জীবনের গল্প পর্ব:-১২

0
353

__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-১২___________
এলাকায় একটা সুখি পরিবার ছিল আশরাফ সাহেবেরটা। কখনও ঝগড়াঝাঁটি ছিল না। এলাকার সবাই প্রশংসা করতো তাঁর পরিবারের। অনেকে বলতো, ‘সবাই মিলে একসাথে কত সুন্দর করে মিলেমিশে থাকে আশরাফের বাড়ির মানুষগুলো!’ শুনে আশরাফ সাহেবের বুকটা গর্বে ফুলে উঠতো। কিন্তু ঐদিনের পর থেকে সেই অনুভূতিটুকুকে হারাতে বসে আশরাফ সাহেব। দুই বউ সুযোগ পেলেই ঝগড়া শুরু করে। একজন অন্য জনের চোখের বিষ এখন। দেখলেই গা শিরশির করে উঠে।
সূর্যটা একটু পশ্চিমাকাশে কাত হয়েছে মাত্র। সূর্যের তেজ এখনও কমেনি। আশরাফ সাহেব বাজার করে ফিরছিলেন। হাঁটার অভ্যাস আছে তাঁর। বাজারের থলেটা মাঝেমাঝে হাত বদল করে হাঁটছিলেন তিনি। এলাকায় পা দিতেই সমবয়সী এক বৃদ্ধ বললেন,
-আশরাফ, তোর বাড়ির পাশ দিয়ে আসার সময় শুনলাম ঘরে চেঁচামেচি হচ্ছে। মনে হয় কেউ ঝগড়া দিছে।’
আশরাফ সাহেব কোনো জবাব দিলেন না। এই মুহূর্তে তাঁর এসব শুনতে ভালো লাগছে না। ঘামে তাঁর গায়ের পুরো পাঞ্জাবিটা ভিজে গেছে। খুব তৃষ্ণার্ত এখন তিনি। তাই তাড়াতাড়ি পা চালালেন বাড়ির দিকে।
বাড়িতে এসে আশরাফ সাহেব ডাক দিলেন,
-বউমা, বাজারগুলো নাও তো…’
আশরাফ সাহেবের ডাকে দুই বউয়ের কেউ সাড়া দিলো না। তারা একটু আগে ঝগড়া করে থেমেছে। এখন একজন আরেকজনের আশায় কেউ বাজারগুলো নিতে যাচ্ছে না। শেষে মনির মা এসে বাজারগুলো ভেতরে নিয়ে গেল। মনি তখন জগে করে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এলো। গ্লাসে পানি নিয়ে সে এগিয়ে দিলো দাদুর দিকে,
-পানি খাও দাদু… ইশ! একদম ঘেমে গেছো তুমি।’
আশরাফ সাহেব নাতনির হাত থেকে পানি নিতে নিতে ভাবলেন, ‘নাতনিটা তাঁর বড় হয়ে গেছে। অনেককিছু বুঝতে শিখেছে।’
পানি খেয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আশরাফ সাহেব গ্লাসটা আবার মনির হাতে দিলেন। মনি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,
-আজ কী নাস্তা এনেছো দাদু বাজার থেকে?’
-তেমন কিছু আনিনি দাদু, বাদাম এনেছি শুধু।
-ওয়াও। বাদাম খাবো, বাদাম।’ বলেই ভেতরে গেল মনি। পদ্মাবতী একটা লুঙ্গি আর গামছা এনে স্বামীর হাতে দিয়ে বললেন,
-গোসল করে আসেন।’
আশরাফ সাহেবে পাঞ্জাবিটা খুলে বের হলেন টিউবওয়েলের দিকে। বীথি তখন টিউবওয়েলে মুখ ধুচ্ছিল। ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতে এসেছে সে বাদাম খাওয়ার জন্য। দাদুকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-গোসল করবে দাদু?’
-হ্যাঁ দাদু।
-দাঁড়াও, আমি টিউবওয়েল চেপে পানি নিয়ে দিই তোমাকে।’
-আচ্ছা…’ মৃদু হাসলেন আশরাফ সাহেব। আর বীথি উপর নিচ ঝুঁকতে ঝুঁকতে নাচের ভঙ্গিমায় টিউবওয়েল চাপতে লাগলো। টিউবওয়েল চাপার শব্দ আর বালতিতে পানি পড়ার শব্দ মিলে সুন্দর একটা সুর সৃষ্টি হয়েছে তখন। আশরাফ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
-রাজ কই? ওকে দেখছি না যে?
-আমি জানি না, আমি ঘুম থেকে উঠছি মাত্র। নাও, এবার গোসল করে ফেলো।
-কোথায় গেল ছেলেটা এই গরমের মধ্যে?’ বলেই তিনি বালতিটা একটু সরিয়ে মগ নিয়ে পানি ঢালতে লাগলেন গায়ে। আর বীথি নিজের গায়ে যাতে পানি না লাগে তাই লাফ দিয়ে সরে এলো ওখান থেকে।
.
.
সন্ধ্যার দিকে কোথা থেকে যেন ফিরে রাজ চিল্লাচিল্লি শুরু করে,
-মা, মা, আমার বাদাম কই? এখানে সবাই বাদাম খেয়ে খোসা ফেলেছো। আমারগুলো কই বাদাম?’
পদ্মাবতী এসে বললেন,
-তোকে আবার বেশি করে বাদাম কিনে দেবো কাল। আজ সবাই খেতে খেতে ফুরিয়ে গেছে দাদুভাই।
-না, হবে না। আমাকে এখনই দিতে হবে। আমারগুলো খাইছো কেন? দাও, আমারগুলো।’
এবার মনির মা মন্তব্য করলো,
-আমি বলেছিলাম না, ওর জন্য কিছু রাখতে? এখন তুফানটাকে থামাও তোমরা। আমি এসবের মধ্যে নাই।’
পদ্মাবতী বুঝাতে চেষ্টা করলেন নাতিকে,
-দাদুভাই, আজ তোর দাদু অল্প বাদাম এনেছিল বাজার থেকে। তাই শেষ হয়ে গেছে।
-কে খাইছে সব?’ রাজ রেগে উঠলো এবার।
-কেউ খাইনি। এই ধর বাদাম।’ বলেই মনি একটা বাদামের প্যাকেট দিলো রাজের হাতে। রাজ আর কোনো কথা না বলে প্যাকেটটা নিয়ে পড়ার রুমে চলে গেল। বাদাম আবার কোথা থেকে এসেছে তা তার জানার দরকার নেই। সে শুধু খেতে পারলেই হবে। কিন্তু পদ্মাবতী হেসে মনিকে জিজ্ঞেস করলেন,
-তুই আবার কোথায় পেলি বাদাম?’
মনিও মৃদু হেসে বললো,
-ও এরকম করবে জানতাম। তাই আমারগুলোই রেখে দিছি ওর জন্য।
-তুই খাসনি?
-না…’
পদ্মাবতী কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। মনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন কেবল।
.
.
♥বারো♥
মেহমান এসেছে বাসায়। ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে। তাই আশরাফ সাহেব কিছু বাজার-সাজার করে আনলেন। পদ্মাবতী রাজকে দিয়ে ঘরের বড় মোরগটা ধরালেন। অনেক কষ্ট হয়েছে মোরগটা ধরতে। মাথার উপর দিয়ে কক কক করে চলে যায় শুধু। তখন মনি আর বীথি হেসে উঠে তার অবস্থা দেখে। রাজের রাগ উঠে যায়। যেভাবেই হোক সে মোরগটা ধরবে, আর মোরগের বড় অংশটা সে নিজেই খাবে। অনেকক্ষণ পর মোরগটাও যখন ক্লান্ত হয়ে আর দৌড়াতে পারছিল না, তখন রাজ ওটাকে ধরে ফেলে। তারপর নিজ হাতে দাদির সাহায্যে জবাই করে। এরপর জবাই করা মোরগটার পালক বাছতে থাকে মনি ও বীথি। মাঝেমাঝে রাজ ওখানে এসে দেখে যায় ওদের কাজ। মনি তখন বলে,
-এভাবে ঘুরেফিরে না এসে নিজেও আমাদের সাথে কাজ করলেই তো পারিস।
-চুপ বেহায়া মেয়ে। আমি তোর সাথে কথা বলি না।
-হুহ! আমারও কথা বলতে বয়ে গেছে।’ মনি কথাটা বললেও পরক্ষণে ভুলে যায়। তাই সে আবার বলে উঠে,
-এভাবে বারবার দেখে গেলেও বড় মাংসটা তুই পাবি না।
-না পেলে নাই। তোর জন্য মুরগির পাছাটা বরাদ্দ থাকবে।
-ওয়াক থু।’ বলে থুথু ফেলে মনি চিৎকার করে রাজের মায়ের উদ্দেশ্যে অভিযোগ করে বললো,
-বড় মামি দেখো না, রাজ এখানে কীসব বলছে? পঁচা কথা সব।
-বলো মামি দেকো না, লাজ একানে কীছব বইলছে।’ মনির কথাটাকে ভেঙ্গালো রাজ। মনি মোরগের পালক ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
-শয়তান ছেলে একটা। কোনোদিন শোধরাবে না।’
এবার মনির মা এসে রাজকে বললো,
-রাজ এদিকে আয়, ঝগড়া করিস না। ধর একটু দোকানে যা।
-কেন?’ জিজ্ঞেস করলো রাজ। তার হাতে দুইটা একশত টাকার নোট দিয়ে মনির মা বললো,
-একটা বড় সেভেন আপ, আর দুইটা ভালো বিস্কিটের প্যাকেট আনবি, যা বাপ।’
-আচ্ছা যাচ্ছি।
-আর শুন, সামনের রুমে মেহমান বসা। ওদের সামনে দিয়ে আনিস না ওগুলো।
-আচ্ছা।’ বলেই রাজ চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে মনি গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললো,
-টাকা বাঁচলে তুই অর্ধেক, আমি অর্ধেক।
-মুরগির পাছাটা এখনই কেটে খেয়ে ফেল তুই।’ না ঘুরেই বললো রাজ।
-ওয়াক থু। বান্দর ছেলে, শয়তান ছেলে।’ মাটিতে থুথু ফেললো আবার মনি। ওর অবস্থা দেখে বীথি শুধু হাসতে লাগলো। কিছু বললো না।

.
.
ফাতেমার দুইবছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে বাড়ির উঠানে খেলছিল মনি ও বীথি। খুব আদরের হয়েছে ফাতেমার ছেলেটা। এর আগে ফাতেমার একটা মেয়ে হয়েছিল, কিন্তু ওটা জন্মের এক মাস পরেই মারা যায়। এরপর এই ছেলেটা আসে ফাতেমার কোল জুড়ে। সবাই আদর করে ছেলেটাকে। মনি ও বীথি একজনের কোল থেকে আরেকজন নিচ্ছিল ওকে। তখন রাজ এসে ওকে কোলে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ বাচ্চাটার গালে চুমু খায় সে, নাকে নাক ঠেকিয়ে আদর করে। বাচ্চাটা হেসে উঠে। সে তার নরম তুলতুলে হাতে রাজের নাক টেনে দেয়। রাজ তখন বাচ্চাটাকে ওপর দিকে ছুড়ে আবার ক্যাচ ধরে। এটা নজরে পড়ে ফাতেমার ননদের। তখন ফাতেমার ননদ এসে রাজকে বকা দিয়ে বলে,
-ছোট বাচ্চাদের এরকম কেউ করে?’ বলেই সে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে নেয়। এই মেয়েটাকে রাজের একদম পছন্দ না। কেমন যেন ডাইনি ডাইনি লাগে। গতবছরও একবার এসেছিল ও ছোট ফুফির সাথে। তখনও সে শুধু রাজকে বকা দিতো ছোট ফুফির ছেলেটার গাল টানতো বলে। ছোট বাচ্চা দেখলেই রাজের গাল টেনে আদর করতে ইচ্ছে হয়। তাই সেও ছোট ফুফির ছেলেটার গাল টেনেছিল, আর এই মেয়েটা তখন এসে কতকিছু শুনিয়ে গেল। এখন আবার সে পিছু লেগেছে রাজের। রাজ মনে মনে বললো, কিছু একটা করতে হবে এই মেয়ের। বয়সে মেয়েটা বড় বলে সে সামনাসামনি কিছু করতে পারে না ওর। কিন্তু সে মেয়েটাকে ছাড়বে না। রাত হলেই ভূতের ভয় দেখাবে।
.
.
যখন রাত হলো, রাজ খেয়াল রাখে ছোট ফুফির ননদের উপর। ছোট ফুপির ননদটা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিল হেসে হেসে। একটু দূরে বসে রাজ জোরে জোরে পড়ছিল যাতে ওর ডিস্টার্ব হয়। ছোট ফুফির ননদটা তখন বিরক্ত হয়ে বাইরে বের হতে চাইলো, রাজ বললো,
-বাইরে একা যাইয়েন না। আমাদের এলাকায় খারাপ জিনিস বের হয় রাতে। গাছের সাথে ওদের ঝুলতে দেখা যায়।
-তুই তোর পড়ায় মন দে পিচ্ছি ছেলে।’ বলেই ছোট ফুফির ননদটা বেরিয়ে গেল বাইরে। আর রাজ মনে মনে বললো,
-একটু পর ঠের পাবি, বেচারি।’
আবার জোরে জোরে কিছুক্ষণ পড়লো রাজ। তারপর পড়া থামালো। অপেক্ষা করতে থাকে সে একটা আর্তনাদ শোনার জন্য। এখনও মেয়েটার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে না কেন? তবে কি মেয়েটা ভয় পায়নি? ভাবতেই হঠাৎ চিৎকার শোনা গেল বাইরে। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে দৌড়েভেতরে চলে এলো। মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেছে তার। কাঁপছে সে। তার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই এসে হাজির কী হয়েছে দেখার জন্য। তখন সে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
-ভূ-উ-উ-ত! বাইরে ভূ-ত!’
-কী বলো এসব? ভূত আসবে কোথা থেকে? শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো।’ তার কাধে হাত চাপড়াতে চাপড়াতে বললো ফাতেমা।
-সত্যি ভাবী, আমি ভূত দেখেছি। বাইরে গাছের সাথে মাথাটা নিচের দিকে দিয়ে ঝুলছে সে।
-ধুর! কীসব বলো না। চলো তো দেখে আসি।’ বলেই ওরা কয়েকজন বের হলো ভূত দেখার জন্য। কিন্তু কিছু না দেখে ফিরে এলো। তখন রাজ বের হলো। বের হয়ে মুখে একটা শিস দিলো। ওর দুইটা বন্ধু এলো তখন হাসতে হাসতে। রাজ ওদেরকে বললো,
-সাব্বাস! কাজ হয়েছে। জিনিসটা সরিয়ে ফেলেছিস তোরা?’
-হ্যাঁ। সরিয়ে ফেলেছি।’
হাসতে লাগলো তিনজন একসাথে। রাজের বুদ্ধিতে ওরা খড়, প্লাস্টিক আর দড়ি দিয়ে একটা মানুষের আকৃতি বানায়। তারপর ওটা তুলা গাছের ডালের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। একটা লম্বা রশি ওটার সাথে বেঁধে রাজের দুই বন্ধু কিছুটা দূর থেকে ওটাকে নাড়তে থাকে। তারপর যখন ফাতেমার ননদ মোবাইলে কথা বলতে বলতে বের হয়, ওটাকে গাছের সাথে ঝুলতে দেখে ভয়ে চিৎকার করে ভেতরে চলে আসে। তখন রাজের বন্ধুরা আকৃতিটা সরিয়ে ফেলে। তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে দেখে তিন বন্ধু গলায় গলা মিলিয়ে হাসতে লাগলো। তখন মনির কণ্ঠ শুনে চুপসে গেল সবাই। হালকা আলোতে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে মনি বললো,
-ও তাহলে এই ব্যাপার? আমি সব বলে দিচ্ছি দাঁড়াও…’
রাজ তাড়াতাড়ি তার বন্ধুদের বিদায় করে মনিকে থামাতে গেল,
-এই থাম, থাম…’ দৌড়ে গিয়ে মনির হাত টেনে ধরলো রাজ। রাজের স্পর্শ পেয়ে অন্ধকারে শিহরণ বয়ে গেল মনির পুরো শরীরে। রাজ তার হাত ধরে টান দিলো। মনি এসে পড়লো রাজের উপর। রাজের হাত মনির কাঁধে। আর বুকের সাথে বুক ঘেষে গেছে। নিশ্বাস বেড়ে গেছে তখন মনির। বুক উঠানামা করতে শুরু করেছে। রাজ হাত দিয়ে মনিকে পেঁচিয়ে ধরে বললো,
-কিচ্ছু বলবি না তুই…’
মনির নিশ্বাস আরও বেড়ে গেল এবার। সুখের এক পরম ছোঁয়া অনুভব করতে লাগলো সে। ফিসফিস করে সে বললো,
-বলবো না। কিছুই বলবো না। শুধু আর কিছুক্ষণ ধরে থাক এভাবে। হাতটা নামিয়ে কোমরের কাছে নিয়ে যা…’
রাজ ধাক্কা দিলো মনিকে। মনি পড়ে গেল মাটিতে। রাজ ওর দিকে না ফিরে ভেতরে ঢুকে গেল। মাটি থেকে উঠে গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে মনিও ভেতরে ঢুকে গেল….
.
.
মেহমানদের জন্য আয়োজনটা একটু বাড়াতে হলো এবার। কারণ আশরাফ সাহেব তার মেজ ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকগুলোকেও দাওয়াত দিয়েছিলেন। তারাও এসে হাজির। রিতাও এসেছে সাথে। কয়েকবছর পর তাকে দেখছে রাজ। আগের মতো আর ছোট নেই। দেখতেও বড় হয়ে গেছে। কয়েকবছর পর দেখা, তাই রাজ কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে কথা বলছে রিতার সাথে। রিতাও রাজের সাথে কথা বলার সময় লজ্জা পাচ্ছে কিছুটা। রাজ রিতাকে বাড়ির পেছনে ডেকে নিয়ে যায়। তুলা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে দুজন। রাজও কিছুটা ইতস্তত করে বললো,
-ওখানে আমরা বর-কনে খেলছিলাম মনে আছে?’
রিতা লজ্জা পেয়ে মুখ সরিয়ে ফেললো। রাজের দিকে না তাকিয়েই বললো,
-হ্যাঁ, মনে আছে…’
-সেই যে তোমাকে দেখেছিলাম, তারপর আজ দেখলাম। অনেক সুন্দরী হয়ে গেছো তুমি।’
লজ্জায় এবার মুখ নিচু করে ফেললো রিতা। মুখ নিচু করেই বললো,
-কী যে বলো না তুমি?
-সত্যি বলছি। এই, আজ আবারও বর-কনে খেলবে?’
-নাহ্। সবাই কী ভাববে?’ লজ্জা পেতে পেতে হেসে উঠলো রিতা।
তার হাসি শুনে ভেতর থেকে মনি এলো। দুজনকে দেখে নিয়ে মনি ওড়নাতে ভেজা হাত মুছতে মুছতে বললো,
-কী ব্যাপার, কী হচ্ছে এখানে?
-রাজ নাকি বর-কনে খেলবে।’ বলেই আবার অট্টহাসি দিলো রিতা। মনি কোমরে দু’হাত রেখে রাগটা লুকিয়ে রাজকে বললো,
-খুব বর-কনে খেলার ইচ্ছে না? বুড়ো খাটাস!’
-তুই এসেছিস কেন আমাদের মাঝে?’ বিরক্ত হলো রাজ।
-আমি রিতাকে ডাকতে এসেছি।’ বলেই মনি রিতাকে বললো,
-রিতা তোকে ডাকছে মেজো মামি, যা…’
-আচ্ছা…’ বলেই চলে গেল রিতা। ও চলে যেতেই মনি রাজকে গাছের সাথে ঠেসে ধরলো। তারপর নিজে ওর গায়ের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে অসহায় কণ্ঠে বললো,
-পৃথিবীর সব মেয়েকে তোর মেয়ে মনে হয়? আমাকে কি তোর মেয়ে বলে মনে হয় না?’
.
.
(চলবে….)

.
.
(নতুন ফোনে লিখতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কিছু বানান ভুল হয়ে যেতে পারে। কারও নজরে পড়লে বলে দিও…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here