আপনিময় তুমি সিজন 2পর্ব-২৫

0
1779

#আপনিময়_তুমি💓[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 25

ইহান, আনহা ও আসাদ বন্ধ রুমে দাঁড়িয়ে আছে। কারও মুখে কোনো কথা নেই। জিহামকে ফোন দিয়ে আনহার বাবা কাজী নিয়ে আসতে বলেছেন। জিহাম তৎক্ষনাৎ সমস্ত ব্যবস্থা করে সব কিছু রেডি করে নিয়ে এসেছে।

কিন্তু বিয়ের জন্য সবচেয়ে বেশী যেটা জরুরী তা হচ্ছে ছেলে-মেয়ের সম্মতি। সেটাই তো নেওয়া হয়নি। আসাদ খুব ভালো করেই জানেন, ছেলেমেয়ে দু’টো একে-অপরের সাথে থাকতে চায় অবশ্যই। কিন্তু সমাজের বেঁধে দেওয়া কিছু অযাচিত নিয়মের কারণে তা ওরা মানতে চাইছে না। কিন্তু আসাদ চায় এই ছেলে-মেয়ে দু’টো একসাথে থাকুক। তিনি আনহা ও ইহানের দিকে তাকালেন৷ ইহান মাথা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছে না। অন্যদিকে আনহা সেই থেকে ক্রমাগত কেঁদেই চলেছে। ওর অশ্রুযেন কোনো কিছুর বাঁধ মানতে চাইছে না।

আসাদ আনহার পূর্বে নিজের ছেলের কাছে যায়। ইহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘এখন তুই যদি বিয়েটা করতে রাজি না হস, তাহলে সবার সামনে আমি মিথ্যুক হিসেবে প্রমাণিত হব। মাহিদ-ইন্সপেক্টর ওরা এখনো যায়নি। এই বিয়েটা না হলে আনহাকে এখানে রাখা যাবে না।’

ইহান নীরব রইল। বাবার কথার কোনো প্রত্যুত্তর দিল না। সত্যি বলতে ওনার কথার কোনো প্রত্যুত্তর ইহানের কাছে এই মুহূর্তে নেই।

‘তুই কি এভাবেই চুপ থাকবি ইহান।’ এবার কিছুটা রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন তিনি।

কিন্তু এবারেও ইহান চুপ। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

‘ঠিক আছে। আমার কথার যখন দাম তোর কাছে নেই, তাহলে আমিও তোকে ফোর্স করব না। আমি বরং…’

‘আনহাকে জিজ্ঞেস কোরো বাবা ওনি আমাকে বিয়ে করতে চায় কি না? তারপর নাহয় আমি বললাম।’ কথাটা বলে মাথাটা উঁচু করে ইহান আসাদের দিকে তাকায়। মুহূর্তে আসাদের মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে। তিনি আনহার কাছে যান। আনহাকে জিজ্ঞেস করতেই ও মাথা নিচু করে হেঁচকি তুলতে লাগল। কান্নাটা যেন ওকে আরও কষ্ট দিচ্ছে। আনহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আসাদ বললেন, ‘কি রে আনহা চুপ করে আছিস যে? এই বিয়েটা করবি তুই?’

আনহা চুপ।

‘দেখ আনহা, আমি আমার ছেলের লাইফটা তোকে দিয়ে দিচ্ছি। শুধুমাত্র তোর কথা ভেবে। তোর ভালোর জন্য। তুই এখানে থাকবি নাকি ওদের সাথে যাবি সেটা ডিপেন্ড করছে তোর সিন্ধান্তের উপর।’

‘আমি এই বিয়েটা করতে পারব না চাচা।’ কাঁদার বেগ বাড়িয়ে বলল আনহা।

‘কেন পারবি না?’ ক্রোধিত কণ্ঠে বললেন আসাদ।

‘এই বিয়েটা হলে ইহানের লাইফ নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার এমনিতেও অনেক বদনাম হয়েছে। আর মাহিদও ইহানকে ছেড়ে দেবে না। ওর বিপদ হবে। তাই বলছি চাচা আমি এই বিয়েটা করতে পারব না।’

‘থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দেব তোর। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী। আমার ছেলের ভালো-মন্দ নিয়ে আমার বুঝি টেনশন নেই। কোথাকার কোন মেয়ে, সে আমার ছেলের ভালোটা বুঝবে? আমার ছেলের ভালো বোঝার জন্য আমিই যথেষ্ট তোকে না ভাবলেও চলবে।’

‘চাচা আমি…’

‘আর একটা কথাও বলবি না তুই। ইহানের থেকে জিজ্ঞেস করেছি ঠিকি। কিন্তু তোর থেকে জানতে চাওয়াই আমার ভুল। আমি কিছু শুনতে চাই না। এই বিয়ে তোকে করতে হবে ব্যস। আমি বিয়ের কথা বলে আসি।’

আসাদ বেরিয়ে গেলেন। ওনি বেরিয়ে যেতেই আনহা ইহানের দিকে তাকায়। কিন্তু ইহানের দৃষ্টি আনহার দৃষ্টির মুখোমুখি হতেই ইহান ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়। আনহা কিছু বলতে যাবে কিন্তু পারল না।

ইহান ও আনহাকে পাশাপাশি বসিয়ে রাখা হয়েছে। কাজী ওদের দুজনের দিকে একটি খাতা এগিয়ে দিয়ে সিগনেচার করতে বলে। আসাদ ইহানের দিকে কলম দেয়। ইহান গম্ভীর মুখে কলমটা নিয়ে নিজে সই না করে আনহার দিকে এগিয়ে দেয়। আনহা করুণ দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকায়। ইহানের মনে ঠিক কী চলছে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এতটুকু আনহা বুঝতে পারছে যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না। ভুল হচ্ছে। শুধু ভুল না মস্ত বড় ভুল হচ্ছে। তৎক্ষনাৎ ইহান অনেকটা বিরক্তি নিয়ে আনহাকে কলম ধরতে ইশারা করে। আনহা কাঁপা কাঁপা হাতে কলম ধরে। সাইন করতে যায়। কিন্তু হাতটা বার বার থেমে যাচ্ছে। ও ইহানের দিকে তাকায়। ইহান তখনো নিচু মাথায় বসে আছে। আনহা চোখ বন্ধ করে। চোখের কোণ বেয়ে দু’ফোঁটা পানি পড়ে। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে নিজেকে শক্ত করে। সাইন করে দেয় পেপারে। আনহা সাইন করার পর ইহান ধীরস্ত কলমটা নিয়ে নিজেও পেপারটায় সাইন করে। বিয়ের ফর্মালিটি পূরণ হলে তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। যেহেতু ওদের বিয়ে হয়ে গেছে, সেহেতু কারও কিছু করার থাকে না৷ মাহিদ ও ইন্সপেক্টর সেখান থেকে চলে যায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত প্রায় দু’টো বাজতে চলল। আনহা ইহানের রুমে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। আজ বোধহয় ওর বাসররাত ছিল। কিন্তু এখানের পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বিয়ে হয়নি বরং কারও শেষ কার্য সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আনহা ইহানের ঘরে আসতে চায়নি। কিন্তু আসাদের জন্য আসতে হয়েছে। কিন্তু ইহান এখনো ফেরেনি। সেই যে সকাল বেলা বেরিয়েছে আর এখন রাত দু’টো তার মাঝে কোনো খবর নেই ইহানের। অপর্ণা তো আনহাকে সহ্য করতে পারছে না। তাঁর ধারণা আনহার জন্য ইহানের অনেক বেশী দুর্ভোগ হবে। আনহা ওর জন্য অভিশাপ। কিন্তু এ-কথার বিপরীতে আনহা চেয়েও কিছই বলতে পারেনি। কোথাও না কোথাও ও নিজেই এমনটাই ভাবে। আসলেই ও ইহানের জন্য অভিশাপ।

ভেবেই বিছানায় মুখ গুঁজে কাঁদছে। তৎক্ষনাৎ দরজা খোলার শব্দ পায়। আনহা সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। ইহান রুমে ঢুকে নিজের অভ্যাস মতো দরজা বন্ধ করতে যায়। কিন্তু আনহাকে দেখে থমকে যায়। পরক্ষণেই ভাবে, ভয় পাচ্ছে কেন আনহা তো ওর বউ। ও কোনো কথা না বলে ওয়াসরুমে ঢোকে। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হয়। আনহা তখনো বসে আছে বিছানায়। ইহান একবার বিছানায় থাকা আনহার দিকে চোখ বুলিয়ে আশ-পাশ দেখে। আসলে কী করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না।

তখনি আনহা বিছানা থেকে উঠে ইহানের সামনে দাঁড়ায়। আনহা একটু ঝুঁকতেই ইহান তৎক্ষনাৎ সরে গিয়ে বলে, ‘থামুন থামুন আমাকে সালাম করার দরকার নাই। আমি আপনার হাজবেন্ড হলেও পিচ্চি।’

ইহানের এ-কথায় আনহা কিংকর্তব্যবিমুঢ় । ও ইহানকে সালাম করতে যাচ্ছে এটা কেন মনে হলো ওর। ও তো পায়ের নিচ থেকে কাঠি জাতীয় কিছু সরানোর জন্য ঝুঁকল।

আনহা কিছু বলবে তার আগেই ইহান বলল, ‘দেখুন আমার মাথাটা ঠিক নেই। কেমন জানি লাগছে। আপনি বরং শুয়ে পড়ুন। আমিও ঘুমাব।’

ভ্রু কুঁচকায় আনহা। ছেলেটা বলতে কী চাইছে? তখনি ইহানের দিকে নজর যায়। শীত শীত আবহাওয়া তবুও ছেলেটা ঘামছে। যেন কিছুতে ভয় পেয়েছে। কিন্তু কী?’

ইহান একটা ঢোক গিলে বলল, ‘উফফ! আপনি এখনো দাঁড়িয়ে! বললাম তো শুয়ে পড়ুন। আমিও শুয়ে পড়ছি।’

‘কিন্তু আমার কথা…’

‘দেখুন আনহা যা শোনার কাল সকালে শুনব। আপাতত আজ রাতে…’

ভ্রু কুঁচকায় আনহা।

‘ধুরঃ! আমার কেমন লাগছে আমি ঘুমাব।’

বলেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। পরক্ষণেই উঠে বসল। আনহার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনিও কি এই বিছানায় ঘুমাবেন। মানে আমার পাশে ঘুমাবেন?’

‘তুই কি আমাকে নিচে ঘুমাতে বলছিস?’

‘না মানে আমি বলতে চাইছিলাম…’

আনহা ইহানের দিকে ভালোভাবে তাকাল। ইহানের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু আনহা বুঝতে পারছে না ও ভয় পাচ্ছে কেন?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
(বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here