#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-৭
“নিষিদ্ধ জায়গায়গুলো এইভাবে উন্মুক্ত রাখতে নেই, দৃষ্টি বেসামাল হয় কারো।”
কোন আগন্তুকের মিইয়ে যাওয়া কন্ঠ স্পর্শীর কর্ণকুহরে ঝংকার তুলতেই ঈষৎ কেঁপে উঠে সে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে যায় শীতল শিহরণ। স্পর্শী কিছু বুঝে উঠার আগেই আগন্তুকটির পুনরায় বলে উঠে,
“পিছন দিয়ে শাড়ি ঠিক কর।”
কন্ঠস্বরটা এইবার বড্ড চেনা লাগে স্পর্শীর কিন্তু ঠিক ধরতে পারলো না কন্ঠটা কার। তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে দাঁড়ায় সে, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। ঈগল দৃষ্টি চারদিকে নজর বুলিয়ে, বোঝার চেষ্টা করে কথাটা আসলে তাকে কে বলেছে। কিন্তু ভিড়ের মাঝে আগেই আগন্তুকটি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। যার দরুন, স্পর্শী বুঝতেই পারলো না কে তাকে সেই কথাগুলো বলেছিল৷ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাকালো, পিছনে নিয়ে গেল হাত। কোমরের পাশে লাগানো সেফটিপিনটা টানে খুলে গিয়েছে, যার ফলে কোমরের একাংশ প্রদর্শিত হয়ে আছে বহির্ভাগে। ক্ষণেই স্পর্শী লজ্জায় নিমজ্জিত হলো। কাজে এতটাই মগ্ন ছিল কখন শাড়ির পিন খুলে গিয়েছে বুঝতেই পারে নি৷ স্পর্শী দ্রুত পিছন দিক দিয়ে আঁচল টেনে নিজেকে আবৃত করলো। পুনরায় চারদিকে চোখ বুলালো পরিচিত কাউকে খুঁজতে। আশপাশে কাউকে না পেয়ে স্পর্শী সামনের দিকে এগিয়ে গেল কিছুটা। সামনে নিধিকে দেখতে পেয়ে স্পর্শী ওর নাম ধরে ডাকে। ডাক শুনে নিধি কাছে আসতেই স্পর্শী সবটা বলে, ওকে নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
নিজ কার্য শেষে স্পর্শী আর নিধি বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। স্পর্শী মন্থর কন্ঠে বলে,”থেংক্স রে।”
নিধি তটস্থ সুর বলে,”থেংক্স পরে দিস, এখন তারাতাড়ি চল। বহুত কাজ বাকি আছে ভাই। সব ঠিকমত না হলে স্যার পরে আমাদের ক্যালাবে।”
“হুম চল।”
স্পর্শী আর নিধি কিছুদূর যেতেই পাশ থেকে কেউ শিস বাজিয়ে উঠে। স্পর্শী সেটা উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,
“রূপে বুঝি আজ পা মাটিতেই পড়ছে না তোমার। আমাকে না দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে যাচ্ছ।”
স্পর্শী এইবার থমকায়। পাশ ফিরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রুদ্রের দিকে। কঠোর কন্ঠে বলে, “রাস্তার লোককে দেখার মত কি আছে?”
রুদ্র বাঁকা হেসে বলে, “মানলাম আমি রাস্তার লোক। তবে, এই রাস্তার লোকের সাথেই এককালে অনেক সময় কাটিয়েছ। ভুলে গেলে?”
“মুখ সামলে কথা বল।”
“মুখ সামলেই কথা বলছি, জাননন!”
শেষের কথাটা একটু টান দিয়ে বলল রুদ্র। স্পর্শী কিছু বললো না, শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে। নিধি একবার রুদ্রের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্পর্শীর হাত ধরে চলে আসার জন্য বললো। এমন সময় রুদ্রের আর কিছু বন্ধু এসে দাঁড়াল সেখানে। সকলের অভিব্যক্তি গা-জ্বালানোর মত। একজন রুদ্রের কানে কিছু ফিসফিস করতেই রুদ্র অতি বিশ্রী চাহনিতে তাকায় স্পর্শীর পানে। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার ভালো মত দেখে নিয়ে বলে,
“একরাতের জন্য মন্দ নয়।”
কথাটা কর্ণকুহরে তরঙ্গিত হতেই স্পর্শীর ক্রোধ সকল সীমা পেড়িয়ে গেল। সে উচ্চস্বরে বলে, “মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ রুদ্র। আজ বারাবাড়ি করলে খারাপ হয়ে যাবে বলছি।”
রুদ্র পুনরায় হেসে বলে, “খারাপ কি বললাম? সাধারণ একটা বাক্য বলেছি তাতে এত জ্বলার কি আছে? আর আমি তো তাও একরাতের কথা ভেবেছি, অন্য কেউ হলে ফিরেও চাইতো না। তোমার মত কালো মেয়েকে কেই বা চাইবে?”
স্পর্শী ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো, রাগে তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। স্পর্শীর এখন ইচ্ছে করছে কাঠিন্যে পরিপূর্ণ কয়েকটা বাক্য রুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দিতে কিন্তু পারছে না। কন্ঠস্বর কেমন নিম্প্রভ হয়ে পড়েছে, শব্দ সব যেন দলাপাকিয়ে বসে আছে কণ্ঠনালীতে। স্পর্শী নিধির এক হাত শক্ত করে ধরে। নিধি এইবার চেঁচিয়ে বলে,
“জাস্ট সাট আপ রুদ্র। আর কত নিচে নামবে তুমি? তোমাকে তো আজ আমার পশুর সাথেও তুলনা করতে ঘৃণা হচ্ছে।”
রুদ্র বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে, “সত্যি সবসময় গায়েই লাগে।”
স্পর্শী এইবার নিজেকে ভিতরে ভিতরে খানিকটা গুছিয়ে নিয়ে শক্ত গলায় বলে, “সত্যি গায়ে লাগে কি-না জানি না। তবে কুকুরের ঘেউ ঘেউ এট লিস্ট আমার গায়ে লাগে না। অন্যের লাগলে লাগতে পারে।”
ক্ষণেই রুদের অভিব্যক্তি বদলে যায়। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাতেই স্পর্শী আবার বলে,
“একটা কথা কি জানো? কুকুরের অভ্যাস হলো যেখানে সেখানে মুখ দেওয়া। একশ এক জায়গায় মুখ দিয়ে, মুখে ঘা করা। তুমিও হচ্ছ সেই কুকুর৷ সময় থাকতে ঠিক হয়ে যাও, নাহলে কোথায় কোন ঘা হবে বুঝতেও পারবে না। আর আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই। আমার জীবনের গতি ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে, “গতি বলতে?”
“বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার আর আমার বর আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না স্পর্শী। নিধির হাত ধরে বড় বড় পা ফেলে সে জায়গায় থেকে চলে আসলো।
_______________
ফাঁকা একটা ক্লাসে নতজানু হয়ে বসে আছে স্পর্শী। শক্ত মন হয়ে পড়েছে নিস্তেজ। চোখের কানায় জমে এসেছে লঘু অশ্রুজল। যেকোনো সময় নিজ সীমানা পেরিয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়বে গাল,চিবুক বেয়ে। তারই পাশে নিধি আর কেয়া। স্পর্শীকে এইটা সেটা বলে বুঝ দিচ্ছে। তারই অন্যপাশে মাহিন ও সামি দাঁড়িয়ে নিষ্প্রভ চাহনিতে দেখিছে সব। সকল ঘটনা শুনে তারা স্তব্ধ। ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ঈষৎ পূর্বেই। মানুষ এত নিকৃষ্ট কিভাবে হয়?
অকস্মাৎ স্পর্শী মাথা তুলে, এক ফোঁটা জল আপনা-আপনি গড়িয়ে পড়ে চিবুক বেয়ে৷ অযত্নে লেপ্টে গেল চোখের কিনারে লেগে থাকা কাজলটুকু। অস্ফুটস্বরে সে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি আসলেই দেখতে এতটা কুৎসিত, কালো? আমাকে কি সত্যি কেউ চাইতে পারে না?”
নিধি এইবার ধমকে উঠে, “কিসব বাজে বকছিস তুই? তুই কুৎসিত বা কালো হতে যাবি কেন? তুই হচ্ছিস পরিস্ফুটিত গোলাপ। যার মধ্যে কোন দাগ নেই, কোন কৃত্রিমতা নেই। কুৎসিত তো ওই জা****বাচ্চা। ওর তো সবই কালা।”
কেয়া স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “ওই গাধা! তুই কালো আর উজ্জ্বল শ্যামলার মধ্যে পার্থক্য বুঝিস না? নিজেকে তোর কোনদিক দিয়ে কালো মনে হয়? এত মিষ্টি একটা চেহারা কুৎসিত লাগে তোর? থাপড়িয়ে সব দাঁত ফেলে দিব, ফাজিল মেয়ে। ওই আবালের কথা কানে নিয়ে বসে আছিস কেন? ওর কথার দাম আছে কোন?”
সামি এগিয়ে এসে বলে, “একদম কাঁনবি না। এই চোখের জল কার জন্য ফেলিস? ওকে না তুই ভালোবাসিস না? তাহলে ওর কথা তোকে ইফেক্ট কেন করছে? আর কালো হলেও কি? কালো মানুষ কি সুন্দর না? যে যার রূপে সুন্দর। গায়ের রঙ দিয়ে সুন্দর, কুৎসিত যাচাই করাটা বিকৃতি মস্তিষ্ক মানুষের কাজ।”
স্পর্শী মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, “আমি জানি সেটা। কিন্তু তবুও আজ ওর কথাগুলো কেন যেন ইফেক্ট করছে আমাত। তবে ভুলতে পারছি না কথাগুলো।”
মাহিন বলে, “তোর মত মেয়ে আমি অনেক কম দেখেছি স্পর্শী। তুই সহজে ভেঙে পড়ার মেয়ে না। যেহেতু আজ তোর উপর কারো কথা ইফেক্ট করছে, সেহেতু কথাগুলো তোর মনে গভীর দাগ কেটেছে বুঝতে পারছি। দেখ, যে যার মত সুন্দর৷ আল্লাহর সৃষ্টি কি কখনো কুৎসিত হতে পারে? আর তুই দেখতে একদমই বাজে না। বরং একটা মিষ্টি আর হাস্যজ্বল চেহেরার অধিকারী তুই। তোর ব্যক্তিত্ব সর্ব্দাই তোকে সবার আলাদা করে। তোকে যে পাবে সে অনেক ভাগ্যবান হবে রে। এইটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি।”
সকলের কথায় স্পর্শী একটু স্বাভাবিক হয়। মন খারাপের মেঘগুলো সরে যেতে শুরু করে। সে হালকা হেসে বলে, “মাখন দেওয়া ভালোই শিখেছিস মোটু।”
মাহিন বিরাগপূর্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে বলে, “আমার মনের কথাগুলো তুই মাখন বলে চালিয়ে গেলি? এই তোর বিচার?”
সামি বিদ্রুপ কন্ঠে বলে, “ভালো কথা বলেছিস তো তাই গায়ে লাগে নাই মাইয়ার। তোর বলা উচিৎ ছিল, স্পর্শী তোর মত তেতো মেয়ে আমি একটাও দেখিনি। তোর ত্যাড়া চোখের চাহনি, তোর আঁকাবাঁকা হলুদ দাঁতের হাসি সবাইকে আহত করে রে। তোর সোলার ঝাড়ুর মত চুলে উকুনের বাসা দেখিতে সবাই উতলা হয় পড়ে। তোর মত একটা মেয়ে যার জীবনে যাবে তার জীবন কয়লার কারখানা হয়ে যাবে।”
সামির কথা শেষ হতেই সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কেয়া বলে, “সেই বলেছিস ইয়ার। উফফ! পুরাই জোস।”
স্পর্শী হাসতে হাসতে বলে, “থাক ভাই, মাফ কর আমায়। আমার রূপের গুণগান আর তোকে গাইতে হবে না। বুঝলি আমি মেলা সুন্দর।”
নিধি বলে, “এই তো বাছা লাইনে আসছো। এরপরের বার খালি আজেবাজে কথা শুনে সেন্টি খাইস তুই। মিটাইয়া সেন্টু গেঞ্জি বানিয়ে ফেলুম।”
নিধির কথায় স্পর্শী হেসে বলে, “আচ্ছা বানাইস।”
অতঃপর অযত্নেই চোখের কোনে জমে থাকা জলটুকু মুছে নেয়। লেপ্টে যাওয়া কাজল আরেকটু ছড়িয়ে হয় কিন্তু সেদিকে স্পর্শী নজর দেয় না। কেয়া এইবার তাড়া দিয়ে বলে, “অনেক কথা হলো, এইবার উঠ তাড়াতাড়ি। নির্বাণ স্যার যদি একবার ধরতে পারে আমরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছি তাহলে আমরা ফিনিশড বস।”
সকলে কেয়ার কথায় সম্মতি জানিয়ে উঠে পড়ে, এগিয়ে যায় বাহিরের দিকে। এমন সময় স্পর্শীর মেসেজ টোন বেজে উঠে। স্পর্শী হাতে থাকা মুঠোফোনের দিকে একনজর বুলায়।
“অনুষ্ঠান শেষে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসবে। তোমার সাথে কথা আছে আমার।”
অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা এই মেসেজটা দেখে ক্ষণেই স্পর্শীর ভ্রু কুঁচকে আসে। অন্তর্নিহিত মস্তিষ্ক বুঝে উঠতে পারলো না বার্তাটির প্রেরক কে? পুনরায় মেসেজ টোন বেজে উঠতেই দৃষ্টি গিয়ে থমকালো স্ক্রিনে।
“আমি নির্বাণ।”
মেসেজটা আনমনে পড়া মাত্র স্পর্শী থমকে যায়। বিস্ময়ে চোখ কোটর হয়ে আসে তার।
_________________
ক্লান্ত অপরাহ্ণে পরিবেশ খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। বাতাসেও ছেঁয়ে আছে অলসতা৷ সূর্যও নিস্তেজ হয়ে হেলে পড়েছে পশ্চিমা আকাশে। ভ্যাপসা গরমের এই বিকেলে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়েই মিনিট দশেক হলো স্পর্শী নির্বাণের গাড়ির ভিতর বসে আছে। অথচ নির্বাণের কোন খবরই নেই। গাড়ি খোলা রেখে কোথায় গিয়েছে কে জানে? প্রচন্ড গরম লাগা সত্ত্বেও গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে রেখেছে সে, যাতে তাকে কেউ দেখে না ফেলে। এসি যে অন করবে সেই উপায়ও নেই। বিতৃষ্ণায় এইবার মুখ ঘুচে এলো স্পর্শীর। মনে মনে ঠিক করলো, আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করবে এরপরও যদি নির্বাণের দেখা না মিলে তাহলে সোজা বাসায় চলে যাবে।
কথাটা আনমনে আওড়িয়ে মাথাটা সিটে এলিয়ে দিল। আঁচলটা ধরে সামনে টেনে এসে কপাল ও গলার ঘামটুকু মুছে বাতাস করতে থাকলো। নয়ন দু’টির কপাট বন্ধ করে অপেক্ষারর প্রহর গুনতে থাকলো। মিনিট দুই-এক না গড়াতেই গাড়ির দরজা খুললো,কেউ এসে বসলো তার পাশের সিটে। শব্দ পেয়ে স্পর্শী তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে তাকালো। সামনে নির্বাণকে দেখামাত্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। নির্বাণ একপলক তাকালো স্পর্শীর ঘর্মাক্ত মুখশ্রী পানে। নাকের ডগায় মুক্তার ন্যায় ঘামের বিন্দুগুলো চিক চিক করছে। চোখের নিচের কাজল খানিকটা লেপ্টে আছে, গাঢ় রঙের লিপস্টিকটি কিনার দিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ছড়িয়ে গিয়েছে। হঠাৎ নির্বাণের মনে নিষিদ্ধ এক ইচ্ছা নাড়া দেয়। তার ইচ্ছে করে স্পর্শীর নিকটস্থ হয়ে খুব সপ্তপর্ণে লেপ্টে যাওয়া কাজলটুকু মুছে দিতে। ছড়িয়ে যাওয়া লিপস্টিকটুকু আরেকটুকু ছড়িয়ে দিতে। ইচ্ছেগুলো মাথা চাড়া দিতেই নির্বাণ দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলে, নিজেকে নিজেই ধিক্কার জানায় এই অশোভন চিন্তা ভাবনার জন্য। প্রখর ব্যক্তিত্বের যেন আজ কলঙ্ক লেগে গেল।জীবনে এই প্রথমবারের মত কোন কলঙ্ক লাগলো তার গায়ে। আগে তো কখনো এমন ইচ্ছা জাগে নি তার মনে, তাহলে আজই কেন? মন আজ এত বেহায়াপনা করছে কেন?
ভাগ্যিস! সামনের মানুষটি তার মনের কথা শুনতে পায় না। না-হলে কি এক বিড়ম্বনাতেই না পড়তো হতো তাকে। স্বচ্ছ চরিত্রের প্রতিচ্ছবি হয়তো ধূলিসাৎ হয়ে যেত।
“কি ভাবছেন এত?”
স্পর্শী অকস্মাৎ প্রশ্নে নির্বাণ চোখ খুলে তাকায়। নিজেকে স্বাভাবিক করেই বলে,
“কিছু না।”
কথাটা বলে নির্বাণ ইঞ্জিন স্টার্ট করলো। এসিটা দ্রুত অন করে, পাওয়ার বাড়িয়ে দিল। ক্ষণেই হিম শীতল বায়ু স্পর্শীর গায়ে পরশ বুলাতে শিথিল হয়ে পড়ে শরীর। স্পর্শী মন্থর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“আমার সাথে আপনার কি যেন কথা ছিল?”
নির্বাণ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে, “হুম ছিল, তবে এইখানে নয়।”
স্পর্শী কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কোথায়?”
“গেলেই দেখতে পাবে।”
কথাটি বলা শেষ হতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। স্পর্শী এইবার আর পাল্টা প্রশ্ন করলো না, নীরবেই গা-টা এলিয়ে দিল সিটে।
#চলবে
আজকে কিন্তু বড় পর্ব দিয়েছি। তাই সকলে আজ একটু গঠনমূলক মন্তব্য করার চেষ্টা করবেন, ওকে? অন্যথায় লেখিকা আপু কিন্তু প্রচন্ড অভিমান করবে।
[বিঃদ্রঃ “তোমার ভালো লাগায় আমি অপ্রিয় হলেও, আমার ভালো না লাগায় তুমি অপ্রিয়।” এই বাক্যের সহজ অর্থ হলো- স্পর্শীর নিকট নির্বাণ অপ্রিয় হলেও নির্বাণের নিকট স্পর্শী প্রিয়।
অনেকেই বুঝতে পারেননি বাক্যটা। তাই ভেঙে বললাম। ]