তোমাতে বিলীন পর্ব: ০৯

0
10306

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
#পর্ব: ০৯

বাসার সদরদরজা দিয়ে প্রবেশ করলো আশিয়ান বেশ অনেকগুলো শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে। আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সজ্জিত বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে বাসার সবাই মিলে আড্ডা দিতে ব্যস্ত তখন।গরমে ঘেমে নেয়ে লাল হয়ে গেছে আশিয়ান। এইমুহূর্তে গোসল না করলে শান্তি মিলবে না। তাই সবাইকে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে হাই জানিয়ে শপিং ব্যাগগুলো সোফার ওপর রেখে গটগট শব্দ তুলে হেটে নিজের রুমে চলে গেল সে৷যাওয়ার আগে বলে গেল যে সে গোসল শেষ করে ফ্রেশ হয়ে আসছে। বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পানে। সবকিছু সবার মাথার ওপর দিয়ে প্লেনের মতো চলে গেল। এনা তো বিস্ময় চেপে না রাখতে পেরে বলেই ফেললো;

এনা:-কেউ আমাকে চিমটি কাটো প্লিজ,,, আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আশুভাইয়া আজ এত জলদি বাসায় ফিরেছে। জাস্ট আনবিলিভেবল,,,

এনার বলতে দেরী হলো তাশজিদের চিমটি কাটতে দেরী হলো না। এত জোরে চিমটি কাটলো যে এনা বসা থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠলো চিৎকার মেরে ৷ তাশজিদ ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বললো;

তাশজিদ:-দেখ তুই নিজেই বলেছিস যে তোকে যাতে কেউ চিমটি কাটে,,, তাই সেই মহৎ কাজটা আমিই করে দিলাম। ভালো করি নি বল?(দাঁত কেলিয়ে হেসে)

এনা এত পরিমাণ রেগেছে যে তাশজিদের মাথার চুল প্রচন্ড আক্রোশে ঝাপটে ধরে টানতে টানতে চিৎকার করে বললো;

এনা:-তাশজিদ্দার বাচ্চা। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন। আমার হাত থেকে তোকে আজ কেউ বাঁচাতে পারবে না।খবিশ পোলা তোর বাপেরও এত সাহস নাই যে আমাকে চিমটি কাটবে,, সে জায়গায় তুই কোথা থেকে এলি!

রাগের চোটে কী বলছে নিজেও জানে না এনা। মি.মোরশেদ বসে বসে চা খাচ্ছিলেন কিন্তু এনার বলা লাস্টের কথা শুনে ওনার বিষম লেগে গেল। বেদম কাশতে লাগলেন তিনি। মি.এনামুল ওনার পিঠে আলতো করে চাপড় দিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেন। তাজিম আর তাসকিন হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যাওয়ার জোগাড়।হাসতে হাসতে একটার পিঠে আরেকটা চাপড় মারছে ওদের কান্ড দেখে।

এনা অগ্নি দৃষ্টি হেনে তাশজিদের দিকে দমাদম কিল মারছে তার পিঠে। তাশজিদ বেচারা দুহাত দিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে ঢেকে রেখেছে। তাহমিদ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো;

তাহমিদ:-এই,,, থামবি তোরা,, বেয়াদবের দল। তোদের দেখে আমাদের বাচ্চারাও এরকম মারামারি শিখবে। লজ্জা করছে না তোদের এভাবে বাচ্চাদের মতো কিলাকিলি করতে?

তাজিম তাহমিদের কথায় তালে তাল মিলিয়ে বললো;

তাজিম:-লজ্জা থাকলে তো করবে,,,। ওদের বিয়েশাদি করে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরও এই দুটো এভাবে মারামারি করবে দেখাে। ছি,, ছি,, শেইম অন ইউ গাইজ,,, (তাচ্ছিল্য করে)

তাশজিদ:-বলদ,,, এই শেইম অন ইউ ছাড়া আর কোনো ইংলিশ জানিস না তুই,,,?না জানলে বল শিখিয়ে দেই তোকে ভালো করে,,।(দাঁতে দাঁত চেপে)

তাজিম দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো;

তাজিম:-তোদের জন্য এটা ছাড়া আর কিছু মুখে আসে না আমার। আসলেই তোদের লজ্জা হওয়া উচিৎ।

তাশজিদ:-এনাকোন্ডা,,,রাক্ষসী বোন আমার,,,,এবার তো চুলগুলো ছেড়ে দে,,,। আমার এত শখের স্টাইলিশ চুল,,,তোকে বেচলেও তো আমার চুলের মূল্য পাওয়া যাবে না।(অনুরোধ করে)

এনা:-কী বললি তুই?আজ তোর চুল আমি টেনে ছিঁড়ে কুচিকুচি করে রাস্তায় ফেলে দিবো,,,তোর সাহস কতবড় আমার নামকে উল্টাপাল্টা কিসব বলে ডাকিস। তোকে আজ উদম কেলানি দিলে তবে তুই ঠিক হবি।

“এই,,, এসব কী হচ্ছে এখানে?” ,,,, সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে গম্ভীর কন্ঠে কথাটি বলে উঠলো আশিয়ান।

আশিয়ানের গাম্ভীর্যপূর্ন কথাটি শুনে এনা তাশজিদ দুজনেই ভয়ে ঢোক গিললো৷ এনার হাত আলগা হয়ে গেল তাশজিদের চুল থেকে। এনা সরে দাঁড়াতে তাশজিদ নিজের বেশভূষা ঠিক করে বসলো। এনা দাঁত কেলিয়ে কোনোমতে হেসে ভয়ে ভয়ে বললো;

এনা:-না,,, ভাইয়া,, মানে তেমন কিছু নয়। আসলে,, আসলে ওই তাশজিইদ্দা আমার সাথে খালি ফাজলামো করে,,, আমার মেজাজ বিগড়ে দেয় ঐ শয়তানটা।(অভিযোগ করে)

তাশজিদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে কথাটি বললো এনা। তাশজিদ নিষ্পাপ মুখভঙ্গি বানিয়ে বসে আছে গোবেচারার মতো। যেন সে কিছুই করে নি। আশিয়ান হেঁটে এসে তাশজিদের পাশে বসে পড়লো। তাশজিদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-কীরে,,,ওর সাথে লাগিস কেন খালি?তোর কী আর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই?

তাশজিদ:-আমি কিছু করি নি ভাইয়া,,,সত্যি বলছি,,। ওই এনাকোন্ডার কথা শুনো না তো,,, ওর তো স্বভাবই আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলা,,,।ভালো কথা তো জীবনে ওর মুখ দিয়ে বেরোয় না,,,আস্ত একটা বলদ,,,(এনার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে ভেঙ্গিয়ে)

এনা আবারও রাগে ফুঁসে ওঠলো। আশিয়ান না থাকলে এখন সত্যি সত্যিই মেরে বসতো। রাগটা কোনোমতে কন্ট্রোল করে অন্যপাশের একটা সোফায় বসলো সে। আশিয়ানের আড়ালে তাশজিদকে হাত মুঠো করে ঘুষি দেখালো। বিনিময়ে গা জ্বালানো এক হাসি দিলো তাশজিদ। আশিয়ান আবারও বলে উঠে;

আশিয়ান:-আর কোনোদিন যদি তোদেরকে এভাবে মারামারি করতে দেখি,,, তাহলে সেদিন তোদেরকে আমি এমন ধোলাই দেবো যে এরকম কথায় কথায় খোঁচাখুঁচি আর ঝগড়াঝাটি করা ভুলে যাবি। মাইন্ড ইট,,,।(গম্ভীর ভাবে থ্রেড দিয়ে)

আশিয়ানকে বাসার মধ্যে ছোটবড় সকল সদস্য ভয় পায়,,,ওর রাগ সম্পর্কে সকলে অবহিত।তাই তো আশিয়ানের দেয়া হুমকি শুনে এবার পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেল।শপিংব্যাগগুলো নিজের কাছে টেনে নিয়ে আশিয়ান ওর পিচ্চি ভাতিজী দুইটাকে আদুরে কন্ঠে ডেকে বললো;

আশিয়ান:-আমার সোনা মামণিরা,,, চাচ্চুর কাছে আসো তো একটু।

আশিয়ানের কথা শুনে খুশি হয়ে এরাত আর পুতুল তাদের আব্বুর কোল থেকে নেমে আশিয়ানের কাছে চলে এলো। আশিয়ান দুজনকে কাছে টেনে নিয়ে পালাক্রমে তাদের দুগালে ও কপালে চুমু খেলো।আশিয়ান এবার তাদের জন্য আনা খেলনা আর চকোলেট গুলো তাদের দুজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-নাও হ্যাপি আমার সোনামণিরা?

এরাত আর পুতুল খেলনা ও চকোলেটস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো;

এরাত+পুতুল:-অন্নেক হ্যাপি,,,থ্যাংকিউ চাচ্চু,,,।

আশিয়ান:-উহুম,,, শুধু থ্যাংকিউ নয়,,,উম্মাহ দিতে হবে আমাকে।।(মুচকি হেসে গাল এগিয়ে দিয়ে)

এরাত আর পুতুল আশিয়ানের দুইগালে দুইটা চুমু দিলো। আশিয়ানও খুশি হয়ে তাদেরকে আবারও চুমু দিলো।

মিসেস ইয়াসমিন ছেলের হাসিখুশি মুখখানা দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলেন। তিনি তো এটাই চান তার ছেলে সবকিছু ভুলে আবারও আগের মতো হয়ে যাক। আবার আগের মতো সবটা হয়ে যাক। মিসেস তারানা এবার একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে গিয়ে আশিয়ানকে খায়িয়ে দিলেন। আশিয়ান হঠাৎ মিষ্টিমুখ করায় কিছু বুঝতে পারলো না। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মিসেস তারানার দিকে তাকিয়ে আছে। মিসেস তারানা সহাস্যবদনে আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন;

মিসেস তারানা:-কংগ্রাচুলেশন আমার সোনা বাবুটা,,,

আশিয়ান কিছু বুঝতে না পেরে হাবলার মতো জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-মামণি হঠাৎ কংগ্রেটস জানালে যে?বুঝলাম না ঠিক!

কেয়া:-ভাই,,, আজ তোমার জন্য আমরা কনে দেখতে গিয়ে সবকিছু ফিক্সড করে এসেছি। সামনের শুক্রবার তাসকিনের সাথে তোমারও এনগেজমেন্ট। এরজন্যই তোমাকে শুভকামনা জানাচ্ছি বুঝলে?

আশিয়ান খুব অবাক হলো কেয়ার কথা শুনে।ওর এই মুহুর্তে ঠিক কেমন রিয়েক্ট করা উচিৎ তা সে বুঝতে পারছে না। গম্ভীর হয়ে একে একে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে আশিয়ান। সবার মুখে খুশির আমেজ দেখে সে দমে গেল। যাকগে,,, বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে!!এখন করলেই বা কী হবে?কিছুই না। যার জন্য এতদিন দেবদাস হয়ে থেকেছে তাকে তো আর পাবে না। তাহলে মিথ্যা সান্ত্বনা নিয়ে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না। বাচ্চার বাবা হওয়ার স্বপ্ন সব ছেলেরাই দেখে। আশিয়ানও বেবি অনেক ভালোবাসে। তাই বলে একটা মেয়ের জন্য সে এভাবে নিজের স্বপ্ন গুলো ভেস্তে দিতে পারে না। যাকেই সে বিয়ে করবে তাকেই আগে বাচ্চা নিতে বলবে। এমনও হতে পারে বাচ্চা হয়ে গেলে দুনিয়ার আর কোনোকিছুর দিকেই সে আকর্ষিত হবে না। আর ওই ইলিয়ানার ভুত ও চিরদিনের জন্য মাথা থেকে নামবে।

সমস্ত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে আশিয়ান হাসিমুখেই বলে উঠলো;

আশিয়ান:-ভালোই তো। একসাথে দুটো বিয়ে হবে তাহলে। তবে মেয়ে কী আমার মনের মতোন হবে?আই মিন আমার টাইপ?আসলে জানোই তো আমার কথার অবাধ্য টাইপ কোনো মেয়েকে আমার পছন্দ নয়। আর অভার স্মার্ট কোনো মেয়ের ছায়াও আমি সহ্য করতে পারি না,,, লাইক আয়শা। সো আমি কী বলতে চাইছি আশা করি বুঝতে পারছো?

তারিন মনে মনে শয়তানি হাসি দিলো আশিয়ানের কথা শুনে। আশিয়ানের বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা অনেক আগেই আয়শাকে জানিয়ে দিয়েছে সে।এসব কথা শুনার পর ড্যাম শিওর কালকেই আয়শা এখানে পাগলের মতো ছুটে আসছে।বিয়ে কী করে হয় তা দেখা যাবে নে,,,মনে মনে নিজেকে বলছে তারিন।

মিসেস ইয়াসমিন এবার ছেলের হাতে একটা স্বল্প নাস্তা ও কফির ট্রে হাতে ধরিয়ে দিয়ে আস্বস্ত করে বললেন;

মিসেস ইয়াসমিন:-ও নিয়ে তোর মোটেও চিন্তা করতে হবে না বাবা। তোর চাওয়া পাওয়ার থেকেও ঢের গুন বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন মেয়েকে আমি তোর জন্য চুজ করেছি। মেয়েটা যেমন সংসারী টাইপের তেমনি পর্দানশীন ও নামাজি ৷ রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে বলে কথা। ওর বাপ ভাই ওকে স্কুল ছাড়া অন্যত্র আর কোথাও যেতে দেয়নি। মেয়েটা বাইরের জগৎ সম্পর্কে মোটেও পরিচিত নয়। ঢাকা শহরে এমন মেয়ে আছে আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতাম না। মেয়েটা অনেক সরল সোজা টাইপের। তাসকিনের হবুবউ আলেয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে দেখতে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দরী। যদিও পর্দার আড়ালে ওর সৌন্দর্য্য লুকায়িত। আমি শিওর তোর অনেক পছন্দ হবে ওকে। পরশু সে আর আলেয়া শপিং করতে আসবে। তখন ওকে দেখে নিস তুই নিজের চোখে। আর হ্যা ওইদিন অফিসে যেতে পারবি না আগে থেকে বলে রাখলাম কিন্তু তোকে।

মায়ের কথা মন দিয়ে শুনলো আশিয়ান। যাক,,, কমপ্লিমেন্ট শুনে ভালোই মনে হচ্ছে। এরকম সরল সোজা টাইপ মেয়েই দরকার। তবে যতই সরল সোজা হোক না কেন,,,টাকার প্রতি নিশ্চিত লোভ না থেকেই যায় না। এত ভালোমানুষ এই দুনিয়াতে নেই বললেই চলে। এই মেয়েটাকে আপাতদৃষ্টিতে সরল সোজা মনে হলেও ভেতরে ভেতরে যে শয়তানী থাকবে না তা কী করে হয়?তবে যাকগে,,,এখন এসব চিন্তা করে লাভ নেই। ভালো হলেই ভালো,,, না হলে কিছু করার নেই।

আশিয়ান:-ওকে তোমার কথাই রইলো,,,যাবো না আমি ওইদিন অফিসে।আর হ্যা এনগেজমেন্টের কার্ড শুধু তাসকিনেরটাই বানিয়েছো নাকি?

মি.মোরশেদ:-না,,, আজকে তোমাদেরটাও অর্ডার দিয়ে ফেলেছি আমি। কালকেই দিয়ে যাবে সব কার্ড। পরশুর মধ্যে আত্মীয় স্বজন সবার কাছে পৌঁছে যাবে আশা করছি। আর কার্ডের ডিজাইন আমার এনা মামণি নিজে পছন্দ করেছে।

আশিয়ান:-আমার একমাত্র আদরের বোন চুজ করবে না তো কে করবে?৬ জন ভাইয়ের একটা মাত্র বোন বলে কথা!

মি.মোরশেদ:-হ্যা,,,আমার মেয়েটার চয়েস মাশাআল্লাহ,,,। তারপরও তুমি নিজে সবকিছু একবার চেক করে নিও।

আশিয়ান:-ইট’স ওকে পাপা,,,। আমার দেখতে হবে না। তোমরা যা ভালো বুঝো তাই করো।

এনা:-ভাইয়া,,,তোমায় বলতে ভুলে গিয়েছিলাম,,,কালকে তোমার জন্য বেশ কিছু কাপড় চোপড় কিনে এনেছি,,, তুমি যে ব্রান্ডের কাপড় পড়ো সেই ব্রান্ডের। তুমি দেরী করে বাসায় এসেছিলে তাই বলতে ভুলে গিয়েছিলাম সরি৷ তোমার ওয়্যারড্রোবের মধ্যে ব্যাগগুলো রেখেছি আমি। একবার চেক করে দেখে নিও পছন্দ হয় কি না তোমার।

আশিয়ান:-তুই এনেছিস যখন তার মানে অবশ্যই আমার পছন্দ হবে ৷ এই নে তোর জন্য তোর পছন্দের চকোলেটস কিনে এনেছি।

এই বলে একটা বড় চকোলেটের বক্স এগিয়ে দিলো আশিয়ান এনার দিকে। এনা খুশিতে টগবগ করে বক্সটা হাতে নিয়ে নিলো। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো;

এনা:-থ্যাংকিউ ভাইয়া,,,

তাশজিদ এনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো;

তাশজিদ:-একা একা খাস না,,,, আমাকেও কয়েকটা দিস,,,। নইলে তোর পেটব্যথা করবে।

এনা মুখ বাকিয়ে ভেঙচি কেটে বক্সটা ঝটপট সরিয়ে দিয়ে বললো;

এনা:-এহহ,,,আসছে আমার নবাব,,,। এতবড় ধামড়া ছেলে কিনা চকোলেট খাবে। জাহান্নামে যা তুই। আগে আমার সাথে ঝগড়া করার সময় মনে ছিলো না,,,এখন কোন মুখে চকোলেট চাস,,, বেহায়া কোথাকার জানি। সর এখান থেকে।

তাজিম নিজের কপালে চাপড় মেরে বললো;

তাজিম:-তোরা আর জীবনেও শুধরাবি না। একটু আগে আশুভাইয়া কী বললো,,, এখন আবার শুরু করেছিস তোরা।এগেইন শেইম অন ইউ গাইজ,,,,। (আবারও তাচ্ছিল্য করে)

তাশজিদ:-আবার যদি তুই ঐ আবাল মার্কা ডায়লগ শেইম অন ইউ গাইজ বলেছিস তো তোর একদিন কী আমার যতদিন লাগে। একদম ইংলিশ কোর্স শিখিয়ে ছেড়ে দেবো,,, মূর্খ জানি কোনহানকার!

তাশজিদের কথা শুনে তাজিম ভেঙচি কাটলো। আশিয়ান একে একে সবার জন্য কিনে আনা টুকটাক গিফট গুলো বিতরন করলো। মিসেস ইয়াসমিন নতুন উপন্যাসের বই গুলো পেয়ে ভীষণ খুশি হলেন।তাহমিদ এবার আশিয়ানকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো;

তাহমিদ:-কীরে আশিয়ান,,,!আম্মুর কাছ থেকে শুনলাম তুই নাকি বিয়েটা অনুষ্ঠান করে আইমিন জমজমাটভাবে করতে চাস না? তা কী ঠিক? (জানতে চেয়ে)

আশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো;

আশিয়ান:-আসলে আমি ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সারতে চাইছিলাম আরকি। বেশি জাঁক ঝমক ভাবে বিয়েতে ভেজাল বেশি,,, তাই….

তাশজিদ আবারও দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো;

তাশজিদ:-তা বললে তো শুনছি না ভাইয়া,,,।তুমি টপ একজন বিজনেসম্যান হয়ে কিনা চুরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করতে চাও,,,তা তো মোটেও ঠিক নয়৷ তোমার বিয়ে খাবো বলে তো আমি, তাজিম, তাসকিন ভাইয়া,আসিফ ভাইয়া,তৌহিদ ভাইয়া এতবছর ধরে হাত ধুয়ে বসে আছি,,, তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে আসছি,, সেই তোমার বিয়ে এত নিরামিষ ভাবে হয়ে যাবে তা তো আমরা সাধারণ জনতা এত সহজে মেনে নিতে পারি না। তোমার বিয়েতো আমাদের ইচ্ছেমতো হতেই হবে।

আশিয়ান:-তোরা ডাফাররা তো আমার পিছনেই পড়ে আছিস!নরমাল ভাবে বিয়ে করলে এত ঝায়-ঝামেলার সম্ভাবনা থাকে না। শান্তিতে বিয়ে করা গেল৷ পরে একসময় মিডিয়াকে জানিয়ে দিলেই হবে। ব্যাস,,, ল্যাটা চুকে গেল।

তাসকিন:-বেশি কথা বলিস তুই ভাই,,,,বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয়,,,বারবার হয় না। তো বিয়েটা যাতে সারাজীবন একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকে সেরকম ভাবেই তো বিয়েটা করা উচিৎ তাই না??তোর কোনো কথাই শুনার দরকার নেই আমাদের। বিয়েটা আমাদের ইচ্ছাতেই হবে। সো তুই মাঝখানে এসব ফাউ কথা আর কখনো ঢোকাবি না। তুই চুপ থাক।

তাজিম:-হ্যা ভাইয়া,,, এই বিষয়টি অন্তত আমাদের মনমতো হ্যান্ডেল করতে দাও। তুমি কিছু বলার দরকার নেই। জানো,,,আমার আর তাশজিদের কত শখ যে তোমার বিয়েতে আমরা ইংলিশ গানের সাথে ডান্স করবো।আমরা সব ভাইয়েরা সেইম ডিজাইনের শেরওয়ানি পড়বো। কত শখ তোমার বিয়ে নিয়ে আমাদের। প্লিজ এভাবে আমাদের খুশিতে বাগড়া দিয়ো না।

এনা:-ভাইয়া তুমি জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিয়ে করতে বাধ্য। আমি ইতিমধ্যেই সব প্ল্যানিং করে ফেলেছি। তাই তোমার এসব কথা আমরা কেউ শুনছি না। তুমি শুধুু দেখে যাও। আর কিছু করতে হবে না।

মিসেস তারানা:-রাজী হয়ে যা বাবা,,,এমন করিস না,,,আমরা সবাই তোর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। আমাদেরকে এভাবে আশাহত করিস না।

এত এত রিকোয়েস্ট শুনে আশিয়ান আর মানা করতে পারলো না। নিজের জন্য সবার খুশিকে নষ্ট করতে চায় না সে। তাই দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বিরস বদনে বললো;

আশিয়ান:-ওকে,,,, তোমাদের যেরকম ইচ্ছা সেরকমই করো। মানা করবো না। তবে আমাকে বেশি ঝামেলায় জড়াতে পারবে না আগেই বলে রাখলাম। আর মিডিয়াকে কন্ট্রোলে রাখার দায়িত্ব তোমাদের। আমি ওসব প্যাঁচালের মধ্যে নেই কিন্তু।

তামজিদ:-ও তুই চিন্তা করিস না। বাদবাকি সব আমাদের দায়িত্ব। তোর বড়ভাইরা আছে ওসব কাজের জন্য। তুই খালি আমাদের তালে তাল মিলাবি ব্যস। আর কিছুই করতে হবে না তোর।

তাসকিন:-বাব্বাহ,,,,আমি তো বানের জলে ভেসে এসেছি মনে হয়। সেলিব্রিটিদেরকে দেখছি আলাদা কদর করা হয়। তোমাদের তোষামোদিতে মনে হচ্ছে খালি আশুরই বিয়ে হচ্ছে,,,আর আমি এমনি দর্শক মাত্র।

তাহমিদ:-তো!এটা তো শুধুমাত্র আশিয়ানের ক্ষেত্রে বলা হয়নি রে গাধা।এরমধ্যে তুই ওতো শামিল আছিস। তাহলে এত জেলাসি কীসের জন্য শুনি?

তাজিম:-আমার ভাইটাও মেয়েদের মতো হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে দেখা যায়। কী ভাইয়া?এত জ্বলে কে রে?তোমাদের দুজনের কথাই তো বলা হচ্ছে। তাহলে?(হেসে হেসে)

তাসকিনের গাল ফোলানো দেখে সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।

এভাবেই হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে ঘন্টা দুয়েক কেটে গেল। রাত প্রায় এগারোটার দিকে ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমানোর জন্য।আশিয়ান রুমে এসে বারান্দায় রাখা সোফায় বসে কিছুক্ষণ স্মোকিং করলো। তারপর মনের কষ্ট কিছুটা হালকা করে বারান্দার ও রুমের ডোর লক করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো৷আরো কিছুক্ষণ ফোন টিপে তারপর ঘুমিয়ে গেলো সে।

কালকে থেকে অনেক কাজ আছে।যত সময় যাচ্ছে এনগেজমেন্টের দিন প্রায় আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসছে।একেকজনের ওপর একেকটা কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।তামজিদ, তাহমিদ আর তাজিমের ওপর আত্মীয় স্বজনদেরকে এনগেজমেন্টের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব পড়েছে। কালকে থেকে শুরু করবে ওরা। কাকে কাকে কার্ড দিতে হবে তার লিস্ট আগেই করা হয়ে গেছে।তাশজিদ যাবে ওই কনভেনশন হলে যেখানে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। সে গিয়ে সবকিছু ডেকোরেটিং এর সিস্টেম ও স্টাইল দেখিয়ে দিয়ে আসবে।

তারিন, এনা ও কেয়াকে কনের বাড়িতে এনগেজমেন্টের তথ্যের জিনিসপত্র সব কেনা ও সাজিয়ে প্যাকেট করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।মি.মোরশেদ ও মি.আনিসুল ইনভাইটেট সকল গেস্টদের খাবার দাবারের ব্যাপারটা নিজেদের দায়িত্বে নিয়েছেন।

কোন মুরগী কিনতে হবে,, কত কেজি,, গরুর মাংস,,সোনালিকা মুরগী,,রুই মাছ,, বোয়াল মাছ,,গলদা চিংড়ি মাছ,,আরও যা যা লাগবে তার লিস্ট করায় ব্যস্ত ওনারা। শহরের সবচেয়ে বেস্ট শেফদেরকে হায়ার করা হয়েছে রান্নার জন্য। বাংলাদেশের সফল বিজনেসম্যান আশিয়ান তায়েফ চৌধুরী ও তার ভাই এহতেশাম তাসকিন চৌধুরীর এনগেজমেন্ট বলে কথা,,, ধুমধাম করে সব না করলে কী হয়!তাইতো এত এত ব্যস্ততা সবার মধ্যে বিরাজ করছে,,,।

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।এবং সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বলে আশা করছি।আপনাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিবো না আর।আশিয়ান আর ঊদিতাকে খুব জলদিই দেখা করিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ।আপনাদের সবার অনুরোধ রক্ষার জন্য আজ রাতে আরেক পার্ট দিবো।সো হ্যাপি রিডিং গাইজ।❤️)

#চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here