||কৈশোরে প্রেম|| ||অংশ:১৩||
প্রান্তের অফিসে ঠিক তার সামনে বসে আছে দিব্য। পাশে তার বাবা সোহেল রহমান। এরই মধ্যে অনেকে এসে তার সাথে সেল্ফি তুলে নিয়েছে৷ অনেকে আবার অটোগ্রাফ। একজন খেলোয়াড়কে এভাবে দেখতে পাবে কল্পনাও করেনি সে। এই সুযোগে অফিসের বস বেশ কয়েকবার প্রান্তকে এসে জিজ্ঞেস করেছেন সব ঠিক আছে কি না। আড়ালে ডেকে বলে গেছেন, দিয়ান রহমানকে দিয়ে কোম্পানির একটা বিজ্ঞাপন করাতে পারলে তার প্রমোশন কনফার্ম।
সোহেল রহমান খুব শান্তস্বরে বললেন, “বাবা প্রান্ত, আমরা তোমার বাবার সাথে দেখা করতে যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম। তিনি তো এই শহরে থাকেন না তাই তাঁর অবর্তমানে তুমিই প্রহেলি মামণির গার্ডিয়ান।”
প্রান্ত কিছুটা নড়েচড়ে বসে। প্রহেলি সম্পর্কে কথা বলতে তারা কেন এখানে এসেছেন! প্রান্তের বিস্ময় কাটিয়ে সোহেল রহমান বললেন, “আমি প্রহেলি মামণিকে আমার ছেলে দিব্যের জীবন সঙ্গী করে নিয়ে যেতে চাই। আজ আমার ছেলে দিব্যকে বাংলাদেশের সকল মানুষ এক নামে চেনে। তার পেছনে একমাত্র প্রহেলি মামণিরই কৃতিত্ব রয়েছে। তার কারণেই সে এতদূর এগিয়েছে। আমার ছেলে বলে বলছি না বাবা, তোমার বোনকে দিব্য ছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কেউ এতটা ভালোবাসতে পারবে না, সুখী রাখতেও পারবে না। তারপরেও যদি তোমাদের কোনো আপত্তি থাকে তবে জানাতে পারো।”
মনোযোগ দিয়ে সব কথা শুনে প্রান্ত যেন আকাশ থেকে পড়ে। তাদের মতো সাধারণ একটা পরিবারের মেয়েকে দিব্যের মতো ছেলে বিয়ে করতে চায়! এটা তো তাদের সাতকপালের সৌভাগ্য। কোনো বোকা ছাড়া কেউ এমন প্রস্তাবকে না করবে না। প্রান্ত বাবা-মায়ের সাথে কথা না বলেই তাদেরকে পাকা কথা দিয়ে দেয়। আগামীকালই আংটি বদলের ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করে ফেলতে চায় তারা। তাতেও রাজী হয়ে যায় সে। তারা বিদায় নিতেই বস আসেন।
তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করেন, “বিজ্ঞাপনের কথাটা বলেছেন প্রান্ত সাহেব?”
“আরে স্যার, সে আমার ভগ্নিপতি হতে যাচ্ছে। একটা বিজ্ঞাপন কেন এই আংটি বদলের অনুষ্ঠানটা হয়ে যাক। একের পর এক বিজ্ঞাপন হবে।”, বেশ গর্ব করে বলে প্রান্ত।
সম্পূর্ণ অফিসে কথাটা রটে যায়। অনেকেই কানাঘুষা করতে শুরু করে। এতবড় একজন মানুষ সাধারণ একটা মেয়েকে কীভাবে বিয়ে করতে রাজী হলো! কেউ কেউ আবার খুশিও হয় এটা শুনে। সম্পূর্ণ অফিসে মিষ্টি বিতরণ হয়ে যায়। প্রান্তকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেন তার বস। গতকালও তাকে বসের ঝাড়ি খেয়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করে যেতে হয়েছে অথচ আজ কত পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। টাকা আর ক্ষমতা মানুষকে কত দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। অফিসে এখন তার দাম অনেকখানি বেড়ে গেছে।
বাড়িতে এসে প্রান্ত তার মাকে জানায় যে, প্রহেলির বিয়ে ঠিক করে এসেছে। কিন্তু তাকে না জানাতে বলা হয়৷ বাবা শামসুল গাজীকে জানানোর পর তিনি যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যান। মেয়ের জন্য এত ভালো প্রস্তাব পাবেন কখনো স্বপ্নও দেখেননি তিনি। নিশ্চয়ই তার মেয়ে ভালো ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। বাকিটা হয়তো তাদের ভালো কোনো কর্মের ফল। রাতের গাড়িতেই তিনি রওয়ানা দিচ্ছেন। সকাল সকাল পৌঁছে যাবেন। এত দ্রুত এত আয়োজন কীভাবে করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না আরফা খাতুন। কাউকে জানানোও হয়নি।
অন্যদিকে ভার্চুয়ালে এই খবরটা ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন সংবাদেও হেডলাইন দেখাচ্ছে, “ক্রিকেট তারকা দিয়ান রহমান দিব্য বিয়ে করতে যাচ্ছেন কোনো এক সাধারণ মেয়েকে।”
পূজা খবরটা পেয়েই প্রহেলির কাছে ছুটে আসে। প্রহেলি তখন ফ্লোরে শুয়েছিল। পূজা এসে তাকে বিছানায় তুলে। এমনিতেও জ্বর তার উপর সে ঠান্ডা মেঝেতে ঘুমাচ্ছে! হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে সে।
পূজা অপ্রস্তুত গলায় জিজ্ঞেস করলো, “তুই কী জানিস দিব্য বিয়ে করতে যাচ্ছে?”
প্রহেলি এসবের কিছুই জানে না। খবরটা দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না সে। এমনটাই তো হওয়ার ছিল। তবে কেন তার দম বন্ধ অবস্থা হচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন বুকের ব্যথা তীব্র হচ্ছে।
“এমনই তো হওয়ার ছিল তাই না? হয়তো সে বুঝে গিয়েছে আমার পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই৷ তাই অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলছে। আর এটাই তার জন্যে ভালো। আমি তাকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারবো না। আমার ভালোবাসা তো কেবল নাহিয়ান ছিল। যদিও আমি ভুল পাত্রে ভালোবাসা দান করেছিলাম। তবুও তাকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না, কারণ আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না। অন্য কাউকে আর ভালোবাসতে পারবো না। তাছাড়া আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনোদিন বিয়ে করবো না। আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চাই না। নিজের সর্বস্ব হারিয়ে আমি এখন রাস্তার ফকির। কাউকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমার কাছে।”, বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রহেলি।
চোখে জল টলমল করছে। না পাওয়ার বেদনা পীড়া দিচ্ছে তাকে। পূজা আর কিছু বলে না। এখানে কথা বলে কোনো লাভ হবে না। দিব্যের সাথে কথা বলতে হবে তার। মেহরাবের থেকে দিব্যের মোবাইল নম্বর যোগাড় করে কল দেয়। কিন্তু কল রিসিভ হয় না অপর পাশ থেকে।
দিব্যের মা ফাহিমা বেগমের এই বিয়েতে একটুও মত নেই৷ তার ছেলের জন্য এর থেকে সুন্দর, ভালো উচ্চবিত্ত মেয়ে পাওয়া যেত। কেবল ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজী হয়েছেন তিনি। প্রহেলি তার থেকে বয়সে বড় এই কথাটা তাকে জানায়নি কেউ। এটা জানলে হয়তো তিনি আরো আগে মানতেন না। তাছাড়া প্রহেলির চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পেলে তুলকালাম ঘটিয়ে ছাড়বেন। কিন্তু এই কথা দিব্য তার বাবাকেও বলেনি। সে চায় না তার প্রিয় মানুষটা কারো নজরে ছোট হয়ে থাকুক। যত্ন করে চোখের পলকে রাখবে তাকে। সে এখন থেকেই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। প্রহেলির চেহারাটা বারবার চোখের সামনে ভাসছে। স্বপ্নগুলো কাল এক ধাপ এগিয়ে যাবে তার। বেশি দেরি করবে না সে। এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘরের বউ করে নিয়ে আসবে। খুব পছন্দের মূল্যবান জিনিসকে কখনো উন্মুক্ত করে বাইরে ফেলে রাখতে নেই। মনের ঘরে যত্নে তুলে বন্দি করে রাখা উচিত। যখন ইচ্ছে হলে বাহির করে প্রাণভরে দেখে আবার অক্ষত অবস্থায় রাখতে হয় নাহলে হারিয়ে ফেলার প্রখর সম্ভাবনা থাকে। দিব্য সেই ঝুঁকি আর নেবে না। একবার হারিয়েও ফিরে পেয়েছে এবার আর হারাতে দেবে না৷
প্রহেলির জন্য রাতের খাবার নিয়ে এসেছেন তার মা। মাকে দেখে বিছানা থেকে সোজা হয়ে উঠে বসে সে। জ্বর উঠছে নামছে।
“একটুখানি খেয়ে নে মা। দুপুরেও খাসনি।”
মায়ের মুখে আদরভরা কথা শুনে চোখে জল এসে যায় প্রহেলির। মৃত্যুর আগেই মনে হয় সবাই ভালোবাসতে শুরু করে। প্রহেলি আজ নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পৃথিবীর মায়া কাটানো অনেক কঠিন কিন্তু মানুষ যখন মায়া ত্যাগ করে তখন সহজ হয়ে যায়। বালিশের নিচে ব্লেড এনে রেখেছে। রাতেই হাতের শিরা কেটে ফেলবে। শেষবারের মতো মায়ের হাতে খেতে চায় সে।
“আমায় খাইয়ে দিবে আম্মু?”, অস্ফুটস্বরে বলল সে।
আরফা খাতুন তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগেন। ভাতের সাথে চোখের জলও গিলছে সে। সেই কবে মায়ের হাতে খেয়েছিল মনেই নেই তার। আচমকা তার কোলে মাথা রেখে বলল, “একটু আদর করে দাও না মা। আমার ঘুম আসছে না। আমি ঘুমাতে চাই।”
আরফা খাতুন মৃদু হেসে বললেন, “আহা! আগে খেয়ে নে। তারপর ঘুম পাড়িয়ে দিব।”
আজ মা যেন সব কথা শুনছেন তার। সব কথা বলতেই রাজী হয়ে যাচ্ছেন। প্রহেলি এখনো জানে না মায়ের এই আদরের পেছনের কারণ। মেয়ের বিয়ে হয়ে বিদায় হবে ভালোবাসার সীমা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই ক’টা দিন তার মতো করেই তিনি তাকে ভালোবাসবেন। বিয়ে হয়ে গেলে তো মেয়েরা পর হয়ে যায়। তখন চাইলেও যখন-তখন কাছে আনতে পারবেন না। স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি সবার অনুমতি পেলে তবেই আসতে পারবে। তাও এলে হিসেবের দিন থাকবে। ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে। মেয়েটার ভাগ্য ভালো যে এমন প্রস্তাব পেয়েছেন। নাহলে এতকিছুর পর কেউ জেনেশুনে বিয়ে করতে রাজী হতো না। আরফা খাতুন ভাবছেন, দিব্যকে কিছুই বলা হয়নি এখনো। যদি বিয়ের পর সে এসব জানতে পেরে তার মেয়েকে তাড়িয়ে দেয় তখন কী করবেন। এটা নিয়ে প্রান্তের সাথে আলোচনা করতে হবে তার। নিজের স্বামী শামসুল গাজীকেও এখনো তিনি এসব জানাননি। এসব জানলে মানুষটা হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। সবকথা চেপে যেতে হবে তাকে। মেয়ের সংসার করানোর জন্য হলেও চুপ করে থাকতে হবে। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে পরে দেখা যাবে। এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই মেয়ের মুখে ভাত তুলে দেন। অথচ দিব্য শুরু থেকেই সবকিছু জানে এটা তিনি জানতেও পারেন না।
প্রহেলিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে যান তিনি। খুব বেশি রাত হয়নি এখনো। ঘড়ির কাটায় মাত্র দশটা বাজে। ঢাকা শহরের মানুষের জন্য এটা সন্ধ্যে কেবল। এই সময়টাতে বেশিরভাগ কর্মব্যস্ত মানুষ বাইরে ঘুরাঘুরি করে, শপিং করে। দিনে তাদের একফোঁটা সময় নেই। দিব্যও তাদের মধ্যে একজন। কালকের জন্য একগাদা শপিং করে প্রহেলিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে সে। গাড়িতে মৃদুমন্দ আওয়াজে চলছে মিনারের “ঝুম” গানটা। গানের লাইনগুলো বড্ড বেশি ভালো লাগছে তার। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। প্রহেলি যখন এসব দেখে অবাক দৃষ্টিতে তার পানে তাকাবে কতই না মোহময় লাগবে তাকে! ভাবতেই তার মুখে আনন্দের হাসি ছড়িয়ে যায়।
সবকিছু থেকে অজানা প্রহেলি কম্পিত হাতে ব্লেড ধরেছে। ভয় করছে কীভাবে হাতের শিরা কাটবে। মরতে তার একটুও ইচ্ছে করছে না। খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কার জন্যে বাঁচবে সে! তার যে কেউ নেই। নিজের ভুলের কারণে সে একজনকে পেতে যেয়ে ভালোবাসার সব মানুষকে হারিয়েছে। পৃথিবীটা খুব স্বার্থপর। তার থেকেও স্বার্থপর এই ধরণীর মানুষগুলো। হাতের উপর ব্লেড বসিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে যেন মৃত্যুর সময় তার কষ্ট না হয়। অথচ সে নিজেও জানে এই মৃত্যু তাকে পরজনমে অনন্তকালের কষ্ট ভোগ করতে হবে। আত্মহত্যা যে মহাপাপ সে তা ভুলেই বসেছে। পৃথিবীর কষ্ট দূর করতে পরকালের কষ্টকে আপন করে নিচ্ছে। অথচ সে চাইলেই পৃথিবী এবং পরকাল দু’টোতে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে।
কলিংবেল বাজতেই রুমা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দিব্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, “আরে ডাক্তার সাহেব যে! আফা তো এহন ঘুমায়। আর কী ওষুধ দিয়া গেলেন একটুও কমলো না তার! আপনে আসল ডাক্তার তো? সইত্য বলেন দেখি, আপনে কী নকল মাইরা পাস কইরা ডাক্তার হইছেন?”
দিব্য শব্দ করে হেসে দেয়। ততক্ষণে প্রান্ত এসে যায় সেখানে। তাকে দেখেই দ্রুত এগিয়ে আসে। তার হাতের সব ব্যাগ নিজের হাতে নেয়। ঘরের ভেতরে নিয়ে যায় তাকে। আরফা খাতুন আসতেই দিব্য তার পা ছুঁয়ে সালাম করে। তিনি মেয়ের হবু জামাইকে দেখে তড়িঘড়ি করে খাবারের আয়োজনে লেগে পড়েন। রুমা ভেবে পায় না, এই ডাক্তারকে এত জামাই আদর কেন করা হচ্ছে।
“খালা, ডাক্তার সাহেবরে নিয়া এত ব্যস্ত হইছেন ক্যান? আমার কী সন্দেহ হয় জানেন, এই হালায় ভুয়া ডাক্তার। আফার এহনো কমে নাই দেহেন না?”
হতভম্ব হয়ে তাকান আরফা খাতুন৷ এই মেয়ে কিসব কথা বলছে সব তার ভাবনার বাইরে।
“কিসব উদ্ভট কথা বলিস! এ আবার ডাক্তার হবে কেন! আচ্ছা শোন, প্রহেলির ঘরে নিয়ে যা তাকে।”
“কিন্তু আফা তো ঘুমায়। গেলে আমার উপর রাগ কইরবো আবার।”
“আহা যা না তুই, রাগ করবে না যা। এখন থেকে কথা বললে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
রুমা তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না। ড্রয়িংরুমে এসে প্রান্ত আর দিব্যকে কথা বলতে দেখে।
“খালা বলছে, ডাক্তার সাবরে আফার রুমে নিয়া যাইতে।”
খালি গলায় ঢোক গিলে দিব্য। এই মেয়ে তার পর্দা তুলে দিলে মানসম্মান কিছুই থাকবে না তার। প্রান্ত কিছু বলার আগেই দিব্য বলে উঠে, “আমিও ভাবছিলাম উনার সাথে কথা বলে যাই।”
প্রান্ত একগাল হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। কাল থেকে তো সে আপনারই হতে চলেছে। যান দেখা করে নিন। আর এখন থেকে কথা বললে সম্পর্কের শুরুটা সুন্দর হবে।”
ক্ষীণ হেসে রুমার সাথে প্রহেলির রুমের দিকে এগিয়ে যায়। এমনভাবে কদম ফেলে যেন সে এই ঘরে প্রথম এসেছে। দরজার কাছে এনে দিয়ে রুমা বলল, “এবার একটু ভালা ওষুধ দিয়েন। আপা সারাদিন বিছানায় হুইয়া থাকে। ভাল্লাগে না দেখতে। হেয় মানুষ অনেক ভালা তারে এমনে দেখতে ভাল্লাগে না। বুঝলেন তার অনেক কষ্ট…” বলতে বলতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে যায় সে।
একজন কাজের মেয়ের মনেও তার জন্য কতটা ভালোবাসা। প্রত্যেকটা মানুষ কারো না কারো জীবনে শয়তানের মতো আবার কারো না কারো জীবনে ফেরেশতার মতো। কারো মাঝে নিরানব্বইটা ভালো গুণ থাকলে একটা খারাপ দিক থাকবেই। আবার কারো মাঝে নিরানব্বইটা খারাপ দিকের মাঝেও একটা ভালো দিক থাকবে। সবার গল্পে সবাই ভালো হয় না। তবে প্রহেলি এমন একজন মানুষ যে সবার কাছেই ভালো। যদিও সে কিছু ভুল করেছে এবং তার জন্য সে এখন অনুতপ্ত। কিন্তু অনেকেই আছে যারা ভুল করেও নিজের কাজের প্রতি অনুতপ্ত হয় না বরং নিজেই সঠিক বলে চালিয়ে যেতে চায়।
হাতের ব্যাগের দিকে একবার তাকায়। ব্যাগটাতে তার স্বপ্নের রাণীর জন্য পরির পোশাক নিয়ে এসেছে। এই কাপড়ে তাকে দেখতে না জানি কত সুন্দর লাগবে। কল্পনা করেই খুশি হয়ে যায় সে। প্রহেলির রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করা না থাকায় দিব্য বাইরে থেকেই খুলে ফেলে। ভেতরে ঢুকে প্রহেলির দিকে তাকাতেই তার চোখ স্বাভাবিকের চাইতে বড় হয়ে আসে। নিশ্বাস যেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হাত কাঁপছে তার।
চলবে…
লিখা: বর্ণালি সোহানা
[বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা বড় করে দিলাম। আগামীকাল গল্প নাও দিতে পারি আর দিলেও হয়তো রাত বারোটা বাজবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ প্রিয় পাঠকবৃন্দ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”