#আপনিময়_তুমি💓[ A unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 01…
সর্বনামের ‘আপনি’ আর ‘তুমি’ পদ দুটি সম্পর্কের দূরত্ব পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর বিশেষণে ‘আপনি’ দ্বারা বোঝায় সম্পর্কের গভীরতা। যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। অচেনা মানুষটির ‘আপনি’ ডাক, পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে রূপান্তরিত হয় ‘তুমি’ রূপে।
শুধু বিশেষ কিছু সম্পর্কের ‘আপনি’ পদটি আপনিময়তায় ছেয়ে যায়। তা আর ‘তুমি’ তে রূপান্তরিত হয় না। সেই সম্পর্কের পূর্ণতার নাম হয়, “#আপনিময়_তুমি💓”
🍁১🍁
‘কাল রাতে কোথায় ছিলেন আপনি আনহা? আমি দুপুর থেকে আপনার বাসায় বসেছিলাম। কিন্তু আপনার দেখা পাইনি। কেন?’
রাস্তার আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে ডান হাতে থাকা লাঠিটা নিজের বাঁ’হাতে আঘাত করে জানতে চাইল ইহান। পরনে স্কুল ড্রেসের নীল রঙের হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট। কাঁধে স্কুল ব্যাগ।
গতকাল সন্ধ্যায় বেষ্টু অন্তির বার্থডে থাকার কারণে আনহা সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু ইহান যে কাল ওর বাড়িতে যাবে তার যৎসামান্য ধারণা ছিল না আনহার। জানলে হয়তো যেত না। না, নিজের জন্য নয়। অন্তির জন্য। ইহান ওকে কিছু না বললেও অন্তিকে ছাড়বে না। কিন্তু এখন কী হবে? ইহানকে দেখে বুঝতেই পারছে ও সকাল থেকে স্কুলের পথে ওর জন্য অপেক্ষা করছে৷ এখন যদি কোনোভাবে টের পায়, অন্তির জন্য গতকাল ওকে বাসায় পায়নি। তাহলে বেচারির অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে। কথাটা ভেবেই, গলা শুকিয়ে আসছে আনহার। আর অন্তি! সে বেচারি আনহার পিছনে লুকিয়ে আছে। একবার মাথা ফাটিয়ে উচিত শিক্ষা হয়েছে। তাই আর ইহানের সাথে লাগতে চায় না। এই পিচ্চি সাইজে ছোট হলেও কাজ-কর্মে না। বোঝা হয়ে গেছে অন্তির।
‘কী হলো কোন দুনিয়ায় চলে গেলেন? কাল কোথায় ছিলেন আপনি?’
আনহা চুপ।
আবার জিজ্ঞেস করে ইহান, ‘আপনি কি বলবেন?’ নাকি আমি…’
‘খা-খ-খালার বাড়ি ছিলাম। হ্যাঁ, খালার বাড়ি গিয়েছিলাম। খালা অসুস্থ তো তাই।’ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আনহা।
‘সত্যি নাকি মিথ্যে বলছেন?’ ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল ইহান।
‘আমি কেন মিথ্যে বলব তোকে?’
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই হাতে থাকা লাঠিটা অন্তির গায়ে ছুঁড়ে মারল ইহান। অন্তি ব্যথায় ‘আঃ!’ করে উঠতেই আনহা জোরে ‘অন্তি’ বলে চিৎকার করে। ব্যথায় অন্তি মাটিতে বসে পড়লে আনহা গিয়ে ওকে উঠায়।
ইহান চোখ মুখ শক্ত করে রাগে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে, ‘ওর জন্য মিথ্যে বলবেন। আমি জানি, কাল আপনি ওর বার্থডেতে গিয়েছিলেন। আর এখন আমার সাথে মিথ্যে বলছেন।’
রেগে যায় আনহা। অন্তিকে ছাড়িয়ে ইহানের কাছে গিয়ে বলে, ‘তাতে তোর সমস্যা কী? আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাব। তুই কি আমার বাপ-মা; যে তোর কাছে জানতে চাইতে হবে?’
কথাটায় আরো রেগে যায় ইহান। ‘আমি আপনার কিছু না। তাইলে ওই পেত্নি ( অন্তিকে উদ্দেশ্য করে) আপনার সব?’
‘দেখ ইহান…’
ইহান আর আনহার কোনো কথা শুনল না। সজোরে আনহাকে ধাক্কা মারে। আনহা নিজেকে সামলাতে না পেরে পাশে থাকা বিদ্যুতের পিলারে ধাক্কা খায়। মাথায় আঘাত পায়। চেপে ধরে ব্যথা জায়গা।
ইহান সেসব না দেখেই রাগে কেঁদে ফেলে। আনহার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বলে, ‘আমি আপনার কেউ না তো থাকুন ওই পেত্নির সাথে। দরকার নেই আপনার। আমি তো আপনার কেউ না। ব্যথা পেয়েছেন ঠিক হয়েছে। আরও পাবেন।’
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে যায় ইহান। আনহা ব্যথা জায়গায় হাত দিয়ে ইহানকে ডাকতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে ইহান দৃষ্টির বাইরে মিলিয়ে গেছে। অন্তি এসে আনহাকে ধরে। আনহার কপাল অনেকটা ফুলে গেছে। অন্তি এবার রেগে যায়। বলে,
‘আজ আর এই ছেলেকে ছাড়ব না। শুধু তোর জন্য ওকে কিছু বলতে পারি না। নাইলে যা করে। দু’আঙুল মানুষ অথচ কাজ কর্মে ইবলিশ শয়তান। আজকে ওর বাপের কাছে বিচার দিবই।’
অন্তির এ কথায় আনহা ঘোর বিরোধিতা করে। বলে, ‘একদম না। এমনিতেই সেদিন আমার জন্য অনেক মার খেয়েছে।’
‘তবুও তো শিক্ষা হয়নি। তাছাড়া আংকেল তো এমনি এমনি মারেনি তাই না?’
‘পিচ্চি মানুষ এত কিছু কি বোঝে?’
‘আমি ভেবে পাই না এইরকম একটা শয়তানের হাড্ডিকে তোর পিচ্চি মনে হয় কীভাবে?’
‘ওর কথা ছাড়।’
‘তুই সবসময় এই কথায় বলিস।’ মুখ ফিরিয়ে বলল অন্তি।
আনহা ওকে আলতো কাতুকুতু দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে এবার চল। স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
তারপর আনহা আর অন্তি হাঁটা শুরু করে স্কুলের উদ্দেশে। যেতে যেতে অন্তি বলে, ‘তোর লাই পেয়ে ও মাথায় উঠছে। দেখে নিস, তোর জন্য ওর এই পাগলামি একদিন ভয়ংকর রূপ নেবে। সেদিন এই ছেলের জন্য তোকে অনেক পস্তাতে হবে।’
‘কী যে বলিস?’ বিদ্রুপ করে বলে আনহা।
অন্তি বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, ‘গায়ে লাগল না তো। গরীবের কথা বাসী হইলে মিষ্টি হয়। আমারটাও তাই। দেখে নিস। আমার কথা না কোনদিন মিথ্যে হয়নি। এবারও হবে না। এই ছেলেই তোর কাল হবে।’
‘হলে হবে। এখন চল।’ হাসি মুখে বলল আনহা।
তারপর দু’জনে কথা বলতে বলতে স্কুলের দিকে এগিয়ে যায়।
এবার পরিচয়ে আসি। আনহা মাহমুদ অর্ণি। ডাকনাম অর্ণি। বয়স ১২ বছর। এবার সপ্তম শ্রেনিতে পড়ে। অন্তি ওর একমাত্র বেষ্টু। আর যাকে নিয়ে এত ঝামেলা মানে সেই ছেলেটা ইহান। ইহান আনহার ৩ বছরের ছোট এবার চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ছে। পুরো নাম ইহান আহমেদ অয়ন। ডাকনাম অয়ন। বয়স ৯ বছর।
আনহার কাছে অয়ন যেমন ইহান তেমনি ইহানের কাছে অর্ণি আনহা নামেই পরিচিত। ইহানের কাছে আনহার আরো একটা পরিচয় আছে তা হচ্ছে ‘আপনি’💓।
ইহানের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আনহার বাড়ি। তবে ওদের পরিচয়টা স্কুল থেকেই। কয়েকমাস আগে আনহা যখন ষষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ত তখন হঠাৎ ইহানের সাথে ওর দেখা। ইহানের ২ ক্লাস সিনিয়র আনহার খালাত ভাই রিহাম। ইহান নিজের ফেন্ডের জন্য ওকে মেরেছিল। রিহামকে কাঁদতে দেখে আনহা তার কারন জানতে চায়। রিহাম ইহানের কথা বলে যে, ‘ক্লাস থ্রির একটা ছেলে ওকে মেরেছে।’ অন্তি ব্যাপারটা নিয়ে অনেক হাসে। ক্লাস ফাইভের ছেলে কিনা থ্রিতে পড়া পিচ্চি কাছে মার খেয়েছে। আনহা ওকে থামিয়ে ইহানের কাছে যায়। জানতে চায়, ‘ওর ভাইকে কেন মেরেছে?’ প্রত্যুত্তরে ইহান আনহাকে বিদ্রুপ করে খিলখিল করে হাসে। তাই দেখে অন্তি ইহানকে ‘বেয়াদব ছেলে’ বলে। অন্তির এই কথায় ইহান রেগে ওকেও ধাক্কা দেয়। এবার আর আনহা চুপ থাকতে পারে না। ইহানকে থাপ্পাড় মারতে যায়। কিন্তু পারে না। ইহান ওর হাত ধরে ফেলে মুচড়ে দেয়। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে আনহা। তাই দেখে আরো জোরে ওর আঙুলে চাপ দেয় ইহান। তৎক্ষনাৎ নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আনহা। অবাক চোখে পিচ্চিটাকে দেখে। একটা পিচ্চির এমন সাহস আর দর্শীপণায় হতভম্ব আনহা!
আনহাকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় দেখে ইহান হাসতে হাসতে বলে, ‘আরেকবার আমাকে মারতে এলে হাতটাই ভেঙে দিবো।’
এই কথায় আনহা বুঝল এরকম বেপরোয়া, বেয়াদব ছেলের সাথে কথা না বলাই ভালো। যে কিনা হাসতে হাসতে আঘাত করতে পারে। তাই চলে যায় সেখান থেকে।
সেদিনের কাহিনীটা সেখানে শেষ হলেই পারত। কিন্তু তা হয়নি। সেদিনের পর ইহান যতবার আনহাকে দেখেছে ততবার ক্ষেপিয়েছে। ওকে জ্বালিয়েছে। আনহা অনেকবার এর প্রতিবাদ করলেও এই পিচ্চি নিজের কাজ ছাড়েনি। তাই আনহা ওকে কিছু বলাই ছেড়ে দিয়েছে।
দু’জনার একটু একটু করে তৈরিকৃত পরিচিত হওয়া ছোট দুটি মন কখন যে এতটা পরিচিত হয়ে গেছে তাতে দু’জনেই বেখবর। ইহান যেমন আনহাকে আপন ভেবে জ্বালায়। তেমনি আনহাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওর এসব কর্মকান্ডে। ওর প্রতিদিনের রুটিন ইহান। আগে ইহানের এসব খারাপ লাগলেও এখন তা লাগে না। বরং ইহানকে না দেখলে ওর খালি খালি লাগে। কিন্তু ওর জন্য ইহানের পাগলামি যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখনি ঘটে বিপত্তি। যেমন আজকের ঘটনা।
🍁২🍁
আনহা আর অন্তি নিজেদের মধ্য কথা বলতে বলতে স্কুলের সামনে যায়। স্কুলের ভিতর ঢুকতে যাবে তখনি পরিচিত কারো গলার আওয়াজ পায়। আনহা সেদিকে তাকিয়ে দেখে ক্লাস নাইনের সিমান নামের সেই ছেলেটা। যে কয়দিন ধরে ওকে ফলো করছে। ওকে দেখে আনহা তাড়াতাড়ি ভিতরে যেতে চায়।
কিন্তু বাঁধ সাধে অন্তি। যেতে না দিয়ে আনহার কানে কানে বলে, ‘আজকে তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলবি তারপর যেতে দেব। বেচারা প্রতিদিন তোকে একবার দেখার জন্য কত কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকে।’
এটা শুনে আনহা কাঁদো কাঁদো মুখ করে। চেহারায় কিছুটা লজ্জার ছাপ ফেলে বলে, ‘আমি কি বলেছি?’
‘ইসস! ডং দেখলে বাঁচিনা। আজকে কথা বলে তারপর যাবি।’ কাঠ গলায় নাক উঁচু করে বলে অন্তি।
তখন সিমান নিজেই আনহার কাছে এসে বলে, ‘অর্ণি তোমার সাথে কিছু কথা আছে।’
সিমানের এই কথায় ভয়ে বুকে মোচড় দেয় আনহার। মুখে লজ্জার ছাপ। ঠোঁটের কোণে হাসি। মাথা নিচু করে হাতে হাত ঘষছে।
সিমান পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে আনহার হাতে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চিঠিটা ছোঁ মেরে কেউ নিয়ে নেয়। সিমান, আনহা দু’জনেই চিঠি কেড়ে নেওয়া মানুষটির দিকে তাকায়। চমকে উঠে আনহা!
আবছা কণ্ঠে বলে, ‘ ইহান…’
অন্তি দু’টো ঢোক গিলে বলে, ‘এর কথা তো আগে ভাবেনি। শয়তানটা তো আমাকেই দেখতে পারে না অর্ণির সাথে। সিমান ভাইকে দেখে কী করবে কে জানে?’
‘এই পিচ্চি কে তুমি? চিঠি নিলে কেন?’
সিমানের এই কথায় ইহান দাঁত বের করে পাগলের মত হাসতে থাকে। আনহাকে ভেংচি কেটে বলে, ‘লাভ লেটার। হা..হা.. আনহা আপনাকে লাভ লেটার দিচ্ছে এই ছেলেটা?’
বলেই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ইহান। যা এতটুকু ভালো লাগল না আনহার।
তখনি আনহার সেই ভয়টা সত্যি করে দিয়ে ইহান…….
ইহান চিঠিটা কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে। রেগে যায় সিমান। ও ইহানকে ধমক দিয়ে বলে, ‘এইটা কী করলে তুমি?’
‘তোর চোখে কী সমস্যা? দেখতে পেলি না ছিঁড়ে ফেলেছি।’
ইহানের এমন কথায় অবাক সিমান। এইটুকু বাচ্চা ওকে তুই-তামারি করছে! আনহার কাছে এবার ব্যাপারটা অনেক বেশি লাগছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
🍁
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন। ]
অনেকদিন পর ফেইসবুকে আসলাম। অনলাইনে আসতেই পারি না। গল্প লেখাটা এখন অনেক টাফ। তবুও না পেরে অভ্যাসগত কারনে দিলাম।
যদিও আমি কোন গল্পের সিজন ২ লিখিনা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের রিকোয়েস্টে #আপনিময়_তুমি💓 দ্বিতীয় সিজন দিতে বাধ্য হলাম।
গল্প পোস্ট করতে মাঝে মাঝে সমস্যা হতে পারে। দয়া করে ক্ষমা সূলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
★————————-★————————–★
বিঃদ্রঃ নাইস, নেক্স না লিখে গল্পের ভালো-খারাপ দিক গুলো তুলে ধরুন। গল্পের কাহিনী, লেখা, ত্রুটি বা অসামঞ্জস্যতা, বাক্য বুঝতে বা লেখায় ভুল হলে এড়িয়ে না গিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করুন।
ধন্যবাদ…
★————————-★————————–★