জীবনের গল্প পর্ব-২৪

0
325

__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-২৪___________
♥আঠারো♥
-আকাশের চাঁদটা দেখেছো? আশেপাশে কত তারা, তবুও চাঁদটা কতো একা তাই না?
-একা থাকাটা চাঁদের ধর্ম।
-মাঝেমাঝে নিজেকে ঐ আকাশের চাঁদের মতো একা মনে হয়।
-নিজেকে কখনও একা ভাববে না। আমি আছি না?’
চাঁদনির দিকে ঘুরে ওর দুকাধে হাত রেখে ভরসা দিলো রাজ। এতক্ষণ দুজন ছাদের উপর বসেছিল পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে। জ্যোৎস্নাস্নান করছিল ভালোবাসার বুলি বিনিময় করতে করতে। হঠাৎ চাঁদনির আবেগঘন কথা শুনে কষ্ট হলো রাজের। মেয়েটা নিজেকে খুব দুঃখী ভাবে, খুব একা ভাবে। রাজের ভরসা পেয়েও আবেগ কমলো না তার। কণ্ঠটা করুণ করে বললো,
-আমার বাবা হয়তো জানতো আমার জীবনে এমন একটা সময় আসবে, একাকীত্ব ভর করবে। তাই চাঁদের সাথে মিল রেখে আমার নাম রাখেন চাঁদনি।
-চুপ করো। ওসব কিচ্ছু না। তুমি নিজেকে একা ভাবো বলেই এতো একা মনে হয়। নিজেকে একা ভাববে না কখনও। চারপাশের মানুষদের সাথে মিশবে।
-চারপাশের মানুষের সাথে কী মিশবো? শহরের মানুষগুলো ইট পাথরের মতো। মিশতে জানে খুব কম। আচ্ছা, তোমরা কি আর কখনও গ্রামে ফিরে যাবে না? আমাকে একদিন নিয়ে যাবে তোমাদের গ্রামে?’
রাজ চুপ থাকে কিছুক্ষণ। কী যেন ভেবে সে জবাব দিলো,
-যদি কখনও সুযোগ হয় তাহলে নিয়ে যাবো…
-চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি…’ প্রসঙ্গ পাল্টালো চাঁদনি। রাজ একহাত দিয়ে চাঁদনির গলা জড়িয়ে ধরলো। অন্যহাতে তার মাথাটা আলতো করে চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে। তরপর মাথায় ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে বললো,
-হুমম করবো। নিজে একটু স্বাবলম্বী হয়ে উঠি, একটা চাকরি পাই আগে…’
রাজের বুক থেকে মাথা তুললো চাঁদনি। চোখেমুখে কৌতূহলভাব স্পষ্ট। ঠোঁটে হালকা হাসি লেগে আছে। মাথাটা হালকা কাত করে সে জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা রাজ, বিয়ের পর আমাকে কী করবে? খুব ভালোবাসবে?
-বিয়ের পর তোমাকে শুধু মারবো আর মারবো, দোষ দেখলেই মারবো, না দেখলেও মারবো।
-আমাকে মারতেই পারবা না…
-কেন?
-মারার আগেই তোমাকে জড়িয়ে ধরবো, আর বলবো, ‘ওগো আমি তোমার একমাত্র বউ’, আমাকে তুমি মারবা? তারপর আমাকে মারতে গেলেই তোমার হাত কাঁপবে।
-ইশ! তাইলে তো আরও বেশি করে মারতে চাইবো।
-কেন?
-যাতে মারতে গেলেই তুমি জড়িয়ে ধরো…
-ইশ!’
রাজের বুকে মাথা রাখলো আবার চাঁদনি। রাজ পরম যত্নে তার ভালোবাসার মানুষটির মাথায় হাত বুলাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে এতে চাঁদনির। অনন্তকাল ধরে যদি সে এভাবে রাজের বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে পারতো! আরেকটু জড়সড় হয়ে রাজের গা ঘেষে বসলো চাঁদনি। রাজ তাকে কোলে নিয়ে বসালো। তারপর দুহাতে চাঁদনির কোমর জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধের উপর দিয়ে মুখ নিয়ে গিয়ে গালে গাল ঠেকালো। ওর এমন স্পর্শে শিহরণ বয়ে গেল চাঁদনির পুরো শরীরে। নিশ্বাসটা বাড়তে লাগলো ওর। ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে রাজ। বুকের ধকধকানিটাও বুঝতে পারছে। চাঁদনির নিশ্বাস বাড়ার ও বুকে ধকধকানি হওয়ার কারণ সে জানে। একসময় মনিরও এরকম হতো। কিন্তু রাজ তখন অবুঝ ছিল। মনির এসব অনুভূতি বুঝতো না সে। শেষবার মনি ওকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল, তখনও সে বুঝেনি তার ভালোবাসা। বরপক্ষকে দাঁড় করিয়ে তুলতুলে হাতে চোখের জল ঝরিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল, ওর চোখের জলে যে কত ভালোবাসা লুকিয়েছিল তা তখন না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝে রাজ। কিছু চোখের জল ইতিহাস হয়ে যায়, আর কিছু চোখের জল হয় দীর্ঘশ্বাস। মনির চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে রাজের। হয়তো এখন আর ওরকম নেই মনি। অনেক বড় হয়ে গেছে। আকাশের চাঁদটা নির্লিপ্ত আলো ছড়াচ্ছে। চাঁদের আলো এসে পড়েছে চাঁদনির মুখের উপর। চাঁদনি ঘুমিয়ে পড়েছে রাজের বুকের উপর। রাজ ডাক দিলো আলতো শব্দে,
-চাঁদনি… এই চাঁদনি?’
-হুমম…’ মুখের ভেতর শব্দ করে আরেকটু জড়সড় হয়ে বসে দুহাতে রাজকে আঁকড়ে ধরলো চাঁদনি। রাজ আবার ডাকলো,
-চাঁদনি উঠো। অনেক রাত হয়েছে। সবাই বুঝে ফেলবে।’
-আরেকটু থাকি না এভাবে… প্লিজ।’ ঘুমের ঘোরে জবাব দিলো চাঁদনি।
-নাহ্, উঠো। আমাকে যেতে হবে…’
-উহ..হু..হু…’ বাচ্চার মতো গোঙানির কান্না করলো চাঁদনি। রাজ ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে বললো,
-এভাবে তোমাকে তোমার বেডে রেখে আসবো?’
-এই না, না, না। নামাও আমাকে।’
রাজ মৃদু হেসে নামালো চাঁদনিকে। তারপর চাঁদনি সাবধানে রাজকে বাসা থেকে বের করে আনলো। কেউ টের পেলো না। চাঁদনির মা অসুস্থ, বেডে শুয়ে আছেন তিনি। আর ভাই-ভাবী দুজনেই ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে। বের হয়ে এসে রাজ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, চাঁদনি দৌড়ে এসে ওর কপালে চুমু খেলো আলতো করে। রাজ মৃদু হেসে বললো,
-যাই তাহলে…?’
-আমারটা?’ অভিমান করলো চাঁদনি। তখন রাজও আলতো করে ঠোঁট বুলালো ওর গালে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-কামড় দিবো একটা?’
চাঁদনির হার্টবিট বেড়ে গেল তখন। সেও ফিসফিস করে বললো,
-নাহ, দাগ দেখে সবাই বুঝে ফেলবে…’
তখন রাজ আলতো করে চুমু খেলো ওর গালে। তারপর হেঁটে চলে যেতে লাগলো। চাঁদনি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলো ওকে। গালে হাত বুলাচ্ছে সে, যেখানে চুমু খেয়েছে রাজ। এখনও যেন ওখানটায় রাজের স্পর্শ লেগে আছে….
.
.
(চলবে…..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here