#অনুভবে_তুই
#লেখনীতে-ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৮
সুলতানা মেয়ের ব্যাপারে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। তখনি ঘরের ভেতর থেকে আজিজুর সাহেবের ডাক শুনতে পেয়ে ভেতরে চলে এলেন তিনি। ব্যাপারটা নিয়ে এই অসময়ে কথা না নেহার বিয়ের ঝামেলা মেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন তিনি। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত চোখের পাতায় নেমে এলো গাঢ় নিদ্রা। অন্যদিকে, আদ্রিশের বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রোজাও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। শাড়িটাও খোলা হলো না। আর ছাদে বসে আড্ডা, গান আর কফি খেতে খেতে অনেকটা সময় ভাবেই কেটে গেলো আদ্রিশ-উৎসদের। রোজা আসেনি বলে ফিহা একটু রাগই করলো, তথাপি কিছু বললো না। একসময় সবারই ঘুম পেলো। সবকিছু গোছানো শেষ করে যে যার মতো ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। কাল বাড়িতে বিয়ে, কতশত কাজ সামলাতে হবে। একটু বিশ্রাম না নিলে সকালে কোনো কাজই করতে পারবে না।
ভোরেই বাড়ির পরিবেশ হয়ে ওঠলো জমজমাট। বিয়ে বাড়ি যেমন হয় আরকি! কোলাহলে বেশিক্ষণ সবাই ঘুমাতে পারলো না৷ কাজের খালা সবার ঘরে চা-কফি দিয়ে গেছে। ঘুমুঘুমু চোখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আদ্রিশ কফির মগে চুমুক দিতেই কপাল কুঁচকে এলো ওর। এর কারণ, কফির বদলে ওকে চা দেওয়া হয়েছে। আর এই মগটাও ওর নয়। ব্যাপারটা যে ভুলবশত হয়ে গেছে এটা সে বুঝতে পারলো। কিন্তু এখন কাকে পাঠাবে ওর কফিটা নিয়ে আসতে? ঘরে আর কেউ নেই বিধায় আদ্রিশ নিজেই বিছানা থেকে নামলো। পায়ে স্লিপার চাপিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরের মাঝ বরাবর আসতেই ও থেমে গেলো। ওপাশের রুম থেকে রোজা বেরুচ্ছে। আদ্রিশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। রোজার পরণে রাতের সেই শাড়িটাই, যেটা আদ্রিশ এনেছিল ওর জন্য। অবশ্য রোজা তা জানে না। শাড়িটা বোধহয় রাতে পাল্টায়নি। এ কারণেই শাড়িটা ভাঁজে ভাঁজে ফুলে আছে। আঁচলটার বেশিরভাগ অংশই পেছনের দিকে চলে গেছে। এখনো ঘুমের রেশ রোজার চেহারায় লেগে আছে। ওর এলো চুলে আদ্রিশ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো সেদিকে। আদ্রিশকে হঠাৎ করিডোরে দাঁড়াতে দেখে ওকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এনে পাশ কাটিয়ে রোজা চলে যেতে চাইলেই আদ্রিশ বলল, ‘কোথায় যাচ্ছো?’
রোজা শান্ত স্বরেই উত্তর দিল, ‘নিচে যাচ্ছি। টুথপেষ্ট আনতে।’
আদ্রিশ আপাদমস্তক ওকে পরখ করে জিজ্ঞাসা সূচক কন্ঠে বলল, ‘এভাবেই নিচে যাচ্ছো?’
রোজা মৃদুভাবে মাথা নেড়ে বলল, ‘জি। এভাবেই যাচ্ছি।’
আদ্রিশের চোখে এই মুহূর্তে রোজাকে একটু অন্যরকম সুন্দর লাগছে। নিষিদ্ধ ইচ্ছে মনে জাগছে। টুপ করে ওর গালে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। রোজার থেকে দূরে থাকার প্রতিজ্ঞাটা ওর মনেই রইলো না। মেয়েটা গ্রাম থেকে ফেরার পর থেকে আদ্রিশের মনে হচ্ছে রোজাকে ওর লাগবেই। ওকে ছাড়া যাবে না, সেকেন্ডে সেকেন্ডে ও দম আটকে মরে যাবে তাহলে। নিজের উত্তপ্ত মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে এনে কথা না বাড়িয়ে ওর হাতের মগটা বাড়িয়ে রোজার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আসার সময় এটা চেঞ্জ করে নিয়ে এসো। আমি কফি খাই, ভুলবশত আজ চা দিয়ে গেছে।’
রোজা প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কিন্তু সেটা মুখে বললো না। আদ্রিশের পরণের পোশাক কেমন উদ্ভ্রান্তের মতো। ওর দিকে তাকালেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ওর। এতে কি ওর লজ্জা পাওয়া উচিৎ নাকি স্বাভাবিক থাকা উচিৎ সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না। ওদের বাড়িতেই তো থাকছে, এনে দিক না কফিটা৷ এটা নিয়ে জলঘোলা করে কথা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছেই জাগলো না ওর। ছোঁ মেরে কফির মগটা নিয়ে ও পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। পেছন থেকে আদ্রিশ শান্তভাবেই বলল, ‘দয়া করে আমার ঘরে দিয়ে যেও। নয়তো কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।’
রোজা ছোট্ট করে ‘হু’ উচ্চারণ করে নিচে চলে এলো। সোজা রান্নাঘরে চলে এলো। সেখানে সবাইকে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখে নিজেই ফ্ল্যাস্ক থেকে পানি ঢেলে আদ্রিশের জন্য কফি বানিয়ে দেখলো আদ্রিশ্রর ঘরে কফিটা দিয়ে আসার জন্যও কেউ নেই। বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা যেন হুট করেই উধাও! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোজা নিজেই কফি নিয়ে চুপচাপ আদ্রিশের ঘরে রওয়ানা দিলো। নিজের জন্য টুথপেষ্ট নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেলো।
কফি নিয়ে আদ্রিশের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রোজা। দরজায় টোকা দিয়ে ইতস্তত করতে করতে একসময় নম্র স্বরে বলল, ‘আসবো? আপনি কী ভেতরে আছেন?’
ভেতর থেকে আদ্রিশের গলা ভেসে এলো। অনুমতি পেয়ে রোজা আদ্রিশের ঘরে ঢুকলো ঠিকই, তবে কফির মগটা নিয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিশ হেডবোর্ডে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় আছে। রোজা ভ্রু কুঁচকে জোরালো কন্ঠে বলল, ‘আপনার কফি। কোথায় রাখবো?’
আদ্রিশ চোখজোড়া বন্ধ করেই শান্ত গলায় বলল, ‘যেখানে ইচ্ছা রাখো।’
রোজা স্টাডি টেবিলে ওপর কফির মগটা রাখতেই আদ্রিশ সেটা নিয়ে চুমুক বসালো। মিনিটের মধ্যেই কফির মগ খালি করে যথাস্থানে রেখে দিলো। রোজা দাঁড়িয়ে দেখছিল ওর অদ্ভুত কান্ড৷ কফির মগটা খালি দেখে সেটা হাতে করে ফিরে আসতে নিয়েই আবার দাঁড়ালো। আদ্রিশের কোনো হেলদোল না পেয়ে হালকা কেশে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কী ঘুমুচ্ছেন? না মানে এভাবে বসে বসে ঘুমালে ঘাড়ে ব্যথা পাবেন। তারচেয়ে বরং ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়লে ভালো হতো না?’
রোজার কথায় আদ্রিশ বিষন্ন কন্ঠে বলল, ‘মাথাটা ব্যথা করছে, তাই এভাবে বসেছি। তুমি যেতে পারো। আমি একটু ঘুমাবো।’
ওর কথা শুনে রোজা বুঝতে পারলো কাল অতিরিক্ত রাত জাগার ফলেই ওর এই অবস্থা। চোখমুখ কেমন লালচে হয়ে আছে। এমনিতে চিৎকার করে গলা ফাটালে কি হবে, নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোতে এই লোক কিপটেমি করে। এইযে এখন মাথাব্যথা করছে, বাড়ির কাউকে এমনকি নিজের মা’কে অবধি জানাবে না সেটা। আর জানালেও এমন ভাব করবে যেন তিনি কতই না সুস্থ! কথাগুলো ভেবে রোজা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বিছানার কাছটায় চলে এলো। ততক্ষণে আদ্রিশের চোখ লেগে গেছে। আধশোয়া অবস্থায়ই ওর মাথাটা হেলে পড়তে নিলে রোজা ধরে ফেললো। আদ্রিশ তখনি চোখ খুলে তাকালো। মৃদুভাবে হাসতেই রোজা টের পেলো এই বদমেজাজি লোকটার গায়ে অনেক জ্বর! ও তাড়াহুড়ো করে বলল, ‘একি! আপনার তো জ্বর।’
আদ্রিশ “কিছু হয়নি” শব্দ দুটি উচ্চারণ করেই ব্ল্যাঙ্কেটটা গলা অবধি তুলে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। রোজা বুঝতে পারলো কেন ওকে উদ্ভ্রান্তের মতো এলোমেলো লাগছিলো। ও কিছু একটা ভেবে জিজ্ঞেস করল, ‘আন্টিকে ডাক দেই? ডাক্তারকে আসতে বলে দিবে?’
আদ্রিশ কড়া গলায় বলল, ‘দরকার নেই। রেস্ট নিলেই একটু পরে জ্বর নেমে যাবে। তুমি যাও!’
‘আপনি কী ঔষধ নিয়েছেন?’
‘নিয়েছি।’
তারপর একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘আজই তো নেহার বিয়ে, তাইনা?’
রোজা অবাক হলো। হতভম্ব গলায় বলল, ‘এটা আপনার মনে নেই? আজব লোক তো আপনি। কাল রাতে এত হৈ-হুল্লোড় করে বোনের হলুদে অংশ নিলেন। আর সকাল হতেই জ্বরের ঘোরে তা ভুলে গেলেন? ও মাই গুডনেস!’
আদ্রিশ তৎক্ষনাৎ বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। তড়িঘড়ি করে শার্টের বোতাম দুটো লাগিয়ে, বিছানায় বসে পায়ে জুতোজোড়া পরতে পরতে বলল, ‘বিয়ের কত কাজ বাকি। উফ…খেয়ালই ছিল না আমার। থ্যাংক ইউ বউ, আমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।’
রোজা সূক্ষ্ম কন্ঠে বলল, ‘আমি আপনার বউ? তো কখন হলো বিয়ে? আমিতো তিন কবুল বলে…’
কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করতে না দিয়েই আদ্রিশ ওঠে দাঁড়ালো। অতঃপর ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলে ওঠল, ‘এক্ষুনি তিন কবুল বলে মন থেকে সায় জানালে তুমি আমার বউ। কবুল, কবুল, কবুল। আমিও মন থেকে সায় জানালাম আমি তোমার বর। এইযে, কোমড়ে আঁচল গুঁজে আমার জন্য কফি নিয়ে এলে, আমাকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে খানিকটা দেখভাল করলে সবটাতেই তো গিন্নি গিন্নি ভাব মিশে ছিল। তো এর মানে কি? এর মানে, তুমিও মনে মনে আমাকে বর মানো। অ্যাম আ’ই রাইট মিস. রোজা?’
রোজা থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো। এই লোকটা যে মহা ধুরন্ধর ব্যক্তি তার প্রমাণ হাড়ে হাড়ে টের পেলো। জ্বরের ঘোরে লোকটার মাথা কি বিগড়ে গেল নাকি? এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে কেন? ইশ, কেউ যদি শুনে ফেলে তাহলে কি হবে? চেহারায় দুঃখী ভাব এনে ঘর থেকে বেরুতে বেরুতেই রোজা আদ্রিশের দিকে সূচালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘আপনি মানুষটা একদমই সুবিধের নন।’
আদ্রিশ মৃদু স্বরে বলল, ‘আমি মানুষটা সত্যিই খুব অসুবিধার।’
নেহার বিয়ের বরযাত্রী এলো দুপুর দেড়টায়। রিজভীর চোখমুখে প্রেয়সীকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ, ঠোঁটের কোণে হাসি। সারা বাড়িময় ব্যস্ততা। মেয়েরা সাজগোজ করে এদিক-ওদিক আসা যাওয়া করছে। উৎস ও তাঁর বন্ধুরা মেহমানদের সামলাচ্ছে। গণমান্য ব্যক্তিদের আপ্যায়ন করছে ইনায়েত সাহেব, ইমতিয়াজ সাহেব আর আজিজুর রহমান। সবাই খুব খুশি। রিজভীর বোন এসেই নেহার ঘরে বসে সবার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। চারদিকে এত আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়ে একসময় রিজভী-নেহার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। রোজার মনটাও বেশ উৎফুল্ল। তবে ও বারবার আদ্রিশের দিকে নজর রাখছে। জ্বর নিয়ে লোকটা সম্পূর্ণ বিয়েটা যেভাবে সামলাচ্ছে তা দেখে রোজার বেশ মায়া লাগলো। নিজে থেকে দু’বার পানির গ্লাসটা অবধি এগিয়ে দিলো। আদ্রিশ অবশ্য বেশ ভালোভাবেই রোজার আজকের আচরণ লক্ষ্য করছে। একসময় নেহার বিদায়ের সময় এসে গেলো। কান্নারত নেহাকে দেখে রোজার দু’চোখও পানিতে টলমল করছে। টিস্যু দিয়ে চোখের কোণটা মুছে নিয়ে নেহাকে সান্ত্বনাসূচক বলল, ‘দু’দিন পরই তো এসে পড়বে। কাঁদে না আপু। তুমি তো আমাদের বড়, এভাবেই যদি কাঁদতে থাকো তাহলে আমরা কি শিখবো তোমার থেকে?’
তখনই পেছন থেকে আদ্রিশের গলা শোনা গেল। নেহাকে সামলে একটু পেছনে ফিরতেই রোজার কানের কাছে নিচু স্বরে আদ্রিশ বলল, ‘কান্না শিখবে। কান্নাকাটি ছাড়া বউকে মানায় নাকি?’
একথা বলেই সরে গেল সেখান থেকে। আদ্রিশের একথা শোনামাত্রই নেহা হেসে ফেললো আর রোজা গম্ভীর চেহারা করে দাঁড়িয়ে রইলো। একসময় বরযাত্রীও বিদায় হয়ে গেলো। ইশার সঙ্গে রোজাও বাড়িতে চলে এলো। জুতা খুলার সময়ে সেলফের কাছে একটা লোহার শিকে রোজার ওড়নাটা আটকে গেলো হঠাৎ। সেটা ছোটাতে গিয়ে সুতা খসে গেল, কিন্তু ওড়নাটা ছাড়াতে পারলো না রোজা। খুব দাম দিয়ে কেনা প্রিয় ওড়নাটার এ অবস্থা দেখে রোজা অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। ইশা খুলার চেষ্টা করছে। ফোন হাতে তখনি বাড়িতে ঢুকছে আদ্রিশ। ইশা আর রোজাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘটনাটা বোঝার জন্য কয়েক পা এগিয়ে এলো। তারপর রোজার ওড়নার এ অবস্থা দেখে ইশাকে সরিয়ে নিজেই সেটা খুলে দিলো খুব যত্ন নিয়ে৷ পাশে দাঁড়িয়ে ইশা মিটিমিটি হাসতে লাগলো। আদ্রিশ সেটা পাত্তা না দিয়ে ব্যগ্র কন্ঠে বলল, ‘নিজের জিনিসগুলো সামলে রাখতে শিখো। কীভাবে হাঁটাচলা করো যে কিছু খেয়াল থাকে না? কেয়ারলেস পার্সন একটা।’
তখনি ওর ফোনে কল এলো। সেটা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রোজার দিকে ইশারা করে বোঝালো ওর ওড়না সামলে রাখতে। এরপর ফোনে কথা বলতে বলতেই ওপরতলায় চলে গেলো। রোজা কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে হাফ ছাড়লো। ইশা হেসে বলল, ‘ভাইয়া তোমার যা খেয়াল রাখে, আমি পুরোই ফিদা। মনেই হয়না এটা আমার ভাইয়া। আগে কখনো এমন দেখি নি। তুমি আসার পর কীভাবে চেঞ্জ করে দিলে। ওফ রোজা, আমরা সবাই যে কতটা খুশি; কি বলবো তোমায়।’
রোজা কিছু বললো না৷ তবে খানিকটা লজ্জা পেলো। ইশা বয়সে ওর বড়। ও লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো শুধু। তবে সকাল থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা বেশ ভালোভাবেই নজর কাড়লো সুলতানার। আর সিঁড়িঘরের নিচে এক্ষুণি ঘটে যাওয়া ঘটনাটা দেখে সারাদিনের ক্ষোভটা যেন তড়তড় করে মাথায় চড়ে বসলো। বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু লাগলো তার। তিনি ঠিক করলেন এবার মেয়ের সাথে সরাসরি কথা বলবেন। তাই শক্ত গলায় রোজাকে নিজের কাছে ডাকলেন। মা-মেয়ের কথাবার্তা ইশা শুনতে চায় না বলে ওদেরকে স্পেস দিয়ে সে চলে গেলো। জায়গাটা খানিকটা ফাঁকা হতেই সুলতানা কড়া চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে। রোজার একটু সন্দেহ লাগলো। মায়ের ভাবগতিক ভালো ঠেকছে না তার। ও হালকা কেশে জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু বলবে মা? তোমার কি শরীর খারাপ? মুখচোখ এমন দেখাচ্ছে কেন?’
সুলতানা তীক্ষ্ণ চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘যআ জিজ্ঞেস করবো সেটা এক কথায় উত্তর দিবি। একদম কথা ঘুরানোর কোনো চেষ্টা করবি না।আদ্রিশের সঙ্গে তোর কীসের সম্পর্ক রোজা?’
মায়ের কথায় রোজা স্তম্ভিত। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায়ই ওর শ্বাস আটকে এলো। দু-চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো। মা’কে সে কী উত্তর দেবে? কোনোদিনও মাকে সে মিথ্যে বলে নি। আর আদ্রিশের জন্য ওর মনে আগে যা কিছুই ছিল না কেন, এখন তো ও আদ্রিশকে নিজেও পছন্দ করে। কিন্তু ওর মা তো প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্কিত বিষয়গুলো পছন্দ করে না। আর সবচেয়ে বড় কথা, নিশিতার ভাতিজা আদ্রিশ। বোনের শ্বশুরঘরে নিজের মেয়েকে এভাবে দেখতে নিশ্চয়ই পছন্দ করবে না সুলতানা। ভাববে, তার মেয়েই খারাপ। রোজা কী বলবে বুঝতে পারলো না, কিন্তু তার আগেই কেউ বলে ওঠল, ‘রোজাকে আমি ভালোবাসি আন্টি।’
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি হয়ে গেলো সেটা বুঝতে পারলো না রোজা। কিন্তু উক্ত কথাটি শুনে সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই আদ্রিশকে দেখতে পেয়ে থমকে গেলো সে।
—————————————————————————–
[নোট: আজ কিন্তু অনেক বড় পর্ব দিলাম। গতকাল কথা রাখতে না পারার জন্য দুঃখিত। আপনারা সবাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন; আর অবশ্যই মতামত জানাবেন। অবশেষে শুভ নববর্ষ।]
চলবে…