__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-২৫___________
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে গ্রিল খাচ্ছিল সাদিয়া আর বৃষ্টি। আশেপাশে আরও অনেক ছেলে মেয়ে আছে। কেউ হাঁটছে, কেউ বসে আছে, কেউ খাচ্ছে, যে যার মতো ব্যস্ত। বাইরে কড়া রোদের আলো প্রহরটাকে তেজী করে তুলেছে। গ্রিল খেতে খেতে ঘামছে সাদিয়া আর বৃষ্টি। এক টুকরো গ্রিল মুখে পুরে মেঘা হঠাৎ প্রশ্ন করলো,
-কেমন লাগলো আজ ওকে?’
-কাকে?’ খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো বৃষ্টি সাদিয়ার দিকে।
-আরে ও… তোর দুলাভাই রাজকে।
-হা হা হা, রাজ? ওকে আবার কেমন লাগবে?
-চোখে চশমা ছিল না, খেয়াল করিসনি?
-হুমম, তাতে কী?
-জোস লাগছিল আজ ওকে। ইশ! কিউটের ডিব্বা একটা। জড়িয়ে ধরে কামড়াতে ইচ্ছে করছিল।
-ঐ যে যাচ্ছে, তোর কিউটের ডিব্বা…’ চোখের ইশারায় রাজকে দেখিয়ে দিলো বৃষ্টি। সাথে সাথে তাকালো ওদিকে সাদিয়া। তারপর বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বললো,
-ডাক দে, তোর দুলাভাইকে….’
-দুলাভা…আ…আ….’ ডাকতে গিয়ে থেমে গেল বৃষ্টি। সাদিয়ার কথার জের ধরেই সে দুলাভাই বলে ডাকতে যাচ্ছিল, পরে খেয়াল হতেই থেমে গিয়ে আবার ডাক দিলো রাজের নাম ধরে,
-এই রাজ এদিকে আসো…’
রাজ এগিয়ে এলো ক্যান্টিনের দিকে। সাদিয়া একটু ভাব নিয়ে বসলো। রাজ ওর পাশে বসতে বসতে বললো,
-তারপর… কী খবর তোমাদের?’
-গ্রিল খাচ্ছি। তোমার জন্য এটা….’ বলেই বৃষ্টির গ্রিলটা নিয়ে রাজের সামনে রাখলো সাদিয়া। নিজেরটা আগেই খেয়ে শেষ করেছে সে। ওর কাণ্ড দেখে হা করে চেয়ে থাকলো বৃষ্টি। রাজ গ্রিলটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এটা তো অর্ধেক। আমার জন্য বুঝি অর্ধেক অর্ডার করেছো?’
-আরে অর্ধেকটাতেই ভালোবাসা মেশা থাকে। খাও খাও… কী ব্যাপার তুই হা করে আছিস কেন? পেট ভরে তো খাওয়াইলাম তোকে?’ শেষের কথাটা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো সাদিয়া। ওর কথা শুনে বৃষ্টি নিজেকে সামলে নিলো। রাজ বললো,
-তাই বুঝি? তা এটা কোন মনিষীর উক্তি?’
-কোনটা?
-ঐ যে, অর্ধেক খাবারে ভালোবাসা মেশানো থাকে, ওটা…’
-আরে চোখের সামনেই এতবড় মনীষী বসে আছে দেখতে পাচ্ছো না? গাধা কোথাকার!’ চোখ টিপতে টিপতে মনেমনে কথাটি বলে সাদিয়া বললো,
-কোন মনীষী যেন বলেছিল, নাম ভুলে গেছি। তবে বিখ্যাত ছিল মনীষীটা। দাঁড়াও নামটা মনে করার চেষ্টা করি…’ নাম মনে করার ভান করলো সাদিয়া। রাজ তাকে বাধা দিয়ে বললো,
-থাক থাক। আর মনে করতে হবে না। এটাও খেয়ে ফেলো তুমি। আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
-কেন? অর্ধেক বলে? আচ্ছা আরেকটা অর্ডার করছি তোমার জন্য…
-না থাক। আসলে খাওয়ার ইচ্ছে নেই আমার। তোমরা বসো তাহলে, আমি যাই।’ বলেই উঠে দাঁড়ালো রাজ।
-এই শুনো, তোমার নাম্বারটা দাও… মাঝেমাঝে ফোন করবো।’ তাড়াতাড়ি করে বললো সাদিয়া। রাজ তাকে নিজের নাম্বারটা দিয়ে চলে যেতে লাগলো। সাদিয়া ওর নাম্বারটা নিজের ফোনে সেভ করে, ফোনটা দুহাতে বুকের সাথে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করলো।
.
.
হিসাবের খাতাটা বন্ধ করে আমান সাহেব উঠে দাঁড়ালো। দোকানে কয়েকজন কাস্টোমারকে কাপড় দেখাচ্ছে সেলাররা। কাস্টোমারগুলোকে পাশ কাটিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে আসলো সে। কিছুটা হেঁটে গেলেই দোকানের মালিকের দুতলা বাসা। আমান মালিকের বাসার সামনে হেঁটে এলো। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,
-স্যার আছে?’
-জ্বী আছে। ভেতরে যান…’ জবাব দিলো দারোয়ান। আমান সাহেব ভেতরে গিয়ে দেখা করলো মালিকের সাথে। তাকে দেখে মালিক জিজ্ঞেস করলো,
-কী ব্যাপার আমান সাহেব, আপনি বাসায় যে?’
-স্যার কিছু টাকার দরকার ছিল। মাস শেষ হতে কয়েকদিন আছে জানি, তবুও যদি আজ আমার বেতনটা দিতেন…
-না না আমান সাহেব। এখন তো আমি বেতন দিতে পারবো না। মাস শেষ হোক বেতন পাবেন আপনি।
-স্যার দেখেন না একটু…’
-বলছি তো আমান সাহেব, মাস শেষ হলে পাবেন। যান আপনি এখন…’
আমান সাহেব বের হয়ে এলো ওখান থেকে। গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো,
-ভাইয়ের মুখ কালো কেন? যে কাজে গেছেন, কাজটা হয়নি?’
-না…’ অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিলো আমান সাহেব। তারপর হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকানের পাশে এসে থামলো। পকেটে তাকিয়ে দেখলো একটা একশো টাকার নোটের সাথে কিছু খুচরা টাকা আছে। চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলো শুধু। দোকানদার চা বানিয়ে হাতে দিলে ফোনটা বেজে উঠে তার। পকেট থেকে ফোন বরে করে দেখে আয়েশা বেগমের ফোন। রিসিভ করে বললো,
-হুমম… বলো…
-তুমি আজ দুপুরে খেতে আসোনি কেন?’ আয়েশার বেগমের কণ্ঠ শোনা গেল।
-কাজ ছিল একটু। আসবো কিছুক্ষণ পর।’ নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো আমান সাহেব।
-এখন কোথায়?
-পথে…
-আচ্ছা এসো তাড়াতাড়ি।’
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিলো আয়েশা বেগ। আমান সাহেব ফোনটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে চায়ে চুমুক দিলো। সামনে একজন দুহাতে পত্রিকা ধরে পড়ছিল। হঠাৎ পত্রিকার পেছের পৃষ্ঠায় আমান সাহেবের চোখ আটকে গেল। সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয়েছে। আমান সাহেব ভালো করে পড়ে নিলেন বিজ্ঞপ্তিটা। দামি ফোন নেই, নয়তো ছবি তুলে নিতে পারতেন বিজ্ঞপ্তির। কী কী করতে হবে ভালো করে পড়ে নিয়ে চায়ের কাপটা খালি করলেন। তারপর দোকানদারের হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট দিয়ে বের হয়ে এলো দোকান থেকে। ক্লান্ত শ্রান্ত পথিকের মতো হাঁটতে লাগলো বাসার দিকে। যেন অনেকদিন ধরে হাঁটছে, পথ ফুরোচ্ছে না….
.
.
বিদ্যুৎ চলে গেছে বলে সিলিং ফ্যানটাও ঘুরছে না। খুব গরম পড়েছে। রুমের মধ্যে একা একা ঘামছে বীথি। জানালটা খুলে দিয়ে জানালার পাশে বসলো সে। খোলা জানালা দিয়ে ভ্যাপসা গরমের সাথে হাওয়া এসে লাগলো বীথির গায়ে। দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। বীথি তাকালো ওদিকে। রাজ ঢুকেছে ঘরে।
-কীরে কী করছিস?’ জিজ্ঞেস করলো সে বীথির পাশে এসে বসতে বসতে।
-কিছু না।’ একটু সরে বসলো বীথি।
-তোকে একটা কথা বলা হয়নি রে…
-কী কথা?’
-রিতার কথা মনে আছে তোর?
-কোন রিতা? সেই ছোটবেলার রিতা? মেজ আম্মুর ভাইয়ের মেয়ে?
-হ্যাঁ, ওর সাথে দেখা হয়েছিল গতকাল। বিয়ে হয়েছে, একটা বাচ্চাও আছে। ওরা এখানেই থাকে। গতকাল গিয়েছিলাম ওদের বাসায়…’
-তারপর…’ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো বীথি। পুরনো কারও কথা শুনলেই আগ্রহ বেড়ে যায় তার। রাজ বললো,
-তারপর আর কি… শরবর বিস্কিট দিলো। সবার কথা জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের কথা জিজ্ঞেস করলো সে। তোকে নিয়ে যেতে বললো।
-নিয়ে যাবি আমায়? কবে যাবি বল না, বল না? আমার খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে। অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না?’
-তুই কি ছোট আছিস?
-না। বল কখন নিয়ে যাবি?
-যাবো সময় করে, আজ না। আজ সময় নেই। টিউশনিতে যেতে হবে।
-আচ্ছা, কাল যাবো। কেমন?’
-আচ্ছা দেখি… টিউশনিতে যায় এখন।’ বলেই বের হয়ে এলো রাজ বাসা থেকে। পথে বাবার সাথে দেখা।
-কোথায় যাচ্ছিস?’ জিজ্ঞেস করলো বাবা।
-টিউশনিতে বাবা।’ জবাব দিলো রাজ।
-শুন, আসার সময় তোর একটা সিভি বানিয়ে আনিস। সরকারি একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিছে। ওটাতে আবেদন করিস।’ তারপর আমান সাহেব ছেলেকে কী কী করতে হবে বুঝিয়ে দিলো।
-ঠিক আছে বাবা, আমি আবেদন করবো।’ বলেই বাবাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল রাজ। আমান সাহেব কপালের ঘাম মুছে ঘরের ভেতর পা বাড়ালেন….’
.
.
(চলবে….)
.
.
(গল্পটা অল্প হলেও নিয়মিত দিতে চেষ্টা করবো।)