লেখা ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করো এতে তোমার মুখের পরিবর্তন হবে না। তোমার ভাবনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুধু শুধু আমার ক্ষতি করো না।”

কুৎসিত মানবি লাবন্যর কথায় আরো রেগে গেলো। ছো মেরে লাবন্যর ওড়নাটা নিয়ে ফেলে দিলো পাশের সিটে। লাবন্যর বুক ধড়ফড় করছে কি করবে বুঝতে পারছে না।এই কুৎসিত মানবির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া মানেই মৃত্যু। লোকটা লাবন্যর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসতেই লাবন্য তাকে ধাক্কা দিলো। কিন্তু লোকটাকে নড়াতে পারলো না।লাবন্যর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলো।লাবন্য হাল ছাড়ছে না ওর মাথায় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে হাল ছাড়া যাবে না।

লাবন্যর জামাটা কাঁধের অংশ খানিকটা ছিঁড়ে গেছে তবুও লাবন্য হাল ছাড়ছে না। শেষে উপায় না পেয়ে লাবন্য লোকটার মুখের উপর এক ঘুসি মেরে দিলো। নাকে হাত দিয়ে লোকটা পিছিয়ে গেলো। লাবন্যর হাতে পাথরের আংটি ছিলো যার কারণে লোকটার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। লাবন্য ভাবতে লাগলো যে লোকটা ওকে আক্রমণ করার আগেই ওকে কিছু একটা করতে হবে। হঠাৎ ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। লাবন্য জোরে চেঁচিয়ে বলল,”নিজের মুখটা কখনো আয়নায় দেখেছো?? তোমার চেহারা কতটা কুৎসিত তা দেখেছো কখনো??”
লোকটা লাবন্যর কথায় থম মেরে গেলো।এই একটাই জিনিসে ওর দূর্বলতা। আয়নার কথা আসতেই লোকটা চারিদিকে আয়না খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও আয়না নেই। আয়না খুঁজে না পাওয়ায় লোকটা ছটফট করছে। চারিদিকে শুধু আয়না খুজতেছে। লাবন্য এবার কিছু কিছু আন্দাজ করতে পারছে।লাবন্য লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আয়না খুজছো তো। কিন্তু বাসে তো আয়না নেই। আয়না খোঁজার জন্য তোমাকে বাস থামাতে হবে।”

বলার সাথে সাথে জোর বেগে বাস থেমে গেলো। লাবন্য তাড়াতাড়ি নিজের ব্যাগ আর ওড়না আঁকড়ে ধরলো। লোকটা তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে পড়লো। আয়না খোঁজার জন্য দূরে যেতে হলো না বাসের লুকিং গ্লাস পেয়ে তার দিকে তাকিয়ে নিজের চেহারা দেখতেছে। মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে অদ্ভুত শব্দ বের করছে বলছে,”এই চেহারা বদলে ফেলব সে আসবে। সে এসে আমার চেহারা বদলে দেবে।”
আয়না দেখে এবার শান্ত হচ্ছে লোকটা। পিছনে ঘোরার আগেই তাকে জোরে ধাক্কা দিলো লাবন্য। সাথে সাথেই লোকটা আয়নার ভেতর ঢুকে গেল। লাবন্য আর এক মূহুর্ত দেরি না করে নিজের ওড়না খুলে লুকিং গ্লাসে জড়িয়ে দিলো যাতে লোকটা বের হতে না পারে।

লাবন্য প্রাণপনে ছুটছে বাসটা এক নির্জন রাস্তায় থেমেছিলো। সেখান থেকে লোকালয়ে আসার জন্য লাবন্য ছুটছে। চারিদিকে শুধু অন্ধকার।এই অন্ধকারে প্রাণপণে ছুটছে লাবন্য। তখন ওর রা’দের কথ মনে পড়লো। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রা’দকে ফোন করলো। লাবন্যর ফোন পেয়ে দ্রুত রিসিভ করেই বলল,”লাবন্য তুই কোথায়??কত জায়গায় খুঁজছি তোকে।”

লাবন্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,”জানি না আমি কোথায় রা’দ এখানে কেউ নেই। ফাঁকা রাস্তা আমাকে বাঁচা রা’দ প্লিজ।”

“তুই কাদিস না, লোকালয়ে আসার চেষ্টা কর।ফোন অন রাখিস আমি ম্যাপ দেখে লোকেশন ট্র্যাক করে আসছি।”

রা’দ ফোন কেটে অভিনবকে বলল লোকেশন ট্র্যাক করতে। তারপর রা’দ বাইকে চেপে বসে।
হন্তদন্ত হয়ে বাইক চালাতে লাগল।ওর উদ্দেশ্য একটাই যে লাবন্যকে বাঁচাতে হবে।

লাবন্য ছুটতে ছুটতে দেখতে পেল সামনে একটা দোকান তাতে কয়েকজন লোক ও আছে। লাবন্য দৌড়ে সেখানে গেলো। ওখানের লোকগুলো বয়স্ক। তারা লাবন্যকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে কেমন চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু লাবন্য ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। জামার ছেঁড়া অংশে ব্যাগ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে ঠকঠক করে কাপতেছে। হঠাৎ ফোন আসাতে লাবন্য রিসিভ করতেই রা’দ বলল,”লাবন্য আমরা তো কাছাকাছি চলে এসেছি তুই কোথায় বলতে পারবি??”

লাবন্য পাশে থাকা লোকগুলোর থেকে লাবন্য জায়গার জেনে রা’দকে বলল। মিনিট বিশেক পর রা’দ আর অভিনব সেখানে চলে এলো। ওদের দেখে লাবন্য দৌড়ে গেল। লাবন্য রা’দকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। অভিনব লাবন্যর এই অবস্থা দেখে নিজের জ্যাকেট খুলে লাবন্যর গায়ে জড়িয়ে দিলো।
লাবন্য শক্ত করে রা’দ কে ধরে কাদতেছে সাথে ভয়ে কাপতেছে ও। অভিনব অসহায় চোখে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর উচিৎ ছিলো লাবন্যকে বাড়িতে পৌছে দেওয়া। না হলে আজকে লাবন্যর এই বিপদটা হতো না। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে অভিনবের। কি করে বন্ধুর খেয়াল রাখলো না।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here