তোমাতে বিলীন পর্ব-১

0
16585

সারা বাড়ি জুড়ে একপ্রকার হইচই চলছে। আজ ঊদিতার ফুপ্পির মেয়ে আলেয়াকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে। যেই সেই পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে নি। এরকম খানদানি পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা মানে অনেক বড় ব্যাপার স্যাপার।

পাত্রের পরিবার বিশাল বড়লোক। পাত্র নিজেও একজন নামীদামী কোম্পানির সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। বিশাল বড় ফ্যামিলি বিজনেস আছে তাদের, আছে ঢাকা শহরে দুটো ডুপ্লেক্স বাসা,একটা নিজস্ব গার্মেন্টস ও মার্কেট,,পরিবারের সবার জনপ্রতি প্রত্যেকের আছে গাড়ি ও ফ্ল্যাট,আছে নিজস্ব দুটো গ্রোসারি শপ ও সুপারশপ, গ্রামের বাড়িতে প্রচুর জায়গা জমি আছে। সাথে আছে চৌধুরী বংশের বিরাট জমিদার বাড়ি। কোনোকিছুরই কোনো কমতি নেই। সাথে ওনারা সবাই খুব ভালো মনের মানুষ। এরকম পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করলে জীবনে আর কী চাই? তাইতো সারা বাড়ি জুড়ে এলাহি আয়োজন করা হচ্ছে। পাত্র পক্ষের সবাই যাতে খুশি হয় তাদের আতিথেয়তায় এজন্য।

ঊদিতা তার বড়ফুপ্পির বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। এসএসসি পরীক্ষা শেষে ৩ মাসের ছুটি,তাই তার বড়ফুপ্পি একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে এসেছেন। ঊদিতা এত সহজে কোথাও বেড়াতে যায় না,খুব অস্বস্তি লাগে তার। খুব ইন্ট্রোভার্ট টাইপের কিনা তাই। আসতে চায় নি এখানে তাও আসতে হয়েছে তার ফুপ্পির জোরাজোরিতে।আর ওর আব্বু মি. আনিসুল খান ও পারমিশন দিয়ে দিয়েছেন তাকে,, কারণ এত লম্বা ছুটিতে এভাবে ঘরে বসে বোরড হওয়ার থেকে নিজের ফুপ্পির বাড়ি থেকে ঘুরে আসা ভালো। আলেয়া ঊদিতার থেকে বয়সে বড়। আলেয়ার বয়স ২২ আর ঊদিতা সবেমাত্র ১৬ তে পা রেখেছে। কেন জানি আলেয়া ঊদিতাকে মোটেও পছন্দ করে না। কথায় কথায় খালি খোঁচা দেয়ার তালে থাকে। এজন্যই আরো ফুপ্পির বাসায় আসতে চায় না সে। এরচেয়ে নিজের বাসায় থাকাটাই ভালো।

প্রায় ১ সপ্তাহ থাকার পর আজকেই চলে যেতে চাইছিলো ঊদিতা বাসায়। কিন্তু আলেয়ার জন্য হঠাৎ পাত্র পক্ষ আসার কথা শুনে ওর ফুপ্পি তাকে আটকে দিলেন। ঊদিতা ঘরকন্নার কাজে ভীষণ পটু,রান্নাবান্নায় ওর হাত অসাধারণ। এতবড় ঘর থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা চাট্টিখানি কথা নয়। আর ওদের খাতির যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না হয় তাই ঊদিতাকে এখন ভীষণ দরকার তার ফুপ্পি মিসেস লিমার। ঊদিতা রান্নাঘর সামলানোর দায়িত্বে থাকলে তিনি নিশ্চিন্তে বাকি সব কাজ সামলাতে পারবেন।

সেই সকাল থেকে রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ঊদিতা। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সে। গোসল ও করতে পারে নি এখনো কাজের চাপে। একাহাতে বিভিন্ন পদের রান্না বান্না সব করছে সে। শুধু ওর ফুপাতো ভাইয়ের বউ তানিয়া ওকে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। আর মিসেস লিমা বাইরে অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। এবং সব তদারকির দায়িত্বে আলেয়ার বড়বোন শাফেয়া রয়েছে,যদিও কাজের কাজ কিছুই করছে না সে।

পাত্র পক্ষ হিসেবে অনেকে এসেছে। যেন বিয়ে খেতে এসেছে সবাই। বিশিষ্ট শিল্পপতি মি.মোরশেদ হামিদ চৌধুরী ও মি. এনামুল তামিম চৌধুরীর পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ওনারা আপন দুই ভাই। মি.এনামুল তামিম চৌধুরীর মেঝো ছেলে এহতেশাম তাসকিন চৌধুরীর [২৫] জন্য আলেয়াকে ওনাদের চোখে পড়েছে। ওনাদের বলতে তাসকিনের পছন্দেই ওনারা দেখতে এসেছেন। মি.মোরশেদের স্ত্রী মিসেস ইয়াসমিন খাতুন ও মি.এনামুলের স্ত্রী তারানা হক ও এসেছেন। সাথে আছে মি.এনামুলের বড়ছেলে তামজিদ [৩০] ও তার স্ত্রী তারিন [২৫] এবং তাদের মেয়ে এরাত [৬]। মি. এনামুলের ছোট ছেলে তাজিম [২৩] এবং মি.মোরশেদের টুইন ছেলেমেয়ে তাশজিদ [২১] ও এনা [২১] সাথে মি.মোরশেদের পুত্রবধূ কেয়া [২৬] ও কেয়ার মেয়ে পুতুল [৭] ও এসেছে। পুতুলের বাবা ও চাচা শুধু ওরা দুজনই আসেনি৷

তাও মিসেস লিমার কাছে শুধু ওনারাই যথেষ্টের থেকে বেশি মনে হচ্ছে। ওনি এবং ওনার স্বামী তো তাদের তদারকি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছেন। চা নাস্তা…নুডুলস, লাচ্ছি, সেমাই, হরেক রকমের পিঠা,পাটিসাপটা,পুডিং, হাতে বানানো কেক বিস্কিট,চিকেন এন্ড ভেজিটেবল রোল,চিকেন স্যান্ডউইচ, নাগেটস,পাস্তা,চাউমিন,কিমার কাটলেট,সবজির কাটলেট,নাচোস,হরেক রকমের বড়া,সবজির বড়া,ডালের বড়া,কিমার বড়া,রসমালাই, রসগোল্লা,ছানার মিষ্টি, বুন্দিয়ার মিষ্টি, দই,ফালুদা,বোরহানি,কোল্ডকফি,কাস্টার্ড, শিককাবাব, বোটিকাবাব, হটডগ সব রকমের নাশতার আয়োজন করা হয়েছে। কী নেই খাবারের আইটেমে!

সব রান্না সেই ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করেছিলো ঊদিতা,,,এখন প্রায় বিকেল সাড়ে ৪ টা বাজে। এখনও রান্না বান্না পুরোপুরি শেষ হয় নি। একদম ক্লান্ত হয়ে গেছে ঊদিতা। পাত্র পক্ষের মনরক্ষা করার জন্য এতকিছুর আয়োজন। পছন্দ হলে আজকেই আংটি পরিয়ে দিয়ে যাবে। যেই আলেয়া ওকে পছন্দ করে না সেই আলেয়ার জন্যই এতকিছু করছে সে।

আলেয়া তো গতকালকে থেকে রূপচর্চা করা শুরু করেছিলো আজকে পাত্র পক্ষ আসার আগে পর্যন্ত সে রূপচর্চা নিয়েই ব্যস্ত ছিলো। পার্লার থেকে সাজগোজ করে এসেছে সে। যাতে তারা তাকে কোনোভাবে রিজেক্ট না করতে পারে। ঊদিতা মনে মনে হাসলো শুধু আলেয়ার কর্মকাণ্ড দেখে। পছন্দ করার হলে এমনিই করবে। এত সাজুগুজু করার কী দরকার বুঝি না!!বিয়ের পর তো এমনিতেই আসল ফেস দেখতে পাবে।।

আলেয়া যথেষ্ট সুন্দরী। তবে ঊদিতার সামনে দাঁড়ালে সেই সৌন্দর্য্যটা একদম ফিকে হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই তখন ঊদিতাকেই সবার চোখে পড়বে। যেহেতু ঊদিতা দেখতে ভীষণ নজরকাঁড়া সুন্দরী। আর এজন্যই আলেয়া আরো বেশি হিংসা করে ঊদিতাকে। আলেয়া ভীষণ স্মার্ট ভাবে চলাফেরা করে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। খুব স্টাইলিশ ভাবে শাড়ি পড়েছে সে। মাজা বরাবর গোল্ডেন কালার করা চুল ছেড়ে রাখা। সাথে আছে গর্জিয়াস মেকওভার ও গয়নাগাটি। যেন আজকেই বিয়ে হয়ে যাবে।

আলেয়াকে মিসেস ইয়াসমিন খাতুন ও তারানা হক ওনাদের মাঝে বসিয়েছেন। মিসেস তারানা তাকে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস তারানা:-তোমার পুরো নাম কী মা??

আলেয়া লাজুক স্বরে উত্তর দিলো;

আলেয়া:- মিফতা তাবাসসুম আলেয়া,,,

মিসেস তারানা:- বাহ,,খুব মিষ্টি নাম তো তোমার মামণি,,। তা স্টাডি করছো তো মা?কিসে পড়ো তুমি?

আলেয়া:-জ্বী আমি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি। (মাথা নিচু করে)

মিসেস তারানা প্রশংসা করে বলে উঠলেন;

মিসেস তারানা:- ভালো,, খুব ভালো। তা রান্নাবান্না কিছু পারো তো মা তুমি?

এবার আলেয়া মহাবিপদে পড়ে গেল। রান্নার ‘র’ ও চেনে না সে। এমনকি এককাপ চা ও জীবনে নিজে থেকে বানিয়ে খায় নি ও আর কী রান্না করবে তা বুঝাই যায়!কী জবাব দেবে সে এখন। এবার যদি এই রান্না না পারার কারণে ওর বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে কী হবে? আর ভাবতে পারছে না সে। এজন্যই তো মা তাকে অকর্মা বলে ডাকে। ইশশ কিছু রান্না ও যদি শিখে রাখা যেত তাহলে তো এখন গর্ব করে বলা যেত। মনে মনে আক্ষেপ করছে আলেয়া। আবারও ঊদিতার প্রতি হিংসায় মনটা বিষিয়ে উঠলো তার। এতটুকুন মেয়ে হয়ে প্রত্যেকটা কাজে তাকে ডিঙিয়ে যায় সে। সব কাজের কাজী। তার সামনে রাখা প্রত্যেকটা নাশতার প্লেট দেখে মেজাজটা গরম হয়ে গেল তার। খুব ভালো করে জানে সে এসব কিছু ঊদিতা তৈরি করেছে। আলেয়া এবার আমতা আমতা করতে লাগলো ;

আলেয়া:-আসলে,,,আন্টি,,ইয়ে,, মানে,,,

এবার মিসেস ইয়াসমিন ওকে থামিয়ে দিলেন। মৃদু হেসে বললেন ;

মিসেস ইয়াসমিন:- থাক মা,,। বুঝতে পেরেছি। তুমি রান্না করতে পারো না তাইতো?

আলেয়া মাথা নিচু রেখে চুপ করে আছে। কী বলবে?এটা তো সত্যি কথাই যে সে রান্না পারে না। মিসেস লিমা মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে ভয়ে ঘেমে গেছেন। ওনার এই মুহুর্তে ইচ্ছা করছে যে আলেয়াকে তুলে একটা আছাড় মারতে। ওনি এবার কথা কাটানোর জন্য নিজের মেয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলে উঠলেন ;

মিসেস লিমা:-আসলে ভাবী বড্ড আদরের মেয়ে তো তাই যদি হাত টাত পুড়িয়ে ফেলে ঐ ভয়ে রান্নাঘরে যেতে দেই না। তাও টুকটাক শিখে নেয়ার চেষ্টা করছে সে। আরো পড়ালেখার চাপে পড়ে রান্না শেখা হয়ে উঠে নি আরকি। তবে শিখে নেবে সে ব্রেইন খুব শার্প তার,,, যা দেখে তাই শিখে ফেলে। হে,,,হে,,,(বোকার মতো হেসে হেসে)

মিসেস ইয়াসমিন এবার আন্তরিক ভাবে বলে উঠলেন;

মিসেস ইয়াসমিন:-না,, না ভাবী,,,। এটা কোনো ব্যাপার নয়। আমরা তো আমাদের বৌমাদের দিয়ে কোনো কাজকর্ম করাই না। ওরা আমাদের কাছে বৌমা কম মেয়ে বেশি। তবে রান্না শেখাটা প্রত্যেক মেয়ের জন্যই জরুরি। এটা যেমন শৌখিন তেমনি প্রয়োজনীয় ও বটে। বলা যায় না কবে কখন চাপে পড়ে নিজের জন্য হোক বা পরের জন্য হোক রান্না করতে হয়। সমস্যা নেই,,, আমাদের বৌমারাও রান্না বান্নায় ভীষণ কাঁচা ছিলো,আমরাই তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি। এখন তারা আলহামদুলিল্লাহ সব করতে পারে নিজে নিজে। এবার নাহয় আলেয়াকেও শেখালাম। (মুচকি হেসে)

এতক্ষন ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে কথা বলছিলেন মি.মোরশেদ, মি.এনামুল ও আলেয়ার বাবা মি.গোলজার এবং আলেয়ার বড়ভাই মুরাদ। মিসেস ইয়াসমিন ও মিসেস তারানার কথা শুনে মুচকি হাসলেন ওনারা। তাসকিন আলেয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আর আলেয়া তা খেয়াল করে লজ্জায় লাল হয়ে গেল।মিসেস লিমা মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলেন। খুশি হয়ে বলে উঠলেন;

মিসেস লিমা:-অবশ্যই ভাবী।আপনারা যেমন ভাবে ইচ্ছা তেমন ভাবেই ওকে গড়ে নেবেন। কোনো অসুবিধা নেই। এখন থেকে তো সে আপনাদেরই মেয়ে। তাই না?

এবার মি.এনামুল হাসিমুখে বলে উঠলেন;

মি.এনামুল:- তা আপনি ঠিক বলেছেন বেয়াইন,,, আলেয়া মা এখন থেকে আমাদের মেয়ে। আমার ছেলে তাসকিনের জন্য আলেয়া মাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তা মামণি আমার এই ছেলেকে কী তোমার পছন্দ হয়েছে বলো তো?(জানতে চেয়ে)

আলেয়া লজ্জায় মাথা নুয়ে বসে আছে। মি.এনামুলের প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলো সে। তারপর হালকা ভাবে মাথা ঝাকিয়ে বললো;

আলেয়া:-জ্বী,,,

এবার মিসেস তারানা তাসকিনকে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস তারানা:-তা তোমার কী মত তাসকিন? পছন্দ হয়েছে তো?অবশ্য আমার জানামতে আলেয়াকে তোমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।কী ঠিক বললাম তো?(জানতে চেয়ে)

তাসকিন আলেয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো;

তাসকিন:-হ্যা আম্মু। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

মি.গোলজার:-আলহামদুলিল্লাহ,। (খুব খুশি হয়ে)

মিসেস লিমাও আলহামদুলিল্লাহ বলে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মিসেস তারানা সহাস্যবদনে আলেয়ার হাতের মধ্যাঙ্গুলিতে ডায়মন্ডের কারুকাজ করা একটি রিং পরিয়ে দিলেন। মিসেস ইয়াসমিন মোটা ২ টা সোনার বালা
পরিয়ে দিলেন আলেয়ার হাতে। সাথে পড়ানো হলো ডায়মন্ডের নাকফুল,, স্বর্নের কানের ঝুমকো এবং গলার নেকলেস। আলেয়া এবং তার বাবা মায়ের খুশি দেখে কে!মিসেস লিমা আরও ব্যস্ত হয়ে গেলেন তাদের খাতিরদারিতে। মিসেস ইয়াসমিন একটি ডালের বড়া নিয়ে তাতে কামড় বসালেন। মনে মনে বললেন,,”রান্না যেই করে থাকুক,, তার রান্নার হাত কিন্তু অসাধারণ। খেতে ভীষণ টেস্টি হয়েছে।”

তাসকিন এবং আলেয়াকে আলাদা করে কথা বলার জন্য আলেয়ার রুমে পাঠানো হলো।প্রায় আধাঘন্টার মতো আলাদা টাইম স্পেন্ড করলো ওরা দুজন। তারপর তানিয়ার ডাকে আবারও ড্রয়িং রুমে সবার কাছে ফিরে এলো।

ওনারা সবাই আড্ডা ফুর্তিতে মেতে উঠলেন। রাতের ডিনার সেড়ে ওনারা বাসায় যাবেন। এনা, কেয়া এবং তারিন ওরা আলেয়ার সাথে গল্প জুড়ে দিলো। মিসেস ইয়াসমিন, মিসেস তারানা এবং মিসেস লিমাও গল্পে মেতে উঠেছেন।বাকি পুরুষেরা মিলে ও আড্ডায় ব্যস্ত। একমাত্র ঊদিতা বাদে। সে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাতের ডিনারের সব বন্দোবস্ত করতে লেগে গেল। যদিও বেশ কয়েকপদের রান্না শেষ। আর মাত্র ২ কী ৩ পদ রয়েছে। সেগুলো ও সম্পূর্ণ করতে লাগলো সে। গোসল শেষে মাগরিবের নামাজ আদায় করে আবারও রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঊদিতা অতিথিদের সামনে মোটেই আসে নি। কাজ নিয়েই সারাদিন ধরে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।

রাতের ডিনারের জন্য সব খাবার খুবই চমৎকার ভাবে পরিবেশন করে ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে এসেছে ঊদিতা। সবকিছু গোছগাছ করে দিয়ে এসেছে,,। বাকিটুকু তানিয়া ও মিসেস লিমা সামলে নেবেন। তাই সে অবসর পেয়ে রুমে চলে এলো।

এত এত সুস্বাদু খাবারের বহর ও পরিবেশন স্টাইল দেখে সবার জিভেই জল চলে এলো। খাবার খেতে বসে গেল সবাই। সত্যি ভীষণ সুস্বাদু হয়েছে খেতে খাবারগুলো। মিসেস ইয়াসমিন তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাকিরাও খুব প্রশংসা করলো রাধুনির। তবে কে রান্না করেছে তা কেউ জিজ্ঞেস করে নি। ওনারা মনে করেছেন মিসেস লিমার পুত্রবধূ তানিয়া হয়তো এসব কিছু করেছে। মিসেস লিমার তো ভাইঝির প্রশংসা শুনে গর্বে বুক আধহাত ফুলে উঠলো।মেয়েটা রূপে গুণে সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণা।

খাওয়া দাওয়া সেড়ে সবাই আবারও ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। মিসেস ইয়াসমিন মিসেস লিমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে ওয়াশরুম ঠিক কোনদিকে। মিসেস লিমা ঊদিতা যে রুমে আছে ওই রুমটা দেখিয়ে দিলেন। আলেয়ার রুমের ওয়াশরুমে কেয়া তার মেয়েকে নিয়ে গেছে তো তাই।

মিসেস ইয়াসমিন ঊদিতা যে রুমে আছে ওই রুমে চলে গেলেন। রুমে ঢুকে সারা রুমে চোখ বুলালেন ওনি। তবে ঘরের পশ্চিম কোণের দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেলেন তিনি। চোখ জোড়া ওখানেই আটকে গেল তাঁর। ওনার মনে হলো চোখের সামনে কোনো হুরপরীকে দেখছেন ওনি,,যে কিনা নামাজে দাঁড়িয়ে আছে।

একমনে জায়নামাজের দিকে বুকে হাত বেঁধে তাকিয়ে আছে ঊদিতা। অন্যকোনো দিকে মনযোগ নেই তার। কেউ যে তাকে দেখছে তার প্রতি ঊদিতার কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। একমনে এশার ইবাদাত করতে ব্যস্ত সে। মিসেস ইয়াসমিন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছেন ঊদিতার দিকে। ওনি ভাবতে পারছেন না যে আদৌ এত সুন্দর কোনো মেয়ে হতে পারে!লম্বা ও ফুলহাতা গাউনের মতো ড্রেসআপ ও লম্বা হিজাবের কারণে তার সারা শরীর আবৃত। শুধুমাত্র তার শুভ্র মুখাবয়ব ও ফকফকা হাতজোড়া স্পষ্ট প্রতীয়মান। মুখের আদল ভীষণ মায়াবি। ওজুর পানির প্রভাবে মুখ হালকা ভেজা ভেজা রয়েছে এখনো। চোখের লম্বা ও কালো পাপড়িগুলোয় ওজুর পানি এখনো লেপ্টে আছে। অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। মিসেস ইয়াসমিনের মাথা থেকে যেন ওয়াশরুমের চিন্তা হাওয়া হয়ে গেছে। মনে মনে তিনি ভাবছেন,, “কে এই মেয়েটা? কী তার পরিচয়?”

ওনার ভাবনা শেষ হতে হতে ততক্ষণে ঊদিতার নামাজ পড়া শেষ হয়ে গেছে। মিসেস ইয়াসমিনকে তার দিকে একধ্যানে তাকাতে দেখে ঊদিতা কিছুটা আড়ষ্ট হয়ে গেল। নিজের জড়তা কোনোমতে কাটিয়ে ঊদিতা মিসেস ইয়াসমিনকে হাসিমুখে সালাম দিলো। মিসেস ইয়াসমিন আরেকদফা মুগ্ধ হলেন ঊদিতার ভয়েস শুনে। তিনিও হাসিমুখে সালামের জবাব দিলেন। আদুরে কন্ঠে ঊদিতার পরিচয় জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস ইয়াসমিন:-তুমি কে মা?তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?

ঊদিতা বিনীত কন্ঠে জবাব দিলো ;

ঊদিতা:-আমি আসলে আলেয়া আপুর মামাতো বোন।ইশরাত আবিয়াত ঊদিতা আমার নাম। আলেয়া আপুর মেঝো মামার মেয়ে আমি।পরীক্ষা শেষে ছুটিতে বড় ফু্প্পির বাসায় মানে এখানে বেড়াতে এসেছি আরকি।

মিসেস ইয়াসমিন:-বাহ,,, খুব মিষ্টি তো তোমার নাম ঠিক তোমার মতোই। তা মামণি তোমাকে তো একবারও বাইরে যেতে দেখি নি!

ঊদিতা:-আসলে আন্টি,,, আমি এত মানুষজনের সামনে কম্ফোর্ট ফিল করি না তাই আপনাদের সামনে যাইনি এতক্ষণ। কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আমার খুব অস্বস্তি লাগে এত মানুষের সামনে যেতে। তাই,,, (কিছুটা মিনমিন করে)

মিসেস ইয়াসমিন:-না মা এত হ্যাসিটেট ফিল করার দরকার নেই।সমস্যা না,,, আমি কিছু মনে করিনি। তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। তুমি কিন্তু খুব মিষ্টি দেখতে। (প্রশংসা করে)

ঊদিতা:-ধন্যবাদ আন্টি। (মৃদু হেসে)

মিসেস ইয়াসমিন:-কোন ক্লাসে পড়ো তুমি মামণি?(জানতে চেয়ে)

ঊদিতা:-মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি আন্টি।

মিসেস ইয়াসমিন ভাবেন নি যে ঊদিতার বয়স এত অল্প হবে। তিনি ভেবেছিলেন ম্যাচিউর হবে হয়ত। তার কারণ ঊদিতার চেহারার সম্ভ্রান্ততায় তো তাই বলে। গেটআপ ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো। মিসেস ইয়াসমিন চেহারায় বিস্ময়ভাব চেপে রাখতে পারলেন না।

মিসেস ইয়াসমিন:-মানে তোমার বয়স মাত্র ১৬ বছর? (অবাক হয়ে)

ঊদিতা:-জ্বী আন্টি।

ঠিক এমন সময় রুমে প্রবেশ করলেন মিসেস লিমা এবং মিসেস ইয়াসমিনের ছোটমেয়ে এনা। মিসেস ইয়াসমিনের মতো ঊদিতাকে দেখে এনাও কিছুটা থমকে গেল। মুগ্ধ হয়ে গেল ঊদিতাকে দেখে। এত সুন্দর মেয়ে যেন পুরো রূপকথার গল্পের পরীদের মতো দেখতে। কী সুন্দর তার টানা টানা ও বড় বড় চোখ জিরাফের চোখের মতো। কুচকুচে কালো, ঘন ও লম্বা পল্লব দ্বারা বেষ্টিত চোখজোড়া দেখলে যে কেউ ফিদা হতে বাধ্য। সেই চোখ জোড়ায় সবসময় বিরাজ করে এক অদ্ভুত শান্তিময় মায়া। তার চোখের চাহনি ভীষণ শীতল। যে কেউ ডুবে যাবে সেই শীতলতা ভরা ঠান্ডা চাহনিতে।
কপালের ঠিক মাঝখানে কালো ছোট একটা তিল দেখলে মনে হয় যেন কপালে টিপ বসিয়েছে। নেচারালি গাল গুলো টমেটোর মতো ব্লাশিং দেখতে। তরতরে মসৃণ খাঁড়া নাক তার।রক্তলাল টকটকে টসটসা ঠোঁট জোড়া তার দেখতে খুব বেশিই আকর্ষণীয়। এককথায় অসাধারণ লাগছে তাকে দেখে।
ঊদিতা উচ্চতায় মাত্র ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। এবং তার ওজন ৫৩ কেজি। ভীষণ গুলুমুলু ও নাদুসনুদুস চেহারা তার। দেখলেই বাচ্চাদের মতো আদর করতে ইচ্ছে করবে।

মিসেস লিমা আবারও তাদের সাথে ঊদিতাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।ঊদিতা এনার সাথে আন্তরিকতার সহিত হাসিমুখে কুশল বিনিময় করলো। মিসেস লিমা ঊদিতাকে ভীষণ ভালোবাসেন।ওনার খুব আদরের ভাইঝি সে।ঊদিতার ক্লান্তি মাখা চেহারা দেখে মিসেস লিমা কিছুটা ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঊদিতাকে বললেন;

মিসেস লিমা:-মা,,তোর কী শরীর খারাপ লাগছে? কিছু খেয়েছিস তো মা আমার?ইশশ আমার ভাইঝিটা আজ সারাদিন ধরে নিজেকে কাজকর্মে ও রান্না বান্নায় ব্যস্ত রেখেছে। সে খেয়েছে কিনা কিছুই খেয়াল করি নি। (উদ্বিগ্ন হয়ে)

ঊদিতা মিসেস লিমাকে আশ্বস্ত করে বললো ;

ঊদিতা:-ফুপ্পি,,, তুমি খামোকাই চিন্তা করছো,,। আমি খেয়েছি তো। আর আমার মোটেই শরীর খারাপ লাগছে না। আমি একদম ঠিক আছি ফুপ্পি। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।

এনা এবার গেস করে বলে উঠলো;

এনা:-ওয়েট ওয়েট,,,তারমানে এতসব খাবারের আইটেম ঊদিতাই রান্না করেছে?(অবাক হয়ে)

এবার মিসেস লিমা ঊদিতার প্রশংসায় লিপ্ত হয়ে গেলেন;

মিসেস লিমা:-তা আর বলতে,,, আমার ঊদিতা ছাড়া এত সুস্বাদু খাবার আর কে রান্না করবে! আমার ঊদিতা সকল প্রকারের কাজকর্মে অনেক পটু। বিশেষ করে রান্না বান্নায়। আমার ঊদিতা মায়ের হাতের রান্না যে একবার খেয়েছে তার জিভে এখনো সেই স্বাদ লেগে আছে। আমার ঊদিতার মতো এত নিরীহ ও ভালোমানুষ হতেই পারে না। আমার মা’টা রূপে গুনে সবদিক দিয়ে একদম পারফেক্ট। পড়াশোনায়ও খুব ভালো। খুব বাধ্য মেয়ে সে। বড়দের সাথে জীবনেও মুখে মুখে তর্ক করে না। যে যা বলবে সেটাই সে নিরবে পালন করে।সবাইকে খুব সম্মান করে আমার মা’টা।আফসোস,, আমার যদি আরেকটা ছেলে থাকতো,, তাহলে যে করেই হোক আমি ঊদিতাকে আমার ছেলের বৌ বানিয়ে নিতাম। কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়। (আক্ষেপ করে)

এটা মিসেস লিমার একপ্রকারের মুদ্রাদোষ।ঊদিতাকে দেখলেই এই আক্ষেপটা ওনার বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসে।ভীষণ আফসোস হয় ওনার। মনে মনে ভাবেন যে,, “এই মেয়েটা আরো আগে জন্মগ্রহণ করলে কী এমন ক্ষতি হতো?তাহলে তো আমার মুরাদের সাথে তাকে বিয়ে দিতে পারতাম।”

মিসেস ইয়াসমিন তো ঊদিতার রান্নার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। এতটুকু মেয়ের এত সুন্দর গুন। রান্না শুধু জানলেই তো হয় না,,,তার সঠিক স্বাদ বুঝা লাগে। ক’জনের হাতের রান্না এত সুস্বাদু হয়??মেয়েটা মন দিয়ে কাজ করে বলেই তো সবকিছু এত সুন্দর ও গুছানো হয়েছে। মিসেস ইয়াসমিন আবারও ঊদিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেলেন। তিনি এমনকিছু ভাবতেও পারেন নি।
সাথে এনাও যোগ হয়ে গেল।

এত এত প্রশংসার বাণী শুনে ঊদিতার কান গরম হয়ে গেছে। লজ্জায় গাল ও নাকের ডগা আরো ব্লাশিং করছে।
এরইমধ্যে মিসেস ইয়াসমিন ওয়াশরুমে গেলেন। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে আবারও ঊদিতাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলেন।

মিসেস ইয়াসমিন:-তোমার ফ্যামিলিতে কে কে আছেন মামণি?(কথায় কথায় জানতে চেয়ে)

ঊদিতা:-আমার আব্বু ওনার নাম আনিসুল খান, আম্মু আনিতা মিনহা , বড়ভাইয়া শাহরিয়ার খান [২৮],বড়ভাবী উসামা দিদার [২৩] , আমার ৪ বছর বয়সের একটা ভাতিজা আছে,, নাম সাজিদ খান এবং আমার মেঝো আপু ঊষা ফাওজিয়া সায়্যিদা,,[২০]। ওনার অবশ্য বিয়ে হয়ে গেছে। আমার দুলাভাইর নাম আশহাম মিনাজ [২৮] । আমার ৩ বছরের কিউট একটা বোন পো আছে তার নাম আরহাজ মিনার [২]।

মিসেস ইয়াসমিন:-বাহ,,,একদম সিম্পল হ্যাপি ফ্যামিলি৷তা মা তোমার আব্বু এবং ভাইয়া কী করেন?

ঊদিতা:-জ্বী আমার আব্বু ঢাকা ভার্সিটির প্রফেসর। আর ভাইয়া ব্যাংকে চাকরি করেন।

মিসেস ইয়াসমিন:-ভালো,,,খুব ভালো।তোমার বাসা কোথায় মা?

ঊদিতা:-বনানীতে আমাদের নিজস্ব বাসা আছে আন্টি,,। ওখানেই থাকি। যদিও বাসাটা আহামরি তেমন কিছু নয়। টিনশেডের সাধারণ বাসা।তবুও ওটাই আমাদের কাছে অনেক শান্তির নিবাস।(মৃদুস্বরে)

মিসেস ইয়াসমিন:-কিছু মনে করো না মা,,,আমিও কিন্তু তোমার মতো খুব সাধারণ একটা পরিবার থেকে বিলং করি। আমার বাবা একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তবে আমরা মধ্যবিত্ত হলে কী হবে,,, আমাদের আত্মসম্মান কিন্তু প্রখর।হোক না আমার স্বামী কোটিপতি বা শিল্পপতি,,, সবার আগে এটাই তো আমার পরিচয় যে আমি একটা সাধারণ পরিবারের মেয়ে। এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। কী বলো মা?(অমায়িকভাবে হেসে)

মিসেস ইয়াসমিনের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল ঊদিতা। তিনি যে একদম নিরহংকার টাইপের মানুষ তা বুঝতে বেশি সময় লাগলো না ঊদিতার। ঊদিতার ভীষণ ভালো লাগছে ওনার সাথে কথা বলতে। এরকম অমায়িক মানুষের সাথে কথা বলতে কার না ভালো লাগে?

ঊদিতা:-জ্বী আন্টি । এটা আপনি ঠিক বলেছেন। হই আমরা সাধারণ কিন্তু আমাদের কাছে আমাদের আত্নসম্মানটাই মেইন ফ্যাক্ট।

মিসেস লিমা অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে। এখন আবার এলেন। এসে বললেন যে মি.মোরশেদ নাকি তাকে ডাকছেন। এই বলে তিনি আবারও চলে গেলেন।মিসেস লিমার সাথে এনাও চলে গেল। যাবার আগে ঊদিতাকে আন্তরিক ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো তাদের বাসায় যাওয়ার কথা। ঊদিতাও মুচকি হেসে জানালো ইনশাআল্লাহ।

ওরা যাওয়ার পর মিসেস ইয়াসমিনও উঠে দাঁড়ালেন।ঊদিতার সাথে এতক্ষণ সময় কাটিয়ে ওনার ভীষণ ভালো লেগেছে। এবার ওনি একটা অবাক করা কাজ করলেন। তা হলো তিনি তার হাত থেকে স্বর্নের কারুকাজ করা অত্যাদিক সুন্দর একটা চ্যাপ্টা ডিজাইনার রিং খুলে সেটা ঊদিতার হাতে পড়িয়ে দিলেন। ঊদিতা যারপরনাই বিস্মিত হলো। ঊদিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো;

ঊদিতা:-এটা আপনি কী করলেন আন্টি?এসবের কী দরকার ছিলো?(ইতস্তত করে)

মিসেস ইয়াসমিন অমায়িক হাসলেন ঊদিতার প্রশ্ন শুনে। ঊদিতার মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি আদুরে কন্ঠে বললেন;

মিসেস ইয়াসমিন:-এটা তোমার এই আন্টির তরফ থেকে সামান্য একটা গিফট। আজ তুমি আমাদের এত মজাদার খাবার রান্না করে খায়িয়েছো,, সারাদিন ধরে এত এত কষ্ট করে আমাদের জন্য এত সুস্বাদু খাবার বানিয়েছো,,, তার তুলনায় এটা কিছুই না মামণি। বিশ্বাস করো,, তোমার মতো এত ভালো ও সরল মনের মেয়ে আমি কখনো দেখি নি। তোমার সাথে কথা বলে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।আল্লাহ চাহেন তো আবার আমাদের দেখা হবে। তবে অন্যকারণে। সেটা তুমি পরে বুঝতে পারবে।এখন এই আন্টির তরফ থেকে এই ছোট্ট গিফটটি তুমি গ্রহণ করবে না মামণী?

ঊদিতা:-জ্বী আন্টি অবশ্যই। আপনার সাথে গল্প করে আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে। এখানে তো আরো আসা হবে আপনাদের। আমি থেকে থাকলে অবশ্যই আপনাদেরকে আবারও রান্না করে খাওয়াবো ইনশাআল্লাহ।(আন্তরিক ভাবে)

মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হেসে ঊদিতার কপালে একটা চুমু খেলেন। ঊদিতার হাতে সালামি ১০ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন ;

মিসেস ইয়াসমিন:-উহুম,, মানা করতে পারবে না। এটা তোমার আঙ্কেলের তরফ থেকে সামান্য উপহার। তোমার আঙ্কেল তোমায় দেখেননি ঠিক,, কিন্তু দেখলে খুশি হয়ে এরথেকেও বেশি দিতেন। আমি তো সামান্য দিয়েছি মাত্র।আমি চাইছিনা তুমি এত অস্বস্তি নিয়ে তাদের সাথে দেখা করো,,, এজন্য আমিই দিয়ে দিলাম। তোমার যা ভালো লাগবে তা কিনে নিও। ভালো থেকো মামণি,,, আর নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।

ঊদিতা:-জ্বী আন্টি,, আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আসসালামু আলাইকুম।(আন্তরিকতার সাথে)

মিসেস ইয়াসমিন:-ওয়ালাইকুমুস সালাম।তাহলে আজ যাই মামণি।

এই বলে মিসেস ইয়াসমিন চলে গেলেন। ঊদিতা ওনার যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।ওনি যা দিলেন তা ফিরিয়ে দেয়াটা অভদ্রতা হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে সেগুলো গ্রহণ করেছে ঊদিতা। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না,, এই ১০ হাজার টাকা এবং এই স্বর্নের আংটি এসব ওনি কেনো দিলেন?শুধুই কী রান্না করে খাওয়ানোতে খুশি হয়ে। নাকি অন্য কোনো কারণে? মাথায় প্রশ্ন গুলো জটলা পাকিয়ে বসে আছে ঊদিতার। আপাতত সে এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। টাকা গুলো তার হ্যান্ডপার্সে রেখে দিলো সে। অতঃপর বিছানায় গিয়ে রিল্যাক্স হয়ে বসলো।

মিসেস ইয়াসমিন ও ওনার পরিবারের সবাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন। আলেয়াকে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো সালামি দেয়া হয়েছে। মিসেস লিমা তো খুশিতে আত্মহারা। আলেয়ার হাতে মাত্র ৫ হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে তিনি তার আলমারিতে তুলে রাখলেন।

আলেয়া মুখ গোমড়া করে বসে রইলো। সে ভেবেছিলাে সব টাকা তার। কালকে সে মার্কেটে যাওয়ার প্ল্যান ও করে ফেলেছিলো কিন্তু তাতে তার মা বাগড়া দিয়ে দিলেন। ওনাদের নিচে যা যা খরচ হয়েছে তার থেকেও বেশি টাকা পেয়ে আয়েশ করে পান চিবুতে লাগলেন মিসেস লিমা। দুনিয়াতে টাকাই তো সব। তার মেয়ে যে রানীর হালাতে তার শ্বশুর বাড়িতে থাকবে তা তিনি খুব ভালোই বুঝতে পারছেন।

মি.মোরশেদ জানিয়েছেন পরের সপ্তাহেই ধুমধাম করে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এবং এনগেজমেন্টের দিনই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে ঠিক কোনদিন বিয়ে!তবে এর আগে ওনারা সুবিধামতো সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিবেন। বড়লোকের বিরাট কারবার বলে কথা। মিসেস লিমা আরও বেশি খুশি এজন্য যে ওনারা কোনো ধরনের যৌতুক দাবি করেন নি,,উল্টো বলেছেন সোনাদানা দিয়ে মুড়িয়ে রানীর মতো করে সাজিয়ে কনেকে নিয়ে যাবেন তাদের বাড়িতে।

(প্রিয় পাঠক পাঠিকাগন,,,নতুন গল্প নিয়ে অবশেষে হাজির হলাম।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষে। প্রথম পর্ব পড়ে কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।মাঝেমধ্যে গ্রুপের জন্য রিকুয়েষ্ট করতে পারি জয়েন্ট করার জন্য,, তাই সবাই জয়েন দিতে বলতে পারি।তাই কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ।আর গল্পটা প্রথম পানসে মনে হলেও পরের পর্ব থেকে জমজমাট হবে। সো,,,হ্যাপি রিডিং গাইজ,,ভালোবাসা অবিরাম,,,❣️…)

#চলবে …🍃

তোমাতে বিলীন
#লেখিকা —আমায়া নাফশিয়াত

#সূচনা_1

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here