#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২০
নিশীথের সময়। আকাশে পূর্ণ চাঁদের আবির্ভাব। শৈত্য বাতাস সুক্ষ্ম আঁচড় কাটছে সবুজাভ পাতার কাগজি গায়ে। জ্যোৎস্নার আলো গায়ে মেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার দল। নির্বাণ পায়চারি করতে করতে এসে দাঁড়ালো জানালার ধারে। ক্ষণেই এক মুঠো স্নিগ্ধতা হুমড়ি খেয়ে পড়লো শ্যামপুরুষের ছোঁয়া পেতে। লেপ্টে গেল মুখশ্রী,চিবুক,গলদেশের সহিতে। নির্বাণ মোবাইলের কৃত্রিম পর্দায় সময়টা দেখে নিল একবার। একটার উর্ধ্বে সময় গড়িয়ে গিয়েছে অথচ স্পর্শীর কোন খোঁজ নেই। অনুষ্ঠান থেকে আসার পর সে যে চোখের আড়াল হলো তো হলো। ভুলেও ধরা দিল না নির্বাণের সন্নিধানে৷ হঠাৎ এমন আচরণের মানে বুঝতে পারলো না নির্বাণ। কিঞ্চিৎ প্রহর অপেক্ষা করে নিজ থেকে স্পর্শীর খোঁজ করেছিল কয়েকবার কিন্তু লাভ হয়নি। ধরা দেয়নি ফাঁকিবাজ মেয়েটা।
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতেই বিতৃষ্ণায় ‘চ’ উচ্চারণ করার মত শব্দ করলো নির্বাণ। বিরক্তির সাথে তাকালো একবার আকাশের পানে, অতঃপর বেরিয়ে এলো রুম থেকে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে রওনা দিল নিলুফার রুমের দিকে। নিলুফার রুমের সামনে আসতেই শুনতে পেল কারো রিনরিনে কথার এবং হাসির শব্দ। নির্বাণ বিরবির করলো,
“আমাকে দহনে দগ্ধ করে দেখো কি নিশ্চিন্তে হেসে-খেলে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল, আলতো হাতে খুললো দরজা। স্পর্শী তখনও নিলুফার সাথে কথা বলায় মশগুল। বুঝতে পারেনি নির্বাণের উপস্থিতি। নির্বাণ গলা ঝেড়ে নিলুফার দিকে তাকিয়ে বলল, “এখনো ঘুমাও নি কেন মা? রাত দেখেছ কয়টা বাজে?”
নিলুফা ও স্পর্শী দু’জনে চকিত দৃষ্টিতে তাকালো দরজার পানে। নির্বাণ স্পর্শীর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। স্পর্শী দ্রুত দৃষ্টি সরালো। নিলুফা নিজের চশমা ঠিক করে বলে, “এইতো ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।”
নির্বাণ কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলে, “তোমাকে না ডাক্তার বলেছে রাত না জাগতে? তাও কথা শুনো না। রাতে ঔষধ খেয়েছ?”
নিলুফা নির্লিপ্ত কন্ঠে বলেন, “হ্যাঁ খেয়েছি।”
“আচ্ছা তাহলে এখন শুয়ে পড়।”
নিলুফা কিছু বলতে যাবেন তার আগেই নির্বাণ পুনরায় বলে উঠে, “স্পর্শী রুমে আসো।”
স্পষ্ট আদেশবাণী। স্পর্শী দৃষ্টি নত রেখেই মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। নির্বাণ এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। নিলুফা তা দেখে বলেন, “কাল কথা হবে নে। এখন যাও, ডাকছে তোমায়।”
স্পর্শী লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে নিলুফাকে কোনরকম শুভরাত্রি জানিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে আনমনে ভাবে,”এমন অদ্ভুত কেন মানুষটা? মায়ের সামনে এইভাবে কেউ রুমে যেতে বলে? উফফ! মায়ের সামনে কি এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হলো। মানুষটা স্পষ্টভাষী জানতো কিন্তু তা যে এতটা সেই ধারণা তার ইহকালেও ছিল না।”
অনুষ্ঠান থেকে এসে স্পর্শী ইচ্ছে করেই নির্বাণের সামনে পড়েনি। চক্ষুলজ্জায় নাকি অস্বাচ্ছন্দ্যে সেটা জানা নেই তার। তবে আজ নির্বাণের কথা ভাবনায় আসলেও উৎকন্ঠা, ব্যগ্রতা, ব্রীড়ানতায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল সে। যার দরুন চোখের আড়ালে থেকেই দিনটা কাঁটিয়ে দিয়েছিল, ভেবেছিল রাতটা আজ কথায় কথায় নিলুফার রুমেই কাঁটিয়ে দিবে। কিন্তু তা আর নির্বাণ হতে দিল কোথায়? নৈরাশ্যজনক নিঃশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকলো সে। চোখের পলকেই নিজেকে কারো দৃঢ় বন্ধনে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। মুহূর্তেই ভড়কে উঠলো, বিমূঢ় নয়নে তাকালো সামনে। নির্বাণ রোষাগ্নি কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“সন্ধ্যা থেকে কোথায় ছিলে?”
স্পর্শী ফাঁকা ঢোক গিলে বলে, “এইতো এইখানেই।”
“এইখানে বলতে কোনখানে?”
স্পর্শী প্রত্যুত্তর করলো না। তা দেখে নির্বাণ তার আর স্পর্শীর মধ্যবর্তী দূরত্ব ঘুচিয়ে দাঁড়ায়। মন্থর কন্ঠে বলে, “পালিয়ে বেড়াচ্ছ আমার থেকে? কিন্তু কেন? কি করেছি আমি?”
স্পর্শীর প্রায় রুদ্ধশ্বাস অবস্থা এইবার। শব্দ,বাক্য নিঃশ্বাস সব যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে কণ্ঠনালীর মধ্যখানে। টু শব্দ পর্যন্ত করা এখন দায় সমান স্পর্শীর নিকটে। কোনমতে অস্ফুটস্বরে সে বলে উঠে, “তেমন কিছুই না। ভুল বুঝছেন আপনি।”
নির্বাণ কিয়ৎক্ষণ মৌন থেকে বলে, “পরেরবার যেন না দেখি তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ। না-হলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”
কথাটা বলে নির্বাণ স্পর্শীকে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। ছাড়া পেয়ে স্পর্শীর দীর্ঘশ্বাস নেয়, এতক্ষণে তার জানে জান আসলো বোধহয়। আনমনে আওড়ালো, “আছি তো আপনার সাথে শুধু আজকের রাতটা। পরে আমাকে পাবেন কোথায়?”
অকস্মাৎ নির্বাণ মন্থর কন্ঠে বলে উঠে, ” লাইট অফ করে ঘুমোতে এসো।”
স্পর্শী সচকিত দৃষ্টিতে তাকালো নির্বাণের অভিমুখে। অতঃপর লাইট অফ করে বিছানার দিকে যেতে শব্দহীনভাবে বলল, “হিটলার একটা।”
________________
রক্তিম অপরাহ্নে হরিদ্রাভ মেঘের অহর্নিশ আনাগোনা। দূরে এক ঝাঁক পায়রা উন্মুক্ত আকাশে ঘূর্ণমান গতিতে উড়ে বেড়াচ্ছে। ভ্যাপসা গরমের আবৃত পরিবেশে ঘাম ঝরছে তিরতির করে। স্পর্শী হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপাল এবং ঠোঁটের উপরিভাগে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিল। ভিড়-ধাক্কায় দমবন্ধ হয়ে আসছে তার, এগুতে চেয়েও এগুতে পারছে না। অবসন্ন দৃষ্টিতে আশেপাশে নাহিদ এবং বাকিদের খোঁজ করলো কিন্তু পেল না তাদের। ভিড়ের মাঝে হয়তো ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে সকলে। বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বেই একটি মেলা বসেছে। নাহিদ এবং বাকিরা সেখানে ঘুরতে যাবে শুনে স্পর্শীও যোগ দেয় ওদের দলে। নির্বাণ আসেনি সাথে, তার নাকি ভিড়বার জায়গায় পছন্দ নয়। তবে, নির্বাণ বারন করেছিল স্পর্শীকে যেতে। কিন্তু স্পর্শী সে কথা আমলে নেয়নি, নিভৃতে এসে পড়েছিল নাহিদদের সাথে। কিন্তু এইখানে যে এত ভিড় হবে এবং ভিড়ে সে হারিয়ে যাবে তা কি আর সে জানতো? জানলে হয়তো নির্বাণের কথা অমান্য করে এইখানে আসার দুঃসাহসিকতা দেখাত না।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সে, চেষ্টা করলো ভিড় থেকে বেরিয়ে আসার। এমন সময় পিছন থেকে এক জোড়া পুরুষালি হাত এসে স্পর্শীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। দৃঢ়ভাবে আগলে নেওয়ার ক্ষীণ চেষ্টা করে। ঘটনাক্রমে স্পর্শী ভড়কে উঠে, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে যায় কিয়ৎক্ষণের জন্য। এরপর মুহূর্তেই মেজাজ বিগড়ে যায় তার, ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠে। স্পর্শী পিছনে না ঘুরেই কুনই দিয়ে মানুষটির পেটে আঘাত করতে নিলে সে তার হাত ধরে ফেলে। কাঠ কাঠ গলায় বলে,
“হাত চালানোর আগে দেখে তো নিবে কার উপর হাত চালাচ্ছো? ষ্টুপিড!”
অতি পরিচিত কন্ঠটি কর্ণকুহরে এসে তরঙ্গিত হওয়া মাত্র স্পর্শী চটজলদি পিছন ঘুরে তাকায়। মুখে কালো মাস্ক পড়ে থাকা সত্ত্বেও স্পর্শী কিভাবে যেন চিনে ফেললো মানুষটিকে। মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো, “নির্বাণ আপনি?”
#চলবে
তীব্র জ্বরে ভুগছি আমি, চেয়েও টাইপিং করতে পারছি না বেশি। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চোখ জ্বালাপোড়া করছে। যতটুকু পারলাম এখন দিলাম। রাতে এই পর্বের ‘বর্ধিতাংশ’ দেওয়ার চেষ্টা করবো।