তোমাতে বিলীন পর্ব: ১৮

0
13761

তোমাতে বিলীন
লেখিকা—আমায়া নাফশিয়াত
পর্ব—১৮

আশিয়ান তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে ঊদিতার দিকে।মেয়েটাকে দেখতে তো অনেক নিষ্পাপ মনে হয়,,, কিন্তু আদৌ কী সে ততোটা নিষ্পাপ!কে জানে,,,!ঊদিতাকে বাজিয়ে দেখার জন্য আশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠে;

আশিয়ান:-শুনেছি বাসর রাতে নতুন বউকে কিছু না কিছু গিফট দিতে হয়,,,গতকালকে তো প্রথম বাসর ছিলো বাট মাতাল থাকায় তোমাকে কিছু দিতে পারি নি,, আ’ম সো সরি ফর দ্যাট,,। আজ তো দ্বিতীয় বাসর রাত,,, তা তুমি আমার কাছ থেকে কী গিফট চাও বলো,,,আমি অবশ্যই দিবো!

তীক্ষ্ণ চোখে সে তাকিয়ে আছে বিছানার মধ্যমণি হয়ে গর্জিয়াস টিয়াল গ্রীন রঙের লং গাউন ও হিজাব পরিহিতা অবস্থায় বসে থাকা তার অতি সুন্দরী বউটির দিকে। আশিয়ান মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে নিজেকে বললো;

“তুমি কী চাইবে জানা আছে আমার,,,। হাহ্ তোমরা সব মেয়েকেই আমি খুব ভালো করে চিনি।হয়তো বাড়ি,গাড়ি টাকা-পয়সা অথবা ডায়মন্ড নেকলেস ওর রিং এসবই চাইবে। তুমিও যে ইলিয়ানার মতো লোভী হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে কী! মেয়ে মাত্রই ছলনাময়ী, স্বার্থপর ও লোভী,,, এরজন্যই তো মেয়েজাতির উপর খুব ঘৃণা হয় আমার। তোমাদেরকে বিশ্বাস করাটাই যে বোকামি। ” (দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে)

ঊদিতা খুবই নিবিড়ভাবে আশিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মিহি স্বরে আস্তে করে প্রশ্নবান ছুড়ে দিলো সে আশিয়ানকে;

ঊদিতা:-যদি কিছু চাই,,, আপনি সত্যি কী দিবেন আমায়?(কৌতুহলী দৃষ্টিতে)

ঊদিতার কথা শুনে কোনো চিন্তাভাবনা না করেই বলে দিলো আশিয়ান;

আশিয়ান:-হুম বলো কী চাও,,,যা চাইবে অবশ্যই তাই দিবো তোমায়,,,

ঊদিতা:-সারাজীবন,,, এমনকি মৃত্যুর আগ অবধি আপনার সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি চাই আমি,,। দিবেন? (কিছুটা কাতর দৃষ্টিতে)

ঊদিতার বলা কথা শুনে যারপরনাই বিস্মিত হলো আশিয়ান। কথারা যেন দলা পাঁকিয়ে আটকে গেছে তার গলায়। সে ভাবে নি কখনো এমন কিছুর আবদার করবে ঊদিতা। তার মানে কী তার ধারণা ভুল? সব মেয়েরা তাহলে এক নয়?চিন্তার গভীরে ডুবে যাওয়ার আগেই শুনা গেল ঊদিতার কথা;

ঊদিতা:-জানেন,,, আমার আবদার না খুবই সামান্য। তাও প্রিয়জন ছাড়া আমি কারও কাছে কখনো কিছুর আবদার করিনি। আর এখন থেকে আপনিই তো আমার জীবনের সব। শুনেছি সময় থাকতে মূল্যবান জিনিসের কদর করতে হয়,,,হারিয়ে গেলে তখন আফসোসের সীমা থাকে না। আমিও আমার সেই মূল্যবান জিনিসটির কদর রাখতে চাই। আর আমার সেই মূল্যবান সম্পদটি হলেন আপনি,,,। আপনাকে ভালোবেসে,,, আপনার সাথেই সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই আমি। আপনার টাকাপয়সা ও এত বিশাল সম্পত্তির উপর আমার কোনোপ্রকার কোনো লোভ নেই। জীবনে টাকাপয়সাই সব নয়,,একটা জীবনে ভালোবাসার মানুষ থাকলে আর কী চাই! আমার চাওয়াটাও ঠিক সেই রকম। আমি আপনাকে চাই,,, আপনার সমস্ত ধ্যান ধারনা ও আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনা জুড়ে আমি থাকতে চাই,,। আপনার হাতে হাত রেখে একসাথে পথ চলতে চাই,, আপনার চোখে আমার জন্য হাজারো মুগ্ধতার ভীরে একটুকরো ভালোবাসা দেখতে চাই,,। প্রতিটা সেকেন্ডে আপনাকে ভালোবাসি তার প্রমাণ দিতে চাই,, আপনার ঠোঁটের মুচকি হাসিটার কারণ হতে চাই আমি,,,। পূরণ করবেন তো আমার এই চাওয়াটা?

মুচকি হেসে জানতে চাইলো ঊদিতা। আশিয়ান দীর্ঘ একমুহূর্ত তাকিয়ে রইলো ঊদিতার দিকে। তারপর হুট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চলে যাওয়া ধরতেই ঊদিতা আশিয়ানের একহাত আচমকা টেনে ধরলো। হাত ধরতেই দাঁড়িয়ে পড়ে আশিয়ান। পিছু ফিরে তাকানোর সাহস পায় না সে। মেয়েটার ঐ মায়াবি চোখজোড়া যে মারাত্মক টানে তাকে।

ঊদিতা:-আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না আপনি এটা আমার অনুরোধ,,, কারণ আপনার সবকিছু জুড়ে এখন থেকে আমি থাকবো। অতীতে আপনি কী করেছেন না করেছেন তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার। আপনার আগের জীবনে কে ছিলো তাও জানার ইচ্ছা নেই,,, কিন্তু এখন থেকে আমিই আপনার জীবনের সব,,, এ কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিন ভালোমতোন। যা-ই হয়ে যাক না কেন,,, আমি আমার স্বামীর ভাগ কিছুতেই ছাড়বো না কারণ আপনি একান্তই আমার ব্যক্তিগত সম্পদ যা গতকালকে আমার নামের দলিলে লেখা হয়ে গেছে।আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন।

আশিয়ান ঊদিতার সমস্ত কথা শুনে একবার ঊদিতার দিকে তাকালো। তারপর সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দ্রুতগতিতে বারান্দার দিকে চলে গেল। ঊদিতা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বললো;

ঊদিতা:-আজ আমি আপনাকে চ্যালেন্জ করলাম স্বামী মহাশয়,,,,এমনও একদিন আসবে যে তখন আপনি আমাকে প্রতিনিয়ত চোখে হারাবেন,,,পদে পদে আমাকে ভালোবাসি কথাটি বলবেন,,, আমার মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেবেন,,, আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে একরাশ মুগ্ধতা খুঁজবেন। সেই দিনের আর বেশি দেরী নেই কিন্তু। তখন আপনার মনের সমস্তটা জুড়ে একমাত্র আমি থাকবো। আমার রাজত্ব চলবে সেখানে। (মুচকি হেসে)

এদিকে নিজের খোলামেলা বারান্দার মতো রূফটপে সুইমিংপুলের পাশে একটা ইজি চেয়ারে বসে দুলে দুলে সিগারেটের ধোঁয়া খোলা আকাশে মুখ দিয়ে উড়াচ্ছে আশিয়ান।আশিয়ানের খুব ভালো বন্ধু মাসুদ।ঊদিতার মতো সুন্দরী ও ধার্মিক মেয়ে সারার সাথে তার ৫ বছরের মতো রিলেশন।মাসুদ পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে।কিন্তু ঐ মেয়েটা মাসুদকে ঠিক সেভাবেই ঠকিয়েছে যেভাবে ইলিয়ানা আশিয়ানকে ঠকিয়েছিলো।মাসুদের থেকে দ্বিগুণ বড়লোক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে সারা।অথচ সে ধার্মিক এবং পর্দানশীল।এসব কথা মাসুদের কাছ থেকে শোনার পর ঊদিতার প্রতি যাও একটু ভালো ধারণা জন্মেছিলো আশিয়ানের তা নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।এজন্যই ঊদিতার এসব কথা শুনে মন গলে নি তার।বরঞ্চ মনে হয়েছে ঊদিতাও ইলিয়ানার মতো ভালোমানুষের নাটক করছে।দুনিয়াতে সব মেয়েরাই ধোঁকাবাজ।কোনো মেয়েই প্রকৃত অর্থে কাউকে মন থেকে ভালোবাসে না।আশিয়ান মনে মনে ভাবছে ঊদিতাকে আরও বেশি করে টেস্ট করতে।দেখা যাক মেয়েটা সত্যি তার জন্য পারফেক্ট কি না!

আশিয়ান এসবই ভেবে ভেবে সিগারেট খাচ্ছিলো।হুট করে ঊদিতা আশিয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকে অবাক করে দিয়ে আশিয়ানের হাত থেকে সিগারেটটা টেনে নিয়ে ফেলে দিলো দূরে।আশিয়ান গম্ভীর হয়ে ঊদিতার দিকে তাকালো।রাগ হচ্ছে তার ভীষণ কিন্তু রাগটা সে দেখাতে পারছে না।মনে মনে অবাক হচ্ছে ঊদিতার সাহস দেখে।মেয়েটার চোখে মুখে এতটুকুও ভয় নেই।আশিয়ানকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে ঊদিতা নরম কন্ঠে বললো;

ঊদিতা:-আজকে থেকে এসব ছাইপাঁশ খাবেন না আপনি।আমি এসব পছন্দ করি না।মানলাম আপনি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ছ্যাঁকা খেয়েছেন,,তাই বলে এভাবে নিজের ক্ষতি করবেন?এতে তো আপনার কোনো দোষ নেই।দোষ সেই মেয়েটার যে আপনার কদর বুঝে নি।তারজন্য আপনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন না।মনে রাখবেন এখন আপনি একা নন,, আপনার সাথে আমার জীবনটাও জুড়ে আছে কিন্তু।তাই যা করবেন ভেবেচিন্তে করবেন।

আশিয়ান ভীষণ গম্ভীর হয়ে ঊদিতাকে জবাব দিলো;

আশিয়ান:-আমার কাজে বাঁধাপ্রদানকারীকে আমি মোটেও পছন্দ করি না।আর আমি কী করবো না করবো তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো কীসের জন্য?

ঊদিতা:-আমি আপনার স্ত্রী তাই এটুকু অধিকার তো আমার আছে।এতদিন আপনি নিজের মর্জিমতো চললেও এখন থেকে কিছু ক্ষেত্রে আমার কথামতো চলতে হবে আপনার।আল্লাহ কিন্তু আপনার জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করেছেন।জানেন আমি এত রাগী মুডি বা বদমেজাজি গম্ভীর টাইপের না হলেও আপনার মতো ঘাড়ত্যাড়া টাইপের।যদিও আমি কখনো কারও সামনে সেটা প্রকাশ করি নি।তবে আজ থেকে আপনি দেখবেন আমার একরোখামি।যাইহোক আর কখনো সিগারেট খাবেন না।

আশিয়ান বিরক্তি নিয়ে তাকালো ঊদিতার দিকে।মুখে কিছু বললো না।বিনিময়ে ঊদিতা মুচকি হাসি উপহার দিলো তাকে।আশিয়ান গমগমে গলায় বললো;

আশিয়ান:-রুমে যাও।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।আমার রুমে আসতে দেরী হবে।

ঊদিতা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আশিয়ানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে পাল্টা বলে উঠলো;

ঊদিতা:-আপনার বন্ধুকে তার জিএফ ছেড়ে দিয়েছে তাই বলে আপনি আমাকেও তার জিএফের কাতারে ফেলে দিবেন?জানেন অজান্তেই আপনি আমাকে চরিত্রহীনা ভেবে বসে আছেন।অথচ আজতক আমার কোনো ছেলে কাজিনও আমাকে দেখে নি।আপনার বন্ধুর জিএফ আমার মতো ধার্মিক এবং পর্দানশিন তাই এটা ধারণা করে নিলেন যে ওর মতো আমিও লোভী এবং আপনার থেকে ভালো কোটিপতি কাউকে পেলে আমিও চলে যাবো!কেন?এত অবিশ্বাস নিজের বিয়ে করা স্ত্রীর ওপর?আমাকে দেখে আপনার কোন এঙ্গেল থেকে লোভী বলে মনে হয়?আরে ওই মেয়েটা যদি সত্যি এত ধার্মিক হতো তাহলে সে বিএফ বানালো কীভাবে?সে জানে না ইসলামে এ ধরনের রিলেশন হারাম?তার ওপর ৫ বছরের রিলেশন অনায়াসে ভেঙে দিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।তা আমার মাঝে কী এধরণের কোনো কিছু দেখেছেন আপনি?এরকম কোনো রেকর্ড আছে আমার?বলুন?(কিছুটা রেগে গিয়ে)

আশিয়ান কিছুটা অবাক হলো ঊদিতার কথা শুনে।সে বুঝতে পারলো না ঊদিতা এসব কী করে জানলো!আশিয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো;

আশিয়ান:-তোমাকে ওসব কে বলেছে?কোথা থেকে শুনেছো তুমি?

ঊদিতা:-আপনার বন্ধু যখন আপনাকে এসব বলেছে তখন আমি আপনার পাশেই বসে ছিলাম মনে নেই?সে যাকগে,,কোথা থেকে জানছি সেটা ফ্যাক্ট না,,,ফ্যাক্ট তো এটাই যে আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেন।তাও অন্যের কথা শুনে।যারা অন্যের কথা শুনে বিচার করে তারা কখনো ভালো মানুষ হতে পারে না।তারা নির্বোধ হয়।বোকা হয়।মানুষের কথায় তারা নিজের পায়ে কুড়াল মারে।জানেন আপনার বিরুদ্ধে অনেক কথা আমার কানে এসেছে,,আপনার আপন মানুষরাই আমাকে কতকিছু বলেছে আপনার ব্যাপারে।কিন্তু আমি একটা কথাও বিশ্বাস করি নি।কারণ আপনাকে প্রথম দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি ঠিক কেমন মানুষ।কাউকে চিনতে যুগ লাগে না।আমারও লাগে নি।সেই বিশ্বাসের জোরে আমি আপনার বিরুদ্ধে শোনা একটা কথাতেও কর্ণপাত করি নি।কারণ আমি নিজের চোখে না দেখা অবধি কারও মুখের কথা বিশ্বাস করে বসে থাকি না।যাইহোক,, শেষ একটা কথাই বলবো,,এখন থেকে তো আমি আপনার চোখের সামনেই থাকবো,,ভালো করে দেখে তারপর জাজ করে বলবেন আমি কেমন!আর আমার চরিত্রটাই বা কীরূপ!অন্য কারও কথা ধরে বিশ্বাস করে বসে থাকবেন না প্লিজ,, এটা আমার অনুরোধ!

এসব বলতে গিয়ে কিছুটা চাপা অভিমান ও রাগে ঊদিতার ফর্সা গাল, নাক লাল হয়ে গেল।চোখ থেকেও যেন আগুন বের হচ্ছে।আশিয়ানের মতিগতি বুঝতে একটুও অসুবিধে হয় নি ঊদিতার।রাগে হনহন করে বারান্দা থেকে প্রস্থান নিলো সে।আশিয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ঊদিতার যাওয়ার পানে।সত্যিই তো,, ঊদিতা একবর্ণও মিথ্যে বলে নি।এক দুজন খারাপ হলে কী সবাই খারাপ হয়ে যায়?এখন পর্যন্ত একবারও ঊদিতার সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনে নি সে।কোনো বেড রেকর্ড পায় নি।তারপরও অজান্তেই ঊদিতাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো সে।রাগে নিজের চুল নিজেই টানতে লাগলো আশিয়ান।

ঊদিতা আলমারি থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।খুব কষ্ট পেয়েছে সে আশিয়ানের এমন মনোভাবে।সব মেয়েরাই কী একরকম হয়?কিছু মেয়েরা তো শুধু একমুঠো ভালোবাসা চায়।আশিয়ান কেন তাকে বুঝলো না?

রাগে দুঃখে ঊদিতা কিছুক্ষণ নিরবে চোখের জল বিসর্জন দিয়ে কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো।আশিয়ান যদি ঠিক হয় তাহলে আজকে ঊদিতার দেয়া লজ্জাটাই যথেষ্ট।আর জীবনে অন্য কারও কথায় নিজের স্ত্রীকে জাজ্ করতে যাবে না।

ঊদিতা ঘুমিয়ে যাওয়ার প্রায় আধাঘন্টা পর আশিয়ান বারান্দার ডোর লক করে পর্দা মেলে দিয়ে রুমের ভেতর এসে রুমের ডোর লক করে তারপর বিছানায় এসে ঊদিতার পাশে শুয়ে পড়লো।ঊদিতা অন্যদিকে মুখ করে ঘুমিয়ে গেছে।আশিয়ান মনে মনে খুবই গিল্টি ফিল করছে।ঊদিতা তাকে কী ভাবছে মনে মনে আল্লাহ জানেন!আশিয়ান ঘুমন্ত ঊদিতার মুখ পানে একবার তাকালো।কী নিষ্পাপ চেহারা!এ চেহারা কখনো কাউকে ধোঁকা দিতে পারে না।এ চেহারায় কোনো কলুষতা নেই,,।একদম সরল একটা মেয়ে সে।

আশিয়ান ঊদিতাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে আনলো।ঊদিতা তো বেদম ঘুমে ব্যস্ত।ঊদিতার কাঁধ থেকে জামার হাতা একটু নামিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দিলো আশিয়ান।ঊদিতা একটু নড়েচড়ে উঠলো এমন স্পর্শে।আশিয়ান টাইট করে নিজের সাথে মিশিয়ে ঊদিতাকে,, ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।একটাসময় ঊদিতার কাঁধে চুমু খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়লাে সে।

মাঝরাতে ঊদিতা খেয়াল করলো যে সে একদম আশিয়ানের সাথে মিশে শুয়ে আছে।অস্বস্তি লাগছে আশিয়ানের এভাবে জড়িয়ে ধরায়।কিন্তু কিছু করার নেই।দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে এভাবেই শুয়ে পড়ে সে।আশিয়ানের একহাত ঊদিতার জামার ভেতরে পেটের ওপর বিচরণ করছে।হাতটা বের করতে পারলো না ঊদিতা।আশিয়ানের মতো এমন বডিবিল্ডার যুবকের কাছে তার তুলোর মতো কিশোরী শরীরের শক্তি একদম নস্যি।আশিয়ানের শ্বাস-প্রশ্বাস ঊদিতার গলায় এসে আছড়ে পড়ছে ক্রমাগত।ঊদিতা কেঁপে কেঁপে ওঠছে এরকম হওয়ায়।একটা সময় সেও আর চোখ টেনে খুলতে পারলো না,, হারিয়ে গেল ঘুমের দেশে।

পরদিন সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো ঊদিতা।আশিয়ান মরার মতো ঘুমাচ্ছে।ঊদিতা আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,”যত ঘুমানোর ঘুমিয়ে নিন আজ আর কাল,,, এরপর থেকে দেখবো নামাজ না পড়ে কীভাবে ঘুমাতে পারেন আপনি!এই দুটো দিন আপনার স্বাধীনভাবে উড়ার দিন।তারপর থেকে আমার হুকুম জারি হবে।কী বদলোক রে বাবা, নামাজ কালামের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই দেখা যায়!জানতাম না এরকম কোনো মানুষ আছে!”

ঊদিতা নামাজ শেষে নিচে চলে গেল।এত সকাল বাসার কেউ ঘুম থেকে ওঠে নি।তবে ঊদিতা জানে এসময় তার পরিবারের সবাই ঘুম থেকে ওঠে পড়ে।যেহেতু ওরা আজকে এ বাসার মেহমান সেহেতু ঊদিতার দায়িত্ব তাদের সবকিছুর খেয়াল রাখা।কারণ সে ব্যতিত আর কেউ জানবে না কখন তাদের কী প্রয়োজন হয়।এ সময়টাতে মি.আনিসুল রং চা ও শাহরিয়ার দুধ চা খায়।তাই ঊদিতা রান্নাঘরে যাচ্ছে তাদের জন্য নাশতা বানাতে।

রান্না ঘরে কেউ নেই।পুরোই ফাঁকা।ঊদিতা তার বাবা ভাইয়ের জন্য চা বানাতে লাগলাে।সাথে হালকা কিছু নাশতা।যেমন রুটি,পরোটা।রাতের রান্না করা মাংসের তরকারি ও সবজি গরম করে নিলো।ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে সেটা গরম করে দুটো মগে নিয়ে নিলো তার ভাতিজা ও বোন পোর জন্য।সবার জন্য একে একে নাশতা তৈরি করে নিয়ে ট্রেতে করে প্রথমে ভাই ও বোনের রুমে গিয়ে নক করলো।ওরা দরজা খুলে দিতেই তাদের জন্য নির্দিষ্ট নাশতা গুলো দিয়ে এখন বাবা মায়ের রুমে গেল সে।

নক করতেই মিসেস আনিতা দরজা খুলে দিলেন।মেয়েকে দেখতে পেয়ে মিষ্টি হাসি দিলেন তিনি।ঊদিতাও প্রতিত্তোরে হাসলো।সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো সে।মি.আনিসুল একটা ম্যাগাজিন পড়ছেন বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে।ঊদিতাকে দেখতে পেয়ে সটান হয়ে বসলেন তিনি।হাত থেকে ম্যাগাজিনটা রেখে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন;

মি.আনিসুল:-আরে আমার মামণি যে।বসো আম্মু এখানে বসো।

ঊদিতা মায়ের হাতে নাশতার ট্রে টা এগিয়ে দিয়ে বাবার কাছে বসে কথা বলতে লাগলো হাসিমুখে।মিসেস আনিতা আনমনে হাসলেন মেয়ের কাজ দেখে।শ্বশুর বাড়িতে এসেও নিজের মা বাবার যত্নের কথা ভুলে নি।

মি.আনিসুল প্রতিদিনকার মতো মেয়ের হাতের চা তৃপ্তি নিয়ে খেলেন।ঊদিতা বেশ কিছুক্ষণ তাদের সাথে কথা বলে আবারও রান্নাঘরে চলে এলো সবার জন্য নাশতা বানাতে।পরিবারের সবাই ও অন্যান্য মেহমান ঘুম থেকে ওঠতে ওঠতে সকাল ৯ টা বেজে যাবে প্রায়।আর এখন তো সাড়ে ৬ টাও হয়নি পুরোপুরি।

সবার জন্য মিডিয়াম সাইজের বেশ বড় ডেগচিতে করে ডিমের পোলাও রান্না করলো ঊদিতা।সাথে ঝাল ঝাল করে গরুর মাংসের রেজালা ও সালাদ রান্না করলো।স্যান্ডউইচও বড় এক বোল বানালো সে কয়েকজনের রুচির কথা চিন্তা করে।আশিয়ানের জন্য আলাদা করে নরমাল কফি বানিয়ে রুমে চলে এলো ঊদিতা রান্নাঘরের সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে।

রুমে এসে দেখলো আশিয়ান সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে।ঊদিতাকে কফির মগ হাতে দেখতে পেয়ে টাওয়েল নিয়ে এগিয়ে এসে ঊদিতার হাত থেকে মগটা নিলো আশিয়ান।ঊদিতা আশিয়ানের থেকে টাওয়েল নিয়ে কিছু না বলে বারান্দায় গিয়ে মেলে দিলো।আশিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো ঊদিতার যাওয়ার দিকে।এভাবে ইগনোর করলো কেন সে?

সারাটা সময় ঊদিতা আশিয়ানকে ইগনোরই করলো।একটা কথাও নিজে থেকে বললো না।শুধু হু হা তেই জবাব দিয়েছে।আশিয়ান বিষয়টা একটুও সহ্য করতে পারছে না।কেউ তাকে জীবনেও এরকম এড়িয়ে চলে নি।আর আজ এই মেয়েটা কী সুন্দর অবলীলায় তাকে ইগনোর করে যাচ্ছে!এটা কী সহ্য করার মতো,?তারপরও আশিয়ান নিজে থেকে বেহায়ার মতো কথা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু ঊদিতা পাত্তাই দিচ্ছে না।ঊদিতার এমন ঠান্ডা মাথায় এড়িয়ে চলা আশিয়ানের মেজাজটা বিগড়ে দিয়েছে পুরো।

বাসার সবাই ঘুম থেকে ওঠার ফ্রেশ টেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এসে ঊদিতার হাতের সকালের নাশতা খেয়ে সবার মনটা ভরে গেল।কারণ খাবারগুলো ভীষণ সুস্বাদু ও মজাদার হয়েছে খেতে।সবাই তো ঊদিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।আশিয়ান নিজেও মনে মনে প্রশংসা না করে পারলো না ঊদিতার।সত্যি মেয়েটার রান্নার হাত দারুণ।

আজ দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ঊদিতা ও আলেয়া নিজের বাবার বাসায় যাবে রীতি অনুযায়ী।আশিয়ান ও তাসকিনও যাবে তাদের সাথে।তবে আলেয়া যাবে তার বাসায় আর ঊদিতা যাবে নিজের বাসায়।আলাদা আলাদা গন্তব্য তাদের।ঊদিতা একটা শাড়ি পড়ে তার উপর ঢিলাঢালা একটা বোরকা পড়ে নিলো।সাথে বড় দেখে খিমারের হিজাবও পড়লো।আশিয়ান শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো কিছু বললো না।ঊদিতা যে এতটা রাগ করবে ভাবে নি সে।সরি বলারও সুযোগ পাচ্ছে না।এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে লোকে ঠিকই বলে,,বিয়ের পর ছেলেরা বাঘ থেকে বিড়াল বনে যায়।নিজেকেও এমন মনে হচ্ছে। কারণ এই সেই আশিয়ান যে জীবনেও কখনো কাউকে সরি বলে নি।ইভেন ভুল করলেও না।অথচ আজ নিজের বউকে কীভাবে সরি বলবে সেটাই বুঝে পাচ্ছে না আশিয়ান।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঊদিতা ও আশিয়ান অবশেষে রওনা দিলো তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।ঊদিতা আজ তার নিজের বাসায় যাচ্ছে এজন্য সে অনেক খুশি।আশিয়ান এই মুহুর্তে চুপচাপ বসে বসে ফোন টিপছে।আর তার ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।

প্রায় আধাঘন্টা পর ওরা সবাই ঊদিতাদের বাসায় পৌঁছে গেলো।বাসার সবাই আশিয়ানকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।ঊদিতা একফাঁকে নিজের রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে বোরকা ও শাড়ি চেঞ্জ করে একটা ঢিলাঢালা ফুল হাতার লং গাউন পড়েছে সে।গরম লাগছে ভীষণ তার।একটু বাইরে গিয়ে ভাবীকে ইশারা দিয়ে বললো আশিয়ানকে রুমে পাঠিয়ে দিতে।বেচারা গরমে নিশ্চয়ই হাঁপিয়ে গেছে।উসামা আশিয়ানকে রুমে পাঠিয়ে দিলো ঊদিতার কথামতোন।আশিয়ানের জন্য টাওয়েল টাওজার ও একটা গেঞ্জি বের করে রেখেছিলো ঊদিতা।আশিয়ান রুমে আসতেই ঊদিতা সেসব এগিয়ে দিলো তাকে।আশিয়ান যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।তার প্রচুর গরম লাগছে।ঊদিতা কাপড় এগিয়ে দিতেই আশিয়ান সেসব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল শাওয়ার নিতে।

আশিয়ানের গোসল শেষ হতে ঊদিতা ততক্ষণে আশিয়ানের জন্য একগ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত নিয়ে রুমে চলে এসেছে।আশিয়ান চুল না মুছেই টাওয়েল রেখে ঊদিতার হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে সব শরবত পান করে নিলো।ঊদিতা রুমের ফ্যানের বাতাস ফুল স্পিডে ছেড়ে দিলো।আশিয়ান সিম্পল বিছানাটায় গিয়ে আরামে বসলো।ফ্যান সোজা তার মাথার ওপর চলছে।ঊদিতা গ্লাসটা টেবিলে রেখে টাওয়েল হাতে এগিয়ে এলো আশিয়ানের কাছে।কোনো কথা না বলে আশিয়ানের মাথা মুছে দিতে লাগলো সে।আশিয়ান অবাক হয়ে ঊদিতার দিকে তাকিয়ে আছে।

ঊদিতা ভালো করে আশিয়ানের মাথা মুছে দিয়ে বললো আশিয়ানকে শুয়ে পড়তে।কারণ আশিয়ানের চোখ কেমন লাল হয়ে আছে।ঊদিতা বুঝতে পারলো যে আশিয়ানের মাথা ব্যথা করছে।ঊদিতা রুমের দরজা লাগিয়ে এসে আশিয়ানের পাশে বসে আশিয়ানকে বললো তার কোলে মাথা রেখে শুতে।আশিয়ান টু শব্দ না করে ঊদিতার কথামতো কাজ করলো।

ঊদিতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে সে।ঊদিতা আশিয়ানের মাথার চুল আলতোভাবে টেনে দিতে লাগলো।আশিয়ান আরামে চোখ মুদে ফেলেছে।এরকমটা তার মা এতদিন করতেন আর আজ ঊদিতা করছে।হয়তো আশিয়ানের জন্য স্ত্রী বাছাইয়ে মিসেস ইয়াসমিন কোনো ভুল করেন নি।একটা সময় আশিয়ান ঊদিতার কোলেই ঘুমিয়ে পড়লাে।ঊদিতা আশিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে।

সন্ধ্যার একটু আগে আশিয়ানের ঘুম ভাঙলো।আশিয়ানের রুমের মতোই ঊদিতার রুমে কোনো সাউন্ড নেই।একদম আরামদায়ক পরিবেশ।যদিও আশিয়ানদের বাসার মতো এই বাসা মোটেও বিলাসবহুল নয়।তারপরও শান্তির নীড়।আশিয়ান খেয়াল করে দেখলো সে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে আছে।রুমে ঊদিতা নেই।জানালাগুলোতে ভারী পর্দা টাঙানো যার ফলে বাইরের আলো রুমে বেশি প্রবেশ করতে পারছে না।আশিয়ান শোয়া থেকে ওঠে বসলো।মনটা ঊদিতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।মাথাটাও ব্যথা করছে তার।বাসা থেকে ঔষধও আনে নি সে।

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষে। সবাইকে গঠনমূলক কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ রইলো।ব্যস্ত আছি আজ তাই এই পার্টটা মনে হয় ছোট হয়েছে।একটা কথা বলি,,ভালোবাসা কিন্তু একদিনেই সৃষ্টি হয়না।সেটা তৈরি হতে অনেক সময় লাগে।আশিয়ানের ক্ষেত্রেও তাই।বেচারা ইলিয়ানাকে মন থেকে ভালোবেসে একবুক ছ্যাঁকা খেয়েছে।তাই ২য় বারের মতো প্রেমে পড়তে হলে তো একটু সময়ের দরকার।আর আজকে ঊদিতা তাকে কিছুটা হলেও যে টাইট দিছে এতে বোঝা যায় ঊদিতাই তাকে পুরোপুরি ঠিক করবে।সো আগে আগে দেখো হতা হে কিয়া!হ্যাপি রিডিং গাইজ।❤️)

#চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here